ডার্কসাইড পর্ব ৫

ডার্কসাইড পর্ব ৫
জাবিন ফোরকান

সামনের ব্রিফকেসটির দিকে তাকিয়ে রোযা একটা শক্ত ঢোক গিললো।বিপরীত প্রান্তে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক মানুষটি নিজের কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আয়েশী ভঙ্গিতে। রোযার জন্য আরেক মগ বরাদ্দ থাকলেও সে তা পানে ইচ্ছুক নয়।কফির স্বাদ ভীষণ তেঁতো লাগে তার কাছে।এর তুলনায় কড়া লিকার, বেশি চিনি এবং পাউডার দুধ দিয়ে ঘন করে তৈরীকৃত চা তার অধিক পছন্দের।কিন্তু অন্য কারো কাছে তো আর তা চাওয়া যায়না।তাই কোনকিছু পানে ইচ্ছুক নয় এমন ভঙ্গিতে বসে রয়েছে রোযা।

ব্রিফকেসটি আকারে ছোট, ঝকঝকে কালো চামড়ায় আবৃত। রূপালী রঙের একটি হ্যান্ডেল সংযুক্ত রয়েছে তাতে।ভেতরে কি আছে তা দেখার তীব্র বাসনা হচ্ছে অন্তরে, যা রোযা বর্তমানে দমন করে রেখেছে।
মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক রোযার দিকে চেয়ে লাইটার বের করলো।একটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো,
– আজ বিকালের মধ্যে যথাযথ ঠিকানায় পৌঁছে দিস।তোকে আমি দশ হাজার নগদ দিয়ে দেবো।আর হ্যাঁ, ভুলেও পুলিশের সামনে যেন না পড়িস।ঠিক আছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ভদ্রলোকের নাম আসাদ উদ্দিন। রোযার দাদু ইউনূস রহমানের এককালের ছাত্র ছিলো সে।ছাত্র বলতে উচ্ছন্নে যাওয়া ছাত্র।কিন্তু তবুও তার দাদুর প্রতি অদ্ভুত একটা সম্মান লালন করেন আসাদ। এর প্রকৃত কারণ রোযার জানা নেই।তার দাদু মানুষটাই অমন ছিলেন, তার সম্পর্কে আসা মানুষগুলো তাকে সম্মান না করে পারতোনা।অথচ আজ সেই মানুষটিই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৃ*ত্যুর প্রহর গুণছে।

দাদু সুস্থ থাকাকালীন এই লোকটার সঙ্গে কালেভদ্রে দেখা সাক্ষাৎ হতো।সে কোন ধরনের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত তা অনুধাবন করে ইউনূস রহমান সর্বদাই তাকে এড়িয়ে চলতে চাইতেন।তথাপি অমায়িকতা কোনোদিন পরিত্যাগ করেননি।তার অসুস্থতার প্রথমদিকে আসাদ সহযোগিতা করতে চাইলেও ইউনূস রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।চাইলেও আসাদের এরপর কিছুই করার থাকেনি। কিন্তু তিনি ভাবেননি যে তার ছোট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে দেখা মেয়েটি একদিন তারই দ্বারস্থ হবে।সাহায্যের আবেদন নিয়ে নয় বরং কাজের সন্ধানের উদ্দেশ্যে!
রোযা ব্রিফকেসটি নিজের কোলের উপর তুলে নিলো। এতে কি আছে তা জিজ্ঞাসার লক্ষণ প্রদর্শন করলোনা।জানে, করেও লাভ নেই। অবশ্য এতে যে অবশ্যই অবৈধ কিছু রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।নাহলে শুধুমাত্র একটি জিনিস নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য এতগুলো টাকা তাকে দেয়া হতনা।
ব্রিফকেস নিয়ে উঠলো রোযা।

