কাজলরেখা পর্ব ১৫

কাজলরেখা পর্ব ১৫
তানজিনা ইসলাম

শাবিহার মনটা অকস্মাৎ ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। মুখ কালো করে বসে আছে ও। রাত গালে হাত ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তার বোন যে এতোটা সিরিয়াস রিলেশনশিপে ছিলো রাত জানতো না। শাবিহা ছেলেটার কথা অনেকবারই বলেছে রাত কে। বলেছিলো ওর বিয়ের শুরু থেকে সবকিছু রাত অ্যারেঞ্জ করবে। নিজের প্রেমিক কে প্রথমে নিজের মা-বাবার সাথে দেখা না করিয়ে ভাইয়ের সাথে দেখা করাতে চেয়েছিলো শাবিহা। রাত বলেছিলো ঢাকায় আসলে দেখা করবে। তারপর মাঝখানে অনেকদিন শাবিহার সাথে কথা হয়নি ওর। শাবিহা বলেনি, রাত খোঁজ নেয়নি। এর মাঝে মেয়েটার ব্রেকআপ হয়ে গেলো! রাত ভাবুক স্বরে বললো

-“ব্রেকআপ কেনো হলো?”
শাবিহা টলমলে দৃষ্টিতে তাকালো রাতের দিকে। ভাঙা গলায় বললো
-“মাসখানেক আগে মা-বাবার মধ্যে অনেক ঝামেলা হয়। সবসময়ই হয়, এটা নতুন কিছু না। কিন্তু বাবা বলেছিলো আম্মু কে, সে চট্টগ্রামে যাবে। জানো তো তারপর আম্মু কীরকম রিএক্ট করবে! বলেছিলাম তো তোমাকে, তুমি তো আমলে নাওনি! বাড়ির কোনো খবরই তো রাখো না তুমি। আমি অনেক ডিপ্রেসড ছিলাম৷ আমি শুধু ওর থেকে একটু সেপারেশন চেয়েছিলাম ভাইয়া। কারণ তখন আমার আম্মুকে সামলাতে হচ্ছিলো৷ বাড়ির মধ্যে প্রতিদিন একটা না একটা সমস্যা হচ্ছিলো। দাদুভাই তো আগে থেকেই অসুস্হ ছিলো। আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।ইভেন আমার কোনো বন্ধুর সাথেই আমার কথা হতো না। সে এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। আমার একটু সময় চাওয়াটাকে সে আমার ইগো ভেবে নিয়েছে। ভেবে নিয়েছে আমি ব্রেকআপ করেছি৷ এখনো দেখা হলে দোষারোপ করে৷ কিন্তু আমি দোষী নই!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শাবিহা নাক টেনে কান্না আটকালো। রাত ঠোঁট কামড়ে তাকালো ওর দিকে। একটু নিরব থেকে প্রশ্ন করলো
-“খুব ভালোবাসিস ছেলেটাকে?”
শাবিহার এবার চোখের পানি গড়িয়ে পরে। ও সত্যিই ছেলেটাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। বুকের মধ্যে কেমন কষ্ট হয়, সে অন্যের এটা ভাবলেই।
আগে কখনো এতো ফিল করেনি, হারিয়ে যাওয়ার পর যন্ত্রণা গুলো টের পাচ্ছে বেশি।
-“খুববব!”
রাত মিষ্টি করে হাসলো৷ বোনের মাথায় হাত রেখে বললো

-“তোর রিলেশন জোড়া লাগানোর দায়িত্ব টা বরং আমি নেই! আমার বোনকে ছেড়ে যাওয়া এতো সহজ না!”
-“সে আসবে না ভাইয়া। খুব ইগো তার! সে নিজের এটিটিউড জারি রাখার জন্য এমন হাজারো ভালোবাসার মানুষকে কুরবান করে দেবে!”
রাত গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
-“হু, তোর বাপের মতো আরকি!”
শাবিহা হকচকিয়ে তাকালো। রাত কথা কাটিয়ে, শাবিহা কে প্রমিস করে বললো
-“না আসলে, তুলে আনবো! আমিও দেখবো বদমাশের কতো ইগো, আমার বোনের ভালোবাসাকে হেলায় ফেলবে। ও তোকেই বিয়ে করবে। মানুষের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়, লাভ ম্যারেজ হয়, তোদের ফোর্স ম্যারেজ হবে!”

