চেকমেট পর্ব ৬৬
সারিকা হোসাইন
কাঁচা ফুলে সজ্জিত বাসর ঘরে আধ হাত ঘোমটা টেনে বসে আছি নেলি।বাইরে প্রচন্ড শীত।দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাবার উপক্রম।নেলির ইচ্ছে হলো শাড়ি গহনা না পাল্টেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে ঘুমুতে।কিন্তু অভিরূপ এর জন্য হলো না।বাসর ঘরে নববধূ ফেলে কোথায় কোন রাজ কার্য হাসিল করছে কে জানে?
ঘুম ভরা চোখে বার কয়েক হামি তুললো নেলি।এরপর হাটু ভাঁজ করে তাতে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুঝলো।
সারফরাজ আর অভিরূপ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।অভিরূপ এর হাতে একটা প্যাকেট গুঁজে দিয়ে সারফরাজ বুক উচিয়ে বললো
“বিড়াল কিন্তু আজই মারতে হবে বুঝলি?নয়তো পুরুষ মানুষের দাম থাকে না।
অভিরূপ ভ্যাবলা কান্তের ন্যয় শুধালো
“বিড়াল না মারলে কি হবে?
সারফরাজ ইতিউতি তাকালো অভিরূপ এর প্রশ্নে।এরপর ফিসফিস করে বললো
“নয়তো আজীবন তোকে কথা শুনাবে।তোর ক্ষমতা নিয়ে উঁচু গলায় কথা বলবে।মেয়েদের সামনে যতো ক্ষমতাবান থাকা যায় ততোই মঙ্গল বুঝলি?
অভিরূপ তাজ্জ্বব হয়ে জিগ্গেস করলো
“তুই বিড়াল মেরেছিলি?
চ” সূচক শব্দ উচ্চারন করে সারফরাজ চোখ টিপলো এরপর বললো
“শুধু বিড়াল না বদ্দা আরো অনেক কিছু মেরেছি।ওসব জেনে তোর লাভ নেই।অলমোস্ট বারো টা বেজে গেছে।তোর যেই বউ গিয়ে দেখবি ঘুমিয়ে পকাৎ।বিড়াল মারতে চাইলে তাড়াতাড়ি বউয়ের কাছে যা।আর বিড়াল না মেরে রাতভর মশা মারতে চাইলে এখানে দাঁড়িয়ে থাক।আমি গেলাম।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অভিরূপ কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না সারফরাজ।বড় বড় পা ফেলে চলে এলো।বিয়ে খেয়ে রূপকথা তার মা বাবার সাথে বাড়ি ফিরে গেছে।কমিশনার ব্যাটা বদের হাড্ডি।আর একটু দেরি হলেই আর গেট খুলবে না।ইদানিং বউ ছাড়া ঘুমানো যায়না।তন্মধ্যে হাড় কাঁপুনি শীতের রাত।এমন নিষ্ঠুর রাতে বউ ছাড়া থাকা তো দূর কল্পনা করলেও বুক হুতাশনে পোড়ে।কিন্তু কমিশনার এর ধান্দা একটাই।কি করে সারফরাজ কে কষ্ট দেয়া যায়।
সারফরাজ চোখের আড়াল হতেই তপ্ত শ্বাস ফেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো অভিরূপ।বাড়ি খানা একদম শুনশান নীরব।অভির মা অসুস্থ মানুষ।বিয়ের কাজ শেষ করেই তিনি ঘরে গিয়ে দুয়ার দিয়েছেন।
অভিরূপ এর ছোট বোন অন্তু নেলিকে অভির ঘরে দিয়ে নিজেও তার ঘরে গিয়ে দুয়ার দিয়েছে।এই শহরে অভিরূপ দের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই।গ্রামে দূর সম্পর্কের এক চাচা আছে শুধু।ভদ্রলোক পা ভেঙে ঘরে বসে আছেন।তাই বিয়েতে আসতে পারে নি।আপাতত নতুন দম্পতি কে কোন প্রকার বিরক্ত বা অস্বস্তি তে ফেলার মতো কেউ নেই এই বাড়িতে।
নিঃশব্দে সিঁড়ি মাড়িয়ে নিজ কক্ষের সামনে এসে হাজির হলো অভি।বুকটা কেমন তোলপাড় করছে আজ।পাগলী মেয়েটা আজ অভির দখলে।মনে কেমন এক অদ্ভুত ভালো লাগা মিশ্রিত সুখ ভেসে বেড়াচ্ছে।দরজায় অল্প কড়া নেড়ে গলা খাকরি দিলো অভিরূপ।এরপর দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।আলোকিত কক্ষে প্রবেশ করে বিছানার পানে তাকাতেই সারফরাজ এর বলা কথাটা কানে ভেসে এলো অভিরূপ এর।
“তোর যেই বউ ,দেখবি ঘুমিয়ে পড়েছে।
অভিরূপ এর মাঝে মাঝে সারফরাজ কে সব জান্তা মনে হয়।নইলে দুনিয়া সম্পর্কে এতো ধারণা তার কোত্থেকে এলো?তার বাসর ঘরে তার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়বে এটা সারফরাজ কিভাবে জানলো?
