বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২০

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২০
shanta moni

সকাল ৭:৩০ জানালা বেধ করে সূর্যের রশ্মি পড়ে রোদের মুখে, চোখ মুখ কুচকে ফেলে রোদ। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় নিজের অবস্থান বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লাগে। ফ্লোরে শুয়ে আছে রোদ। রাতের কথা মনে পড়তেই, চোখের কোনে পানি চলে আসে। আস্তে করে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু সে ব্যার্থ হয়। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথায় আবার ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। শরীরে ব্যাথায় রোদ কান্না করে দেয়। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে ফর্সা গায়ে কালছে দাগ হয়ে গেছে, কোনো কোনো যায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে গেছে ব্লেডের আঘাতে।

মুখ শুকনো ঠোঁটের কোনে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। রোদ আস্তে করে উঠে বসে বেডের পাশ ধরে উঠে দাঁড়ায়, আস্তে আস্তে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দেয়। ওয়াশরুমে ডুকে ঝরনা ছেড়ে দেয়৷ গায়ে ঠান্ডা পানি পড়তেই, পুড়ো শরীর জ্বলে উঠে, ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হটাৎ রুম থেকে হেনা বেগমের ডাক আশে, হেনা বেগম রোদকে ডাকছে রোদকে সে পুড়ো বাড়ি খুঁজে কিন্তু কোথাও পায়নি৷ পড়ে শুভ্রের রুমে আসে দেখে দরজা আটকানো আবার চলে যাওয়া ধরে, পরে কিছু একটা ভেবে রুমে ভিতরে আসে শব্দ পায়। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। হেনা বেগম রোদকে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হেনা বেগম : কি করছিস রোদ,?
রোদ নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারে না। মুখে ওড়না চেপে ধরে ফুপিয়ে উঠে,কিছুক্ষণ পড় স্বাভাবিক হয়ে। বলে উঠে।
রোদ: নানু আমি গোসল করছি,
হেনা বেগমের ভ্রু কুচকে ফেলে,তাঁরপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হাঁসে। মনে মনে বলে››
তাহলে রোদ শুভ্র দাদু ভাইয়ের সাথে সব ঠিকঠাক হয়েছে। হেনা বেগম হাঁসি হাঁসি মুখে রোদকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে উঠে’
হেনা বেগম : রোদ গোসল শেষ করে। তাড়াতাড়ি নিচে নাস্তা করতে আয়।
রোদ তাড়াতাড়ি বলে উঠে <
রোদ: নানু তুমি আমার খাবার রুমে পাঠিয়ে দাও প্লিজ। আমার ভালো লাগছে না নিচে যেতে আমি রুমে বসেই খাবো।

হেনা বেগম বলে›› আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোর খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তোর নিচে যেতে হবে না।
হেনা বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে যায় খুশি খুশি মনে।
রোদ ঝরনার নিচে বসে পড়ে, পুড়ো শরীর যেনো জ্বলছে। কাঁদতে কাঁদতে বলে।
রোদ: ভালো যখন বাসতে পারবে না। আঘাত কেনো করেন।
সারা রাত ঘুমাইনি শুভ্র ডয়িং রুমে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। হাত থেকে রক্ত পড়তে পড়তে শুকিয়ে গেছে। চোখ দুটো এখনো লাল। হটাৎ পকেটে থাকা ফোনটা বেঝে উঠে। শুভ্র ফোন টা রিসিভ করে কানের পাশে ধরে। পরক্ষণে আস্তে করে উঠে। হাতে একটা রুমাল পেচিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যায়।
রোদ প্রায় একঘন্টা শাওয়ারের নিচে বসে থাকে। গোসল করে বের হয়ে দেখে ট্রি টেবিলে খাবার রাখা। ধীর পায়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় নিজের দিকে তাকায় মনে পড়ে যায়। কালকে রাতের কথা, কালকে সে অন্য এক শুভ্রকে দেখছিলো। যার চোখে ছিল ঘৃণা রাগ প্রতিশোধ। রোদের ঠোঁট কেঁপে উঠে। চোখে দিয়ে পানি পড়ছে৷ চোখের পানি মুছে আয়নার দিকে তাকায়। তাঁরপর বলে।

