প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৮
জান্নাত নুসরাত
এগারোটা বেজে আঠারো মিনিট। ঘড়ির কাটার টিক টিক শব্দ কানে লাগছে। অন্ধকারের মধ্যে হালকা ড্রিম লাইটের আলোয় রুমের চারপাশ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকা নুসরাত এবার উঠে বসল। আরশ নুসরাতের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে। আইজান আরশের হাতের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে। নুসরাত উঁকি মারল। আরশের শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন। ঘুমন্ত ব্যক্তিদের শ্বাস প্রশ্বাসের মতো। নুসরাত দু-জনকে ঘুমাতে দেখে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। আইজানকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে আরশ। আরশের হাত আইজানের বুকের উপর থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিল। ঠোঁট কামড়ে আরশের দিকে তাকাল। ভয়ে ভয়ে কোলে তুলে নিয়ে অগ্রসর হলো নিজের জায়গার দিকে।
আইজানকে নিয়ে যেতেই আরশ চোখ মেলে তাকাল। নিজের পাশ খালি দেখে অধর প্রসারিত হয়ে গেল। আরশ নড়ল না! দেখতে চাইল নুসরাত কি করে?
নুসরাত মাঝে নিয়ে শুইয়ে দিল আইজানকে। নড়া-চড়া অনুভব করে আইজান চোখ মেলে তাকাল। নুসরাতকে তার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে দাঁত বিহীন মাড়ি বের করে হাসল।
নুসরাত ও ছেলের সাথে তাল মিলিয়ে হাসল। আইজান মুখ দিয়ে আ উহ আ করে কথা বলছে। নুসরাত থুতনিতে চুমু খেল। গালে ঠোঁট দাবিয়ে চুমু খেল শব্দ করে। আইজান মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাসল শরীর নাড়িয়ে।
নুসরাত নাকের সাথে নাক ঘষল। আইজানের নাক চেপে ধরল। আইজান নাক মুখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকাল।
নুসরাত ফিসফিস করে আইজানকে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“নাক বোচা কেন? ভবিষ্যতে এই সব বোচা নাক দিয়ে মেয়ে পটাতে পারবি না। এই দেখ, তোর মায়ের নাক একদম সোজা। দেখেছিস, প্রয়োজন হলে নাক টেনে সোজা করবি! এই সব বোচা নাক ওয়ালা ছেলেদের প্রেমে কেউ পড়ে না। বুঝছিস! মেয়ে পটাতে হলে মায়ের মতো সুন্দর নাক হতে হবে। আবার ওই আরইশ্শার নাক পাস না। শালার নাকটা পুরো বকের ঠোঁটের মতো সরু।
আরশ নিজের নাকের এতো বড় অপমান ঢোক গিলে সহ্য করে নিল। আইজান কি বুঝল মাড়ি বের করে খিলখিল করে হেসে উঠল? হাসির সাথে স্বাস্থ্যবান শরীর টা নড়ে উঠল। নুসরাত আইজানের ঠোঁটে চুমু খেল, তারপর গালের কাছে নাক নিয়ে টেনে শ্বাস নিল। গ্রাণ ইন্দ্রিয়ে জনসন লোশনের মিষ্টি গ্রাণ লাগলো। আইজান হাসল খিলখিল করে। নুসরাত নিজের মুখ নিয়ে আইজানের পেটে কাছে রেখে শুরশুরি দিল। আইজান পেটে শুরশুরি লাগতেই মাড়ি বের করে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতে লাগলো। আরশ নিজে ও হাসল!
নুসরাত আইজানকে তর্জনী আঙ্গুল ঠোঁটে রেখে চুপ দেখাল। আইজান চুপ হয়ে গেল। মুখ দিয়ে শব্দ করল,
” উউউ আ আ আ উউ!
আইজানকে পেটের উপর বসিয়ে নুসরাত বুকে শুইয়ে দিল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,”অনেক মজা হয়েছে এবার ঘুমাও!
আইজান উঠে বসতে চাইল। নুসরাত পিঠে থাপ্পড় দিয়ে শুইয়ে রাখল।
“আব্বা ঘুমিয়ে পরো! আগামীকাল আম্মা আর তুমি বাইরে যাব।
নুসরাত পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ বলল। কিছুক্ষণ পর আইজান ঘুমিয়ে পরতেই আরশ এসে নুসরাতের পাশ ঘেষে শুয়ে পড়ল। গলার কাছে মুখ রেখে টেনে শ্বাস নিল। নুসরাত সরে যেতে চাইল। আরশ দু-হাত দিয়ে চেপে ধরে গালে চুমু খেল। হাতে ভর দিয়ে নুসরাতের মুখের উপর নিজের মুখ রাখল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,” নড়বি না!
