সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩০
neelarahman
সাদা ফের বাসায় পৌছাতে পৌঁছাতে তিনটা পার হয়ে গেল এদিকে নূর অভিমান করে বসে আছে ।বাড়ি শুদ্ধ লোক এসে বারবার ওকে দেখে যাচ্ছো ওর কথা জিজ্ঞেস করছে অথচ পাষাণ লোকটা একবার ওর কথা জিজ্ঞেস করল না ।ফোনও করল না ।নুর আর কথা বলবে না আর সামনে যাবে না সাদাফের ।মনে মনে ঠিক করে ফেলল নুর।
উনার জন্যই তো এই জ্বরটা এলো অথচ একবারও ফোন করে খোঁজখবর নিল না ।নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের সাথে শতবার ফোন করে কথা বলে ফেলেছে কিন্তু নূরের কি ?
নূরের কোন চিন্তা নেই।নূরকে তো জিজ্ঞাসা করবে না নুর কেমন আছে নুরকে তো আর ভালোবাসে না।
ঠোঁট ফুলিয়ে কথা গুলো ভাবছে নুর।
রিমা বলল ,”কিরে কি এত চিন্তা ভাবনা করছিস? কোন দিকে তাকিয়ে আছিস ?”
নুর সাথে সাথে তাকালো রিমার দিকে ।বলল ,”কই না তো কিছু ভাবছি না।”
“খাবি কিছু?ক্ষুধা লেগেছে ?”জানতে চাইলো রিমা।
নুর কিছু বলবে ঠিক এমন সময় হম্বিতম্বি করে রুমে ঢুকলো সাদাফ। দেখে বোঝা যাচ্ছে বড্ড ক্লান্ত শার্ট ঘামে ভিজে আছে ইন খুলে ঢিলা ঢালা হয়ে আছে শার্টের উপরের দিকে দুইটা বোতাম খোলা টাইটা ঢিলে ঢালা হয়ে গলায় ঝুলে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিমা সাথে সাথে তাকিয়ে বলল ,”কিরে ভাইয়া যুদ্ধ করে এসেছিস নাকি এই অবস্থা কেন তোর ?
গাড়িতে এসি অফিসে এসি বাসায় এসি তারপরে কি অবস্থা?”
রিমাকে দেখেই পায়ের গতি স্লো করল সাদাফ।তারপর শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল ,”বাইরে যা। যেয়ে আমার জন্য লেবু দিয়ে সুন্দর করে একটা ড্রি*ঙ্কস বানিয়ে নিয়ে আয়।
সময় নিয়ে যত্ন করে বানাবি ঠিক আছে যা ?”
রিমা তাকালো সাদাফের দিকে ।বুঝল সময় নিয়ে যত্ন করে বানাবো তার মানে কি ভাইয়া এখানে কিছুক্ষণ বসতে চাইছে ?এমনি ও দুদিন ধরে খুব সন্দেহ হচ্ছিল রিমার যেদিন নূরকে ওই রুম থেকে বের হতে দেখেছিল।
আচ্ছা ভাইয়া কি নুর কে পছন্দ করে? নুরের সাথে কি ভাইয়ার কিছু চলছে?? কিন্তু নুর যে হেবলি ভাইয়া সামলাবে কি করে নুর কে?ভাবতে লাগলো রিমা।
রিমা উঠে সাদাফের পাশ দিয়ে যাবে ঠিক তখনই একটু আস্তে আস্তে বলল ,”ভাইয়া কত সময় লাগিয়ে বানাবো ড্রিংসটা?”
“যত সময় নিয়ে বানালে অনেক বেশি মজা হবে ঠিক তত সময় নিয়ে বানাবি যা।”রিমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি মুখে বলল সাদাফ।
রিমা মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে গেল ।যাওয়ার সময় দরজা বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে যেতে ভুললো না ।ভিতরে ভাই আছে শত হলেও বড় ভাই ।হঠাৎ করে যে কেউ ঢুকে যেতে পারে তাই দরজাটা সুন্দর করে চাপিয়ে দিয়ে গেল।
যেতে যেতে মনে মনে ভাবল ,”ছোট্ট নূরের দিকে কিভাবে দৃষ্টি পড়ল ভাইয়ের ?এত ছোট্ট একটা মেয়ে তবে দেখতে বেশ পুতুল পুতুল ।ছোটবেলা থেকেই তো ভাই সারাদিন নিজের কোলে করে রাখত ছোটবেলা থেকে কি বুকিং দিয়ে রেখেছিল ভাইয়া ?