নিজের মনের এলোমেলো অদ্ভুত প্রশ্ন সাইডে সরিয়ে শেরওয়ানীর বোতাম খুলতে খুলতে অভিরূপ বিছানার কাছে এসে দাড়ালো।এরপর হাত বাড়িয়ে নেলির মাথায় স্পর্শ করে ডাকলো
“নেলি ঘুমাচ্ছ?
আকস্মিক কারো হাতের স্পর্শে হকচকিয়ে উঠলো নেলি।নিজেকে কোনো মতে ধাতস্থ করে সামনে মুখ তুলে তাকাতেই শ্যাম বর্ণের মায়াবী মুখের মানুষটির সাথে চোখাচোখি হলো।অভিরূপ এর মুখশ্রী জুড়ে আজ নতুন এক সৌন্দর্য ধরা দিয়েছে।তাকে দেখতে বড্ড আকর্ষণীয় লাগছে।অভিরূপ তার স্বামী এটা মনে পড়তেই নেলির হাত পা কেঁপে উঠলো।সেই সাথে চোখ মুখ হলো ফ্যাকাসে।অভি বোধ হয় টের পেলো নেলির ভেতরের অবস্থা।তাই নমনীয় গলায় বলল
“চলো ফ্রেস হয়ে ঘুমুবে।
নেলি মাথা ঝাঁকালো।এরপর বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালো।নেলি আর অভিরূপ মুখোমুখি হতেই নেলির বাহু আলতো করে ধরে অভিরূপ বললো
“তোমায় খুব সুন্দর লাগছে নেলি।একদম হাতে বানানো পুতুলের মতো।এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তুমি আমার স্ত্রী।
নেলি অল্প হাসলো।অভিরূপ হাতের আজলায় নেলির সফেদ মুখটা ধরে কপালে চুমু খেলো।আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো নেলি।অভিরূপ ঘোর লাগা চোখে সেই সৌন্দর্য গিলে নিলো।এরপর চোখের পাতায় চুমু একে বললো
“চলো ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ি।
নেলি মাথা কাত করে সায় জানিয়ে লাগেজ থেকে এক সেট জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো ।
নেলি যেতেই বেড সাইড টেবিলের উপর নজর গেলো অভিরূপ এর।টেবিলে এক গ্লাস জাফরান মিশ্রিত দুধ,ফল আর মিষ্টি রাখা।
টেবিল থেকে নজর সরিয়ে গায়ের জামা খুলে বাইরের ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো সে।
প্রায় মিনিট বিশেক পর গায়ে একটা লং টিশার্ট আর পালাজ্জো পরে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো নেলি।অভিরূপ বসে যেনো তারই অপেক্ষা করছে।নেলিকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো অভিরূপ।এরপর জায়নামাজ এগিয়ে বললো
“ওযু করেছো?
