তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৬
নীল মণি
ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে জায়ন চোখে রাগ, চোয়াল শক্ত, নিঃশ্বাস ভারী। তার চোখের গভীর অন্ধকারে যেন ঝড় বইছে। তিয়াশার সেই একটিমাত্র বাক্য
__”নাজিম, একটা সিগারেট থাকলে দে তো”
তার বুকের ভেতর এমনভাবে বিঁধেছে, যেন কেউ ভেতর থেকে হৃদয় চেপে ধরেছে।
হাতের মুঠি শক্ত, আঙুলের গিঁট সাদা হয়ে গেছে, আর হাতের ভেইনস গুলো স্পষ্টভাবে ফুলে উঠেছে। যদি তিয়াশার সামনে থাকত নিজেকে সামলানো অসম্ভব হয়ে যেত। তাই রাগ চেপে, গলা ভারী করে, সে চলে এসেছে ছাদে। বাকিরা তার মুখের অবস্থা দেখে চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে আছে এখন মুখ খোলা মানে নিজের বিপদ ডেকে আনা
নাজিম গলা খাঁকারি দিয়ে, কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,
__” ভাই তোর বোনের ভয়ে ওই জিনিস অনেক দিন আগেই বাদ দিয়েছি , কিন্তু আমার আবেগ বলে
দিনে একটা দুটো খাওয়াই যায় । তাই লুকিয়ে লুকিয়ে
খাই , তোর বোন জানতে পারলে আমার চামড়া আর চামড়া থাকবে না নিকোটিন এর ধোয়ার সঙ্গে মিশে যাবে।,”
কথা বলার সময় নাজিমের চোখ মুখে এমন এক ধরণের সতর্কতা যে, সে যেন একই সাথে রসিকতা করছে এবং জায়ন এর রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু জায়নের মুখে বিন্দুমাত্র হাসির ছাপ নেই বরং বিরক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জায়ন মনে মনে বলছে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__” এই মেয়ে গুলোই আমাদের মত ছেলেদের মাথা
খারাপ করে।”
জায়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ঠান্ডা অথচ কটূস্বরে বলল,
__””হ্যাঁ, বউয়ের পা চাট বসে বসে । যা বলবে, তাই শুনবি একেবারে ভ্যারা তৈরি হয়ে গেছিস। থাকলে দে, না থাকলে বা* ছের।”
কেউ বুঝতে পারছে না , তাদের বড় ভাই এত
ক্ষেপেছে কেন?
নাজিম একটু থমকে দাঁড়াল, তারপর পকেট থেকে কাগজে মুড়িয়ে রাখা দুইটা সিগারেট বের করল। হাত কাঁপছিল, কিন্তু কণ্ঠে হালকা কৌতুক আনার চেষ্টা করল,
__ “এই নে ভাই কিন্তু প্লিজ বলিস না আমি দিলাম। তোর বোন জানলে, আমি মরেও বেঁচে থাকব না।”
জায়ন একটুও কথা না বলে সিগারেটটা হাত থেকে নিয়ে নিল দৃষ্টিতে এমন কিছু ছিল, যা বলে দিচ্ছিল তার রাগ এখনো পুরোপুরি যায়নি। চারপাশের সবাই নিশ্চুপ, যেন হঠাৎ শব্দ করলে এই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
জায়নের কপাল কুঁচকে গেল, চোখে রাগের ঝিলিক,গলার স্বরটা খানিকটা ভারি হয়ে উঠল।
__”বা** লাইটার কি তোর শ্বশুর এসে দিয়ে যাবে নাকি?”
নাজিমের মুখ এক নিমিষে ফ্যাকাশে। হাত কাঁপতে কাঁপতে পকেট হাতড়ে একটা দেশলাই বের করল। একটু হাসি মুখে আনতে চেষ্টা করলেও গলাটা শুকিয়ে গেছে।
__”না না ভাই, আছে আছে… দেশলাই আছে… এই নে…”
জায়ন দেশলাই হাতে নিয়ে নিচু গলায় বিড়বিড় করল মুখে বিরক্তির রেখা স্পষ্ট।
__”একটা লাইটারও রাখে না… ”
নাজিম একটু সাহস জোগাড় করে ঠোঁটের কোণে কুটিল হাসি এনে বলল,
__”তোর বোনের পা না চাটলে আবার বলবি আমার বোনকে রেখে যা।”
এমন সময় আকাশ মুখে শয়তানি হাসি নিয়ে ঝুঁকে পড়ে, খোঁচা দেওয়ার সুরে জায়ন কে বলে উঠল,
