আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৮
অরাত্রিকা রহমান
হতাশায় শ্বাস ফেলে রায়ান বলল-
“নিজের বউরেই পরকীয়ার প্রস্তাব দিলাম তাতেই আমি 420 হয়ে গেছি। আর কি শুনা বাকি আছে। ভাব তো এমন নিলো মনে হয় বিবাহিত হয়ে বরকে খুব মনে রাখছে! হাফ নাম মনে রেখে ‘আমি বিবাহিত, আমি বিবাহিত ‘ ভোজন শুনায় তাও আবার নিজের বরকেই। কি কপাল আমার।”
রায়ান কয়েকবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মনে মনে ভাবলো এবার ফোন দিয়ে নিজের আসল পরিচয়টা দিয়েই দেবে।
-“হাহ্! বউয়ের সাথে সত্য কথা বলে কাজ হবে না বুঝতে আর বাকি নেই তার চেয়ে বরং আমি রায়ান বলে দিই। অন্তত কথা তো বলবে।”
মিরায়া নিজের ফোনটা বিরক্তি নিয়ে বিছানার একপাশে ছুড়ে মারলো। মাথায় এখনো ঘুরছে বিয়ে নিয়ে মজা কে করবে তার সাথে। এরই মাঝে মিরায়ার ফোন আবার বেজে উঠল সেই একই নাম্বার থেকে কল এসেছে। মিরায়া সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিল। রায়ান আবার কল করল মিরায়া আবার ফোনটা কেটে দিল।
এইদিকে রায়ান মিরায়ার বারবার কল কেটে দেওয়ার কারণে বেজায় চটছে। রায়ান ফোনটা নিজের সামনে নিয়ে-
“আরে বাবা কল না তুললে কিভাবে বলবো আমি কে? হৃদপাখি কল টা তো তুলবি।”
রায়ান আবার কল দেয় মিরায়া এইবারও একই কাজ করে। রায়ানও হাল ছাড়ার পাত্র না, মিরায়ার বার বার কল কেটে দেওয়ার পরও সে টাকা কল করতে থাকে। এইভাবে কল করা আর কল কাটার কার্যক্রম চললো প্রায় ১৫মিনিট। ১৫ মিনিটে কম করে হলেও ৩০-৪০ বার কল করেছে রায়ান।
মিরায়া বিছানার উপর বসে আছে ফোনটা একটু পর পর বাজছে আর সে কেটে দিচ্ছে। এক পর্যায়ে মিরায়া বিরক্তি যে বলে উঠলো-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ধুর ছাই, কে এটা? সমস্যা কি? তখন থেকে কল করে বিরক্ত করেই যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে। কি অদ্ভুত একটা নাম্বার। এর আগে এমন দেখিও নি।”
মিরায়া এবার ফোনটা একবার হাতে নিয়ে নাম্বার টা মুখস্থ করলো এই ভেবে- “আচ্ছা যদি চেট-জিপিটি কে জিজ্ঞেস করি এটা কি নাম্বার তাহলেও তো হয়।” যেই ভাবা সেই কাজ, নাম্বার টা চেট-জিপিটি কে দিতেই সে সমস্ত ডিটেইলস বলে দিল। তবে সব কিছুর মাঝে যেই তথ্যটা মিরায়ার সন্দেহ দূর করলো সেটা হলো-“এটি একটি আমেরিকান নাম্বার।” মিরায়ার বুঝতে আর বাকি নেই আমেরিকা থেকে আর কে কল করতে পারে। কিন্তু বিয়ের বিষয়টা রায়ান জানে বলে এমন ভাবে মজা করা মিরায়ার পছন্দ হয়নি। মিরায়া নিজের নিজে বলে উঠলো-
“কথা বলার হলে ঠিক মতো কথা বলেই হয়। এমন উল্টো পাল্টা কথা কেন বলতে হবে? উনাকে আমার অতীত সম্পর্কে সব বলে মহা ভুল করিছি আমি।”
মিরায়ার ফোন আবার বাজলো রায়ান কল করছে। মিরায়ার হালকা বাঁকা হেঁসে বলল-
“খুব শখ না মজা করার। মজা কত প্রকার ও কি কি এবার টের পাবেন।”
এইদিকে রায়ান ফোনটা কানে ধরে বলছে-“হৃদপাখি প্লিজ পিক আপ দ্যা কল ওয়ানস। বলার সুযোগ দে একবার আমি রায়ান।”
মিরায়া ফোনটা ধরলো এবার রায়ান মিরায়াকে কল রিসিভ করতে দেখে একটু হেঁসে সোজা হলো সে কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে মিরায়ার কন্ঠ ভেসে এলো একজন কল সেন্টারের কর্মীর ন্যায় নিজের মতো করে-
“আপনি যার নাম্বারে কল করেছেন সে এই মুহূর্তে চরম বিরক্ত। আর কখনো কল দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, ধন্যবাদ।
The person’s number you have dialed is extremely
disturbed now. Don’t call ever, thank you.”
