৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৩+১৪

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৩+১৪
সারা চৌধুরী

মিসেস মনিরা খাটের নিচে তাকিয়ে আৎকে উঠলো..শান্তার সবচেয়ে পছন্দের শাড়ি টুকরো টুকরো করে ফেলছে..যে শাড়িটা এত দিন আলমারি থেকে বের পর্যন্ত করেনি.. কিন্তু এ নিয়ে আপাতত ভাবলেন না তিনি পরে শান্তা কে জিজ্ঞাসা করলেই সত্যি বলে দিবে..শান্তা ছোট থেকে মনিরা তালুকদার এর কাছে খুব বন্ধুত্বপুর্ন.. মা মেয়ের সম্পর্ক খুব কম এমন দেখা যাই…মিসেস মনিরা শান্তা কে নিচে আসতে বলে চলে গেলেন চুপচাপ..!
ডাইনিং টেবিল এ বসে আছে.. শুভ্র..সারা বাড়ির সকলের প্রায় খাওয়া শেষ.. পুরুষেরা খেয়ে অফিস এ চলে গেছে শুভ্ররা আসার আগেই..দুপুরে সবাই চলে আসবে কারন আজ বৃহস্পতিবার..হাফ অফিস..শ্রাবন তো অনেক খুশি শুভ্র বাড়ি আসাই.. শুভ্র আর শ্রাবন এর গলাই গলাই ভাব..বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো কিছুটা তারা…!

সারা চুপচাপ অল্প করে খেয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে আসতেই মিসেস আনিতা শুভ্র মা সারার হাত ধরে তার নিজের রুমে গেলো..সারা শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র চোখ দিয়ে ইশারা কতে যেতে বললো..সারা ও বিনা কথায় শাশুড়ীর সাথে চলে গেল শাশুড়ীর রুমে..!
সারা খাটের এক কোনে বসে আছে অরু কে কোলের মাঝে নিয়ে পা গুটিয়ে বসেছে.. চোখ তার শাশুড়ীর হাতের দিকে..মিসেস আনিতা এক জোড়া চিকন সর্নের চুরি সারার হাতে পরিয়ে দিলো..সারা শাশুড়ীর দিকে তাকাতেই.. মিসেস আনিতা বললো আমি শুভ্রর কাছে শুনেছি তুমি আমাদের অরুর জন্য চুরি পরো না..তাই বলছি এই চুরি টা পরো এতে অরুর কোনো সমস্যা হবে..আর চুরি আর নাক ফুল স্বামির মঙ্গলের জন্য পরতে হয়..চুরি খুলবা না এতে শুভ্রর অমঙ্গল হবে..সারা চুপ চাপ মিসেস আনিতার কথা গুকো শুনে যাচ্ছে..!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিসেস আনিতার সারাকে খুব পছন্দ হয়েছে..মেয়েটা ভিষন সরল..কোনো উত্তর করে না..সে আজ পর্যন্ত মানুষ চিনতে ভুল করে নাই..মেয়েটা শুভ্রর জন্য একেবারে পার্ফেক্ট।
মিসেস আনিতা অরুকে নিজের কোলে নিয়ে ফাতিহা আর আনিসা কে ডেকে পাঠালো..তারা দুজন আসতেই তিনি জোর গলায় বলে উঠলো:-

-ফাতিহা মা আর আনিশা মা.. এ হলো সারা তোমাদের ছোট বোন.. কখোনো ভাবি নয় ছোট বোন করবে..তখনই অন্তু পিছন থেকে এসে বললো তাহলে বড় আম্মু আমার ও কি ছোট বোন হবে..মিসেস আনিতা সল্প হেসে বললেন ও তোমার আপু হয়..যাও এখন সারাকে নিয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখাও…মিসেস আনিতা ইচ্ছা করে শান্তা কে বলেনি কারন সারার বয়স অল্প সেহেতু ছোট দের সাথে অল্পতেই মিশতে পারবে..তার বুদ্ধি কাজে লাগলো.. ফাতিহা বলে উঠলো তাহলে সারা আসো যাই..সারা শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে অনুমতি নিয়ে ওদের সাথে চলে গেলো..!