__”ভাইয়া, তোমাদের শ্বশুর কিন্তু একজনই, সামলে কথা বলো। আর তোমার সিগারেটের ডাব্বা কোই গেল বড় ভাই?”
জায়ন সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে গভীর এক নিকোটিনের ধোঁয়া আকাশের দিকে উড়িয়ে দিল। চোখের কোণে হালকা হাসি, কিন্তু মুখে কঠিন ভাব,
“বউ ঘরে থাকে, ওসব ঘরে রাখা মানে বাসায় ঝড় বয়ে আনা।”
ইউভি ঠোঁট চেপে হাসি আটকাতে চেষ্টা করছে—ও,এখনই তো নাজিমকে কড়া কথা শোনাল, আর এখন নিজেই স্বীকার করছে বউয়ের ভয় ,আকাশ আর থাকতেই পারল না ঠাট্টার সুরে বলে ফেলল,
__”নাজিম ভাইয়া তো নয় বউয়ের পা চাটে, তুমি কি চাট তাহলে ভাইয়া যে তিয়াশার ভয়ে ঘরে তোমার সিগারেটও রাখো না?”
শুনে জায়নের চোখ এক মুহূর্তে লাল হয়ে উঠল। ভর করে উঠে দাঁড়াল, কণ্ঠে গর্জন,
__”এদিকে আয় দেখাচ্ছি কী আর বলেছি না ,আমার বউকে তুই নাম ধরে ডাকবি না, বাল”
এক ঝটকায় নিজেই এগিয়ে গিয়ে আকাশের পেছনে লাথি কষিয়ে দিল। আকাশ চেঁচিয়ে উঠলেও হাসি থামাতে পারল না, ইউভিও হেসে কুটোপাটি।
জায়ন রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে উঠল,
“মোজাম্মেল সাহেবকে দেবো নাকি একটা কল?”
অমনি আকাশ হেসে ছুটে এসে জায়নকে জড়িয়ে ধরল। মুহূর্তের মধ্যে ইউভিও এসে পেছন থেকে শক্ত করে ধরল। জায়ন থমকে গেল চোখে বিস্ময়,
__”এই কী করছিস তোরা?”
ওরা দুজন একসাথে বলে উঠল,
__”ইউ আর দ্য বেস্ট, বড় ভাই থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ”
পাশে দাঁড়ানো নাজিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল। জায়নের ভেতরে খুশি খেলে গেলেও মুখে রাগি ভাব বজায় রাখল। ওদের সরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল
__”ছাড়, ছাড়।আমায় একমাত্র বউ ই জড়িয়ে ধরতে পারবে তোরা দূর হ…”
আকাশ আর ইউভি তবুও ছাড়লো না , কিছুক্ষন বাদে সরে গেলেও দুজনেই বুঝে গেল ,এই বড় ভাই যতই কঠিন সাজুক, প্রিয়জনদের জন্য পাহাড়ের মতো হয়ে দাঁড়ানোই তার স্বভাব।
হঠাৎ জায়ন ঘাড় কাত করে বলে উঠল,
“বড় ভাই বলিস, আবার থ্যাঙ্ক ইউ বলিস গাধার দল।”
ছাদের ওপরের গরম হাওয়া গাল বেয়ে বয়ে যাচ্ছে, চারপাশে নিস্তব্ধতা। হঠাৎই সিঁড়ির ধাপে ধাপে শব্দ দ্রুত পায়ে রায়ান উঠে এল।
উঠেই কোনও কথা না বলে হঠাৎ জায়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।ভেতরে ভেতরে জায়নের মাথায় ঝড় মনে মনে বিড়বিড় করছে,
__”যার ধরার কথা তার সঙ্গে তো হয়ে গেল ছোট খাটো রাগা রাগি হয়ে গেল ।ইস রে বউটাকে অনেক জোরে মেরে ফেলেছি নাকি? নিশ্চই মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে।না না, ঠিকই আছে। সাহস কী করে হলো ওই বাজে শব্দটা মুখে আনার ।শরীর খারাপ না থাকলে মুখই ফাটিয়ে দিতাম। এদিকে বা* বউ বোঝে না ও ছাড়া আমি নিঃস্ব, এমনিতেই বাল বিয়ে হয়েছে এত দিন বউ কে কাছে পেলাম একদিন শা* প্রথমে ভুল বোঝাবুঝি এখন যখন সব ঠিক ঠাক বউ এর শরীর খারাপ , বা** পূরুষ আমি , বা* বউ এর সামনে সব দিক দিয়ে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি ”
জায়ন নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে, বিস্ময় আর অল্প নরম সুরে বলল,
“এই তোর আবার কী হলো? ওই দুটো গাধার তো বুঝলাম, তুই কেন লাফিয়ে পড়লি?”
