আমার হায়াতি পর্ব ২৮

আমার হায়াতি পর্ব ২৮
Nahar Adrita

রুমে ঢুকেই যেন ঝড় বয়ে গেলো আদিবের ভেতরে। চোখ লাল, মুখ গম্ভীর, বুক ওঠানামা করছে দ্রুত শ্বাসে। আচমকা দেয়ালে জুড়ে এক লাথি মারলো সে। গম্ভীর শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো ঘর।
টেবিলের ওপর রাখা কাচের জগটা সে এক ঝটকায় ফেলে দিলো মাটিতে। মুহূর্তে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো কাচের টুকরো, সারা ঘরে ঝনঝন শব্দ প্রতিধ্বনিত হলো। হায়াত এগিয়ে আসলো আদিবের দিকে, কাঁপা গলায় বললো,

– আব্ আপনি এম..এমন করছেন…….
আদিব হায়াতের দিকে তাকালো, জুড়ে গলা চেপে ধরলো দুই হাত দিয়ে,
– চুপ , একটা কথাও বলবি না।রুম থেকে বের হ bloody fool !
এরপর হায়াতকে ছেড়ে দিয়ে সজোরে ডিভানে এক লাথি মারলো। ডিভান কেঁপে উঠলো প্রচণ্ড শব্দে, যেন আদিবের ভেতরের রাগ আর অস্থিরতা জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না।
বিছানার এক কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো হায়াত। শুধু চোখে চোখে আতঙ্ক ফুটে উঠছিলো। বুক কেঁপে উঠছে, ঠোঁট কাঁপছে, তবু সে চুপ। একটিও শব্দ বের হলো না।
ভয়ের কারণে হায়াতের কণ্ঠ যেন গলায় আটকে গেছে। মনে হচ্ছিলো, যেকোনো ভুল শব্দ হয়তো আবার ঝড় ডেকে আনবে। তাই শুধু স্থির দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো আদিবের দিকে।
হায়াত তখনো নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিলো, শরীরটায় ভয় যেন জমাট বেঁধে আছে। মুহূর্তেই আদিব ঝড়ের মতো এগিয়ে এসে তার কোমল গাল দু’হাতে চেপে ধরে গর্জে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– বাস্টার্ড ! তুই কোন সাহসে এসব করলি ?
আদিবের রাগী কণ্ঠে যেন পুরো রুম কেঁপে উঠলো। হায়াতের গাল লাল হয়ে ফুলে উঠলো, ব্যথার চাপ সামলাতে না পেরে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। শ্বাস নিতে নিতে আদিব যেন নিজের ভেতরের আগুন নিভাতে চাইছিলো। হঠাৎ নিচে ভাঙা কাচের টুকরো চোখে পড়তেই সেটা তুলে নিয়ে নিজের শরীরে চালাতে উদ্যত হলো।
ঠিক সেই মুহূর্তে হায়াত দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আদিবকে।
– এমন করবেন না প্লিজ, আমি স্যরি।
– সর তুই আমাকে ধরবি না আর ওই হাত দিয়ে ।
আদিব হায়াতকে সরিয়ে ফেলতে চাইলো, হাত ছুঁড়ে দিতে চাইলো। কিন্তু হায়াত বুকের সব শক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরে রইলো স্বামীকে। শেষমেশ আদিবও ক্লান্ত হয়ে থেমে গেলো। হায়াত আদিবের বুকে জড়িয়ে ধরে আছে চুপচাপ। আস্তে আস্তে বললো,

– আমার কথা শুনুন।
– কি ?
– আপনি যখন কাউকে ভালোবাসবেন… তখন এক বুক সমুদ্র নিয়ে ভালবাসতে হবে আপনাকে..নাহলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন না………!!
ঘন্টা খানেক আগে……….
হায়াতকে প্রশ্ন করতেই হায়াত যেনো পুরো চুপ হয়ে গেলো।এমন সময় রাজ বাকা হাসলো,
– সাদাদ ওকে তুই চিনিস ?
আদিব একটু কপাল কুচকে বললো,
– এটা আমার বউ রাজ, ওকে চিনবো না মানে….আর তুই কিভাবে ওকে চিনিস ….?
আরাবি আর হায়াত দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, হায়াত ভায়ে পুরো লাল হয়ে গিয়েছে মুখটা। আবারও রাজ বলে ওঠলো,