শুভ্রদের বাড়ির সামনে বিশাল এক ফুলের বাগান আর এক পাশে ছোট্ট একটা পুল..বাড়ির পিছন দিকে ফলের গাছ..সারা মুগ্ধ হয়ে দেখছে সাদ থেকে.. সাদ ফুলের গাছে ভরপুর সবগুলোই ফাতিহা আর আনিসা মিলে লাগিয়েছে..তিনতলাই একটা চিলেকোঠা রুম আর বাকি টা পুরো খোলা সাদ..দুতলায় চার টা রুম..সিড়ি দিয়ে উঠতেই প্রথম রুমটা শুভ্রর তার ডান পাশের টা শ্রাবন এর..আর বআম পাশের টা ফাতিহা আর আনিসার আর শ্রাবন এর পাশের টা শান্তার..আর বাড়ির বড় রা সকলে নিচের তলাই থাকে..!নিচ তলাই বিশাল ডাইনিং.. এক পাশে রান্নাঘর আর তার বিপরীত পাশে ড্র‍য়িং রুম..সিড়ি দিয়ে সোজা মেইন দরজা..!

শুভ্র রুমে এসে পুরো রুম টা পর্দা টেনে অন্ধকার করে দিলো.. মিসেস আনিতাকে বলে এসেছে কেও জেনো বিরক্ত না করে তার প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে সে ঘুমাবে…শুভ্র বিছানায় সুয়ে পড়লো..সফেদ নরম বিছানায় তলিয়ে গেলো শুভ্রর শক্তপোক্ত পুরুষালী শরীর..।শুভ্র কপালের উপর এক হাত রেখে ভাবতে লাগলো সারার কথা.. সে কি মেয়েটার সাথে চুক্তির কথা বাড়িতে বলে ভুল করেছে..আচ্ছা সে কি এই মেয়ে কখোনো ভালোবাসবে..সারার সাথে কি তার মনে মন মিলবে..শুভ্রর মুখ থেকে এক্টাই শব্দ বেরোলো.. ❝নাহ❞ শুভ্র জানে না কোন প্রশ্নের উত্তর এটা তবে সে ভেবে নিছে সবগুলোর উত্তর ই তারপর আর কথা না ভেবে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে তলিয়ে গেলো গভীর ঘুমে…!

ফাতিহা আর আনিসার সাথে সারা গভীর এক ভাব জমে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই.. আর অন্তু সে তো সারাকে আপু আপু করে পাগল করে দিছে আগে আগে সব জিনিস দেখাচ্ছে..সারা ও খুব খুশি অন্তুর মতো একটা ছোট ভাই পেয়ে যে আপু বলে ডাকছে..মামাবাড়ির সবাই তো তাকে নাম ধরে ডাকতো আর মামি তো বেশির ভাগ পুড়ামুখি বলতো..ক্ষনিকেই সারা মন খারাপ হয়ে গেলো..তাও প্রকাশ পেলো না বাইরে..!

ফাতিহা আনিশা মিলে সারাকে বাড়ির সামনে বাগানে নিয়ে গেলো.. সব কিছু ঘুরে দেখতে লাগলো সারা..ফাতিহা হটাৎ বলে উঠলো সারা জানো..এইজে ফল গাছ গুলো দেখছো সব গুলোই শ্রাবন ভাই এর হাতের..নিজেই পরিচর্যা করে..সারা জিজ্ঞাসা করে উঠলো শ্রাবন কে..তখন অন্তু বলে উঠলো আমার আর একটা ভাইয়া এখন অফিসে আছে..বাসাই আসবে একটু পরেই তোমরা এসেছো বলে আজ বাসাই চলে আসবে ছোট ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড.. অন্তু শুভ্র কে ছোট ভাইয়া বলে আর শ্রকবন কে বড় ভাইয়া…সারা মৃদু হেসে বললো আচ্চা..!