রায়ানের মিরায়ার বলা কথা বুঝার প্রসেসিং শেষ হওয়ার আগেই মিরায়া কল কেটে দিয়ে রায়ানের নাম্বারটা ব্লক করে দিল। রায়ান থ মেরে রইল কয় সেকেন্ড পরবর্তী মুহূর্তে সে হালকা হাসলো বুঝতে পেরে যে তার বউও এখন মজা নিচ্ছে তার সাথে। রায়ান আবার কল করল কিন্তু এবার মিরায়া নয় সত্যি সত্যি কল সেন্টারের কর্মীর কন্ঠ শোনা গেল-
“আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তাই এই মুহূর্তে ব্যস্ত আছে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ।
the number you have dialled is busy now please call after sometime thank you.”
রায়ান এবার বুঝলো না কল ঢুকার আগেই ব্যস্ত কেন দেখাচ্ছে। সে কয়েকবার চেষ্টা করলো একই কথা ভেসে আসছে ফোন থেকে। রায়ান মিরায়ার তার নাম্বার ব্লক করার বিষয়টা এবার বুঝতে পারলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে এক প্রকার। ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশ পানে তুললো আছাডড় দিতে কিন্তু কি মনে করে যেন থেমে গেল। নিজের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধির খিচুড়ি পাকিয়ে ফোনটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল-
“আমি এর আগেও একবার বলেছিলাম হৃদপাখি আই ডোন্ট লাইক রিজেকশন। শুধু শুধু আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে ভালো করলে না বেইবি। পারলে এখনি দেশে গিয়ে নিজের পাগলামি দেখাতাম। নেহাতই আমার হাত পা বাঁধা তাই। কিন্তু ব্যপার না এবার দূর থেকেই নিজের বরের পাগলামি উপভোগ করাবো তোমাকে।”
রায়ান নিজের কুটিল চিন্তা অনুসরণ পূর্বক সাথে সাথে নিজের ম্যানেজার কে কল করে। ম্যানেজার রায়ানের কল দেখে একবার ফোন বাজতেই কল রিসিভ করে-
“হ্যালো স্যার, গুড মর্নিং।”
রায়ান ম্যানেজার এর কথার কোনো তোয়াক্কা না করে গম্ভীর আদেশ মূলক কন্ঠে বলল-
“ইনফোর্ম এভরি ওয়ান টুডে ইজ দ্যায়ার অফ ডে। নো ওয়ার্ক। আই এম গিভিং ইউ আ নাম্বার এ্যান্ড আ মেসেজ। মেক সিওর দ্যা হোল অফিস কলস ইন টু দিস নাম্বার ওয়ান বাই ওয়ান এ্যান্ড পাস দ্যাট মেসেজ। আই রিপিট এভরি ওয়ান আ্যান্ড এভরি এক্সিস্ট্যান্ট নাম্বার। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”
ম্যানেজার রায়ানের কথার আগা মাথা না বুঝে শুধু গাম্ভীর্যতা খেয়াল করে কথার গুরুত্ব টের পেয়ে এক সেকেন্ড এ উত্তর থ
দেয়-“ইয়েস… ইয়েস স্যার।”
রায়ান ভালো করেই জানতো এইটা অনেক বেশি বেশি কিন্তু কিছু করার নেই। তবে অফিসে এইটা নিয়ে পরে গুঞ্জনের সৃষ্টি হতে পারে তাই ম্যানেজার কে সাবধান করতে বলল-
“ওয়ান মোর থিং, বি কেয়ারফুল এ্যাবাউট দিস ওয়ার্ক। ইট’স মাই ওয়াইফ’স নাম্বার সো…!”
