কাজলরেখা পর্ব ৪

কাজলরেখা পর্ব ৪
তানজিনা ইসলাম

চাঁদনী টলমলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁধারের দিকে। আধার ফোন নিয়ে প্রথমেই কলটা কেটে দিলো।
তারপর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
-“ফোন ধরেছিস কোন সাহসে?”
চাদনী উত্তর দিলো না।ভেজা কন্ঠে আওড়ালো
-“অর্পিতা আপু কল দিয়েছে কেন?”
-“যেই কল দিক।পারমিশন ছাড়া তুই আমার ফোন ধরলি কেন?”
-” ফোনটা অনেক্ষণ ধরে বাজছিলো।অর্পিতা আপু না তোমাকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছিলো।আবার তোমার খোঁজ করছে কেন?”
গো ধরে বললো চাদনী। আধার চোখ পাকিয়ে বললো

-“তার কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে? আমাকে যে-ই কল দিক, সেটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার।কোন সাহসে জেরা করছিস? বউ হওয়ার চেষ্টা করিস না চাঁদনী! তোকে বউ বলে মানতে আমার ইগো হার্ট হয়। আব্বুর জন্য কবুল বলতে বাধ্য হয়েছি আমি।আমার লাইফে তোর কোনো অধিকার নেই।অধিকার পাবিও না কোনোদিন।”
চাদনীর চোখ থেকে টুপ করে জল গড়ায়।আঁধার তাকায় না সেদিকে।ওর এতো ন্যাকা কান্না দেখার সময় নেই।নেহাতই ঠেকায় পরে সাথে একটা কালির ড্রামকে সাথে নিয়ে আসতে হয়েছে ওঁকে। তার এতো আহ্লাদীপনা দেখার সময় কই ওর?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাই সাই করে ট্রেন ছুটছে।চাদনী অপলক জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।বাতাসের তোড়ে চুলগুলো উড়ছে ওর।বিস্তীর্ণ আকাশ মেঘে ঢাকা।চাঁদনীর মনেও মেঘ জমেছে খুব করে। ছোটবেলা থেকেই অর্পিতা আর জবা বেগমের কাছে চাঁদনী নিজের গায়ের রং নিয়ে খোঁটা শুনে এসেছে। চাঁদনী অর্পিতার চেয়েও ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, টুকটাক মেয়েদের অনেক কাজ করে।বর্ষা বেগমকে কিচেনের কাজে অনেক হেল্পও করতো চাদনী।নিজ থেকেই, মানুষটা কখনো ওঁকে কাজ করতে বলতো না।তবুও তাকে হেল্প করতো চাদনী। সেদিক দিয়ে অর্পিতা অষ্টরম্ভা! কোনো কাজে হাত লাগায় না।তার এক রূপ ছিলো, আর ছিলো রূপের দেমাগ। খালি কলসি বাজে বেশি, এই প্রবাদটা খুব করে মিলতো ওর সাথে।

পড়াশোনায় ও কোনোমতে টেনেটুনে পাশ, যেখানে চাদনী সকল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পেতো, ক্লাসের টপার হতো।তবুও ওর এসব গুণ ওর কালো রঙের নিচে চাপা পরে যেতো। অর্পিতা ওকে হিংসা করতো না নিচু করে করে দেখতো, তা চাঁদনীর জানা নেই।কিন্তু মেয়েটা ওঁকে সহ্য করতে পারতো না কোনো কারণ ছাড়াই। চাঁদনীর যখন সাতবছর বয়স তখন ওর মা মারা যায়।মা কে চাঁদনীর পুরোপুরি মনে নেই।তার মুখটা চাঁদনীর কল্পনায় ঝাপ্সা। তবে তাকে ছবিতে দেখেছে চাঁদনী।ওর মতোই চেহারা, মায়াবী। কিন্তু শ্যামলা রঙের। বড়দের কাছে শুনেছিলো, ওর বাবা ওর মা’কে কি ভীষণ ভাবেই যে ভালোবাসতো!তাই তো ওনার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ের কথা চিন্তাও করেনি।চাদনী কে নিয়েই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু আঁধার তো ওকে কখনো ভালোবাসবে না।আঁধার এতোটা বদলে গেলো কেন?মানুষটা তো এমন ছিলো না। ছোটবেলায় ওঁদের বন্ডিং খুব ভালো ছিলো।চাঁদনীর কোনো বন্ধু ছিলো।ওর একমাত্র বন্ধু ছিলো আঁধার। যে চাঁদনী কে ফিল করাতো ও খুব স্পেশাল। খুব দামী।আঁধার যখন ঢাকায় চলর যাচ্ছিলো চাদনী সেদিন খুব কেঁদেছিল। আঁধার ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেছিলো, সে কখনো চাদনী কে ভুলে যাবে না।ওখান থেকে ফোন করবে।চাদনী যখন মন চায় তখন কথা বলতে পারবে তার সাথে।

