তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪২
নীল মণি
সকালের আলোটা জানলার ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে।রুমের জানালা অর্ধেকটা খোলা। বাইরে থেকে ভেসে আসছে গ্রীষ্মসকালের হালকা বাতাস রোদের উষ্ণতা আর ফুলের গন্ধ মিশে আছে তাতে। পাতলা পর্দাটা দুলছে সেই হাওয়ায়, মাঝেমাঝে রোদের ছায়া এসে তিয়াশার বিছানার চাদরে নাচছে। সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণনে একটানা শব্দ পড়ছে, সেই শব্দ যেন ঘুম ভাঙার নরম সঙ্গীত।
তিয়াশা ঘুম ভেঙে ধীরে ধীরে চোখ মেলে এদিক ওদিক দেখতেই , নজরে এলো জায়ন সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
তার শান্ত মুখে যেন রাতভর ঘুম জমেছে নির্ভার হয়ে,
এমন নিষ্পাপ মুখটা দেখে কে বলবে এই লোকটা
এতটা বদমেজাজি, এতটা জেদি?
তিয়াশা ধীরে ধীরে উঠে এল জায়নের কাছে,
চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ ওর মুখের সামনে,
যেন এই মুহূর্তটা একটু বেশি করে নিজের করে নিতে চাইছে।
তারপর নিঃশব্দে চলে গেল নিজের রুমে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সকলের শাওয়ার নিয়ে এখন যেন শরীরটাও একটু হালকা লাগছে,মনের মধ্যে এক ধরণের অজানা উত্তেজনা–
অনেক দিন পর সে ভার্সিটিতে যাবে।বিয়ের পর এই প্রথম এই বাসা থেকে বাইরে পা রাখবে ।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মনে পড়ে গেল ফেলে আসা জীবনের অসংখ্য পরিচিত মুখ।হঠাৎ করেই বুকের ভেতর টান পড়ে ,
বড় আম্মু, আম্মু, ছোট আম্মু, বড় আব্বু, আব্বু, ছোট চাচু সবার মুখগুলো এক এক করে চোখে ভেসে উঠলো।কতদিন হয়ে গেল, কারো সাথে আর দেখা হয় না,কথা হয় না, খুব ইচ্ছা করছে একবার টি সবার সঙ্গে দেখা করতে ।
সব কিছু কি সত্যিই এতটাই দূরে চলে গেছে?
তিয়াশার চোখের কোণে জমে থাকা সেই প্রশ্নের জল
এই সকালের সূর্যের আলোয় যেন হালকা কুয়াশার মতো মনের ভিতরে গলে পড়ে।
একটা হালকা গোলাপি রঙা স্কার্ট আর সাদা টপ পরে, খোলা চুলে চোঁখে হালকা কাজল হালকা লিপস্টিক সামান্য সাজে নিজেকে পরিপাটি হয়ে ভার্সিটির ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে এল তিয়াশা। ভার্সিটির সব বই, নোটস আর যাবতীয় যা ছিল সব জায়ন রেডী করে ওর বুক সেলফ ও টেবিলে রেখে দিয়েছিল । গায়ে সকালের আলো, চোখে একটু উজ্জ্বলতা আজ অনেকদিন পর সে ভার্সিটিতে ফিরছে। মনে মনে একরকম উত্তেজনাও কাজ করছে।
নিচে এসে চোখ পড়তেই আটকে গেল,
জায়ন সোফায় বসে, কালো শার্ট আর ধূসর ফরমাল ট্রাউজারে যেন অপূর্ব লাগছে। হাতে ফোন, চোখে একরকম গুরুত্ব। তিয়াশার চোখ আটকে গেল তার চেহারায়। মনে মনে ধরা গলায় বলে উঠল
“আহা বেডা, জাই পরে এত মাশাল্লাহ লাগে কেন?”
জায়ন আগেই বলেছিল, সে নিজেই তিয়াশাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিবে রোজ ও নিয়েও আসবে। আজ নতুন অফিসেও যাবে দেখবে কতদূর কী কাজ হয়েছে। তাই দু’জন ই একসাথে নাস্তা করে বেরোবে আজ।
তিয়াশার চোখে ভালোবাসার ঝিলিক, আর তার পায়ে ভার্সিটির উচ্ছ্বাস। কিন্তু এই ছোট্ট সুখটুকু যে জায়নের বদমেজাজের ঝড়ে হঠাৎই উড়ে যাবে, কে জানতো?
তিয়াশাকে চোখে পড়তেই জায়নের মুখে মুহূর্তেই ছায়া নামে। তার ভ্রু কুঁচকে গেল সোফা থেকে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, চোখে রাগ আর অধিকার মিশে এক ধরনের গাঢ় আবেগ,সোজা তিয়াশার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করল–
“কোথায় যাচ্ছিস?”
তিয়াশা থমকে গেল হতভম্ব হয়ে । চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ,
মনে মনে বলল —
“এই লোক কি আবার ভুলে গেল গতকাল রাতের কথা? ওহ আল্লাহ আমার জামাই এর ভুলের রোগ আছে বুঝি?”
তবুও শান্তভাবে জবাব দিল —
“আপনিই তো বলেছিলেন, আমি ভার্সিটিতে যেতে পারি, ভার্সিটি যাচ্ছি।”
জায়নের চোখ জ্বলে উঠলো আরও গাঢ় আগুনে,
জায়ন কিছু না বলে একধরনের অধিকারবোধে
এক পা সামনে এগিয়ে এসে তিয়াশার মুখের চোয়াল চেপে ধরে কণ্ঠ নামিয়ে প্রশ্ন করলো —-
“তুই বিবাহিত না অবিবাহিত?”
তিয়াশার মুখ ফ্যাকাশে জায়ন এর এই রূপ দেখে , মনে মনে বলল —
“নিজের বিয়ের কথাও ভুলে গেছে নাকি?”
তিয়াশার গলার স্বর কেঁপে উঠলো। চোখে পড়ে জায়নের চোয়ালে একটানা শক্তি, ভেতরের এক অস্থির দাহ যেন ছুটে আসছে ওর দিকে।
তিয়াশা গলা শুকিয়ে আসা কণ্ঠে জবাব দিল–
“বিবাহিত তো আমি।”
জায়নের চোখে তখন একরকম আগুন,জায়ন দাঁতে দাঁত চেপে বলল —
“তোক দেখে কেউ বলবে তুই বিবাহিত স্কার্ট আর টপ পরে বাচ্চা সাজার ইচ্ছা হয়েছে? হাতে চুড়ি কোথায় ?ওই যে বিয়ের পরে মেয়েরা নাকে কি যেন পড়ে সেটা কোথায় ? ভুলে যাচ্ছিস তুই এখন আর মিস নেই মিসেস হয়েছিস , এই আবরার জায়ন চৌধুরীর বউ ।
অবিবাহিত সাজার ইচ্ছা হয়েছে ?”