– ঠিক আছে আসাদ আংকেল।আমি তাহলে আসলাম।
আসাদ সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন রোযার দিকে।তারপর অ্যাশট্রেতে ছাই ফেলে বললেন,
– কাজটা করার জন্য লোকের অভাব নেই।কিন্তু তোকে দিয়েছি তার দুইটি কারণ রয়েছে।এক, নিষ্পাপ নিরীহ দেখতে নারীদের খুব সহজে কেউ সন্দেহ করেনা।তুই চাইলে বিপদে পড়লেও ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মুক্ত হতে পারিস।
রোযা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
– এবং দুই… আমি জানি তোর টাকার প্রয়োজন।তাই যদি তুই চাস এরপর আমার কাছে আসিস, আমি তোকে এই ধরণের ছোটখাট কাজ ধরিয়ে দেবো। সৎ পথে থেকে উপার্জনের তুলনায় অনেক বেশি পাবি।
আসাদের উচ্চারিত শেষ বাক্যটি রোযার হৃদয় উথলিত করে তুললো কিছু মুহূর্তের জন্য।অবৈধ পথে উপার্জন!বেশি হলেও বা কি?সে যা করছে তা তো পাপকার্যই,তাইনা? কিন্তু এছাড়া আর কি কোনো উপায় রয়েছে তার নিকট? নাহ, নেই। নিজের দাদুকে বাঁচানোর জন্য নিজের সম্মান বিক্রির মতন কদর্য সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছিল রোযা,সেই তুলনায় এই ধরণের কাজকর্ম হয়ত কিছুই না।

– ঠিক আছে আংকেল।আপনাকে ধন্যবাদ।
বেশিক্ষণ আর অপেক্ষা করলোনা রোযা।ব্রিফকেস সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।সে চলে যেতেই সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে নিজের ফোন বের করলেন।নম্বর ডায়াল করতেই তৃতীয় রিং হবার পর তা রিসিভ হলো।ওপাশ থেকে কেউ কিছু বললোনা,নীরব।আসাদ বিড়বিড় করলেন,
– ডেলিভারি আজকে পৌঁছে যাবে।
এটুকুই।ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়া হলো।

সাদা বর্ণের শিফনের ওড়না শরীরে জড়িয়ে লম্বা বিনুনী পাকিয়েছে রোযা।কানে গুঁজে নিয়েছে দশ টাকা খরচা করে কেনা তাজা একটি গোলাপ।আয়নায় বহুবার নিজেকে দেখেছে।বাইরের যে কেউ মনে করবে প্রেমিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে সেজেগুজে বেরিয়েছে কোনো রমণী।
সি এন জির সঙ্গে দরদাম করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা হয়ে গেলো সে।যাচ্ছে শহরের অন্যতম একটি অভিজাত এলাকায়।যে এলাকার আশেপাশেও যাওয়ার স্বপ্ন এর পূর্বে সে লালন করেনি।শোনা তথ্যমতে বিত্তবান ব্যবসায়ী ও গুটিকতক বিদেশী নাগরিকের বসবাস এবং বিনোদনের আখড়া স্থানটি।নাম “ সিটি ইউফোরিয়া ”। সড়কের জ্যাম এবং পুলিশ চেকপোস্ট এড়িয়ে চলার কারণে দেড় ঘণ্টার পথ পৌঁছতে রোযার আড়াই ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হলো।সবশেষে সে যখন “ সিটি ইউফোরিয়া ”- র সুবিশাল প্রবেশ ফটকের সামনে দাঁড়ালো তখন সূর্য ঢলে পড়তে আরম্ভ করেছে গগনের পশ্চিম প্রান্তে।

