তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৫
নীল মণি
বর্ষার এই গভীর রাতে আকাশটা যেন নিঃশব্দে কাঁদছে। অজস্র বৃষ্টির ধারা ছাদে, গাছে, জানালার কাঁচে পড়ে এক অদ্ভুত সুর তোলে এদিকে ভেসে আসছে সাউন্ড বক্স এর গানের শব্দ ও কিন্তু এদিকে
বৃষ্টির এমন কথাগুলো তিয়াশার অন্তরে এমন এক ধাক্কা এনে দিল, যেন শত সহস্র বজ্র একসাথে তার মাথার ওপর নেমে এলো,পায়ের নিচের মাটি শুধু সরে যায়নি, যেন চারপাশের সমস্ত বাস্তবতা এক ঝড়ো হাওয়ায় গুঁড়িয়ে গেল। তার বুকের ভেতরটা হঠাৎ শুন্য হয়ে গেল, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো চোখের পলকে সে নিজেকে এক বিস্মৃত, দিকভ্রান্ত শূন্যতার মাঝে খুঁজে পেল। সে বিশ্বাস ই করতে পরছে না সে এই মাএ কি শুনল —–
” আপু তুই এইমাত্র কি বললি?”
বৃষ্টি দারিয়ে আছে নিঃশব্দে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে , তার শরীর বরফের মত কঠিন হয়ে আছে ।
” আপু প্লিজ বল ?”
বৃষ্টির ঠোঁট কাঁপছিল, কিন্তু গলায় ছিল এক অবিচল সংকল্প।
সে নিচু গলায় বলল,
” আমি প্রেগনেন্ট তিয়ু।”
তিয়াশা যেন মুহূর্তে শূন্য হয়ে গেল। চোখ বড় বড় হয়ে তাকিয়ে রইল আপুর মুখের দিকে।
“কি বলছিস তুই! কাল তোর বিয়ে জায়ন ভাইয়ার সাথে… এসব কী বলছিস? এটা মিথ্যে… এটা মিথ্যে বল না?”
কাঁপা কাঁপা হাতে বৃষ্টির দুই বাহু ধরে নাড়িয়ে বলল সে।
বৃষ্টি থেমে গিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলল, তারপর ধীরে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“জায়ন ভাইয়ার ভালোবাসা অন্য কেউ… আর আমিও… আমি ভালোবাসি অন্য কাউকে?”
একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল ঘরে, বাইরে তখনও বৃষ্টি ঝরছিল।
কিন্তু সেই বৃষ্টির শব্দে মিশে ছিল দুই বোনের ভেঙে পড়া কান্নার শব্দ —
” আপু তাহলে তুই আগে বললি না কেন ? এই সব হারাম আপু ?”
” হারাম না তিয়ু আমি বিবাহিত আমার বিয়ে হয়ে গেছে
আরো ৭ মাস আগে ।”
তিয়াশার চেতনাজগতে আবারও এক ঝড় উঠল,
যেন বাস্তবতা তাকে দ্বিতীয়বার বিষাক্ত ছোবল দিল এই আজকের দিনে। সে মানতেই পারছে না —
” আমি সবাইকে বলতে যাচ্ছি ।”
এই বলে তিয়াশা দড়জার দিকে পা বাড়াল —
তার আগেই এক বাক্য ছুঁড়ে দিলো তার দিকে হা তার বাড়ানো পা এক নিমেষেই থমকে গেলো
“আমার সন্তান এর কসম রোদ তুই কাউকে কিছু বলবি না, কাউকে না । ”
” কি বললি আপু তুই এটা , ?”
তিয়াশার ভিজে শাড়ি থেকে এখনো জল পড়ছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।
” তোর দুলাভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে , আমাকে যেতে হবে কিন্তু আমি গেলে যদি আম্মুর কিছু হয়ে যায় , নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পাড়বো না।”
তিয়াশা এবার রেগে গেলো বৃষ্টির কথায় —
” একবার বাসায় বলে দেখতি আপু । কিসের দুলাভাই কোন দুলাভাই।”
” পারিনি ভয়ে, আমার সন্তানের আব্বু তোর দুলাভাই ”
“আপু আমার অসুস্থ লাগছে তোর কথায়”
“আমাকে একটু সাহায্য কর নইলে আমি মরে যাবো…”
বৃষ্টির এমন উক্তিতে তিয়াশার শরীর ভয়ে কাপছে তার আপু কি পাগল হয়ে গেছে —-
“কি বলছিস এসব! তোার মাথা ঠিক আছে, আপু? একবার, একবার অন্তত কথা বলে দেখ না!”
