সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩১
neelarahman

রিমা গলা খাকারি দিয়ে দরজা হালকা করে খুলে খাবার নিয়ে ভিতরে ঢুকলো ।ভিতরে ঢুকে দেখল ওয়াশরুমে সাদাফ ভাই হাতমুখ ধুয়ে ধুয়ে মাত্র বের হল ।নূরের টাওয়াল দিয়ে হাতমুখ মুছতে লাগলো অথচ সাদাফ ভাই কখনো কারো টাওয়েল ধরেও না এমনকি নিজের টাওয়াল কখনো কাউকে টাচ করতে দেয় না ।
অবাক হয়ে গেল রিমা ।নূরের ব্যবহার করা টাওয়েল দিয়ে সুন্দর করে নিজে হাত মুখ মুছে নিচ্ছে। নীলা রহমান
রিমা চুপচাপ খাবার গোছাতে গোছাতে বলল ,”ভাইয়া খাবার বা*ড়া হয়েছে এসো খেতে এসো ।”
সাদাফ টাওয়েল টা বারান্দায় মেলে দিয়ে নূরের বিছানায় বসলো ।বসে নূর কে বলল ,”উঠে বস এখন আমার সাথে খাবি।”

নুরের আসলেই খেতে ইচ্ছে করছিল না ।আমতা আমতা করে বলল ,”আমার ক্ষুধা নেই ।আমি সত্যি দুপুরে খেয়েছি আর মুখে আমার একটু ভালো লাগছে না কিছু। আমি খাব না প্লিজ একবারে রাতে খাব।”
সাদাফ এক প্লেটে একটু বেশি করে ভাত বেড়ে তরকারি নিয়ে মাখাতে শুরু করল ।মুখে একটি কথাও বলল না ।নুর ভাবলো হয়তো সাদাব ভাই কথা শুনেছে ।তাই যেই একটু কাত হবে অমনি সাদাফ বলল ,”তোকে আমি বসতে বলেছি শুতে বলিনি ।”তারপর মাখা ভাত একটি লোকমা করে দিল নূরের মুখের সামনে।
নুর অবাক হয়ে গেল ।রিমার তো যেন আকাশ ভে*ঙে পড়লো মাথার উপর ।একি দেখছে ?নিজের হাতে খাবার মেখে মুখে ধরেছে নূরের ?এ কেমন দৃশ্য ?মনটা চাচ্ছে মোবাইলে ভিডিও করে সাইমনকে ………সাইমন এর কথা ভাবতেই এখন রাশ ল*জ্জা জেকে ধরল রিমাকে ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সায়মনের কাছ থেকে ল*জ্জার হাত থেকে বাঁচতেই সাইমনের সাথে এরকম ব্যবহার করছে রিমা ।সহজ হতে পারছে না তাই যখন দেখে তখনই উল্টাপুল্টা কথা বলে সাইমনকে রাগিয়ে দেয় যাতে যা হয়েছে দ্বিতীয়বার সেটা না হয় কারণ রিমা ল*জ্জা পাচ্ছে সাইমনের মুখোমুখি হতে।
নূরের কেমন ল*জ্জা ল*জ্জা লাগছে কিছু বলতেও পারছে না বললে আবার কখন ধমক লাগিয়ে দিবে সামনের রিমা ও আছে নুর কোনমতে আনতাম তা করে হালকা একটু মুখ খুলল সাদা অল্প একটু করে নূরের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিল।

তারপর বলল ,”ইঁদুরের মতো হা করছিস কেন বড় করে হা কর।”নীলা রহমান লেখিকা
নুর বিরক্ত হয়ে বাধ্য মেয়ের মত বড় করে হা করল ।নুরকে কয়েক লোকমা খাওয়ানো শেষে নুর যখন বলল আর পারছি না সত্যি আর পারছি না পরে অবশেষে সাদাফ মানলো।এবং সেই প্লেট থেকেই নিজে খাওয়া শুরু করলো রিমা অবাক হয়ে গেল ঝুটা হাতে ঝুটা প্লেটেই সাদাফ ভাই ভাত খাচ্ছে।
কোন মতে খাওয়া শেষ করেই সবকিছু রিমাকে বুঝিয়ে দিয়ে বলল,”যা আমার জন্য কফি করে নিয়ে আয় এক্ষুনি মাথা ধরেছে আমার খুব।”

