আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৮ (২)

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৮ (২)
অরাত্রিকা রহমান

খান বাড়ি~
মাহির গাড়ি পার্ক করে বাড়িতে ঘুকতেই দেখলো বাড়িতে এক গাদা মেহমান। সীমা খান মাহির কে দেখেই হেঁসে মাহিরের সামনে এসে বললেন। সোজা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপরে রাখা শার্ট পড়ে দ্রুত নিচে নেমে আসবি। মাহির কিছু বুঝলো না। মাহির অবাক হয়ে প্রশ্ন করে-

“মানে? কেন? এরা কারা?”
সীমা অতিথিদের দিকে তাকিয়ে ভান করে একটু হেসে বললেন-“তোকে দেখতে এসেছে উনাদের একমাত্র মেয়ের জন্য। যা রেডি হয়ে আয়।”
মাহির রেগে গিয়ে বলল-
“কিহ্! আমাকে দেখতে? আম্মু আমি একটা ছেলে । আমাকে কেন দেখতে আসবে আমি না যাবো মেয়ে দেখতে।”
সীমা খান চোখ পাকিয়ে-“তুই যাবি না মেয়ে দেখতে বেঁচে থাকতে তা আমি জানি। তাই উনাদের ডেকেছি ছেলে দেখতে।”
মাহির শ্বাস নিয়ে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি উপরে যাচ্ছি নিচে নেমে যেন এনাদের না দেখতে পাই বলে দিলাম। নাহলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।”
সীমা খান বললেন-“উনারা আমার অতিথি আমি উনাদের যেতে বলতে পারবো না।”
মাহির একটু বিরক্ত হয়ে গিয়ে-“ঠিক আছে তোমার বলতে হবে না। আমি বলছি।”
মাহির ড্রয়িং রুমের সোফার কাছে গিয়ে সকল অতিথিদের সামনে দাঁড়িয়ে ভদ্রতার সুরে বলল-
“এখানে কোনো ছেলে নিজেকে দেখাবে না। আপনারা এবার আসতে পারেন। ধন্যবাদ।”
সবাই মাহির কথা শুনে একটু ইতস্তুত বোধ করল তারপরই একে অন্যের রং দিকে তাকিয়ে একে একে সবাই বের হয়ে গেল গুনগুন করে কথা বলতে বলতে। সীমা খান মাহির এর কাছে এসে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন-

“তুই চাস কি আমাকে একটু বলবি? নিজের কোন মেয়ে পছন্দ না, আমার কথা শুনে কোন মেয়েকে দেখতে যাবি না, আমি মেয়ের পরিবারদের ডেকে আনলে তাতেও সমস্যা। কি করবো টা কি বল আমাকে।”
মাহির এবার খুব বিরক্ত হলো তার এই প্রতিদিনের বিয়ে বিয়ে কাহিনী আর ভালো লাগছে না-
“উফ্! আম্মু সবকিছু এটা লিমিট থাকে। আমি যাকে তাকে বিয়ে করব না।”
সীমা খান -“তোর কি মনে হয় তোর জন্য আমি যাকে তাকে রাস্তার থেকে তুলে নিয়ে আসব।”
মাহির-“যাকে তাকে বলতে আমি রাস্তার মেয়ে বুঝাই নি আম্মু। রাস্তার অনেক মেয়েরা ভালো হয়। কিন্তু কাউকে না জেনে না শুনে এমনি শুধু শুধু বিয়ে করে ফেলা যায় নাকি।”
সীমা খান-“বেশ, তোকে আমি এক বছর সময় দিচ্ছি। নিজের পছন্দমত একটা মেয়েকে যত খুশি জেনে শুনে বিয়ে করবি। আর তা না হলে আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না।”
মাহির কি বলবে কিন্তু না বুঝে বলে দিল-

“ঠিক আছে। এক বছর তো? এক বছরে কাউকে না কাউকে পেয়েই যাবো। এবার শান্ত হও। আর এই এক বছর আমাকে বিয়ে নিয়ে প্যারা দিবা না।”
মায়ের জেদ সামলে কিছুক্ষণ হলো মাহির নিজের ঘরে একা শান্ত এক পরিবেশে খাটের উপর শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে অজান্তেই কয়েক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সে মুচকি হাসলো। তারপরেই চোখটা খুলে মুখে হালকা হাসি রেখে বলল-
“মেয়েটা আসলেই অন্য রকম। এমন ভাবে কিভাবে পারলো সাদা ধবধবে ইউনিফর্ম টা নষ্ট করতে? তাও আবার একটা মেয়ে হয়ে রাস্তার মাঝে‌। ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য রাস্তায় নষ্ট করতে চাইতো বলে আমার মনে হয় না।”