রায়ান একটু গলা খাঁকারি দিয়ে, নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত গলায় বলল,
__ “বড় ভাই… অনুর জন্যই এত তাড়া করে ছুটে এলাম। তুমি না থাকলে হয়তো…”
কথাটা শেষ করার আগে ওর চোখ ইউভির দিকে গিয়ে থামল। তারপর একফোঁটা হাসি, একফোঁটা অভিমান মিশিয়ে আবার বলল,
,__”…হয়তো ইউভি ভাই কোনদিনও বাসায় মুখ খুলে বলতে পারত না, আর আমার বোনটা সারাজীবন কষ্ট নিয়ে কাটিয়ে দিত।”
জায়ন কিছুক্ষণ রায়ানের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর হালকা হেসে নিজের হাত দিয়ে ছোট ভাইয়ের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিল। সেই হাসিতে একধরনের মমতা ছিল, আবার একটু দৃঢ়তাও।
__ “শোন ভাই, এই বাসায় আমার বউয়ের পরে আমার মা চাচী আর বোনেরা আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি। অনু আমার বোন তাই ওর জন্য কী ভালো, সেটা আমি ঠিকই জানি।”
বলতে বলতেই ওর চোখ এবার সোজা ইউভি আর আকাশের দিকে গেল। মুখে কেমন যেন তাচ্ছিল্যের ছাপ ফুটে উঠল। গজগজ করে বলে উঠল,
__”এই অপদার্থ দুটো গাড়ি কত দূর আগাতে পারবে, তা আমার জানা আছে। এরা খালি পারবে পিন্ডি চটকাতে, কাজের বেলায় শূন্য।”
এই কথা শুনেই আকাশ আর ইউভির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। যেন কেউ তাদের সমস্ত সাহস কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু ইউভি ভিতরে ভিতরে একটু জ্বলে উঠল তবে বড় ভাইকে তো আর কিছু বলা যায় না, তাই রাগটা আকাশের ওপর ঝাড়তে লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
__ “এই তুই কি বলতে চাইছিস, আমার বুঝি সাহস নাই?”
আকাশ বিন্দুমাত্র দেরি না করে ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিল,
__ “না, একদম নাই।”
__ “চুপ কর! দেখবি, নিজের কোন মেয়ে পছন্দ হলে তুই কখনো বাসায় মুখ খুলে বলতে পারিস কি না।”
জায়ন আর রায়ান দুজনেরই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে বাঁকা হাসি খেলে গেল। রায়ান হাত কোমরে রেখে, ঠোঁট কামড়ে ইউভির দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
__”শোনো ইউভি ভাই, মেয়ে আমি পছন্দ করেই ফেলেছি। কিন্তু যেদিন থেকে পছন্দ করেছি, সেদিন থেকেই নিজের সাহসও তৈরি করেছি যাতে বুক চাপড়ে সবার সামনে বলতে পারি, যে সে আমার।”
ওর চোখে সেই মুহূর্তে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা ছিল। তারপর এক দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে আবার বলল,
__ “সময় আসলে ঠিকই নিজের করে নেব। আর কেউ যদি পথে বাধা দেয় আমি ভুলে যাব সে আমার কে, বড় না ছোট।”
এই বলে রায়ান জায়নের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসল, তারপর বিনা শব্দে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। আকাশ, নাজিম আর ইউভি যেন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল, এখনও রায়ানের শেষ কথার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
জায়ন একটুও অবাক হয়নি কারন সে কয়দিন
ধরেই রায়ান কে নজরে রাখছে , শুধু রায়ান না বাসার প্রতিটা ব্যক্তির উপর তার নজর থাকে ।
__” হ্যা গো ইউভি ভাই ওই পুঁচকে এই বয়সে আবার কাকে পছন্দ করল ।”
__” আমি জানি না রে আকাশ । আর কি সব বলে গেল
বড় বড় ভাই দের সামনে দেখলি ?”
এবার জায়ন একদম ঝটকা দিয়ে ইউভির মাথায় চাপড় মারল। চোখ বড় করে বলল,
__”তোদের মত ইদুরের বাচ্চা তৈরি হবে। শেখ কিছু আমার ছোট ভাইটার কাছ থেকে কেমন বুকের পাটা লাগে, দেখেছিস?”
নাজিম পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে যোগ করল,
__ “হ্যা রে, আমার ছোট শালারে দেখে তো মনে হচ্ছে তোর ছোট ভার্সন।”
জায়ন এবার একটু হাসল, কিন্তু সেই হাসিতে দুষ্টামির ঝিলিকও ছিল। কিছুক্ষন সবার মধ্যে কথাবার্তা চলার পর যেন জায়ন হঠাৎ কি একটা ভাবল , তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
__ “আমার দ্বারা বাসায় থাকা এখন অসম্ভব। কোথাও যাওয়া যাক চল। পরশু নতুন অফিস ওপেন তারপর একদম সময় পাব না।”
নিচু গলায় নিজের মনেই বলে উঠলো,
__” বা* বউ এর সামনে থাকলে কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলব
তারপর আমার রাগের কোন এফেক্ট ই পড়বে না , বউ
টার আবার শরীর খারাপ , আমি তো আর পশু না ….
