তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪০

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪০
নীল মণি

সন্ধ্যাটা আজ বড়ো অদ্ভুত রকম শান্ত।
আকাশে রঙ বদলের খেলা চলছে, হালকা বেগুনি ছায়া ছুঁয়ে যাচ্ছে জানালার কাঁচ।
ঘরের ভেতর আলো নরম, নিঃশব্দে বাজছে দূর থেকে একটা মৃদু সুর।
তিয়াশার চায়ের কাপ ঠোঁটে তুলেও চুমুক নেওয়া হচ্ছে না, কারণ মনটা আটকে আছে অন্য কোথাও… কারও স্পর্শের অপেক্ষায়।

একটা অদৃশ্য উষ্ণতা যেন ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছে চারপাশ—
না বলা কিছু কথা, ছুঁয়ে দেওয়া না ছুঁয়ে থাকার মধ্যবর্তী দূরত্ব…
আর ভেতরটা জুড়ে শুধু একটাই অনুভব—
এই সন্ধ্যা, এই নীরবতা… ভালোবাসার ভাষায় লেখা।
“আচ্ছা, কিন্তু বউকে একা রেখে এই সময় ক্লাবে যাওয়া আমার পক্ষে ঠিক হবে না।”
করিডোর পেরিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামছিল তিয়াশা। হঠাৎই ড্রইং রুমের দিক থেকে ভেসে এলো জায়নের কন্ঠস্বর ,সুর নরম হলেও, আগুন ছড়িয়ে দিল তিয়াশার রক্তে।
“ঠিক আছে, যেতে পারি… কিন্তু ৯টার আগেই ফিরে আসবো। যতই সিকিউরিটি ক্যামেরায় চেক করি না কেন, এত রাতে এই বদমাইশ বউটাকে একা ফেলে রাখা ঠিক না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিয়াশার পা হঠাৎই থেমে গেল।
শব্দগুলো যেন বিষাক্ত তীর হয়ে বুকে বিধলো।
তিয়াশা মুহূর্তেই থেমে গেল।
চোখ রক্তবর্ণ, নাক ফুলে উঠছে, গলার শিরা দপদপ করছে।
মনে মনে ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল–
“কি? ক্যামেরায় আমাকে চেক করে? আর আমি জানি ই না ? তার মানে ওইদিন উনি দেখেছিল আমি পপকর্ণ
খেতে চেয়েছি , তাই উনি পপকর্ন নিয়ে এসেছিল কিন্তু খাওয়া হলো কই। ”
এইসব ভাবনার মাঝেই দুই বাহু বুকে জরিয়ে নিল —

” এক মিনিট উনি কি আমায় ওয়াস……….”
এই ভেবেই তিয়াশার চোঁখ ছানাবড়া হয়ে উঠল।
“অসভ্য ব্যাডা।”
” ওকে আমি রেডি হতে যাচ্ছি , বায় ।”
আবারো জায়ন এর কন্ঠস্বর বাজলো তিয়াশার কানে।
তিয়াশা ক্ষিপ্র পায়ে নিজের রুমে চলে এলো। ঠোঁটে চাপা উত্তেজনার এক তাচ্ছিল্যের হাসি, মুখের চোয়ালে বিদ্রূপের ছায়া।
কাবার্ড খুলে দুপুরে আসা সেই রহস্যময় পার্সেলটা টেনে বের করল।
চোখে লেগে আছে আগুনের ঝিলিক,–
“জাওযাচ্ছি ক্লাব এ আপনাকে, ভেবেছিলাম এই ফর্মুলা পরে ট্রাই করবো, কিন্তু আমি আজ ই ট্রাই করবো এখনই করবো।”

