সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪
neelarahman

পরের দিন সকাল আটটার মধ্যে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গিয়েছে সাদাফ ।ঢাকার শহড়ে যেই জ্যাম জ্যামের জন্য নয় টায় পৌঁছাতে পারবেনা প্রথম দিন তাই লেট করতে চায়নি সাদাফ।আজ আর দেখা হয়নি নূরের সাথে ।
নূর হেলতে দুলতে ঘুম থেকে উঠে নটার দিকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে দেখল সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।কিন্তু সাদাফ কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
নূরের অবচেতন মন আড় চোখে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো সাদাফ কে কিন্তু কোথাও দেখা যাচ্ছে না ।কেন যেন কারো কাছে জিজ্ঞেস করতেও লজ্জা লাগছে ।যদিও আপন চাচাতো ভাই একই বাড়িতে থাকে তারপরও জিজ্ঞেস করতে কেমন যেন একটা লজ্জা লজ্জা কাজ করছে ।
নূরের মনে পরল গতকাল রাতে দৃশ্য।

সাদাফ যখন অ*স্থিরভাবে চু*মু খাচ্ছিল নুরকে নুরের যেনো পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিলো।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে সাদাফ হাপাতে হাঁপাতে বলেছিল ,”তুই কোন কিছু বুঝতে পারিস না কেন ?কবে বড় হবি তুই ?”
একথা বলেই রুম থেকে বড় বড় কদম ফেলে বের হয়ে গিয়েছিল সাদাফ। নীলা রহমান
নুর নাস্তার টেবিলে বসে চড়ুই পাখির মতো খাবার শুধু আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করছে ।কেন যেন খেতে ভালো লাগছে না ।পাশের চেয়ারটা দিকে বারবার চোখ যাচ্ছে ।এই প্রথম এই ২০ / ২১ দিনে পাশের চেয়ারটা খালি ।
সাদাফ ভাই নেই কেন যেন নূরের ভিতর একটা অস্থিরতা কাজ করছে ।একটা শুন্যতা কাজ করছে।একা একা মনে হচ্ছে নিজেকে।পরিবারের সবার মধ্যে বসে থেকেও নিজেকে খুব একা একা লাগছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নুর নিজের ডান হাতের দিকে তাকালো ।তারপর মনে পড়লো সেদিনের কথা ।যেদিন ডান হাত চেপে ধরেছিল সাদাফ ভাই।বা হাত দিয়ে কত কষ্ট করে খাচ্ছিল নুর।হঠাৎ নুরের ঠোটে খেলে গেল মুচকি একটু হাসি।
নূর মনে মনে ভাবলো ,”আচ্ছা সাদাফ ভাই কি আমাকে ভালবাসে ?কিন্তু ভালবাসলে আমাকে বলে না কেনো?”
সামিহা বেগম বললো ,”কিরে খাবার কি শুধু নাড়াচাড়া করে যাবি? তোকে নিয়ে তো হয়েছে অনেক বড় একটা জ্বালা ।কিছুই বলা যায় না বাপ চাচারা তেড়ে আসে ।দেখতো ভাবি ও কেন খাচ্ছে না? আমি রান্না করতে গেলাম আমার এত ঢং করার সময় নেই ।তুমি দেখো তোমার মেয়েকে ।”

বলেই শামিহা বেগম রান্নাঘরে দিকে চলে গেলেন। নওরিন আফরোজ উঠে এসে বললেন ,”কিরে মা কি হয়েছে শরীরটা কি খারাপ লাগছে ?খাচ্ছিস না কেন ?দিন দিন তো চড়ুই পাখির মত হয়ে যাচ্ছিস।”
নূর বড় মার দিকে তাকিয়ে বলল না ,”বড় আম্মু কিছু হয়নি এমনি খাবার ভালো লাগছে না ।আজকে পাপা চাচ্চু আর সাদাফ ভাই আগে আগে অফিসে চলে গেল কেন?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”আজকে ওর অফিসে প্রথম দিন নয়টার মধ্যে ঢুকতে হবে ।ঢাকা শহর নাকি অনেক জ্যাম তাই তিনজন আগে আগে চলে গেল ।আজকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিবে তোর সাদাফ ভাইকে এজন্য সবাই আগে আগে গিয়েছে।

