The Silent Manor part 1
Dayna Imrose lucky
১৯৫২ সাল।
রাত ঠিক তিনটের কাছাকাছি।শীতের সময়ে রাতের সময়টা দৈর্ঘ্য হয়। রাতের নিস্তব্ধতা যেন কাটতে চায় না।আজ প্রবল শীত। সন্ধ্যা থেকে বাতাস ছিল তীব্র পরিমানে। উপকূলীয় এলাকায় আবহাওয়া জনিত কারণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির জন্য শীতের যেন আজ তান্ডব লীলা চলছে। বৃষ্টি থেমে গেছিল রাত দশটার দিকে। তারপর থেকে সবকিছু স্তব্ধ।
এমন একটি রাত শুধুমাত্র মায়াকে ঘিরে।সে গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে বারবার বিছানার এপাশ ওপাশ করতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তাঁর।চোখ মেলে তাকাল। চারদিকে আপছা আলো।ঘুম ঘুম চোখে পাশে হাত দিয়ে তাঁর দাদীকে খুঁজল।আন্দাজ করতে পারল পাশে তাঁর দাদী নেই।সে তাৎক্ষণিক আঁতকে উঠল।শোয়া ছেড়ে উঠে বসল।হঠাৎ করে ঘামতে শুরু করল।পুনরায় চারদিকে দেখল। কোথাও তাঁর দাদীর ছায়াও নেই। এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের আলো জ্বালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু আলো জ্বলছে না। বারবার বাল্ব জ্বালানোর জন্য সুইচ চাপল, কিন্তু বাল্ব জ্বলল না। চারপাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা। অদ্ভুত ব্যাপার কারন,সে ঘুমানোর আগে মোমবাতি জ্বালায় নি। তাহলে এখন মোমবাতি কোথা থেকে আসলো?ভুতের গল্পের বই থেকে মায়া গতকাল জানতে পেরেছে।ভূতেরা তীব্র আলো ভয় পায়।ভূত নিশ্চয়ই আলো নিভিয়ে দিয়েছে।এখন মোমবাতি জ্বলছে।
চাঁদের মৃদু আলো জানালা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করেছে।সেই আলো ধরে সে চারদিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাদু দাদু বলে ডাকল। কিন্তু তাঁর দাদুর কোন সাড়াশব্দ পেল না।আন্দাজ করল তার দাদু বাথরুমে। আন্দাজ করেও সে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। একবার ঢোক গিলল।গলা যেন অজানা কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে।ঠিক সেই মুহূর্তে বাথরুম এর ভেতর থেকে জলের শব্দ ভেসে আসল।মায়া যেন একটু স্বস্তি পেল, তাঁর দাদু বাথরুম এর ভেতরে আছে বলে।এরপর সে বাথরুম এর দিকে এগিয়ে গেল।কাঁপা গলায় ডাকল। “দাদু, তুমি কি বাথরুমে?” না’ সাড়া নেই কোন। হঠাৎ বাথরুম এর ভেতর থেকে জলের শব্দ বন্ধ হয়ে গেল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মায়া ধীর স্থির পায়ে বাথরুম এর দিকে এগিয়ে গেল।বাথরুম এর দরজা আগে থেকেই খোলা।মায়া এবার যেন ভয়ে চুপসে গেল। কপালে ঘাম জমেছে।মায়া ঢোক গিলে মর্মাহত কন্ঠে বলল “দাদু, তুমি কি বাথরুমে?”
ওপাশ নিস্তব্ধ।বাথরুম এর ভেতর থেকে কারো জবাব না এসে পুনরায় জলের শব্দ এলো। মায়া হকচকিয়ে উঠল।সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দরজাটা পুরো খুলল।বালতি ভরে জল নিচে গড়িয়ে পড়ছে।ভেতরে কেউ নেই।এমন দৃশ্য মায়াকে নাড়িয়ে তুলল। মুখ চেপে ধরে ভয়ে চুপসে পেছনে সরতে থাকে।ঠিক তখনই পেছনে কারো সাথে ধাক্কা লাগল।মায়া আ.. শব্দে চেঁচিয়ে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখল তাঁর দাদু দাঁড়িয়ে আছে। জয়ন্তন বিবি বলল “তুই এত রাইতে না ঘুমাইয়া হাটতেছোছ কেন”
মায়া চোখ কুঁচকে তাকিয়ে রইল জয়ন্তন বেগম এর দিকে।সে যখন রাতে ঘুমিয়েছিল তখন তার পরনে একটা ধূসর রঙের কাপড় ছিল।বয়স হলেও যেন তাঁর রংঢং এখনও যায়নি। কিন্তু এখন সে মায়ার সামনে সাদা রঙের কাপড় পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মায়া কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল “তু..তু তুমি সাদা রঙের কাপড়ে কেন?