তবে জম্পেশ হবে নুরের সাথে বিয়ে হলে ভাইয়ার।বা*সর রাতে সারা বাড়ি দৌড়ে দৌড়ে খুজবে বউ বউ কই।বউ দেখবে ২ বাবার কাছে।”মনে মনে হাসলো কথাটি চিন্তা করে।
সাদাফ কে দেখে প্রথমে অভিমান গলে গেলেও এখন অভিমান আরো ভারী হয়ে গেল নূরের ।তাকিয়ে রইল অন্য দিকে ।তাকাবে না সাদাফের দিকে কিন্তু সাদাফ ঠিকই খেয়াল করছে নুর কে।অলরেডি নূরের ঠোঁট ফুলে গিয়েছে যেন আরেকটু হলেই ভারী বর্ষণ হবে।
সাদাফ নুরের বিছানার কাছে এসে একটু বসলো ।নুর সাথে সাথে চেপে আর একটু দূরে সরে গেল ।সাদাফ বলল ,”কিরে শরীরের কি অবস্থা এখন?তাকা আমার দিকে।তাকা বলছি।
একটু ভিজিয়েছি বলে জ্বর এসে একাকার ।আমাকে খুব ভোগাবি বুঝতে পারছি ।এতোটুকু ভিজে এই অবস্থা আর যখন বারবার ভিজাবো তখন?
অভিমানী নুর বুঝতে পারল না কথাটির অন্তর্নিহিত অর্থ ।সাথে সাথে বলল ,”বারবার কেন ভেজাবেন? একবার ভিজিয়ে স্বাদ মেটেনি?”
সাদাফ মোটা মাথার বুদ্ধি ওয়ালা নুরের কথা শুনে মনে মনে হাসলো ।সাদাফের একটি কথাও ঠিকঠাক অর্থ বুঝতে পারে না নুর ।
মনে মনে ভাবল বারবার কেন ভেজাবো সেটা যদি বুঝতে পারতি তাহলে এখন ব*লদির মতো প্রশ্নটা করতি না ল*জ্জায় লাল নীল হয়ে যেতি।
ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরেকটু কাছে এসে নূরের কাছে বলল ,”কারণ আমার বারবার চাই ।একবারে সাধ মিটবে না আমার।”
নুর জিজ্ঞেস করল ,”কি চাই ?”
সাদাফ হাসলো ।হেসে বলল ,”তোর জ্বর।”
“তবে চিন্তা নেই।এক বস্তা ঔষধ এনে রাখবো।তুই জ্বর বাধাবি আমি ঔষধ খাওয়াবো। তবুও এই জ্বর থেকে রেহাই নেই তোর।”বললো সাদাফ।
সাদাফ একটু কাছে এসে নূরের কপালে হাত রাখল ।নূর সরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সাদাফ বা হাত দিয়ে নূরের মাথার পিছনে জোরে ধরে আরেক হাত দিয়ে কপাল চেক করল। তারপর নিজের কপালে হাত রাখল বুঝতে পারছে না সাদাফ।তারপর করে ফেললো এক অদ্ভুত কা*জ ।নূরের কপালের সাথে সাদাফ নিজের কপাল মিশিয়ে দিল।”
তারপর টের পেল ন নূরের কপালের তাপমাত্রা এখন স্বাভাবিক লাগছে কারণ নিজের তাপমাত্রার সাথে নূরে তাপমাত্রা এক রকমই মনে হচ্ছে।
এদিকে নুর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে ।হঠাৎ সাদাফের এতো কাছে চলে আসায় যা হয় নূরের সব সময় এখনো ঠিক তার বিপরীত নয় ।এখনো নূর এর হৃদয় স্পন্দন যেন থেমে যাচ্ছে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা ।সাদাফ বুঝতে পেরে একটু সরে আসলো।
তারপর বলল ,”দুপুরে লাঞ্চ করেছিস ?ঠিকঠাক মতো খেয়েছিস?আর আমি একটু কাছে গেলেই কাঁপাকাঁপি করিস কেনো?নিজে যে কতো কিছু করলি?”
নুর বললো,” কি করেছি?আর এতো কাছে আসলে ভ*য় লাগবে না?”