আঁধার যখন অপূর্ব শিকদারের ফোনে কল করতো, চাদনী তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।আশা নিয়ে বসে থাকতো আঁধার চাদনী কে খুজবে? আঁধার সত্যিই বলতো, চাঁদ কোথায় বাবা? ওঁকে একটু দাও তো!
চাঁদনীর খুশি তখন দেখেন কে! প্রথমদিকে এমন হলেও দিন গড়াতেই আঁধারের চাদনী কে খোঁজা বন্ধ হয়ে গেলো।সে বাড়ির সবাইকেই খুঁজে খুঁজে কথা বলতো শুধু চাদনী ছাড়া। চাদনী নিজ থেকে বললেও সে ছুতো দেখিয়ে ফোন কেটে দিতো। আস্তে আস্তে কথা বন্ধ হয়ে যায় ওদের।দূরত্ব বাড়ে।দূরত্ব বাড়লে ভালোবাসাও কমে যায়, চাদনী টের পায়।কিন্তু ওর ভালোবাসা কমে না।ডাল-পালা বিস্তৃত করে বাড়তে থাকে।

অথচ সে মানুষটা যখন ঢাকা থেকে অনেকগুলো বছর পর ফিরলো তখন তার রূপ একটুও চিনতে পারেনা চাদনী।
ঢাকা গেলে মানুষ বদলে যায়, কিন্তু এতোটা বদলে যায় সেটা চাদনীর জানা ছিলো না।সে বাড়ির সবার জন্য গিফট আনলো, চাদনীর কথা ভুলে গেলো।চাঁদনী কে যখন দেখলো তখন তাচ্ছিল্য করে বললো, অউ তুইও আছিস! আমি তো ভুলেই গেছিলাম। তোর জন্য তো কিছু আনিনি। আচ্ছা, মন খারাপ করিস না।
পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো, টাকাগুলো রাখ।
কালকে শপিংয়ে গিয়ে অনেকগুলো ফেইস ক্রিম নিয়ে আসিস। দামী দেখে কিনবি ঠিকাছে।গায়ের যে রং তোর, সকাল বিকাল মাখলেও ফর্সা হতে সময় লাগবে!”

চাদনীর মন চেয়েছিলো টাকাগুলো মুখের উপর ছুঁড়ে মারতে।কিন্তু ও সেটা করতে পারনি।ওর বাবা ওঁকে সে শিক্ষা দেয়নি। পরে অবশ্য ওর বড় বাবাকে দিয়ে দিয়েছিলো টাকাগুলো।
আচ্ছা, ও কী খুব বেশিই কালো? তবে বাবা যে বলে ওর মুখটা ভীষণ মায়াবী!কই ও তো মায়া দেখে না।জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে, আঁধারের দিকে তাকায় চাদনী, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ।আঁধার ঘুমাচ্ছে। ভীষণ টায়ার্ড ও।চাদনীর ছোটবেলার আধার ভাই আর এই আধার ভাইয়ের মধ্যে কতো পার্থক্য! চাদনী চিনতে পারে না তাকে। কোটরে অশ্রু জমে ওর।বাড়ির সবার কথা মনে পরছে।ওর বাবাটা ওঁকে ছাড়া কেমন আছে? ওর জন্য কাঁদছে নিশ্চয়ই এখন।চাদনী কী করে রাগ করে থাকতে পারে ওনার উপর।চাঁদনী আবার আকাশ পানে তাকায়।উদাস মনে তাকাতে গিয়ে গাল বেয়ে অশ্রু গড়ায়।
নারীর রূপবতী, গুণবতী হওয়ার চেয়েও ভাগ্যবতী হওয়া ভীষণ জরুরি।ভাগ্যবতীরাই জিতে যায় সবসময়।ওর তো রূপও নেই ভাগ্যও নেই।