তিয়াশা মনে মনে ভাবছে রাতে এত সুন্দর ব্যবহার করলো এখন আবার বদমেজাজ মোড এ ফিরে এসেছে , ওহ আল্লাহ আমার বর টারে কাল রাতের মোড এ ফিরায় দেও।
তিয়াশা মাথা নিচু করে ধীম কন্ঠে বলল —
“নোস পিন বলে , আমার নাক ফোটানো নেই , আর কোন ড্রেস পরে যাবো ভার্সিটি তে?”
জায়ন তিয়াশার মুখ টা নিজের কাছে নিয়ে এসে আরেকটু চেপে বলল —
” বুঝতে পারছিস না কি পড়ে যাবি? নাক ফোটানো নেই তাহলে ফুটিয়ে তারপর যাবি ভার্সিটি । দশ মিনিট সময় দিলাম ড্রেস চেঞ্জ করে আসবি। আমার সামনে যা ইচ্ছা তাই পর কোন মানা নেই কিন্তু বাইরের কারো চোখে যদি আমার বউ পড়ে যায়, যদি কারো চোখে একটুকুও সাহস জন্মায় তোকে অপলক দেখার, আমি সেটা কোনোভাবেই মেনে নেব না। ”
তিয়াশা আর তর্ক করল না। ধীরে ধীরে উঠে গেল উপরে। বিড়বিড় করতে করতে বলল —
“ভালো লাগেনা এই সব মানুষ নিয়ে কেউ সংসার করতে পারে । ওহ আল্লাহ মাফ করো আমায় , আমার বরের মাথা টা ঠিক করে দাও ।”
একটু পরেই আবারো নিচে নেমে এলো তিয়াশা কালো রঙের ঘের আলা লং চুড়িদার পরে , দুই হাতে এইবার চুড়ি ও পড়েছে দেখতে মাস আল্লাহ লাগছে , জায়ন
এর চোখ যেন আটকে গেছে নজর যেন ফিরাতেই পারছে না তিয়াশার দিক থেকে, বউ এত সুন্দর কেন বুঝে পায় না, কী করে এত মায়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তার বউটা ? কী করে সহ্য করবে ,এই ভাবে ভার্সিটি গেলে তো ছেলে গুলো মুখে কিছু না বললেও তার বউ কে ঠিক দেখবে ।
তবু মুখে রুক্ষতা রেখে বলল–
“এত সেজেছিস কেন?”
তিয়াশা এবার আর চুপ থাকলো না বিরক্তি নিয়েই বলল
“আপনার মাথা খারাপ হয়েছে বুঝি? কোথায় সেজেছি?”
জায়ন ঠাণ্ডা গলায় এক নিঃশ্বাসে বলে উঠল, —
“আমি জানি না চেঞ্জ করে আয়, কোন ঢিলা কিছু পড়ে আয়, না হলে সোজা বোরখা পরে আসবি সবচেয়ে বেস্ট।”
তিয়াশা আবার ও উপরে চলে গেল ,আর সহ্য করতে পারল না। মনে মনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল —
“ভার্সিটি যাওয়া না, যেন ড্রেসের ক্যাটালগে মডেলিং করছি, এই বদমেজাজি বেডার পজেসিভনেস সবচেয়ে অসহ্য। সহ্যের ক্ষমতা দিও আল্লাহ আমায় ।”
খানিকক্ষণ বাদে, মুখে একরাশ রাগ, চোখে চাপা অভিমানের রেখা আর পায়ে ধীর অথচ দৃঢ় পায়চারি নিয়ে তিয়াশা নিচে নামল। তার গায়ে বেগুনি রঙা পাকিস্তানি কাট লং চুড়িদার, যার ঝিরঝিরে ওড়নাটা যেন হাওয়ার ছোঁয়ায় বারবার জানিয়ে দিচ্ছে এই মেয়েটা রাগ করলেও রঙিন, অভিমান করলেও অসাধারণ। জায়নের চোখ আটকে গেল সেই দৃশ্যেই–এই মেয়েটা যাই পরুক না কেন, যেন রঙের রাণী, একখানা শাড়ি হোক বা শুধুই একটা ঘরোয়া চুড়িদার, তার সৌন্দর্য নিজেই নিজের ভাষা খুঁজে নেয়।
জায়ন ধীরে ধীরে তিয়াশার কাছে এগিয়ে এল, হাত বাড়িয়ে ওড়নাটা একটু আদরের ঘোমটার মতো করে গুছিয়ে দিল তার মাথায় যেন নিজের চোখে একচুলও কম না ঢাকে তাকে।
তারপর দু’জনেই নির্ভরতার একসাথে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ল। বাইরে সূর্যের আলো তখনো একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েনি, কিন্তু জায়নের চোখে আগুন অদ্ভুত এক দখল ও টান। জেমস চালাচ্ছে গাড়ি, আর পেছনে বসা তিয়াশা আর জায়ন । হঠাৎ তিয়াশার দৃষ্টি জানালার বাইরের দিকে পড়তেই চমকে উঠে বলল—
“এটা তো ভার্সিটির রাস্তা না!”
জায়ন তখনো তার হাত ধরে আছে , ঠান্ডা কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠল –“চুপচাপ বসে থাক, ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিব।”
গাড়ি এসে থামে এক অভিজাত জুয়েলারি শপের সামনে।
তিয়াশা বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকায় —
“এখানে কেন? কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
জায়ন একটিও কথা না বলে তার হাতটা আবার নিজের মুঠোয় নিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে জুয়েলারি শপের সামনে । কাচের দরজার ওপাশ থেকে দুজন ইউনিফর্ম পরা স্টাফ দরজা খুলে ওদের স্বাগত জানায়।
তিয়াশার মনের কোণে তখন প্রশ্ন আর এক অজানা উত্তেজনার মিশেল কেন যেন তার মনে হচ্ছে, আজকের এই সকালটা শুধুই ভার্সিটি যাওয়ার সকাল নয়, বরং কিছু একটা বদলের, ঘোষণার কিংবা বন্ধনের নতুন অধ্যায়ের শুরু…
জুয়েলারি কাউন্টারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই স্টাফএকজন পুরুষ, অন্যজন মহিলাউচ্ছ্বসিত হাসি নিয়ে সামনে এগিয়ে এল। মহিলাটি চোখে মুখে সৌজন্য মাখানো এক আলতো হাসি ছড়িয়ে বলল,
“Good morning sir, what would you like to see?”