ফাতিহা আর আনিশা মিলে সুইমিংপুলে অনেক্ষন পা ভিজিয়ে রাখলো সারাকে নিয়ে স্কুল কলেজ বন্ধুবান্ধব সব কিছু নিয়েই গল্প করলো.. সারা চুপচাপ শুনছে..আগে কখোনো এমন ভাবে কেও গল্প করেনি..এত অল্প সময়ে কেও আপন করে নেই নি তাকে..সারা অনেক খুশি মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো..!
ভালো সময় গুলো খুব তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হয়ে যায় এটা সারা ধারনা..দেখতে আজান দিয়ে দিয়েছে..আকাশে মেঘ থাকার কারনে রোদের তেমন দেখা নেই..তখনই মিসেস সুমনা অন্তুর মা ডাক দিলো সবাইকে সবাই এক এক করে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্য হাটা দিলো..বাড়ির দরজার সামনে আসতেই পায়ে কাটা বিধে পা পিছলে গেলো সারার..ফাতিহা আনিশা অন্তু সবাই আগে আর সে পিছে..সারা ভড়কে চিল্লানি দিলো মৃদু..!

সারার ধারনা এই জায়গায় পড়ে তার মাজার হাড় ভেঙে যাবে..নইতো মরে গিয়ে ভুত হয়ে যেতেও পারে..অনেক্ষন কোনো ব্যাথা অনুভব করতে না পেরে চোখ বন্ধ রেখেই সারা ভেবে নেই সে হয়তো মরে গেছে তাই পড়ে গিয়েও তার ব্যাথা লাগছে না..সারা ভাবনার মাঝেই অন্তুরা সবাই দৌড়ে আসলো আরে সারা আপু সাবধানে আসবে না ওইখানে আমার হাত থেকে মাত্র পানি পড়ছে তুমি তাতেই পড়ে যাচ্ছিলা..?

অন্তুর কথা শুনে সারা চোখ খুলতেই দেখতে পেলো কারোর হাতের বাধনে আবদ্ধ সে..মুখ উচু করে তাকাতেই দেখতে পেলো গম্ভীর মুখের এক পুরুষকে..এ জেনো শুভ্রর উলটো..শুভ্রর মুখে হাসি আটকে থাকে প্রায়শই..আর এ তো গম্ভীর..সারার ভাবনার মাঝে ফাতিহা আর আনিশা এসে সারাকে ধরলো শ্রাবন ভাইয়ের কাছ থেকে.. তারপর ফাতিহা বলেআরে ভাইয়া কখন এলে..শ্রাবন মুখ গম্ভীর রেখেই বলে উঠলো মাত্রই এসেছি এই মেয়েটা কে..?
ফাতিহা শান্ত স্বরে বললো ও সারা শুভ্র ভাই নিয়ে এসেছে..আর কিছু না বলে শ্রাবন এর কাছ থেকে সারাকে নিয়ে বললো সারা লাগে নিতো..চলো ভিতরে চলো..সারা এক পা বাড়াতেই পায়ে ফুটে থাকা কাটা টা পুরো পায়ের ভিতর ঢুকে গেলো সারা ছিটকে পড়ে গেলো ব্যাথায় জোরে কেদে উঠলো..সবাই সারার পায়ের দিকে লক্ষ করতেই সবাই আৎকে উঠলো পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তরল রক্ত.. রক্ত দেখেই শ্রাবন এক অদ্ভুত কাজ করে ফেললো..সে সারার দিকে এগিয়ে গিয়েই…..

নিস্তব্ধ দুপুর..সুর্য মামা মাঝ আকাশে..আনিশার রুমে বসে আছে সারা..পাশে অন্তু মিসেস সুমনা আর ফাতেমাও আছে..পায়ে ব্যান্ডেজ করা কাটা পায়ের বেশি ভিতরে যায় নি..তাই তাড়াতাড়ি সব সামলানো গিয়ে রক্ত বন্ধ করা গেছে..!
কিছুক্ষন আগে সারার পড়ে থাকা শ্রাবন এসেই হুট করে সারাকে কোলে তুলে নেই..সারা ভড়কে যাই..চোখ খিচে বন্ধ করে নেই..শ্রাবন সারার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে পায়ের দিকে তাকাই টপ টপ করে রক্ত পড়ছে..শ্রাবন পিছনে তাকিয়ে ফাতিহাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে..

