বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২৩
shanta moni
রিয়া দাঁড়িয়ে আছে ছাদের দরজার সামনে, সবাই ভ্রু কুচকে তাকায়। এতো রাতে এই খানে এ কি করছে? রিয়া সবাইকে এই ভাবে তাকাতে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাঁসে সবার মুখে বিরক্তির ছাপ,,রুহি জোর পূর্বক হাঁসি দিয়ে বলে।
রুহি: রিয়া আপু তুমি এখানে?
রিয়া সবার সামনে এসে বলে,
রিয়া: তোমরা কি গেইম খেলছো,আমিও খেলবো।
বলেই এসে বসে পড়ে, সবার মুখেই বিরক্তির ছাপ, রুহি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
রুহি: তাহলে আবার গেইম স্টার্ট করা যাক,
সবাই একসাথে হ্যা বলে উঠে,,
শুভ্র এই সবে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। রিয়াকে দেখে যেনো আরো বিরক্ত হয়েছে সে,,একে বারে গায়ে পরা স্বভারের মেয়ে,, একদম সহ্য করতে পারে নাহ।
রুহি আবার বোতলে ঘুড়ি দেয়, বোতল ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়ে রোমানের দিকে সবাই এক সাথে ইয়ে বলে চিৎকার করে উঠে,
অহনা রোমানকে উদ্দেশ্য করে বলে।
অহনা: ভাইয়া আপনি কি নিবেন, ট্রুথ নাকি ডিয়ার?
রোমান হাঁসে, গাল বড়া চাপ দাঁড়িতে সেই হাঁসি যেনো অসম্ভব সুন্দর দেখায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোমান: ডিয়ার।
অহনা মাথায় হাত দিয়ে কিছু ভাবতে থাকে,,
তার ভিতরে রুহি চিল্লিয়ে বলে উঠে
রুহি: এই যে পাগল,,বলেই জিভ কাঁটে, ওহ সরি ভাইয়া আসলে, নিলয় ভাইয়া তো গানের মান ইজ্জত কিছু রাখলো না। তাই আপনি আমাদের সবাই সুন্দর একটা গান গেয়ে শুনান,,এবং গানের মান সম্মান ফিরিয়ে আনুন।
মাঝখান থেকে নিলয় বলে উঠে
নিলয়: বোন হয়ে এই ভাবে আমার মান সম্মানের ফালুদা করতে পারিস না,
রুহি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে হাঁসে,,
নিলয় দুঃখি দুঃখি ভাব নিয়ে বলে
নিলয়: আজ কেউ নাই বলে সবাই আমার সাথে এমন করে, যদি কেউ থাকতো তাহলে সে হয়তো আমার পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করতো।
নিলয়ের কথা শুনে সবাই হেঁসে দেয়।
রুহি সবাইকে বলে, গাইস সবাই থামো এবার আমরা যাকে ডিয়ার দিছি, সে সেইটা আগে করুক।
নিলয় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে।
নিলয়: রোমান ভাই তো অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে। তবে গিটার হলে গান আরো সুন্দর হবে। ওয়েট আমি পাঁচ মিনিট মধ্যে গিটার নিয়ে আসছি।
নিলয় নিচে চলে যায়। গিটার আনতে,
রোদ সেই তখন থেকেই চুপ করে আছে, শুভ্র এতো কাছে থাকায় অস্থি হচ্ছে।
পাঁচ মিনিট পর, নিলয় গিটার নিয়ে হাজির হয়। রোমানের হাতে দিয়ে বসে পড়ে।
রোমান রুহির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাঁসি দেয়, তাঁরপর রুহির দিকে তাকিয়ে গিটার টুং টাং শব্দ তুলে,, গাইতে শুরু করে…
রোমান:
🎸🎸🎸🎸
~বলতে গিয়ে মনে হয়~বলতে তবুও দেয় না হৃদয় কতোটা তোমায় ভালোবাসি~🎵🫶
🎸🎸
~~চলতে গিয়ে মনে হয় দূরত্ব কিছু নয়, তোমারি কাছে ফিরে আসি~~🖤😚
~~তুমি, তুমি শুধু এ মনের আনাছে কানাছে সত্যি বলো না, কেউ কি প্রেমহীনা কখনো বাঁচে~~🖤😚
~~বলতে যে মনে হয়, বলতে তবু দেয় না হৃদয় কতো তোমায় ভালোবাসি 🫶🖤
গান শেষ করে রোমান সবার দিকে তাকায়। সবাই মুগ্ধ হয়ে রোমানের গান শুনে,,
রুহি মুচকি হাঁসি,
গেইম আবার শুরু হয়।
এই বার বোতল গিয়ে পড়ে রোদের দিকে,
রোদ হতভম্ব হয়ে যায়, রুহি হাঁসি দিয়ে বলে,,
রুহি : ভাবিজী এই বার বলো তুমি ট্রুথ নাকি ডিয়ার।
রোদ কিছুটা অস্থিতে পড়ে যায়। আস্তে করে বলে।
রোদ: ট্রুথ›
রুহি মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে কি প্রশ্ন করা যায়,
রুহি কিছু একটা ভেবে বলে,,
রুহি: শখের পুরুষকে নিয়ে কিছু বলো?