বৃষ্টির কণ্ঠ তখন জলের মতোই টলমল চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে মুখ, আর ঠোঁট কাঁপছে শব্দহীন বেদনায়
“ওরা মানবে না… কখনোই না। বড় আব্বু, আমাদের আম্মু—তারা কখনোই মেনে নেবে না, কখনো না…”
” তুই এরম ভিজলি কি ভাইবা ? না কি বৃষ্টির নিচে দারায়েই রোমাঞ্চ টা সাইড়া নিছস?”
সাগরের এই কথায় জায়ন এক গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে।
চোখে ছিল একরাশ ধৈর্যের শেষ সীমা ছুঁই ছুঁই অভিব্যক্তি।
এদিকে আশেপাশে থাকা সবাই মুচকি মুচকি হাসছে, তবে ইউভি একটু লজ্জায় গলা খাঁকরিয়ে নিলো। কারন যতোই হোক তিয়াশা যে তার বোন , আর তার সামনে এইসব একটু লজ্জার ই।
জায়নের স্বভাব এমনই সে নিজেই লাগামছাড়া, মুখের ওপর যা খুশি বলার অভ্যেস তার পুরনো। কিন্তু আজ… আজকের বৃষ্টি ভেজা মুহূর্তটা ছিল অন্যরকম।
তার প্রাণপ্রিয় কিশোরী,যে একটাও জবাব না দিয়ে তাকে একটা অস্পষ্ট, ভারী পরিবেশে রেখে চলে গেল ,তা কিছুতেই জায়নের মনে গাঁথা খুলতে দিচ্ছে না।
বারবার মনে পড়ছে সেই মুহূর্তটা,যেন চোখের সামনে ভাসছে সেই ভেজা মুখ, কাঁপা ঠোঁট।
এইমাত্র যে কাছে ছিল, আর এখন যেন অনেক দূরে… তার নিজের বাচ্চা হবু বউ।
সে নিজের গা থেকে ভেজা পাঞ্জাবিটা পর্যন্ত খুলছে না
কারণ, ঐ পাঞ্জাবির ভাঁজে মিশে আছে সেই কিশোরীর ঘ্রাণ।
“আমি যদি রোমান্সও করি, তাতে কার বাপের সাধ্য আছে আমায় কিছু বলবে?”
জায়নের এই কষে ছোড়া বাক্যে সাগর নিজেই যেন হকচকিয়ে গেলো।
“ভাইয়া, চেঞ্জ করে আসো। না হলে নিমোনিয়া ধরে বসবে।”
আকাশের এই কথায় পলাশ সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
“তোর ভাইয়ারে লাভ এরিয়াতে ধরাইছে ভাই। ওইসব নিমুনিয়া-টিমুনিয়া কিসসু করতে পারবে না, ফাউয়া সব!”
জায়নের চোখ হঠাৎ জ্বলে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল,
“এ বা **র ফ***কিং কথা বার্তা ছাড় তো।”
এই বলে সে হেঁটে বাসার দিকে চলে গেলো।
পেছনে দাঁড়ানো বন্ধুরা তখন চুপ।
কারণ, তারা বুঝে গেছে কিছু একটা খুব গভীরে ঘটে গেছে আজ।
“ছার জায়ন রে, তো মামা তোমরা দুই জন ভাইয়ার দলে যোগ দিসো।”
” কেন সাগর ভাই এরম কেনো বললা ”
” থাক ভাই তোমরা দুই ভাই যা কাপল ড্যান্স দেখায় দিলা মনে হইতাছিল কোন বলিউড মুভির সং দেখতাছি।”
ইউভি লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছে
” ভাইয়া কি যে বলো না।”
আকাশ ও বলে উঠলো —
” এই সাগর ভাই শুধু ফাউয়া কথা কয়।”
“ঠিক বলছিস আকাশ নিজেরা যে কত নাটক দেখালো বুক চিন চিন করে ওনাদের ।”
আহান এর কথায় মুখ বন্ধ হয়ে গেলো সাগর , একটু হাসি ঠাট্টায় চলল সময় টা।
এদিকে জায়ন শাওয়ার সেরে একটা টাওয়াল কোমড়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল , তার ওই মেদহীন, লোমহীন অ্যাবস যুক্ত কৃত্তিম পুরুষালি সুঠাম দেহ দেখে যে কেউ নিজের ভাবনায় ভেসে যাবে ।
চুল থেকে বিন্দু বিন্দু জল ললাট বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বুকে, গা ছুঁয়ে মিশে যাচ্ছে হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা অস্থিরতায়।
