প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ২
নওরিন কবির তিশা

“চোখ কি কপালে তুলে গাড়ি চালান?কানা লোক কোথাকারের! আল্লাহই জানে এদেরকে কে যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়! আমার কোমরটা মনে হয় একদমই গেল!”
ক্ষিপ্ত বাঘিনী ন্যায় ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই থামল তিহু।সে যাচ্ছিল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে,এমনিতেই আজ ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে তার,তার উপর ভার্সিটি থেকে মিনিট দশেকের দূরত্বের একটা স্থানে ফাঁকা রাস্তা দেখে,যখন অতি দ্রুত স্কুটি চালাতে ব্যস্ত সে তৎক্ষণাৎ কোত্থেকে জানি এক বিশালাকার গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে একপ্রকার উল্টে দিলো তার স্কুটিটা।
স্কুটিটির নিচে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচেছে সে,যদিও সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষার দরুন তত একটা ক্ষতি হয়নি তার,তবুও শখের স্কুটির এমন হাল দেখে, মেজাজ সামলাতে পারল না তিহু।

অন্যদিকে আজ একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লায়েন্ট মিটিং থাকায় একটু সকাল সকালই নীল বেরিয়ে ছিল অফিসের উদ্দেশ্যে।সাধারণত এই সময়টাতে এই প্রান্তের রাস্তাটা ‌প্রায় জনমানবহীন থাকে। তাই ড্রাইভার আসিফ তত একটা খেয়াল না করে কোনোরকম সারা শব্দ ব্যতীতই এই পথে গাড়ি অতিপ্রসন্ন চিত্তে নিজের ইচ্ছামত স্পিডে চালাচ্ছিল। যার দরুণ এমন একটা অঘটন ঘটল। ভেসে আসা সেই নারী কন্ঠে দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো নীল।
তিহু:“কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?বের হন গাড়ি থেকে ‌ এক্ষুনি! নয়তো এই নুরাইন হক আপনার এত দামি গাড়ির বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে বলে দিলাম!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা বলতে বলতেই একবার সামনে তাকায় তিহু। পলকেই নিঃশ্বাস আটকে আসে তার,যেন কোনো গ্রিক দেবতাকে হঠাৎ কোনো সাদা-কালো ক্যানভাসে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে।তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে এক পুরুষ, উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুট, যার সুঠাম বলিষ্ঠ দেহ যেন শিল্পীর হাতে নিপুণভাবে গড়া।
পুরুষটির পরনে শুভ্র শার্টের ওপর কালো ব্লেজার, একেবারে ফরমাল গেট আপ,তবে তার চোখের কালো রোদ চশমাটা তাকে আরো বেশি ডমিনেটিং করে তুলছে।যাক হোক তিহু কি দমবার পাত্রী নাকি? হোক সে গ্রীক করে মতো দেখতে অথবা স্বয়ং গ্রীক গড নিজেই,তিহুর কিছুই আসে যায় না, সে শুধু জানে এই লোকটা তার স্কুটির অবস্থা খারাপ করেছে। সে সামনে থাকা লোকটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, দু কদম এগিয়ে এসে লোকটার চোখে চোখ রেখে বলল,,

——“আপনার কি চোখের সমস্যা আছে? আর সমস্যা যদি থেকে থাকে তবে চোখের ডাক্তার দেখান, নিজে সমস্যা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে অন্য মানুষের সমস্যার কারণ হওয়ার কি মানে?”
নীল কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই তিহু আবার বললো,,
——“এইযে শুনুন মিস্টার, আমি খুব ভালো করেই জানি, আপনি এখন কি বলবেন।যে সরি,আর হবে না, ভুল হয়ে গিছে, আমি দেখতে পারি নাই,এসবই তো? শুনুন মিস্টার কালা চশমা, আপনি আমার গাড়ির ক্ষতি করেছেন তাই জরিমানা তো অবশ্যই দিতে হবে! কোনো কথায় কাজ হবে না, নয়তো আমিও আপনার এত সুন্দর দামি গাড়িটার কাঁচ ভেঙে বলব;সরি,দেখতে পারি নাই!”
তার এমন কথোপকথনের মাঝে হঠাৎই গাড়ি থেকে নেমে আসে আসিফ। নীলের সাথে এমন রুক্ষ ব্যবহারকারী মেয়েটাকে,শাসিয়ে সে বলে,,,