রায়ানের সম্পূর্ণ কথা বলে শেষ করার আগেই ম্যানেজার বুঝতে পারলেন রায়ান কি বলতে চাইছে তাই নিজের থেকেই রায়ানকে আশ্বস্ত করলেন-
“ডোন্ট ওয়ারি স্যার আই উইল হ্যান্ডেল ইট জেন্টলি। এভরি ওয়ান উইল বি রেসপেক্টফুল টু ওয়ার্ডস ম্যাম। দ্যা নাম্বার উইল বি সিকিউর।”
রায়ান ম্যানেজার এর কথা শুনে বলল-“ওকে গ্রেট। গেট ব্যাক টু ওয়ার্ক নাও।”
ম্যানেজার-“সিওর স্যার। থ্যাংক ইউ।”
রায়ান কল টা কেটে দিয়ে মিরায়ার নাম্বারটা আর সাথে একটা মেসেজ লিখে দিলো মিরায়া কল ধরার পর তাকে বলার জন্য। মেসেজ টা ছিল-
-“ম্যাম, প্লিজ আন-ব্লক দ্যাট নাম্বার। মি. রায়ান ওয়ান্টস টু টোক টু ইউ।”
রায়ানের অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথে ম্যানেজার অফিসে এনাউন্সমেন্ট করে দেন। আর সবার বোসের কথা অনুযায়ী হাতের সব কাজ ফেলে রেখে রায়ানের দেওয়া আদেশ মতো কাজ করতে লেগে যায়।
বাংলাদেশে রাত ১টা। মিরায়া শুয়েছে কিছুক্ষণ আগে এই মাত্র তার চোখটা একটু লাগছিল এমন সময় তার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের বিরক্তিকর আওয়াজ বন্ধ করতে মিরায়া ঘুম ঘুম চোখে বিছানার হাতিয়ে ফোনটা খুঁজতে থাকে। ফোনটা হাতে পেতেই কল রিসিভ করে কানে দেওয়ার পর অপর পাশ থেকে রোবটের মত করে কেউ যেন কথা বলল-
-“ম্যাম, প্লিজ আন-ব্লক দ্যাট নাম্বার। মি. রায়ান ওয়ান্টস টু টোক টু ইউ।”
ঘুম ঘুম চোখে মিটমিট করে তাকালো। ফোনের অপর পাশ থেকে মেয়েটা কি বলল একটানে কিছু ঠাওর করতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো-“হুয়াট? হুয়াট ডিড ইউ সে?”
মেয়েটা আবার-“ম্যাম, প্লিজ আন-ব্লক দ্যাট নাম্বার। মি. রায়ান ওয়ান্টস টু টোক টু ইউ।”
মিরায়া এবার কথাটা বুঝতে পারলো। রায়ানের নাম্বার ব্লক করার ফল এটা বুঝতে পেরে জোরে চেঁচিয়ে বলল-
“আই উইল নোট।” এই বলে ফোন কাটলো। ফোন বিছানায় রাখতে যাবে তখন আবার কল এলো। আবার অন্য নাম্বার। মিরায়া ধরলো- “হ্যালো।”
-“ম্যাম, প্লিজ আন-ব্লক দ্যাট নাম্বার। মি. রায়ান ওয়ান্টস টু টোক টু ইউ।” একই লাইন একই সুরে।
মিরায়াও আবার একই ভাবে-“আই উইল নোট ডু দ্যাট।”
ফোন কাটলো। ফোন আবার বাজলো। মিরায়া ভালোই বুঝতে পারছে রায়ানের কথায় হচ্ছে সব। কাঁচা ঘুম ভাঙ্গার জন্য এমনিতেই খারাপ লাগছে তার উপর এসব শুরু হয়েছে। মিরায়া এবার ফোনটা ধরলো-
“”ম্যাম, প্লিজ আন-ব্লক দ্যাট নাম্বার। …”
আবার একই লাইন ভেসে আসার আগেই চেঁচিয়ে উঠলো-
“সাট আপ! টেল ইউর বোস আমি উইল নোট আন-ব্লক হিম।”
ফোনটা আবার কাটলো এই ভেবে হয়তো আর এমন কল আসবে না। কিন্তু কিসের কি, অফিসের কারো সাহস নেই রায়ানের আদেশ অমান্য করার, তার পরিপ্রেক্ষিতেই যা কাজ সেই কাজে সবাই অব্যাহত থাকলো। পর পর কল আসছে আর বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে মিরায়া আর ফোন তোলে নি।
তবে বারবার ফোন বাজার কারণে ঘুমের ১২টা অনেক আগেই বেজে গেছে। মিরায়া ভীষণ বিরক্ত হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে উল্টো করে রেখে শুয়ে পরলো। কিন্তু ঘুম আসছে না। এভাবে কাটলো প্রায় ৩ঘন্টা ভোর হয়ে গেছে। সূর্য আকাশে হালকা উঁকি দিচ্ছে। মিরায়া বিছানা থেকে উঠে বসে ফোনটা তুললো। এখনো ফোনটা বাজছে অনবরত, এক পর্যায়ে কল কেটে গেলে ফোনের স্ক্রিনে ” you missed 2000+ calls” ভেসে উঠলো। মিরায়া হতবাক।