মাথার ভেতর যেন একটানা বাজছে সেই মুহূর্ত-
রোদের সংগে বৃষ্টি ভেজা মুহুর্ত কিছুতেই মস্তিস্ক থেকে সরতে চাইছে না ,
এই ঠান্ডা শাওয়ারও যেন তার গায়ে জমে থাকা আগুন নেভাতে পারলো না।
সব ভিজে গিয়েছে, কিন্তু তবুও মনটা শুকনোই রয়ে গেল শুধু একরাশ হাহাকার নিয়ে।
“তার কিটি ক্যাট…”
এই নামটা একবার মনে হতেই বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার বেজে উঠলো।
তার রোদ তো কিছু না বলেই চলে গেছে , কিন্তু সে আর অপেক্ষা করতে পারবেনা ,
কিন্তু জায়ন বুঝে গেছে সে আর অপেক্ষা করতে পারবে না।
সঙ্গে সঙ্গেই লাগেজের চেন টেনে খুলে, ভেতর থেকে একটা ধূসর ব্যাগি কার্গো ট্রাউজার আর কালো টিশার্ট টেনে বের করলো।
ভেজা শরীরে দ্রুত পোশাক বদলে নিলো, চুল ঝেড়ে হাতে ঘড়ি পরলো।
তারপর কোনো কিছু না ভেবে দরজাটা খুলে দিলো জোরে ঠেলে, বেরিয়ে পড়লো বাইরে।
আজ উত্তর চাই—-
“আপু, প্লিজ ফিরে চল… আমার খুব ভয় করছে। এইভাবে যাস না, প্লিজ আপু!”
“না তিয়ু, আমাকে যেতেই হবে। তুই বোঝার চেষ্টা কর।”
“একবার অন্তত আম্মুর কথা ভাব। প্লিজ আপু, কেউ এমনভাবে রাতের অন্ধকারে যায় না!”
“এই রাতের আঁধার যদি আজকে আমার সঙ্গী না হয়, তাহলে হয়তো আমার জীবনের সব আলো একে একে নিভে যাবে, তুই বুঝবি না তিয়ু।”
“আম্মু যদি জানতে পারে তাহলে অসুস্থ হয়ে যাবে আপু! প্লিজ… আমাদের কথা একটু হলেও তো ভাবিস!”
“তুই আমার জায়গায় থাকলে বুঝতিস। প্লিজ, আমার অবর্তমানে আম্মু-আব্বুর খেয়াল রাখিস, পরিবারের খেয়াল রাখিস। কিন্তু এখন… আমাকে এই যুদ্ধে জিততেই হবে তিয়ু। না হলে আমি শেষ হয়ে যাবো।”
তিয়াশার চোখে তখন শুধুই জলের পর্দা। তার কণ্ঠ কাঁপছে, হৃদয়টা যেন ঠাণ্ডা হাওয়ায় জমে যাচ্ছে। তার সব চেষ্টা ব্যর্থ সে আর আটকাতে পারলো না তার আপুকে। সে হলো রাতের এই নিষিদ্ধ যাত্রার একমাত্র সাক্ষী।
সোডিয়াম বাতির হালকা আলোয় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দুই বোন। সামনের দিকের রাস্তায় বিয়েবাড়ির ঝলমলে আলো যেন আরেক জগতের ছবি আঁকছে — আর এই পিছনের অন্ধকার পথ বেছে নিয়েছে বৃষ্টি, তার নিজের এক ‘নতুন জীবনের’ পথের জন্য। সবার চোখ এড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা।
ঠিক তখনই হঠাৎ তিয়াশার সামনে এসে দাঁড়ায় একজন পরিচিত মানুষ লম্বা গড়ন, শ্যামলা বর্ণ, ছিমছাম চেহারা। তার চোখে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা।
তিয়াশা চমকে উঠলো।
“নাজিম ভাইয়া?! আপনি এখানে? এখন? আপনি এখানে কী করছেন?”
তিয়াশার গলায় আতঙ্ক — সে জানে যদি এই লোকটা এখন বাড়িতে গিয়ে সব বলে দেয়, তাহলে আর কিছুই রক্ষা করা যাবে না। নাজিম কে ভালোভাবেই চেনে , দের বছর আগে নাজিম এর বোনের বিয়ের দাওয়াত ছিল পুরো চৌধুরী বাড়ির জায়ন এর বন্ধু হিসাবে , তাই তিয়াশার তাকে চিনতে কোন অসুবিধা হয়নি যখন তার আপুর সঙ্গে কোথাও যেত মাঝে সাজে রাস্তা ঘাটেও দেখা হয়েছে তাদের ।কিন্তু তার সব ভাবনাকে মুহূর্তেই ভুল প্রমাণ করে দিল নাজিম..