-“বদমাশ বলো না ওঁকে!”
-“তোর খারাপ লাগলে বলবো না!”
-“তাকে যদি তুলেও আনো, সে তো মনে থেকে আমাকে বিয়ে করবে না, ভালোও বাসবে না।জোর করে সংসার করা যায়?”
-“তুই কী চাস সেটা বল!”
-“আমি তাকে চাই।”
-“তাহলেই হলো। ও তোরই হবে!”

শাবিহার সংশয় যায় না। আঁধার বিবাহিত! এ কথাটা রাত কে বলতে পারবে না ও৷ রাত আর একটা শব্দও না শুনে কানের নিচে ঠাটিয়ে চটকানা দিবে ওঁকে। ভালোবাসা, সংসার এসব রাতের চোখের বালি হলেও মানুষের সংসার নিয়ে খুব সেনসিটিভ ও। সংসার ভাঙা একদম পছন্দ করে না। যদি জানতে পারে তার নিজের বোন বিবাহিত একটা ছেলেকে নিয়ে হাপিত্যেশ করছে, তাহলে যে রাত কি করবে ওর সাথে, ভাবতেই শাবিহার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। কিন্তু তবুও, শাবিহা জানে আঁধার এ বিয়েতে খুশি না। বাবার চাপে পরে এ বিয়েটা করেছে ও। সারাক্ষণই নিজের শ্যামলা বউ কে নিয়ে আফসোস করতে থাকে। ওঁদের সামনেও অনেকবার করে ফেলেছে। শাবিহার চেয়ে বেশি ওঁকে কে চেনে! তেমনই শাবিহা নিজের ভাইকেও কম চিনে না! শাবিহা এটা বলা মাত্রই রাতের মনে আসবে, শাবিহা নিজের মায়ের মতো হয়েছে। ওর মা যেভাবে রাতের মায়ের সংসার ভেঙে দিয়েছে, সেভাবে শাবিহা আরেকটা মেয়ের সংসার ভেঙে দিতে চায়। কিন্তু ও আরেকজনের সংসার ভাঙতে চাচ্ছে না, আবার আঁধার কে ছাড়া থাকতেও পারছে না। কিন্তু শাবিহা নিজেকে প্রায়োরিটি দিবে আবার ও রাতের চোখে খারাপও হতে পারবে না।
শাবিহা কথাটা চেপে গেলো। সংশয় নিয়ে ঢোক গিলে বললো

-“সত্যি বলছো তুমি?
-“তোর ভাইয়া মিথ্যা বলে না।”
শাবিহা চোখ মুছলো। রাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো খুশিতে। রেহান খুশিতে হাত তালি দিলো। ইশ! শাবিহার বিয়ে নিয়ে অনেক প্ল্যান ওর, অনেক। একটা মাত্র বোন ওর৷ কিভাবে যে আনন্দ করবে ও, সবকিছু ভেবে রেখেছে। তারউপর রাত থাকবে শাবিহার বিয়েতে। ছেলেটা থাকে না ওঁদের সাথে। রেহানের খুব মন খারাপ হয়। কিন্তু শাবিহা আর রাতের কথা শুনে পুলকিত হলো ওর হৃদয়। শাবিহা আপুর বিয়ে মানে সবাই একত্রিত হবে। ওঁদের ভাঙা পরিবারটা আবার জোড়া লাগবে! রেহানের তর সয় না ওর বিয়ে খাওয়ার জন্য।