ট্রেন থামার ঘোষণা কানে আসতেই আঁধারের ঘুম ভাঙলো।আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো ও।সামনে তাকিয়ে দেখলো, চাদনী সিটের উপর হাঁটু জড়িয়ে বসে, জানালার সাথে মাথা ঠেকিয় ঘুমাচ্ছে!ভ্রু কুঁচকে তাকালো আঁধার।মেয়েটা ওভাবে ঘুমাচ্ছে কী করে? ব্যাথা লাগবে না? পরক্ষণেই ভাবলো ব্যাথা পেলেও ওর কী? আসতে গেলো কেন ওর সাথে!
ভালোই হলো অবশ্য, আঁধারের ঘুমাতে একটু বেশিই জায়গা লাগে। কামরায় একটা সিঙ্গেল বেড।ডাবল বেডের কামরা পাওয়া যায়নি।একজনের বেডে চাদনী কে সহ ঘুমাতে দিলে আধারের আর ঘুম আসতো না।এখন কম্ফোর্টেবলি ঘুমাতে পেরেছে ও।
আঁধার উঠে গিয়ে চাদনী কে ডাকলো।চাঁদনীর ঘুম ভাঙে না, বড্ড শক্ত ঘুম ওর।আঁধার ধাক্কা দিয়ে জোরে জোরে ডাকে

-“চাঁদ, এই উঠ! আমরা চলে এসেছি।”
-“ঘুমাতে দাও তো আব্বু। বিরক্ত করো না!” চোখমুখ কুঁচকে বললো চাঁদনী। আঁধার চুল টেনে দিলো ওর। ধমকে বললো
-“চাচ্চু নেই এখানে।উঠবি নাকি উঠবি না? তোকে ফেলে চলে যাবো আমি বলে দিলাম!”
চাদনী ধরফরিয়ে উঠে বসে।চোখ কচলে, আঁধারের দিকে ঘুমোঘুমো চোখে তাকিয়ে বলে
-“কী হয়েছে?”
-“চলে এসেছি আমরা।নামতে হবে।না এখানেই থেকে যাবি? ফিরতি ট্রেনে আবার বাড়ি পাঠিয়ে দেই?”
চাদনী মুখ কালো করে বললো

-“তাই দাও!”
-“চোপা আছে বলতে হবে।ঠাস ঠাস উত্তর দিবে কথার আগে!চাচ্চু তোকে শাসন করে না তাই না। বেশি আহ্লাদে মাথায় উঠে গেছো! থাক, আমার কাছে এসেছিস তো, দু’দিনে সিধা করে ফেলবো।বেয়াদব মেয়ে, উঠ!”
চাঁদনী উঠে দাড়ালো।আঁধার নিজের কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে, আরেকটি ব্যাগ ধরিয়ে দিলো চাঁদনীর হাতে। ব্যাগটা চাঁদনীর চেয়েও ভারী।চাদনী ভারটা বহন করতে পারে না।ওর হাতে এতো শক্তি নেই।চিকন চিকন হাত দু’টো।আঁধার কী বুঝে না?না তার কমনসেন্সের অভাব?চাদনী জানে না আঁধারের কমনসেন্স ওর ক্ষেত্রে কাজ করে না, কারণ ওর চাদনী কে পছন্দ না।আমাদের অপছন্দের জিনিসগুলোর কষ্ট, যন্ত্রণা আমরা দেখতে পাই না।
আঁধার ওর অবস্থা দেখে কপাল কুঁচকে বললো