তারপর ই আবার চোখ বন্ধ করে নিলো একই ঘটনা চোখের সামনে পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেখার জন্য‌।
ফ্ল্যাশব্যাক~
মাহির গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন মানুষকে একটা ম্যানহোলের সামনে জড়ো হতে দেখে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। মনে মনে ভাবছিল-
“কি হচ্ছে ওখানে!!
ঠিক ওই সময় একজন বৃদ্ধ লোক তার গাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মাহির বৃদ্ধলোকটিকে কৌতুহলি হয়ে প্রশ্ন করল-

“এই যে আংকেল, সামনে তো ভিড় কেন? কিছু কি হয়েছে?”
বৃদ্ধ লোকটা একটু তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল-
“আরে মিয়া আর কইয়েন না। একটা কুত্তা কানতাছে ওর ৫টা ছাউ ওইটার মদ্দে পাইরা গেছে। সবাই দেখতাছে এহন ময়লার মদ্দে আর কে নামবো কন।”
লোকটি নিজের মত কথা বলে চলে গেল। এইদিকে মাহির অন্যের উপকার করার রোগ আছে ছোট থেকে। রায়ানের সাথে তার বন্ধুত্বও সেভাবেই। রায়ান তাকে একবার একটা বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর পর ধন্যবাদ স্বরূপ ওকে বলেছিল ভবিষ্যতে অন্যের সাহায্য করতে।
মাহির নিজের গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দেখলো সোরায়া রাস্তা পার করে ভীরের দিকে যাচ্ছে খানিকটা অবাক হয় সে।

গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে দৌড়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দেখল। এইটুকু সময়ের মধ্যে সোরায়া কিছু না ভেবেই কলেজ ইউনিফর্মে ম্যানহোলের সিড়ি বেয়ে ভিতরে চলে গেছে। এই দিকে সবাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কেউ কেউ মেয়েটার সাহসের প্রশংসা করছে। এই দিকে মাহিরের চিন্তা হচ্ছিল ছোট বাচ্চা মেয়ে কিছু হলে কি হবে।
কিছুক্ষণ পর সম্পূর্ণ কালো নোংরা পানিতে ভিজে জামা কাপড় সব নষ্ট করে বের হয়ে এলো সোরায়া একটা কুকুরের বাচ্চা হাতে তুলে। এভাবে পর পর ৫ টাকে তুলে আনার পর সবাই সোরায়ার থেকে একটু দূরে সড়ে গেল নোংরা লেগে থাকায় ওর গায়ে। মাহির ভীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সোরায়ার সামনে দাঁড়ায়। এবার সোরায়া নিজেই মাহিরের থেকে একটু সড়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল-

“স্যার,আপনি এখানে?”
মাহির একবার দেখলো সোরায়াকে, তার মায়াবি চেহারাতে একটু লজ্জা হয়তো এমন অবস্থায় এভাবে মাহিরের সামনাসামনি হতে হচ্ছে তাই। মাহির চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল-
“গাড়িতে গিয়ে বসো যাও।”
সোরায়া মাহিরের আদেশ শুনেও না লুনার মতো ভাব করলো। নিজের ব্যাগটা তুলে কিছু টাকা বের করে দৌড়ে পাশের দোকান থেকে কিছু বিস্কিট ও পাউরুটি কিনে আবার কুকুর গুলোর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে মা কুকুরের সামনে ওইগুলো ছিঁড়ে তাদের খেতে দেয়। একবারও মাহির এর দিকে দেখছে না সে। কিন্তু মাহিরের দুই চোখের মণিতে কেবল সোরায়া অঙ্গভঙ্গি গুলো দেখা যাচ্ছে। কুকুরগুলোকে খাবার দেওয়া শেষে সোরায়া নিজের ব্যাগ কাধে নিয়ে মাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-

“আমার বাড়ি এখান থেকে কাছে স্যার আমি যেতে পারবো। থ্যাংক ইউ।”
কথাটা বলেই নিজের মতো বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করে দিল। মাহির তাকে কিছু বলবে এই পরিস্থিতি ছিল না তাই সে চুপ করে সোরায়াকে চলে যেতে দেখলো। আর ভাবলো-
“একদিনে এতো পরিবর্তন সম্ভব?” তারপর আর কি যথারীতি বাড়ি ফিরে এলো আর বাড়িতে এমন পরিস্থিতির শিকার।
বর্তমান~
মাহির নিজের চিন্তায় হারিয়ে গিয়ে ঘুমিয়ে গেছে কখন তা নিজেও জানে না। মাথার মধ্যে একটাই ছবি-সোরায়া। যেই মেয়েকে নিয়ে ভাবলে বিরক্তি ছাড়া কিছুই অনুভব হতো না আজ তা মুগ্ধতায় পরিণত হতে শুরু করেছে।

