সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৪
neelarahman
কথাটি বলেই সাদাব আবার নিজে জায়গায় ফিরে এলো ক্যামেরা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে বাকি ছবিগুলো দেখতে লাগলো ।এর মধ্যেই হেঁটে হেঁটে চলে আসছে রিমা ও সাইমন ।দুজনের মধ্যে লেগে গিয়েছে ঝগড়া।
রিমা ঐখানে যেয়ে দেখে সায়মন সি*গারেট খাচ্ছে ।সায়মন সি*গারেট খাচ্ছে এটা কেন খাচ্ছে এখানে এসে জানতে চাইলো। আগে জানতো না তাই দুজনের মধ্যে ঝগড়া লাগছিলো।রিমা বললো,” ও সাদাফ ভাইকে বলে দিবে সায়মন সি*গারেট খায়।”
এদিকে সায়মন বলছে ,”সি*গারেট খেয়েছি তো কি হয়েছে ?ছেলেরা একটু একটু খাই আর তোকে কে বলেছিল এখানে এসে দেখতে ?”
রিমা বলল আমাকে সাদাফ ভাই পাঠিয়েছে তোকে নেওয়ার জন্য তাই এসেছি আমার সাধ লাগে নাই তোকে এখানে এসে নিতে।
সায়মন বলল ,”বে*য়াদবি করবি না ।তোর থেকে গুনে গুনে সাড়ে চার বছরের বড় আমি সম্মান দিয়ে কথা বলবে বে*য়াদব।”
“ওরে আমার বড় রে! ওকে নাকি আবার সম্মান দিতে হবে ।সি*গারেট খোর দাঁড়া আমি এক্ষুনি যেয়ে সাদাফ ভাইকে বলছি তুই নাকি বড় তাই সি*গারেট খাস।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাইমন বলল আরে আজব তো কখন আমি বললাম আমি বড় তাই সি*গারেট খাই ?একটাকটু সি*গারেট খাই ভার্সিটিতে পরি তা তোর কাছে কেন জবাব দিতে হবে আমার ?তুই আমার কে যে আমার সবকিছু ব্যাপারে দিয়ে খোঁজ খবর রাখিস ? নীলা রহমান লেখিকা।জবাবদিহিতা চাস আমার কাছে তুই আমাকে গার্লফ্রেন্ড নাকি বউ?”
রিমার পা থেমে গেল আপনা আপনি ।চুপ হয়ে গেল থ হয়ে গেলো এক মুহূর্তের জন্য ।সাইমনের মুখ থেকে গার্লফ্রেন্ড বা বউ কথাটি শুনে কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো রিমার কাছে ।
কখনো তেমন ভেবে দেখেনি কিন্তু সব ব্যাপারে যে খোঁজখবর রাখে জবাব চায় এ ব্যাপারটি সত্য এটা রিমা নিজেও জানে কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারে না।
সায়মন আর কোন কথা বলল না রিমা কে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ।রিমা তখনো দাঁড়িয়ে রইল । হঠাৎ কেমন যেনো লাগছে রিমার।তারপর ধীরে ধীরে সায়মনের পিছু পিছু হাঁটতে হাঁটতে সাদাফ দের কাছাকাছি চলে এলো ।এসে দেখলো সাদাফ ভাই ক্যামেরা নিয়ে কিছু একটা করছে ।
সায়মন বলল ,”ভাইয়া ছবি তোলা শেষ ?ওইখানে চলো একটা পুকুরপাড় আছে ওইটাও খুব সুন্দর।”
নূর সাথে সাথে বলল ,”ঠিক আছে চলো আমরা ওইখানে যাই ।”
এমনিও এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন যেন সংকোচবোধ হচ্ছিল নূরের তাই সাদাবকে রেখেই সাইমন ও রিমার সাথে তাড়াতাড়ি হেঁটে সামনে চলে গেল ।সাদাফ ক্যামেরা নিয়ে পিছনে পিছনে হাঁটতে লাগলো।
ওইখানে গিয়েও রিমা ও নুর গুটিকতক ছবি তুলল ।কয়েকটা পছন্দ হলো কয়েকটা হলো না ।কিন্তু বিকাল হয়ে আসছে সাদাফ তাই বলল ,”চল রিসোর্টে ফিরে যাই ।ওখানে গিয়ে একটু কফি খাব মাথা খুব ধরেছে ।”
সবাই রিসোর্টে ফিরে এসেই লবিতে বসে কফি অর্ডার দিল ।নুর চুপচাপ বসে আছে ।রিমা ও আজকে চুপচাপ কোন কথা নেই ।বারবার ওর কানে বেজে উঠছে সাইমনের বলা কথাটি ।
“তুই কি আমার বউ নাকি গার্লফ্রেন্ড ?এই মুহূর্তে রিমার মনে হতে লাগলো একসময় তো সায়মন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড হবে বউ হবে তখন যদি সব ব্যাপারে এরকম খবরদারি করতে যায় রিমা বউ কি এটা মেনে নিবে?
