সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৬
neelarahman
পরের দিন সকাল ।নাস্তার টেবিলে বসে সবাই ।আজকে নুর এখনো নামে নি।রিমা চুপচাপ।সায়মন বুঝতে পারছে না কি হল ।গাজীপুর থেকে ফেরার পর সায়মনের কোন ব্যাপারে আর নাক গলাচ্ছে না রিমা ।
এমনকি আজকে কি পড়ে বের হবে কি খাবে কোথায় যাবে কোন ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর নেই রিমার।সায়মন তো এটাতে অভ্যস্ত ছিল সকালে উঠে জানতে পারতো আজকে তাকে কি পড়ে যেতে হবে ।
কারণ রিমার পছন্দ না হলে সেই কালারটা পর্যন্ত পড়তে পারতো না আর একসাথে বের হয়ে ওকে কলেজ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসতে পারত না।
গতকাল রিমা কলেজে যায়নি ।আজকে যাবে তবে একবারও বলেনি কোন কালারের শার্ট বা গেঞ্জি পড়বে কোন ইনস্ট্রাকশন দেয়নি সাইমনকে ।সাইমন অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো রিমার কথা। নীলা রহমান
এদিকে রিমা চুপচাপ নাস্তায় মনোযোগ ।সায়মন কি করছে না করছে সেদিকে মনোযোগ নেই ।অভিমান হয়েছে খুব ভাই বোন ঠিকই জানে ওর গার্লফ্রেন্ড আছে প্রেম করে অথচ রিমা কোন শার্টটা পড়বে সেটা ঠিক করে দিলেও কার সাথে প্রেম করবে সেটা জানার অধিকার রিমার হলো না।আর গার্লফ্রেন্ড কেন থাকতে হবে ?
রিমা তো সব কাজই করে দেয় ওর।সব জায়গায় ঘুরতে যায় চটপটি ফুচকা আইসক্রিম সব ওকে নিয়েই খায় ।কোথাও বেড়াতে গেলে ওকে নিয়ে যায় । নীলা রহমান লেখিকা।ও কি পড়বে না পড়বে কি খাবে সব কিছু ঠিক করে দেয় রিমা ।তাহলে গার্লফ্রেন্ড ওর জীবনে প্রয়োজন কি ছিল ?
আর গার্লফ্রেন্ডকে সময় বা দেয় কখন ?ওর সাথে থাকে সারাসারাক্ষণ তাহলে কতটা চুপিচুপি কাজ করেছে সাইমন ভাবতে ভীষণ অভিমান হলো রিমার।
অবচেতন মনে এসব ভাবতে লাগলো রিমা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে সাদাফের চোখ জোড়া শুধু খুঁজে চলেছে নূরকে ।নূর এখনো নামেনি ।মনে মনে ভাবছে সাদাফ,” কালকে তাহলে একটু বেশি বলে ফেলল ?মেয়েটা এখনো নামছে না কেন ?কিন্তু ওর সাথে যে একটু কঠোর হওয়া জরুরী যতক্ষণ পর্যন্ত ও ওর ভিতরে ইনার ফিলিংস বুঝতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত সাদাফ কারো সাথে বিয়ের কথাও বলতে পারছে না।এগোতে পারছে না।”
নওরিন আফরোজ মোটেও সহজ নন ।উনি জোরে জোরে প্লেট চামচ গ্লাস টেবিলের উপর রাখতে লাগলেন ।সামিহা বেগম রান্না ঘরের দিকে গিয়ে বললেন ,”ভাবি ছেড়ে দাও না ।কি না কি করেছে ভাইয়া তখন ছিল আনমেরিড ভার্সিটিতে পড়তো একটু দুষ্টুমি ফা*ইজলামি করতেই পারে ।এখন কি সেইরকম ?