হ্যা বোধক মাথা নাড়ালো নেলি।অভি হাত ইশারায় বললো
“ঠিক আছে চলো।
অভির পাশে দাঁড়িয়ে দু রাকাত নফল নামাজ শেষ করে মোনাজাত ধরলো নেলি।অভি তার মোনাজাত এর সমস্ত দোয়া নেলির মোনাজাতে ঢেলে দিয়ে বলে উঠলো
“সমস্ত দোয়া তোমাকে দিয়ে দিলাম।স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী হও।
মোনাজাত শেষ করে প্রশস্ত হাসলো নেলি।এরপর জবাবে বললো
“তোমার সমস্ত দোয়া কবুল হোক।আমিন।
ধীরে ধীরে রাত বাড়লো সেই সাথে বাড়লো শীতের প্রকোপ আর হীম বাতাস।
গোসল করার কারনে নেলির ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠলো।সেই সাথে কালো হয়ে এলো হাত।অভিরূপ নেলির বরফ সম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলো
“কম্বলের নীচে এসো ।
নেলি অভিরূপ কে অনুসরণ করে বিছানায় উঠে বসলো।অভিরূপ শুয়ে নিজের পাশের জায়গা নেলিকে নির্দেশ করে বললো
“আমার কাছে এসো।
অভিরূপ এর পাশে শোয়ার কথা চিন্তা করতেই নেলির গাল রক্তিম আভায় ছেয়ে গেলো সেই সাথে বুকে ভয় এসে হানা দিলো।
অভিরূপ নেলির হাত ধরে টেনে জোর করে নিজের পাশে শুইয়ে নেলির পেট জড়িয়ে ধরলো।এমন সময় হো হো করে হেসে উঠলো নেলি।পেটে তার অসহনীয় সুড়সুড়ি।অভিরূপ বুঝতে পেয়ে হাত সরিয়ে নিলো।এরপর নেলির গলার ভাঁজে মুখ ডুবাতে চাইলো।এবারও চিংড়ি মাছের মতো লাফিয়ে হেসে উঠলো নেলি।
অভিরূপ শক্ত হাতে নেলির মুখ চেপে ধরে বলল
“হুশ!সবাই জেগে যাবে।প্লিজ এভাবে হেসো না।
নেলি চোখ বুজে আশ্বস্ত করলো অভিকে।অভিরূপ নেলির মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেলির হাত নিজের হাতের করপুটে নিয়ে বলে উঠলো
“তোমার কি আরো সময় চাই নেলি?
বোকা নেলি কি বুঝলো কে জানে?সে ফট করে উত্তর দিলো
“না আমার সময় চাই না।
অভিরূপ ঠোঁট টিপে লজ্জা আড়াল করে বলে উঠলো
“আর ইউ সিউর?
নেলি ঠোঁট উল্টে বললো
“হ্যা!
নেলির সম্মতি আছে ভেবে নেলির একান্ত কাছাকাছি এলো অভিরূপ।এরপর নেলির টিশার্ট এর ভেতরে হাত ঢুকালো।নেলির মেদ হীন নরম উদর খানা ছুঁয়ে দিতে চাইলো পরম ভালোবাসায়।কিন্তু এবারও অভিকে বোকা বানিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো নেলি।অভিরূপ চোখ বুজে পরম আবেশে নেলির ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ালো।এরপর গলার ভাঁজে, কানে।অভির ছোয়া জতো গাঢ় হলো নেলির হাসি ততো মাত্রা ছাড়ালো।চূড়ান্ত অস্থিরতা যখন অভিরূপ এর দেহে ছড়িয়ে গেলো সেই অস্থিরতায় পানি ঢেলে উঠে বসে পেট চেপে ধরে খিলখিল করে হেসে উঠলো নেলি।
অভিরূপ তপ্ত শ্বাস ফেললো।তার রাগ হলো এবার নেলির উপর।বিছানা থেকে তড়িৎ নেমে দাঁড়ালো অভিরূপ।এরপর গায়ের টিশার্ট খুলে মেঝেতে ছোড়ে মেরে নেলিকে আহত গলায় বললো
“ঘুমাও নেলি।অনেক ধকল গেছে।আমরা কাল কথা বলবো।
বলেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো অভি।এরপর ফোন থেকে সারফরাজ কে টেক্সট পাঠালো
“বারান্দায় দাঁড়িয়ে শীতের রাতে দুঃখ বিলাস করছি।কিন্তু সিগারেট নেই বিধায় ফুঁকতে পারছি না।অকাজের প্যাকেট না দিয়ে যদি একটা সিগারেট এর প্যাকেট দিতি তবে বেশ উপকার হতো।