জয়ন্তন বেগম সশব্দে হেসে উঠলো। তাঁর হাঁসি দেখে মায়া নিশ্চুপ রইল। জয়ন্তন বেগম হাঁসি থামিয়ে বলল “চল আমার লগে”
“কোথায়?
“প্রাসাদে”
“কোন প্রাসাদে?
“তুই না সবসময় কইতি,দাদু আমারে ঐ পশ্চিমের নীরব প্রাসাদে লইয়া যাও,চল আইজ লইয়া যামু”
মায়া নাকোচ করল। কিন্তু জয়ন্তন মায়ার কথা না শুনে তাঁর হাত ধরে টেনে বাহিরে নিতেই ,মায়া অনুভব করল তাঁর মুখে জলের ছিটেফোঁটা পড়ছে।
মায়ার কানে তখন বাড়ির কাজের মেয়ে শেফালীর কন্ঠ ভেসে আসে। শেফালী তির্যক কন্ঠে চেঁচিয়ে বলছে “ও মেম সাহেব,ঘুম থেইকা উঠেন।কত বেলা হইয়া গেছে”
মায়া তখন লাফিয়ে উঠে বসল।খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে।মাথার উপর তাকিয়ে দেখল জোড়ে জোড়ে ফ্যান ঘুরছে। সকাল বেলা ঠান্ডা পরিবেশ। কিন্তু সে ঘামছে।সে বুঝতে পারল স্বপ্ন দেখছিল।
মায়া শেফালী কে লক্ষ্য করে বলল “শীতের মধ্যে ফ্যান চলছে কেন?
“আমি সে-ই কখন আপনার লইগা চা আনছি,আইসা দেখতেছি আপনি ঘামতেছেন,আমি ভাবলাম আপনার হয়ত গরম লাগতেছে।তাই ফ্যান ছাইরা দিছি। আপনি কইলে আমি ফ্যান বন্ধ করে দিতেছি।’দিমু?”
মায়া বলল “তো, শীতের মধ্যে কি ফ্যান এর বাতাসে আমি বরফ হব?”
শেফালী ফ্যান বন্ধ করে বলল “ফ্যান বন্ধ করছি।আর কিছু করা লাগবো?
মায়া বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল “তুই এখন ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলে যা”
আঙিনার ফোয়ারা থেকে তখন টুপটাপ জল পড়ছে, সকালে সূর্যের আলো পড়ে সেটি ঝিকমিক করছে যেন রুপোর ফোঁটা।
বটগাছের নিচে জমিদার সাহেবের বৃদ্ধ চাকর মামুদ আলি ঝাড়ু দিচ্ছে, পাথরের ফ্লোরে বৃষ্টির দাগ রোদে শুকিয়ে যাচ্ছে।ফুলবাগানে সকালবেলায় শিশিরে ভেজা গোলাপ আর বেলফুলের গন্ধে পুরো পরিবেশটা সুরভিত হয়ে আছে।
রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে দুধ ফুটানোর আওয়াজ, সঙ্গে এলাচ-লবঙ্গের গন্ধ।বেগম সাহেবা তখন নামাজ শেষে ছাদের দিকে হাঁটছেন।সাদা মসলিনে ঢাকা মাথা, হাতে তসবিহ।
তিনি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন, দূরে হুগলি নদীতে ভেসে যাচ্ছে ছোট পালতোলা নৌকা।
দাসীরা টিনের ট্রেতে করে নাস্তা সাজাচ্ছে।
চা, নানরুটি, খেজুর, আর এক ছোট বাটি সেমাই।সাথে গরুর কলিজা ভুনা।
আমজাদ চৌধুরী শীতের হাওয়ায় এক নিস্তব্ধ সকালের মাঝে শান্ত মনে বসে আছে।আলিমনগর গ্রামটির প্রায় সব ঘর কাঠের এবং ছাদের ওপর ধূলিমাখা টিন, রাস্তা ধরে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে আসা নদীর ধ্বনি, কখনো কখনো বাতাসে মিশে অনুরণন করে।