আর আজকে আসতেও একটু লেট হবে।”বললো নওরিন আফরোজ ।
তারপর একটু থেমে বলল ,”খেয়ে নে মা ।অল্প আরেকটু খা ।খাবার নিয়ে বসে এরকম করতে হয় না ।”
নুর মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিয়ে বলল ,”ঠিক আছে বড় আম্মু খাচ্ছি ।”
বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিল যদিও খেতে মন চাইছিল না
আজকেও নূর স্কুলে যাবে না। আগামীকাল থেকে রেগুলার স্কুলে যাবে ।ওদের স্কুল নয় টা থেকে দুইটা।
রিমা কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে ।নূর এবার এসএসসি দিবে ।
স্কুল শেষ শুধু কোচিং এর জন্য স্কুলে যায় তাই মাঝেমধ্যে দুই একদিন মিস হয়ে যায়।
সাইমন ভার্সিটিতে পড়ে অনার্স থার্ড ইয়ার ।ও এখন ভার্সিটি আছে ।আজকে সকাল সকাল চলে গিয়েছে সাথে রিমা ও গিয়েছে ।রিমার কলেজে জরুরী কাজ আছে ।ক্লাস শুরু হওয়ার আগে কাজটি করতে হবে তাই একঘন্টা আগেই চলে গিয়েছে ।পুরো বাড়ি আজ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে নূরের কাছে ।

এটা কি শুধুমাত্র সাদাফ ভাই নেই বলে নাকি সায়মন আর রিমাকে মিস করছে বুঝতে পারছে না নুর।
নুর নিজেই ধরে নিলো সায়মন ও রিমাকে মিস করছে ।সাদাফ ভাইকে কেন মিস করবে ?সাদাফ ভাইকে তো দেখতেই পারে না নূর। লোকটা শুধু ওকে জ্বা*লায় ওর উপরে শুধু শুধু জোর করে কিন্তু ভালোবাসে কিনা সেটা বলে না ।ভালো না বাসলে আমার সাথে এরকম করে কেন?
বান্ধবীদের কাছ থেকে শুনে ।টিভি সিনেমায় দেখে প্রথম প্রথম প্রেমে পড়লে কেমন অনুভূতি হয় ? কেমন করে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ?
তাহলে সাদাফ ভাই কেন ওকে ভালোবাসি বলে না ?কিন্তু গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড যা করে তা তো সবকিছুই করছে।
আচ্ছা আমি কি তাহলে সাদাফ ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ?মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করলো নুর ।ভাবতেই লজ্জা ও ভয় দুটোই পেলো নুর।

কিন্তু কোন উত্তর দিতে পারছে না ।তাই ঠিক করলো সাদাফ ভাইয়ের কাছে সাহস করে জিজ্ঞেস করবে ,”আমি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড ?আপনি আমার সাথে কেন এরকম করেন?”
এদিকে অফিসে হুমায়ূন রহমান সবার কাছে সাদাফ কে ডেকে পরিচয় করেয়ে দিল আজ থেকে অফিসে আমার পর আপনাদের বস সাদাফ।আমি এবং ফজলুর দুজন সর্বক্ষণ মনিটর করার জন্য থাকবো কিন্তু আপনারা রিপোর্ট করবেন সরাসরি সাদাফ এর কাছে।