——“এই মেয়ে এই! জানো উনি কে? উনি নীল খান! তাই মুখ সামলিয়ে কথা বলো!”
তিহুর মেজাজ এবার সত্যি সত্যিই বিগড়ে গেল। একে তো লোকটা তার গাড়ির ক্ষতি করেছে,তার উপর আবার এত বড় বড় কথা!সে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো,,
——“উনি লাল,নীল,হলুদ,কমলা যে খানই হোক না কেন, আই ডোন্ট কেয়ার! উনি আমার স্কুটির ক্ষতি করেছে,সো ফাইন না দিয়ে ওনাকে আমি এখান থেকে এক চুলও নড়তে দিব না!”
এদিকে নীল অভিভূত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেয়েটির পানে। মেয়েটির এত সাহস? বারংবার অবাক হচ্ছে সে!যেখানে কোনো মেয়ে কি? এলাকার বড় বড় গ্যাংস্টাররাও তার নামে কাঁপে, সেখানে এইটুকু পুচকি সাইজের মেয়ে,তার সামনে দাঁড়িয়েই তাকে এত বড় বড় কথা বলছে! বাঁকা হাসলো নীল! অতঃপর আসিফকে হাতের ইশারায় থামিয়ে সে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল,,

——“What do you want as a penalty?”
তিহু:“আপাতত আমার আপনার গাড়িটা ভেঙে দিতে ইচ্ছা করছে!ভেঙে দেই?”
মেয়েটির এমন কথা আর নীলের এমন নিলিপ্ততায় বেশ ভয় হলো আসিফের।নীল যে শর্ট টেম্পারড তাতে এখন যদি এই মেয়েটার কিছু করে ফেলে, তাহলে কি হবে?সে ভয়ে ভয়ে মেয়েটির দিকে ফিরে বলল,,
——“এই মেয়ে কি বলছো? মাথা ঠিক আছে তোমার!”
তিহু:“বিশ্বাস করেন, বিগত ১০ মিনিট আগেও আমার মাথা একদম ঠিক ছিল, কিন্তু যখন আপনার,কি বললেন জানি? নীল না লাল খান? যাই হোক উনি আমার স্কুটিটাকে ওনার ওই বিশাল আকৃতির দানব গাড়িটা দিয়ে ধাক্কা দিয়েছে না তখন থেকেই, মেজাজ আমার চান্দের দেশে!”
নীল:“এজ ইউর উইস, ইউ ক্যান ব্রেক মাই কার!”
তিহু আসিফের সাথে কথা থামিয়ে, নীলের দিকে ফিরে বাম ভ্রুটা সামান্য নাচালো, অতঃপর চোখ দুইটায় একরকম শয়তানি ভাব এনে বলল,,

——“আর ইউ শিওর?”
নীল: “আলওয়েজ!”
এদিকে তাদের এমন কথোপকথনে পরান পাখি উড়াল দেওয়ার মত অবস্থা আসিফের। সে মনে মনে আল্লাহ, আল্লাহ করছে যেনো নীল এখানে কোনো অঘটন না ঘটিয়ে বসে। তিহু বাঁকা হেসে, কিছু করতে যাওয়ার আগেই তার মনে পড়ল, আপাতত ভার্সিটিতে যাওয়াটাই বেশি ইম্পরট্যান্ট কারণ আজকে সপ্তাহের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস। তাই সে নীলের উদ্দেশ্যে বলল,,
——“আপাতত আমার কাছে অতো ফালতু সময় নেই যে আপনার এই, দামড়া গাড়ি আমি ভাঙবো! তাই আপনি আমার স্কুটিটা সারানোর ব্যবস্থা করুন।”
আসিফ যেন হাত ছেড়ে বাঁচলো। সে দ্রুত নীলের দিকে ফিরে বলল,,