পেছনে দরজা খোলা, বাতাসে শাড়ির আচল দুলছে– যেন আগুনের শিখা।
তিয়াশা চুপিসারে সাজতে শুরু করেছে,
শুধু নিজেকে নয়, বরং পুরো ঘরের বাতাসটাই বদলে দিতে।
এইদিকে অন্য ঘরে, জায়ন দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে, একেবারে ‘পারফেক্ট ক্লাব নাইট’-এর সাজে,
ব্রাউন রঙের বডি-হাগিং টি-শার্ট গায়ে, যেন তার চওড়া বুকের রেখা ফুটে বেরিয়ে আসছে।
অফ হোয়াইট ব্যাগি জিন্স তার কনফিডেন্ট হাঁটার প্রতিচ্ছবি।
পায়ে দামী স্নিকার্স, চুলগুলো ব্যাক-ব্রাশ করে নিখুঁতভাবে সেট করা ,যেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঝড় তুলবে।
ঘাড়ে এক ঢাল বিদেশি পারফিউম ছিটিয়ে নিজেকে আয়নার দিকে একবার দেখে মুচকি হাসলো ।
চোখে সাদা ফ্রেমের ড্যানিয়েল হেনশেল স্টাইল আইগ্লাস।

সে জানে সে দেখতে কেমন লাগে, আর আজ সে প্রস্তুত,
একটি নিরীহ সন্ধ্যাকে উত্তপ্ত করে তোলার জন্য।
দরজার হাতলে হাত রেখেই বেরোতে যাচ্ছিল জায়ন,
কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য চোখে পড়ল,
সেটা দেখে তার দেহ থেকে যেন সমস্ত রক্ত উপরের দিকে উঠে এসে মস্তিষ্কে জমাট বাঁধল।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশা —
না, তার চিরচেনা সেই কিটি ক্যাট না,
এ যেন এক অজানা আগুনের আগ্নেয়গিরি।
দরজার গায়ে হেলান দিয়ে, হাঁটু অবধি কালো স্যাটিনের নাইট গাউন গায়ে,
চুল ছড়িয়ে কোমর ছুঁয়েছে,
ডাগর চোখে গাঢ় কাজলের ছোঁয়া যেন ছুরি চালাচ্ছে জায়নের হৃৎপিণ্ডে।
ঠোঁটে লাইট পিংক লিপস্টিক আর সেই চওড়া, মায়াবি কিন্তু রহস্যময় হাসি —

“তুই মরেছিস, জায়ন।”
জায়নের চোখ একসাথে বিস্ফোরিত, গলা শুকিয়ে কাঠ, বুকের ভেতর হৃৎস্পন্দন একেকটা ঢেউয়ের মতো গর্জে উঠছে।
সে গিলতে পারছে না, শ্বাস নিতে পারছে না।
জায়ন দাঁড়িয়েই আছে, নিথর।
তিয়াশার রূপ যেন ওর শিরা উপশিরায় নেশার মত বয়ে যাচ্ছে।
গলা কাঁপছে, হাতে থাকা ঘড়ির স্ট্র্যাপ খসে পড়ছে, পারফিউমের ঘ্রাণ মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে।
সে শুধু মনে মনে ফিসফিস করে উঠে, “এইটাকে ফেলে আমি কোথায় যাবো বলো?
এই বউ যদি এমন করে দাঁড়িয়ে থাকে… তবে আমি তো এখনই সিজদাহতে নেমে পড়ি।”
মনে মনে গর্জে উঠলো জায়ন, “কিইইই চায় এই মেয়ে?গত দুদিন ধরে জ্বালিয়ে মারছে আমাকে।
আর এখন এই ড্রেস পরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে, পেল কোথায় এই সব মারণাস্ত্র ?–
তুই কি আমাকে যেতে দিবি না, না আমার হৃৎপিণ্ড থামিয়ে দিবি।”