নাজিম শান্ত গলায় বলল
“তিয়াশা… আমি আসলে বৃষ্টিকে নিতে এসেছি।”
তিয়াশা যেন শুনেও বিশ্বাস করতে পারলো না। বুকের ভেতরটা ধ্বসে পড়লো তার। সে খুব করে চাইছিল, তার আশঙ্কা যেন ভুল হয়।
কিন্তু না… তার চোখের সামনে দাঁড়ানো আপু নিজেই সেই শেষ কথাটা বলে দিল, যেন সব প্রশ্নের জবাব চিরতরে শেষ করে দিতে চায়
“তিয়ু… নাজিমই আমার সন্তানের বাবা।”
তিয়াশা এই কথা শুনে হঠাৎ করেই মাটিতে বসে পড়ল যেন তার পা দুটো এক মুহূর্তে অবশ হয়ে গেছে। চোখের পলকে সবকিছু কুয়াশার মতো ঝাপসা হয়ে এলো।
এ কী শুনছে সে? কীভাবে সম্ভব?
এই রাতে, এই রাস্তায়, এই অন্ধকারে — সে আজ একের পর এক চমকে যাচ্ছে। শুরুর চমকটা হয়তো কিছুটা শান্তির ছিল, অন্তত আশা ছিল সেখানে। কিন্তু এখন? এখন প্রতিটি ঝটকা যেন বুকের ভেতর গিয়ে কাঁটার মতো বিঁধছে।
নাজিম ভাই!
যে নাজিম ভাই জায়ন ভাইয়ার বন্ধু, সেই কী করে… কী করে এমন করলো? কী করে পারলো?
না… না, কি ভাবছে সে এসব ভালোবাসা যে এসব কিছুই দেখেনা , মন বলে ,অনুভব বলে কিছু থাকে —
সে এইটুকু বুঝে গেছে তার কিশোরী বয়সের সরল হৃদয় দিয়ে,
ভালোবাসা কখনো সময় দেখে না, বাস্তবতা দেখে না, দেখে না বয়স, দেখে না নিয়ম, দেখেও দেখে না জাত–পাত বা সম্পর্ক।
ভালোবাসা তো কেবল… ঘটে যায়। নিঃশব্দে। নিঃশর্তে।
ঠিক যেমন তার সাথেও হয়েছে।
সব জেনেও, সব বুঝেও, তবু কেন জানি না তার মনটা বারবার জায়ন ভাইয়ার দিকেই ফিরে যায়।
লোকটা তাকে কত বকেছে এই দুই মাসে, কতবার ধমকেছে, এমনকি মেরেছে পর্যন্ত
কিন্তু কিছুতেই তার অনুভূতিটা তো কমেনি… বরং বেড়েছে। অজান্তেই।
এটা সে চায়নি। তবু হয়েছে। যেন মনটা কারও শাসনে চলে না।
তিয়াশা চোখের জল থামাতে পারছে না। চোখের সামনে যেন পৃথিবীটা উল্টে যাচ্ছে, অথচ আকাশের তারা ঠিকই জ্বলছে
জ্বলছে বৃষ্টির মুখেও, আর সেই আলোয় আজ তিয়াশা বুঝে গেল,
প্রেম মানেই আনন্দ নয়… প্রেম মানেই সব সময় স্বীকৃতিও নয়। তবুও ভালো থাকার একটা আশা,
” আমার আপুর খেয়াল রাখবেন ভাইয়া ।”
তিয়াশার মুখ থেকে শুধু একটাই কথা বের হলো। নাজিম তিয়াশার কথার জবাব দিলো —
” তোমার আপুর খেয়াল না রাখতে পারলে হয়তো , নিজেই বেখেয়াল হয়ে যাবো। ”
আর কিছু বলার ভাষা রইলো না , তিয়াশা উঠে দাড়িয়ে নিজের আপু কে জড়িয়ে দুই বোন কান্নার স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দিলো……
” বোন তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট, জায়ন কে প্লীজ আমার কথা বলো না । নিজের মুখ দেখাতে পারবো না , তাই আমি আমার প্রিয় বন্ধুদের কাছ থেকে আগেই বিদায় নিয়েছি। এখন আমাদের যেতে হবে ।”
নাজিম এর কথায় তার কাছে কোন জবাব নেই , চলে গেল তার আপু কে নিয়ে তার সামনে থেকে এই অন্ধকার
ঘটনার সাক্ষী রেখে —-
” আপু ভালো থাকিস ।”
জায়ন বাগানবাড়ির প্রতিটা কোণা তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেরিয়েছে।
কিন্তু কোথাও… কোথাও নেই তার তিয়াশা।
একটা অস্থিরতা গলার কাছে এসে আটকে আছে, বুকের ভেতর ধুকপুক করে বাজছে অজানা আশঙ্কার ঢাক।
এক এক করে অনন্যা, তার আম্মু, এমনকি রায়ানকেও জিজ্ঞেস করেছে, কেউ তিয়াশাকে দেখেনি আলো যাওয়ার পর থেকে।
আম্মু জিজ্ঞেস করেছিল,
“তিয়াশাকে খুঁজছো কেন?”
