সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭
neelarahman
লাঞ্চ আওয়ারে সাদাফ অফিসে বসে বসে ভাবছিলো স্কুল জীবনের বান্ধবীর কথা।খুব সুন্দরী ছিল হঠাৎ করে ওর কথা মনে পড়ল।
যদি ওর সাথে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব এবং সাবা এখন বিবাহিত তবে সেটা তো নূর জানে না ।নুরকে দেখানোর জন্য হলেও সাদাফের একটা গার্লফ্রেন্ড দরকার তাই সাবা কে ফোন করে ফেলল সাথে সাথে।
২ রিং হওয়ার সাথে সাথে ফোন ধরলো সাবা।বলল ,”কিরে এত বছর পর হঠাৎ ?ভাগ্যিস নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিলাম না হলে তো চিনতেই পারতাম না কে ফোন দিয়েছে।”
সাদাফ বললো ,”ন্যা*কামি বন্ধ কর ।দেশে এসেছি সেটা ভালো করে জানিস কই একবার তো দেখা করতে এলি না ।আমি না হয় ব্যস্ত থাকতে পারি তোরা এত ব্যস্ত ছিলি না।”
তারপর আমতা আমতা করে সাদাফ বলল ,”দোস্ত আমাকে একটা সাহায্য করতে হবে।”
সাবা বলল ,”ও এর জন্য ফোন দিয়েছিস ?তাইতো বলি সাদাব সাহেব কেন ফোন দিল।
তা ঝেড়ে কাশ কেন ফোন দিলি ?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদাফ আমতা আমতা করে বলল ,”একজনকে জেলাস করতে হবে তুই আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার নাটক করবি ।রেস্টুরেন্টে চলে আয় আজকে তিনটার দিকে ।ওকে আমি নিয়ে আসবো।”
সাবা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলো কে সেই একজন ?
সাদাফ চুপ করে রইল ।কিছুক্ষণ পর সাবা বলল ,”ওই থাম থাম তোর সেই ছোট্ট বাবুটা না তো ?যাকে মাঝে মধ্যে কোলে করে নিয়ে আসতি কলেজে? নীলা রহমান
সাদাফ তুই এখনো সেটাতে আটকে আছিস ?ও তো ছোট্ট একটা বাবু ।তখন তো ভাবতাম দুষ্টুমি করিস ফা*জলামি করিস বয়স অল্প দুষ্টুমি করে হয়তো বউ বউ বলিস এখনও ওকে নিয়ে আটকে আছিস?”
সাদাব বলল ,”আটকে নেই ওকে নিয়েই ছিলাম ওকে নিয়েই থাকবো সারাজীবন।এখন আমাকে সাহায্য করতে হবে মেয়েটা বড্ড অবুঝ আমাকে পছন্দ করে কিন্তু নিজে বুঝে না যে আমাকে আসলে ভালোবাসে ।
তুই ওকে এই অনুভূতি গ্রো করতে সাহায্য করবি।ভালো বাসা কি বুঝাবি।ভালোবাসা মানে যে চাচাতো ভাইয়ের উপরে একটু বেশি অধিকার করা না এটা ওই মেয়েটার ঘি‘‘লুর মধ্যে দিয়ে দিস।
এমনভাবে অভিনয় করবি যেন ও বুঝতে পারে সাদাফের উপরে ওর অধিকার কতটুকু সাদাফ কে ও কতটুকু চায় এই অনুভূতিটুকু ওর ভিতরে জাগিয়ে দে ।ছোট মানুষ বুঝতে পারে না কিন্তু ঠিকই ভালোবাসে।বুঝাবি যে সাদাফ কে চাচাতো ভাই হিসেবে না সাদাফকে একজন পুরুষ হিসেবে ভালোবাসে সেটা ওকে বুঝিয়ে দে।”