হাত দিয়ে অস্তমিত দিবাকরের রশ্মি আড়াল করে রোযা এগোলো নিরাপত্তারক্ষীর দিকে।তার কিছুটা অভিজাত বেশভূষায় স্যালুট করে রক্ষী জানালো,
– দুঃখিত ম্যাম।আপনাকে পরীক্ষা করতে হবে।আমাদের সেন্সর রয়েছে,আপনার সঙ্গের জিনিসপত্রগুলো দেখব।
রোযার হৃদয়ে একটি ভীতিকর শিহরণ খেলে গেলো।কিন্তু পরমুহুর্তেই সে অভিজ্ঞ ভঙ্গিতে নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে রক্ষীর কাছে এগিয়ে গেলো।হাতটি রাখলো রক্ষীর কাঁধে।
– মিস্টার…আমাকে সন্দেহ করছেন?
ঠোঁট কামড়ে এমন এক কন্ঠে রোযা প্রশ্নটি ছুড়লো যে ইউনিফর্ম পরিহিত রক্ষী সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। রোযার হাত তার কাঁধ বেয়ে বুক পেরিয়ে ক্রমেই নিচে নামতে থাকলো। শিউরে উঠলো রক্ষী,তার শরীরে অনুভূতির প্রকম্পন খেলতে আরম্ভ করেছে।

– আপ…আপনি…
– হুশ!সবকিছু কি আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে মিস্টার?
কাছে ঝুঁকলো রোযা।সরাসরি রক্ষীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলালো।তার কণ্ঠের মাদকীয় ভাবটি যেন রক্ষীকে সম্মোহিত করে ফেলেছে।তার বুঝতে আর কিছুই বাকি নেই যে এই রমণী এখানে কোন উদ্দেশ্যে এসেছে। বিত্তশালী পুরুষদের হরহামেশাই এমন তাজা যৌবনের প্রয়োজন হয়। রোযার হাত রক্ষীর বাহু বেয়ে কব্জিতে থামলো। একটি চোখ টিপ দিয়ে রোযা সরে দাঁড়াতেই রক্ষী হতবাক হয়ে খেয়াল করলো তার হাতের মুঠোয় শোভা পাচ্ছে একটি কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোট।

নোটটি পকেটে ভরে কোনপ্রকার প্রশ্ন ছাড়াই ফটক খুলে দিলো রক্ষী।লাস্যময়ী ভঙ্গিতে হেঁটে ভিতরে প্রবেশ করলো রোযা,অতঃপর পিছনে মাথা ঘুরিয়ে অধরে তর্জনী ছুঁইয়ে ইশারা করলো। বিনিময়স্বরুপ পাল্টা হাসলো যৌবনের শেষ পর্যায়ে পদার্পণ করা রক্ষী। রোযা ঘুরে হাঁটতে শুরু করলেও সে নিজের শরীরে রক্ষীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তখনো অনুভব করতে পারলো।যেন লোভনীয় কোনো খাদ্যবস্তুর দিকে চেয়ে রয়েছে ক্ষুধার্ত ব্যক্তি। রোযার হাত মুঠো হয়ে এলো, কিন্তু একটি নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত অগ্রসর হলো সে।

নির্দিষ্ট ভবন খুঁজে পেতে সমস্যা হলোনা রোযার। সামর্থ্যবানদের তৈরী এই আধুনিক এলাকায় সবকিছুই সুপরিকল্পিতভাবে নির্মিত।সড়কে নেই বিন্দুমাত্র আবর্জনা। সারি সারি বহুতল ভবনের সামনে রয়েছে পার্কিং লট।পিছনে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা যাতে বাগান কিংবা ফলজ গাছ রোপিত করা হয়েছে।শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে পার্ক এবং বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, টেনিস ফিল্ডের ব্যবস্থা।এক কথায় এক আদর্শ সোসাইটি।সড়কের মোড়ে, গ্যারেজে পার্ক করে রাখা অভিজাত গাড়িগুলো দেখতে দেখতে রোযা ভাবলো যেন সে বিদেশের কোনো শহরে এসে পড়েছে,ঠিক যেমনটা দেখানো হয় টেলিভিশনের পর্দায়।