আমায় পশু দেখলেও বলবে , তুমি আমাদের নতুন মানুষ রুপি নতুন প্রজাতি , থুকি বা* এই জীবন কে।”
ইউভি একটু কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করল,
__ “কোথায় যাবে ভাই? সাগর ভাইদেরও ডেকে নেব?”
জায়ন সোজা গলায় উত্তর দিল, মুখে হালকা হাসি টেনে,
__ “হ্যা, ওরা ছাড়া থোরি যাব । যা, তৈরি হয়ে যা , দেখি কোথায় যাওয়া যায়। জেমসকেও ফোন দিয়ে বলি, রেডি থাকতে।”
এই বলে সবাই নিচে নেমে নিজেদের রুমের দিকে হাঁটা দিল ।জায়ন রুমে ঢুকেই তিয়াশার দিকে সরাসরি তাকাল না, কিন্তু তীক্ষ্ণ নজরে ঠিকই দেখতে পেল ওর মুখের বাঁ পাশটা সামান্য ফুলে আছে, ফর্সা গালের রঙ লালচে, আর চোখের কোণে শুকিয়ে যাওয়া জলরেখা স্পষ্ট।
তিয়াশা বিছানার কোণে বসে নিজের পুরোনো ফোন টা ঘাটাঘাটি করছে , ঠোঁট ফুলিয়ে, গলা শক্ত করে। চোখে চোখ রাখতে চাইছে না, কিন্তু জায়নের উপস্থিতি সে ঠিকই অনুভব করছে।
জায়ন কিছু না বলে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল।
ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ হওয়া মাত্র তিয়াশা মনে মনে গজগজ শুরু করল,
__ “বদমাইস লোক, মেরে ঠেরে আবার ভাব দেখাচ্ছে, এ যেন নিজেকে নবাব ভেবে বসে আছে।”
কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেল,
জায়ন বেরোল সাদা টাওয়াল জড়ানো অবস্থায়। ভেজা ত্বকের ওপর বিন্দু বিন্দু পানি চকচক করছে, শুঠাম বুক থেকে জলগড়িয়ে নামছে নিচের দিকে। তিয়াশার চোখ যেন হঠাৎ আটকে গেল, সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু সেকেন্ড তাকিয়ে রইল, তারপর মনে মনে ঠোঁট কামড়ে বিড়বিড় করল,
__ “বাঘের বাচ্চা আমাকে জ্বালানোর ফন্দি আঁটছে।”
জায়ন যেন কিছুই টের পাচ্ছে না আরেকটা ছোট টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে কাভার্ড খুলে বের করল একটা ‘সেজ গ্রিন পোলো টি-শার্ট, অফ হোয়াইট চাইনোস ট্রাউজার আর বক্সার।’
তারপর ‘ক্লাইভ ক্রিস্টিয়ান’ নামের বিদেশি পারফিউম গায়ে ছিটিয়ে নিল ঘ্রাণ মুহূর্তেই সারা রুম ভরে দিল। তিয়াশা সেই ঘ্রাণে মাতাল হয়ে উঠল এক মুহূর্তের জন্য, বোঝাই গেল, মনটা যেন নরম হয়ে আসছে, কিন্তু রাগ তাতে কমল না,এদিকে তিয়াশার সামনেই জায়ন ড্রেস পরে নিল । তিয়াশা এই দেখে অন্য দিক মুখ ঘুরিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে ধীর গলায় বলল,
__ “অসভ্য, বেহায়া লোক ,কিন্তু এত তৈরি হচ্ছে কেন?”
জায়ন যেন কিছু দেকছেই না কিন্তু তার বউ এর প্রতিটা মুহূর্ত সে আর চোঁখে পরখ করছে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফেস ক্রিম লাগানোর পর চুল টা সেট করে নিল। তারপর গুণ গুন করতে করতে কাভার্ডের থেকে ওয়াচ আর সানগ্লাস এর সেকশন খুলে সবচেয়ে স্টাইলিশ ঘড়ি আর সানগ্লাস বের করে পড়ল।
এই সব দেখে তিয়াশার ভেতরে আগুন জ্বলছে, রাগে গজরাচ্ছে ,
“এই লোকের এত ফুর্তি আসে কোথা থেকে? কোথায় একটু এসে আমাকে মানাবে, দুটো কথা বলবে, তা না নিজের স্টাইল নিয়ে মজে আছে, কিন্তু এই এত স্টাইল দিয়ে কোথায় যাবে?”