-“উনি কি পাগল নাকি এত কল কে করে তাও শুধু নাম্বার আন-ব্লক করার জন্য?” মিরায়ার মুখ থেকে আপনা আপনি কথাটা বের হয়ে এলো। সাথে সাথে ফোনটা আবারও বাজলো। মিরায়া হাঁফ ছেড়ে ভাবলো এবার ফোনটা ধরে বলবে যে আন-ব্লক করছে সে, আর কল না দিতে।
মিরায়া এবার কল রিসিভ করার পর কিছু বলার আগেই অপরপাশ থেকে ভেসে এলো এক পরিচিত কন্ঠ। গম্ভীর শান্ত অথচ হুমকির মতো করে রায়ান বলল-
“এই ফোনটা কাটার পর যদি সাথে সাথে নাম্বারটা আন-ব্লক না হয়, তোমার ছোট্ট শরীরটার কি হাল করবো দেশে ফিরে তার ঠিক থাকবে না হার্ট-বার্ড। নিজের কপালে শুধু শুধু দুঃখ টেনে এনো না বেইব। নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি বলে মনে কোরো না আমি কন্ট্রোল করতে চাই। আমার অবাধ্য হলে আমাদের অসম্পূর্ণ রাখা কাজটা আমি দেশে ফেরার পর খুব বাজেভাবে সম্পূর্ণ হবে।”
মিরায়ার শরীর কেঁপে উঠলো হঠাৎ সাথে লোমগুলোও দাঁড়িয়ে গেলো সাথে তার দেখা স্বপ্ন আর সেই পড়ন্ত দুপুরের কথা মাথায় এলো। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কল টা কেটে দিল রায়ান। মিরায়া বুঝতে পারলো রায়ানের সাথে জেদ ধরে টেকা আর সম্ভব না। আরো ফোনে যা বললো তার একটাও যদি সত্যি হয় তাহলে তো… মিরায়া নিজের মনে এসব ভেবে মাথা নাসূচক নেড়ে সাথে সাথে রায়ানের নাম্বার টা আন-ব্লক করে দিল। রায়ানও তার পরপরই নিজের নাম্বার দিয়ে কল করে দেখার জন্য তার শাসানোতে কাজ হয়েছে কি না।
এবার কল করতেই কল ঢুকলো। রায়ানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি খেলে গেল। নিজের মনে মনে ঠোঁট কামড়ে হেসে ভাবলো-” বাচ্চা বউটা শুধু শুধু জেদ করে। আমাকে পাগলামো করতে বাধ্য না করে শুরুতে আন-ব্লক করে দিলেই তো আর রাত জাগাতাম না।”
মিরায়া এবার রায়ানের কলটা ধরল ভালো মতোই বুঝেছে এখন কল না ধরলে আরো খারাপ কিছু হবে। কলটা ধরার পর রায়ান হালকা গলায় বলল-
“গুড গার্ল। নাউ স্লিপ, ওকে?”
মিরায়া আমতা আমতা করে বলল-
“ক্যা..ক্যাম্পাসে যেতে হবে সকাল হয়ে গেছে এখানে।”
রায়ান আবার চেঁচিয়ে বলল-
“নিজের দোষে ঘুম নষ্ট করেছ কিন্তু আমি মানবো না। আজ যেতে হবে না বাড়িতে থেকে রেস্ট করো। আমি আম্মুকে বলে দিবো। যেন খাবার তোমার ঘরে দেয়।”
মিরায়া প্রতিবাদ করবে তার সাহস পেল না বুক কাঁপছে তার। শুধু বলল-“আ.. আচ্ছা।” মনে মনে ভাবছে হ্যাঁ বলে দেই দেশে তো নেই আমি ক্যাম্পাসে গেলেই কি আর বুঝতে পারবেন নাকি।
রায়ান মিরায়াকে আবার বলল-
“খবরদার! ভেবো না দেশে নেই তাই আমাকে লুকিয়ে কিছু করলে যানতে পারবো না। আজকে বাড়ির বাইরে পা রাখলে আমি দেশে ফিরে এমন অবস্থা করবো ১মাস নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে না।”
মিরায়া আবার আঁতকে উঠে বিড়বিড় করলো-“অসভ্য, অশ্লীল লোক, ডাবল মিনিং কথা বলে সব সময়।”
রায়ান-“কি হলো? চুপ কেন মাথায় গেছে কি বললাম?”
মিরায়া বাধ্য হয়ে বলল-“হুম, গেছে।”
রায়ান এবার গভীর গলায় বলল-“ঠিক আছে ঘুমাও এখন। আমার মিটিং আছে। পরে কল দিবো। একবার বাজতেই যেন রিসিভ হয়, ওকে? বাই।”
মিরায়া হালকা চিন্তিত কন্ঠে-“ওয়েট একটু.. শুনুন।”
রায়ান মুচকি হেঁসে দুষ্টু ভঙ্গিতে বলল-“বলো জানপাখি, কি ?”
মিরায়া এমন ডাকে লজ্জা পেয়ে একটু অস্বস্তিতে জিজ্ঞেস করলো-“আপ..আপনি ঠিক আছেন তো? কবে ফিরবেন?”
রায়ান এবার একটু প্রসারিত হেঁসে মিরায়াকে বিরক্ত করতে বলল-“কেন বেইব? ডু ইউ মিস মি সো মাচ?”