রিমা মনে মনে ভাবল আজকে এদের প্রেম কাহিনীর মধ্যে রিমাকে বারবার ওঠানো নামানোর কি প্রয়োজন ?সিড়ি বেয়ে উঠতে নামতে রিমা মিনিমাম ২ কেজি ওজন আজকে কমে গিয়েছে ।কিন্তু বাধ্য মেয়ের রিমা চুপচাপ কফি আনতে নিচে চলে গেল ।ভাইকে মুখের উপরে এই কথা বলার দুঃসাহস রিমার নেই।
রিমা চলে যেতেই সাদাফ হাত ধুয়ে এসে নূরের মুখে আঙুল দিয়ে যে মুখ মোছাতে যাবে নুর সাথে সাথে সরে গেল ।সাদাফ নুরের মাথা চেপে ধরে মুখ মুছে দিয়ে বলল ,”সরে গেলি কেন?”
নূর আমতা আমতা করে বলল ,”আমি উঠে মুছে নিতে পারব ।”
সাদাফ বলল ,”কেন আমার টাচ ভালো লাগছে না আর রাতভর যে তুই আমাকে টাচ করলি কত কিছু করলি আমি কি না করেছিলাম?”

নূর অবাক হয়ে গেল ।আমতা আমতা করে বলল ,”কি করেছি আমি রাতভর ?”
সাদাফ নুরের একটু কাছে এসে নূরের কানে কাছে গিয়ে বলল ,”আমাকে এখানে এখানে এখানে কত জায়গা যে চু*মু খেয়েছিস তার কোন ইয়ত্তা নেই ।কোনমতে নিজের ই*জ্জত নিয়ে পালিয়েছি আমি।
যদি রুম থেকে বের না হতাম তাহলে তুই তো আমার সবকিছু শেষ করে দিতে কাল রাতেই।
তোকে তো আমি ভালো মেয়ে মনে করেছিলাম কিন্তু তুই তলে তলে যে এত পাজি সেটা তো আমি জানতাম না।”
নুর লজ্জায় দুহাতে নিজের কান চে*পে ধরলো।
রিমা কফি নিতে আবার নিচে যাওয়ায় দেখা হলো নওরিন আফরোজ এর সাথে ।নওরিন আফরোজ সাইমনকে খাবার বেড়ে খাওয়াচছিলেন।সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,” তোকে কতগুলো ফোন দিয়েছিলাম তুই ফোন রিসিভ করিস নি কেন?”

রিমা অবাক হয়ে গেল মায়ের সামনে সাইমনের বলা কথাটিতে ।আমতা আমতা করে বলল ,”আমার তো মোবাইল সাথে ছিল না আমি নূরের রুমে ছিলাম।”
সাইমন জানতো একমাত্র বড় আম্মুর সামনে জিজ্ঞেস করলে ও কোন হম্বিতম্বি করতে পারবে না তাই সুযোগ বুঝে বড় আম্মুর সামনে জিজ্ঞেস করেছে ।পরে বিশ্বাস হলো রিমার কথায়।হাতে কফি মগ দেখে বুঝতে পারল ওই রুমেই যাচ্ছে তাই বললো,”দাঁড়া আমিও যাব আমার জন্য আরেক মগ কফি নিয়ে যা।”
রিমা মনে মনে বিরক্ত হলো খুব ।চিন্তা করল আম্মুর সামনে দেখে তুই বেঁচে গেলি না হলে তোকে কি করতাম।
অবশ্য মুখে কিছুই বলল না চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে আরেক মগ কফি নিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়িবেয়ে উপরের দিকে গেল ।সায়মনের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো প্রায় ।খাবার খেয়ে উঠে বলল ,”আমি একটু উপরে যাচ্ছি নুরকে দেখে আসি ঠিক আছে বড় আম্মু?”