সাদাফ সামনে এসে বলল ,”আসসালামু আলাইকুম ।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন ।আজকে থেকে আমি অফিস দেখাশোনা করবো তবে ফিল ফ্রি টু ওয়ার্ক উইথ মি ।কোন টেনশন করবেন না আগে যেভাবে কাজ করতেন এখনও সেভাবে মন দিয়ে কাজ করবেন।”
সবাই সাদরে গ্রহণ করল সাদাফকে। তারপর হুমায়ুন রহমান ফজলুর রহমান ও সাদাফ এগিয়ে গেলেন ।
সাদাফের নতুন ক্যাবিনের দিকে ।সাদাবকে ঘুরে ঘুরে নিজের কেবিনটি দেখালো ।সাদাফ কেবিনের চেয়ারে বসে বলল ,”নাইস অনেক সুন্দর করেছো বাবা। অফিসটা আমার পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ।”

ফজলুর রহমান বলল ,”তোর বাবা করেনি ডিজাইন আমি করিয়েছি ।আমি জানি আমার ছেলে পছন্দ কেমন চাচা হিসেবে এত টুকু তো আমি করতেই পারি ।আর ডিস্টার্ব করবো না ।কিছু ফাইল তোকে দিয়ে যাবে তোর এসিস্ট্যান্ট ।আজকে শুধু ফাইলগুলো রিড করবি কোথায় কি প্রবলেম আছে খুঁজে বের করবি। এটাই তোর টাস্ক।”নীলা রহমান
বলেই ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল ।সাদাফ ক্যাবিনের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মাথার পিছনে একটি হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে পকেট এ হাত দিল।

পকেট থেকে বের করল ছোট্ট একটি ছবি । কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ছবিটির দিকে ।তারপর বলল ,”কি আছে তোর মধ্যে যত দেখি দেখতে ইচ্ছে করে ।চোখ ফেরানো যায় না ।আমার চোখ ঘুরে ফিরে খালি তোকে খুজে ।কিভাবে থাকবো আমি সারাদিন !সকাল থেকে একবারও এখনো পর্যন্ত তোকে দেখিনি ।তুইও তো ঘুম থেকে উঠিস নি যে তোকে একটু দেখব।”
তারপর ছবিটিতে একটি চু*মু খেয়ে বলল,” প্লিজ তাড়াতাড়ি বড় হ।”

টেবিলের সামনে যে ফ্রেমটা রাখা আছে ফটো ফ্রেম সেটি খুলে ওই ছবিটি সেট করল করে ফ্রেমটি সযত্নে টেবিলের একটি ড্রয়ারে রেখে চাবি দিয়ে আটকে চাবিটা নিজের পকেটে রেখে দিলে সাদাফ।
রাত সাড়ে দশটা ।ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান অফিস থেকে আটটার মধ্যে চলে আসলো ।ফাইলগুলো রিড করে সমস্ত প্রবলেম খুঁজে বের করে সাদাফের আসতে আসতে বেজে গেল সাড়ে দশটা ।
বাড়িতে ঢুকে দেখল বাড়ির নিচে কেউ নেই তাই চুপচাপ দরজা লাগিয়ে উপরের দিকে গেল। উপরে গিয়ে দেখল নুরের রুমে দরজা চাপানো ।সাদাফ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো মা নওরিন আফরোজ কে।নওরিন আফরোজ বলল ,”নিচে খাবার দিয়েছি তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমা ।আজ অনেক পরিশ্রম করেছিস কালকে সকালে উঠতে হবে।”