জায়ন তার স্বভাবসুলভ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলল,
“I want to see your diamond collection—nose pins for her, and couple rings… one for each of us.”
মহিলাটি পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই মুচকি হেসে বলল,
“Of course sir, we have a beautiful collection. Just a moment please.”
দু’এক মিনিটের মধ্যেই, একের পর এক চকচকে বক্স সাজিয়ে তোলা হলো সামনে নানান ডিজাইনের ডায়মন্ড নোস পিন । তিয়াশা খানিকটা সংকোচে তাকিয়ে ছিল সবকিছুর দিকে, যেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
হঠাৎ জায়নের চোখ আটকে গেল একটি ছোট্ট, কিন্তু চোখ ধাঁধানো হিরে বসানো নাকফুলে। ওই দিকে ইশারা করে মহিলা টিকে বলল,
“I like this one. I want my wife to wear it right now. Do you have the facility for piercing?”
এইবার পাশের ছেলেটি এগিয়ে এসে বিনয়ভরে বলল,
“Please ma’am, this way. Can you come with me?”
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই জায়ন চট করে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল—
“Can I go with her?”
মহিলাটি কিছুটা হকচকিয়ে বলল–
“Sorry sir, you can’t enter the procedure room.”
জায়ন ঠান্ডা কণ্ঠে, কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলল–
“Then u can assists my wife, not him.”
“Sure sir,” মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জানাল।
জায়নের এই দৃঢ় কৃতিত্বে তিয়াশা দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলতে লাগল —
“উফফ… এই লোকটা না একদম অসহ্য ধরিয়ে দিল , এখানেও শুরু করে দিলো ।
মেয়েটি তিয়াশার দিকে মৃদু হাসি ছড়িয়ে বলল,
“Please ma’am, this way. You can come with me.”
তিয়াশা একটু লজ্জা আর রাগ মিশিয়ে পিছন ফিরতেই, ছেলেটি এক ভাবে তাকিয়েছিল। কিন্তু সেই চাহনি ঠিক ধরা পড়ে যায় জায়নের বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ চোখে।
সে গটগটে ভঙ্গিতে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওদিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। আমার পছন্দ না আমার স্ত্রীর দিকে অন্য পুরুষের নজর। নিজের চাকরি ভালোবাসলে, চলো আমাকে রিং কালেকশন দেখাও।”
ছেলেটি চোখেমুখে ভয়ের ছাপ নিয়ে তাড়াতাড়ি সাড়া দিল,
“জি স্যার।”
সঙ্গে সঙ্গে সে জায়নকে নিয়ে এগিয়ে গেল রিং কাউন্টারের দিকে। বিভিন্ন ডিজাইনের রিং ঘাঁটতে ঘাঁটতে, জায়নের চোখে আটকে গেল একটি সিম্পল, অথচ এলোচুলের প্রেমিকের মতো নরম এক জোড়া কাপল রিং।
ছেলেটিকে দেখিয়ে বলল,
“I want this one. Pack it, please.”
ছেলেটি চোখে মুখে ভয় তবুও হাসি মুখে বলল —
“Sure sir.”
জায়ন আবারও প্রশ্ন করল —
“আপনাদের ম্যানেজার কোথায়? কল হিম, বলবেন মিস্টার আবরার এসেছেন।”
শার্টের কলার সামান্য টানাটানিতে জায়নের কণ্ঠে ছিলো এক ধরনের অধিপত্য, সেই স্বরের সামনে যেন কাউন্টার স্টাফ ছেলেটি কিছুক্ষণের জন্য হঠাৎ নিজের পরিচয়টুকুও ভুলে গিয়েছিল, জবুথবু হয়ে বলল —
“স্যার, আপনিই তো মিস্টার আবরার! আমাদের ম্যানেজার স্যার বলেছিলেন আপনাকে অ্যাসিস্ট করতে, কিন্তু আপনার তো দুপুরে আসার কথা ছিল… তাই বুঝতে পারিনি স্যার… আমি এখনই উনাকে ডেকে আনছি।”
সে এক দৌড়ে চলে গেল অফিস রুমের দিকে।
এদিকে অন্য প্রান্তে নোস পিন ফোটানোর ব্যথায় তিয়াশার গালের নিচে গড়িয়ে পড়ছে এক ফোঁটা জল, যা শুধু শরীরের ব্যথা নয়, বরং এক দুর্বলতার প্রকাশ ।
আর তার মাঝেই হীরের নোসপিনটার চকচকে কিরণে তিয়াশার মুখটা যেন আরও এক ধরণের কোমল আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল।
ওই মেয়ে ষ্টাফটি মাথা নিচু করে নম্র স্বরে বলল —
“ম্যাম, আপনি এমনিতেই এত সুন্দর, আর এখন আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ছবির মতো কেউ… এই নোসপিনটা আপনাকে একদম মানিয়েছে, স্যারের নিশ্চয়ই খুব পছন্দ হবে।”
তিয়াশা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে বলল —
“থ্যাঙ্ক ইউ আপু… কিন্তু অনেক ব্যথা করছে।”
মেয়েটি কোমল হাসিতে ভরিয়ে বলল —
“একটু ব্যথা হতেই পারে ম্যাম, কিন্তু আপনি মেডিকেল স্টোর থেকে যদি একটা পেইন কিলার খেয়ে নেন, তাহলেই আর কষ্ট লাগবে না।”
তিয়াশা মাথা নাড়ল শুধু, কথার শক্তিটুকুও যেন কোথাও খুঁজে পাচ্ছিল না।
ঠিক তখনই ম্যানেজার এসে হাজির অর্ধবয়স্ক, মাথায় কিছুটা চুল সাদা, পরনে কালো ব্লেজার, তার মুখে পেশাদার এক গাল হাসি —
“আরে মিস্টার আবরার, আই এম সো সরি… আপনি এত তাড়াতাড়ি চলে আসবেন বুঝিনি।”
জায়ন তার সেই স্থির, রোবটিক অথচ অদ্ভুতভাবে মায়াবী গলায় বলল —
“ইটস ওকে, মিস্টার ফারিন। আই জাস্ট নিড মাই থিং। রেডি আছে তো?”