সে-ই গ্রামের মাঝেই আমজাদ চৌধুরীর বিশাল এক জমিদার বাড়ি দাঁড়িয়ে। বাড়িটির চারদিকে গাছপালা। চারপাশ সবুজ রঙের ঘেরা। চৌধুরী বাড়িটির নাম এক সময় বাগানবাড়ি ছিল। বাগানবাড়ি বললেই সবাই আলিমনগর এর চৌধুরী বাড়িটি ই চিনত। আমজাদ চৌধুরী এর বাবার পছন্দ অনুযায়ী বাড়িটির প্রাকৃতিক রূপ সাজানো হয়। চারদিকে গাছগাছড়া। ফুলের গাছ,ফলের গাছ, তাঁর সাথে দোলনা।বিকেল হলেই সবাই আড্ডা জমায় বাড়িটির প্রাকৃতিক ছায়ার মাঝে। বর্তমানে সবাই চৌধুরী নিবাসন বললে চিহ্নিত করে বাড়িটি।
বাড়ির বাগানে আমন্ত্রিত অতিথি থমাস শন এর সাথে আমজাদ চৌধুরী বসে আছেন। দু’জন দু’জনের সম্মুখে বসে আছেন। মাঝখানে টেবিলে সকালের নাস্তা রাখা।চা,রুটি, সাথে থমাস এর পছন্দের খাবার গরুর কলিজা ভুনা। থমাস বাঙালিয়ানা খাবার এর মধ্যে গরুর কলিজা ভুনা বেশ পছন্দ করেন।আমজাদ চৌধুরী দীর্ঘ উনিশ বছর ব্যবসা সূত্রে থাইল্যান্ডে ছিলেন। তখন তাঁর সাথে সেই দেশের নাগরিক থমাস শন এর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আমজাদ চৌধুরীর বর্তমান বয়স আনুমানিক ষাট ছুঁই ছুঁই। এবং থমাস শন এর বয়স আটান্ন বছর। ধবধবে সাদা শরীরের উপর শীত ঠেকাতে কালো রঙের ব্লেজার জ্যাকেট পরিধান করে আছে থমাস। অন্যদিকে আমজাদ চৌধুরী মোটা শাল জড়িয়ে রেখেছেন।
থমাস শন চায়ের কাপটি টেবিলে রেখে বলল “তোমার গ্রাম সম্পর্কে আমি একটা ঘটনা শুনেছিলাম।”
“কিসের ঘটনা?
থমাস প্রত্যুত্তরে বলল “একটি প্রাসাদ নিয়ে।
প্রাসাদটির নাম ছিল “দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর। একদম গ্রামের উপরে, পাহাড়ের ঢালুতে। তার চারপাশে কালের ভাঁজে পুরনো বন, আর এমন এক গাছপালা, যার ভেতর দিয়ে বাতাসও তাড়াতাড়ি যেন যেতে চায় না। বর্ণনায় এমনটি ছিল”
আমজাদ চায়ে চুমুক দিলেন। “বর্ণনা!’ তোমাকে এমন ঘটনা কে বলেছে থমাস?” বলে মৃদু হাসল আমজাদ।
থমাস শন সরল জবাব দিল “আমি একটা বইতে পড়েছি। কিন্তু আমি ভেবেছি, আলিমনগর, এবং সাইলেন্ট ম্যানর সবকিছু কাল্পনিক। কিন্তু থাইল্যান্ডে যখন তোমার সাথে আমার পরিচয় হয় এবং তোমার ঠিকানা জানি তখন আমি নিশ্চিত হয়েছি এটি সত্য।আলিমনগর এবং সাইলেন্ট ম্যানর এর অস্তিত্ব বাস্তবে আছে।” থমাস নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলল “আলিমনগর এর অস্তিত্ব পেয়েছি, কিন্তু সেই প্রাসাদ সম্পর্কে কিছু জানি না।”
আমজাদ হেসে উড়িয়ে দিল থমাস শন এর বক্তব্য। “এসব কাল্পনিক।হয়ত, গ্রামটি আমাদের গ্রামের নামের সাথে মিলে গিয়েছে।এটা কাকতালীয়।”
থমাস শন উদ্ভ্রান্ত মনে বলল “কিন্তু আমজাদ, বইটির লেখক উল্লেখ করেছে প্রাসাদটি এক সময় অন্য রুপে ছিল।চারপাশ ঝলমলে আলোয় ভরা ছিল।সঙ্গীত আর নৃত্যের সুর গুঞ্জরিত ছিল।ফল-মিষ্টি আর সুস্বাদু ভোজের সুবাস ভেসে আসতো।অতিথিরা রঙিন পোশাকে হাসি-আনন্দে মেতে থাকত।ফুলের সাজসজ্জা, সুগন্ধি আর ঝরনার কলকল ধ্বনি মিলিয়ে দিত অন্য রকম অনুভুতি। কিন্তু সে-ই রঙিন দৃশ্য একসময় ধুলোয় রুপ নেয়। হঠাৎ যেন সবকিছু নীরব হয়ে যায়।”