সাবা হাসতে হাসতে বলল ,”বাব্বা সাদাফ কি ভালবাসার উপর পিএইচডি করেছে ?যে মেয়ে বুঝেই না ভালোবাসা কি সেই মেয়ে তোকে ভালোবাসে সেটা তুই বুঝে গেলি ?তাহলে তুই বলে দে।”
সাদাফ হাসলো আর কিছু বলল না ।বলল ,”এতটুকু উপকার কর তিনটার দিকে রেস্টুরেন্টের ঠিকানা পাঠাচ্ছি চলে আয় ।আমি ওকে নিয়ে ঠিক টাইম মতো পৌঁছে যাব ।”
সাবা বললো ,”আচ্ছা ঠিক আছে বাকি কথা পরে হবে ।”
বলেই ফোন রেখে দিল ।
সাদাফ সাথে সাথে বের হয়ে গেল নুরকে পিক করার জন্য।
স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ।দূরে তাকিয়ে দেখছে নুর বেনি দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে আসছে।
সাদাফের ঠোঁটের কোণে খেলে গেল একটু দুষ্টমিষ্ট হাসি ।নূর গেইট পার হয়ে সামনে চলে আসলে সাদাফ মেকি ব্যস্ততা দেখিয়ে বললো ,”নূর তাড়াতাড়ি আয় আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।”
নূর মনে মনে খুব কষ্ট পেল ।একতো গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে দ্বিতীয় এই রোদের মধ্যে নূর এতো দূর রাস্তা হেঁটে আসলো একটু জিজ্ঞাসা করল না নূর তোর কি খা‘রাপ লাগছে ?তুই এত ঘেমেছিস কেন?
মন খা‘রাপ নিয়েই গাড়িতে উঠে বসল নুর।কিছুতো করার নেই ।বলেছে যখন নিয়ে যাবে তখন তো নিয়েই যাবে ।তাই চুপচাপ গাড়িতে বসে মাথা নিচু করে রাখল।
সাদাফ আর চোখে সব কিছুই লক্ষ্য করছিল কিন্তু আজকে নুরকে একটু জ্বালাবে তাই নূরে প্রতি কোন কনসার্ন দেখাবে না ।
তবে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে আসলে মেয়ের গালগুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে ।এতো রোদে ছাতা কেন নিয়ে আসেনি মনে মনে খুব রা‘‘গ হলো নূরের উপর।
তবে মুখে কিছু না বললেও গাড়ির এসিটা বাড়িয়ে দিল যাতে একটু ঠান্ডা লাগে চেহারায়।
১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই চলে এলো কাঙ্খিত রেস্টুরেন্ট এর দিকে ।সাদাফ গাড়ি থেকে নেমে নূরকে বলল ,”তাড়াতাড়ি নাম আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ হলো তোর ভাবি।”
ভাবি শব্দ টা কানে খুব লাগলো নুরের।তাই নূর বলল ,”আমি ওখানে আপনাদের মাঝে কি করব ?আমি বরং গাড়িতেই বসে থাকি আপনি দেখা করে আসুন ।”
সাদাফ বলল ,”না না তোকে দেখাতেই তো নিয়ে আসলাম আমি তো রোজ দেখি সব সময় দেখতে পারবো আজকে তো তোকে দেখা করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।
আর তাছাড়া আমার বউ কেমন হবে তোর একটা মতামত আছে না ?তুই যেমন চাবি তেমন হবে।”
বলে সাদাফ হেঁটে সামনের দিকে যেতে লাগল ।
নূর পিছনে হাঁটতে হাঁটতে ভেংচি কেটে বলল ,”আমার মতামতের দাম আছে ?আমি কি বলেছি তোকে বিয়ে করতে শ*য়তান?”