মিরায়া হালকা কেশে উঠলো রায়ানও হাসলো। মিরায়া আবার আমতা আমতা করলো-“আমি কেন মিস করতে যাব আপনাকে? মামনি জিজ্ঞেস করতে বলেছিল। আপনি যাওয়ার পর থেকে একবারও খবর দেননি নিজের তাই সবাই চিন্তা করছিল।”
রায়ান এবার আর তর্ক না করে মিরায়ার কথায় সায় দিয়ে বলল-“ওকে ওকে গোট ইট। আম্মু কে আমি কল করে নিচ্ছি। তুমি ঘুমাও। রাতের ঘুম পুরো না হলে শরীর খারাপ করবে তোমার।”
মিরায়া সম্মতি দিল-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
রায়ান-“ওকে বেইব। আমার মিটিং এ্যাটেন্ড করতে হবে এখন। বাই। পরে কল করছি তোমায়। সুইট ড্রিমস। মিস মি মোর।”
রায়ান কলটা রাখতেই মিরায়া বিছানার উপর ধপ করে পড়ে গেল। তার চোখ ভরা ঘুম। এবার হয় তো রায়ান ঠিক আছে জানতে পেরে শান্তিতে একটু ঘুম হবে। কিছু সময়ের মধ্যেই মিরায়া ঘুমিয়ে পড়লো।
অন্যদিকে রায়ান রামিলা চৌধুরীকে কল করে কথা বলে নেয়। আজ তার বড়ো একটা প্রজেক্ট এর জন্য মিটিং এ বসেছে। মিটিং টা খুব গুরুত্বপূর্ণ এই প্রজেক্টের ডিল এর মূল্য – ১৭০০ কোটি টাকা। মেইন কনফারেন্স ডিলার দের সাথে ৩ তারিখে আর আজ কেবল ২৭ তারিখ। রায়ান কনফারেন্স রুমে মিটিং শুরু করলো।
সকাল ৮টা~
চৌধুরী বাড়ির সবাই খেতে নেমেছে মিরায়া ছাড়া। রুদ্র ও রায়হান চৌধুরী একটু আগেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন অফিসের জন্য। সোরায়া টেবিলে মিরায়াকে দেখতে না পেয়ে রামিলা চৌধুরীকে প্রশ্ন করল-
“মামণি আপু কি আজকে তাড়াতাড়ি চলে গেছে ক্যাম্পাসে?”
রামিলা চৌধুরীর সাথে রায়ানের কথা হয়েছে। রায়ান তখনি বলেছিল মিরায়া যেন আজকে ক্যাম্পাসে না যায় আর ভালো করে রেস্ট নেয় সেটার খেয়াল রাখতে। রামিলা চৌধুরী উত্তরে বললেন –
“না রে মা, তোর আপু নিজের ঘরেই আজ যাবে না ক্যাম্পাসে।”
সোরায়া চিন্তিত কন্ঠে-“কেন ? কি হয়েছে আপুর? শরীর খারাপ?”
রামিকা চৌধুরী সোরায়া কে আশ্বস্ত করে বললেন-
“না, ওর ঘুম হয়নি কালকে কোনো কারণে তাই ঘুমাচ্ছে। তুই বেশি চিন্তা না করে চুপচাপ খেয়ে কলেজে যায়।”
সোরায়া আর কথা না বাড়িয়ে রামিলা চৌধুরী কথামতো চুপচাপ নিচে নাস্তা খেয়ে কলেজে জন্য বের হয়ে যায়।
সোরায়ার কলেজ~
সকালে কলেজের পরিবেশ খুবই সুন্দর ছিল। কলেজের গেটের সামনেই জুঁই দাঁড়িয়ে আছে সোরায়ার জন্য। কাল কলেজ শেষে কি হয়েছে এই ভেবে রাতে ঘুম হয়নি তার। মাহির সোরায়াকে কি বলতে ডেকেছিল কাল- এই ভাবছিল সম্পূর্ণ সময়।
এমন সময় কলেজের গেটের সামনে জুঁইকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সোরায়া দৌড়ে এসে জুঁইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“ওই কি রে, তুই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কি করিস? ভিতরে যাসনি কেন?”
জুঁই সোরায়াকে প্রাণবন্ত দেখে একটু অবাক হয়ে ভাবলো-
“আমি এই জায়গায় ওর চিন্তায় রাতে ঘুমায় নি আর ও এমন লাফাতে লাফাতে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে? কাল কি তবে তেমন সিরিয়াস কিছু হয় নি? শুধু শুধু প্যারা নিচ্ছিলাম?”
সোরায়া জুইকে হালকা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল-
“ওই জুঁই? কিছু বলিস না কেন? চল কলেজের ভিতরে যাই, আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে এখানে?”
হঠাৎ জুঁই নিজের ধ্যানে ফিরে এসে বলল-
“হ্যাঁ? হ্যাঁ চল যাই। তুই ঠিক আছিস তো?”