-“মুখটাই খালি চলে, তাই না চাঁদ!”
আঁধার ব্যাগটা নিতে গেলো, চাদনী দিলো না।বহু কষ্টে হাতে নিয়ে ট্রেনের বাইরে বেরোলো।আঁধারের কাছে এসব ঔদ্ধত্য মনে হয়। এই মেয়ের অতিরিক্ত জেদ। সব জেদ বের করবো আঁধার। এখানে চাদনী কে তুলো তুলো করে রাখার জন্য আনেনি ও।আদব-কায়দা সব শিখিয়ে দেবে।ভেবেই আঁধার মুখ বাকালো।
সন্ধ্যার সময়।প্রকৃতি তে মৃদু মন্দ বাতাস।রাতে ঝুম বৃষ্টি হবে বোঝা যাচ্ছে। আঁধার আর চাদনী দাঁড়িয়ে আছে স্টেশনে। চাঁদনীর পা ব্যাথা করায় ও চেয়ারে গিয়ে বসলো।আঁধার ফোন করছে কাওকে।চাদনী বললো

-“আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন দাদাভাই?”
-“আরেকটা ট্রেন আসলে, তোকে সেটার নিচে ধাক্কা মেরে ফেলে দিব তাই।”
চাদনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ওর ছোট ছোট প্রশ্নগুলোরও আঁধার খুব ত্যাড়া ত্যাড়া জবাব দেয়।কয়েক মিনিট পেরোতেই একটা কালো রঙের গাড়ি ওঁদের সামনে এসে থামলো।ড্রাইভার নেমে এসে ওঁদের ব্যাগগুলো নিয়ে ডিকিতে রাখলো।আঁধার গাড়িতে গিয়ে বসলো, চাদনী কে একবার উঠতেও বললো না।চাঁদনী ধীর পায়ে গিয়ে গাড়িতে ওর পাশে বসে।
চাদনী ভাবনায় পরে, আঁধার মাত্রই স্টুডেন্ট। ও এতো দামি গাড়ি পেলো কোত্থেকে? প্রশ্ন মনে আসতেই পাশ ফিরে বললো

-“আচ্ছা, দাদাভাই গাড়িটা কী তোমার?”
-“না তো! এটা আমার শ্বশুর আমার বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দিয়েছে।”
-“এভাবে বলছো কেন?”
-“তো কীভাবে বলবো? উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করিস কেন?”
-“তুমি তো স্টুডেন্ট, এতো বড় গাড়ি কিনলে কী করে?”
আঁধার ছোট ছোট চোখ করে তাকালো ওর দিকে! শাসিয়ে বললো
-“আমার শুধু গাড়ি না বড় বাড়িও আছে।আমি স্টুডেন্ট হলেও আমার বাপের অনেক টাকা। ঢাকায় আরাম আয়েশে থাকার জন্য, সে আমাকে সবকিছুই কিনে দিয়েছে!”
চাদনী মনে মনে বললো

-“এই জন্যই তো উচ্ছন্নে গেছো তুমি!”
আধার বললো
-“সবকিছু নিয়ে এতো মাতব্বরি করছিস কেন?”
চাঁদনী মিনমিন করে বললো
-“বাপের টাকা দিয়ে ফুটানি মেরে লাভ কী? মানুষ কে মানুষ গণ্য করছো না!”
-“আমার বাপের টাকা দিয়ে আমি ফুটানি মারছি, তাতে তোর বাপের কী?”
-“আমার বাপেরও ভাগ আছে তো ব্যবসায়, তাই চিন্তা করতে হচ্ছে!”
আঁধার ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে।চাদনী ভয়ে জানালার সাথে লেগে।আঁধার দাঁতে দাঁত চেপে বললো
-“খুব শীঘ্রই তোর পাখা ছাটবো আমি, দাড়া তুই!”
চাদনী জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।উদাস হয়ে আওড়ালো
-“আমার বাপের টাকা ধ্বংস করে আমিও তোমার মতো খুব মর্ডান হতে পারি দাদাভাই। অর্পিতা আপুর মতো ল্যাভিশ লাইফ লিড করতে পারি।কিন্তু আমাদের শিরদাঁড়ায় পার্থক্য আছে!”