রোদ মাথা তুলে শুভ্রের দিকে তাকায় শুভ্র চোখ ফোনের দিকে সে ফোন টিপছে, রোদ এক নজর শুভ্রের দিকে তাকিয়ে তারপর চোখ ফিরিয়ে নেয়। আনমনে অন্য দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,,,
রোদ: আমার চোখে দেখা সব থেকে সুন্দর পুরুষ সে, তাকে ভালোবাসার পর অন্য কাউকে কখনো ভালো লাগেনি। সে হচ্ছে উপতাপ্ত আগুন যাকে ছুঁতে গেলেই আমি পুড়ে যাই, বার বার আঘাত পাই,
শুভ্র এতোক্ষণ সব কথা কানে যাচ্ছিল। রোদের দিকে তাকাতে দেখে রোদ অয়নের দিকে তাকানো। শুভ্র রাগ যেনো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে মনে মনে বলে→শখের পুরুষ আছে, বাহ খুব সুন্দর তো,
হটাৎ শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
শুভ্র: রাত অনেক হয়েছে, রুহি এখন রুমে যাহ। আর এই সব ইস্টুপিট গেইম এই খানে বন্ধ কর।
রুহি : কিন্তু ভাইয়া গেইম তো
রুহি আর কিছু বলতে পারে নাহ
শুভ্র বসা থেকে উঠে বলে,,আর এক মিনিট যেনো কাউকে ছাদে আর না দেখি।
বলেই ছাদ থেকে চলে যায়।
রুহি সবাইকে বলে,
রুহি : আর গেইম খেলা হবে না, চলো সবাই
আস্তে আস্তে সবাই ছাদ থেকে নেমে যায়।
পিছনে পরে রোদ, নিলা সাথেই ছিল, কিন্তু তার ওয়াশরুম যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাই সে দৌড়ে চলে যায়।
রোদ সবার পিছনে একা একা আসতে থাকে, হটাৎ শুভ্র কোথা থেকে সামনে আসে,
রোদ ভয়ে দু কদম পিছিয়ে যায়।
শুভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে
শুভ্র: রোদ পাঁচ মিনিট মধ্যে আমার রুমে আয়।
বলেই শুভ্র চলে যায়, রোদের কেমন যেনো সব কিছু অসহ্য লাগছে, শুভ্র কথা শুনে মনে পড়ে যায়। সেদিন রাতের কথা গুলো মনে পরে, রোদ শুভ্রের রুমে না গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
রাত এখন : ১:৩০
সেই এক ঘন্টা ধরে শুভ্র ওয়েট করছে রোদের জন্য কিন্তু এই মেয়ের আসার নামই নেই। রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়। শুভ্র মনে মনে বলে,এই টুকু ৪০০ গ্রাম মেয়ের সাহস কি করে হয়। তার কথা অমান্য করতে।
শুভ্র রুম থেকে বেড়িয়ে যায়, রোদের রুমের দিকে,
রোদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে ছিলো।
গায়ে একটা লাল বেগুনি মিশ্রিত রঙের থ্রি পিস পড়া, গায়ে ওড়না টা বেডের উপর রাখা, রোদ তোয়ালে বেলকনিতে মেলে দিয়ে রুমে আসতেই দেখে রুমে শুভ্র। কেমন করে যেনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদের কিছু সময় লাগে সব কিছু বুঝতে,,রোদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে।
রোদ: আ,আ আপনি এই খানে,
শুভ্র নজর এখনো রোদের দিকে, শুভ্র রোদের দিকে তাকিয়ে বলে।
শুভ্র: ওড়না ছাড়া তো খুব হট লাগছে, তা এই সব আমাকে দেখিয়ে কি হিপ্রটাইজ করতে চাইছেন মিস রোদ,, ওহহ সরি সরি মিসেস রোদ,
রোদের হুস আসে শুভ্রের কথায় তাড়াতাড়ি বেড থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয়।
শুভ্রকে হটাৎ রুমে দেখে রোদের ভয়ে অন্য কোনো দিকে খেয়াল ছিলো না,
শুভ্র রোদের সামনে দু কদম এগিয়ে যায়। রোদ তুতলিয়ে বলে,,
রোদ: এ, এ এই আপনি আমার রুম থেকে যান বলছি,