-“দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো তোমরা..আমার রুম থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে ড্র‍্যিং রুমে আসো..অন্তু কুইক..শ্রাবন বলার সাথে সাথে অন্তু দৌড়ে ভিতরে চলে যায়..শ্রাবন এবার ভিতরের দিকে যাওয়া শুরু করে..বাড়ির ভিতরে ঢুকতে প্রথমে মিসেস সুমনার চোখে পড়ে শ্রাবন.. শ্রাবন এর কোলে সারা কে দেখে আর পা দিয়ে রক্তের ফোটা পড়তে দেখে আতকে উঠে ছুটে আসে শ্রাবন এর দিকে..শ্রাবন ততক্ষনে সারাকে সোফাই বসিয়ে দিয়েছে কাটা পা টা রেখেছে নিজের কোলের উপর মিসেস সুমনার আওয়াজ শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে মিসেস আনিতা এসে তিনিও থতমত খেয়ে যান.. এ অবস্থা দেখে..অন্তু ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসলে শ্রাবন খুব সাবধানে পায়ে ফুটে থাকা কাটা বের করে সেনিটাইজার লাগাতে থাকে..!

সারা মুখে হাসি..চোখ কিচে বন্ধ করে আছে চোখের কোন দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল..সে নিজের কস্ট সবার সামনে প্রকাশ করতে পারে না..সবাই সারার দিকে তাকিয়ে অবাক..মেয়েটার অনুভুতি বোজা যাচ্ছে না।।সবার ভাবনার মাঝেই দুতলার করিডর থেকে ভেসে এলো শুভ্রর কন্ঠস্বর
-“কি হয়েছে সবাই ওখানে কি করছো..?বলেই শুভ্র ট্রাওজার এর পকেট এ এক হাত পুরে সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে..!

শুভ্রর কন্ঠস্বর পেয়ে সবাই তার দিকে তাকায়.. সাদা টি-শার্ট আর কালো ট্রাওজার পরা শুভ্র কে দেখে সারার মনে হলো আজ প্রথম দেখছে তাকে..শুভ্র এগিয়ে এলো সোফার পাশে সামনে তাকাতেই দেখতে পাই শ্রাবন মুখ গম্ভীর করে সারার পা কোলে নিয়ে ব্যান্ডেজ করছে..শুভ্র কিছু বুজে উঠতে পারলো না.. মুহুর্তে তার সব জ্ঞান শুন্য হয়ে গেলো..মিসেস আনিতা কে জিজ্ঞাসা করতে সব খুলে বললো..শুভ্রর মন টা কিঞ্চিত খারাপ হয়ে গেলো..মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো..সে একটু ঘুমিয়েছে আর এই মেয়ে একটা বিপদ বাধিয়ে ফেলছে..শুভ্র সারাকে ডাক্তার এর কাছে নিতে চাইলে শ্রাবন কিছুটা গম্ভীর কন্ঠেই বলে উঠে….
-“সে এখন বিপদ মুক্ত..ইনফেকশন হবে না..ডাক্তার এর প্রয়োজন নেই..বাড়িতে এত মানুষ থাকতে নতুন অতিথি কে ইনজুরি হতে হলো কারোর চোখে পড়ে নাই ওইখানে কাটা আছে .আর শুভ্র তো আমায় ভুলেই গেছে ওর কথা কি বলবো…!

শ্রাবন এর কথা শুনে শুভ্র শ্রাবন এর দিকে তাকালো শ্রাবন ততক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে..শুভ্র গিয়েই শ্রাবন কে জড়িয়ে ধরলো..শ্রাবন হয়তো হাসলো তবে গম্ভীর মুখে তা প্রকাশ পেলো না।।
শুভ্র:-শ্রাবন বিশ্বাস কর আসার পর থেকে তোরে বেশি মিচ করছি।।
শ্রাবন:-হয়েছে তোর ড্রামা বন্ধ কর..এতক্ষনে আমার কথা মনে পড়ছে..!
শুভ্র:-তো কখন আসলি..?
শ্রাবন কিছু বললো না শুধু বললো ফ্রেশ হয়ে আসি তুই রেডি হো একটু বাইরে যাবো..!. বলেই চলে উপরে চলে গেলো শ্রাবন..অহনা বাদে বাড়ির সবাই উপস্থিত..সবাই একে একে যে যার কাজে গেলো।
শুভ্র শ্রাবন কে পিছন থেকে ডেকে বলে উঠে….