জায়ন চোখ সরিয়ে বলেছিল–
“একটা দরকার ছিল…”
না, সে বলতে পারেনি সত্যি কথাটা।
বলতে পারেনি, সেই “দরকার”টা আজ তার বুকের ব্যথার নাম।
জায়ন আরোহীকে দেখে সে আরোহীকে ও জিজ্ঞেস করল
“আরোহী, তুমি রোদকে দেখেছো?”
আরোহী ঘুরে দাঁড়াল, গলায়ও টান ছিল
“না ভাইয়া… সেই লাইট যাওয়ার পর থেকে আমিও খুঁজছি। কোথাও নেই তিয়াশা।”
জায়ন আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না।
চোখের পেছনে রোদের হাসিটা যেন বারবার ঝলসে উঠছে।
এই মেয়েটা তাকে পাগল করে দেবে।
এক মুহূর্ত শান্তি দেয় না।
৩০,৪০ মিনিট হয়ে গেছে…
কোথায় তার পাগলী কিশোরী?
পাগলা কুত্তার মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছে সে, চারদিক তোলপাড় করে।
“এই মারিয়া! রোদকে দেখেছিস?”
মারিয়া তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিল, হঠাৎ থেমে দাঁড়াল।
“না ভাইয়া, দেখিনি আপুকে।”
জায়ন পেছন ফিরতেই, মারিয়া হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল,
“ও ভাইয়া! একটু আগে দেখলাম তিয়াশা আপু আর বৃষ্টি আপু ওই বাগানের দিকে যাচ্ছিল!”
চোখ মেলে তাকাল জায়ন
“কি বললি? এত রাতে বাগানে! কেন?”
“জানি না ভাইয়া, হঠাৎ মনে পড়লো… আপুরা ওই দিকেই গিয়েছিল।”
আর এক মুহূর্তও দেরি করল না জায়ন।
সে ছুটল।
শব্দহীন পায়ে, আগুন জ্বলতে থাকা চোখে সে বাগানের দিকে দৌড়ে গেল।
মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তার গুঞ্জন।
কণ্ঠ ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল—
“রো—দ!!!”
“রোদ! কোথায় তুই?! রোদ, সাড়া দে জান!”
“রোদ, প্লিজ…!”
সে ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে খুঁজতে লাগল গাছগাছালির ভেতর।
ঝোঁপের আড়াল, ফুলের বেড, ছায়ার ফাঁকে ফাঁকে চোখ চালাচ্ছে।
“রোদ! বৃষ্টি! কোথায় তোরা…?”
“রোদ, তোকে যদি একবার পাই, তোকে আমি খুঁজে পাই মজা দেখাবো। আমায় এই টেনশনে রাখার শাস্তি তোকে দিতেই হবে!”
কিন্তু… কোথাও নেই তারা।
না কোনো আওয়াজ,
না কোনো ছায়া,
না কোনো প্রতিধ্বনি।
এই অন্ধকার, এই নিশুতি রাত জায়নের কানে কেবল নিজের দমবন্ধ হাঁপ ধরা নিঃশ্বাসের শব্দ।
একটু রাস্তা এগোতেই জায়নের চোখ আটকে গেল ,
সামনেই থ্রি-পিস পরা তিয়াশা, মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হেঁটে আসছে।
চাঁদের ম্লান আলোয় তার সাদা ওড়নার প্রান্ত দুলছে, পায়ের নিচে শুকনো পাতা মচমচ করে শব্দ তুলছে, কিন্তু তার মুখ যেন কোনো অভিমান আর ক্লান্তির জবাব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এক মুহূর্তও না ভেবে ছুটে গেল জায়ন।
আর এক পা, আরেক পা হঠাৎই কাছে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তিয়াশাকে।
হাসপাস করছে , অস্থির নিঃশ্বাসে সে বলে উঠল,
“কোথায় চলে গেছিলি জান?”
“তুই জানিস না আমি কত খুঁজেছি তোকে… আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল টেনশনে!”
তিয়াশা চমকে উঠল জায়নের ছোঁয়ায়।
তার চোখে তখনও শুকায়নি কান্নার দাগ, ঠোঁট কাঁপছে, গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না।
সে চুপ নিঃশব্দ যেন নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে চাইছে সেই বুকে, যে বুকে সে জেনে গেছে এই বুকে শুধু তার নাম।
জায়নের হাত জোরে চেপে আছে তার পিঠে।
আর গলায় সেই চিরচেনা রাগ-ভরা মায়া
“কিছু বলছিস না কেন?”