রোদ: আমি তাকে ভালোবাসি বলে আজ পযন্ত অনেক আঘাত সহ্য করেছি। সবার বাজে কথা শুনে অত্যাচার সহ্য করে পড়ে রয়েছি। এই বাড়িতে শুধু তার একটু ভালোবাসার জন্য আর শুধু ভেবেছি সে হয়তো আমাকে একদিন না একদিন ঠিকই বুঝবে। কিন্তু নাহ আমার ভাবনা মিথ্যা ছিল৷ তার মতো নিষ্ঠুর মানুষ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
রোদ চোখের পানি মুছে খাবারের প্লেট নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিজের রুমে ডুকে দরজা লাগায়।
তিনদিন পর…

নিলা আসে চৌধুরী বাড়ি, মামা বাড়ি থেকে ফিরেই রোদের সাথে দেখতে বলতে আসে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে রোদের রুমের দিকে যাচ্ছিল নিলা এমন সময় পিছন থেকে খালাম্মা ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকায়। নিলা নিলয়কে দেখে সামনে দিকে ফিরে তাড়াতাড়ি হাঁটা দেয়। এমন সময় নিলয় নিলা কে হাঁটতে দেখে দৌড়ে দিয়ে নিলার কাছে যেতে নেয়। পা পিচলে ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে যায়।
জোরে চিৎকার করে উঠে›› বউ বাঁচাও
নিলা চিৎকার শুনে পিছন ফিরে তাকায়। দেখে নিলয় ফ্লোরে পড়ে আছে।
নিলাকে তাকাতে দেখে নিলয় ফ্লোরে শুয়ে এক হাত গালে দিয়ে নিলার দিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাঁসছে। নিলা ভ্রু কুচকে তাকায়। তাঁরপর বলে।
নিলা: এই আপনি এখানে এই ভাবে গাঁধার মতো শুয়ে আছেন কেনো?
নিলয়: আমি তো আপনাকে দেখেছিলাম খালাম্মা। আসলে দাঁড়িয়ে দেখতে পারছিলাম না। ভালো করে তাই শুয়ে শুয়ে দেখছি।

আসলে সব কিছুতেই শান্তি থাকা দরকার।
নিলা হাবলার মতো তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে তাঁরপর বলে››› এমনি এমনি তো আর আপনাকে গাঁধা বলিনা। আসলেই আপনি একটা গাঁধা। বলেই নিলা চলে যায়।
নিলয় গাল থেকে হাত সরিয়ে ফ্লোরে মাথা এলিয়ে দিয়ে, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে›››
নিলয়: হে আমার কপাল ভাবাজি তুমি কি আমার কপালে পড়ে যাওয়াই লিখেছো। পড়তে পড়তে আমার কোমরের অবস্থা ১২..
থেকে ১৩ টা বেজে গেছে।

নিলয় মনে মনে আওরাই এই খালাম্মা কাছে আসলেই আমি পড়ে যায়। নিশ্চিত এই খালাম্মার সাথে বদজ্বীন আছে।
আস্তে করে উঠে দাঁড়ায় নিলয় পা খোরাতে খোরাতে নিজের রুমে যায়। আর বলতে থাকে… আমি আর এই খালাম্মার কাছে আসবো না।
নিলা শুভ্রের রুমের দিকে যায়। কিন্তু সেখানে রোদকে কোথাও না পেয়ে৷ রোদের রুমে যায়।
রোদ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। এখন সময় বিকেল ৪:৩০
এই তিনদিন রোদ রুম থেকে বের হয়নি। রুমের ভিতরে বন্ধি করে রেখেছে নিজেকে।
নিলা রোদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। রোদ নিলাকে দেখে মুখে হাঁসি ফুটে, নিলা রোদকে বলে›››
নিলা: জানু অনেক মিস করেছি তোকে। কেমন আছিস?
রোদ মুচকি হাঁসে তাঁরপর বলে_
রোদ: আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
নিলা: আমি ভালো আছি’
রোদ নিলা আশায় একটু ভালো লাগে। এই একটা মানুষ যে কিনা তাকে সব সময় হাঁসাতে পারে। তবে রোদ নিলাকে সেদিন রাতের ঘটনা বলেনি। নিলাকে বললে কুরুক্ষেত্র বাধবে।
অয়ন এই তিনদিন রোদকে কোথাও দেখেনি। রুমে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর রুমেও যায়নি। কেনো জানি এই সব এর জন্য নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
এইদিকে