ম্যানেজার খানিকটা হাপাতে হাপাতে বলল —
“জি স্যার, রেডি আছে… আপনি গতকাল রাতে যেই টাইমে আপনার অ্যাসিস্ট্যান্টকে পাঠিয়েছিলেন, তখন কাজটা একটু ঝুঁকির ছিল… কিন্তু আপনি যেহেতু আমাদের কালেকশন থেকেই পছন্দ করেছেন, আমরা সেটা এডজাস্ট করতে পেরেছি। নতুন কিছু বানাতে বললে সম্ভব হতো না এত কম সময়ে।”
তিয়াশা সেই মুহূর্তে বেরিয়ে এলো। মুখে হাত চেপে ধরা, চোখ লাল, সেই লাল চোখ দিয়ে নেমে আসা জলের রেখা যেন এক অপরাধবোধ ছড়িয়ে দিচ্ছিল বাতাসে সে কিছু বলেনি, তবুও তার কষ্ট যেন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল।
এই দৃশ্য দেখে জায়নের সমস্ত চিন্তাভাবনা থেমে গেল –তার সামনে এগিয়ে আসা একমাত্র মানুষটার চোখে জল, যেই চোখের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু তার সমস্ত অহংকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে যথেষ্ট।
সে এক ছুটে গেল, তিয়াশার বাহু চেপে ধরে চিৎকার করল –
“কি হয়েছে জান, তোর চোখে জল কেন?”
চারপাশ থমকে গেল, কয়েকজন কর্মচারী গিলতে পারল না থুতুও —
জায়নের চোখে ছিল এক নিষ্ঠুর আগুন, অথচ সেই আগুনও যেন প্রেমের অতল থেকে উঠে আসা শীতল দাবানল, যা সব ধ্বংস করে তবেই শান্ত হয়।
তিয়াশার পাশের মেয়েটির দিকে আঙুল তুলে গর্জে উঠল —
“আমার ওয়াইফের চোখে জল কেন? যদি এটা আপনাদের কারণে হয় —আমি আপনাদের জাহান্নাম দেখিয়ে ছাড়ব।”
তিয়াশা এদিকে ব্যাথায় মরে যাচ্ছে তার উপর এইসব , নিজেই তার স্বামীর এই উন্মত্ত আচরণে কিছুটা বিরক্ত হয়ে নাকের থেকে হাত সরিয়ে বলে উঠলো–
” আরে আমি ব্যথায় কাদছি, ওনাদের কোন দোষ নেই । আপনি শুধু শুধু আর ভয় দেখিয়েন না । লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে ।”
এদিকে তিয়াশা নাক থেকে হাত সরাতেই জায়ন এর যেন কথা বন্ধ হয়েগেল । তার দৃষ্টি তখন আটকে ছিল তিয়াশার মুখে ,বুকের মধ্যে শুনতে পাচ্ছে নিজের হৃদস্পন্দন এর আওয়াজ । মনে মনে ভাবছে —
” এত সুন্দর লাগবে জানলে কিছুতেই এইসব পরাতাম না, হায়রে বউ আর কত ভাবে মারবি।”
এর মধ্যেই ম্যানেজার ছুটে এসে বলল
স্যার পিয়াসরিং এর জন্য ম্যাম এর পেইন হচ্ছে , পাশেই মেডিকেল স্টোর আছে আপনি ওখান থেকেই ম্যাম এর জন্য পেইন কিলার নিয়ে নিন।
জায়ন আর কথা বাড়ালো না, সব বিল মিটিয়ে , ছেলে স্টাফ টি দুটো প্যাকেট জায়ন এর হাতে ধরিয়ে দিল।
তারপর বাইরে বেরিয়ে আসলো দুজনেই, জায়ন তিয়াশা কে গাড়িতে বসিয়ে মেডিকেল স্টোর থেকে পেইন কিলার ও পানির বোতল এনে তিয়াশার হাতে ধরিয়ে দিল।তারপর নিজেও গাড়িতে বসে পড়ল নিঃশব্দে।
তিয়াশার দিকে তাকিয়ে জায়ন বলল —
” আজকে তাহলে আর ভার্সিটি যেতে হবে না। বাসায় দিয়ে আসি তোকে।”
এতদিন পর ভার্সিটি যাচ্ছে সে এটা কিছুতেই মিস করতে চায় না । সঙ্গে সঙ্গে তিয়াশা পেইন কিলার টা খেয়ে জায়ন এর উদ্যেশ্য বলল —
” আমি ঠিক আছি , মেডিসিন নিয়ে নিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে । এত দিন ছুটি হয়ে গেছে । আমি অনেক পিছিয়ে আছি।”
জায়ন তিয়াশার পড়াশোনার জীবনে বাধা হতে চায় না । কিন্তু এই অবস্থায় ভার্সিটি পাঠানো ঠিক হবে না , তাই বলল
” আমি সব ম্যানেজ করে দেব , তুই বাসায় চল।”
তবুও, একরাশ ভাব নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে পাউট করে বলল —
“প্লীজ… কিছু হবে না।”
বউ এর এরকম কান্ড দেখে জায়ন ও মুচকি হেসে উঠে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দিল ।
হঠাৎ করেই জায়ন এর ফোনে একটা ফোন আসলো —
কল রিসিভ করতেই , জায়ন বলে উঠলো —
” হ্যাঁ বল নাজিম ।”
নাজিম নাম টা শুনতেই তিয়াশার বুকের মধ্যে যেন টর্নেডো বয়ে গেল । নাজিম ভাই বৃষ্টি আপু ।
এর মধ্যেই কানে ভেসে এলো জায়ন এর পরবর্তী শব্দ যা শুনে তিয়াশার চোঁখ ছানাবরা হয়ে উঠলো —
” তুই দেশে আয় , সব দেখা যাবে । কথা টা আমায় আগে বললে তোকে হয়তো দেশ ছাড়তে হতো না। ”
তিয়াশার মাথায় একের পর এক বজ্রপাত পরেই যাচ্ছে।
“আমার জন্য হেল্প ই হয়েছে রে নাজিম।
এসব ছার আমার লিটল বয় কোথায়?”
ওদিক থেকে নাজিম কি বলছে তিয়াশা জানে না ।
শুধু জায়ন এর কথায় সে শুনতে পাচ্ছে।
জায়ন তিয়াশার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলে উঠল
” হ্যা আমি তোর হেল্পফুল শালী কে ভার্সিটি ছাড়তে যাচ্ছি। পরে কথা হবে ।”
তিয়াশা কি বলবে বুঝতে পারছে না —
“তার মানে ইনি জেনে গেছে সব , তাহলে আমায় কিছু বললো না কেন ?”
জায়ন এদিকে ফোন পকেটে রেখে নিঃশব্দে বসে রইল
জালনার দিকে তাকিয়ে ।
তিয়াশা কি করবে একবার জিজ্ঞেস করবে ?