থমাস থেমে একটি সিগারেট ধরাল।
আমজাদ বলল “এটি শুধুমাত্র বিনোদন এর জন্য তৈরি কৃত বই।এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।”
কিন্তু থমাসের কৌতুহল যেনো গেল না।সে সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে বলল “ লেখক আরো উল্লেখ করেন,প্রাসাদের ইতিহাস গ্রামের বড়রা শোনাতেন আড়ম্বরের সঙ্গে ভয় মিশিয়ে। কাহিনী অনুযায়ী,১৮৭০ সালে এক জমিদারের পরিবার এখানে বাস করত। তাদের মধ্যে কেউ অল্পবয়সেই অদ্ভুতভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল, কেউ আবার ছায়ার মতো আচরণ করত।
এরপর পরে ধীরে ধীরে পরিবারটি শহরে চলে যায়, আর প্রাসাদটি এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে যায়।কিন্তু গ্রামের লোকেরা বিশ্বাস করত,এখানে যে রহস্য আছে, তা এখনও অমোঘ।”
আমজাদ বলল “আমার জন্ম এখানে।বেড়ে ওঠা এখানে। সেরকম কোন ঘটনা থাকলে নিশ্চয়ই আমি জানতাম।” থেমে আবার বলল “তোমার ভেতরেও কি কোন প্রশ্ন জমেছে, দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটি নিয়ে?
থমাস শন নড়েচড়ে বসে বলল “হ্যাঁ, জমিদারের একমাত্র কন্যা ফারদিনার সাথে একটা ছেলের সম্পর্ক ছিল। ছেলেটি ছিল রাখাল।ওর সাথে জমিদারের একমাত্র কন্যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু যেদিন রাখাল বিয়ে করতে আসে, সেদিন জমিদারের চার ছেলে সন্তান, অর্থাৎ ফারদিনার ভাইয়েরা জানায় ফারদিনা রাখালের সাথে ছলনা করেছে।সে বৈদেশিক এক নাগরিক কে বিয়ে করে বিদেশ চলে গেছে। কিন্তু রাখাল খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ফারদিনা বিদেশ যায়নি। তাহলে ফারদিনা কোথায়? অনেক খুঁজেছে রাখাল। কিন্তু ফারদিনা কে আর পায়নি সে। একজন রাখালের সাথে জমিদারের কন্যার বিয়ে বিষয়টি অদ্ভুত লাগছিল আমার কাছে।বইটি এখানে শেষ হয়।”
আমজাদ হাতে একটি সিগারেট নিল।সেটি ধরিয়ে বলল “বইটির লেখকের নাম কি ?
থমাস বলল “ সুফিয়ান হায়দার।”
আমজাদ তখন বসা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল “লেখকরা লেখার মাঝে কখনো কখনো বাস্তবতা তুলে ধরে। কিন্তু লেখক কাল্পনিক মুহূর্ত গুলোকেও এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলে যেন এটি বাস্তব। তোমার ভেতরে হয়ত বইটির ঘোর থেকে গেছে।”
থমাস বলল “তুমি হয়ত ঠিক বলছো। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে,বইটি অসম্পূর্ণ কেন?লেখক বইটি সম্পুর্ন শেষ কেন করল না?”