রাস্তার দু’পাশে সারি সারি আকাশছোয়া দালান। সন্ধ্যার আবেশে ল্যাম্পপোস্টের হলুদাভ আলো নেমে এসেছে রাস্তায়, ঢেকে দিয়েছে আকাশের তারাদের। চাঁদ আছে, তবু সে আজ শহরের আলোয় হারিয়ে গেছে, লাইটের আলোয় আকাশের চাঁদ দেখা যায় না।ঢাকা শহরে চাঁদ টাকে বড্ড বেমানান লাগে চাঁদনীর কাছে।পদ্মা সেতু ক্রস করে যাচ্ছিলো ওঁদের গাড়ি।চাদনী পুলোকিত দৃষ্টিতে দেখে সব।মনোমুগ্ধ হয়ে পাশে বসে থাকা আধার কে বললো

-“ঢাকা শহর কি সুন্দর দাদাভাই!”
-“শহর তো সুন্দর! কিন্তু তুই তো না।তোর মতো অসুন্দর বস্তুু ঢাকা শহরে ঠিক মানাচ্ছে না।”
চাঁদনীর মুখের হাসি গায়েব হলো নিমিষেই। অসহায় কন্ঠে আওড়ালো
-“আমার মতো অসুন্দর মানুষকে, এই সুন্দর শহরে আনতে গেলে কেনো? গ্রামে রেখে আসলেই পারতে!”
-“ঠেকায় পরে এনেছি। তারউপর আরেকটা প্ল্যান মাথায় এলো, তুই তো এক নাম্বারের গাইয়া। এখানকার কিছু চিনিসও না। তোকে চড়া মূল্যে বেঁচে দিতে পারলে আমারই লাভ!”

-“বেঁচে দেবে?”
-“হ্যাঁ রে।তবুও শিউর হতে পারছি না।যা রূপের ছিরি তোর, কিনবেই বা কে বল!”
চাঁদনীর মুখ সেই যে কালো হলো, আর মুখে হাসি দেখা গেলো না ওর।গাড়ি এসে একটা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে থামে।দারোয়ান গেইট খুলে দেয়।পার্কিং লটে গাড়ি থামতেই
দু’জনে নামলো গাড়ি থেকে। আঁধার যখন চাদনী কে নিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে গেলো, অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ান ওদের পথ আটকালো।আঁধার কে দেখতেই সালাম ঠুকলো।আঁধার সালাম নেয়।দারোয়ান হেঁসে বললো
-“ভালো আছেন স্যার? এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন?”
-“এমনিই।আপনি ভালো আছেন?”
-“জ্বি! আপনাদের দোয়ায়। উনি কে?”

চাদনী কে লক্ষ্য করে বললো দারোয়ান।চাদনী আঁধারের পেছনে লুকায়।দারোয়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখে ওঁকে। চাঁদনীর গায়ে একটা সালোয়ার কামিজ।মাথায় উড়না চাপানো।আধারের পিছনে লুকানোয় মুখও দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। সচরাচর এই ছেলের সাথে যারা আসে তাঁদের গায়ে সালোয়ার থাকে না।বড়ই উশৃংখল থাকে মেয়েগুলো।পোশাকগুলোরও যা-তা অবস্থা থাকে।আঁধার দাড়োয়ানের দৃষ্টি অনুসরণ করে পেছনে থাকা চাঁদনীর দিকে তাকালো।দারোয়ানের চোখের ভাষা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হলো না ওঁকে। প্রতিনিয়ত যা ঘটায় ও, তাতে এই সন্দেহ স্বাভাবিক। আঁধার গম্ভীর স্বরে বললো

-“আমার চাচাতো বোন।গ্রাম থেকে এসেছে।”
-“আপনার সাথে থাকবে?”
-“থাকলেও আপনার কী?”
-“না, মানে আপনি একজন ব্যাচেলর মানুষ।একা ফ্ল্যাটে মেয়েটা…..
আঁধার এমনভাবে তাকালো যে ওনার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো।আঁধার চিবিয়ে চিবিয়ে বললো

কাজলরেখা পর্ব ৩

-“আমার যেটা মন চায় সেটা করবো আমি।আপনি কে হোন আমাকে সাবধান করার।যে চাকরি করেন, সে চাকরি খেয়ে দিতে আমার দুমিনিটও লাগবে না।”
চাদনীর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আঁধার। চাদনীর কান্না পাচ্ছে, নিজেকে অসহায় লাগছে খুব।অসহায়ত্ব ঘিরে ধরেছে মেয়েটা কে। চাদনী এতোটাই অযোগ্য?ছেলেটা ওঁকে স্ত্রীর পরিচয় পর্যন্ত দিলো না!

কাজলরেখা পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here