চৌধুরী বাড়ি~
মিরায়া নিজের ফোনটা নিয়ে পাইচারি করছে। রামিলা চৌধুরীর বলা কথাগুলো তার মাথায় ঘুরছে একবার ভাবছে কল দেবে আবার ভাবছে না দেবে না। মিরায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে জোরে বলল-
“মিরা এত কেন ভাবছিস তুই। ওই অশ্লীল লোকটাকে কল করার প্রয়োজন নেই তোর। জাহান্নামের চৌরাস্তায় যাক‌।”
সাথে সাথেই আবার বিড়বিড় করল যেন আয়নায় নিজেকে উত্তর দিচ্ছে-
“কিন্তু মামণি যে বলল উনি আমাকে কল দিতে বলেছেন। যদি কল না দেই তারপর যদি দেশে ফিরে সকালে যা বলেছে তা করে!”
মিরায়ার শরীরে আবার কাটা দিলো রায়ানের কথা মনে করে। মিরায়া ফোনটা হাতে নিয়ে রায়ানের নাম্বার টা সামনে এনে ভেবে যাচ্ছে কি করবে কিন্তু কিছুই উত্তর পাচ্ছে না মন থেকে। এমন সময় হঠাৎ রামিলা চৌধুরী মিরায়াকে জোরে চেঁচিয়ে ডাকলেন-

“মিরা মা? একটু নিচে আয় তো এক্ষুনি।”
রামিলা চৌধুরীর গলার আওয়াজ একটু উঁচু হওয়ায় হঠাৎ শুনাতে মিরায়া চমকে কেঁপে উঠল এবং সাথে হাতটাও কেঁপে উঠার ফলে ভুলে রায়ানের নাম্বার এ কল চলে গেল। মিরায়া প্রথমে খেয়াল করে নি সে উত্তর করলো রামিলা চৌধুরীকে –
“আসছি মামণি।”
তারপর নিজের ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো রায়ানের নাম্বারে কল গিয়ে সেটা রিং করছে। মিরায়ার বুক ধক করে উঠলো সে কাঁপা কাঁপা হাতে তাড়াহুড়ো করে কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দৌড়ে নিচে চলে গেল যেন এবার রায়ান কল ব্যাক করাতে তাকে ধরতে না হয়।

রায়ান কনফারেন্স রুমে, সাথে তার ফোন টা সাইলেন্ট করে টেবিলের উপর উল্টে রাখা বরাবরের মতোই। কাজের সময় কোনো প্রকার বিরক্তি তার পছন্দ নয়। মিরায়ার কল টের পাইনি সে স্বাভাবিকভাবেই।
আরো দীর্ঘ ১ঘন্টা পর মিটিং শেষ হলো। টানা এমন একটার পর একটা কনফারেন্সে অ্যাটেনডেন্ট করার কারণে রায়ানের মাথা বেশ ব্যথা করছে। সে নিজের কেবিনে এসির পাওয়ার টা বাড়িয়ে নিজের কাউচ টার উপর ধপ করে বসে একটু পিঠ ঠেকিয়ে নিল। মাথায় একহাত দিয়ে চুল গুলা টেনে ধরে চোখ বন্ধ করতেই তার মনে মিরায়ার খেয়াল এলো। হঠাৎ চোখ খুলে ফোনে বাংলাদেশের সময় দেখলো-৫টা বাজে।
রায়ান ভাবলো মিরায়ার ঘুম থেকে উড়ে পড়ার কথা অনেক আগেই এখন কল করলে মিরায়াকে করে পাবে। রায়ান নিজের ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো মিরায়ার নাম-“হৃদপাখি” ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আছে। রায়ান এক লাফে উঠে বসলো-
“হৃদপাখি! আমার হৃদপাখি আমাকে কল করেছে? আমার তেড়া বউ এতো ভালো কবে হলো? যাক গে কল করেছে তাই আলহামদুলিল্লাহ।”
রায়ান মিরায়ার নাম্বারটায় কল ব্যাক করে।