“একটা বারও ভাবলি না আমার কী হতে পারে?”
“তুই জানিস না রোদ… তুই হারিয়ে গেলে আমি নিজেকে খুঁজে পাবো না আর!”
তিয়াশা ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে,
জায়ন ভাইয়ের বুকের ভেতর ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে, আবার তার চোখের দিকে তাকাতেও ভয় লাগছে।
সে আমতা আমতা করে কাঁপা কণ্ঠে বলল
“আ… আ… আমি… আমি…”
জায়নের কপালের শিরা চেপে উঠল। সে চোখ ছোট করে বলল
“আমি? আমি কী? ঠিক করে বল… আর বৃষ্টি কোথায় তিয়াশা?”
ব্যাস, এইটুকুই—আর কিছুই লাগল না।
তিয়াশার বুকের মধ্যে যেন বাজ পড়ল। চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার, ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।
সে কিছু বলতে পারছে না। গলার ভেতর থেকে শব্দ যেন আটকে আছে।
তার শরীরটা জড়সড়, যেন শরীরজুড়ে এক ঠান্ডা ঘামের পরত জমেছে।
চোখের নিচে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল — সেই জল শুধু কান্নার নয়, লজ্জা, আতঙ্ক আর অপরাধবোধে মিশে তৈরি এক অজানা স্রোত।
জায়ন এবার এক ধাপ এগিয়ে এসে কণ্ঠ নিচু করল, কিন্তু সেই স্বরে চাপা রাগ আর অস্থিরতা ঝরে পড়ছে
মনে মনে ভাবছে সে জানল কি করে যে বৃষ্টি তার সঙ্গে ছিল তারা এদিকে এসেছে , সে এখন কি করেই বা প্রশ্ন করবে , সে যে নিজেই দাড়িয়ে আছে হাজারো প্রশ্নের সামনে ……
” কি রে বল তোরা এদিকে কেন এসেছিলিস, আর বৃষ্টি কোথায় বল ?
তিয়াশা কি বলবে , সে আবার ও পালিয়ে গেলো বাসার দিকে ….
জায়ন এর কথায় তিয়াশা এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকল –চোখে জল, গলায় কাঁপুনি। কিন্তু তার ভেতরের ভয়টা আবার জয় পেল।
সে আর মুখোমুখি হতে পারল না জায়ন ভাইয়ের।
চোখ সরিয়ে আচমকাই পেছন ফিরে ছুটে গেল —
বাসার দিকে… নিজের আশ্রয়ের দিকে… নিজের পালানোর অভ্যেসের দিকে।
জায়ন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল কিছু মুহূর্ত।
তারপর কপালে রাগে ভাঁজ পড়ে গেল।
তার গলা ফেটে বেরিয়ে এল —
“রোদ! কোথায় যাচ্ছিস তুই?দারা বলছি
কিন্তু তিয়াশা থামেনি।
জায়নের মুখে এবার ঘোরতর বিরক্তি আর উত্তাপ।
“এই মেয়ে মাথা খারাপ করে দেবে আমাকে একদিন!”
একটুও আর দেরি না করে সেও রোদের পেছনে ছুটে গেল।
তিয়াশা বাসায় ফিরেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ভেতরে এসে নিঃশব্দে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল দরজার পাশে। সমস্ত শরীরটা যেন ভারী হয়ে গেছে, বুকের ভিতর ঢেউ খেলে যাচ্ছে অজস্র অজস্র প্রশ্নের, যার উত্তর জানা থাকলেও মুখে আনা যায় না। চোখের সামনে জায়ন ভাইয়ের মুখ ভেসে উঠছে বারবার–সেই চোখ, সেই চাহনি, যেটার সামনে দাঁড়াতে ওর ভয় করে, লজ্জা লাগে, আর আজ… আজ তো আরও বেশি কিছু।
বাইরে তখনও অনুষ্ঠান চলছে, হাসির রোল, তবলার তালে তাল মিলিয়ে কণ্ঠস্বর,সব যেন এক অনাবশ্যক শব্দমাত্র তিয়াশার কানে। অথচ এই ঘরের ভেতর এক নিঃসীম নীরবতা।
এদিকে জায়ন বাসায় পা দিতেই চোখে পড়ল সুরাইয়া বেগমের অস্থিরতা।
সে কৌতূহলভরে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি হয়েছে চাচী?”