– হ্যা এই দুজনকে কালকে ওয়ার্শি ব্রিজে কান্না করতে দেখেছিলাম। ফুচকা খেয়ে যা তা অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো এই ছোট্ট মেয়েটার, আমি আবার এসেছিলাম অফিসের কাজে, তো হঠাৎ করেই ওদের অসহায়া ভাবে দেখে পানি দিয়ে এসেছিলাম। আগে যদি জানতাম এটা তোর ওয়াইফ তাহলে…..
আদিব একটু গম্ভীর মুখ করে রাজের দিকে তাকালো, রাজ মূহুর্তেই চুপ করে গেলো, আদিব হায়াতের দিকে তাকালো,
– তোমাকে রাস্তায় নেকাপ খুলে দাড়িয়ে পরপুরুষের সাথে কথা বলার জন্য অনুমতি দিয়েছি আমি ? আর কোনো পরপুরুষের সাথে রং তামাসা করার জন্য, জবাব দাও আমার।
হঠাৎ চেচিঁয়ে উঠে আদিব। বাড়ির সকলে ভয় পেয়ে গেলো। হায়াত মূহুর্তেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। এমন সময় রাহেলা চৌধুরী বললেন,

– এটা কেমন অভদ্রতা দাদুভাই। বাড়ির সকলের সামনে বউকে এভাবে বকতে আছে ?
আদিব রাগে ফুসতে থাকলো,
– দাদি ও কোনো পরপুরুষের সাথে কেনোই কথা বললো বা পানি খেলো।
মিসেস পাখি অর্থাৎ আদিবের ফুপি বললেন,
– আরে কি মুশকিল রাজই তো পানি দিয়েছে, রাজের সাথে কথা বললে কি হবে বাজান,একটু সান্ত হ।
– ফুপিমা ওতো রাজকে চিনতো না তাহলে কেনো খেলো।
এই বলে আদিব হায়াতকে জুড়ে এক চড় মারলো। মিসেস অরোরা দৌড়ে এসে হায়াতকে বুকে চেপে নিলেন। রাজ বাকা হাসলো একটু পর নিজের রুমে চলে গেলো সকলে আদিবকে কথা শুনাতে লাগলো কিন্তু আদিব কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে সিড়ি দিয়ে ওপরে চলে গেলো।
এখন……
হায়াত বুকে থেকে মাথা সরিয়ে, আদিবের চোখে চোখ রেখে বললো,

– এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেনো, একটু পানিই তো খেয়েছিলাম।
– কেউ পানি দিবে আর খেতে হবে, পরপুরুষের হাতের পানিই কেনো।
– কি একটা কথা নিয়ে রাগ তার,আচ্ছা পানি খাওয়ার পর বাড়ি এসে তো ওয়াশরুমে গিয়েছিলামই, তো সেই পানি এখনো পেটে আছে নাকি ?
– আর বলেছিলাম না আমাদের শত্রুর অভাব নেই তবুও কেনো নেকাপ খুলে রাস্তায় তামাশা করতে হবে।
– স্যরি আর এমন করবো না।
আদিব আর হায়াতের চোখে চোখ রাখতেই যেনো রাগ গলে গিয়ে অদ্ভুত এক আকর্ষণে পরিণত হলো। মুহূর্তেই আদিব হায়াতকে নিজের বুকে টেনে নিলো। হায়াত ভয়ে কেঁপে উঠলেও পালালো না, বরং নিঃশব্দে মাথা নামিয়ে দিলো।