মেসেজ পাঠিয়ে ফোন ছুড়ে মারলো বেলকনিতে পাতানো ডিভানে।এই শীতের রাতে কুল কুল করে খামছে অভি।তার শরীরে যেনো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।মাথায় চূড়ান্ত ক্রোধ।ইচ্ছে করছে চড়িয়ে নেলির গাল লাল করে ফেলতে।নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে বারান্দার গ্রিল চেপে ধরে ফসফস করে শ্বাস নিলো অভিরূপ।এমন সময় ত্রস্ত পায়ে অভিরূপ এর পেছনে এসে দাড়ালো নেলি।এরপর শীতল দুই হাতে পিছন থেকে অভিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে অপরাধী গলায় বললো
“আম সরি।বেশি বাড়াবাড়ি করার জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।ভেতরে চলো প্লিজ।
অভি উষ্ণ শ্বাস ছোড়ে ভারী কন্ঠে বললো
“আমার ঘুমুতে সময় লাগবে।তুমি ঘুমাও নেলি।
অভিরূপ এর রাগ বুঝতে পেরে আরেকটু মিইয়ে গেলো নেলি।সে শক্ত হাতে অভিকে নিজের পানে ফেরালো।এরপর দুই হাতে অভিরূপ এর গলা জড়িয়ে পা উঁচু করে ঠোঁটে চুমু খেলো।এরপর চোয়ালে,গলার নীচে।
সঙ্কোচে নিরুত্তাপ রইলো অভিরূপ।কারন নেলিকে বিশ্বাস নেই।তার ফিলিংসে পানি ঢেলে এখনই হো হো করে উঠবে।
অভিরূপ এর উন্মুক্ত পিঠে শীতল হাতে খামচে ধরলো নেলি।উন্মাদনায় চোখ খিচে বুজে নিলো অভিরূপ।ধীরে ধীরে নিজের ভালোবাসা একটু একটু করে জাহির করলো নেলি।অভিরূপ শ্বাস ভারী গলায় হাঁপাতে হাঁপাতে শুধালো
“আর হাসবে?
না বোধক মাথা নাড়ালো নেলি।এরপর অভিরূপ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
হ্যাচকা টানে নেলিকে পাঁজা কোলে তুলে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলো অভিরূপ।এরপর বাতি নিভিয়ে ফিসফিস করে নেলির কানে কানে বলে উঠলো
“ভালোবাসি নেলি জান।তোমার কাছে আমার পুরোটাকেই সমর্পণ করলাম।তোমার যা করতে ইচ্ছে করে তুমি তাই করো আমায়।
সুফিয়ান চৌধুরীর বাড়ির প্রধান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমানে কলিংবেল টিপছে সারফরাজ।কিন্তু ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলছে না।রূপকথাকে পঞ্চাশ বারের উপরে ফোন করা হয়েছে।সেও ফোন তুলেনি।ধীরে ধীরে সারফরাজ এর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো।সে দরজায় লাথি বসাতে চাইলো।কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে পারলো না।শেষমেশ বিরক্ত হয়ে সুফিয়ান চৌধুরী আর তার মেয়েকে পরে উচিত শিক্ষা দেবে ভেবে গাড়ি হাকিয়ে নিজের বাড়ি ছুটলো।রাস্তা ফাঁকা থাকায় রমনা থেকে রামপুরা যেতে তার বেশি সময় লাগলো না।গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে হনহন করে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো।টেনে হিচড়ে গায়ের স্যুট খোলে টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতে নিজের রুমের দরজা সজোড়ে খুললো সারফরাজ।দরজা খুলতেই বিছানায় কম্বল জড়িয়ে চোখ মুখ ঢেকে কাউকে ঘুমন্ত অবস্থায় চোখে পড়লো।চোখে মুখে বিস্ময় ফুটিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলো সারফরাজ।এরপর বিছানায় বসে কম্বল সরাতেই ঘুমন্ত রূপকথার মায়াবী মুখটা নজরে এলো।রূপকথাকে দেখেই খুশিতে নাচতে ইচ্ছে হলো তার।শশুড় নামক অসুর যে,তার বউকে আটকে রাখতে পারেনি ভেবেই আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করলো তার।গায়ের পোশাক খুলে ঝটপট ফ্রেস হয়ে রূপকথার পাশে চুপটি করে শুলো সারফরাজ।এরপর রূপকথাকে নিজের বাহুডোরে এনে ঠোঁটে আলতো ভালোবাসার পরশ একে শান্তির শ্বাস ছাড়লো।সারফরাজ এর বুকে মুখ লুকিয়ে সারফরাজ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘমু কন্ঠে রুপকথা শুধালো
“এতো দেরি করলে কেনো?