কিন্তু এর মধ্যেই গাড়ি এসে দাঁড়াল ভার্সিটির সামনে।
তিয়াশা দরজা খুলে তাড়াহুড়ো করে নামতে যাবে, তার আগেই জায়ন ওর হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলল
“এত তাড়া কিসের? পাঁচ মিনিট চুপচাপ বস।”
পাশে রাখা ছোট ব্যাগ একটা জুয়েলারি বক্স বের করে ,সেটা খুলে জোড়া ফিঙ্গার রিং বের করল।
একটা রিং নিজের হাতে নিয়ে তিয়াশার বাঁ হাতের অনামিকায় পরিয়ে দিল।
আরেকটা রিং তিয়াশার হাতে দিয়ে বলল —
“এটা আমার হাতে পরিয়ে দে।”
তিয়াশা লজ্জা আর মিষ্টি অভিমান মেশানো চোখে জায়নের দিকে তাকিয়ে ওর অনামিকা আঙুলে রিং পরিয়ে দিল।
আরেকটি জুয়েলারি বক্স রাখা ছিল সেটা হাতে নিয়ে খুলে, এক সরু অথচ দৃষ্টিনন্দন পেনডেন্ট চেইন তার গলায় পরিয়ে দিল। চেইনের প্রতিটা লিংক যেন ভালোবাসার একেকটা গল্প, আর মাঝের সেই ছোট্ট পেনডেন্টটি একেবারে জায়নের মত করে কাস্টোমাইজ করা , একান্ত গোপনীয়তা নিয়ে তাতে লুকিয়ে জিপিএস ট্র্যাকার। এর কারন হলো গত সন্ধ্যা রাতে হয়ে যাওয়া ঘটনা ,যতোই তিয়াশা ঘরে থাকুক তবুও সে চায় না নিজেকে চিন্তায় রাখতে ।
তিয়াশা জানে না এই চেইনের গল্প, সে শুধু মনে মনে বলছিল “আহা আমার জামাই আবার রাতের মোডে ফিরেছে বুঝি…”
কিন্তু সে তো জানে না, এই ভালোবাসার চেইনে লুকিয়ে আছে নিরাপত্তার নামে এক গোপন পাহারা, এক ধরনের দখলদারী অধিকার।
যখন জায়ন চেইনটি পড়াচ্ছিল তখন
তিয়াশার শরীর থেকে উঠে আসা সেই নিঃশব্দ, কোমল সুবাস যেন ধীরে ধীরে জায়নের হৃদয় জুড়ে এক অজানা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল,তার ওপরে এই ছোট্ট মুখটায় জলজ্বলে হীরের নোসপিন, আলোর কিরণে ঝিকিমিকি করে যেন ওর নিষ্পাপ সৌন্দর্যেও এক অপরাধী আকর্ষণ ঢেলে দিচ্ছিল।এই এক মুখই বুঝি তার সবচেয়ে বড় বিপদ এমন নিষ্পাপ সৌন্দর্যের আবরণে লুকিয়ে আছে এমন এক আহ্বান, যা থামাতে পারে না কেউ,
ওর মুখে এক মায়াবী ক্লান্তি, চোখে হালকা জল, আর নিঃশ্বাসে মিশে থাকা অল্প ব্যথার কাঁপুনি এই সবকিছু একসাথে মিলে জায়নের সহ্যের প্রাচীর ধীরে ধীরে ভেঙে দিচ্ছিল।
এদিকে তিয়াশারও একই অবস্থা চোখ নামাতে পারছে না, চোখ দুটো নিজেই বন্ধ হয়ে এসেছিল তিয়াশার।
জায়নের নিঃশ্বাস এতটা কাছে ছিল, যেন প্রতি মুহূর্তে সে তাকে চেনার চেষ্টা করছিল নতুনভাবে ।বুকের ভেতর কেমন যেন উথাল-পাথাল করছে। দুজনের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছিল, এক অদ্ভুত উত্তাপে ভরে যাচ্ছিল পুরো গাড়ির ভেতরটা।
জায়ন একবার জেমসের দিকে মিরর গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল —
“আউট।”
তিয়াশা এই শুনে মনে মনে কেঁপে উঠলো–
“কি বলছে এই লোক? ওনাকে যেতে বলছে কেন? আমায় আবার কিছু করবে নাকি…?”
জেমস বাইরে জেতেই—
জায়ন তিয়াশাকে এক ঝটকায় টেনে নিজের ঊরুর ওপরে বসিয়ে বলল–
” ভুলে যাস , নেক্সট দুই মিনিট।”
এক মুহূর্ত দেরি না করে নিজের ঠোঁ*ট বসিয়ে দিল তিয়াশার ঠোঁ*টের ওপর , কিছুক্ষন ঠোঁ*টের উপর তোলপার চালিয়ে নিচে নামতে নামতে গ**লার কাছে এসেই জায়ন তিয়াশার ত্ব*ক ভিজিয়ে দিচ্ছিল অনবরত চু**ম্বনে।ওর ঠোঁ*ট যেন আগুনের মত জ্বলে উঠেছে,
এদিকে জোরে নিজের দুই বাহু দিয়ে চেপে ধরেছে তিয়াশাকে । তিয়াশার মনে হচ্ছিল এখন ই শ্বাসরোধ করে মা*রা যাবে । আর সেই আগুন তিয়াশার গলার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে।তিয়াশা বাধা দিতে চাইছে, কিন্তু জায়নের তীব্রতায় নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারছে না। জায়ন হঠাৎ করেই উন্মাদ হয়ে পড়েছে ।
তিয়াশাও মেতে উঠতে চায়, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে না এই মুহূর্তে না। একবার যদি গলায় দাগ পড়ে যায়, তাহলে তো আর ভার্সিটিতে যাওয়াই হবে না। তাই আবারও থামাতে চাইছে তাকে–
“প্লিজ ছাড়ুন।”
“পারছি না… অনেক কন্ট্রোল করেছি, আর পারছি না…”
জায়নের কণ্ঠে কাঁপুনি, চোখে অন্ধকার। সে যেন তিয়াশার গলার সুবাসে, ওর কাঁপা নিঃশ্বাসে, ওর ঠোঁটের প্রতিরোধে আরও বেশি করে জ্বলে উঠছে।
ওর ঠোঁ**ট গলা বেয়ে আরও নিচে নামতে জেতেই তিয়াশা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল–
“আমরা… ভার্সিটির সামনে… প্লিজ…”
তিয়াশার ধাক্কায় জায়ন যেন এক ঘোরের মধ্যে থেকেই ফিরে এলো । হঠাৎ করে নিজেকে ঝাঁকিয়ে জায়ন হুঁশে ফিরে বলল–
“সরি… সরি… আই অ্যাম সরি। ইউ ক্যান গো…”
তিয়াশা আর কোন কথা বাড়ালো না , গাড়ি থেকে নামতেই দেখল পরি আর আরোহী গেটের সামনে দাড়ান । আরোহীর মুখে আজ একরাশ খুশি।
মুখে ফুটে উঠেছে এক উজ্জ্বল আলোর ছোঁয়া ।
পাশে থাকা পরি একভাবে জেমস এর দিকে তাকিয়ে আছে, জেমস ও বারবার পরির দিকে তাকিয়ে ওর কান্ড দেখছে। দুজনের চোঁখ যেন কিছু বলছে ।যেন দুজনের চোখেই একটা অজানা গল্প লেখা।
কিন্তু তিয়াশা আর পেছন ফিরে তাকানোর সাহস পেল না এখনো বুকের মধ্যে ধক ধক করছে ।
তার শরীর এখনো জায়নের হাতের উষ্ণতা খুঁজে ফিরছে, কিন্তু মনটা থরথর করে কাঁপছে এই বেহুঁশ ভালোবাসার গাঢ়তায়।
জায়ন গাড়িতে বসে নিজের চুল ধরে টানছে ,
তাঁর দৃষ্টিতে এখনো লেগে আছে তিয়াশার গায়ের গন্ধে মেশানো সেই মায়াবী সুবাস,
আর মনের ভিতর ডাকছে একটা কথা–
“একদিন আমি পাগলই হয়ে যাবো এই মেয়ের জন্য…”
“কি রে বেবি তুই এত ঘেমে আছিস কেন?”