——“ভাই এখানে পাশেই একটা ভালো গ্যারেজ আছে আমার পরিচিত। আমি গেলে এক্ষুনি ঠিক করে দেবে।”
নীল তাকে চোখের ইশারা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, স্কুটিটা নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করল আসিফ। উদ্দেশ্য গ্যারেজে যাওয়া, তবে তার আগে মনে করে তিহুর কাছ থেকে তার বাসার ঠিকানাটা নিয়ে গেল আসিফ যাতে, স্কুটি ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দিতে পারে।
এদিকে আসিফ যাওয়ার সাথে সাথে নীল যেইনা গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তৎক্ষণাৎ পিছন থেকে তিহু বলল,,

——“আপনি কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার লাল সাহেব! আপনি চলে গেলে আমাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আসবে কে? উহু, এখন একদমই বলবেন না যে আপনার টাইম নেই। আপনি আমার পাক্কা তিরিশ মিনিট লেট করিয়েছেন। সো এখন আমাকে ভার্সিটিতে আপনিই পৌঁছে দিয়ে আসবেন!”
নীল বারংবার অবাক হচ্ছে মেয়েটির এমন ব্যবহারে। শেষ পর্যন্ত কিনা মেয়েটি তার নামটাও বিকৃত করল। মেজাজ সামলাতে ভাসমান শিরার পেশিবহুল হাতটা শক্ত হলো তার।চোয়াল শক্ত করে গাড়িতে উঠে মেয়েটির উদ্দেশ্যে সে বলল,,
——“ওঠো!”
তিহুও এক বাঁকা হাসি হেসে মনে মনে বলল,,,
——“পথে আসো চান্দু! আমারে না নিয়ে যাবা কই!”
গাড়িতে উঠে বসলো সে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সর্বোচ্চ স্পিডে সেটি চালাতে শুরু করলো নীল।

গাড়ি এসে থামল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল’-এর দিকের প্রধান ফটকের সামনে। হঠাৎ ব্রেকের কারণে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল তিহু। বাইরে তাকিয়ে সে দেখতে পেল সামনে দৃশ্যমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। একবার নীলের দিকে তাকালো সে, নিলিপ্ত ভঙ্গিমায় ড্রাইভিং সিটে বসে আছে নীল। তিহু বের হয়ে যাওয়ার আগে আরেকবার বলল,,,
——“ধন্যবাদ মিস্টার লাল সাহেব! যদিও ধন্যবাদটা আপনার আমাকে দেওয়া উচিত কেননা আমি আপনার গাড়ি এখনো ঠিক রেখেছি। হোয়াট এভার, আমি আবার একটু নরম মনের মানুষ কিনা, তাই আপনাকে থ্যাংক ইউ বললাম। আর হ্যাঁ মনে করে আমার স্কুটিটা, বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন!”
কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল, তিহু। নীলের চোখ মুখে যেন আগ্নেয়গিরির উদগীরণ ঘটেছে। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঝরে পড়ছে তার কালো রোদ চশমার নিচের নীলাভ চোখ দুটি দিয়ে।