আদিব ঠোঁটে ঠোঁট রাখে হায়াতের,হায়াত প্রশ্রয় দেয় তার শখের পুরুষকে।আস্তে আস্তে সময় গড়াতে থাকে, দুটি হৃদয় সম্পুর্ন পরিপূরক হয়ে ওঠতে ব্যস্ত।আদিবের গায়ের টি-শার্ট খুলে ফেললো হায়াত। আদিবও তার লাজুকপাখির পড়নের কাপড় আস্তে করে খুলে ফেললো,আলো আধারির খেলায় তার শরীর যেন ভাসছে নগ্ন জোয়ারে। আদিবের চোখ তৃষ্ণার্ত,
আদিবের ওষ্ঠ একে একে ছুঁতে লাগলো হায়াতের সর্বাঙ্গ।প্রতিটি ছোঁয়া যেনো ভালোবাসার সত্য, আহাজারি, ছন্দ। প্রতিটি স্পর্শ যেনো হায়াতের শরীর জুড়ে খেলা করছে,একটু পর পর কেঁপে ওঠে হায়াত।

আদিবের এক হাতের আঙ্গুল হায়াতের কোমড় থেকে আস্তে আস্তে একটানে নিচে চলে যায়। অন্য হাত বক্ষস্থল জুড়ে বিচরণ করছে। মুখ ডুবিয়ে দিলো সর্বাঙ্গে………… হায়াতও আস্তে আস্তে আদিবের শিশ্নে মুখ ডুবিয়ে দিলো । পরম আবেশে হায়াতের চুল গুলো চাপ দিলো সে। হায়াত চুপচাপ খেতে লাগলো। একটু পর আদিব কেঁপে ওঠে বসে পড়লো।লাজুকপাখিকে পরম আবেশে বুকের মাঝে ওঠিয়ে নিলো।
হায়াতের প্রতিটি নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে আদিবের বুকে। আদিব আস্তে আস্তে মত্ত হয় এক প্রেম লিলাময় খেলায়। আদিব ক্রমশ বাড়িয়ে দিলো ছন্দের জোয়ার।
হায়াতের চোখের কোনায় পানি জমে যাচ্ছে, মুখে হালকা ব্যাথাময় আওয়াজ। দুজনেই যেনো অমৃত সাগরের ঢেউয়ে মেতে ওঠলো।
বিছানার চাদরটা খানিক কুঁচকে গেলো,হায়াতের আঙ্গুল গেঁথে গেলো আদিবের পিঠে।হালকা কামড়ে ধরে তার কাধ।
আদিব হাস্কি স্বরে বললো,

– জান আরেকটু সহ্য করো প্লিজ। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই, পরে ঔষধ খাইয়ে দিবো। আপাতত আমাকে আর থামতে বলো না।
– আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে, আর সহ্য করতে পারছি না প্লিজ।
-You don’t stop in the middle of the game of desire. Tonight is all mine.
– আমি আর পারছি না আদি প্লিজ।
– হুসসসসসসস।
আদিবের প্রতিটি স্পর্শে হায়াত কেঁপে উঠছিলো,
স্নিগ্ধ অথচ গভীর এক আবেগে সে আদিবের কাছে আরও ঝুঁকে পড়লো,যেনো সে ভালোবাসার গভীরতম স্রোতে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাসিয়ে দিলো।
হঠাৎ করেই নিস্তেজ হয়ে গেলো হায়াত। বেশ কিছুক্ষণ পর ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আদিব। হায়াতের ওপর থেকে ওঠে বসলো আদিব । কপাল স্লাইড করে মনে মনে বললো,

– আজ একটু বেশিই হয়ে গিয়েছে ওহ সিট। কি করলাম এটা।
শার্ট আর টাউজারটা পড়ে হায়াতকে ভালো করে শুইয়ে দিল। এরপর ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে হায়াতের মাথায় পানি দিতে থাকলো। হায়াতের গাল বেয়ে পানি পড়ছে। আদিব লক্ষ করলো আজ বেশিই বাইটের দাগ হয়ে গিয়েছে হায়াতের পুরো শরীর জুড়ে।