বাইক সিমীত স্পিডে চালাচ্ছে শ্রাবন পিছনে বসে আছে শুভ্র..শুভ্র সকল কিছুই শ্রাবন কে শেয়ার করেছে..তাই শ্রাবন যাচ্ছে শুভ্র মেয়েকে প্রথম দেখবে.. শুভ্র ফোনে দেখাতে চাইলেও শ্রাবন দেখে নাই বলছিলো শুভ্র অরুকে আসলে একেবারে দেখবে..তাই শ্রাবন অরুর প্রথম দেখবে বলে তার জন্য উপহার নিতে যাচ্ছে..যদিও শুভ্র মানা করছে তবুও শ্রাবন শুনে নাই..এগিয়ে যাচ্ছে তাদের বাইক…!

আসলে শুভ্র আর শ্রাবন দুটি দেহ একটি প্রান..এটাই পরিবারের মানুষ মানে..তাদের মধ্যে ঝামেলা খুব কম হয়…শুভ্র সব সময় শ্রাবন এর জন্য নিজের পছন্দের জিনিস সেক্রিফাইস করছে ঠিক তেমনই শ্রাবন ও তাই..এই যে দুই ভাই তাদের পছন্দ সব সময় একই..কখোনো ভিন্ন ভিন্ন জিনিস পছন্দ হতো না..কিন্তু শুধু একটাই দিক তাদের ভিন্ন দুজনের পেশা..শুভ্র সব সময় পরুবার এর কথা শুনে চলায় সে আর তার বাবা চাচার কথা ফেলতে পারেনি..কিন্তু শ্রাবন তার সপ্ন পুরন করেছে..এতে কারোর কোনো আপত্তি নেই..সবাই খুব খুশি বাড়ির দুই ছেলেই প্রতিষ্ঠিত..!
সময় চলে যায় বাতাসের মতো..সময় কারোর জন্য থামে না।।শুভ্র রা বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে..বাড়ির সকলে বসে আছে ড্রয়িং রুমের সোফাই আড্ডা দিতে ব্যাস্ত…প্রতিদিন সন্ধ্যায় জাক জমক হয় তালুকদার বাড়ি.. মিসেস সুমনার হাতের এক এক দিনের আলাদা আলাদা রেসিপি উপভোগ করেন সবাই..অরুকে কোলে নিয়ে বসে আছে ফারুক তালুকদার আর সারার পাশে বসে আছে আনিস তালুকদার.. সারা অবাক না হয়ে পারলো না এই পরিবার এর মানুষ গুলা খুব বিনয়ী..মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয় এ তাদের মেয়ের জায়গা দিয়ে দিয়েছে..আনিস তালুকদার সারার সাথে এটা সেটা নিয়ে গল্প করছে সারা ও সুন্দর ভাবে উত্তর দিচ্ছে..সারার আজ সত্যিই মনে হচ্ছে আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে..এমন ভালো পরিবার আর পরিবারের প্রত্যেক টা মানুষ যা সারার হ্দয় ছুয়ে গেছে…!

শুভ্র আর শ্রাবন হাতে বেশ কয়েকটি শপিং ব্যাগ নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো..ড্রয়িং রুমে যেতেই শুভ্র অবাক.. সারার সাথে তার বাবা-চাচারা কতো ফ্রী হয়ে গেছে..!
শুভ্র এগিয়ে গিয়ে বাবা চাচা কে সালাম করলো তারপর শপিং ব্যাগ গুলা যার যেগুলো তাকে দিয়ে দিলো সবার জন্য আলাদা আলাদা জিনিস আছে ভিতরে শ্রাবন এর হাতে দুইটি শপিং একটা সারার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো রাত এটা তোমার জন্য।। শ্রাবন সারা পুরো নাম সিদরাতুল থেকে সিদরাত সেইখান থেকে ছোট করে রাত বলে ডাকলো সারা কে..সবাই ভ্রু কুচকে শ্রাবন এর দিকে তাকালে শ্রাবন ইনিয়ে বিনিয়ে বুজিয়ে দেই..সারা ব্যাগ টা হাতে নিয়ে বলে উঠে..