তোমাকে বিয়ে করার পর কি সে কখনো অন্য কোন মেয়েকে টি*জ করেছে ?ফা*জলামি করেছে ?তাহলে এখন কেন এসব নিয়ে ঝগড়া করছো ?ভাইয়ার সাথে বাচ্চারাও দেখছে মান সমান থাকবে বল বাচ্চারা জানলে?”
নওরিন আফরোজ সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”শুরু হয়ে গেল না তোর চা*মচামি ভাইয়ের ?তুই কি বুঝবি আজকে যদি ফজলুরের সম্পর্কে বলা হতো তাহলে তুই বুঝতি আর বাচ্চারা জানুক বাপে কি কি গু*ল খে‘‘লিয়ে এসেছে।
আর ওনার সম্পর্কে উনার এই র*ঙ্গলিলা সম্পর্কে আমার আরেকজনের কাছ থেকে কেন জানতে হবে ?বিয়ের প্রথম দিনেই তো বলতে পারত যে আমি এরকম এরকম করেছি এরকম এরকম হয়েছে তাহলে তার মানুষের কাছ থেকে আমার শুনতে হতো না ।
আমি তো কত গর্ব নিয়ে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতাম আমার হাজব্যান্ড শুধুমাত্র আমাকে ভালবাসে জীবন আর অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেনি।
এখন তো দেখছি বান্ধবীর নাম করে ইনা মিনা ডিকা তার জীবনে কম ছিল না।”
সামিহা বেগম হাসলেন ।হেসে বললেন ,”রাখো না ভাবি ভাইয়া কিন্তু অনেক অনুতপ্ত নিশ্চয়ই রাতভর তোমার কাছে মাফ চেয়েছে ।”
নওরিন আফরোজ চুপ করে রইলেন ।মনে মনে স্মরন করতে লাগলেন রাতের কথা।
রাতে ঘরে ঢুকেই আমতা আমতা করে হুমায়ন রহমান বলেছিলেন ,”নওরিন প্লিজ ওইসব তো তখন ভার্সিটি ছিলাম ।২০ / ২১ বছর বয়স ছিল ।তখন কি করেছি না করেছি সেটা নিয়ে সংসারে গে*ঞ্জাম করলে চলবে?
দেখো ওই সময় কি করেছে তা নিয়ে তার মাফ চাইতে পারবো না তবে তোমাকে বলা হয়নি সেজন্য আমি সরি ।তবে আমি কিন্তু কারো সাথে প্রে‘‘ম করিনি ওরা আমাকে পছন্দ করত আমি জাস্ট ওদেরকে না করিনি ।ও একটু হাই-হ্যালো করেছি এ পর্যন্তই কিন্তু তুমি কিন্তু আমাকে চরি*ত্রহীন ট্যাগ লাগাতে পারো না নওরিন।”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাস বলে ফেললেন হুমায়ূন রহমান।
নওরিন আফরোজ কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
নওরিন আফরোজ সামিহা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বললেন ,”হয়েছে অনেক ওকালতি এখন এই ডেজার্ট টা ধর টেবিলে নিয়ে যাই আর নূর নামছে না কেন ?”