ভার্সিটির ক্লাস শেষে, আইন অনুষদের এলাকা পেরিয়ে, তিহু আর মাহা এগিয়ে যাচ্ছে কার্জন হলের দিকে। উদ্দেশ্য বাসায় ফেরা। একই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে তারা দুজনে। হঠাৎই মাহা বললো,,
——“তোকে তো আমি সেই কোন সকালে ফোন করেছিলাম!তাও এত দেরি করে আসলি কেন?”
তিহু:“কা’নি’র কা’নি, তুই আর আমি কি আলাদা বাসায় থাকি? একই বাসায় একই ফ্ল্যাটের একই রুমে থাকি আমরা তারপরেও ভার্সিটিতে এসে আমাকে ফোন করেছিলে কেন?”
মাহা:“ভাষা ঠিক কর ছেড়ি! আর তুই তো পড়ে পড়ে মষের মত ঘুমাচ্ছিলি, আমারও ঠিক খেয়াল ছিল না যে আজকে ইম্পরট্যান্ট ক্লাসটা আছে। তাই আর তোকে ডাকিনি।”
তারা হাঁটতে লাগলো। মাহা ফের বলল,,,
‌ ——“কিরে বললি না তো? দেরি হল কেন? আর তোর স্কুটি কই?”
স্কুটির কথা মনে পড়তেই কপাল সামান্য কুঁচকালো তিহু।
——“আরে আর বলিস না। কোত্থেকে এক আ’বা’ল লোক এসে, আমার স্কুটিটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে! যাইহোক ও লোককে এত টাইট দিয়েছিনা! জীবনে আর কখনো অসাবধানে গাড়ি চালাতে গেলেও দশবার ভাববে আমার কথা।”
মাহা:“তারপর? তোর কোথাও লাগেনি তো? আর স্কুটি টা কই?”
তিহু:“না না সেভাবে লাগেনি, শুধু ওই স্কুটিটা আমার ওপরে পড়েছিল বলে একটু ব্যাথা লেগেছিল আর হাতটা একটু ছিলে গিয়েছে, নাথিং এলস। আর স্কুটিটা ঐ আ’বা’ল লোকের এক সহচর বলেছে রাতের মধ্যে পাঠিয়ে দিবে, সারাই করে।”
মাহা:“আচ্ছা চল। বাসায় গিয়ে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিচ্ছি।”

🎶চুমকি চলেছে একা পথে….
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে……
হার মেনেছে দিনের আলো…..
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো…..
ওও…ওও সুন্দরী চলেছে একা পথেএএএএ….🎶
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তিহু আর মাহা। হঠাৎই রাস্তার পাশের কিছু বখাটের এমন গানের থমকালো তারা। তিহু তাদের দেখে ফিরে বলল,,

——“ও নাইস সং। আই লাইক ইট!”
বখাটেগুলো হেসে একযোগে বলল,,
——“ওহ আগুন সুন্দরী…!”
এদিকে বখাটে গুলোর এমন সম্বোধনে মেজাজ সপ্তমে চড়ে গিয়েছে মাহার। দাঁতের দাঁত চেপে তিহুর হাতটা শক্তভাবে চেপে ধরেছে সে।তিহু মাহা দিকে ফিরে চোখের ইশারায় বলল,,
——“কুল বেবি!”
অতঃপর বখাটে গুলোর দিকে এগিয়ে গেল সে। একটু অন্যরকম স্টাইলে হেসে বলল,,,
——“আই রিয়েলি লাইক দিস সং,বাট গানটা না শিল্পীর কন্ঠে মানায়, রাস্তার পাশের কুকুরগুলোর ঘেউ ঘেউয়ে কানে যন্ত্রণা ব্যতীত আর কিছুই হয় না।”
বখাটে গুলো তিহুর এমন ঠান্ডা মস্তিষ্কের অপমান মুহূর্তেই বুঝে ফেলল। তবে তাদেরকে লজ্জা পেতে আছে নাকি? নির্লজ্জ-বেহায়ার দল বলল,,,
——“তুমি কি আমাদের অপমান করার চেষ্টা করলে আগুন সুন্দরী?”
তিহু:“একদমই না! আমিতো সরাসরি অপমানই করলাম!যদিও কুকুরকে কুকুর বললে কুকুরের অসম্মান হয় কিনা আমার জানা নেই!”

এবার আর কে সামলাবে তাদের। বখাটে গুলো একসাথে খেপে বলল উঠে,,
——“মুখ সামলে কথা বল। না হলে কিন্তু তোর ওই সুন্দর মুখটা কালকে সকালে আর কাউকে দেখাতে পারবি না।”
তিহু:“আরে যা শা’লা, আমার ছোটবেলায় কুকুরের কামড়ানির ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। অতি সভ্য মেয়ে ছিলাম তো! যাই হোক, তোদের মতো কুকুরকে যদি ভয় পেতাম না তাহলে এই ঢাকা শহরে টিকতে পারতাম না!”
বখাটে গুলো তার দিকে তেড়ে আসতে গেলেই রাস্তার পাশের পড়ে থাকা একটা লাঠি নিয়ে তাদের মধ্যকার লিডার টাইপ একটার মাথায় সজোরে আঘাত করল তিহু। বাদ বাকি সবাই হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। একটা ছেলে তার দিকে তেড়ে আসতে গেলেই মাহা পাশ থেকে আরেকটা লাঠি নিয়ে সেই ছেলেটার মাথায়ও দিলো সজোরে এক বাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় কুকিয়ে নিচে বসে পড়লো, ছেলেটা।আঘাতপ্রাপ্ত স্থান থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
রীতিমত একটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে স্থানটা।ঠিক তখনই সেখান দিয়ে যাচ্ছিল একটা পুলিশের জিপ। রাস্তার পাশে এমন মারামারি হতে দেখে থামলো তারা। দুইজন পুলিশ বের হয়ে এসে তিহু আর মাহাকে ধরতে যেতেই তিহু বলে উঠলো,,