তিনজন বসে এ কথা সে কথা বলছিলো, তখনই সাদিক এহসান চৌকাঠ মাড়িয়ে ঢুকলেন। আজ তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছেন তিনি। বেশিরভাগ সময় তিনি রাতে বাড়ি ফিরেন। তবে আজ সব কাজবাজ ফেলেই চলে এসেছেন।তার একমাত্র কারণটা হলো রাত। সে আজ অনেকগুলো বছর পর এ বাড়িতে পা রেখেছে। রায়হান এহসান অনেকদিন ধরেই রাতকে বাড়ি আসতে বলছিলো। রাত নাকোচ করছিলো বারংবার। সে এ বাড়িতে আসবে না মানে আসে না। এমনকি রাজনৈতিক কাজে ঢাকা আসার পরও সে হোটেলে থাকতো। কয়েকদিন ধরে রায়হান এহসানের শরীরটা ভীষণ খারাপ যাচ্ছে। এমনিতেই উনি অনেক বছর ধরে প্যারালাইজড। তারউপর বারংবার নাতিকে দেখতে চাচ্ছিলো। তবুও রাত আসছিলো না।শেষবার আর না পেরে বললো জীবিত অবস্থায় যাতে চোখের দেখা হলেও দেখে যায়। অনেক রিকুয়েষ্টের পর অবশেষে রাত রাজি হয়েছে। কথাটা কালকেই জানিয়েছিলো সে রায়হান এহসান কে। সাদিক এহসান জানতেন না। জেনেছেন আজ সকালেই।তারপর থেকে উনার মনটা টিকছিলো না। ছেলেকে একপলক দেখার জন্য হৃদয়টা পরেছিলো বাড়িতে। শেষমেশ সব কাজ ফেলেই চলে এসেছেন তিনি।
সাদিক এহসান ঢুকতেই রেহান উৎফুল্ল হয়ে বললো
-“বাবা!”
হাসলেন তিনি। রেহান দৌড়ে আসলো তার কাছে। খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বললো
-“ভাইয়া এসেছে।”
-“হুম জেনেছি।”
রাত ওনাকে দেখতেই মোবাইল নিয়ে বসলো। শাবিহা আড়চোখে তাকালো ভাইয়ের দিকে। রাতের মুখাবয়ব অনুভূতিহীন। শাবিহার খালি মনে হচ্ছে সাদিক এহসান কথা বলতে আসলেই রাত রেগে যাবে। তাই মিনমিন করে বললো
-“ভাইয়া, এসেছো অনেক্ষণ হচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে নাও।”
-“তোরা যা।” রাতের গম্ভীর স্বর।
রেহান পিটপিট করে তাকালো শাবিহার দিকে।ইশারায় বোঝালো, এরা দু’জন আর কিছুক্ষণ এক রুমে থাকলেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে খুব শীঘ্রই।শাবিহা ডাকলো রেহান কে, তারপর দু’জন একসাথে কেটে পরলো। সাদিক এহসান ইতস্তত হয়ে রাতের পাশে বসলেন। গলা ঝেড়ে ডাকলেন

-“আবরার!”
রাত শুনলো না, ফিরেও চায়লো না তার দিকে। সাদিক এহসান আবার ডাকেন ওঁকে। এবারেও সে নিশ্চুপ, তাকালো না পর্যন্ত। এমন করে কয়েকবার ডাকলেন তিনি। ওনার ডাকে দু’জন সার্ভেন্ট উঁকি দিয়ে চায়লো তাদের দিকে।বাপ ছেলের ঝগড়াঝাটি নিয়ে বাড়ির কাজের লোক থেকে, দারোয়ান পর্যন্ত সবাই অবগত। সাদিক এহসান ওঁদের দেখে লজ্জা পেলেন। ছেলেটা উত্তর পর্যন্ত দিচ্ছে না। এতোটা অবজ্ঞা! যদিও এটা নতুন না। রাতের চোখে উনি ইনভিসিবল। রাত কখনোই তাকে দেখতে পায় না। তার ডাক শোনে না। উনি আবার ডাকতেই রাত চকিতে উঠে দাঁড়ালো। হনহনিয়ে চলে গেলো সিড়ি বেয়ে।