নওরিন আফরোজ বলল ,”ঠিক আছে যা গিয়ে দেখ নূরের কি অবস্থা সারাদিন তো বাইরে ছিলি বোনটার তো খোঁজ খবর নিতে পারিস নি।”
এদিকে ফজলুর রহমান ও হুমায়ুন রহমান দুই ভাই এলেন বিকালে একটু চা নাস্তা করবেন ।ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে হুমায়ূনুর রহমান বলল ,” কিরে জ্বর এসেছে নূরের তোর মুখটা এত শুকনো শুকনো লাগছে কেন তোর কি আবার জ্বর আসবে নাকি??”নীলা রহমান
না ভাইজান ওই মাথায় একটু ব্যথা করছিল বিকাল থেকে তাইতো চা খাওয়ার জন্য এলাম। ভাবি কড়া করে আমাকে একটা চা দাও না খুব মাথা ধরেছে আমার।
মনে মনে ভাবল সারারাত ঘুমাতে পারিনি বড় ভাইয়ের কথা বারবার চিন্তা করেছে ।সাদাফের কথা চিন্তা করেছে ।সাদাফের কথা মনে হতেই ফজলুর রহমান নওরিন আফরোজ কে বললেন ,”ভাবি সাদাফ কোথায় ?সারাদিন দেখলাম না ছেলেটাকে ।”
নওরিন সাদা মনে বলল ,”ও তো নূরের রুমে এসেই তো নুরের রুমে বসেছে আর বের হয়নি ।খাওয়া দাওয়া সব ঐ রুমেই করছে।”

হুমায়ূন রহমান আর ফজলুর রহমানের দিকে তাকালেন না ।পেপার পড়ার বাহানায় নিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।ফজলুর রহমান বড় ভাইয়ের দিকে একবার তাকালেন ভাইয়ের এই নজর লুকানোর চেষ্টা এটা নতুন কিছু না ।
তারপর মনে মনে ভাবলেন ,”অফিস থেকে এসেই সাদাফ সোজা নুরের রুমে গিয়েছে ।এখনও বের হয়নি প্রায় তো ঘন্টা ২ হয়ে গিয়েছে ।কি করছে ছেলেটা ঐখানে একটু গিয়ে দেখে আসলে বরং কেমন হয়?
সারাদিন ছেলেটা একা একা অফিস করলো এসে আবার নূরের সেবায় লেগে গেল।
পরে ভাবলো থাক আগে চা খেয়ে নেই।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩০

ফজলুর রহমান কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না বড় ভাইয়ের বলা কথাটা সাদাফ যদি নূরকে চেয়ে বসে ?আচ্ছা কি করবে ফজলুর রহমান যদি সত্যিই তার সাদাফ তার নুরকে চেয়ে বসে !
ছোটবেলা তো ওর হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল ,”প্রমিস করে বলছি নুর কে দিয়ে দিলাম ।”
এখন কি সেই প্রমিস রাখবে নাকি বলবে তুই বড় হয়েছিস এখন নূরকে দেওয়া যাবে না?
কিন্তু এটা কি সম্ভব সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলবে যে না নুরকে দেওয়া সম্ভব না আর না করবেই বা কেন ?শুধুমাত্র নূর ছোট বলে ?অনেক বড় চিন্তায় পড়ে গেলেন ফজলুর রহমান।
তবে একমাত্র সাদাফ যদি নূরকে চেয়ে বসে তখন হয়তো নূর আর কখনো এই বাড়ি থেকে যাবে না সারা জীবন এই বাড়িতে থাকবে ।ব্যাপারটা কি খুব মন্দ হয় মেয়েটা সারা জীবন চোখের সামনে থাকবে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here