রাত সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিট। হায়াতের জ্ঞান ফিরে এলো। আদিব তার পাশে বসে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– আমার পাখি, কিচ্ছু হয় নি আমার সাপের বাচ্চাটার।
পরম যত্নে আদিব হায়াতের কপালে আলতোভাবে চুমু দিলো। ভয়ে কাঁপা হাত দিয়ে হায়াতের জামাটা ঠিক করে পড়িয়ে দিলো । হায়াত তার বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে রইলো। শরীর যেনো আজ একটু বেশিই দূর্বল হয়ে গিয়েছে।
আদিব হাত বাড়িয়ে টেবিল থেকে ঔষধ নিয়ে হায়াতকে খাওয়াললো। আলতোভাবে, যত্ন সহকারে। তারপর ধীরে ধীরে হায়াতকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে পাশে বসে থাকলো।
রুমে শুধু হায়াতের নিঃশ্বাস আর আদিবের মৃদু শ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে—মুহূর্তগুলো ভরা ছিলো আশ্বস্তি, যত্ন আর গভীর স্নেহে।

মৃদু পদক্ষেপে আরাবি রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে এল। রিয়া, নুপুর আর মিনহাজার পাশে গিয়ে দোলনায় বসতেই গল্পের আবহ ছড়িয়ে পড়লো। হায়াত আর তার বন্ধুত্বের নানা খুঁটিনাটি কথা বলতে শুরু করলো ।
এমন সময় ছাদে প্রবেশ করলো রাজ আর আসিফ। দুজনকে দেখে মুখে মৃদু হাসি ছড়িয়ে পড়লো সবার, দুই ভাই এগিয়ে এল।
নুপুর আর রিয়া উৎসাহ নিয়ে সিলেটের সাদা পাথর নিয়ে প্রশ্ন করলো, আর রাজ গল্পে রঙ ছড়িয়ে দিতে শুরু করলো। মিনহাজা একটু সরে গিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো।
এতোক্ষণ চুপচাপ গল্প শোনায় ডুবে থাকা আরাবির মনে হঠাৎ এক অদ্ভুত ঝড় উঠলো। মনে হলো আসিফ যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে দ্বিধায় চোখ তুলতেই চোখে চোখ মিললো দুজনের। মুহূর্তটা যেন হাওয়ায় ঝুলে রইলো।
পরক্ষণেই আরাবি নিজেকে মনে মনে ধমকালো,

– আরে ছেলেটার তো দুদিন পর অন্য কারো সাথে বিয়ে, আর আমি কিনা এমন কুনজর তাকাই ! ছিঃ আরাবি, ছিঃ।
নিজের অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে দোলনা ছেড়ে ছাদের একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। বাতাসে চুল উড়ছিলো, অথচ ভেতরে ভেতরে মনে হচ্ছিলো কিছু একটা অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে।
আসিফ মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
– মেয়েটার সাথে একটু কথা বললেই বা ক্ষতি কী! কী অদ্ভুত ব্যাপারটা, মাত্র একদিনেই যেন ওকে নিজের খুব কাছের মনে হচ্ছে…..…

ভাবনাগুলো আসিফকে আর আটকালো না। ধীর পায়ে আরাবির পেছন পেছন ছাদের অন্য কোণে এসে দাঁড়ালো সে। কিছু না বলে ফোনে স্ক্রল করতে লাগলো, যেন নিছক কাকতালীয়ভাবে পাশে এসেছে।
আরাবি প্রথমে বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই চমকে উঠলো। চোখে চোখ পড়তেই বুকের ভেতর অকারণে কেঁপে উঠলো মন।
আরাবি একটু কেঁপে উঠলো, ভয়ে গলা কাঁপতে কাঁপতে বললো,

– ও আল্লাহ, ভুত,না না জ্বিন।
জোরে চিৎকার দিতে যাবে, এমন সময় আসিফ ঠোঁট চেপে হালকা দাঁত কিঁচ মেরে বললো,
– আমি আসিফ। জলজ্যন্ত মানুষ, কোনো ভুত না… অভিসারিণী।
আরাবি ভুরু কুঁচকে তাকালো,
– বুঝতে পেরেছি মিস্টার ভুত। তবে আপনি এখানে কি করছেন? আর অভিসারিণী আবার কে ?
আসিফ ঠোঁটে একচিলতে বাঁকা হাসি খেলালো,
– কেনো, আপনি-ই তো মিসেস……
আরাবি বিরক্তি চেপে স্বরে বললো,
– মিস হবে, মিস আরাবি রাইবা।
শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো আসিফ,
– ভাবীর সাথেই পড়েন, তাই তো?
– হু।