-“ধন্যবাদ ভাইয়া..!
-“মোস্ট ওয়েল্কাম রাত আচ্ছা তোমাকে আমি রাত্রি বলে ডাকি নইতো সিদরাত কি বলো…?শ্রাবন সারার দিকে তাকিয়ে বলে..?
শ্রাবন এর এমন কথা শুনে শুভ্র বলে ওকে ভাবি বলে ডাকবি.ভিতরে শুভ্রর অস্থিরতা কাজ করছে..শ্রাবন ভ্রু কুচকে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো তুই আমার পুরো গুনে গুনে এগারো দিনের ছোট তাই সারা কে ভাবি বলার প্রশ্নই আসে না..আসলে শ্রাবন সব জানে..এটাও জানে সারা এতিম তার আপন বলতে কেও নাই..!

শ্রাবন আর কথা না বাড়িয়ে ফারুক তালুকদার এর দিকে এগিয়ে গিয়ে অরুকে কোলে নেই.. অরু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে শ্রাবন এর মুখের দিকে..শ্রাবন অরুর কপালে একটা চুমু দিয়ে হাতে থাকা ব্যাগ থেকে একটা ছোট বাক্স বের করে.. শুভ্র বক্স টা খুলে দিলে শ্রাবন একটা সর্নের চেইন অরুর গলাই দিয়ে দেই..তারপর বলে তোমার বাবাই এর৷ পক্ষ থেকে এটা তোমার উপহার মামনি..সারা বেশ অবাক হলো এই ধরে তিন ধরনের শ্রাবন কে দেখলো সে..এখন যে শ্রাবন তার সামনে দাঁড়িয়ে সে হলো প্রচন্ড বাচ্চা প্রেমি সাথে রসিক ও..কিন্তু আগে যাকে দেখছে সেতো গম্ভীর..সারা আবারো ভাবে শুভ্র ও তো সেম কেরেক্টার.. সারা আর কিছু ভাবতে পারে না ফারুক তালুকদার বলে উঠে…

-“শুভ্র শুনছো…?
-“হ্যা আব্বু বলেন কি বলবেন….?
-“তোমরা দুই ভাই জানোই আমি বা আনিস তোমাদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেই নি বা জোর করেছি..তোমাদের গুরুত্ব দেই নি এমন কোনোদিন হয়নি..!
-“শুভ্র মুচকি হেসে বললো জানি তো আব্বু..!
-“শ্রাবন তুমিও শুভ্রর পাশে গিয়ে বসো কথা আছে..!
শ্রাবন এবার শুভ্রর পাশে গিয়ে বসলো অরুকে কোলের ভিতরে নিয়ে উদ্দেশ্য মামার বলা কথা গুলো শোনা..এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ফারুক তালুকদার এর কথায় সম্মান করে মেনে চলে তাই শুভ্র শ্রাবন মন দিয়ে শুনতে লাগলো বাড়ির সকলেই আছে সাথে অহনা ও আছে পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে..!
ফারুক তালুকদার আবার বলে উঠলো….