কলেজে ঢুকতে ঢুকতে জুঁই সোরায়াকে প্রশ্ন করলো।
সোরায়া হেঁসে বলল -“হ্যাঁ ঠিক আছি আমার কি হবে আবার। সব ঠিক আছে। তুই বেশি ভাবছিস। ক্লাসে চল।”
দুজনেই নিজেদের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে এমন সময় অফিস রুম থেকে মাহির ও বের হয়। মাহির সোরায়ার একদম মুখোমুখি অবস্থায় থাকার পরও সোরায়া এক পলকের জন্যও
তার দিকে তাকিয়ে দেখলো না, অনায়েসেই মাহফিলের সাইড কাটিয়ে চলে এলো। এইদিকে এই দৃশ্য জুঁই দেখে সম্পূর্ণ অবাক-“যে মেয়ে কলেজে স্যারকে খুঁজে খুঁজে দেখতো এখন সামনে থাকার পরও একবার তাকালো না!”
সোরায়া এখন সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে হাঁটছে। মাহির বিষয়টা খেয়াল করল। কালকের পর থেকে বাড়ি ফেরার পর হাজার বার চিন্তা করেছে-” মেয়েটা ছোট আমি কি অতিরিক্ত বকে ফেলেছি? মন খারাপ করে যদি কান্নাকাটি করে কাল থেকে কলেজে না আসে!” কিন্তু কিসের কি সোরায়া দিব্যি হাসিমুখে কলেজে এসেছে যেন কিছু হয়নি কাল। এদিকে সোরায়ার তাকানোতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আজকের সোরায়ার এভাবে দেখেও না দেখার ভাব করে চলে যাওয়া তার ভালো লাগলো না কিন্তু তা মেনতে মন চাইছে না।
সকালের দুই ক্লাস শেষে ইংলিশ ক্লাসের সময় হতেই মাহির ক্লাসে প্রবেশ করে। ক্লাসের সবাই দাঁড়ায় সোরায়াও। ক্লাস যথারীতি চলছে। কিন্তু আজ মাহিরের ক্লাসে পাড়ানোতে মন বসছে না। সে আড় চোখে একবার সোরায়ার দিকে দেখতেই খেয়াল করলো সোরায়া কেবল বই আর খাতার দিকে সামনের দিকে নজর দিচ্ছে না। মাহির আবার মাথা ঝাঁকিয়ে পড়ানো চালিয়ে গেল কিন্তু এক পর্যায়ে এমনটা আর তার সহ্য হচ্ছিল না বলে সবার উদ্দেশ্যে বলল-
“ক্লাস এ্যাটেনশন দেও, সামনে বোর্ডের দিকে তাকাও।”
ক্লাসের কয়েকজনের সাথে বলে উঠলো-“বোর্ডই তো দেখছি।”
মাহির এবার হালকা গলা খাঁকারি করে বলল- “সবাই মনোযোগ দেও কয়েকজন না।”
সোরায়া তাও সামনে তাকালো না একবারও। মাহির কোনো মতো ক্লাস টা শেষ করলো। ঘন্টা বাজার পর মাহির সবার উদ্দেশ্যে বরাবরের মতো প্রশ্ন করলো-
“এনি কোশ্চেন?”
প্রতিবার সোরায়া হাত তুললেও এইবার কেউই হাত তুলল না। মাহির সোরায়ার দিকে তাকালো। জুঁই পাশে বসে সব খেয়াল করছে কিন্তু ক্লাসের সময় চলছে তাই চুপ ছিল। সোরায়া আপন মনে বই পড়ে যাচ্ছে যেন আশে পাশে কিছু নেই। মাহির এবার ক্লাস থেকে বিদায় নিতেই জুঁই সোরায়ার থেকে বই কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো-
“ওই তুই যে বললি কিছু হয় নি তাহলে এসব কি হচ্ছে?”
সোরায়া কিছু বুঝতে না পারার মতো করে জিজ্ঞেস করল-
“কিসব হচ্ছে?”
জুঁই সোজা বলল-“ইইহহ্! নেকামি করোস নাকি। সকাল থেকে দেখছি সব কিছু উল্টো হচ্ছে।”
সোরায়া নিজের বইটা জুঁইয়ের হাত থেকে নিয়ে জিজ্ঞাস করল আবার-“কি উল্টো হয়ে দেখলি তুই আবার?”
জুঁই এবার বলতে থাকলো টানা-“সব সময় ক্লাসে তুই চায়ের দিকে তাকিয়ে থাকিস। আজ সম্পূর্ণ ক্লাস জুড়ে একবারও তুই দেখলি না অথচ তার কোন সময় তোর দিকে তাকায় না আজ পুরোটা ক্লাসে বেশিরভাগ টাইমে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল। স্যার জিজ্ঞেস করলে সব সময় তুই প্রশ্ন করিস কিছু না কিছু। আজ একবার ও করলে না। স্যারের চাওনি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল স্যার তোর থেকে প্রশ্ন শুনতে চাইছিলেন। এসব উল্টো জিনিস কেন হচ্ছে বলতো?