রুমের ভেতর টানটান নীরবতা
এর মধ্যেই জায়ন এর ফোন বেজে ওঠে , ফোন টা
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেল না ,
কিন্তু জায়ন তিয়াশার দিকে তাকিয়ে একবার বলে উঠলো,
__” হ্যা রিসর্ট ইস ফাইন , আমি রেডি হয়ে গেছি ,
বেরোচ্ছি এক্ষুনি।”
তিয়াশা রিসর্ট এর নাম শুনতেই টগবগ করে ফুটছে রাগে , নিমেষেই সব শরীর খারাপ যেন গায়েব হয়ে গেল,তিয়াশা মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগল ,
__”এত সাজ এত ঢং ওই রিসোর্ট এ যাওয়ার জন্য ।
বাঘের বাচ্চা আমাকে মেরে ধেরে এখন না মানিয়ে
রিসর্ট যাওয়া হচ্ছে।”
জায়ন মাথা নিচু করে শুস পড়ছিল সোফায় বসে , শুস
পড়া হয়ে গেলে উপরে তাকাতেই দেখল তার ছোট্ট বাচ্চা বউ কোমরে হাত দিয়ে রুদ্রমূর্তি নিয়ে দাড়িয়ে
আছে যেন এক্ষুনি সব ধ্বংস করে দেবে । জায়ন একটু
মাথা নিচু করে বাকা হাসি দিয়ে উঠে দাড়াল তারপর ভ্রু কুচকে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
__” সামনে থেকে সর ।”
তিয়াশা দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে স্বরটা নিচু কিন্তু ধারালো কণ্ঠে বলে উঠল,
__ ” এত সেজে কোন ফুলঝুরি কে দেখাতে যাচ্ছ ?”
জায়ন একটু উপেক্ষা করে পাশ কাটিয়ে বলে উঠলো,
__” ফালতু বকিস না ,ফালতু বকিস না , আমার ফুলঝুরি এই ঘরে আমার সামনে দাড়ান, এবার সর।”
তিয়াশা রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না , শরীর দূর্বল তবুও নিজেকে শক্ত করে বলে উঠলো,
__” কি করতে যাচ্ছ রিসর্ট ?”
জায়ন স্বাভাবিক গলায়, কিন্তু মুখের কোণে সামান্য চওড়া হাসি রেখে বলল,
__ ” কি করতে আবার , মাইন্ড ফ্রেশ করতে ।”
জায়ন এর এই কথা শুনতেই তিয়াশা যেন রাগে শক্ত হয়ে উঠল। তিয়াশা এক পা এগিয়ে এসে দৃঢ় স্বরে বলল
__” তাহলে আমিও যাব মাইন্ড ফ্রেশ করতে , নিয়ে চলো আমায় ।”
জায়নের স্বর এবার কিছুটা রুক্ষ হয়ে উঠল, চোখে একধরনের ধারালো তীক্ষ্ণতা এসে গেল, ঠোঁটের কোণে সামান্য শক্ত চাপ,
__” মুখের এক সাইড লাল করেছি আরেক সাইড লাল না করতে চাইলে সামনে থেকে সর লেট হচ্ছি ।”
তিয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে, বিস্ময় আর রাগ মিশ্রিত গলায় বলল,
__” কেন আমি গেলে কি অসুবিধা ?”
জায়ন এবার একদম সোজা শরীর সোজা করে দাঁড়াল, দৃষ্টি ঠাণ্ডা অথচ ভারী, কথার ভেতর কেমন যেন হুমকির গন্ধ,
__” অনেক অসুবিধা , আমি বাসায় বলে যাচ্ছি , এই ঘর থেকে এক পাও বাইরে বের করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।”
তিয়াশার বুকের ভেতর জমে থাকা রাগ এবার বিস্ফোরণের মতো বেরিয়ে এল, গলা কেঁপে উঠল, কিন্তু স্বর ক্রমেই উঁচু হয়ে গেল। এবার সেই উচু স্বর রাগের মধ্যে দিয়ে গর্জে উঠল,
__” কিসের এত অসুবিধা শুনি আমি , থাকব না আমি এই ঘরে, নিজের ইচ্ছে মত তাই না । নিজে ফুর্তি করে
বেড়াবে আর আমাকে ঘর বন্দী করে রাখবে শয়তান লোক। ”
জায়ন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ধরা পড়ল, যেন ভেতরে ভেতরে ভাবছে “রেগে গেলেও আমার বউ টাকে কি যে সুন্দর লাগে” তারপর নিজেকে সামলে গলা খাঁকারি দিয়ে ধীর অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
__” কেন বিয়ের পরে কি ফুর্তি করা নিষেধ নাকি? আর আমি ফুর্তি করতে যাচ্ছি না, সবাই মিলে একটু ঘুরতে যাচ্ছি এক দিনের জন্য। তোর শরীর খারাপ, রেস্ট নে। আজ রাতে মেজো মায়ের সাথে ঘুমাস আমি বলে যাচ্ছি।
তিয়াশার মনে হঠাৎই ধাক্কা লাগল “তার মানে এই লোক রাতে বাসায় ফিরবে না?”