আরোহীর কথায় তিয়াশা যেন গভীর এক ঘোর লাগা অনুভব থেকে ধপ করে বাস্তবে ফিরে এলো ,
তিয়াশা কি করে বলবে ঠিক এইমাত্র গাড়ির মধ্যে কী ভয়ানক ঝড় বয়ে গেছে, কী অদ্ভুত এক নরম-উষ্ণ স্পর্শে গলে যেতে যেতে নিজেকে টেনে এনেছে বাস্তবে, কারণ তারা কোন প্রেমিক প্রেমিকা নয়, বরং পরিণত দাম্পত্যের বন্ধনে বাঁধা —
তাই কথার মোড় ঘুরিয়ে তিয়াশা হালকা হাসি চাপিয়ে বলে উঠল —
“আমার কথা বাদ দে, তুই এত খুশি কেন সেটা বল?”
আরোহী কিছু একটা বলার জন্য মুখ খুলতেই পরি এক গাল হেসে বলে উঠলো —
“রাত-বেরাতে যদি কেউ একদম সিনেমার মতো করে প্রপোজ করে, তাহলে কি আর খুশি না হয়ে পারা যায়?”
তিয়াশা কপাল কুঁচকে বলে উঠল —
“মানে?”
আরোহী এবার একরাশ লজ্জা মিশিয়ে মাথা নিচু করে একটু সাহস করে বলল —
“তোর ভাইয়া কাল রাতে আমাকে প্রোপোজ করেছে।”
তিয়াশা খুশিতে চোখ বড় করে চেঁচিয়ে উঠল —
“কি ই ই ।। তার মানে তুই আজ থেকে আমার পাকা পোক্ত ভাবে ভাবি?”
আরোহী মৃদু হেসে লজ্জা নিয়ে বলল —
“জী, ননদিনী।”
ওদের তিনজনের মধ্যে তখন এক রকম ঘরোয়া উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে ।মুখে মুখে হাসির ঢেউ, চোখে আনন্দের ছটায় তারা হারিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মেয়েলি আবেগে।
কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেলে ওই দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখে এক ধরনের কু-চাহনি, ঠোঁটে অশালীন হাসির আভাস।
ঠিক সেই সময়, জায়নের গাড়ির দরজা খুলে গেল।
গম্ভীর অথচ রাজসিক এক ভঙ্গিতে, চোখে সানগ্লাস, হাতে ফোন। জায়ন ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এসে হিমশীতল কণ্ঠে তিয়াশার উদ্দেশ্যে বলে উঠল
“ভার্সিটির ক্লাস বুঝি আজকাল বাইরে হয়? ভিতরে যাওয়া যাচ্ছে না বুঝি?”
তিয়াশার রাগে যেন মনের ভিতর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছুটে চলেছে —
“এই লোকটা এতটা জ্বালায় কেন? এখন বুঝি ক্লাসরুমেও পেছনে পেছনে ঢুকে যাবে?”
জায়ন আরোহী আর পরির দিকে তাকিয়ে বলল —
“ভেতরে যাও।”
তিনজনই ভয়ে একটু চুপচাপ হয়ে ভিতরে ঢুকতে শুরু করল।
কিন্তু যাওয়ার সময় পরি মুখ ফিরিয়ে এক চোখে তাকিয়ে নরম চোখের ইশারা ছুঁড়ে দিল জেমসের দিকে,আর জেমস? সেই চোখে যেন হারিয়ে গেল। বুকের ওপর হাত রেখে মৃদু হাসিতে ফিসফিস করল–
“ডোন্ট ডু দ্যাট, বং বিউটি… ইটস টেরিবলি ব্যাড ফর মাই হেলথ।”
জায়ন এবার ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে এসে বলল —
“নাইস ভিউ ছিল, তাই না?”