“অভ্যাস করে নে। হুটহাট কাছে এলে কাপাকাপি যেনো না হয়।আমার যখন ইচ্ছা হবে কাছে আসবো।আর আমি এখনো লাঞ্চ করে নি।খাবো।আমার সাথে এখন একসাথে বসে খাবি।” বললো সাদাফ।
নূর যেনো একটু লজ্জাই পেলো।বলল ,”আমি খেয়েছি তো ।”
সাদাফ ভালো করে জানে নুর খেয়েছে সেই খবর নেওয়া হয়ে গেছে তারপরও সাদাফ বলল কি খেয়েছিস না খেয়েছিস সেটা তো আমি চোখে দেখিনি ।এখন আমার চোখের সামনে বসে থেকে খাবি আমি যা যা খাবো তুই তাই তাই খাবি ।এই রুমেই বসে খাব আমি খাবার আনতে বলছি।
নুর বলল ,”আমার এখন খেতে ইচ্ছে করছে না পেটভরা আর মুখে একটুও রুচি নেই।”
“আমার সাথে খেলে রুচি বাড়বে তারপরও যদি না বারে চা*পরে মুখে রুচি বাড়িয়ে দেব।
অথবা তুই চাইলে অন্য কোন উপায়ে রুচি বাড়ানোর ব্যবস্থা করব।”বললো সাদাফ।
নূর ভয়ে আর কিছু বলতে পারল না এমন সময় শরবত নিয়ে হাজির রিমা রুমে ঢুকতে ঢুকতে হালকা একটু এসে তারপরে রুমে দরজা খুলে ঢুকলো। নীলা রহমান কার সাথে সাথেই শরবত রাখল রেখে যেই না কিছু বলবে তার আগেই সাদাফ আবার অর্ডার করলো যা উপরে খাবার নিয়ে আমি আর নূর খাব রিমা মনে মনে ভাবল আবার খাবার আনতে যাব এবার ওকে সময় নিয়ে খাবার নিয়ে আসবো আনতে আমতা করে জিজ্ঞেস করল ভাইয়া কত সময় লাগে খাবার আনব।
সাদাব বলল পেটের ভিতরে ক্ষুধায় ইঁ*দুরগুলো কিলবিল করছে ঠিক দৌড়ে যাবি আর দৌড়ে আসবি ৫ মিনিটের মধ্যে খাবার নিয়ে আসবি।
ওকে বলে রিমা আবার রুম থেকে বের হয়ে গেল বের হয়ে যেতে যেতে মনে মনে ভাবলো বাহ প্রেম করবে বড় ভাই আর ছোট বোন খাবার শরবত নিয়ে বারবার রুমে হানা দিবে।
আর ছোট বলে কোন মূল্য পেলাম না।
রান্নাঘরে টুকটাক কাজের আওয়াজ পেতেই সামিহা বেগম রান্নাঘরে আসলেন বললেন কিরে এই অসময় তুই খাবার বাড়ছিস কার জন্য?
রিমা আমতা আমতা করে বলল ,”ওই না আসলে ভাইয়া এসেছে তো ভাইয়ার জন্য ।”
সামিহা বেগম বললো,”ও তাহলে দুই প্লেট কেন ?”
রিমা মাথা চুলকে বললো ,”আসলে ভাইয়া নুরের রুমে বসে খাবে নুরকেও খাওয়াবে তাই ।”
সামিহা বেগম শুনে খুব খুশি হয়ে গেলেন ।নুর দুপুরে শুধু একটু স্যুপ খেয়ে ছিলোআর কিছু খাইনি ।খাওয়াতেও পারেনি।
সামিহা বেগম বলল ,”তাহলে তুই সর পারবি না ।আমি দিয়ে আসছি।”
রিমার সাথে সাথে বলে উঠল না না ছোট আম্মু আমি নিয়ে যেতে পারবো ।ভাইয়া যদি দেখে তোমাকে আমি এই সময় কা*জ করিয়েছি ভাববে আমি তোমাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে কা*জ করিয়েছি ।প্লিজ আমি নিয়ে যাই।
তুমি এক কা*জ করো বলে দাও আমি নিয়ে যাই সামিহা বেগম বললো,”আচ্ছা ঠিক আছে ।”
বলেই খাবার বাড়তে লাগলো।
রিমা মনে মনে ভাবলো যাক বাবা এবার বেঁচেছি না জানি ছোট আম্মু গিয়ে রুমে কিনা কি অবস্থায় পেতো মান-সম্মান একেবারে শেষ হয়ে যেত ভাইয়ার।
এদিকে হুমায়ূন রহমান বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখছে এখনো পর্যন্ত সাদাফ ফোন দিল না কেন ?কি সমস্যা ?
উনি এখনো জানেনা সাদাফ এখন রুমে মানে নুরের রুমে অবস্থান করছে ।তাই নিজে রুম থেকে বের হয়ে একটু এদিক ওদিক দেখার চেষ্টা করল হঠাৎ দেখল রিমা খাবার নিয়ে নুরের রুমের দিকে যাচ্ছে।
এগিয়ে এসে বলল ,”কিরে মা খাবার নিয়ে নুরে রুমে যাচ্ছিস যে ?নূর তো খেয়ে ছিল ।”
“ওই না বাবা ভাইয়া নুরের রুমে তো ভাইয়া খাবার খাবে সাথে নুর কেউ খাওয়াবে।তাই আমাকে বলছে দুজনের খাবার নিয়ে আসতে।” বললো রিমা।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৯
সাথে সাথে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল হুমায়ূনর রহমানের ।ছেলেটা পেয়েছে কি? দিনে দুপুরে দরজা লাগিয়ে বসে আছে নূরের রুমের।এই ছেলে নিশ্চিত আজকে সারাদিন রাত নুরের রুম থেকে বেরোবে না।
তারপর মনে মনে এই ভেবে আবার খুশি হল ছেলেটা নূরকে অনেক ভালবাসে ।কতটুকু ভালবাসলে এভাবে বাবার কাছে নি*র্লজ্জের মত নূরের হাত চেয়েছিল সাদাফ।
তারপর রিমার মাথায় হাত রেখে বলল ,”ঠিক আছে যা খাবার নিয়ে ভিতরে যা ।সারাদিন মনে হয় খাইনি কিছু ছেলেটা ।সাথে নুরু একটু খেতে পারবে আমাদের কথা তো শুনে না সাদাফের কথা শুনবে।”