সোরায়াও যে খেয়াল করেনি বিষয়গুলো তা নয়। ইচ্ছা করেই যে এমন করছে তা যে কেউ বুঝবে। সোরায়া মাহিরের এমন অবস্থা আর নিজের পরিবর্তনে খুশি ছিল। সোরায়া জুঁইয়ের কথায় পাত্তা না দেওয়ার ভাব নিয়ে বলল-
“আমি কিভাবে বলব কেন হচ্ছে। আমি আর দেখছি না আমার ইচ্ছা।”
সোরায়া মনে মনে -“দেখছি না কেন বলল, আমি ভালোবাসি উনাকে চাইলেই এড়িয়ে চলা যায় কিন্তু ভুলে থাকা অসম্ভব। আমি শুধু চাই উনি নিজের মতো থাকুক যেন আমার জন্য তার কোনো সম্মানহানি না হয়।”
মাহির অফিস রুমে গিয়ে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো-
“উফ্! মাহির হয়েছে কি তোর ক্লাস করানোতে এতো অনিহা কেন দেখাচ্ছিস। এটা তোর কাজ, বি অ্যাটেন্টিভ।”
মাথার চুল একটু শক্ত করে টানতে থাকলো। মাথা ব্যাথা উঠে গেছে তার। মাহিরের চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে সোরায়ার হাঁসি মাখা চেহারাটা ভেসে উঠতেই মাহির চট জলদি চোখ খুলে ফেলল।
-“অসভ্য মেয়ে কালকের পরও কিভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসে বুঝলাম না। আমাকে এড়িয়ে চলছে। ওয়াও। একদিনে এতো পরিবর্তন।” নিজে নিজে আওড়ালো।
ঢাবি ক্যাম্পাস~
রিমি সকাল থেকে এসে ক্যাম্পাসে মিরায়াকে না দেখতে পেয়ে মিরায়াকে কল করেছে কয়েক বার কিন্তু একবারও মিরায়া কল ধরে নি। ধরবেই বা কিভাবে সে তো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রিমি একটু চিন্তিত হয়ে উঠলো- “সব তো ঠিক ঠাক ছিল হঠাৎ ক্যাম্পাসে এলো না মিরা ফোন তুলছে না কিছু কি হয়েছে।”
রিমির মাথায় মিরায়ার ব্যাপারে কোনো জটিলতা থাকলে তার অবসান রুদ্রর কাছের হয়। রিমি ভাবলো-“রুদ্রকে জিজ্ঞেস করলে নিশ্চয়ই জানা ভেবে মিরার কি হয়েছে।”
রিমি নিজের ফোনটা একবার হাতে নিয়ে থেমে গেল-“না না, সব সময় এমন যখন তখন কল করা খারাপ দেখায়। মিরাযর থেকেই জেনে নিবো যা জানার।” এই বলে ফোনটা আবার ব্যাগে রেখে দিল। তারপর ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে সন্ধ্যার জন্য ক্যাফের দিকে রওনা দিল।
চৌধুরী বাড়ি~
বিকেল ৪টার কাছাকাছি সময়। মিরায়া ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই রামিলা চৌধুরীকে সোফায় বসে থাকতে দেখে নিজেও সোফায় গিয়ে বসলো। ভাবলো রায়ানের সাথে কথা হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করবে। রামিলা চৌধুরী নিজে উল্টো মিরায়াকে প্রশ্ন করলেন-
“মিরা, রায়ানের সাথে ঘুম থেকে ওঠার পর কথা হয়েছে তোর?
মিরায়া অবাক হলো তবে সাথে সাথে উত্তর দিল-“না তো মামনি। কেন তোমার সাথে কি এখনো কথা হয়নি উনার? আমাকে যে বলল তোমাকে কল করবেন।”
রামিলা চৌধুরী- “আমাকে তো করেছে আগে। তখন বলেছিল তুই ঘুম থেকে উঠলে জানাতে। তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম তোর সাথে এর মধ্যে কথা হয়েছে কিনা।”
রায়ানের রামিলা চৌধুরীকে এইভাবে মিরায়ার সাথে কথা বলতে চাও আর বিষয়টা বলা মিরায়ার আজব লাগলো।
-“নিজে এক নির্লজ্জের হাড্ডি এখন অন্যের মানসম্মান নিয়ে টানছে। মামণি কে বলার কি ছিল।”
রামিলা চৌধুরী মিরায়াকে ধাক্কা দিয়ে বললেন-
“মিরা এক কাজ কর, তুই বরং একবার কল করে নে রায়ানকে। আর হ্যাঁ কথা হলে ভালোভাবে জিজ্ঞেস করিস ঠিক মতো খাচ্ছে কি না, কাজ বেশি কিনা?”