আমজাদ বলল “উনি হয়ত শেষটা এমন ভাবেই করেছে।যাতে পাঠক বৃন্দ তাকে মনে রাখে”
“অসম্পূর্ণতা থেকে মনে রাখে কিভাবে? থমাসের বিচক্ষণ প্রশ্ন ।
আমজাদ বলল “এইযে তোমার মধ্যে যে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে, তুমি এটা নিয়ে ভাবছো, অনেক প্রশ্ন তোমার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তেমন ভাবে লেখককে মনে রেখেছো।”
থমাস কথা বাড়াল না। তাঁদের মাঝে উপস্থিত হয় মায়া।কালো রঙের থ্রিপিস পড়নে তার। ফর্সা গায়ের রঙের সাথে কালো রঙের থ্রিপিসে মানিয়েছে বেশ তাঁকে।চুল গুলো বেনুনি করা। তাঁর মুখ বেশ ফ্যাকাসে। থমাসের পাশের চেয়ারে বসল। আমজাদ মায়াকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করল “রাতে ঘুম ঠিকমতো হয়েছে তো?” আমজাদ চেয়ারে বসল।
মায়ার রাতের অদ্ভুত স্বপ্নটা মনে পড়ে। ভয়ানক স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নের সময়টা আর একটু দীর্ঘ হলে হয়ত মায়ার দম বন্ধ হয়ে আসতো।মায়া মলিন হেসে জবাব দিল “ভালো হয়েছে।”এরপর থমাসের দিকে ঘুরে তাকালো। তাঁকে প্রশ্ন করল “আঙ্কেল, আমাদের গ্রাম কেমন লাগছে আপনার কাছে?
“বেশ সুন্দর। তবে অনেকটা নিস্তব্ধ এই গ্রাম।এমন মনে হয় গ্রামটি থেকে, অমূল্য নক্ষত্র হারিয়ে গেছে।”
মায়া তাঁর মুখে এরকম কথা শুনে আমজাদ হোসেন এর দিকে তাকিয়ে বলল “বাবা, আঙ্কেল এর এরকম অনূভুতির কারণ কি, তুমি জানতে চাওনি?”
আমজাদ ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলেন। “তোমার আঙ্কেল একটি বই পড়েছে।সে বইয়ের গ্রামটির নাম আমিলনগর,বইটি অসম্পূর্ণ।তাই ওর মনে কৌতুহল জন্মেছে।”
“কি বই আঙ্কেল?” মায়া প্রশ্ন করল।
“দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’।
মায়া ভ্রু কুঞ্ছিত করে বলল “বইটি আমিও পড়েছিলাম, অসম্পূর্ণ বই। কিন্তু আমার ভেতরেও একটা প্রশ্ন জমেছে,ফারদিনা কোথায়, সে-ই রাখাল কোথায়?ফারদিনার পরিবার কোথায়?”
আমজাদ মায়াকে বিচলিত দেখে বলল “তুমি এসব বই, গল্পের চক্করে কেন পড়লে,মাথা খারাপ কর না। অযথা ফালতু জিনিস নিয়ে ভেবো না। এসবের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই।আর বাস্তবে এরকম কোন ঘটনাও ঘটেনি।”
মায়া বলল “বাবা, তোমার সাথে আমিও সহমত। কিন্তু,লেখক কেন অসম্পূর্ণ রেখেছে বইটি!”
থমাস বলল “আমিও এসব বিষয়ে ভেবেছি, কিন্তু কোন জবাব পাইনি। যাক গে,এসব বাদ দাও। তোমার পড়াশোনার খবর কি বলো? এখন কি করছো?
মায়া বলল “আমি কিছুদিন হয় বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছি। এখন চাচ্ছি শহরে চলে যাব, আমার এই গ্রাম ভালো লাগে না।একই তো শহর থেকে অনেক দূরে, তাঁর উপর নিরব।শহরে ভালো একটা চাকরি নেব, এরপর সেখানেই সেটেল হব।”
আমজাদ কিছুটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলল “তোমার বয়স কত হয়েছে, পঁচিশ বছর! বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ফিরেছো তার মানে এই নয় যে, তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নিতে উপযুক্ত হয়ে গেছো।এখনো তুমি আমার কাছে বাচ্চা।” আমজাদ থেমে গেল।থমাস কিছু বলল না। আমজাদ পুনরায় বলল “আপাতত তোমার কিছু করার দরকার নেই।গ্রামে থাকো। তোমার ভাই,দাদু,মা,সবার সাথে থেকে যাও। এদের সাথে সময় কাটালে দেখবে আর চারদিক নিরব মনে হবে না।” বলে আমজাদ ঘরের ভেতরে চলে যান।”
থমাস মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল “বাবারা এমনই হয়।”
মায়া বলল “আমি মাঝেমধ্যে বাবার আচরণে হতবাক হই।” মায়া কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বলল “আপনার বাংলা ভাষা খুব সুন্দর হয়।এত নিখুঁত ভাবে কিভাবে বলতে পারছেন?