চোখ বড় বড় হয়ে গেল, শ্বাস যেন মুহূর্তে ভারী হয়ে উঠল, আর কথা বেরোলো কাঁপা-কাঁপা অথচ তীক্ষ্ণ গলায়।
__” আম্মুকে নিয়ে থাকবো মানে… তুমি রাতে বাসায় ফিরবে না?”
তিয়াশার চোখের ভেতর যেন আগুন জ্বলছে, দৃষ্টি এতটাই তীক্ষ্ণ যে যেন ফুঁসে ওঠা লাভা।
বউ এর এই রূপ দেখে জায়ন মুহূর্তের জন্য থমকে গেল, কপালে হালকা ঘাম, গলা শুকিয়ে উঠছে। ভিতরে ভিতরে জানে যদি এখন বউয়ের কাছে থাকে, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না, মন চাইছে এই মুহূর্তেই ওকে ছুঁয়ে ফেলতে কিন্তু না, সেটা করলে আজ সব গন্ডগোল হবে, বউ কে নিয়ে হসপিটাল দৌড়াতে হবে । তাই একটু ঢং করে মিথ্যের সাহায্য নিয়ে গলায় কৃত্রিম দৃঢ়তা এনে বলল,
__” হ্যাঁ আমি একা যাচ্ছি না তো। তোর ভাই ই তো জোর করল যাওয়ার জন্য। আমি তো বলেছিলাম আমি যাব না।”
ভাইয়ের কথা শোনার পরও তিয়াশার রাগ কমল না, কিন্তু চোখের সেই জ্বলন্ত দৃষ্টি কিছুটা নরম হলো, তবুও ঠোঁট শক্ত করে বলল,
__”জাহান্নামে যাও ,আমার ব্যাপার আমি নিজেই দেখে নেব। তোমরা সব কটা এক ক্ষেতের মূলো, যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও আমি কিছু বলব না , আর তেমন অন্য কেউ যেন নাক না গলায় আমার লাইফ এ।
জায়নের ঠোঁট সামান্য শক্ত হলো, দৃষ্টি সোজা হয়ে গেল, গলার স্বর এবার গম্ভীর আর হালকা কড়া,
__”রোদ বেশি মুখ চলছে না তোর? ছোট ব্যাপার নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করিস না।”
তিয়াশা এবার কোনো উত্তর দিল না, ঠোঁট ফোলানো অবস্থায় সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল, চাদর টেনে নিল মুখের উপর।
জায়ন এক দীর্ঘ, ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল, তারপর চুপচাপ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
নিচতলায় ড্রয়িং রুমে তখনো হাসাহাসি, ঠাট্টা-মশকরা, মিষ্টি খাওয়ার ধুম চলছে। ঘরে খুশির বাতাস জমাট বেঁধে আছে আজকের আনন্দঘন খবর যেন পুরো বাড়িকে আলোকিত করে তুলেছে। সবাই ঠিক করে ফেলেছে, আগামীকাল আরোহীদের বাসায় যাবে পরিবারের বড়রা আর গিন্নিরা মিলে। প্রণয় সাহেব একটু আগেই ফোনে কথা বলেছেন মোজাম্মেল সাহেবের সাথে, আর তিনিই বলেছেন আগামীকালই যেন সবাই তার বাসায় উপস্থিত থাকে। কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের মাঝেই, এক কোণে মুখ গম্ভীর করে বসে আছেন তাহসান সাহেব, যেন হাসির সমুদ্রে এক ফোঁটা কালো দাগ।
এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল জায়ন স্মার্টলি রেডি হয়ে। তার কিছু পরেই নামল আকাশ, ইউভি আর নাজিম। নাজিম অবশ্য বৃষ্টির কানে আগেই বলেছে যে সে জায়ন এর সঙ্গে একটা নতুন অফিসের জন্য কাজে যাচ্ছে। সবাইকে একসাথে, এত প্রস্তুত হয়ে নামতে দেখে ঘরে উপস্থিতদের কপালে কৌতূহলের ভাঁজ পড়ল। আরেকদিকে, তাহসান সাহেবের দৃষ্টি ছিল একেবারে গুলি ছোঁড়ার মতো তীক্ষ্ণ ইউভি আর জায়নের দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছেন, যেন সুযোগ পেলেই রাইফেল কাঁধে তুলে তাদের উড়িয়ে দেবেন।