চোখের সামনে বউকে দেখে হঠাৎ শরীর গরম হয়ে উঠল। একপলকে দেখে ফেলল,ঘাড় বরাবর নেমে আসা কেশরাশি, বুকের কাছে পড়ে থাকা নাইট গাউনের ঢেউ।
কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া টের পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল জায়ন।
“ধুর্, নিজেকে সামলা জায়ন । তুমি তো বাইরে যাচ্ছিস… ক্লাবে… মনে রাখ, ক্লাবে যাচ্ছিস। এই আগুনে না পুড়ে, বেরিয়ে যা।”
ঠিক তখনই পেছন থেকে তিয়াশার ডাক এলো,
“বর, শোনেন না…”
তিয়াশার এই করুন কণ্ঠের ডাক শুনে জায়ন মনে মনে বলল —
জায়ন কি করবে এবার তার বউ এর মাথায় এসব বদ বুদ্ধি আসছে কোথা
থেকে । আবার ডাকছে ওহ আল্লাহ বাচাও আমায় , না এটাকে আজকে শায়েস্তা করতেই হবে–
সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল। চোখে ধরা পড়ল কড়া প্রশ্ন–
“কি পড়েছিস তুই?”
তিয়াশা চোখ টিপে হেসে রুমে ঢুকে বলল—

” কেন সুন্দর না ? অবশ্য আপনি তো আমার দিকে দেখছেন ই না ।”
জায়ন বুঝেছে তার এই বাচ্চা বউ এর মতলব ভালো না তাই পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল —
” তুই কি ভাবলি তুই এসব পড়লে দেখবো তোকে ?
কিন্তু কিন্ত মনে মনে বলছে —
” আরে বউ বুঝিস না কেন এখানে আর এক মিনিট থাকলে আমার সঙ্গে আমি তোকেও ধ্বংস করে ফেলবো। এরকম আমার এই বুকে ঝড় তুলিস না জান তোর উপর তো আমার অনেক রাগ জান।”
এই বলে জায়ন তাড়াতাড়ি নিচে যেতে চাইল কিন্তু তিয়াশা হাত টা টেনে বলল —
” কেন একটু দেখলে কি হয় বর?”

জায়ন কন্ট্রোল জায়ন কন্ট্রোল তুই এই ভাবে এই তোর পিচ্চি বউ এর সামনে হেরে যেতে পারিস না ।
জায়নের শরীরের প্রতিটা স্নায়ু তীক্ষ্ণ হয়ে উঠছে। সে কণ্ঠ শক্ত করে বলল–
” এটা তখন মনে ছিল না , যখন অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করতে যাচ্ছিলিস।”
তিয়াশা জানে তার থেকে পালানোর জন্য তার এই বাঘের বাচ্চা ঢং করছে।
সে ও বিদ্রুপ হাসি দিয়ে বলল —
” না তখন কি করে থাকবে ? তখন তো আপনি আমার বর ছিলেন ই না।”
এই বলে হেসে উঠল তিয়াশা, কিন্তু জায়ন এর এই কথা শুনে এবার সত্যি সত্যি মাথাটা গরম হয়ে গেল —
নিজের রাগ কে কন্ট্রোল না করতে পেরে তিয়াশার চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিল —

” কি বললি আরেকবার বল ?”
“(……)”
” তোকে আমি আজকে মেরেই ফেলবো। খুব কথা শিখেছিস তাই না?
তিয়াশা তার প্ল্যান চপাট করতে চায় না , তাই ঢং করেই বলল —
“আচ্ছা সরি সরি বর আর কিছু বলছি না । শুধু বলছি আপনি এত রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
তিয়াশার চুলের মুঠি সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিল ,একটু কায়দা করে ভাব নিয়েই বলল–
“সেটা তোকে বলতে হবে?”
তারপর জায়ন কি একটা ভেবে বলল —
“তাও বলে যাচ্ছি বন্ধুদের সঙ্গে নাইট ক্লাব যাচ্ছি।আমি
তো তোর মত অসভ্য না ।”

এই বলে জায়ন একটু বিদ্রুপ মার্কা হাসি দিলো ।
তিয়াশা দু হাত সামনে জড়িয়ে বলল —
*তো আপনার সঙ্গে কি আমার ভাইয়ারাও যাচ্ছে ?”
জায়ন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল —
” ইয়েস ওরাও যাবে ,সেটা আবার বলতে হয় ।”
আরে জায়ন আর উত্তর দিস না জাস্ট পালা এখান থেকে কি যে তোর বউ মনে মনে প্ল্যান করছে
তা তুই ও জানবি না ।
তিয়াশা রিমোট হাতে নিয়ে বলল —