সুরাইয়া বেগম একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে মুখ নিচু করে বললেন,
–“আসলে জায়ন বাবা, বৃষ্টি অনেকক্ষণ ধরে নেই। কারো সাথেই কথা না বলে কোথায় যে গেল কে জানে। এমনিতেই মেয়েটার শরীরটা ভালো না, কোথায় যে গেল?…”
জায়নের চোখে যেন আতঙ্কের ছায়া নেমে এলো। কিছু একটা আঁচ করে নিয়ে সে বলল,
— “আচ্ছা চাচী, আপনি চিন্তা কইরেন না। আপনি বাইরেটা দেখেন, আমি খুঁজে দেখি।”
এই বলে জায়ন দ্রুত পা ফেলল তিয়াশাদের রুমের দিকে। তার দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রশ্নের উত্তর তিয়াশার কাছেই আছে।
রুমের ভেতরে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা তিয়াশা আচমকাই চমকে উঠল দরজায় ধাক্কার শব্দে।
“রোদ, আমি জানি তুই ভেতরেই আছিস, দরজাটা খোল… তাড়াতাড়ি।”
জায়নের কণ্ঠস্বরে ছিল চাপা ধমক, উত্তাপ, আর একটা কষ্টমাখা ব্যাকুলতা।
কিন্তু তিয়াশা চুপ।
— “রোদ, বৃষ্টি কোথায়? আমি জানি তুই জানিস। তুই বল, প্লিজ বল।”
তিয়াশার সারা দেহ কেঁপে উঠল, কিন্তু সে কোনো শব্দ করল না।
জায়ন এবার আরেক ধাপে গলা চড়াল
— “রোদ, জান, প্লিজ দরজাটা খোল। মিথ্যে বলিস না, তুই জানিস। মারিয়া তোদের বাগানের দিকে যেতে দেখেছে। বৃষ্টি কোথায়?”
তিয়াশার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। বাগান?
ভয়ে গলা কেঁপে উঠল, সে কাঁপা কণ্ঠে বলল —
–“আমি জানি না, বৃষ্টি আপু কোথায়।”
তিয়াশার চোঁখ বড় বড় হয়ে গেল এই শুনে —
” আমি জানিনা।”
জায়ন এর রাগ তীব্র হয়ে উঠছে —
“তাহলে দরজার পিছনে লুকিয়ে আছিস কেন ?আয় আমার সামনে আয়। জান প্লিজ মিথ্যে বলিস না ,আমি সহ্য করতে পারি না মিথ্যে। আমি রাগ করি, গায়ে ও হাত তুলে দিই কিন্তু বিশ্বাস কর করতে চাই না মাথা গরম হলে নিজেই ঠিক থাকতে পারি না, প্লিজ জান মাথা গরম করস না এমনিতেই তোর জবাব না পাওয়ায় আমার মস্তিষ্ক চরমে পৌঁছে গেছে , এখন যদি তুই মিথ্যা বলিস নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না। প্লিজ দরজা খোল ।
“…(…..)।
জায়ন এর আওয়াজ এবার হুংকার হয়ে আসলো —
“রোদ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এবার ,বৃষ্টি কোথায় আমাকে বল?”
“আ আমি জানি না ।”
“রোদ রোদ আমি যদি জানি তুই মিথ্যে বলেছিস, তাহলে তোকে কিন্তু আমি ক্ষমা করব না। ভালোয় ভালোয় বলছি বেরিয়ে আয় আর বল বৃষ্টি কোথায়, মেজ মা জানতে পারলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে আর তোদের জন্য যদি ওনার শরীরের কিছু হয় তাহলে কিন্তু তোদের ছাড়বো না। অন্তত আমাকে বল বৃষ্টি কোথায়?”
দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ তীব্র হয়ে চলেছে কিন্তু তাও তিয়াশা দরজা খুললো না —-
কিছু সময় দরজা ধাক্কা দিয়ে ও যখন তিয়াশা রুমের বাইরে এলোনা তখন জায়ন রাগে সেই স্থান ত্যাগ করল………
জায়ন এদিকে রাগে ক্ষোভে বৃষ্টিকে খুঁজছে তার ভয় যেন সত্যি না হয় ।
” কি রে জায়ন পেলি? ”
সুরাইয়া বেগমের উদ্বিগ্ন প্রশ্নে পেছনে ফিরে একরকম ক্ষীণ স্বরে জবাব দিল—
“না চাচী… দাঁড়াও, একবার ছাদে দেখে আসি।”
সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠে গেল ছাদের দিকে।
কিছু সময় পার হয়ে গেল এদিকে, তিয়াশা তখনও দরজার পাশে নিঃশব্দে বসে, মন যেন অজস্র ঘূর্ণিপাকে বন্দি। বারবার কানে বাজছে জায়নের সেই বাক্য,
“রোদ, যদি মিথ্যে বলিস… তোকে আমি ক্ষমা করবো না…”
এই কথাগুলো যেন তার ভেতরটাকে চিরে দিচ্ছে।তার শখের পুরুষ মাত্র তাকে কাছে টেনে নিয়েছে এই মুহূর্তে সে তাকে যদি হারিয়ে ফেলে তাহলে তার এই কিশোরী মনের অনুভূতি গুলোকে সামলাবে কি করে , না সে এটা হতে দিতে পারে না, .. সে যদি দূরে সরে যায়?