প্রণয় সাহেব ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
__”কী রে, কোথাও বেরোচ্ছিস নাকি?”
জায়ন, আকাশ, রায়ান আর নাজিম একে অপরের দিকে তাকাল মুহূর্তের জন্য যেন নীরব সম্মেলন চলছে চোখের ভাষায়। শেষমেষ জায়ন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
__” আসলে, মেজো চাচু আমরা একটু বেরোচ্ছি। হয়তো সকালে ফিরব।”
“সকালে ফিরব” কথাটা বাতাসে ছড়াতেই অনন্যার মুখ যেন লাল হয়ে উঠল রাগে। চোখের পাতা অল্প নড়ে উঠল, আর সেই দৃষ্টি ইউভির বুকে গিয়ে যেন সোজা বিঁধে গেল। ইউভির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, সে তড়িঘড়ি জায়নের পেছনে সরে এসে নিচু গলায় বলল,
__”ভাইয়া যেতে হবে না, থাক…”
জায়ন সামান্য মাথা ঘুরিয়ে ইউভির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
__” তুই তো শুধু চোখ রাঙানি দেখছিস আর আমি যে হাই ভোল্টেজ ডোজ খেয়ে উপরে থেকে নেমে আসলাম? আমি বলেছি তুই যেতে বলেছিস, এখন তুই পেছনে হাটছিস ।”
ইউভির চোখ কপালের উপর উঠে গেল, মুখ থেকে হকচকানো গলায় বেরিয়ে এলো,
__”কী-ই-ই? ভাইয়া,এইটা কী করলা? পাখির কানে গেলে আমি শেষ।”
জায়ন হালকা বিরক্তি মাখা ভঙ্গিতে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
__”বেশি প্যানপ্যান করিস না। চুপচাপ থাক।”
প্রণয় সাহেব আবারও হাসিমুখে বললেন,@
__”ওহ আচ্ছা সাবধানে যাস।”
এবার মেহজাবীন বেগমের চোখে কৌতূহলের ঝিলিক, কণ্ঠে সামান্য অভিযোগ মিশে গেল,
__মেজো আম্মুর তো শরীরটা ঠিক নেই, আর তুই ঘুরতে যাচ্ছিস?”
জায়ন মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল,শান্তি খুঁজতে বেরোচ্ছি, আর এখানে সবাই প্রশ্নের পাহাড় তুলে দিচ্ছে। কীভাবে বোঝাবে,একটু দূরে না গেলে শরীর মাথা সবই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে । এদিকে বউয়ের রাগে আগুন জ্বলছে, তবুও যাচ্ছি কিন্তু বোঝেনা কেউ। তারপর মুখে শুধু শান্ত স্বরে বলল,
__” মা, এখন তো ঠিক আছে। তোমরা একটু খেয়াল রেখো , পারলে একটু খাবারের সঙ্গে ফ্রুটস ও দিও ।
জ্বর হয়তো আর আসবে না , আসলে আমায় কল দিও ,তুমি বা মেজো মা রাতে ওর কাছে একটু থেকো।”
জায়নের কথা শুনে রুহেনা বেগম আশ্বাসের সুরে বললেন,
__” ঠিক আছে, তোরা যা। চিন্তা করতে হবে না, আমরা দেখে নেব।”
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, একে একে সবাই বেরিয়ে পড়ল।বাইক গুলো ইঞ্জিনের গর্জন তুলে ধীরে ধীরে বাসার গেট পেরিয়ে গেল।
বিকেলের রোদটা ঢাকার এই অভিজাত রিসর্টের কাঁচের দেয়ালে পড়ে সোনালি আভা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। চারপাশে নিখুঁতভাবে ছাঁটা সবুজ লন, সারি সারি নারকেল গাছ হালকা বাতাসে দুলছে। লনের একপাশে নীলচে রঙের ইনফিনিটি পুল, যার পানি ঝলমল করে উঠছে সোনালি আলোয়। দূরে বসার জন্য সাজানো রট-আয়রনের টেবিল আর চেয়ার, সেখানে কয়েকজন অতিথি বসে নিঃশব্দে কফি চুমুক দিচ্ছে, আরেকদিকে ছোট্ট ফোয়ারা থেকে টুপটাপ পানি পড়ার মিষ্টি শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে পাখির ডাকের সঙ্গে। বাতাসে হালকা লেমনগ্রাস আর ফুলের গন্ধ মিশে আছে, যেন পুরো পরিবেশটাই শান্তি আর বিলাসিতায় ভরা। শিশুদের হাসির শব্দ ভেসে আসছে গার্ডেনের দিক থেকে, আর পুলসাইডের লাউঞ্জে বসে কেউ কেউ বিকেলের হালকা নাস্তা উপভোগ করছে। আকাশে লালচে-কমলা রঙের ছোঁয়া ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে, আর চারপাশে সেই প্রশান্ত নীরবতা যা শুধু এমন অভিজাত জায়গাতেই পাওয়া যায়।
পুলের ধারে বসে ছিল জায়ন, আকাশ, ইউভি, নাজিম, জেমস আর আহান সাগর । পলাশ ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি, তাই সবার মাঝখানে তার চেয়ারটা ফাঁকা পড়ে ছিল, যেন আড্ডার রঙে হালকা এক শূন্যতা মিশে আছে। কিন্তু এদের কপালে যে টর্নেডো আসতে চলেছে , সেই সংখ্যা উপলব্ধি না করেই নিজেদের আনন্দে মেতে আছে ।
__” আপু আসবো? বড় আম্মু তোমার জন্য স্যুপ পাঠিয়েছে ”
বাইরে থেকে হঠাৎ ভেসে এল অনন্যার কোমল কন্ঠ ভেসে আসতেই তিয়াশা নরম গলায় উত্তর দিল, কণ্ঠে একটুখানি ক্লান্তি
__”হ্যা আয়”
অনন্যা ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে তাকাল তিয়াশার দিকে, চোখে কৌতূহল,
__” আপু তুমি দুপুর থেকে এত বড় ঘোমটা কেন দিয়ে
রেখেছো?”