” ওহ যান তাহলে , আমিও একটু রেডী হয়ে নেই তাহলে ।”
জায়ন যেন কথাটা শুনে একটু ভাবনায় পরে গেলো —
“এ কেন রেডী হবে এখন??”
সব কিছু বাদ দিয়ে একটু গম্ভির স্বরে ই বলল —
” তুই এখন কেন রেডী হবি? কিসের জন্য ? কোথায় যাবি ?
তিয়াশা নাইট গাউন এর ফিতা টা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলল —
” না আপনি তো আমাকে দেখবেন না ।”
জায়ন মনে মনে বলল —

” আরে বউ তোকে যে কেন দেখতে চাইছি না সেটা তোকে কি করে বোঝাবো । মনে তো হচ্ছে তোকে খে”য়ে ফেলি,। কি যে জ্বালা লাগিয়ে দিলি দশ বার শাওয়ার নিলেও ঠান্ডা হবে না । মারণাস্ত্র হয়ে দাড়িয়ে আছিস যে ,তাই পালাতে চাইছি । কিন্তু বউ আবার কেন রেডী হবে আমার অনুপস্থিতিতে”
ভাবতেই মাথাটা হঠাৎ বিগড়ে গেল —
ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে চোঁখ মুখ কুচকে বলল —
” তো ? ”
টিভির রিমোট টা হাতে নিয়ে একটা গান চালিয়ে বলল —

” তো ভাবছিলাম আরোহী কে সঙ্গে নিয়ে আমার না হওয়া বরের সঙ্গে দেখা করে আসি।”
ব্যাস জায়নের ভেতরের আগ্নেয়গিরি যেন একসাথে ফেটে পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল , কপালের শিরা জেগে উঠেছে , হাতের ভেইনস্ দেখা যাচ্ছে , চোঁখ দিয়ে যেন এখনি গিলে খাবে তিয়াশা কে রাগের মাত্রা তীব্র হয়ে দাঁতে দাঁত চিপে জায়ন বলল —
” কু**র ব**চ্চা দাড়া তুই আজকে তোর আজ শেষ দিন ,লিমিট ক্রস এর অ ,একটা লিমিট থাকে রোদ , বাসায় বর থাকতে অন্য পুরুষের সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবলি কি করে ?”
এই বলে জায়ন ধরতে যাবে তিয়াশাকে কিন্তু তিয়াশা সরে যায় , জায়ন টাল সামলাতে না পেরে পরে যায় সোফার উপর ।
তখনি জায়ন সোফা থেকে উঠতে যাবে তিয়াশাকে মারার জন্য কিন্তু তার আগেই তিয়াশা বসে পড়ে জায়ন এর কোলের উপর —
ওই ছোট্ট হাত দিয়ে জায়ন এর দুটো ধরে মুখ ফুলিয়ে বলল —
” প্লিজ জান বর মারবেন না , আপনিই তো চলে যাচ্ছেন।সুন্দরী বউ রেখে কেউ যায় ?”
জায়ন ও বুঝতে তার কিটি ক্যাট এর কৌশল —
জায়ন এর উপর তিয়াশা বসে , তিয়াশার গায়ের সেই মিষ্টি গন্ধ, এর মধ্যে আবার জান বলছে, সব ষড়যন্ত্র সব —
জায়ন এক নিশ্বাস টান দিয়ে বলল —