সবার জন্য কফি চলে আসলো ।দেখল তিনটা কফি আর একটা জুস ।নুর বলল ,”ওই জুস কার জন্য ?”
সাদাফ নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”তোর জন্য তুই আন্ডার এইট্টিন তাইতো কফি খাওয়ার বয়স হয়নি ।যখন ১৮ হবে তখন তুই কফি খাবি এর আগে জুস খা।”
নুর বলল ,”না আজকে আমার জন্মদিন আর আমি বড় হয়েছি ।কফি খাওয়ার জন্য ১৮ বছর হতে হয় কে বলেছে ?আমার কি আজকে বিয়ে হচ্ছে যে বিয়ে হতে হলে ১৮ বছর হতে হবে?”
সাদাফ নুরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল ।তারপর হঠাৎ বলে উঠলো ,”বিয়ের জন্য ১৮ বছর হতে হয় না এর আগেএ অনেক মানুষের বিয়ে হয়ে যায়।”
বিয়ের কথায় সাথে সাথে নুর সাদাফের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বসল ,”তা আপনার যে এত বছর বয়স হয়েছে আপনি বিয়ে করছেন না কেন ?আপনি বিয়ে না করলে তো আমার ভাইকেও বিয়ে করাতে পারবো না?”
সাদাব কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।তারপর নূরকে একটু খেপানোর জন্য বলল ,”হ্যাঁ বিয়ে করবো সামনে মাসে বিয়ে করবো। তোরা প্রস্তুত থাকিস অনেক আনন্দ করার জন্য ।
কে কোন গানে নাচবে সেটাও রেডি করে রাখিস আমার বিয়ে বলে কথা ।খুব আনন্দ করতে হবে আর নূর তো সব থেকে বেশি আনন্দ করবে। এ বাড়ির সবচাইতে ছোট বলে কথা আমার বিয়ে নিয়ে তো সবচাইতে বেশি এক্সাইটমেন্ট ওরই হবে। তাইনা নূর ?”
জানতে চাইলো সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে।
সাদাফের দিকে তাকালো নুর।তারপর চোখ নিচে নামিয়ে চুপচাপ বসে রইল ।নূরের মন খারাপ ।কিন্তু রিমার ও আজ মন খারাপ ।একটু আগে বলা নুরের কথায় যে সাদাফের পর সাইমনের বিয়ে ।
একটু আগে সায়মন ও বলল গার্লফ্রেন্ড ও বউয়ের কথা তাহলে কি সাইমনের জীবনে কেউ আছে যা রিমা এখনো জানে না।
কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া সব ব্যাপারে রিমা জবাবদিহিতা চায় ।সিগারেট কয়টা খাবে সে ব্যাপারে জবাবদিহি চায় কিন্তু ওর গার্লফ্রেন্ড আছে এই ব্যাপারটা তো রিমা জানে না ।
তাহলে কি সাইমন ইচ্ছা করে ওর কাছ থেকে ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছে ?নূর জানে অথচ ও জানে না।ব্যপার টা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না রিমা ।তাই রিমা চুপচাপ মন খারাপ করে বসে রইল।
দিকে নূর চুপচাপ মন খারাপ করে ভাবছে একটু আগেও ওর সাথে কেমন করে কথা বলেছিল সাদাফ ভাই আর এখন বলছে সামনের মাসে বিয়ে সামনে মাসে বিয়ে ।বিয়ে যখন করবে তাহলে নূরের সাথে এসব কেন করে ?