সুউচ্চ ভবনটির নাম “ মারবেল ”।স্বর্ণালী নেমপ্লেটে রপালি অক্ষরে খচিত নামটি লক্ষ্য করে রোযা দ্বিধায় ভুগলো কিছু মুহূর্ত।কেনো?এমন নামের আদও অর্থ রয়েছে কোনো?নাকি অতশত না ভেবে যা মনে এসেছে রেখে দিয়েছে?কে জানে বাবা বড়লোকদের মতিগতি!
ভবনের দারোয়ানকে কোথাও চোখে পড়লোনা।তার টেবিল শুন্য পড়ে রয়েছে।তাতে খোলা একটি বই। রোযা যাওয়ার সময় বইটি বন্ধ করে দিলো।খোলা বই নাকি শয়তানে পড়ে!ছোটবেলায় শোনা প্রবাদটি সে সবসময়ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করে এসেছে।
নিজের ভাগ্য এতটা ভালো রোযা বিশ্বাস করতে পারলোনা।লিফট পেলো সম্পূর্ণ ফাঁকা।তাতে উঠে ছাব্বিশ তলার বোতাম চেপে দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো সে।লিফট গন্তব্যে পৌঁছতে পৌঁছতে বিদেশী এক সঙ্গীতের মূর্ছনায় পরিপূর্ণ করে রাখলো অভ্যন্তর।

ডিং — শব্দে দরজা খুলে যেতেই রোযা বাইরে পা বাড়ালো।মসৃণ মেঝেতে তার শক্ত সোলের জুতো ঠকঠক ধ্বনি তুললো।নিজেকে প্রশান্ত রেখে ফ্ল্যাট সি ১ এর দরজার সামনে থমকালো সে।পাশের দেয়ালে কলিংবেলের পাশাপাশি পিনকোডের ব্যবস্থা রয়েছে।পিনকোড অবশ্যই রোযার জানা নেই।সে কলিং বেল চাপলো।ভেতর থেকে মৃদু একটি মিষ্টি সঙ্গীতের প্রবাহ শোনা গেলো।কলিং বেলের আওয়াজ যে এত মধুর হতে পারে তা রোযা এর পূর্বে কোনোদিন আন্দাজও করেনি।

মধ্যবিত্তদের বাড়িতে কলিং বেল বাজালেই বাজখাঁই কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠে পশুপাখি, নাহলে ঢোল বাদ্য বাজিয়ে বাজতে থাকে কোনো হিন্দি গানের সুর। রোযার বর্তমান বাড়ীওয়ালার ফ্ল্যাটেই তো কলিং বেল বাজালে শোনা যায় ভারতীয় আইপিএলের থিম সংয়ের সুর! মনে করে এত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেও রোযার খানিক হাসি পেয়ে গেল।
খট করে মৃদু শব্দের সহিত খুলে গেলো দরজা।দৃশ্যমান হলো এক রমণী। ছেলেদের মতন টি শার্ট এবং ট্রাউজার তার পরনে।চুলগুলো মাথার উপরে তুলে বাঁধা,যাকে আধুনিক ভাষায় মেয়েরা বলে পনিটেইল। টি শার্টের উপর আবার মানব কং*কালের চিত্র।এক কথায় বলতে গেলে, মেয়েটি সুদর্শনা।

– জ্বি?
– আপনার ডেলিভারি।
তৎক্ষণাৎ নিজের কাঁধে ঝুলন্ত পাটের ব্যাগ থেকে ব্রিফকেসটি বের করে এগিয়ে দিলো রোযা।মেয়েটি এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো রোযার দিকে,যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা কাজটি করতে একজন মেয়েকে প্রেরণ করা হয়েছে।
– এক মিনিট দাঁড়ান।
মেয়েটি ভেতরে চলে গেলো ব্রিফকেস নিয়ে।দুই মিনিটের ভেতরেই ফিরে এলো একটি ট্রে হাতে যাতে রয়েছে এক গ্লাস লেবুর শরবত।
– আমি জানি বললেও ভেতরে বসতে চাইবেন না।খেয়ে নিন।আপনি নিশ্চয়ই তৃষ্ণার্ত।
রোযা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো দীর্ঘ একটি মুহূর্ত।জীবনে কোনোদিন নিজের দাদু ব্যাতিত কারো কাছ থেকে এমন অমায়িক ব্যবহার সে লাভ করেছে কিনা মনে করতে পারলোনা।হৃদয়ের সকল অস্বস্তি উধাও হয়ে গেলো তার সহসাই।তাতে ভর করলো অদ্ভুত এক উষ্ণতা।