” সো মিসেস আবরার আপনার সব অস্র রেডী তাইতো এই মিষ্টার আবরার কে ধ্বংস করার জন্য ?”
এই বলে জায়ন তিয়াশার চোঁখে চোঁখ রেখে হাস্কি স্বরে আবারো বলল —
” কিন্তু আপনি তো ভুল পথ বেছে নিয়েছেন মিসেস কিটি ক্যাট, এই ধ্বংশ লিলায় যে আপনাকেও সমান ভাবে ধ্বংস হতে হবে । হয়তো তার থেকে বেশি।”
এবার তিয়াশার একটু ভয় ই করছে , জায়ন এর প্রতিটি বাক্য প্রতিটি শব্দে তার পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছ । সে কি করে ভুলে গেল তার জল্লাদ বাঘের বাচ্চা কতটা অসভ্য , আর কিসব বই পড়ে ।
জায়নের চোখ চকচক করে উঠল। এক ঝটকায় ওর কোমর নিজের কাছে টেনে এনে গলা ঘেষে বলল–

” আপনি যখন চান আমার ধ্বংশ লীলা দেখতে তাহলে আমার কোন অসুবিধা নেই । রাতে আমার রুম থেকে বই চুরি করে সেটা পড়ে আপনি তো আমার ফ্যান্টাসি জেনেই গেছেন। তাহলে আর দেরি কিসের ।”
তিয়াশার চোঁখ বড় বড় হয়ে গেল , ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । আমতা আমতা করে বলল —
” আ আপনি কোথায় যাচ্ছিলেন না , যান দেরি হয়ে যাচ্ছে তো ।
এই বলে উঠতে যাবে কিন্তু জায়ন টেনে নিল নিজের কোলে, তারপর তিয়াশার গলায় বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে ,
তিয়াশা আবার ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ন তর্জনী আঙ্গুল তিয়াশার ঠোঁটের উপর রেখে
বলে উঠল,—

“স স স স স স স”
জায়ন টিভির রিমোট নিয়ে একটা গান চালিয়ে দিল —
অভদ্র হয়েছি আমি তোমারি প্রেমে , তাই
কাছে আসো না আরো কাছে আসো না
ইস কথা বলোনা বেশি কথা বলোনা ।
জায়ন তিয়াশার নাইট গাউন এর ফিতা টা এক টান দিয়ে খুলে দিল , একটু বিদ্রুপ হাসি দিয়ে বলল —
” রেডী তো বউ , সময় এসে গেছে বাঘের বাচ্চা তার কিটি ক্যাট এর সঙ্গে ঠিক কি কি করতে পারে সেটা দেখার?”
“ইস তিয়াশা তুই কি পাগল এই সব কেন করতে গেলি?
নে বোঝ এবার ঠেলা, বাসর করার সখ হয়েছিল ।এখন কর বাসর । দুই দিন এই বাঘের বাচ্চা চুপ চাপ ছিল বলে কি করে ভাবলি এই বেটা ইদুরের বাচ্চা হয়ে গেছে ।”

তিয়াশা মনে মনে নিজেই নিজেকে গা*লী দিচ্ছে।
তিয়াশা এবার ছটপট করছে , জায়ন তিয়াশার অস্থিরতা দেখে বলল —
” বেশী ছট পট করেনা জান, আমার অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে ।”
অন্ধ তোমারি প্রেমে ,শব্দ না খুঁজে পেয়ে
একটু অভদ্র মন হতে চাচ্ছে
আসোনা মেলে দিয়ে তোমারি সেই চুল
করে ফেলি দুজনে কিছু আ**বেগি ভুল
তোমারি দু চোখেরই কাজল যে করেছে তো পাগল
ভিজে গেছে চাদর বৃষ্টি আর বাদল……

এই বলেই জায়ন তিয়াশার দুই হাত পেছনে নিয়ে ওই নাইট গাউন এর ফিতা দিয়েই বেঁধে দিল ।
” আ আমার হাত বাঁধছেন কেন ?”
ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে তিয়াশা , কি করছে এই লোক ? আল্লাহ আর করব না এইসব । আমায় বাঁচাও।
” ধ্বংসলীলা শুরু হবে তাই ।”
নাক দিয়ে তিয়াশার গলা ঘষতে ঘষতে জায়ন তিয়াশাকে জবাব দিল —-
আর কিছু না বলেই তিয়াশাকে কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল ।
তিয়াশার রুমের দরজা খুলে ওকে বিছানায় বসিয়ে বলল —
” বাঁদরামি করার জায়গা পাস না তাই না ? এই যে যত অস্ত্র সাজিয়েছিস সব যেন ডাস্টবিন এ ফেলে আসা হয় ।”
এই বলে জায়ন রুম থেকে চলে যাবে তার আগেই তিয়াশা একটু ভয়েই বলে উঠলো —
” জান বর হাত টা খুলে দিয়ে যান।”
জায়ন পেছন না ঘুরেই জবাব দিল —
“রোদ i swear আর একবার বর বলে ডাক এক সপ্তাহ হাটতে পারবি না , i promise ।
জায়ন এই বলে বেড়িয়ে চলে গেল।
তিয়াশা আর কিছু বললো নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।