মিরায়া নিচে এখনো তার ঘরে খাটের উপর সরে থাকা ফোনটা বাজছে। তবে কল ধরার জন্য কেউ নেই কাছে। এমন সময় সোরায়া গোসল শেষে নিচে খেতে নামতে সিঁড়ির দিকে এগোতেই ফোন বাজার শব্দ তার কানে যায়। সোরায়া চোখ ঘুরিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো শব্দটা কোথায় হচ্ছে।
রায়ান আবার কল করলো মিরায়া ধরছে না তাই। এবার সোরায়া স্পষ্ট শুনতে পেল মিরায়ার ঘর থেকে আওয়াজ টা আসছে। সোরায়া ঘরে ঢুকে মিরায়াকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে বিছানা থেকে ফোনটা তুলে। রায়ানের নাম সেভ করাছিল তাই সোরায়ার চিন্তে সমস্যা হলো না। সে কলটা রিসিভ করে, মিরায়া এখন ব্যস্ত, ঘরে নেই এটা বলার জন্য। কিন্তু তার আগেই রায়ান অপর দিক থেকে মিষ্টি সুরে বলল-

“হাই হার্টবার্ড! আমাকে কল দিয়েছিলে দেখলাম। খুব মিস করছো বুঝি? আসো একটু আদর করে দেই।”
সোরায়া রায়ানের কথা শুনে মুচকি হাসলো তারপর হালকা গলায় বলল-“ভাইয়া, আমি সোরায়া।”
রায়ান হকচকিয়ে মিরায়ার জায়গায় সোরায়া কথাগুলো শুনেছে বলে কাশতে কাশতে বলল-“আসতাগফিরুল্লা।”
সোরায়া এবার শব্দ করে হেসে বলল-“ভাইয়া, চিল! আমি উল্টোপাল্টা কিছু ভাবিনি। শান্ত হও।”
রায়ান স্বাভাবিক হয়ে প্রশ্ন করল-“চড়ুই পাখি, আমার হৃদপাখি কই? ফোন তুই করলি কেন?”
সোরায়া-“ভাইয়া, আপু নিচে হয়তো ফোনটা ভুলে ফেলে গেছে। আমি নিচেই যাচ্ছিলাম, শব্দ শুনে ঘরে ঢুকে দেখি কল বাজছে তাই তুললাম। আমি বুঝিনি তুমি আর আপু কলে…”

সোরায়া নিজের কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করলো না।
রায়ান সোরায়া আধ বলা কথা বুঝতে পারলো। সে সোরায়াকে সাবধান করতে বলল-“তোর আপু করলে তো হতোই রে, এখন পর্যন্ত সব একা আমিই করে যাচ্ছি। পারলে তোর বোনটাকে বোঝা। তোর আপু আমি এইসব বলেছি শুনলে দেশে বসেই না আমার জান নিয়ে নেয়।”
সোরায়া রায়ানের কথায় হাসতে থাকলো। রায়ান এবার একটু পাঠানোর সুরে সোরায়াকে অনুরোধ করে বলল-
“চড়ুই! তোর আপু টাকে তোর ভাইয়ার অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে রে। আমি ভিডিও কল দেই একটু তোর আপুর কাছে নিয়ে যাবি শুধু ফোনটা রিসিভ করে। পারবে ভাইয়ার জন্য এতো টুকু করতে? আসার সময় অনেক চকলেট এনবো তোর জন্য বনু। এইটুকু হেল্প করে দে, প্লিজ।”
সোরায়া এবার সিরিয়াস মুডে বলল-“তুমি কি ভেবেছ আমাকে চকলেট ঘুষ দিয়ে কিনে নিবা? আর আমি তোমার জন্য কাজ করবো!”

রায়ান আশা ছেড়ে দিয়ে আমতা আমতা করলো-“না ইয়ে.. মানে ঐ আরকি…তুই রাগ করিস না বনু।”
সোরায়া এবার ঠিক করে হেসে মজার ভঙ্গিতে বলল-
“মনে করার কিছু নেই তো, তোমার ভাবনা একদম সঠিক। আমাকে চকলেট ঘুষ দিয়ে কেনা যায়। হিহিহি।”
রায়ান এবার হাসলো তারপর বলল-“তাহলে দাঁড়া আমি কল করছি এক্ষুনি।”
অডিও কলটা কাটার পর রায়ান মিরায়ার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট টা একসেপ্ট করে তার আইডি থেকে ভিডিও কল করল। সোরায়া কলটা প্রথমে ধরে রায়ানের সাথে কুশল বিনিময় করে ফোনটা নিয়ে নিচে গেল। মিরায়া তখন সোফার উপর সাথে কেউ নেই, রামিলা চৌধুরী নিজের ঘরে আছেন হয় তো।সোরায়া সিঁড়ি দিয়ে নেমে মিরায়াকে জিজ্ঞেস করল-“আপু কি করো?”