– ধন্যবাদ।
শরবতটি নিলো রোযা।পাশেই দেয়ালের সঙ্গে রাখা কাঠের কেবিনেটে শোভা পাচ্ছে বেশকিছু পুষ্পউদ্ভিদ।সেখানে বসে এক চুমুকে নিঃশেষ করলো সম্পূর্ণ গ্লাস।তারপর তা মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিয়ে বিস্তর হাসির সঙ্গে রোযা জানালো,
– আবারও ধন্যবাদ।
– হুম।ঠিক আছে।কিন্তু এরপর থেকে এত সহজে কাউকে বিশ্বাস করবেন না। সে যতই লোভনীয় জিনিস আপনার সামনে প্রদর্শন করুক না কেনো!
মেয়েটির কঠোর কন্ঠে সহসাই থমকে গেলো রোযা।তার উষ্ণ হৃদয়ে পুনরায় নেমে এলো কালো আঁধার। একি!মেয়েটি কি শরবতের সঙ্গে কিছু মিশিয়েছে?কিন্তু…তেমন কিছু তো মনে হলোনা। রোযার আতঙ্ক লক্ষ্য করে হাসলো মেয়েটি,তারপর বললো,

– চিন্তা করবেন না।আমি কিছুই মেশাইনি।এটা আপনার জন্য শিক্ষা হয়ে থাক।
অস্বস্তির সাথে হাসলো রোযা।হঠাৎ করেই মেয়েটির সামনে তার আর থাকতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।তাই অতি দ্রুত সে লিফটের কাছে চলে গেলো।একবারও আর পিছন ফিরে তাকালোনা।
মারবেল — ভবনের বাইরে এসে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো রোযা। যাক, কাজটা সে ভালোয় ভালোয় শেষ করতে পেরেছে। মাথাটা যন্ত্রণা করছে খুব।তর্জনীর দ্বারা কপাল ঘষতে ঘষতে তাই রোযা এগোলো বাইরের ফটকের উদ্দেশ্যে।কিন্তু ঠিক তখনি বিনা কারণে থমকে পড়লো।তার শরীর সতর্ক হয়ে উঠল অদৃশ্যমান এক অনুভূতিতে।কেউ যেন তাকে দেখছে!ঝট করে চারিপাশে চাইলো রোযা,কিন্তু ত্রিসীমানায় কাউকেই নজরে পড়লোনা।তাহলে এমন অনুভূতি তার কেনো হচ্ছে? মাথা তুলে সুউচ্চ ভবনটির দিকে চাইলো রোযা।

ভবনের উপরাংশ সম্পূর্ণ বিশেষ ওয়ান ওয়ে মিরর গ্লাসে – তৈরী।এই কাচের বাইরে থেকে ভেতরের কিছু দেখা সম্ভব না হলেও অপর পাশের মানুষ ভেতর থেকে বাহিরের সবকিছু লক্ষ্য করতে সক্ষম। সেখান থেকে কেউ কি চেয়ে আছে রোযার দিকে?কিন্তু কেনো?

ডার্কসাইড পর্ব ৪

ধুর!নিশ্চয়ই তার অবচেতন মনের কল্পনা।গত কিছুদিনে ঘূর্ণিঝড়ের মতন তার জীবন সম্পূর্ণ উলোট পালট হয়ে গিয়েছে।তাই এমন অদ্ভুত অনুভূতি হওয়া হয়ত অস্বাভাবিক কিছু নয়।জোরপূর্বক নিজের হৃদয়কে বুঝ দিয়ে দ্রুত অগ্রসর হলো রোযা।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে এই স্থান ত্যাগ করতে চায়।

ডার্কসাইড পর্ব ৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here