-“আমি তোমার আর আর সারার বিয়ের কথা বলেছি আমার জন্যই বিয়ে করেছো..?
-“জ্বী আব্বু..!শুভ্র মাথা নিচু করে বললো..!
-“সারা মেয়েটা আমাদের আনিশার থেকেও ছোট শুনলাম ক্লাস নাইন এ পড়তো।।আমি চাই ওকে স্কুলে ভর্তি করা হোক।।আমি একটা মেয়ের বাবা হয়ে চাইবো না এই অল্প বয়সে একটা মেয়ের জিবন নস্ট হোক..!ফারুক তালুকদার গম্ভীর কন্ঠে মিসেস সুমনার উদ্দেশ্যে বললেন….
-“সুমনা মেয়েদের ঘরে নিয়ে রেখে এসো এখানে বড় গুরুত্বপূর্ণ কথা হবে ওদের এখানে থাকা যাবে না…!
ফারুক তালুকদার এর কথা শুনে মিসেস সুমনা এক মুহুর্ত দেরি না করে সবাইকে নিয়ে দু-তলাই চলে গেলেন..এখানে উপস্থিত আছে..ফারুক তালুকদার,, আনিস তালুকদার,, শ্রাবণ,, শুভ্র,,মনিরা..আর বাড়ির দুই কর্তী আনিতা ও সুমনা..সুমনা সবাইকে উপরে দিয়েই নিচে চলে এসেছে..ফারুক তালুকদার সবাইকে বসতে বললেন..সবার মাঝে বেশ খানিক্ষন নিরবতা চললো..নিরবতা ভেঙে শুভ্র বলে উঠলো।…

-“আব্বু সবাই এখানে আছে এবার বলেন কি বলবেন..?
-“ফারুক তালুকদার গম্ভীর কন্ঠে বললেন..তুমি কি বিজি..?
-“না আব্বু..!
এবার ফারুক তালুকদার বলা শুরু করলেন..এখন যে কথা গুলো বলবো এই কথা গুলো বাড়ির বাচ্চাদের কানে যেনো যাই কঠোর ভাবে বলছি.. আর আমার কথা শেষ না হওয়া অব্দি কেও কোনো প্রতি উত্তর করবা না বলে থামলেন তিনি..সবাই চুপচাপ শুনলো..ফারুক তালুকদার গলা ঝাড়া দিয়ে বলে উঠলেন শুভ্রর উদ্দেশ্যে…
-“শুভ্র তোমার কোনো কাজে বা কথায় আমি কখোনো নিষেধ করি নাই..তুমি না শ্রাবণ এর ক্ষেত্রেও..আমি বা এখানে সবাই জানো সারা মেয়েটার কোনো পরিবার নেই..তাই আমি আর আনিস সিদ্ধান্ত নিয়েছি ও আমাদের মেয়ে হয়ে এ বাড়িতে থাকবে..আর শুভ্রর সাথে চার বছরের চুক্তির বিয়ে হয়েছে সারা জানে কি জানিনা তবে আমি বা সবাই জানো..সবাই শুধু চুপচাপ শুনে যাচ্ছে..ফারুক তালুকদার শুভ্রর উদ্দেশ্যে বলে উঠে…

-“শুভ্র আমি চাই তুমি মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে.. আর আজ থেকে অরুর সকল দায়িত্ব তোমার আম্মু আনিতার..সারা মেয়েটাকে কোনো চাপ দিবা না..আমি চাই ও পড়াশোনা করুক নিজের একটা পরিচয় গড়ুক..আর ও আজ থেকে ফাতিহা আত আনিশার সাথে থাকবে একই রুমে..আমার কথা শেষ আমার সিদ্ধান্ত অটুট এবার তোমাদের কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারো..!
ফারুক তালুকদার এর কথা শেষ হতেই শুভ্র বিরক্ত সহকারে বলে উঠে..
-“কিন্তু আব্বু…?

-“কোনো কিন্তু নয় ওকে যেহেতু আমি ছেলের বউ ভাবি সেহেতু ও আনিসের মেয়ের মতো..আর আমারো মেয়ের মতো..তাই ভেবেছি যতই বিয়ে হোক না কেনো সেটা চুক্তির আর ওর এখোনো আঠারো বছর হয় নি আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাই না..সারার আঠারো বছর হলে আমি আবার বিয়ের কথা ভেবে দেখবো ততদিন ওর থেকে দূরে থাকবা.. বলেই উঠে চলে যায় ফারুক তালুকদার..!

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১১+১২

শুভ্র বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে নেই..তার এখন অসহ্য লাগছে..কিছু না বলেই গটগট করে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো..যে যার কাজে চলে গেলো শুধু বসে রইলো শ্রাবণ অরুকে কোলে নিয়ে..শ্রাবন এর ঠোঁটে খেলে যায় এক রহস্যময় হাসি সে শুভ্র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে…

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৫+১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here