অবশ্য মনের কথা মনেই রয়ে গেল নূরের ।বুক ফেটে কান্না আসছে নূরের কিন্তু কান্নাও করতে পারবেনা ।কান্না করার অধিকার নেই ।কি বলে কান্না করবে চাচাতো ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড দেখতে এসে কান্না করেছে ?কিছুই বুঝতে পারছে না নুর এখন কি করবে।
ভিতরে ঢুকেই দেখলো নূর সুন্দর একটি মেয়ে বসে আছে ।অসম্ভব সুন্দরী আর খুব স্মার্ট ।
সাদাফ কে দেখে দাঁড়িয়ে গেল সাবা ।সাথে সাথে উঠে এসে সাদাফের এক হাত ধরে বলল ,”তুমি এসেছো ?ও বুঝি তোমার ছোট বোন ? কেমন আছো নুর ?আসো বসো। বসে বসে কথা বলি ইস রোদে একেবারে ঘেমে লাল টমেটো হয়ে গেছো ।তাইনা সাদাফ?তোমার ছোট্ট বোনটা তো একদম লাল টমেটো মত।
যে কেউ দেখলে মন চাবে একেবারে একটু লবণ লাগিয়ে টমেটোর মত গাল দুটোকে খে*য়ে ফেলি।”
সাদাফের হাসি আসছে কিন্তু খুব কষ্টে হাসি আটকে সাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”হ্যাঁ চলো বসো এখানে ।তোমারও তো অনেক গরম লাগছে তাই না ?তাড়াতাড়ি চলো বাতাসে। এখানে একেবারে তুমিও ঘেমে গিয়েছো তাড়াতাড়ি চলো ।”
নুর দুজনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল ।একটু আগে নুর ও তো গরমে অনেক ঘেমে গিয়েছিল গাল লাল হয়ে গিয়েছিল কই সাদাফ ভাই তো একটিবারও বলল না নুর তোর কেমন লাগছে?
কথাগুলো ভাবতেই নূরের ভীষণ মন খা*রাপ হলো ।চুপচাপ হেটে এসে সাদাফ ও সাবার অপজিটে আরেকটি চেয়ার টেনে বসলো নূর ।হঠাৎ মাথা তুলে দেখল সাবা সাদাফের হাত ধরে বসে আছে ।একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কি কি কথা যেন বলছে।
দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেলল নুর ।অন্য দিকে তাকিয়ে রইল ।কথা শুরু করলো সাবা ।বলল ,”তা নুর তুমি এখন কোন ক্লাসে পড়ো এসএসসি দিবে বুঝি?”
নুর ছোট্ট করে উত্তর দিল হ্যাঁ ।
সাবা নুরের দিকে তাকিয়ে সাদাফকে ইশারা করে বলল ,”জানো আমাদের রিলেশন কখন হয়েছিল ?যখন আমরা ক্লাস নাইনে পড়ি ।তখন থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে প্রেম শুরু হয়ে গিয়েছিল । সাদাফ আমাকে সবার সামনে ফুল দিয়ে প্রপোজ করেছিল ।
আমি তো ল*জ্জা শেষ হয়ে গিয়েছিলাম না করতে পারিনি ।সেদিন থেকে আমাদের মধ্যে প্রেম চলছে আর তুমি তো দেখছি অনেক বোকা ।আচ্ছা তোমার কি কোন বয়-ফ্রেন্ড আছে?
সাথে সাথে সাদাফ একটি ফোন ধরার বাহানায় একটু দূরে চলে গেল।
সাবা বলতে শুরু করল।,”মানে এই সময় তো মনে একটু কাউকে ভালো লাগে অনুভূতি জাগ্রত হয় ।বাবা ভাই বন্ধু ছাড়াও অন্য কোন পুরুষের দিকে মানুষ আকৃষ্ট হয় ।তোমার জীবনে কি এরকম কেউ আছে যাকে তোমার ভালো লাগে ?”
নুর সাথে সাথে চট করে তাকালো সাদাফের দিকে ।সাদাফ ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।
সাবা আবার বলল ,”জানো সাদাফ কিন্তু ভীষণ রো*মান্টিক তোমাকে যে কি বলে বুঝাবো তুমি তো বোন তাই জানো না ভীষণ রো*মান্টিক ও।”
নুরের ভীষণ খারাপ লাগতে শুরু করলো ।কিন্তু প্রশ্নগুলো মনে মনে ভাবতে শুরু করল ।
“কোন পুরুষ মানুষকে পছন্দ হয় ।অনুভূতি জাগ্রত হয় বাবা ভাই বা বন্ধু ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে ভালো লাগতে শুরু করে এই বয়সে।
কিন্তু নূর তো বাবা ভাই বা বন্ধু ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে এভাবে মিশে নি তবে সাদাফ ভাইকে ওর কোন সময় নিজের ভাই বলে মনে করেনা ।সাদাফ ভাইকে কখনোই সাইমনের মত ভাবে না নুর ।
তাহলে কি নুর কোন ভাবে সাদাফ ভাইকে কে আলাদা কোন পুরুষ মানুষ ভাবে ? যখন সাদা ভাই ওকে স্পর্শ করে তখন নূরের এমন কেন লাগে ?কই সাইমন ভাই টাচ করলে তো রকম লাগে না?