——“আমাকে পরে ধরবেন ম্যাম, আগে আপনার ফোনটা দিন। আসলে আমার ফোনটা বাসায় থেকে গিয়েছে তো। আমার শশুর আব্বা জানকে একটা কল করবো আর কি।”
পুলিশের কনস্টেবলটি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো তিহুর দিকে।বলল,,
——“শশুর মানে?”
তিহু:“শ্বশুর মানে শশুর! ওহ না বললে আবার চিনবেন কি করে? এমপি ওয়ালিদ খানকে চেনেন?আমি ওনার একমাত্র ছেলের ফিওন্সি। সেও একটু জানুক তার এলাকাতেই তার ছেলের হবু বউ কিভাবে হ্যারাসমেন্টের স্বীকার হচ্ছে। যেখানে ফাস্টে তাকেই উত্ত্যক্ত করা হয়েছে! কি হলো দিন!”
ওয়ালিদ খানের নাম শুনতেই মহিলা কনস্টেবলটি দ্রুত জীপের মধ্যে বসে থাকা পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়ে কি একটা জানি বলল। মুহূর্তেই সেখান থেকে নেমে আসলো অফিসারটি। তিহুর উদ্দেশ্যে সে বলল,,

——“মামা বাড়ির মোয়া পেয়েছো? বললেই হলো তুমি ওয়ালিদ খানের ছেলের বউ!”
তিহু:“আসলেও আব্বুর বুদ্ধি আছে বলতে হবে, তিনিতো চেয়েছিল যাতে তার ছেলের সাথে বিয়ের আগে কেউ আমাকে না চিনুক আর ঠিক সেটাই হচ্ছে। বাই দা ওয়ে আপনাদের যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে ফোনটা আমাকে দিন না আমি জাস্ট ‌একটু ফোনই করবো।”
কি জানি কি ভেবে অফিসারটি বলল,,
——“না না উনি ব্যস্ত মানুষ ওনাকে ফোন করে আর কেন জ্বালাতন করবা। ব্যাপারটা আমরাই সামলে নিচ্ছি। বলো তোমাদের কে কে ডিস্টার্ব করেছে?”
তিহু বখাটে গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,,
——“এরা সবাই!”
অফিসারটি তিহুকে আশস্থ করে বলল,,
——“ব্যাপারনা মামনি, তোমরা যাও আমরা সামলে নিচ্ছি!”
তিহু:“ওকে যখন আব্বুর কাছে কল দিতে দিলেন না তাহলে আপনারাই দেখে নিন ব্যাপারটা। আর খেয়াল রাখবেন ওরা ‌একটাও যেন শাস্তি থেকে বঞ্চিত না হয়!”
অফিসারটি মাথা নাঁড়িয়ে জানালো,,
——“আচ্ছা!”
অতি দ্রুতই সেখান থেকে প্রস্থান করল দুই রমনী।

সবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাইন্ট কনফারেন্স শেষ করে, নিজেদের অফিস ভবনের দোতলার সুবিশাল কেবিনের সোফাটাতে শরীর এলিয়ে দিয়েছে নীল।হাতে থাকা ক্রিস্টালের বলটি অনবরত ঘুরিয়ে চলেছে সে। বারংবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই ক্ষিপ্ত রমণীর সাহসী গর্জন।
স্মৃতির পাতায় দোলা দিচ্ছে রমনীটির দেওয়া নাম,,“মিস্টার লাল সাহেব!”চোয়াল মুখ শক্ত করে বসে আছে নীল। হঠাৎই কেবিনে প্রবেশ করল তার পিএ আইয়াজ এহসান। আইয়াজকে দেখেই নীল বলল,,
——“আই নিড সাম ইনফরমেশন আইয়াজ । ফার্স্ট!”
আইয়াজ এগিয়ে এসে বলল,,,
——“কি ইনফরমেশন স্যার?”
নীল:“আসিফের কাছে একটা এড্রেস আছে, ওই অ্যাড্রেসে তুমি যাবে স্কুটি নিয়ে, আসিফ না।গট ইট!”
আইয়াজ অবাক হয়ে তাকালো নীলের দিকে। সে তো এসেছিল কিছু ফাইল নীলকে দেখাতে। কিন্তু নীল এসব স্কুটির কথা?এড্রেসের কথা?কি বলছে্? কিছু না বোঝা সত্ত্বেও কোনো প্রশ্ন করলে না আইয়াজ। বাধ্য ছেলের মত মাথা নাড়িয়ে সে বলল,,,
——“ওকে স্যার!”
প্রত্যুত্তরে এক অদ্ভুত রকম বাঁকা হাসলো নীল।

ফ্ল্যাটে আসার পর থেকেই তিহু লক্ষ্য করছে মাহা অন্যরকম ভঙ্গিমায়,চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
তিহু:“ব্যাপার কি রে মাহু?এমনে তাকায় আছোস কেন? আমার কি চেহারা সুন্দর হইছে নাকি?”
সে দ্রুত ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নাটা সামনে দাঁড়িয়ে, মুখে হাত দিয়ে বলল,,
——“না,না যেমন ছিলাম তেমনই তো আছি!”
তারপর সে মাহার দিকে ফিরে বলল,,
———“তয়? এখনো কি দেখিস?”
মাহা:“দেখছি যে,আমি কত বড় ভন্ডের সাথে থাকি!”
তিহু চোখ সরু করে বলল,,,
‌ ——“মানে?”
মাহা:“এমপির ছেলের বিয়ে কবে ঠিক হলো রে? আচ্ছা থাক। আচ্ছা তুই আমাকে এটা বল যে এমপির ছেলের নাম কি?”
তিহু হেসে বলল,,,

——“ওহ এই ব্যাপার! তখন যদি আমি এমপির ছেলের কথা বুদ্ধি করে না বলতাম,তাহলে এতক্ষণে লাল দালানের মধ্যে থাকতে হতো,বেবজ।”
মাহা:“তুই আর তোর বুদ্ধি! তা এমন উদ্ভট-বুদ্ধি হঠাৎ করে ‌তোর মাথায় এলো কোত্থেকে?”
তিহু:“এমনিই!হঠাৎ পাশের দেয়ালে লাগানো এক পোস্টারে তাকিয়ে দেখলাম, এমপির ছবি, তখনই হুট করে মাথায় আসলো। আর এমনিতেই কিছুদিন পরেই ইলেকশন, তো, ওই নির্জীব পোস্টার আর তার মালিক কোনো কাজে তো আসুক আমাদের। নাকি?”
মাহা:“অফিসারটা যদি তোর থেকে, নাম্বারটা চাইতো তাহলে?”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ১

তিহু:“কাম অন মাহু, এত কিছু ভাবলে কি আর তখন ওই বুদ্ধিটা মাথায় আসতো?”
মাহা:“ওরে ভন্ড রে, তুই যে লোকের কথা বলেছিস না এমপির ছেলে? তুই কি জানিস ওনি কি পরিমাণ ফেমাস পার্সন? আমি তো ঢাকায় আসার আগেই মামার কাছে ওই লোকের নাম শুনেছি, ওয়াহাজ খান সম্ভবত। এখন যদি এই কথা ওই লোকের শোনে,যে তুই ওনার পরিচয় ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছিস। তাহলে তোর কি মনে হয়?তুই আস্তো থাকবি?”
তিহু:“জো হোকা দেখা যায়ে গা!”

প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here