চুপচাপ স্থির হয়ে আরাবির দিকে তাকিয়ে রইলো আসিফ। দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছিল না কিছুতেই।
এমন সময় আচমকা তার ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো।
স্ক্রিনে ঝলমল করছে লেখা, হবু বউ জান…
এক মুহূর্তেই আরাবির বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত শূন্যতা নেমে এলো। চোখ সরিয়ে নিলো দ্রুত, যেন দেখেও দেখেনি। ঠোঁট কামড়ে ভেতরে ভেতরে নিজেকেই ধমক দিলো,মনে মনে বললো,
– তুই পাগল হয়েছিস আরু, অযথা অন্যের ব্যক্তিগত পুরুষের হক নষ্ট করছিস। কেনো কথা বলতে গেলি তুই।
কিন্তু আরাবির মন যেনো কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না, মনযেনো বলে ওঠলো এটাই তোর জীবনের প্রথম ভালোলাগার পুরুষ।
ওদিকে আসিফ কল রিসিভ করে নিঃশব্দে কয়েক কদম দূরে সরে গেলো। ছাদের আলো-আঁধারি ভেদ করে তার কণ্ঠ ভেসে আসছিলো অস্পষ্টভাবে।
আরাবি সবার পাশে গিয়ে বসলো, হঠাৎ নুপুর উল্লাসিত কণ্ঠে ডাক দিয়ে বললো ,

– আরাবি, একটু কফি নিয়ে আসো সোনা। দেখবে রোজি খালা চা বানাচ্ছে, তুমি গিয়ে শুধু বলো আরেকটা কফি বানাতে।
ঠিক সেই মুহূর্তে ছাদে উঠলেন আদিবের মা, চাচী আর ফুপি। আসিফের মা আরাবিকে বললেন,
– তোমার যেতে হবে না মা। আমি সবার জন্য নিয়ে আসছি। তুমি এখানে বসে গল্প করো।
আরাবি মুচকি হেসে সামান্য মাথা নেড়ে উত্তর দিলো,
– না না আন্টি, আমিই যাচ্ছি। আপনি বসুন, সবার সাথে গল্প করুন।

রাত নয়টা বেজে সাত মিনিট। হায়াত আর আদিব গোসল শেষে চুল আঁচড়ে নিলো, আদিব বাকা হেসে বললো,
– দেখেছো বউ জান, যতো বেশি আদর করবো ততো বেশি তুমি সুন্দর হবা।
হায়াত একটু কপাল কুঁচকে বললো,
– কেনো আমি কি সুন্দর না নাকি।
– না বউ তুমি অনেক সুন্দর তবে,তোমাকে আদর করলে ওইদিন একটু বেশিই সুন্দর লাগে।
– কচু লাগে,ফালতু লজিক।
– যাহ বউ আমাকে সম্মান দেয় নারে।
আদিব আলতো করে হায়াতের কপালে একটি মৃদু পরশ দিলো, এরপর এক গ্লাস দুধ হাতে নিয়ে সে বললো,
– ধরো খেয়ে নাও, কোনো কথা শুনবো না খেতে হবেই।
হায়াত লাজুক হাসি দিয়ে সেই দুধ খেয়ে নিলো, যেনো লক্ষি মেয়ের মতো শান্তি আর সন্তুষ্টি ভরে উঠলো তার ভেতরে।