সাদাফ ভাই নুরের দিকে নরমাল দৃষ্টিতে তাকালেও নূরের ভিতরে যেন কম্পন সৃষ্টি হয়ে যায় কই সাদাফ ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে তো কত কথা বলে নূর কখনো একটু অন্যরকম ফিলিংস হয় না।
সবচেয়ে বড় কথা সাইমনে বিয়ের কথা ভাবলে নূরের বুকের ভিতরে কিছু হয় না কিন্তু সাদাফ ভাই বিয়ে করবে সাদাফ ভাইয়ের রুমে অন্য কোন মেয়ে থাকবে ভাবতেই শিউরে উঠে নুর।এই যেমন সাবা সাদাফের হাত ধরে বসে আছে নূরের বুকের ভিতর র*ক্তক্ষরণ কেন হচ্ছে কেন বারবার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে নূরের নুর জানে না।”
কথাগুলো মনে মনে ভাবতে লাগলো নুর।
হঠাৎ নুরের মনে হলো যে কোন মুহূর্তে চোখে পানি চলে আসবে তাই সাবা কে বলল ,”আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি ।”
বলে নুর সাথে সাথে ওয়াশরুমের দিকে গেল ।সাদাফ দূর থেকে খেয়াল করল নূর টেবিল থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে গেল তাই সাদাফ ফোনটি রেখে ওয়াশরুমের দিকে গেলো।
সাদাফ এতোখন ফোনে ছিল সেটি সাবার ফোন থেকে ফোন ছিল ।সাবার প্রত্যেকটি কথা সাদাফ শুনেছে।
কিন্তু নূরের কি রিঅ্যাকশন হয় সেটি সাদাব স্ব*চক্ষে দেখতে চায় তাই নূরের পেছনে পেছনে ওয়াশরুমের দিকে গেল।
গিয়ে দেখল নূর ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে সাদাফের ভীষণ খারাপ লাগলো ।বুকটা যেন ফে*টে যাচ্ছে সাথে সাথে সাদাফ নুরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ।নুর হঠাৎ সাদাফকে নিজের চোখে সামনে দেখে হক চকিয়ে গেল ।বলল ,”আপনি এখানে?”
সাদাফ নুরের গালে দেখল এখনো এক ফোঁটা পানি রয়ে গেছে ।সাদাফ একটু ঝুঁকে নিজের ঠোঁট দিয়ে অশ্রু ফোটা টুকু শু*ষে নিলো।নাক দিয়ে নূরের গালে ঘষতে ঘষতে বড় করে একটি নিঃশ্বাস নিল।
নূর আমতা আমতা করে বলল ,”বাহিরে যে বসে আছে উনাকেই বিয়ে করবেন?”
সাদাফ ধীরে ধীরে কানে কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল ,”হুম।তোর পছন্দ হয়েছে?”
নুর অভিমানী স্বরে বলল ,”আমার এখানে কেন এসেছেন? গার্লফ্রেন্ড এর কাছে যান।যাকে বিয়ে করবেন।”
সাদাফ বলল ,”শান্তির খোঁজে এসেছি ।”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৬
নুর বলল ,”কেন গার্লফ্রেন্ডের কাছে শান্তি নেই ?”
সাদাফ ধীরে ধীরে বলল ,” না। নেই।
আমার হাজারটা গার্লফ্রেন্ড হলেও শান্তি শুধু তোর মাঝে।
বিয়ের পরেও আমার শান্তি শুধু তোর মাঝে থাকবে ।আজীবন আমার শান্তি শুধু তোর মাঝে।”
বলেই নূরের গালে ভালোবাসার স্পর্শ দিল সাদাফ।
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল।