সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৮
neelarahman
নুর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।সাদাফের হালকা কিন্তু গভীর স্পর্শ নুর নিতে পারছে না চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।
সাদাফেরও কেমন যেন ভিতর সব এলোমেলো লাগছে । ঘোর লাগা দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নূরের পানে ।
নুরের এই চোখ বন্ধ করে থাকা উপরে ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে রাখা জোরে জোরে শ্বাস নেওয়া এই সৌন্দর্যগুলো সাদাফ কে শুধু নিজের দিকে টানছে নুর।মনে হয় সারাদিন সারারাত দেখলেও যেন মনের পিপাসা মিটবে না। সাদাফ নুরের গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বড় করে একটি নিজ নিঃশ্বাস নিল। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর পর ধীরে ধীরে সাদা মুখ তুলে তাকালো আবার নূরের দিকে।
এটা রেস্টুরেন্টের ওয়াশ রুম তাই এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না ।নুর কে কেন এনেছে তাও তো ভুলতে বসেছে সাদাফ।সাদাফের মনে পড়ে গেল আবার নিজেদের প্ল্যানের কথা তাই নূরের কানে কানে বলল ,”চল বাহিরে তোর ভাবি অপেক্ষা করছে।”নীলা রহমান
বলেই দ্রুত পায়ে সাদাফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেল ।নূর থেকে গেল সেই ভাবেই ।নুর কে কিছু টা ধাতস্থ হওয়ার সুযোগ দিয়ে গেল সাদাফ।
কারণ সাদাফ সামনে থাকলে নূর স্বাভাবিক হতে পারবেনা তাই আগে বের হয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর নূর ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো ও দেখলো সাদাফ ভাই নেই ।চলে গিয়েছে ।শেষের কথাটা বারবার কানে বাজছে নুরের ।
“বাহিরে তোর ভাবি অপেক্ষা করছে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নুর ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে দেখল সাদাফ খুব সুন্দর করে ঘনিষ্ঠভাবে সাবার সাথে বসে আছে। হেসে হেসে কথা বলছে কই নূরের সাথে তো কখনো এভাবে হেসে হেসে কথা বলেনি সাদাফ ভাই।
নুরের যেনো দৃশ্যটি সহ্য হচ্ছে না। ভিতরে কোথাও পু*ড়ছে ভিষন।
নুরকে দেখেই সাবা বলল ,”আসো তাড়াতাড়ি এসো খাবার চলে এসেছে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”
বলেই সাদাফের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো ।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”জানো আমরা যাদের ভালবাসি তাদের আগলে রাখতে হয় যত্ন করে
রাখতে হয় ।
এই যে দেখো না তোমার সাদাফ ভাই আমাকে কত ভালোবাসে ।কেন ভালোবাসে জানো ? কারণ আমি তার যত্ন করি তার কথা শুনি তাকে ভালোবাসি তাকে আগলে রাখি।
তার জন্যই তো সে আমাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়েই দেখে না।
তোমার সাদাফ ভাই যদি অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে আমি তো হিং*সা জ্ব*লে পু*ড়ে শেষ হয়ে যাই ।মনে হয় ভিতরে আমার দা*ও দা*ও করে জ্ব*লছে আমি থাকতে কেন সে আরেকজন মেয়ের দিকে তাকাবে।
ভালোবাসা মানেই হচ্ছে আমরা যাকে ভালোবাসি সে শুধু আমার ।তার জন্য আমার যা করা লাগে আমি সবকিছু করব ।তাকে ভালোবাসি বলবো তাকে যত্ন করব তাকে নিজের করে রাখবো।
যেনো অন্য কোন মেয়ে আমার ভালবাসার মানুষের আশেপাশে ঘেষতে না পারে বুঝলে ?এটাই হচ্ছে ভালোবাসা ।
তোমাকে কখনো এরকম ফিল হয় নূর?
যেমন ধরো একটা খেলনা তোমার খুব পছন্দের কিন্তু অন্য কেউ সেটা নিয়ে খেলতে চাইছে তখন কি তোমার জেলাস ফিল হয় না ?ভিতরে ভিতরে খারাপ লাগে না ?ভালোবাসা ও তাই ।যেটা আমার সেটা শুধুমাত্র আমার অন্য কেউ কেন নিবে?”
নূর মনোযোগ দিয়ে শুনলো সবার কথাগুলো ।মনে মনে ভাবলো”তাইতো যে জিনিসটা আমার সেটা আরেকজন নিয়ে নেয় তাহলে তো সেটা আমার থাকবে না ।অন্য কারো হয়ে যাবে।”
তাই সাথে সাথে বলল ,”আমার খেলনা পুতুল আমি কখনো কাউকে দিতাম না । নীলা রহমান লেখিকা।সবকিছু আমার নিজের কাছে রেখে দিতাম যত্ন করে এখন খেলি না তাও তালা মে*রে রেখে দিয়েছি কারণ এটা আমার।”
সাদাফ মনে মনে হাসলো ।চিন্তা করল হয়তো ডোজ এ কা*জ হচ্ছে ।তাই চুপচাপ রইল ।সাবা বলল ,”মানুষের ক্ষেত্রেও তাই যে মানুষটা তোমার তাকে যত্ন করে আগলে রাখতে হবে ।নিজের কাছে রাখতে হবে ।অন্য কেউ কেন নিয়ে যাবে?”
খাওয়ার পর্ব শেষ ।এরপর সাদাফ একটু বাহিরে গেল স্মো*কিং করার জন্য ।এই ফাঁ*কে সাবা নুর কে আরেকটু অন্ত*রঙ্গভাবে বুঝাতে শুরু করলো যে আসলে কা*জিনের ভালোবাসা বা একটা পুরুষ মানুষের ভালবাসা কেন আলাদা হয় !
সাবা বলতে শুরু করল,”তুমি তোমার বাবা ভাইদের ছাড়া অন্য কোন ছেলেকে নিয়ে হয়তো কখনো ভেবে দেখনি ।তাহলে তুমি বুঝতে পারতে ভালোবাসা কি জিনিস ।
ধরো এই যে তোমার ভাই সায়মন সাদাব এরা হচ্ছে তোমার ভাই বা কাজিন ।কখনো এমন হয়েছে কোন একটা ছেলে একটু স্পর্শে তোমার ভিতরে ক*ম্পন সৃষ্টি হয়েছে ?এলোমেলো করে দিয়েছিল তোমাকে।
শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাবে মনে হবে নিঃশ্বাস নিতে পারছ না ।হৃ*দয় স্পন্দন থেমে যাবে ।চোখ খুললে তাকে দেখবে চোখ বন্ধ করলেও তাকে দেখবে ।কখনো এরকম ফিল হয়েছে কারো জন্য ?যদি হয় তাহলে সেটাই ভালোবাসা।
নূর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করল ।দেখলো চোখ বন্ধ করে শুধু সাদাফ ভাইয়ের চেহারা দেখা যায় ।সাইমন ভাইয়ের চেহারা তো নূরের চোখে আসলো না।
তারপর নূর সাথে সাথে আবার চোখ খুলে ফেলল ।সাবা জানে নূর কি মনে করার চেষ্টা করছে বা বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু না বোঝার ভান করে বলল ,”এই যে ধরো তুমি চোখ বন্ধ করলে যদি চোখ বন্ধ করার পর কোন একজন পুরুষ মানুষকে তুমি দেখো তাহলে তুমি তাকে ভালোবাসো ।
আর যদি তাকে ভালোবাসো তাহলে তাকে যত্ন করে রাখতে শেখো তাকে নিজের বলে দাবি করা শিখো।
সে যেন কখনো অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতে না পারে সেজন্য তোমাকেও তো ভালোবাসি কথাটা বলতে হবে ।
তোমার বুঝতে হবে তুমি তাকে কি হিসেবে চাও বন্ধু হিসেবে চাও ভাই হিসেবে চাও বাম মনের মানুষ হিসেবে চাও।
যেমন আমি চোখ বন্ধ করলে শুধু সাদাফকে দেখতে পাই তার মানে আমি সাদাফকে ভালোবাসি ।
কথাটি শুনেই সাথে সাথে নূরের চোখ জোড়া যেন জ্ব*লজ্বল করে উঠলো ।এখন আর সাবার মুখ থেকে সাদাফের কথা শুনতে পারছে না নুর তাই চুপচাপ রইলো ।কিছু বলছে না ।এক হাত দিয়ে আরেক হাতে নখ
খুটছে ।
সাবা ভালো করে অবলোকন করলো নূরের কার্যক্রম। নূরের প্রত্যেকটি অ*ঙ্গভঙ্গি নুরের প্রত্যেকটি পোসচার সব ভালো করে খেয়াল করছে ।এবং বুঝতে পারছে নূরের ভিতরে যে অনুভূতি জাগাতে চেয়েছিল তা অলরেডি জাগিয়ে ফেলেছে এখন শুধু ওর বুঝতে বাকি।
সাদাফ বাহিরে গিয়েই ফোনে লাইনে থাকে সাবা কি বলছে নুর কি রিয়েকশন দিচ্ছে তা জানার জন্য এতক্ষণ সবগুলো কথাই শুনছিল সাদাফ ।
তাই সাদাফ এখন ভিতর দিকে আসছে কারণ জানে সাবার কথা বলা শেষ ।নুরকে বোঝানো ও শেষ এখন নূরের নিজে নিজে অনুভব করতে হবে সেই অনুভূতি সাদাফ কে জানাতে হবে।
সাদাফ ভিতর এসেই বললো ,”খাওয়া শেষ তাহলে চল বাসায় যাব ।দেরি হয়ে যাচ্ছে ।সবাই চিন্তা করবে ।”
তারপর সাবা কে বলল ,” তুমি তাহলে আজকে একা একটু চলে যাও ।আমি ওকে নিয়ে বাসায় যাই ।স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ।বাসায় সবাই চিন্তা করবে ।”
“ওকে ! ঠিক আছে।” বললো সাবা।
সাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সাদাফ নুর কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
গাড়িতে উঠে নুর একবার আড় চোখে তাকালো সাদাফের দিকে ।হঠাৎ খুব ল*জ্জা জেকে ধরেছে নূরকে ।চোখ খুললে সামনে সাদাফ চোখ বন্ধ করলে ও সাদাফ শুধু বারবার সাদাফ কে দেখছে নুর।
তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে নূর সাদাব ভাই আর সাইমন ভাই আলাদা ।নিজের ভাই আর সাদাব ভাই এক নয় ।সাদাফ কে কোনো পুরুষের চোখে দেখে নূর এবং সাদাফের প্রতি অনুভূতি গুলো আলাদা এখন বুঝতে পারছে নুর ।
সাদাফকে কেন ওর এত ভালো লাগে কেন সাদাফের স্পর্শে নূরের ভিতরে ক*ম্পন সৃষ্টি হয় ।কারণ সাদাফ অন্য কেও না নিজের ভালোলাগার মানুষ।
তুই ভাবতে ভাবতেই মুহূর্তে আবার নূরের মন খারাপ হয়ে গেল সাদাফের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো কিন্তু সাদাত ভাই তো সাবা আপুকে পছন্দ করে কিন্তু এদিকে যে নূর সাদাব ভাইকে ভালোবাসে তাহলে সেটার কি হবে ?
যেখানে সাবা আপু বলছে ভালোবাসার মানুষকে আগলে রাখতে হয় নিজের করে রাখতে হয় কিভাবে রাখবেন নূর যেখানে সাদা ভাই নিজেই সাবা আপুকে ভালোবাসে।
তো এটাও তো সত্য সাদাফ ভাই আর সাবা আপুকে একসাথে দেখতে পারছে না নুর ।তাহলে সারা জীবন একই বাড়িতে কিভাবে দেখবে ?পাশের রুমে সাদাফ ভাই সাবা আপুকে নিয়ে এক রুমে থাকবে এটা কোনভাবেই সহ্য করতে পারবে না নূর।
সাবা আপুকে ভালোবেসে বার বার নূরের কাছে কেন আসে তাহলে??এ প্রশ্নের উত্তর সাদাব ভাই কেন দেয় না ?এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সাদাফ ভাই কে।”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৭
সাদাফের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো নূর ।এদিকে সাদাফ জানে নূরের ভিতরে এখন অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠেছে ।সাদাফ চায় এই প্রশ্নের সাথে নূর একাই মোকাবেলা করুক ।উত্তর খুঁজে বের করুক ।সাদাফ সব প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি। কিন্ত সময় টা নুরের ঠিক করতে হবে।