মিরায়া চোখ একটু বাঁকা করে তাকালো রামিলা চৌধুরীর দিকে-
“মামণি তোমার এগুলো জানার থাকলে তুমিই তো জিজ্ঞেস করতে পারো । আর তা না হলেও আমি কল করলে তোমাকে ফোন দিয়ে যাব নিজে জিজ্ঞেস করে নিও। আমি পারবো না।”
রামিলা চৌধুরী মনে মনে একটু হাসলেন বুঝতে আর বাকি নেই যে মিরায়া লজ্জা পাচ্ছে। রামিলা চৌধুরী বললেন-
“না তুই ই জিজ্ঞেস করে আমাকে বলবি। আমি ওর সাথে তখন কথা বলার সময় রাগ করেছি এখন কথা বলা যাবে না ওর সাথে।”
মিরায়া মনে মনে বিড়বিড় করল-
“মা ছেলের মন কষাকষিতে আমাকে পিষে ফেল তোমরা। ধুর ভাল্লাগে না। এখন আবার ওই অশ্লীল টাকে কল করতে হবে।”
রামিলা চৌধুরী মিরায়ার মুখের আবরণ দেখে আরো হাসছেন মনে মনে। আসলে রায়ান এমন কিছুই তাকে বলে নি। তিনি ইচ্ছা করে মিরায়াকে দিয়ে রায়হানকে কল করানোর জন্য এমনটা বলছেন বানিয়ে। ছেলের আর বউমার মাঝে একটু টান তৈরির চেষ্টা এই আর কি। মিরায়া বিয়ের ব্যাপারটা জানলে কেমনভাবে রিয়েক্ট করবে তার ঠিক নৈই অন্তত একটা পিছুটান তৈরি হলেও হয়তো সংসারটা টিকে যাবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
মিরায়া আর রামিলা চৌধুরীর কথোপকথনের মাঝেই হঠাৎ সোরায়া বাড়িতে ঢুকলো। মিরায়া আর রামিলা চৌধুরী দুইজনেই তাকিয়ে পা থেকে মাথা অব্দি নোংরা কালো ড্রেনের পানিতে ভেজা সোরায়াকে দেখছে। দুইজনের চোখই কপালে উঠার উপক্রম।
মিরায়া সোফা থেকে উঠে দৌড়ে সোরায়ার কাছে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“এ কি অবস্থা তোর? কিভাবে হয়েছে? কোত্থেকে এলি?”
রামিলা চৌধুরী ও পিছন পিছন কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন-
“পড়ে গিয়েছিলি নাকি কোথাও?”
মিরায়া আর রামিলা চৌধুরী একাধারে প্রশ্ন করতে থাকায় সোরায়া সামান্য ঘাবড়ে যায়। মিরায়া আবার জিজ্ঞেস করল-
“কিরে কিছু বলছিস না কেন? এসব কিভাবে হলো? আর আজকেও এত লেট করে কেন বাড়ি ফিরলি?”
সোরায়া একটু দম নিয়ে বলল-
“একটা একটা করে প্রশ্ন করো একসাথে সব কিছুর উত্তর কিভাবে দিবো।”
মিরায়া সোরায়ার কথা শুনে নিজেও একটু নিঃশ্বাস নিল। তার পরক্ষণেই জিজ্ঞেস করল-
“ঠিক আছে এবার বল কি হয়েছে।”
সোরায়া একটু সিনেমাটিক বর্ণণা দিতে – “আরে আপু আর বলো না…!”
মিরায়া-“চুপ! নেকামি কম। সোজা উত্তর দে।”
সোরায়া চুপ হয়ে মিরায়ার কথা মতো সোজাসুজি এক লাইনে উত্তর দিল-
“কলেজ থেকে ফিরার সময় রাস্তার পাশে একটা মা কুকুর ড্রেনের সামনে বসে ড্রেনের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিল। আমি সামনে গিয়ে দেখলাম তার ৫ টা বাচ্চা কুকুর ড্রেনের পড়ে গেছে। একটুর জন্য ভেতরে পড়ে যায়নি ৫টা একসাথে দলা পাকিয়ে ছিল পরে আমি ড্রেনের ভিতরে গিয়ে তুলে দিয়েছি ৫টাকে।”
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৭ (৩)
কথা গুলো বলেই মাথাটা নিচু করে ফেলল। সোরায়ার কথায় মিরায়া একবার রামিলা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই উনি মুচকি হাসলেন। মিরায়া সোরায়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলল-
“ঠিক কাজ করে মাথা নামিয়ে রেখেছিস কেন? এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে? মাথা উঁচু কর।”
সোরায়া মিরায়ার কথায় মাথা উঁচু করে ফিক করে হেঁসে দিল সাথে মিরায়া আর রামিলা চৌধুরীও। এবার মিরায়া আদেশের সুরে বলল-
“যা এবার গোসল করতে। কি অবস্থা করেছে ইউনিফর্ম টার। জলদি যা।”
সোরায়া তাড়াহুড়ো করে লম্বা লম্বা পা ফেলে যেতে যেতে বলল-“যাচ্ছি যাচ্ছি।”