নুসরাত মুখ সরিয়ে নিল। আরশ নুসরাতের মুখ চেপে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে আনলো। ঠোঁট কামড়ে আইজানকে সহ পেঁচিয়ে ধরল।
আরশ প্রশ্ন করল,
“দেশে যখন ছিলি আইজানের কথা জানতি?
নুসরাত কথা বলল না। আরশ নুসরাতের পেটে চিমটি কাটল। নুসরাত চিমটি কাটা জায়গা হাতের তালু দিয়ে ঢলে আরশের দিকে কঠিন চোখে তাকাল।
” কথা বলছিস না কেন?
“ইচ্ছে করছে না!
আরশ মাথা দিয়ে নুসরাতের নাকে মারল। নাকের মারার দু-মিনিটের মাথায় হাচ্চি দিতে শুরু করল। আরশ নুসরাতের চুল ধরে টেনে বলল,” আইজানের কথা জানাসনি কেন আমায়?
“ইচ্ছে হয়নি!
” তোর ইচ্ছেতে সব!
“হ্যাঁ!
আরশের রাগে নুসরাতের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, “আইজানের কথা জানাসনি কেন? শেষ বার জিজ্ঞেস করছি নুসরাত!
নুসরাত শ্বাস ফেলল ধীরে ধীরে। আরশের কথার কঠিন স্বরে জবাব দিল,” আমি আপনার নখের যোগ্য নই তাই ভাবলাম অযোগ্য একটা মেয়ের পেটে আপনার সন্তান আসছে এটাই আপনার জন্য বড় লজ্জাজনক, বলে আরো লজ্জা দিয়ে কী লাভ? তাই জানাইনি!
আরশ নুসরাতের গাল চেপে ধরল এক হাত দিয়ে। এক হাত দিয়ে চুল টেনে ধরল।
“তুই এখনো আড়াই বছর আগের কথা নিয়ে পড়ে আছিস।
” দুই যোগ চলে গেলে ও পড়ে থাকব।
“যা পড়ে থাক! আমার কি?
আরশ নুসরাতের গাল ছেড়ে দিয়ে আইজানকে টেনে নিয়ে গেল নিজের কাছে। নিজের পেটে ওপর শুইয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। নুসরাত হা করে তাকিয়ে তাকল। চিৎকার করে বলল,” আমার বাচ্চা!
আরশের রুঢ় গলার আওয়াজ,
“কিসের তোর বাচ্চা? এটা আমার বাচ্চা!
“বললেই হলো!
“হ্যাঁ হলো!
নুসরাত আরশের পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,
” অনেক সহ্য করেছি আমার বাচ্চাকে দিন! আমি নয় মাস পেটে রেখেছি আর আপনি এখন বলছেন আপনার বাচ্চা। দিয়ে দিন আমার বাচ্চাটাকে।
আরশ দিল না। নুসরাত আরশের টিশার্ট ধরে টেনে ফিরাতে পারল না। আইজানের দুঃখে কান্না করে দিল।
আরশ কান্নার শব্দ শোনে মাথা কাথ করে পিছু ফিরল। নুসরাত কে ভেঙ্গিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসল।
“তুই আইজান হওয়ার পর থেকে ন্যাকা হয়ে গিয়েছিস! কথায় কথায় কান্না করে বসিস। নে তোর বাচ্চা!
আইজানকে নিজের পেটের উপর রেখে এক হাত দিয়ে চেপে ধরল। নুসরাত কে টেনে নিজের এক হাতের উপর শুইয়ে দিল।
” এভাবে ঘুমালে ঘুমা নইলে ভাগ এখান থেকে। আমার বাচ্চা পাবি না তুই। শোনে রাখ এটা আমার বাচ্চা!
নুসরাত কথা বাড়াল না। আইজানকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল আরশের হাতের উপর। আরশ নিজের হাত আইজানের উপর থেকে নিয়ে এসে নুসরাতের হাতের উপর রাখল। অন্ধকারে ঠোঁটে ভেসে উঠল মৃদু হাসির রেখা। যা না দেখল নুসরাত, আর না দেখল অন্যকেউ!
ফ্রান্সে সকাল এগারোটা বেজে চাল্লিশ মিনিট। ইসরাত গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে এপার্টমেন্ট থেকে বের হলো। ঠোঁটে মৃদু মন্দ হাসি। ইসরাতের হাতে ঠান্ডা লাগায় হাত ওভার কোটের পকেটে ঢুকিয়ে নিল। ছোটো খাটো স্টোরের সামনেই দাঁড়াতেই স্টোরের ছেলেটা এগিয়ে আসলো। ইসরাত কে জিজ্ঞেস করল,”কমেন্ট পুইস-জে ভউস আইদার?
ইসরাত হা করে তাকিয়ে রইল। এখনো পর্যন্ত সে ফ্রান্সি ভাষা আয়ত্তে আনতে পারেনি তাই ছেলেটার কথার কিছু বুঝল না।
” আপনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন?
ছেলেটা টেনে টেনে জোড়া লাগিয়ে বলল,
“লিটেল বিট!
ইসরাত হেসে বলল চলবে। ছেলেটা ও সৌজন্যতা মূলক হাসল।
” প্রেগন্যান্সি কিট আছে?
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে প্রেগন্যান্সি কিট এনে দিল। ইসরাত টাকা দিয়ে এপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
এপার্টমেন্টে গিয়ে দেখল জায়িন চলে এসেছে। ইসরাত কে বাহিরে থেকে আসতে দেখে চোখ তুলে একবার তাকিয়ে কাজে বিজি হলো। ইসরাত শুধু জিজ্ঞেস করল,”কখন এসেছেন?
“পাঁচ মিনিট আগে।
ইসরাত কথা বাড়াল না। ওয়াশরুমে ঢুকল। কিট দিয়ে প্রেগন্যান্সি চেক করার পর যখন দেখল কিটে পজেটিভ আসছে, ইসরাতের হাত ঝড়ের গতিতে কাঁপতে লাগলো। হাতের সাথে তাল মিলিয়ে পা সহ পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।
নিজেকে সামলে কোনো রকম ওয়াশরুমে থেকে বের হলো ইসরাত। এক হাত দিয়ে অন্যহাত চেপে ধরে এগিয়ে গেল ড্রয়িং রুমের দিকে। জায়িনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। জায়িন ইসরাতকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে চোখ তুলে তাকাল।
” কি হয়েছে?
ইসরাত থরথর করে কেঁপে উঠল। জায়িন উঠে দাঁড়িয়ে ইসরাতের কাঁধ চেপে ধরল।
“কি হয়েছে? এরকম অস্বাভাবিক আচরণ করছ কেন?
জায়িন ইসরাতের এক হাত চেপে ধরল। ইসরাত ঢোক গিলে প্রেগন্যান্সি কিট জায়িনের দিকে এগিয়ে দিল কাঁপা হাতে। জায়িন প্রেগন্যান্সি কিট হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ইসরাতের দিকে তাকাল।
” কি?
ইসরাত অতিরিক্ত উত্তেজনা আমতা-আমতা করতে লাগলো।
“ও ওটা দেখুন।
জায়িন কপালে ভাঁজ ফেলে তাকাল। যখন দেখল কিটে পজেটিভ আসছে জায়িনের নিজের হাত কেঁপে উঠল। হাত থেকে শব্দ করে পড়ে গেল প্রেগন্যান্সি কিট। ইসরাতের দিকে তাকাতেই দেখল ইসরাত সমান হাড়ে কাঁপছে। জায়িন ঢোক গিলে বলল,” ইসরাত বসো!
ইসরাত বসল। জায়িন নিজে ও বসল ইসরাতের পাশ ঘেঁষে। হাত পা দু-জনের কাঁপছে। জায়িন ইসরাতের হাত চেপে ধরে কাছে আনল। দু-জন দুজনের দিকে তাকিয়ে হাত পা কাঁপা দেখে শব্দ করে হাসল। তারপর সোফায় শরীর এলিয়ে শুয়ে পড়ল। জায়িন ফিসফিস কন্ঠে বলল,”ধন্যবাদ তোমাকে রেই! অনেক অনেক ধন্যবাদ! এতো মিষ্টি একটা অনুভূতি অনুভব করানোর জন্য। দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর সব থেকে বড় উপহার এটা আমার জন্য।
ইসরাতের ও টনক নড়ল। হ্যাঁ, আজ তাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী। একটা স্পেশাল দিনে আরো একটা স্পেশাল খবর। এই দিনটা তার জন্য সত্যি একটা লাকি দিন।
“আপনাকে ও ধন্যবাদ! আমাকে এরকম একটা অনুভূতির সাথে পরিচিত করানোর জন্য। আর দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর শুভেচ্ছা।
চারমাস পরের কথা,
ইসরাতের পেট অস্বাভাবিক রকম ফোলে গেছে। জায়িন চার মাসের সময় এমন পেট ফোলা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ল। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর জানাল এসব নরমাল অনেক ক্ষেত্রে এরুপ পেট ফোলে যায়।
প্রেগন্যান্সির জন্য ইসরাতের মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে। জায়িনের সাথে ভালো কথা বলতে গেলে ঝগড়া লেগে যায় ইসরাতের। জায়িন শান্ত শিষ্ট মেজাজের হওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে সব সহ্য করছে।
সেদিন খেতে গিয়ে সব উগলে ফেলে দিল ইসরাত। একে তো অস্বাভাবিক পেট ফোলা, দুইয়ে খাবার খেতে পারে না, তার উপর ইসরাত সারাক্ষণ মেজাজ খারাপ হয়ে থাকে। ভালো কথা মুখ দিয়ে বের হতে গিয়ে তেতো কথা বের হয়। রুম একটু অগোছালো দেখলেই চিৎকার করা শুরু করে। ইসরাতের মাতৃকালীন অত্যাচার জায়িন মুখ বুজে সহ্য করছে। এটা তো সামান্য! নুসরাতের কথা মনে হলো তো তার মাথা ঘুরে এখনো! শেষ রাতের দিকে মেয়েটা তাকে আর ইসরাত কে কিরুপ অত্যাচার করত তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে এখনো। কি ভয়ংকর ছিল দিনগুলো?
আজ ইসরাতকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে জায়িন জানতে পাড়ল ইসরাতের প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডাক্তার নিশ্চিত করেছেন কোনো কিছু হবে না। জায়িন এপার্টমেন্টে ফিরার পর থেকে চোখ মুখ অন্ধকার করে বসে আছে।
দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে ইসরাত বমি করে ভাসিয়ে দিল। জায়িন ইসরাতের দিকে তাকাল। গুলুমুলু মেয়েটা রোগা হয়ে গিয়েছে আগের তুলনায়। গলার, শরীরের হাড্ডি বের হয়ে গিয়েছে। সব কিছু পরিস্কার করে জায়িন ইসরাতকে ড্রয়িং রুমে ডেকে পাঠাল। ইসরাত এসে বসল। নাকে কিছু একটার গন্ধ লাগতেই পেট ঠেলে বমি বের হতে চাইল। ইসরাত কপালে ভাঁজ নিয়ে জায়িনের দিকে তাকাল।
“কি? ডাকছেন কেন?
জায়িন ঠোঁট কামড়ে বলল,
” এবোর্শন করে ফেলি রেই! আমার বেবি চাই না।
ইসরাত জায়িনের দিকে শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে চলে গেল রুমে। রুমের দরজা বন্ধ করল ভিতর থেকে শব্দ করে। জায়িনের সাথে কোনো রুপ বাক্য ব্যয় করল না।
এক সপ্তাহ পরের কথা,
ইসরাত রাগ করে জায়িনের সাথে কথা বলে না, এবোর্শন করানোর কথা বলার পর থেকে। জায়িন রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা অনেক ভাবে করেছে কিন্তু ইসরাত ঠায় হয়ে রয়েছে।
রাতে ইসরাত একা বেডে শুয়ে ছিল। জায়িন ইসরাতকে পিছন থেকে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল। ইসরাত জায়িনের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল জায়িন ছাড়ল না, উল্টো আরো শক্ত করে ধরল।
জায়িন ইসরাতের ঘাড়ে মুখ গুজে বলল,
“রেই আমার সাথে কথা বল! আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ইসরাত জায়িনের সাথে কথা বলল না। শুয়ে থাকল চুপচাপ।
” রেই আমার আমার দিকে তাকাও।
ইসরাত চুপ! জায়িন জোর করে ইসরাতকে নিজের দিকে ফিরাল। জায়িন ইসরাতের নাকে,মুখে,গালে, চোখের পাতায়,ঠোঁটে চুমু দিল। রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করল। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “প্লিজ রেই,ফর গিভ মি। আ’ম স্যরি রেই! আম রিয়েলি স্যরি!
ইসরাত বেড থেকে উঠে বসল। জায়িন কান্না চোখে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে রইল। ইসরাত হাত বাড়াতেই জায়িন ঝড়ের গতিতে ইসরাতকে জড়িয়ে ধরল। ইসরাত হেসে উঠল। জায়িন ইসরাতের কাছে গিয়ে পেটে চুমু খেল। ফিসফিস করে পেটের কাছে বলল,” পাপা স্যরি! পাপাকে মাফ করে দাও! আর এরকম কথা আমি জীবনে মুখে আনব না। আই এম স্যরি!
সন্ধ্যা বেলা,
আইজান বিছানার উপর বসে খেলা করছে। নিজে নিজে কথা বলছে।
“আমা, আবা, দাইদ্দা, নাইন্না!
নুসরাত শুকনো কাপড় গুছিয়ে কাবার্ডে রাখছে আর ছেলের সাথে কথা বলছে। আইজানের মাড়ি দিয়ে ছোট ছোট সূচাল দাঁত বের হয়েছে। যখন খিলখিল করে হাসে তখন দাঁতগুলো দেখা যায়।
” আমা মা!
নুসরাত আইজানের দিকে তাকিয়ে হাসল। কাপড় রাখতে রাখতে বলল,”বলুন আব্বা!
“আই নাই নাই!
নুসরাত হেসে উঠল। মাথা দিয়ে আইজানের কপালে ধুপ ধাপ মারল।
” আব্বা আমার কি বলিস? এসব আমি বুঝি না! তোর আই নাই নাই জাপানিজ কথা।
আইজান খিলখিল করে হাসল। মুখ দিয়ে শব্দ করল,” আমা মা!
“জি আব্বা!
আরশ এসে দেখল মা ছেলে দু-জন মিলে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরশ কোট সোফার উপর রেখে লাফ মেরে বিছানায় উঠে দু-জনকে জড়িয়ে ধরল।
নুসরাত উপরে থাকায় ব্যথা পেল। নাক মুখ কুঁচকে বলল,” কোন জলহস্তি রে? আমার উপর উঠেছে!
আরশ নুসরাতের কানের কাছে চুমু খেল। আইজানকে নিতে চাইল নুসরাত শক্ত করে ধরল। আরশ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে বলল,”ছাড় আমার ছেলেকে!
নুসরাত ভ্রু উচিয়ে জানতে চাইল,
“কিসের ছেলে?
আরশ আইজানের একপাশ টেনে ধরল নুসরাত অন্যপাশ টেনে ধরল। নুসরাত চোখ রাঙিয়ে বলল,” আমার বাচ্চা..!
আরশ নুসরাতকে দমাতে আরো জোরে চ্যাঁচিয়ে বলে ওঠল,”এটা আমার বাচ্চা!
নুসরাত শক্ত হাতে আইজানকে নিজের দিকে টেনে নিতে নিতে বলল,”কান খুলে শুনে রাখুন, এটা আমার বাচ্চা। আমি জন্ম দিয়েছি।
আরশ ভেংচি কাটল। কিড়মিড়িয়ে বলল,
“সাপ্লাইয়ার তো আমি ছিলাম,তাহলে বাচ্চা ও আমার।
আইজান আরশ আর নুসরাতের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। দু-জনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভয়ে কেঁদে উঠল। নুসরাত ছেড়ে দিল আইজানের পা। আরশ নুসরাতের দিকে ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আইজানকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করল।
আইজানের কান্না থামতেই সে মায়ের কোলে আসার জন্য মুচড়া মুচড়ি শুরু করল। নুসরাত আরশকে তাচ্ছিল্য করে হেসে উঠল। হাত বাড়িয়ে কোলে নিল আইজানকে। আইজান লাফ মেরে চলে আসলো নুসরাতের কাছে।
” আমার আব্বাটা!
নুসরাত গালে চুমু খেল। আরশ নুসরাতের কোমর চেপে ধরে কাছে টেনে আনলো। নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,”চল একটা গেইম খেলি! আইজানকে বিছানা ছেড়ে দিব ও যার দিকে যাবে তার কথায় সব হবে।
নুসরাত হাসল। আইজানকে বিছানায় বসিয়ে দিতেই সে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। নুসরাত আবার বসিয়ে দিল। বলা যায় না কখন আবার পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়?
নুসরাত আর আরশ হাত বাড়িয়ে দিল। আরশ আইজানকে ডাক দিল তার কাছে আসার জন্য দুই হাত বাড়িয়ে। নুসরাত মুখে হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, হাত বাড়িয়ে!