মাঝখানে বেশ কয়েকদিন গ্যাপ দেওয়ার পর আজ কলেজে যাবে চাঁদনী।ওইদিনের পর থেকে ও একবারো কথা বলেনি আঁধারের সাথে। আঁধার বলতে চায়লেও এড়িয়ে গেছে। চাদনী ইদানিং নিজের একটা সমস্যা খেয়াল করে। ও খুব সহজে ডিপ্রেসড হয়ে যায়। উল্টাপাল্টা ভাবনা আসে ওর মনে।ছোট বিষয়টা কেও খুব বড় ভাবে নিয়ে রিএক্ট করে। মনটা সারাক্ষণ কিছু একটা ভেবে ছোট হয়ে থাকে। অস্বাভাবিক বিহেভ করছে ও কয়েকদিন ধরে। সারাক্ষণ মুখটাকে পেঁচার মতো বানিয়ে একা একা বসে থাকে। ফোন দেখাও কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টেবিলে নাস্তা করতে বসেছে চাদনী। বুয়া উঠে খাবার রেডি করেছে অনেক আগেই। চাদনী গতকার রাতে বলে রেখেছিলো, ও কলেজে যাবে বুয়া যাতে একটু তাড়াতাড়ি। অবশ্য সে না উঠলেও চাদনী নিজে কিছু একটা বানিয়ে নিতো। ব্রেকফাস্টে পরোটা আর কালা ভুনা। চাঁদনীর খুব পছন্দের। ও ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলো। ওর পায়ের কাছেই চ্যাম্প বসে আছে। মাঝে ওর পায়ে গা বুলাচ্ছে। চাদনী ওঁকেও খেতে দিয়েছে।
কিন্তু চাঁদনীর এতো শান্তি আঁধারের বোধহয় সহ্য হলো না।ওঁকে জ্বালাতে সে এসে হাজির হলো টেবিলে। চাদনী তাকালো না ওর দিকে, যেন দেখতে পায়নি। বা আঁধার ইনভিসিবল হয়ে গেছে এমনভাবে। আঁধার ওর সামনাসামনি চেয়ার টেনে বললো।হামি তুলে ঘুমঘুম দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদনীর দিকে। চাদনী তাকাবে না এটা ওর জানা কথা। এমনভাবে ইগনোর করে মেয়েটা ওঁকে! আঁধার নিজের জন্য পরোটা আর ঝোল নিয়ে মুখে দেয়। আবার তাকায় চাদনীর দিকে। চাদনী পাংশুটে মুখে খাচ্ছে। আঁধার কথা বলতে চায়লো। ওর খাবার শেষ হওয়ার ধৈর্য ধরতে না পেরে বললো

-“কলেজে যাবি?”
-“হু।”
-“বললি না তো! আমি আরেকটু তাড়াতাড়ি উঠতাম!”
-“সমস্যা নেই, আমি একা যেতে পারবো। কলেজের রাস্তা তো চিনি।”
আঁধার মুখ কালো করে বললো
-“একা যাবি?”
চাদনী কিছু বললো না। আঁধার অসহায় স্বরে বললো
-“শোন না আমার কথাটা। কথা বলিস না কেন তুই আমার সাথে?”
-“ইচ্ছে করে না।”
-“আমার তো ইচ্ছে করে।এক বাড়িতে একা একা দু’জন মানুষ থাকি। অথচ একে অপরের সাথে আমাদের কথা বলা মানা।”
চাদনী এবারে মাথা তুলে চাইলো ওর দিকে।কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালো। ব্যাগটা গুছিয়ে চেয়ারের উপর রেখেছিলো ও। কাঁধে তুলে বললো

-“যাচ্ছি।”
আঁধার একটু খেয়েই উঠে গেলো।উতলা হয়ে বললো
-“এখনো রেগে আছিস?”
-“না।”
-“আমি দিয়ে আসি? হারায় যাবি আবার!”
-“লাগবে না। হারিয়ে গেলেই ভালো।”
চাদনী বেরিয়ে গেলো আঁধারের দিকে না তাকিয়েই। ও অ্যাপার্টম্যান্ট থেকে বেরোতেই, আঁধার পিছু পিছু নেমে আসলো ওর। চাদনী পিছু ফিরে চোখমুখ কুঁচকে তাকালো। আঁধার টেডি হাসলো ওর তাকিয়ে। মেয়েটাকে জ্বালিয়ে মারতে কি যে ভালো লাগে ওর!
আঁধার ওর কাছে যেতেই চাদনী গুমোট স্বরে বললো

-“আমি একা যেতে পারবো বলেছিনা!”
-“তো যা! মানা করছি আমি?”
-“এসেছো কেন তাহলে?”
-“আমার ইচ্ছা!”
বিরক্তিতে চাদনীর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না। আঁধার এগিয়ে এসে ওর কাঁধ থেকে ব্যাগ নিয়ে নিলো। ব্যাগের চেইন খুলে, দুইটা পাঁচশো টাকার নোট দিলো। ব্যাগটা চাদনীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
-“ঢাকার রিকশাওয়ালা মামাদের কে তে চিনিস না! টাকা দিতে ভুলে গেলে পুরো রাস্তার মানুষের সামনে বেইজ্জত করে ছাড়তো!”
চাদনী বললো
-“লাগবে না তোমার টাকা আমার। বাবার দেওয়া পকেট মানি এখনো আছে। খরচ হয়নি।”
-“চাচ্চু তোকে টাকা পাঠাবে কেন? আমি তো মানা করেছিলাম। তোর বিয়ে হয়ে গেছে, চাঁদনী। তুই তোর বাবা থেকে টাকা নেস লজ্জা করে না? চাচ্চু থেকে কেন নিবি? তোর দায়িত্ব এখন আমার!”
চাদনী কিড়মিড়িয়ে তাকালো। বাজখাঁই গলায় বললো

-“উফ! দায়িত্ব, দায়িত্ব! শব্দগুলো শুনতে এত্তো বিরক্ত লাগে আমার। এই এক দায়িত্ব করে করে লিটারালি মেরে ফেলছো তুমি আমাকে! যথেষ্ট দায়িত্ব পালন করেছো তুমি আঁধার ভাই। আর দরকার নেই। অফ যাও এবার।”
আঁধার নাক ফোলালো। তপ্তস্বরে বললো
-“ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেব একদম।বেয়াদবি করিস কেন এতো?কিছু বলি না বলে যা ইচ্ছে তাই করবি। পার পেয়ে যাবি ভাবছিস? আমলনামা লেখা হচ্ছে তোর, সব তুলবো।”
-“কিছু না বলেই আমার যে অবস্থা করেছো তুমি, বললে তো আর আমাকে খুজেই পাওয়া যেতো না। এখন খুব শান্তিতে আছি?”
আঁধার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। নিজেকে সংযত করে বললো

-“হ্যাঁ। আমার দোষ গুলোই দেখবি খালি! বাদ দে, সাবধানে যাস!”
-“দোয়া কইরো যাতে মরে যাই। মাঝরাস্তায় কোনো ট্রাক বা বাস এসে যাতে ওখানেই চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দেয়। সবার ভীষণ বোঝা হয়ে গেছি আমি।”
-“তুই মরে গেলে, তোর লাশটা আমি আমার বাড়িতে ফ্রিজিং করে রেখে দিব। কবরও নসিবে জুটবে না তোর!”
চাদনী মুখ বিকৃত করে গেইট পেরিয়ে বেরিয়ে গেলো। আঁধার ধুপধাপ পা ফেলে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাত ধরলো ওর। চাঁদনী হাত ছাড়াতে চায়লে ধমক দিলো ওঁকে।
চাদনী মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আঁধার রিকশা থামালে, চাদনী হাত ছাড়িয়ে উঠে বসে। আঁধার নিজেই ভাড়া দিয়ে দিলো রিকশাওয়ালা মামাকে। বললো

-“ওঁকে সিটি কলেজের সামনে নামায় দিয়েন মামা!”
মাথা ঝাকালো সে। রিকশা চলতে শুরু করে, চাদনী একবারো আঁধারের দিকে তাকালো না। কিন্তু আঁধার তাকিয়ে থাকলো এক দৃষ্টিতে। রিকশা চলে যেতেই, মন খারাপ করে রাস্তায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তক্ষুনি শাবিহার কল আসে ওর ফোনে। আঁধার রিসিভ করতেই শাকিহা উদ্বিগ্ন স্বরে বললো

-“অন্ধকার, ক্লাসে আসবি না আজ?”
-“না রে। ইচ্ছা করছে না! কয়েকদিন ধরে খুব ধকল যাচ্ছে। রেস্ট নিই একদিন।”
-” এই আঁধার, প্লিজ এমন করিস না। সবাই আসবে আজকে। তুই না আসলে ভালো লাগে না!”
-“নাটক করিস না। মন মেজাজ ভালো নেই।”
আধার অ্যাপার্টমেন্টের দিকে হাটা দিলো।

কাজলরেখা পর্ব ১৪

-“আমার সবই তো নাটক তোর কাছে৷ সবাই আসতে বলছে তাই কল দিয়েছি। আমার একার তো ঠেকা নাই!”
-“ঠেকা না থাকলেই হলো।”
-“আচ্ছা, আর কল করবো না। মাফ চাই!”
-“আসতেছি, এত্তো ভং ধরিস ভাই! নাটকী!”

কাজলরেখা পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here