মিরায়া এক নজর সোরায়ার দিকে তাকালো তারপর আবার টিভির দিকে মন দিয়ে বলল-“এই তো টিভি দেখছি। তুই খেতে বস, খাবার বারা আছে।”
সোরায়ার হাতে ফোনটা রায়ান ভিডিও কলে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার হৃদপাখিকে একটু দেখবে বলে। সোরায়া এবার কিভাবে ফোনটা মিরায়াকে দেবে না বুঝতে পেরে শুধু হালকা উত্তেজনা নিয়ে মিরায়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা ওর সামনে নিয়ে বলল –
“আপু সারপ্রাইজ! দেখ কে কল করেছে! আমাদের মিস্টার আমেরিকা।”

মিরায়া হালকা চমকে তার মুখে সামনে ধরে রাখা ফোনটার দিকে তাকালো। সাথে সাথে মিরায়া সোরায়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কল কেটে দিল। হঠাৎ রায়ানকে এক পলক দেখে ঘাবড়ে গিয়ে চেঁচিয়ে বলল-
“তুই আমার ফোন কেন ধরেছিস সোরা? এক্ষুনি খেতে যা। তাড়াতাড়ি যা বলছি।”
সোরায়া মিরায়ার ঝাড়ি খেয়ে খেয়ে গেল কিন্তু মনের যথেষ্ট আনন্দ। এবার মিরায়া নিজের ফোনটা নিয়ে দৌড়ে ঘরে গেল। এইদিকে রায়ানের মনটা ভেঙ্গে গেছে। একদিন পর সে তার প্রিয় মানুষটাকে একবার দেখার বাসনা করেছে সেটাতেই বাঁধা। রায়ান হাঁফ ছেড়ে আবার একবার কল করল। মিরায়া হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় চমকালো সোরায়া সাইলেন্ট ছাড়িয়েছে সেটা খেয়াল করে নি। মিরায়ার নিজের ও রায়ানকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল কিন্তু বলা সম্ভব নয় তাই এমন কিঐনিজের মনকে বলে বিচলিত করে নি। মিরায়া মনের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না তাই রায়ানের কলটা সে রিসিভ করে নিজের মুখে সামনে এনে ধরল। রায়ান মিরায়া এখন দেখতে পাচ্ছে একে অপরকে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।

রায়ানের অবস্থা আরো কাহিল। বেচারা একদিন পর শখের বউটাকে দেখে আর কন্ট্রোল করতে পারছে না নিজেকে। তার মনে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে সেই ফোন স্ক্রিনের মায়াবি মুখটা নিজের দুহাতের আচলায় পুরে পৃথিবীর সব আদর উজার করে দিয়ে। রায়ান নিজের হাতের মুঠো শক্ত করলো, চোখ দুই সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল, যেন নিজেকে খুব সামলাতে চাইছে ও অবাধ্য চাওয়া থেকে।
এইদিকে আবার মিরায়া লজ্জায় একবার একবার ছোট ছোট ভাঙা সময়ে একপলক একপলক রায়ানের দিকে তাকাচ্ছিল কিন্তু বেশি সময়ের স্থায়ীত্ব হয়নি সেই সময়সীমা। কিন্তু একনজরে দেখেও যে কেউ বলে দিতে পারবে রায়ানের চোখে ক্লান্তি স্পষ্ট। মিরায়া একটু ব্যথিত মনে আওড়ালো-
“উনি কি ওখানে গিয়ে কাজের চাপে খাওয়া। ছেড়ে দিয়েছেন! এমন কেন দেখাচ্ছে?”
মিরায়া এবার একটু দীর্ঘ সময় ধরে রায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রায়ানের মিরায়ারও যে তাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল বা তাকে মিস করছে তা বুঝতে সক্ষম।

রায়ান এবার নীরবতা ভেঙে নিজেই প্রথমে প্রশ্ন করলো-
“ঘুম পুরো হয়েছে হৃদপাখি? খারাপ লাগছে না তো?”
মিরায়া শুধু ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বলল-“হুম হয়েছে। হঠাৎ ভিডিও কল কেন?”
রায়ান এবার মিরায়ার দিকে নিজের নজর আরো তীব্র করে বলল-“দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই দিয়েছি। একদিন না দেখার পর কেমন দেখতে লাগছো তাই দেখার জন্য।”
মিরায়া এবার মজার সুরে নিজের গালে ঢং করে হাত রেখে পাল্টা প্রশ্ন করলো-“তো বলুন দেখি কেমন লাগছে আমাকে?”