আইজান আরশের দিকে তাকিয়ে আরশের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে লাগলো। আরশ বিজয়ের হাসি হাসল। নুসরাতকে জিহ্বা বের করে ভেঙ্গাল। নুসরাত হেরে গিয়ে ও নির্ভেজাল হাসি দিল। আইজান আরশের কাছে এসে নুসরাতের দিকে চলে গেল। ধপ করে আরশের হাসি নিভে গেল। নুসরাতের হা হা করে হেসে উঠল। হাসির শব্দে পুরো রুমে ঝংকার তুলল। আইজান মায়ের হাসির সাথে নিজেও মুখে হাত ঢুকিয়ে হেসে উঠল।
রাত আটটা,
আরশ নুসরাতের পাশে শুয়ে অনেক্ক্ষণ ধরে মুচড়া মুচড়ি করছে। নুসরাত আরশের দিকে তাকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে শীতল গলায় জিজ্ঞেস করল,”কি?
আরশ নখ মুখে ঢুকিয়ে কামড়াতে কামড়াতে দুঃখি গলায় বলল,”এই আইজানটা গাঁধা হয়েছে! নিজের বাপকে চেনে না। এটা আমার সন্তান হতেই পারে না।
নুসরাত আরশের ফালতু কথায় কান দিল না। আইজানের পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। ঠোঁটে চুমু খেল।
আরশ হিংসার চোখে তাকাল আইজানের দিকে। নুসরাতের হাত চেপে ধরে বলল,”তুই যতোটা আদর আইজানকে করিস ততোটা আদর আইজানের বাপকে করিস না।
নুসরাত রাগী চোখে তাকাল। আরশের মুখ ঠেলে সরাতে সরাতে বলল,”আইজানের বাপ বাচ্চা নয় যে, তাকে আদর করতে হবে।
আরশ নাক ফুলিয়ে নিল। নুসরাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল,”আমার আরেকটা বাবু চাই।
নুসরাত আরশের কথায় নড়ল না। মুখ ঘুরিয়ে রেখে আরশকে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করল,”আবার অজ্ঞান হওয়ার ইচ্ছা আছে?
আরশ থতমত খেল। ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,”ও ওটা, অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।
“এইবার ও অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে মরে টরে যান তাহলে আমার আর আমার বাচ্চার কি হবে?
আরশ নাক ফুলিয়ে তাকাল নুসরাতের দিকে। রাগ করে গালে কামড় মারল। নুসরাত নড়ল না!
” তুই আমাকে খোটা দিচ্ছিস অজ্ঞান হওয়ার! ওটা তো অতিরিক্ত জার্নি আর ক্লান্তির জন্য বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম।
নুসরাতের নির্লিপ্ত গলার আওয়াজ,
“হ্যাঁ খোটা দিচ্ছি! দূরে সরুন তো এক বাচ্চার বাপ হয়ে ও ঘষাঘষি শেষ হয়নি। আমার সাথে কি মধু লাগানো যে সারা দিন রাত চিপকে থাকেন?
আরশ মাথা নাড়াল। নুসরাতের উপর দিয়ে লাফ মেরে আইজানের পাশে গেল। আইজানকে টেনে নিজের অন্যপাশে নিয়ে নুসরাত কে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে বুকের সাথে।
আইজান বাপের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁট টেনে কেঁদে উঠল। আরশ রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল। অসহায় চোখে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” রোমান্সই তো করতে পারলাম না ঠিকভাবে, আর বাচ্চা পয়দা হয়ে গেল।
আইজানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আরশ বলল,
“তোকে কে বলেছিল এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা। আসার সময় পেলি না! আরেকটু রোমান্স করার পর আসলে কি হতো? থাপড়ে লাল করে ফেলব আরেকবার আমার বউয়ের পাশ ঘেষবি তো।
প্রিয় প্রণয়িনী পর্ব ৬৭ (৩)
আইজান আরশের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠল শব্দ করে। নুসরাত বাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে হিহি করে হেসে উঠল। আরশের ধমক খেয়ে আইজান হাত বাড়িয়ে দিল নুসরাতের কাছে আসার জন্য। নুসরাত আরশকে ডিঙ্গিয়ে আইজানকে নিজের কাছে আনতে আনতে বলল,” আমার মা পাগলা ছেলে! আমার আব্বাটা!
আরশ আইজান আর নুসরাত কে ভেংচি কাটল। আইজানের গাল চেপে ধরে চিমটি কাটল। নুসরাতের নাক চেপে ধরে মাথা দিয়ে কপালে মারল। ভেঙ্গিয়ে বলল,”আমার মা পাগলা ছেলে! আমার আব্বা! সর মা ছেলে আমার কাছ থেকে। যত্তসব ন্যাকামি!