গুলশানের এক নামকরা নাইট ক্লাব, সময় তখন রাত সাড়ে আটটা।
চারদিক আলোকিত ডিজে লাইটে। একেক মুহূর্তে একেক রঙের ঝলকে বদলে যাচ্ছে ক্লাবের পরিবেশ–
লাল, নীল, বেগুনি, আর মাঝে মাঝে স্ট্রোব লাইটের ঝিলিক। ডিজে বুথের স্পিকারে বাজছে এক বিদেশি হাই-বিট মিক্সড ট্র্যাক, যার বেস এতই ভারী যে মনে হচ্ছে মেঝে পর্যন্ত কাঁপছে। সুগন্ধি হুকা, বডি স্প্রে, মদের গ্লাস আর পারফিউমের গন্ধ মিশে এক রকম অদ্ভুত নেশা ছড়িয়ে আছে বাতাসে।
ক্লাবের কর্নার সোফায় বসে আছে সাত জনজন তরুণ–
আকাশ, ইউভি, সাগর, পলাশ, আহান , জেমসএবং কেন্দ্রবিন্দুতে স্বয়ং জায়ন। প্রতিটি ছেলের পোশাকে আভিজাত্য, চোখে আত্মবিশ্বাস আর হাতে ঝলমলে ককটেল গ্লাস।
এমন সময় সাগর ঠোঁটে একপাশে বিদ্রুপ হাসি টেনে বলে উঠল–
“কি মামা, গলায় এই অবস্থা কেন?”

যে কথা জিজ্ঞেস করার সাহস কারো হয় নি , সেই কথা সাগর ঠিক ই জিজ্ঞেস করলো জায়ন কে —
কিন্তু জায়ন চুপ থাকেনি। ঠান্ডা গলায়, চোখে সেই রহস্যময় হাসি টেনে জবাব দিল–
“বেড়ালের কা**মড়ে এই অবস্থা হয় অনেক সময়।”
সবার চোখ বড় বড়। আহান মুখে গ্লাস চেপে হেসে ফেলে।
আকাশ একদম কৌতূহলী গলায় বলে উঠল– “বেড়াল ওখানে কা**মড়ায় কী করে বড় ভাইয়া? টিটেনাস নিয়েছ?”
আহান এবার গা হেলিয়ে হেসে বলল– “এই কা**মড়ে টিটেনাস লাগে না আকাশ, এটা ভিন্ন রকমের ইনফেকশন।”
আকাশ অবাক– “মানে? কোন বেড়াল কা**মড়ায় এমনভাবে?”

এর আগেই জায়ন ঠান্ডা গলায় বলে উঠল–
“আমার একান্ত পার্সোনাল বেড়াল। আর আমি চাই না আমার বেড়াল নিয়ে তোদের মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বের হোক। এমনিতেই মাথা নষ্ট হয়ে আছে, চুপচাপ থাক।”
টেবিলে আবার নীরবতা। কিন্তু সবার মুখেই দমিয়ে রাখা হাসি। যে বোঝার, সে বুঝে নিয়েছে– ‘পার্সোনাল বেড়াল’ মানে কে।