শুভ্র : যাব তো,তার আগে আমার কথার উত্তর দে, আমি তোকে ডাকছি যাসনি কেনো।
রোদ বিরক্ত হয়ে বলে
রোদ: ইচ্ছে হয়নি তাই যাইনি।
শুভ্র নিভে যাওয়া রাগটা যেনো আবার দাউ দাউ করে উঠে,,
শুভ্র রোদকে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে, গাল চেপে ধরে রাগে রি রি করতে করতে বলে।
শুভ্র: মুখে দেখছি ভুলি ফুটছে হ্যা, তোর সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার,,
রোদের চোখ দিয়ে পানি পড়েছে ব্যাথায়,
মনে পড়ে যায়, সেদিন রাতের কথা গুলো, রোদ রাগে দুঃখে শুভ্রকে ধাক্কা দেয়।
হটাৎ ধাক্কায় কিছুটা দূরে সরে যায় শুভ্র,
রোদ শুভ্রের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে।
রোদ: ছুবেন আপনি আমাকে ‘
শুভ্র রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়। রোদের দিকে এগিয়ে শুভ্র বলে,,
শুভ্র: আমি ছুবো না, তো কে ছুবে তোর শখের ভাতার যাকে নিয়ে ছাদে ডলাডলি করছিলি। যাকে নিয়ে কতো সুন্দর কবিতা বলেছিলি হ্যা।
রোদের রাগটা যেনো আরো বেড়ে যায়।
একটা মেয়ে সব কিছু সহ্য করলেও তার চরিত্র নিয়ে কথা বললে তা কখনো সহ্য করতে পারে না।
শুভ্র রোদের চুলের মুঠি ধরে বলে
শুভ্র: খুব বেশি ভালোবাসা দিয়েছে তোর ভাতার তোকে তাই না হ্যা, যার জন্য মুখে ভুলি ফুটেছে হ্যা,
রোদ শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গালে স্বজোড়ে একটা থাপ্পড় দেয়।
শুভ্র স্তব্ধ কারন তার কল্পনাতেও ছিলো না রোদ তার গায়ে হাত তুলবে।
রোদ শুভ্রের দিকে আঙুল উঠিয়ে বলে।
রোদ: মিস্টার শুভ চৌধুরী আপনি যদি আমার চরিত্র নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলেন তো ভুলে যাবো। আপনি আমার স্বামী।
রোদের চোখে পানি আর চোখ মুখে ফুঁটে উঠেছে রাগ হিংস্রতা।
শুভ্র এই রোদকে চিনতে পারছে না। কেনো যেনো অচেনা লাগছে,
রোদ শুভ্রকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে..
রোদ : কি বলেছিলেন আমি নোংরা ডাস্টবিন। নষ্ট নারী আমি,, তো কেনো এসেছেন আমার কাছে,,আর কেনো বা ডেকেছেন আপনার রুমে, আর কেনোই বা আমাকে ছুঁয়েছেন আপনি তো এখন নোংরা হয়ে গেলেন।
রোদের চোখ দিয়ে পানি পড়েছে,
শুভ্র চুপচাপ রোদের দিকে তাকিয়ে আছে,
রোদ আবার বলে উঠে
রোদ: আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি যেনো কখনো আপনার সামনে না যাই,,আমি এতোদিন আপনার সামনে যাইনি,,নিজের এই নোংরা চেহারা লুকিয়ে রেখেছি আপনার কাছ থেকে,,তো আপনি কেনো এসেছেন?
আমি শুধু এই টুকু বলতে চাই, আমাকে নিয়ে আপনার যত ভুল ধারনা, তা যেনো কখনো না ভাঙগে, কখনোই যে না ভাঙগে,,
আপনি সারা জীবন এই রকম ভুল ধারনা নিয়েই থাকেন শুভ্র ভাই,,
রোদের চার পাশ যেনো অন্ধকার হয়ে আসে,
বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ২২
শুভ্র কিছুটা দৌড়ে গিয়ে রোদকে ধরে রোদ আস্তে আস্তে করে কিছু বলছে,
শুভ্র রোদের মুখের কাছে কান নিয়ে গিয়ে শুনে,,
রোদ: আমি খুনি নই,শুভ্র ভাই, আমি মামনিকে খুন করিনি শুভ্র ভাই
শুভ্রের বুক ধক করে উঠে, অজানা কিছু একটা তার উপরে জেকে ধরে,,
রোদকে বিছানায় শুয়ে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় শুভ্র,,