থমাস হেসে বলল “তোমার বাবার থেকে শিখেছি।
থমাস প্রসঙ্গ পাল্টে অসম্পূর্ণ বইটি টেনে আনলো। বলল “আচ্ছা,তোমার কি মনে হয়,দ্যা সাইলেন্ট ম্যানর’ বইটি অসম্পূর্ণ কেন?
মায়া কিছু ভেবে বলল “ঠিক জানি না।বইটি আমি অনেক আগে পড়েছিলাম। লেখকের খোঁজ ও পেলাম না।”
“কোথায় খোঁজ করেছো?
“অনেক প্রকাশকদের সাথে কথা বলে। ওনারা সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল,লেখক সুফিয়ান হায়দার শুধুমাত্র একটি বই লিখেছিল।এরপর আর তাঁর খোঁজ পায়নি কেউ।”
থমাস বলল “বিষয়টি রহস্যজনক। তবে এসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।আমি আর আমজাদ শহরের দিকে যাব।আসছি।” বলে থমাস ঘরের দিকে চলে যায়। এতক্ষণ তাদের কথোপকথন দোতলার বারান্দা থেকে লক্ষ্য করছিল জয়ন্তন বেগম। তিনি একদৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মায়ার ও চোখ পড়ে তাঁর দিকে। জয়ন্তন এর সাথে চোখে চোখ পড়তেই জয়ন্তন ঘরের ভেতরে চলে যায়।
মায়া বিড়বিড় করে বলল “অদ্ভুত।”
জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে শীত যেন সবাইকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে।দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে মায়া হঠাৎ যেন বিষন্নতায় পড়ে। তাঁর ইচ্ছা করছে আশেপাশের প্রকৃতি উপভোগ করতে। জায়গাটা বেশ ঝিমঝিম হলেও তাঁর ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না।ঘরের বাইরে বের হলে মন ভালো হবে। মায়া পোশাক বদলে নেয়। থ্রিপিস ছেড়ে শিকারী পোশাক পড়ে নেয়। এরপর সকলের চোখ এড়িয়ে তাঁর অশ্ব নিয়ে চলে যায় উত্তর পাড়ায়।
চৌধুরী নিবাসন থেকে উত্তর পাড়া অনেক টা দূরে। উত্তর পাড়ায় অবস্থিত একটি নদী।মায়া সেখানে গিয়ে থামে। নদীর অপরপ্রান্তে কুয়াশা।শীত পর্যাপ্ত হওয়াতে সূর্যের দেখা নেই। অপরপ্রান্তর কুয়াশা থেকে যেন মৃদু হাওয়া ভেসে আসছে। সেই হাওয়াতে মায়ার চুল উড়ে গেল।সে প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করে শান্তি অনুভব করছে।গ্রামে আসার পর থেকে অস্থির হয়ে গিয়েছিল কখন সে শহরে যাবে,এই গ্রাম বড়ই অদ্ভুত বিচিত্র নিয়ে নিস্তব্ধ। কিন্তু এখন মায়ার মনে হচ্ছে গ্রামটি আসলে সুন্দর। শহরের গাড়ির হর্ন,নিয়ম মেনে চলার থেকে স্বাধীন ভাবে গ্রামে থাকা অতি উত্তম ।
মায়া অশ্ব ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। তখন কিছু মাঝিরা মায়াকে দেখে। তাঁরা মায়াকে লক্ষ্য করে চেঁচিয়ে বলে “জমিদারের কন্যা,তোমারে দেইখাই চিনছি,এই ভরা দুপুর বেলা এইহানে বেশিক্ষণ থাইকো না।” মায়া তাঁদের কথা এড়িয়ে গেল। এরপর ধীরে ধীরে নদীর তীরের দিকে এগোলো। নদীর স্রোত বইছে কলকল শব্দে।মায়া স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করল।এ শব্দ বহুদিন এর অপরিচিত।