ভীষণ মন খারাপ হতে লাগল নূরের ।আর কখনো কথা বলবে না সাদাফ ভাইয়ের সাথে ।মনে মনে ঠিক করে ফেললো নূর।
সাদাফ কফি পান করছে আর মনে মনে বলছে ,”একটু জ্বল নুর ভিতরে ভিতরে একটু জ্বল ।তোকে আমি কিছু প্রশ্ন করেছিলাম যার উত্তর তুই আমাকে দেওয়া তো দূরের কথা নিজে থেকেই উত্তর খুঁজে পাচ্ছিস না ।
এখন আমি চাই দিনরাত তুই জ্বলবি আর নিজেকে নিজে প্রশ্ন করবি কেন আমি সবার থেকে আলাদা ?আমার প্রতি তুই কি অনুভব করিস নিজে থেকে উত্তর খুঁজে বের কর।
এদিকে সাদাফ ও সায়মন মনের সুখে কফি পান করছে ।সাদাফ মনে সুখে কারো নূরকে ক্ষেপিয়েছে জানে নূর ভিতরে ভিতরে জ্বলছে আর সাইমন কোন কিছু না বুঝেই ।রিমার ভিতরে কি চলছে না চলছে কিছুই জানে না ও এমনি এমনি মনের খুশিতে কফি পান করছে।
একে রিসোর্ট এর উপরে পার্সোনাল কামরায় বসে আড্ডা মা*রছে হুমায়ূনুর রহমান ফজলুর রহমান নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম এবং এই রিসোর্ট এর মালিক অর্থাৎ হুমায়ূন রহমানের ছোটবেলার বন্ধু করিম মোল্লা।
মোল্লা নামটা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ক্ষ্যাপা তো হুমায়ূন রহমান ।মো*ল্লার কোন কিছুই ছিল না ওর মধ্যে বরং ভ*ন্ড ছিল অথচ সেই লোকের নামের পেছনে লাগানো ছিল করিম মো*ল্লা এটা নিয়েই সব বন্ধুরা হাসাহাসি করত সেই কথাটি এখন উঠেছে।
করিম মো*ল্লা বলল ,”দেখুন ভাবি সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার নামটা নিয়ে এরকম দুষ্টুমি ফাজলামি করে আচ্ছা আমি কি এমন ভ‘‘ন্ডামি করেছি বলেন তো ?যাকে ভালোবেসেছি তাকেই বিয়ে করেছি সব সময় এক নারীতেই আসক্ত ছিলাম তাহলে আমি ভ‘‘ন্ড কিভাবে হলাম?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”ঠিকই বলেছেন ভাইয়া ।”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৩
হুমায়ূন রহমানের দিকে তাকিয়ে বললো,”আপনি ওনার নাম নিয়ে খেপাচ্ছেন কেন ?এমনি ও তো মানুষের নাম নিয়ে খাপাতে হয় না আর তাছাড়া উনি এমন কি করেছেন?”
ফজলুর রহমান বলল ,”কি যে করেছেন তা তোমাকে বলবে না ভাবি ।আমি অবশ্যই বলতাম কিন্তু করিম ভাইয়ের কথা বলতে গেলে এখন আমার বড় ভাইয়ের পোল ও খুলে যাবে তাই আর কিছু বলবো না।”