সাগর এবার মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল “এবার বলো ডাক্তার তোমার সমস্যা কি?”
আকাশ মাথা নিচু করে বসে, কাঁধ নামিয়ে। এর আগে ইউভি হেসে বলে উঠল–
“সাগর ভাই, এই ডাক্তার এর দিন এখন শেষ পর্যায়ে। ইনজেকশন দিলেও নড়ে উঠবে না।”
জায়ন চুপচাপ হেসে ফেলল। কারণ সে জানে, ‘জলপরী’ এখন আকাশের শ্বাসরোধ করে রেখেছে।
পলাশ বলল– “মানে? কিসের শেষ পর্যায়ে?”
এই প্রশ্নের উত্তর আকাশের বদলে দিল তার ফোন। স্ক্রিনে ভেসে উঠল এক নাম— “জলপরী কলিং…”
ভয়ে এবার গা-হাত-পা থর থর করে কাঁপছে, ফোন না ধরলেও জ্বালা ধরলেও জ্বালা কি করবে তাই
আকাশ কাঁপা হাতে ফোন তুলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে গেল, কারণ ভিতরে ডিজে মিউজিকে কথা শোনা যাবে না। ক্লাবের কাঁচের গেট পেরোতেই কানে এলো ভীষণ এক চিৎকার—

“এই বা*** ডাক্তার কোথায় রে তুই?”
আকাশ আমতা আমতা করে বলল– “আ আ আমি তো বাসায় সোনা।”
ওইদিকে আবার গর্জে উঠল আওয়াজ–“তোমার বাসা আজকাল নাইট ক্লাবে হয়েছে নাকি? ওই যে দুইদিন আল্টিমেটাম ছিল, এখন সেটা বাতিল। থাকো তুমি তোমার নাইট লাইফ নিয়ে। অসভ্য মিথ্যেবাদী।”
ওদিক থেকে কল কেটে গেল।
আকাশ হতবাক। চোঁখে জল টলমল করছে।

আকাশ যেন চোখে ঝাপসা দেখছে । কি বলল তার জলপরী , এর মধ্যেই
এদিকে ইউভিও ঠিক তখনই ফোন কানে নিয়ে কণ্ঠে অতিনাটকীয় করুণা এনে বলছে–
“না না পাখি আমি নাইট ক্লাব?কসম করে বলছি আমি খুব ভদ্র ছেলে, সিগারেট ও ছুঁই না…”
আকাশ তাকিয়ে আছে ইউভির দিকে বুঝে উঠতে পারছে ঠিক ই কি হচ্ছে ইউভি ভাই এর সঙ্গে।
ওদের পেছনে এসে দাঁড়াল সাগর , পলাশ, আহান , জেমস আর জায়ন ও —
আবার ও সোনা গেল ইউভির করুন কণ্ঠস্বর —

” পাখী সোন আমি মিথ্যে……”
বাক্য সম্পূর্ণ করার আগেই ওদিক দিয়ে কল কেঁটে গেলো —
ইউভি আর আকাশ একে অপরের দিক করুন অবস্তায় তাকিয়ে আছে
বুঝে পাচ্ছে না এই আকাশের জলপরী আর ইউভির হৃদয়পাখি কি করে জানলো এখনের কথা ।
হট করেই দুজনেই রাগান্বিত চেহারা নিয়ে জায়ন এর দিকে ফিরে বলে ওঠে —

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৩৯

” বড় ভাই তুমি কি কোন কারনে তোমার বেড়ালের বাচ্চা কে জানিয়ে আইছ এখানে ?”
জায়ন বুঝে গেল ওদের অবস্থা দেখে কি হয়েছে । হঠাৎ মনে পড়ল তিয়াশার তো হাত বাঁধা ছিল তাহলে?
মনে আসতেই হাতের আইপ্যাড টা খুলে চেক করতেই বোঝা গেল, বউ কোথাও ক্যামেরায় ধরা পড়ছে না।
জায়নের চোখে-মুখে তৎক্ষণাৎ চিন্তার ছাপ নেমে এলো
এদিক ওদিক না তাকিয়ে নিজের গাড়ির দিক যেতে চিৎকার করে বলল —
–“জেমস কুইক বাসায় চলো “……

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here