নদীর কিছুটা দূরে অবস্থিত জঙ্গল। জঙ্গলে ঝোপঝাড় এর থেকে বেশী মৃত গাছ ছড়িয়ে আছে।বলা হয় এই জঙ্গলে হরিণ বসবাস করে।শুনেছিল, তবে বিশ্বাস করেনি।ঠিক তখনই জঙ্গলের ভেতর থেকে বাঁশির সুর ভেসে আসে। মায়া থমকে গেল হঠাৎ বাঁশির সুরে। ঘুরে তাকাল জঙ্গলের দিকে। কিন্তু কোথাও কোন মানুষের ছায়া অবধি দেখা গেল না। একবার মাঝিদের দিকে দেখল, তারা নদীর মাঝ অবধি চলে গেছে।
মায়া কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করল সুরটি।সুরটি জঙ্গলের ভেতর থেকে আসছে। তাঁর ভয় ও হল, কিন্তু দিনের আলোয় ভয়টা তাকে তীব্র ভাবে জড়িয়ে নিতে পারল না।সে জঙ্গলের দিকে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে।
মায়া অশ্ব পৃষ্ঠে চেপে বসে। এরপর সুর ধরে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু যতই জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে ততোই সুরটি যেন থেমে যাচ্ছে।
নিস্তব্ধ পরিবেশে চারদিক এক ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে।মায়ার ভেতর ভয় জেগে উঠলেও অদ্ভুত সেই বাঁশির সুর যেন তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।সে জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করে। ততক্ষণে বাঁশির সুর টা থেমে যায়।সে স্তব্ধ হয়ে গেল। চারদিকে তাকাল। কোথাও কাউকে দেখছে না। অশ্ব থেকে নেমে দাঁড়ায়। হেঁটে হেঁটে এদিক সেদিক গেল।কাউকে সে দেখতে পেল না।মায়া ভাবছে এটা তার মনের ভুল ছিল।সে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।পুনরায় অশ্বের কাছে আসতে চাইলে তাঁর সামনে একটা সা’প পড়ল। সা’পটি তাঁর দিকে ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাপটি ফেনা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।মায়ার পায়ের তলার মাটি যেন তখন সরে গেল। সা’পটি থেকে তার দূরত্ব তিন থেকে চার হাত।সাপটির ফেনা দেখে মনে হচ্ছে তাদের মধ্যে বহুদিন এর শত্রুতা।তখন সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য উল্টো দিকে দৌড় দিল। বি’ষাক্ত সাপটি তাকে ধাওয়া করছে। কিছুদূর যেতেই মায়া অজানা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পাশে পড়ে যায়।পড়ে গিয়ে পায়ে তীব্র আঘাত পেয়ে কঁকিয়ে উঠলো । এরপর ঘুরে তাকালো পেছনে। অচেনা এক যুবক তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা এবং সুসম দেহের অধিকারী সে।বেশ লম্বা চওড়া পেশীবহুল যুবক।পায়ে বুট জুতো,পরনে কালো প্যান্ট এর সাথে সাদা রঙের শার্ট। তার উপরে শিকারির পোশাক। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে পাগড়ির আঁচল দিয়ে তার মুখ ঢাকা। যুবকটি মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। কিন্তু মায়া হা হয়ে তাকিয়ে রইল।এই জঙ্গলে যুবক!নাকি যুবক রুপী জ্বীন!’
যুবকটি তখন বা হাতে তুরি মেরে মায়ার ভাবনা ভাঙ্গিয়ে দিয়ে বলল “ময়লার স্তূপে তুমি কি এভাবে পড়ে থাকবে?”