না, সে কিছুতেই এটা হতে দিতে পারবে না।
চোখের জল মুছতে মুছতে দরজাটা খুলে বেরিয়ে এল……
দিগবিদিক ছুটে খুঁজল জায়নকে। ভাইদের জিজ্ঞেস করল, কেউ কিছু বলতে পারল না।
শেষে অনন্যার কাছে ছুটে এল–
–“আপু! কি হয়েছে বলো না! ভাইয়া তোমাকে খুঁজছিল, এখন তুমিই তাকে খুঁজছো… হচ্ছে টা কি?”
তিয়াশা তিরিক্ষি গলায় বলল,
_“তুই শুধু বল, জায়ন ভাই কে দেখেছিস কিনা।”
“তিউ আপু আসলে আম্মু বৃষ্টি আপুকে খুঁজে পাচ্ছে না, তাই আম্মু আমাকে বলল খুঁজতে। আর এটাও বলল যে জায়ন মানে কি ছাদে গেছে বৃষ্টি আপুকে খুঁজতে।”
এইটুকু শুনে তিয়াশা আর দেরি করল না। অজানা এক ভয় আর আকুতি নিয়ে ছুটে গেল ছাদের দিকে।
ছাদে উঠে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল।
হালকা অন্ধকার, কনকনে হাওয়া আর আবছা চাঁদের আলোয় ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে একজন পেছন ফিরে। তার চওড়া কাঁধ, এক হাতে ছাদের কার্নিশ ধরে আছে। দৃশ্যটা এতটাই জায়নের মতো লাগল যে, আর কিছু না ভেবে তিয়াশা দৌড়ে এগিয়ে গেল।
পেছনে গিয়ে তার টিশার্ট খামচে ধরল, কাঁপা গলায় বলল–
–“প্লিজ… আমাকে ছেড়ে যাবেন না…”
তারপর হঠাৎ মাথা রেখে ফুঁপিয়ে উঠল সেই পুরুষের পিঠে। কান্না যেন বাঁধভাঙা নদীর মতো ছুটে এল
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না আমি আপনাকে সবটা না বলতে পারি কিন্তু কিছুটা তো বলতে পারি, প্লিজ আমাকে ছেড়ে জানাবেন না যবে থেকে আপনাকে দেখেছি, তবে থেকে এক অনুভূতির সাড়া পেয়েছি যে অনুভূতি ছিল আমার কাছে একদম নতুন ,জানতাম না সেই অনুভূতি কখনো এরকম হয়নি তো তাই জানা ছিল না আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি খুব খুব জানি না একে ভালোবাসা বলে কিনা তবে এটুকু জানি আপনি দূরে চলে গেলে আমি পাগল হয়ে যাব।
এক নাগাড়ে সে বলে গেল তার মনের এতদিনের কথা কিন্তু হঠাৎ সে বুঝতে পারলো এই পুরুষের গায়ের ঘ্রাণ খুব অচেনা , কিছু আর ভাবার আগেই সেই
ছায়ামূর্তিটা হঠাৎ ই ধীরে ঘুরে দাঁড়াল, তিয়াশার হাত ধরে বলল —
“আমি ও তোমাকে যবে থেকে দেখেছি, চোখ ফেরাতে পারিনি তিয়াশা। আমিও খুব পছন্দ করতে শুরু করেছি তোমাকে…”
তিয়াশা স্তব্ধ। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।
তিয়াশা তো জানে, জায়ন ভাইয়া কখনো তাকে “তিয়াশা” নামে ডাকেন না। তিনি শুধু ডাকেন ‘রোদ’ বলে… শুধু ‘রোদ’।
তার বুক কেঁপে উঠল। ঠোঁট ফাঁক হল বাক্যহীনভাবে।
ঠিক তখনই…
পেছন দিক থেকে এক তীব্র কণ্ঠস্বর কানে এসে বাজল–
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৪
–“রোদ…!!”
চেনা সেই গলা। তীব্র, রাগে টগবগ করছে।
তিয়াশার শরীর জমে গেল। মাথার পেছনের চুলগুলো যেন সজাগ হয়ে উঠল।
সে ধীরে ধীরে পেছন ফিরল……