তিয়াশার গাল টা এখনো হালকা লাল হয়ে আছে ,তাই নিজের মুখ টা ঢেকে রেখেছে, তাছাড়া জায়ন এর দেওয়া গলায় ভালবাসার চিহ্ন গুলো এখনো স্পষ্ট। অসভ্য বাজে লোকটার জন্য কোথাও মুখ দেখাতেও পারবেনা।
তাই কথা ঘোরাতে তিয়াশা বলে উঠলো,
__”আরে ভাবি এসব বাদ দিয়ে ননদের পাশে এসে বসো।”
“ভাবি” শব্দটা শুনে অনন্যা লজ্জায় গাল টিপে লাল হয়ে গেল। ধীরে ধীরে তিয়াশার পাশে বসে, নিচু স্বরে বলল,
__”প্লিজ আপি ভাবি বলবা না লজ্জা করছে আমার”
এই বলেই অনু মাথা নিচু করে নিল।”
লাজুক মুখ দেখে তিয়াশার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটল। সে অনন্যাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরল, চোখে স্নেহের ঝিলিক,
__”আমি খুব খুশি তোর আর ভাইয়ার জন্য। কিন্তু ভাইয়া কে এত ছার ও দিস না বুঝলি।”
অনু বুজতে পারল না তার আপু কি বলছে? তাই একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করল,
__”বুঝলাম না আপু তুমি কি বলছো।”
তিয়াশা আলতো করে তাকে ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল, মুখে গম্ভীর ভাব ,
__”এই যে এরা একদিনের জন্য রিসর্ট এ গেল ইউভি ভাইয়ের কথায়। আজকাল দিনকাল ভালো না কত মেয়েরা ছেলেদের পিছনে ঘুরঘুর করে । তখন এদের মন গলে গেলে?”
অনুর এই কথা শুনে যেন মাথায় বজ্রপাত ঘটলো, তাকে তো তার ইউভি ভাই অন্য কথা বলেছিলে মেসেজ করে। মুখে বিরক্তি আর রাগ ফুটিয়ে অনন্যা বলল,
__” আপু তোমার ভাইয়া তো অন্য কথা বলল মেসেজ করে, বলল আকাশ ভাইয়ার কোন ফ্রেন্ড এর বড় ভাই নাকি রিসোর্ট ওপেন করেছে তাই তাদের যাওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছে”
অনন্যার কথা শোনার সাথে সাথেই তিয়াশার চোখে রাগের আগুন জ্বলে উঠল। বিছানা ছেড়ে দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিল। সরাসরি আরোহীকে কল দিল, ফোনটা লাউডস্পিকারে রেখে ফোন রিসিভ হতেই একটুও সময় নষ্ট না করে বলল,
__”দোস্ত তুই কি জানিস আকাশ ভাই কোথায় গেছে?”
,ওপাশে কিছুটা বিরক্ত স্বরে আরোহী উত্তর দিল
__” বেবি না হায় না হ্যালো তোর ভাইয়ার খবর জিজ্ঞাসা করছিস? ”
__”আরে বলনা?”
__”কি হয়েছে? হ্যাঁ, জানি তো নাজিম ভাইয়ার কোন বন্ধু নাকি ইনভাইট করেছে।”
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৫
এই কথা শোনা মাত্রই দুই বোনের চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে, বুঝতেই পারছে কি ঘটছে।
তিয়াশা গম্ভির স্বরে আরোহী কে বলল,
__” একটু কলে থাক, সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
তিয়াশা অনুর দিকে তাকিয়ে রূঢ় কন্ঠে বলল,
__”আপুকে ডেকে নিয়ে আয় বনু।”