দুধ খেয়ে হায়াত মাথায় ওড়না ঠিক করলো, তারপর আদিবের সাথে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।
এদিকে আসিফ কল শেষ করে হঠাৎ ফোন কেটে দিলো। আসলে কলটি আসিফের হবু বউ হাফসা থেকে নয়, বরং তার মা দিয়েছিলেন। টুকটাক বিয়ের পোশাকের বিষয় নিয়ে কথা শেষ করে সে নিচে নামার জন্য পা বাড়ালো।
আরাবি এক মনে গুনগুন করে নিচের দিকে নামছিল। হঠাৎ ওড়নার সঙ্গে পা বেজে দুটো সিড়ি পড়ে গেলো। ব্যথায় চিৎকার করতে করতে সে হাত বাড়ালো,
– আহ,,,,,, আমার পা!
আসিফ চিৎকার শুনে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে নামলো। ঠিক তখনই আদিব আর হায়াতও ওপরে এসে উপস্থিত হলো।
হায়াত দ্রুত আরাবিকে উঠানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু আরাবির শরীরে হালকা ব্যথা থাকার কারণে নিচু হওয়া সম্ভব হলো না।
অবশেষে আদিব নরম কণ্ঠে বললো,
– আসিফ, আরাবিকে কোলে তুলে নিচে যা। আমি ডাক্তারকে কল করছি।
আরাবিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আসিফ চুপচাপ আরাবিকে কোলের মধ্যে তুলে নিলো। আরাবি ব্যথায় আর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ফেলল।
হায়াত দ্রুত নিচে নেমে তেল গরম করতে আর সাথপ বরফ আনার ব্যবস্থা করল, যেন আরাবির ব্যথা কমানো যায়।

রুমে এসে আসিফ আরাবিকে ধীরে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তারপর নরম কণ্ঠে বললো,
– দেখি, কতোটা ব্যথা পেয়েছেন।
আরাবি লজ্জায় চুপচাপ, চোখ বুজে বললো—
– না না, আমার কিছু হয় নি। দেখতে হবে না।
আসিফ কপাল কুঁচকে আরাবির পায়ের দিকে হাত বাড়ালো, নিঃশব্দে একটু প্লাজুটা উঁচু করলো, ব্যথা পরীক্ষা করতে। হঠাৎ আরাবির শরীরের সমস্ত লোম কাঁপতে লাগলো। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে চাদর আঁকড়ে ধরলো।
আসিফ লক্ষ্য করলো, আরাবির পা কিছুটা ফুলে গেছে, তাই সাবধানে আরও মনোযোগী হলো।
সেই সময় রুমে প্রবেশ করলো হায়াত, চিন্তিত কণ্ঠে বললো,

– ভাইয়া, অনেক ব্যথা পেয়েছে নাকি ?
আসিফ সঙ্গে সঙ্গে প্লাজু ছেড়ে দিলো আর চুপচাপ রুমের দরজা দিকে সরে গেলো। ঠিক সেই সময় ডক্টর এসে উপস্থিত হলেন, সঙ্গে আদিবও।
আরাবি চুপচাপ বিছানায় বসে রইল, আর ততক্ষনে বাড়ির সবাই একে একে তার রুমে এসে হাজির হলো। রুমটি এখন ভরা ছিলো উদ্বেগ, সহানুভূতি এবং যত্নের আবহে।
ডক্টর কিছু ঔষধ দিয়ে চলে গেল, বাড়ির সবাই ধীরে ধীরে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু আসিফ, নুপুর, হায়াত ও মিনহাজা রুমের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইল।
হায়াত খেয়াল করলো, আসিফ আরাবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আর আরাবি নিঃশব্দে বিছানায় আধশোয়া হয়ে নুপুরের পায়ের মলন লাগানো দেখছে,
আরাবি সামনের দিকে তাকাতেই আবারও চোখে চোখ আটকে গেলো। নিজেকে খানিকটা লজ্জাজনিতভাবে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো।

আমার হায়াতি পর্ব ২৭

আর হায়াত লক্ষ্য করলো, সে যা চেয়েছিলো তাই হচ্ছে। কিন্তু ভুল সময়ে…… তার মন একটি অদ্ভুত টান অনুভব করছে—যেনো সময়টা থেমে গেছে, অথচ চারপাশে নিঃশব্দে গভীর একটি আবেগের লুকোচুরি চলছে। এর শেষ পরিনতি কি হবে সামনে গেলেই জানা যাবে……

আমার হায়াতি পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here