শুভ্র একটা হোস্টেলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় হোস্টেলের গেট থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। শুভ্রও মেয়ে টাকে জড়িয়ে ধরে।
এতদিন পর নিজের আদরের ছোট বোনকে দেখে শুভ চোখ ছলছল করে উঠে। রুহি শুভ্র জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে›››
রুহি : ভাইয়া তুমি দেশে আসছো এক মাস হয়ে গেছে। আর আজকে আসছো আমাকে দেখতে ( অভিমানি স্বরে)
শুভ্র রুহির মাথায় হাত ভুলিয়ে বলে→
শুভ্র: অনেক কাজে ব্যস্ত ছিলাম রুহি। তার জন্য দেখা করতে পারিনি।
রুহি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে তাকায়।
শুভ্র বোনের অভিমান ভাঙাতে কানে হাত দিয়ে বলে→
শুভ্র: সরি বুড়ি আর এমন হবে না। তুই এই বারের মতো মাফ করে দে।
রুহি শুভ্র দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে»»
রুহি: মাফ করতে পারি। তবে এক সর্তে
শুভ্র: কি সর্ত বল আমি সব সর্তে রাজি।
রুহি : সত্যি তো ভাইয়া। তাহলে প্রমিজ করো।
শুভ্র: ওকে প্রমিজ।
রুহি শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে ›»

রুহি: আমি বাড়িতে যেতে চাই ভাইয়া তুমি আমাকে না করতে পারবে না। আমি আর হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবো না। আমি দাদুকে দেখতে চাই। আব্বু কে দেখবো। রোদকে অনেক দিন থেকে দেখিনা।
শুভ্রের কপাল কুচকে যায়। রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রুহির দিকে ›
শুভ্র: এটা কখনো সম্ভব না। আর আমি তোকে ওই বাড়িতে নিব না কখনোই”
রুহি চোখে পানি টলমল করছে। জেদ দেখিয়ে শুভ্রকে উদ্দেশ্য বলে›»
রুহি: তুমি যদি আমাকে বাড়িতে না নিয়ে যাও।তো আমি এখান থেকে দেখানে ইচ্ছে চলে যাবো।
শুভ্র রেগে গাড়িতে উঠে চলে যায়।
রুহির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। চোখে পানি নিয়ে হোস্টেলের দিকে হাঁটা দেয়।
সাত বছরের বেশি হয়ে গেছে। নিজ বাড়িতে যায় না রুহি। এমন কি কারো সাথে যোগাযোগ পযন্ত হয় না। শুভ্র বিদেশ যাওয়ার আগে রুহিকে হোস্টেল রেখে যায়। তাঁরপর বিদেশ গিয়ে মাঝে মাঝে সব খোঁজ খবর নিতো। রুহি কান্না করতে করতে হোস্টেল ভিতরে চলে যায়। এতো বড় পরিবার থাকতে তাকে এই হোস্টেলে পড়ে থাকতে হচ্ছে।
রাত ১২:০০

রোদ রুমে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুতেই চোখে খুব ধরা দিচ্ছে না।
মনে সুখ না থাকলে কি চোখে ঘুম ধরা দেয়।
সে আজ তার বিশ্বাসের কাছে লজ্জিত।
রোদ আগের থেকে অনেকটা চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বেড় হয়না।
নিজেকে যেনো চার দেয়ালে বন্ধি করে রেখেছে।
আজ তিনদিন পর বাড়িতে আশে শুভ্র।
এই তিনদিন একটা বারের জন্যও বাড়িতে আসেনি।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ১৯

রুমে গিয়ে কিছুটা অবাক হয়। রোদ নেই, কোথাও কিছু একটা ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়। হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্রে৷
সকাল ১০ টা গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টে উদ্দেশ্য যাচ্ছে’ শুভ্র আজ তার সব থেকে কাছের বন্ধু
আসবে। তাকেই রিসিভ করতে যাচ্ছে।
হটাৎ গাড়ির সামনে কেউ এসে পড়ে সাথে সাথে শুভ্র গাড়ি ব্রেক করে..!!

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here