রূপকথার মুখের উপর থেকে লেপ্টে থাকা চুল যত্নের সহিত সরাতে সরাতে সারফরাজ বললো
“তোমার বাপের বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছিলাম।
রূপকথা হামি তুলে বললো
“বাসায় তো কেউ নেই।
“তুমি ফোন তুলো নি কেনো বউ জান?
সারফরাজ ফোন করেছে আর সে টের পায়নি ভেবেই রূপকথার ঘুম ছুটলো।সে বড় বড় চোখ করে উঠে বসে বিছানা হাতড়ে ফোন খুজলো।কিন্তু বিছানায় ফোন নেই।ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত ভঙ্গিতে বিছানা ছেড়ে নামলো রূপকথা।এরপর কাবার্ডে রাখা ব্যাগ খানা বের করে তাতে হাত ঢুকালো।ভেতরে সাইলেন্ট করা ফোন।রূপকথা ফোন বের করে সাইলেন্ট মোড সরিয়ে ব্যাস্ত গলায় বললো
“একদম মনে ছিলো না।আর এটা সাইলেন্ট হয়েছে কিভাবে?ইশ অনেক অপেক্ষা করেছো তাই না? সরি রাজা মশাই।
বলেই সারফরাজ এর বুকে উম খুজলো।রূপকথাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে বুকে টেনে নিয়ে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে সারফরাজ বললো
“হুশ সরি বলে না।সব সরি আমি বলবো।তুমি শুধু খবরদারি করবে আমার উপর।আমাকে শাসন করার পুরো ক্ষমতা তোমার হাতে সপে দিয়েছি আমি।তোমার কাছে ফিরতে আমার বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে।আমাকে ছাড়া এই কনকনে ঠান্ডায় তোমার একা ঘুমুতে হয়েছে।দাও শাস্তি দাও আমাকে।
রূপকথা সারফরাজ এর নাকে নাক ঘষে বলে উঠলো
“আজ শাস্তি দেবার মোড নেই।শরীর ক্লান্ত।অন্যদিন দেবো।
সারফরাজ দুস্টু হেসে ফট করে বলে উঠলো
“তবে কাল হু?
রূপকথা সারফরাজ এর বুকে আলতো করে কয়েক ঘা লাগিয়ে বলে উঠলো
“শাস্তির নাম করে খালি ফায়দা লুটা নাহ?ছুটাচ্ছি দাঁড়াও।
ভোরের কুয়াশা হটিয়ে তেজী সূর্য যখন কিরণ ছড়ালো তখন ঘুম ভাঙলো সারফরাজ এর।রূপকথা এখনো ঘুমে বিভোর।সন্তর্পনে রূপকথার মাথার নিচ থেকে নিজের ঝিম ধরা হাতটা বের করলো সারফরাজ।এরপর রূপকথার কপালে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর ছেড়ে।কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ এর উদ্দেশ্যে গার্ডেন এরিয়ায় এলো সারফরাজ।বাগানের কোণে হালকা জগিং করতেই দেখা মিললো সুফিয়ান চৌধুরীর।সকাল সকাল শশুড় মশাই কে বাগে পেয়ে ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ফুটলো সারফরাজ এর।ছোট ছোট দৌড়ে সুফিয়ান চৌধুরীর পেছনে দাঁড়িয়ে সারফরাজ খোশ মেজাজে বলে উঠলো
“মেয়ের লেজ ধরে আমাকে জ্বালাতে চলে এসেছেন তাই না?