ওই ছেলেগুলোর একজন হালকা হেসে বলে উঠলো –
“হয় ভাই, তিনটাই একদম সেই ছিল, কিন্তু ওই বেগুনি চুড়িদার পরাটা তো একেবারে হৃদয় থামানো… উফফ, কি হট মা**”
এর মধ্যেই জেমস এসে জায়নের পাশে দাঁড়াল।
আরেকটা ছেলে হেসে আরোহী আর পরির উদ্দেশ্যে বলে উঠল —
“ভাই, তাইলে ওই দুইটা আমার।”
জায়ন হালকা হেসে এক ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলল–
“চল ভাই, ঐখানে একটু নিরিবিলি জায়গায় বসে ঠিক করি কারটা কে নিবে। পাবলিক প্লেসে এসব কথা বললে পাবলিক আমাদের কেলাবে।”
জেমস মনে মনে বলছে —
“আরে ইডিয়টস গুলো, ওদিকে যাস না… যাস না…”
ওই ছেলের কথা শুনে জেমস এর ভেতরটা গরম হয়ে গেছে।তবু ওদের বয়স ও অজ্ঞতার প্রতি এক ধরনের মায়াও জন্ম নিচ্ছে , বুঝেই না কি বলছে।
কিন্তু জায়নের চোখে-মুখে তখন এক ঠান্ডা হিংস্রতা। এক ক্ষীপ্র বাঘের মত বিদ্রুপ হাসি খেলে যাচ্ছে মুখে।
ওদের মধ্যেই এক ছেলে বলে উঠলো —
“ভাইয়া, আপনি তো ওদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, চেনেন নাকি? তাহলে একটু আমার বন্ধুগুলার সেটিং করিয়ে দেন না ওই মেয়েগুলোর সঙ্গে।”
জায়ন এক মুহূর্ত চুপ থেকে বিড়ম্বিত এক হাসি নিয়ে জবাব দিল —
“হ্যাঁ রে চিনি… ওই বেগুনি চুড়িদার পরা ওটাই আমার বউ রে, কু*** বাচ্চা।”
হঠাৎ করেই হাঁসি মুখটায় কেমন করে বদলে গিয়ে আগুন জ্বেলে উঠলো —
এই বলেই জায়ন তার কান-মুখ ধরে এক সজোরে ঘুষি বসিয়ে দিল ছেলেটার মুখে ।
এক ঘুষিতে ছেলেটা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল, যেন এক ক্ষিপ্র সিংহ তার শিকারকে মাটিতে ঠেলে দিচ্ছে।
বাকি তিনজন কাঁপতে কাঁপতে বলল —
“ভাইয়া, আমরা বুঝি নাই, উনি আপনার বউ। ভাইয়া, ছাইড়া দেন।”
কিন্তু তখন কে শোনে কার কথা —
জায়নের চোখ মুখে ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এক হিংস্র পশুর ছায়া —
“শু*** বাচ্চা, ‘মা**ল’ কাকে বলেছিস? নিজেরাই জানিস না।”
“আমার বউয়ের দিকে নজর রাখার আগে হাজারবার ভাবা উচিত ছিল তোদের।”
এবার সে ঘুরে তাকাল আরেকজনের দিকে —
“তুই বললি না, দুইটা আমার লাগবে? শুন, ওই দুইটা আমার বোনের মতো। ওইদিকে তাকালেই চোখ উপড়ে ফেলব।”
এই বলেই ছেলেটার মুখে আরেকটা সজোরে ঘু**ষি বসিয়ে দিল।
ছেলেগুলো এখন কাপছে রীতিমতো।
“ভাইয়া, আর হবে না, প্লিজ। ভুল হয়ে গেছে।”
এর মধ্যেই জায়ন পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নম্বরে ডায়াল করে লাউড স্পিকারে দিল, ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই জায়ন বলে উঠল —
“তোর জলপরীর দিকে এক হিরো নজর দিয়েছে, ডাবল ডেট করতে চায়…”
ওপাশ থেকে আকাশ যেন রাগে কেঁপে উঠলো —
“কোন শা*উ*র পোলা আমার জলপরীর দিকে তাকাইছে, ভাইয়া?”
জায়ন ঠান্ডা স্বরে হাসি দিয়ে বলল —
“আমার তরফ থেকে মিষ্টি পেয়ে গেছে। এখন তোর তরফ থেকে কি করবি বল।”
আকাশ হুঙ্কার দিয়ে বলল —
“ভাইয়া, এমন একখানা মিষ্টি দাও, যেন দুই দিন পানি খেতে না পারে।”
এই বলেই কল কেটে দিল জায়ন।
তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল —
“শুনলি তো কি বলল? এবার বল, কি করব?”
“ভাইয়া, প্লিজ ছাইড়া দেন। আর কখনো তাকাবো না। কেউ যদি তাকায়, আমরাই চোখ তুলে নেব।”
জায়ন ঠান্ডা গলায় বিদ্রুপ হাসি দিয়ে বলল —
“গুড আইডিয়া। পছন্দ হলো।”
এই বলে উঠে দাঁড়িয়ে আরেকবার চোখ দিয়ে এক কঠিন ওয়ার্নিং ছুঁড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো…
চৌধুরী বাড়ির দুপুরগুলো এখন আর আগের মতো প্রাণবন্ত নয়।
একটা সময় ছিল, এই দুপুরেই উঠোন কাঁপিয়ে হাসি-তামাশা চলত,
তিয়াশার খুনসুটিতে বৃষ্টি হেসে গড়িয়ে পড়ত,
এখন সেই উঠোন নিঃশব্দ, কেবল রান্নাঘরের আগুনেই জ্বলছে না,জ্বলছে না বলা কষ্টগুলো, অপূর্ণ অভিমানগুলো।
আজ মেহজাবীন বেগম নিজ হাতে হাসের মাংসের ঝোল চাপিয়েছেন।
চোখে যেন ঘুম নেই, মুখে এক চাপা চিন্তা —
‘জায়ন আর বৃষ্টি এত ভালোবাসতো এটা, সেই কোন সকাল থেকে ভাবছি আজ করেই ফেলি।’
পাশে দাঁড়িয়ে রুহেনা বেগম ধীরে ধীরে আলু-ডিমের ঝোল নাড়ছেন —
তিয়াশার প্রিয় খাবার এটা, মুখের স্বাদে তার একটা বাচ্চা-মেয়েলি চাহনি লুকিয়ে থাকত।
একটু পর, মেহজাবীন বেগম চামচ থামিয়ে নিঃশ্বাস টেনে বললেন,
“ছেলেমেয়েগুলো যেন দিনকে দিন দূরে সরে যাচ্ছে,
এই বাড়িতে এখন শুধু তাদের গন্ধ পড়ে আছে, ছায়া নেই…”
তার গলায় ক্লান্তি ছিল, আর ছিল মায়ের মন ভাঙার দীর্ঘ অভিমান।
পেছন থেকে সুরাইয়া বেগম বলে উঠলেন —
“বড় আপা তুমি একটু বড় ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলো না,
দেখো না একবার ছেলে-মেয়েগুলা ফিরিয়ে আনা যায় কিনা।
আর ভালো লাগে না এই ফাঁকা বাসা…”
রুহেনা বেগমের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
চোখ বুজে শুধু অনুভব করেন বৃষ্টির গলা,
তিয়াশার কাঁচা-পাকা অভিমান,
আর সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে চলে যাওয়া একরাশ ছায়া।
মেহজাবীন বেগম জবাব দিলেন —
” ওই যেদি লোক কি আমার কথা শুনবে , কতবার তো বুঝিয়েছি সে কি মানে । বাপ আর ছেলের মধ্যে আমি পিষে মরছি । ছেলে কে এত কল দেই একটা বার ও যদি ধরে । মায়ের কষ্ট বোঝানো যে খুব কঠিন রে ছোট ।”