যুবকটির কন্ঠ একটি সুরের মত ভেসে আসল।মায়া একবার ঢোক গিলে আস্তেধীরে বলল “সা’প”
যুবকটি তখন পেছন ঘুরে দেখল আসলেই একটি সা’প। এরপর কিছুটা হেঁয়ালিপূর্ণ ভাবে সাপটির দিকে তাকিয়ে বলল “তুই নিশ্চয়ই নাগ,তোর নাগীন কে এতদিন পর পেয়ে তাড়া করছিস! মেয়েরা এমনি হয়, ওঁরা নতুন কাউকে পেলে প্রাক্তন এর লেজে পা দিয়ে অন্য কারো কাছে চলে যায়।তুই নিশ্চয়ই এটা সহ্য করতে পারিসনি,তাই ওকে ধাওয়া করছিস”! বলে আওয়াজ করে হেসে উঠলো।মায়া তখন রাগে গজগজ করতে লাগল।যুবকটি হাঁসি থামিয়ে মায়ার দিকে ঘুরল। মায়া রাগে লাল হয়ে তাকিয়ে আছে।যুবকটির চোখের দিকে তার দৃষ্টি। তাঁর চোখ ব্যতীত কিছুই দেখা যাচ্ছে না।মায়া মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালো।
যুবকটি মায়াকে লক্ষ্য করে বলল “কিছু বলতে চাইছো নিশ্চয়ই,বলো আমি শুনছি।”
মায়া ক্রোধের স্বরে বলল “একটা মেয়ে বিপদে পড়েছে,আর আপনি সাহায্য না করে তামাশা করছেন? ছিঃ’”
বলে সা’পটি কে অতিক্রম করে যেতেই সা’পটি ফোঁস করে উঠল। যুবকটি মায়ার হাত ধরে টেনে পেছনে সরিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল “এই মেয়ে শোনো, মেয়েদের নিয়ে তামাশা করার ইচ্ছা আমার নেই।বলে পুনরায় মায়ার হাত ধরে সা’পটির পাশ থেকে নিয়ে চলে গেল অশ্বের কাছে।মায়া পাশ থেকে শুধু চেয়ে রইল যুবকটির দিকে। অশ্বের কাছে পৌঁছে যুবকটি বলল “তোমার হাত ধরার জন্য দুঃখিত। কিন্তু তুমি সা’পটিকে দেখে দৌড়ালে কেন’ তুমি কি ওকে আঘাত করেছো?
“আঘাত করলে তো ছোবল ই দিত।” বলল মায়া।
যুবকটি তখন বলল “শোনো মেয়ে, পুলিশ দেখে দৌড়ালে পুলিশ মনে করে আসামি,আর সাপ থেকে অস্থির হলে কিংবা ছোটাছুটি করলে ও ভাবে তুমি ওর বাচ্চাদের নিতে চাইছো।তাই ও আক্রমণ করতে চায়।”
মায়া নিরুত্তর।সে এখনো বিভ্রান্ত। তাঁর সামনে দাঁড়ানো মানুষ না জ্বীন!’ মায়া তখন কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল যুবকটি কে “আপনি কিছুক্ষণ আগে এখানে বসে বাঁশি বাজিয়েছেন?
যুবকটি জবাব দিল “না।আমি বাঁশির সুর ধরতে পারি না।আর আমার কাছে তো কোন বাঁশিও নেই।” মায়া যুবকটি কে পর্যবেক্ষণ করে দেখল।তাঁর কাছে বাঁশি নেই।
যুবকটি তাঁর অশ্বের কাছে চলে গেল। তাঁর অশ্ব নিয়ে ফিরে এলো মায়ার কাছে। এরপর মশকরা করে বলল “জ্বীনেরা বোধহয় বাঁশি বাজিয়েছে।এখান থেকে চলো তাড়াতাড়ি।” কিন্তু মায়া পায়ের ব্যথার জন্য অশ্বের পৃষ্ঠায় উঠতে পারল না। যুবকটি তাঁর অশ্ব থেকে নেমে মায়ার কাছে আসে। এরপর তাঁর অশ্বের কাছে হাঁটু ভাঁজ করে বসে বলল “ঐ পা দিয়ে আমার হাঁটুর উপরে ভর দিয়ে উঠে বসো।”
মায়া কিঞ্চিত ইতস্তত বোধ করল। তখন যুবকটি পুনরায় বলল “দেরী করছো কেন! তাড়াতাড়ি কর, জায়গাটি সুবিধের নয়। উঠে বসো।” মায়া উঠে বসে অশ্ব পৃষ্ঠে।
তাঁরা জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসে। যুবকটি আগে আগে গেলে মায়া পেছন থেকে ডেকে দাঁড় করিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল “আপনার নাম কি?”
যুবকটি জবাব দিল “মীর জাফান শন।”