আকস্মিক সারফরাজ এর গলা পেয়ে পেছন ফিরলেন সুফিয়ান চৌধুরী।এরপর চোখ মুখ কুঁচকে বাজ খাই গলায় বললেন
“দিলি তো আমার সুন্দর সকাল টা খারাপ করে।ধুর!
সারফরাজ কিটকিটিয়ে হেসে বলে উঠলো
“মেয়েকে ছাড়া এই এক মাস কেমন লেগেছে শশুড় আব্বা?
“যেমনই লাগুক তোকে বলবো কেনো?তুই আমার কে?আমার ভালো লাগা মন্দ লাগায় কি আসে যায় তোর?তুই তো আমার জনম জনমের শত্রু।সে যাই হোক মেয়েটাকে এভাবে বশ না করলেও পারতি।
“এই যা আমি আবার কি করলাম?
তেঁতে উঠলেন সুফিয়ান চৌধুরী।দাঁত কিড়মিড় করে মুখ ভেংচে বললেন
“উহ কচি খোকা।ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।অথচ কাটা সহ চিবিয়ে খায়।তোকে ফেলে মেয়ে আমার কিচ্ছুতেই ও বাড়িতে থাকবে না।এই শীতের রাতে বিয়ে বাড়ি থেকে জোর করে ধরে বেঁধে আমাকে আর তোর শাশুড়ি কে এখানে নিয়ে এসেছে।মেয়েটা তো এমন ছিলো না আমার!মাথাটা পুরো খেয়ে নিয়েছিস তুই হারামজাদা।
বউ তার একনিষ্ঠ ভক্ত ভেবেই সারফরাজ এর পেটে প্রজাপতি উড়লো।ভনিতা শেষ করে সুফিয়ান চৌধুরী সিরিয়াস গলায় শুধালেন
“ক্যালিফোর্নিয়া ফিরবি কবে?সামনে রূপকথার এক্সাম আছে।তুই এভাবে ওর কাছে থাকলে ওর পড়া হবে না।মেয়েটা পড়াশোনা সব চাঙ্গে তুলে বসে আছে।
সারফরাজ লম্বা শ্বাস ফেললো।এরপর বললো
“আগামী মাসেই চলে যাবো একবারে লম্বা সময়ের জন্য।ফিরবো মাস ছয়েক পর।বিজনেস সামলানো টাফ হয়ে যাচ্ছে এভাবে।
সুফিয়ান চৌধুরী কিছুক্ষন ইতস্তত করে বলে উঠলো
“দুদিন পর তোদের ঘরে নতুন মেহমান আসবে।তাকে তোর এই কালো অধ্যায় দেখিয়ে বড় করবি?
সারফরাজ তাৎক্ষণিক মাথা নেড়ে বলে উঠলো
“আমি কখনো কোনো নিরীহ,নিরপরাধ, অসহায় ,নির্দোষ মানুষের প্রাণ নেইনি কমিশনার সাহেব।আমার সন্তান আমার কালো অধ্যায়ে নয় আমার নীতিতে বড় হবে।যে ভালো করবে তার সামনে তালি বাজাবে যে অন্যায় করবে তাকে জ্যান্ত পুঁতে দেবে।আর পিঠ পিছে যে বিশ্বাস ঘাতকতা করবে তার জন্য একটাই শাস্তি “মৃত্যু
সুফিয়ান চৌধুরী চোখ কপালে তুলে শুধালেন
“আরেক সারফরাজ পয়দা করবি?
সারফরাজ বাঁকা হেসে পুশ আপ দিতে দিতে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ৬৫
“নিজের নাম উজ্জ্বল করতে হবে না?নানার মতো ভীতু হলে চলবে কি করে?
“আমি ভীতু?
“নয়তো কি?
“তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস।এর শোধ ঠিক তুলবো আমি।
“ঠিক আছে আব্বা জান, শোধ তোলার অপেক্ষায় রইলাম।