রায়ান ফোনটা কাছে এনে মিরায়াকে আরো ভালো করে দেখে বলল-“সত্যি বলবো।”
মিরায়া মাথা নাড়ায়-“হুম হুম!”
রায়ান ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বলল-“একদম মরণঘাতী লাগছো। আমার মরণ!”
মিরায়ার শরীর রায়ানের কথায় হালকা কাপলো। সে মাথা নিচু করে ফেলতেই তাকে লজ্জা পেতে দেখে রায়ান আরো প্রসারিত হাসলো। রায়ান এবার একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে মিরায়াকে বলল-
“আমি বলেছিলাম কল একবার বাজতেই ধরতে। এতবার কল কেন দিতে হলো?”

মিরায়া বিরক্ত মাথা গলায়-“নিচে ছিলাম আর ফোন সাথে ছিল না। এমনিতেও কালকের রাতে এতো কল এসেছে ফোনে শান্তিতে ফোনটাও চালাতে পারছি না হ্যাং করছে বারবার। সব আপনার জন্য, ফোনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
রায়ান হেঁসে বলল-“ওই ফোন চালাতে হবে না। তোমার জন্য একটা কমলা সুন্দরী নিয়ে আসবো, হ্যাপি নাও?”
মিরায়া কথা না বুঝতে পেরে-“কমলা সুন্দরী! এটা আবার কে? আমি কি করবো ওইটা দিয়ে?”
মিরায়ার দুনিয়া দাঁড়ির সম্পর্কে ধারণা দেখে রায়ান ব্যাখ্যা দিল-“নতুন আই-ফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স কমলা রংয়ের তাই ওইটাকে কমলা সুন্দরী বলে। সেটা তোমার জন্য নিয়ে আসবো তাই বললাম। এবার বুঝেছ?”
মিরায়া ততক্ষনাৎ বলল-“আমার ওইসব কমলা সুন্দরী তুন্দরী লাগবে না, কমলা রংটা ফোনে আমার একদম পছন্দ হয়নি। এটাতেই চলবে আমার।”

রায়ান হেসে বলল-“ব্লাক এডিসন আছে আমেরিকায় ওটা নিয়ে আসবো তাহলে। এবার এটা বলো যদি এটাও না লাগে তো কি লাগবে তোমার? আমাকে দেই? নিবা বেইবি?”
মিরায়া সাথে সাথে না উত্তর বুঝাতে বলল-“ফোনটাই নিয়ে আসেন তাহলে।”
রায়ান আবার ঠোঁট কামড়ে হেঁসে উঠলো। এবার একই গভীর কন্ঠে বলল-“হৃদপাখি চলো বিয়ে করে নেই। তোমার বর একটা বেক্কল, ট্রাস্ট মি আই উইল বি বেটার।”
রায়ান মন থেকে কথাটা বললেও মিরায়ার কাছে কথাটা মজা মনে হলো। সে একটু চিন্তা করার ভাব নিয়ে হিন্দিতে ঢং করে বলল-“ঘারওয়ালে নেহি মানেঙ্গে।”
রায়ান এবার সোজা বসে আরো সিরিয়াস মুডে হিন্দিতেই জবাব দিল বলল-“ঘারওয়ালে ভি মানেঙ্গে অর ঘারওয়ালি ভি, মাই লিটল হার্টবার্ড।”

মিরায়া তো মজা ভাবছিল কিন্তু রায়ান গম্ভীর থাকায় সে আর কথা বাড়ালো না শুধু বললো-“দুনিয়া অনেক বড়ো, আরো অনেক মেয়ে আছে টেনশন নিয়েন না।”
রায়ান গম্ভীর ভাবেই-“তোমার দুনিয়া বড়ো হলেও আমারটা ৫ফুট ২ ইঞ্চি। এই পরিধির বাইরে আমার যাওয়ার ক্ষমতা নেই আর না আমার যাওয়ার ইচ্ছা আছে।”
মিরায়া চুপ হয়ে রইল। এভাবে চোখে চোখ রেখে একটা মানুষ কিভাবে এমন কথা বলে কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়া। মিরায়া মানসিক ভাবে বেশ বিরক্ত রায়ানের কথা তার উপস্থিতি এমন অযথা পাগলামিতে। মিরায়া সোজাসাপ্টা একটু উঁচু গলায় ঝাড়লো –

“আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ? আপনি কি চান কি চান না বুঝা মুশকিল। কেন এমন করেন?”
রায়ান মিরায়ার রাগের দু পয়সা পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো গাইতে থাকলো তার উত্তর হিসেবে –
“চাইনা মেয়ে তুমি অন্য কারো হও..
পাবে না কেউ তোমাকে, তুমি করো নও..
তুমি তো! আমারই জানো না! ওহহহ..
এই হৃদয়ে তোমারি ওহ হো হো হো..
তোমাকে ছাড়া আমি, বুঝিনা কোন কিছু যে
আর পৃথিবী জেনে যাক, তুমি শুধু আমার।”
মিরায়া অবাক হয়ে বিছানায় বসে রইল। যা হচ্ছে তার জীবনে সেটা যেমন অদ্ভুত তেমন জ্বালাময় আবার ঠিক তেমনি শান্তির। মিরায়া রায়ানকে চুপ করাতে বলল-

“চুপ করবেন আপনি? গান গাওয়ার ইচ্ছে হলে গায়ক হয়ে যান।”
রায়ান-“তোমার পার্সোনাল রাইডার হয়েছে নিজ ইচ্ছায়। তোমার ইচ্ছাতে তোমার পার্সোনাল গায়ক হতেও আমার সমস্যা নেই।”
মিরায়া কাকে কি বলছে আর সেই কথার কি মানে বের করে মানুষটা উত্তর করছে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মিরায়া প্রচন্ড বিরক্ত হলো রায়ানের কথায় তাই চেঁচিয়ে বলল-
“আমার খুদা পেয়েছে খেতে গেলাম বাই। মামণি কে কল করে নিজের খবর দিয়েন।”
কথা শেষ করে মিরায়া কলটা কাটতে যাবে ওই সময় রায়ান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল-
“আরে আরে থামো থামো। তুমি কল কেন দিয়েছিলে তাই তো শুনা হলো না।”
মিরায়া চোখ বাঁকা করে তাকিয়ে-“কেন দিয়েছি মানে? আপনিই তো মামণি কে নাকি বলেছেন ঘুম থেকে উঠার পর আপনাকে কল করতে। মামণি বলল তাই তো করলাম।”

রায়ান হালকা ভাবুক হলো। তারপর বুঝতে পারলো রামিলা চৌধুরী তাদের কথা বলার সুযোগ করে দিতে ইচ্ছা করে হয়তো এমনটা করেছেন। রায়ান মুচকি হেঁসে বলল-“ওহ হ্যাঁ, আমিই বলেছিলাম। মিটিং এর কারণে খেয়াল ছিল না। আচ্ছা তুমি খেতে যাও আম্মুর সাথে আমি কথা বলে নিব।”
মিরায়া-“আচ্ছা।”
রায়ান ডাকলো মৃদু সুরে-“হৃদপাখি?”
মিরায়া-“হুম।”
রায়ান আবার-“মাই হার্ট বার্ড?”
মিরায়া হালকা লজ্জায় -“হুমমমম।”
রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মিরায়ার মুখ নিচু করা দেখে বললো-“লুক এট মি,বেইবি।”

মিরায়ার বুক ঠোঁট কাঁপছে। সে বাধ্য মেয়ের মতো মুখ তুলে তাকালো রায়ানের দিকে। সাথে রায়ান তার হাত বুকের বা পাশে ধরে থেকে আর্তনাদ করলো-“উফফফ্!”
মিরায়া বিচলিত হয়ে -“কি.. কি হলো আপনার রায়ান ভাইয়া।”
রায়ান এই ভাইয়া ডাক শুনে বুক থেকে হাত নামিয়ে একদম স্বাভাবিক হয়ে বলল-“ওই বদজাত ছেমড়ি তোর কোন ধরনের ভাই আমি হ্যাঁ? কোন ভাই তার বোনের সাথে এমন আচরণ করে? ফিডার খাস নাকি? দুধের বাচ্চা? সব সময় ভাইয়া ডেকে মুডের ১২টা বাজায়।”

মিরায়া রায়ানের বিরক্তি দেখে মজা পেয়ে বলল-“ভাইয়া! রাগ করতে হয় না, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
রায়ান এক মেজাজ নিয়ে-“আমার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একমাত্র তুই আর তোর এই ভাইয়া ডাক। তফাৎ শুধু এতো টুকু প্রথম ক্ষতিকর জিনিস টা আমি নিজ সৎ ইচ্ছায় খেতে চাই। আর দ্বিতীয় টা শুনতেই মনে চায় না।”
মিরায়া রায়ানের কথায় আর টিকতে পারছে না । বরাবরের মতো রায়ানের দেশে নিজের মনে মনে কয়েকটা গালি বকলো-“অসভ্য, অশ্লীল, বেশরম লোক।”