সাদাফ বললো ,”তুমি ঘুমাতে যাও ।আমি একাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো তোমার আমার সাথে নিচে যেতে হবে না।”
নওরিন আফরোজ বলল ,”তাড়াতাড়ি কিন্তু খেয়ে নিবি দেরি করবি না ।তাহলে আমি গেলাম কেমন?”
বলেই নওরিন আফরোজ নিজের রুমে ঘুমাতে চলে গেলেন ।সাদাফ দুই মিনিট টেবিল চেয়ারে বসলো ।তারপর ধীরে ধীরে উঠে নিচের দিকে গেল একা একা খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ বসে রইল।
তারপর উপরে উঠে এলো সাদাফ।কেমন যেন একা একা লাগছে ।নিঃসঙ্গ লাগছে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু একটা আছে যা করা হয়নি যার ফলে বুকের বাঁ পাশটা খুব খালি খালি লাগছে সাদাফের।
তারপর সাদাফ প্যাকেট থেকে একটি সি*গারেট বের করে ধরালো ।নিজের রুমেই টেবিল চেয়ারে বসে সি*গারেটের ধোয়া ফুকছে আর চিন্তা করছে নুর এখন কি করছে ?ঘুমাচ্ছে নিশ্চয়ই ।কাল সকালে স্কুল আছে ।একবার কি যাবে নূরের রুমে যেয়ে জাস্ট একটু দেখে চলে আসবে।

যেই ভাবা সেই কাজ ।সি*গারেটটি নিভিয়ে দ্রুত পায়ে উঠে পকেট থেকে একটি চুইংগাম বের করল ।তারপর খেয়ে মুখের থেকে সি*গারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো নূরের রুমের দরজার কাছে।
নূরের রুমে দরজা চাপানো ছিলো।ধীরে ধীরে দরজা খুলল দেখল ড্রিম লাইট জালানো কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নুর গুটিসুটি হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
সাদাফ বুঝতে পারছে এখনই সাদাফের একটু একটু ভালো লাগছে ।তাহলে আর একটু কাছে গেলে নিশ্চয়ই আরেকটু ভালো লাগবে ।সাদাফ বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল নূরের কাছে ।হাঁটু ভেঙ্গে বসলো নূরের মুখোমুখি।
অনেকক্ষন নুরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল আর ভাবতে লাগলো ,” কি আছে এর মুখটির মাঝে ।কেন সেই ছোট্টবেলা থেকেই নূরকে এত ভালো লাগে সাদাফের ।কেন অন্য কোন মেয়ের দিকে কখনো চোখ তুলে তাকাইনি সাদাফ।

যখনই দেখে চোখ তুলে শুধু নূরকেই দেখে কিন্তু মেয়েটা যে বড্ড ছোট আর বড্ড নাদান ।সাদাফের কোন কিছুই বুঝতে পারে না ।সাদাফের কোন কথাই বুঝতে পারেনা ।তাইতো সাদাফ রা*গ করে জোর করে । নীলা রহমান
সবকিছু জোর করে করে তারপরও তো বোঝা উচিত অবশ্যই সাদাফের অনুভূতি আছে ওর উপর না হলে আর কারো সাথে না করে শুধু ওর সাথেই কেন এমন জোর করবে।
কিন্তু না মেয়েটি তো বুঝবে না মেয়েটি বারবার শুধু প্রশ্ন করবে যা সাদাফের পছন্দ নয়।
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমিয়ে আছে নূর ।সাদাফের বড্ড লোভ হল ওই ঠোঁট দুটোর প্রতি যেন ভিতর একটু পিপাসা জেগে গেল ।সাদাফ ধীরে ধীরে ঝুকে এলো নুরের ঠোঁটের দিকে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩

তারপর নূরের ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দিল সাদাফ।নুর ঘুমের মধ্যে অবচেতন মনে সাদাফের ঠোঁট আঁ*কড়ে ধরল যেন ছোট বাচ্চা কোন চকলেট বা কিছু একটা দিলে সেটিকেই ঘুমের মধ্যে খেতে থাকে।
তবে সাদাফ যে পুরুষ মানুষ অন্য সবার কাছে সাদাফ অন্যরকম হলেও নূরের কাছে যে সাদাফ একজন বেসামাল পুরুষ ।সাদাফের কষ্ট হচ্ছে নিজেকে ক*ন্ট্রোল করতে যেখানে নূর ঘুমের ঘোরেও এভাবে সায় দিয়ে যাচ্ছে ।সমানতালে চু*মু খাচ্ছে সাদাফ কে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here