বলেই সাথে সাথে উপরের দিকে তাকিয়ে ,”নূর এই নূর নাম তো মা ।নামছিস না কেন ?তোকে তো আমি সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে এলাম ?এখন তো তুই ঘুমাচ্ছিস না ।তাড়াতাড়ি নাম ।”
জোরে জোরে বলতে বলতে টেবিলে কাছে চলে আসলেন নওরিন আফরোজ।এসেই হুমায়র রহমানের দিকে তাকিয়ে ঠোট ভেংচি কেটে সবাইকে ডেজার্ট সার্ভ করতে লাগলো ।
তারপর আবার উপরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”নুর নামছিস না কেন তাড়াতাড়ি নাম মা দেরি হয়ে যাচ্ছে ।সাদাফ চলে যাবে তো।নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে হবে তো আয়।”
নুর চুপচাপ সিড়ি বেয়ে নাম ছিল ।কারো দিকে তাকায়নি চুপচাপ এসে টেবিলে বসে হালকা একটু নাস্তা করে চুপচাপ বসে রইল ।সাদাফ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো সবকিছুই ।মাথা তুলে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত ।অভিমান মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে কিন্তু এটা ওর প্রাপ্য ।ওর বুঝতে হবে ওর মন কি চায়। নীলা রহমান
নুর রেডি হয়ে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে ।সাদাফ পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে নূরের কাছে নিয়ে এসে নূরকে ইশারা করে বলল ,”ভিতরে ঢুকে বসতে ।”
নূর গাড়িতে ভিতরে ঢুকে বসলো ঠিকই কিন্তু তাকিয়ে রইল জানালা দিয়ে অন্য পাশে ।সাদাফের দিকে ফিরেও তাকালো না।
সাদাফ নুর কে আরেকটু খেপানোর জন্য বলল ,”স্কুলের পর রেডি হয়ে গেটে দাঁড়িয়ে থাকিস আজকে তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাব ।”
নুরের কৌতুহল হচ্ছে অনেক জানার জন্য তারপরও কৌতুহল দমিয়ে হালকা ভাবে জিজ্ঞেস করল ,”কোথায় ?”
সাদাফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো ,”আজকে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দিব।
এক মাস পর যে তোর ভাবি হবে তাকে আগে থেকে দেখবি মিশবি ।তোরা ওকে দিলেই তো সবকিছু হবে।”
বলেই আর নূরের দিকে তাকালো না সাদাফ।গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিল ।তাকালে দেখতে পারতো একজোড়া চোখ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।
সাদাফের দিখে তাকিয়ে ছল ছল নয়নে নূর ভাবতে লাগলো ,”কেন সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে হবে ?কি এমন বয়স হয়ে গেছে?
বিয়ে যখন করবে তাহলে নুরের সাথে এসব কি ছিলো।নুর কে চায়না সাদাফ ভাই আর। ভালো বাসিও তো বলেনি কোনদিন। গার্লফ্রেন্ড ছিলো তাহলে চু*ম্মা চা*টি কেনো করতো? সাদাফ ভাই তো নুর কে কোন কথা বলেনি।
কি অধিকার আছে নুরের সাদাফ ভাইকে বিয়ে করা থেকে আটকানোর ?তবে কি নূরকে চোখের সামনে সাদাফ ভাইকে বিয়ে করতে দেখতে হবে ?সাদাফ ভাই নতুন বউ নিয়ে বাড়িতে ঢুকবে এটাও দেখতে হবে? নতুন বউ নিয়ে সাদাফ ভাই নিজের রুমে থাকবে সেই রুমে ঢুকতে হলে নূরের এখন থেকে অনুমতি লাগবে ।কথাগুলো ভাবতে পারছে না নূর ।
সাথে সাথে ছলছল চোখ দিয়ে মনে হয় দু এক ফোঁটা অস্রু গড়িয়ে পড়ল ।নুর সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্কুল চলে আসলে নূর সাদাফের সাথে আর কোন কথা বলল না ।দরজা খুলে বের হয়ে হনহনিয়ে চলে গেল স্কুলের ভিতর।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫
সাদাফ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো নূরের জাওয়া ।লুকিং গ্লাস দিয়ে দেখেছিল নূরের চোখ থেকে পানি পড়ছে ।কিন্তু সাদাফ আগবাড়িয়ে তা মুছতে যায়নি বা কিছু বলেনি ।নূরকে বোঝাতে হবে নূর মনে মনে কি চায় ?
সাদাফের প্রতি নুরের অনুভূতি কেমন ?নিজে থেকে এসে বলতে হবে নূর কি চায়। কেনো অন্যান্য কাজিনদের মতো সাদাব কে দেখেনা ?সাদাফ কে ভালোবাসে এটা নূরে নিজের মুখে স্বীকার করতে হবে।