তারপর আর কথা আগালো না শুধু বলল-“আমার খেতে হবে খুব খিদে পেয়েছে, রাখছি এবার।”
রায়ান-“আচ্ছা ঠিক আছে। পরে না হয় কন্টিনিউ করবো।”
মিরায়া কল কাটার আগে রায়ানের কান্তি ভরা তবুও মৃদু হাসি খেলা চেহারাটা কিছু সময় দেখে বলল-“শুনুন, কাজ ইম্পরট্যান্ট তবে নিজের থেকে বেশি নয়। ওখানে আপন কেউ নেই যে সব খেয়াল করবে, ঠিক মতো খাবেন, ঘুমাবেন। নিজের যত্ন নিয়েন। মামণি আপনাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে।”
রায়ান মিরায়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল-“শুধু মামণি তুমি করো না?”
মিরায়া একটু আমতা আমতা করে বলল-“আমি…আমি কেন করবো? মামণিই বলতে বলেছিল এসব তাই বললাম। বাই।”

রায়ান কে আর কিছু বলতে দিলো না মিরায়া। তার আগেই কল কেটে ফোনটা বুকে চেপে ধরলো আর একটু হলেই যেন লাফ দিয়ে বাইরে চলে আসবে হৃৎপিন্ড।
রায়ান মুচকি হাসলো আর মনে মনে এক অদ্ভুত শান্তি নিয়ে কাউচে হেলান দিয়ে ভাবলো-“হৃদপাখি, আর একটা বার ধরা দে আমার কাছে, কসম খোদার নিজের মনের আকাশে বন্দি করে খুব যত্নে রাখবো তোকে। শুধু একবার নিজের মুখে বল তুই আমার হবি, বাকি দুনিয়ার সব খুশি তোর বর তোর পায়ের নিচে এনে ফেলবে। জাস্ট ওয়ানস।”
দুইজন দুই দিকে এটি জ্বালায় জ্বলছে। কিন্তু বলা নিষিদ্ধ প্রায়।

সন্ধ্যার সময়~
রিমি ক্যাফের স্টেজে বসে গিটার কর্ড ঠিক করছে। সেই মুহূর্তে রুদ্র প্রবেশ করলো ক্যাফেতে তবে এবার কোনো ক্লাইন্ট সাথে নেই। রিমি হঠাৎ চোখ তুলতেই রুদ্র কে দেখলো। সে আর রুদ্র পরপর দুইজনের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে হাত নাড়লো। রুদ্র ক্যাফের ভিতরে একটা চেয়ারে বসলো। আর গোটা সন্ধ্যা রিমির দিকে তাকিয়ে তার মুগ্ধ গলার গান শুনে কাটালো।
রাতের সময় পারফরমেন্সের শেষে রিমি ক্যাফের থেকে বের হতেই রুদ্র কে দেখলো গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। রিমি হেঁটে রুদ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো-
“আজ এখানে কি মনে করে?”
রুদ্র হেঁসে-“আসলে‌ এখানকার কফি আর..!”
রিমি-“কফি আর কি?”

রুদ্র মাথা চুলকে -“কফি আর লাইভ পারফর্মার দুটোই বেশ ভালো আসক্ত হয়ে গেছি হয়তো। এই দেখুন না অফিস শেষে বেশ মাথা ব্যাথা ছিল কিন্তু এখন আর নেই।”
রিমি সামান্য লজ্জা পেয়ে দাড়িয়ে রইল। রুদ্র রিমির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল-“তাহলে এখন যাওয়া যাক?”
রিমি অবাক হয়ে- “কোথায়?”
রুদ্র স্বাভাবিক গলায়-“আপনার বাড়ি। ফিরবেন তো নাকি।”
রিমি-“ফিরবো তো ঠিকই তাই বলে প্রতিদিন আপনার আমাকে পৌঁছে দিতে হবে?”
রুদ্র এবারও রিমির থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়িতে রেখে বলল-
“হ্যাঁ হবে। আপনি আমার বোন প্লাস ভাবির বেস্ট ফ্রেন্ড ওই হিসেবে আমার বেয়াইন হন। এতো টুকু করাই যায় তাই না?”

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৮

রিমির মাথায় হঠাৎ এলো আজকে মিরায়া ক্যাম্পাসে যায় নি। একসাথে গেলছ মিরায়ার খবর টুকু অন্তত জানতে পারবে রুদ্রর থেকে তাই গাড়িতে উঠলো। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের মতো কথা বলতে থাকলো তার মাঝেই একবার রিমি সুযোগ বুঝে মিরায়ার খবরও নিয়ে নিয়েছে।

আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৮ (৩)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here