সুরাইয়া বেগম বললেন —
” সব ই বুঝি আপু , কিন্তু কি করব বলো এই বাড়ির পুরুষ গুলোই যে জেদ দিয়ে মোরা।”
এদিকে রুহেনা বেগম একটু থেমে বলে উঠলেন —
” বড় আপা , ছোট আজ ওনারা বাসায় ফিরলে আমরা
তিন জনই সাহস করে কথা বলব । এই ভাবে আর কতদিন ছেলে মেয়ে গুল দূরে থাকবে । অনেক জেদ দেখেছি আর না ।”
মেহজাবীন বেগম রুহেনা বেগম এর কথায় বলে উঠলেন —
” একদম ঠিক বলেছিস মেজো। ”
সুরাইয়া বেগম ও বললেন —
” হ্যা মেজ আপা এইটাই করা হবে । ”
আর সেই মুহূর্তে, তিনটি নারীর মুখে যে অদ্ভুত শান্তি ফুটে উঠল ।তা ছিল না কোনো যুদ্ধ জেতার আনন্দ,
বরং এক আশাবাদী অপেক্ষার দীপ্তি।
যেন দুপুরের রোদটা একটু নরম হয়ে উঠল,
রান্নাঘরের ভেতরটা একটু গরম নয়, আপন হয়ে উঠল।
“স্যার, আর ৭, ৮ দিনের মধ্যেই সব কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে। আপনি চিন্তিত হবেন না।”
জায়নের নতুন অফিসের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার যখন এমন নিশ্চয়তা দিচ্ছিল, জায়ন তার কাঁধে হাত দিয়ে একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে, স্বরটা নিঃসাড় অথচ দৃঢ় করে বলল—
“আপনি ৭ দিন নেন, ৮ দিন নেন, সেটা আপনার বিষয়। আমার শুধু এটুকু দরকার যে, ঠিক ১৩ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হোক। ওই দিন আমার মিসেস এর জন্মদিন। আমি এই অফিসটা তাকে গিফ্ট করতে চাই।”
কন্ট্রাক্টর এক গাল হেসে মৃদু গলায় বলে উঠল–
“স্যার, আপনার মিসেস সত্যিই অনেক লাকি।”
জায়ন ঠোঁট বাঁকিয়ে এক বিদ্রুপ হাসি দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল—
“সে লাকি কি না জানি না… তবে আমি যদি আমার ভালোবাসার বিনিময়ে তার এক পারসেন্ট ভালোবাসাও পেতাম, নিজেকে ইউনিভার্সাল লাকিয়েস্ট ম্যান মনে করতাম ।”
এই সব অমোচনীয় অভিমান আর না বলা অনুভূতির ভেতর থেকে নিজেকে টেনে বের করে নিয়ে জায়ন স্পষ্ট গলায় বলে উঠল–
“আপনি কথা বাদ দিয়ে কাজ করুন। আমার টাইম নেই।”
” জি স্যার নিশ্চই।”
এই বলে কন্ট্রাক্টর চলে গেলেন
ওদিকে তিয়াশার শরীরটা আজ একটু বেশি খারাপ লাগছিল। নাকের ব্যথা আবার ফিরে এসেছে। ক্লাস শেষ করে বের হতেই, সে আর তার দুই বান্ধবী, পরি ও আরোহী, গেটের পাশে এসে দাঁড়াল। বেশ কিছুক্ষণ আগে জায়নকে মেসেজ পাঠিয়েছে সে। জায়ন ফোনে জানিয়েছে সে রাস্তায় আছে, পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না।
রোদে ঝলসে ওঠা দুপুরের একপাশে যখন তারা দাঁড়িয়ে, হঠাৎ পেছন থেকে এক গলা যেন কুয়াশার ভেতর থেকে ভেসে এলো —
“তিয়াশা…”
তিনজনই চমকে পেছন ফিরে তাকালো।
আর পেছন ফিরতেই ,তিয়াশা আর আরোহীর মুখ মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল, চমকে উঠলো দুজনেই ।
এদিকে তিয়াশা থর থর করে কাপছে —
তিয়াশার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট থেকে একটাই শব্দ বের হলো —
“অয়ন ভাই… আ আপনি এখানে কি করছেন?”
অয়ন একঝটকায় তিয়াশার হাত ধরে বলল—
“আমি যেদিন থেকে সুস্থ হয়েছি, সেদিন থেকেই প্রতিদিন আসি তোমার ভার্সিটির সামনে। একটিবার দেখবো বলে। কোথাও তোমার কোন খোজ পাচ্চিলাম না বিশ্বাস করো, আমি জানতাম তুমি একদিন ঠিক আসবে। আমি জানতাম।
তিয়াশা এ কার মুখ দেখছে? আতঙ্কে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, , গলায় কোনো শব্দ ফুটছে না।
আরোহী ওর হাত চেপে ধরে রেখেছে, যেন বুঝাতে চায় ‘ভয় পাস না, আমি আছি’।
পরি ও এবার বুঝতে পারলো , এই ছেলেটা… এই ছেলেটাই সেই অয়ন।
তিয়াশা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল—
“অয়ন ভাই… প্লীজ, হাতটা ছাড়ুন। আপনি ভুল বুঝছেন… প্লীজ, চলে যান এখান থেকে প্লীজ।”
কিন্তু অয়নের চোখে তখন এক অদ্ভুত উন্মাদনা।
“না… আমি তোমাকে ছাড়ব না, তিয়াশা। কেউ আমাদের মাঝখানে আসতে পারবে না আর। চলো, এখনই চলো আমার সঙ্গে। তোমাকে নিয়ে যাব, আমার কাছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তিয়াশা ছটফট করছে, চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে।
আরোহী ও পরির মুখেও আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে ।
আরোহী বলে উঠল
” আরে আপনি ওর হাত টা প্লীজ ছাড়ুন , কেন আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন।”
তিয়াশা তখন আকুতি জানিয়ে বলল—
“অয়ন ভাই, দয়া করে, আপনি যা ভাবছেন, কিছুই ঠিক না ভুল ভাবছেন । আমি ভালো আছি, প্লীজ… আমার হাতটা ছাড়ুন…”
ঠিক তখনই ,
পেছন থেকে এক গম্ভীর গলা ভেসে এলো…
একটা বিদ্রুপ মেশানো, ঠান্ডা, কাঁপন ধরানো হাসির সঙ্গে।
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪১
“এই জন্যই বুঝি এত ব্যথা নিয়ে ভার্সিটিতে আসার তাড়া ছিল… কু****ত্তার লেজ টানলেও সোজা হয় না… আর বিয়ের পরেও প্রেমিককে ভোলা যায় না, তাই না জান?”
গলার স্বর শুনে তিয়াশার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে উঠল ,যে ভয় পাচ্ছিল এতক্ষন সেই ভয় এখন তার পিছনে।