The Silent Manor part 13

The Silent Manor part 13
Dayna Imrose lucky

সূর্য উঠেছে।একদম মাথার উপরে। কুয়াশা মোটেই নেই। সামসুল এর বাড়িতে কিছু গ্রামবাসী ভির করে রেখেছে।আজ সকালে একটা নর্দমার পাশে পাঁচুকে পেয়েছে। সমস্ত শরীর ধবধবে সাদা ছিল।মনে হয়েছে কেউ শরীরের রক্ত চুষে নিয়েছে।মুন্ডু টা সাথেই ছিল। পাঁচুর মা চিৎকার করে কাঁদছে। সামসুল পাশেই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। তাঁর প্রথম একটি কন্যা সন্তান হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই মারা যায়।এরপর দীর্ঘ একটা সময় কেটে যায়। এরপর পাচু জন্ম নেয়।পাঁচুর জন্মের সময় সবাই বেশ খুশি ছিল।আজ খুশিটা হারিয়ে গেছে। একজন লোক গিয়ে রশীদ তালুকদার এর কাছে সংবাদটি পৌঁছায়।সে বলেছে এই বিষয়ে দারোগার সাথে কথা বলবে। তদন্ত করবে। আপাতত বিষয়টি নিয়ে যেন মাথা না ঘামানো হয়। গ্রামের দুর্নাম হবে।রশীদ তালুকদার চাননা তাঁর গ্রামে দুর্নাম ছড়াক।দুপুরের পর পাঁচুর জানাজা সম্পন্ন হয়। সুফিয়ান ও তাঁর সাথে চারজন চোর উপস্থিত ছিল।

সুফিয়ান তাঁর ঘরের সামনে বসে আছে।হাতে সিগারেট। মুখে চিন্তার ছাপ।বদরু, হাবলু, সোলেমান,লাল মিয়া পাটিতে বসে আছে। সুফিয়ান এর ধোঁয়া ওদের দিকে যাচ্ছে।লাল মিয়া বলল ‘আজ আমাদের কি কাজ দেয়া হবে!নাকি চলে যাব?
‘কেন,আজ কি হয়েছে? লাল মিয়া কিছুটা বিভ্রান্ত হল। ‘না। আপনি দেখছি খুব চুপচাপ’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘সিগারেট টানচি‌। এইজন্য চুপচাপ। সোলেমান,এর কাজ আজ রাত থেকেই শুরু।বদরু ঐখানে কোদাল আছে। রাস্তার পাশে পুব আর উত্তর এর কোনাকুনি জমিটা আমার। জমিদার এর ছেলে আদিব এর থেকে বর্গা নিয়েছি।তুই ওখানে চলে যা।খালি অংশের মাটি গুলো চাষের জন্য উপযোগী কর।’ বদরু হাতে কোদাল নিয়ে চলে যায়।
সুফিয়ান এর সিগারেট শেষ।আর একটা ধরালো।বাকি রইল হাবলু এবং লাল মিয়া।ওরা ওদের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষাকৃত। দু’জন উশখুশ উশখুশ করছে। সুফিয়ান কে নিরব দেখে হাবলু বলল ‘আমাদের কি কাজ দিবেন?
‘লালা মিয়া,প্রতি রাতে তুই ঘন্টা দুয়েক এর জন্য নর্দমার দিকে উঁকিঝুঁকি মারবি‌।পারবি না?

‘পারব।’
‘আর দিনে আমার ক্ষেতে চাষ করবি।হাবলু তোদের চাষাবাদে জলের ব্যবস্থা করে দিবে।আমিও তোদের সাহায্য করব।বুঝেছিস?
‘বুঝেছি।’
‘এখন যা কাজে লেগে পড়।’
।সন্ধ্যার সময়টাতে ঘরের সামনে অলুই জ্বালিয়েছে।তার চারপাশ ঘিরে সবাই বসে আছে। রশীদ বসে বসে পান চিবোচ্ছে আর একটু পরপর পিকদানিতে পিক ফেলছে।ঠোঁট লাল।অলুই এর সোনালী আলোয় তার পরনের ঝমকালো পোশাক আরো ঝলমলিয়ে উঠেছে।অলুই এর অন্যপাশে আদিব,আরিব, এবং সায়েম, এবং রায়ান। জেবুন্নেছা সবার জন্য চা এর ব্যবস্থা করে।নিজ হাতে চা বানিয়েছে আজ।অলুই এর তাপে সেও বসে।সে গম্ভীর গলায় রশীদ কে লক্ষ্য করে বলল ‘একটা কথা বলার ছিল , যদি তুই অনুমতি দিস তবেই বলব।’

পিক ফেললে পিকদানিতে রশীদ। এরপর জবাব দিল ‘তুই আমার আদরের বোন। অনুমতি চাইছিস কেন বল।’
‘ফারদিনার বিয়ের বয়স হয়েছে। যুবতী মেয়ে।এখনি সময় বিয়ের। সংস্কার বলে একটা কথা আছে।যত দ্রুত বিয়ে দিবি, সম্মান বেঁচে যাবে।’
‘ওকে কে বিয়ে করবে?ওকে বিয়ে করলে তো আমরাই….!’ বাকি কথা গিলে ফেলল সায়েম। তাঁর কাঁধে হাত রেখেছে আরিব।
‘ওকে কে বিয়ে করবে মানে? আমাদের মেয়ে কত সুন্দরী। বিয়েতে আমরা স্বর্ণ অলংকার সবই তো দেব।’
রশীদ নড়েচড়ে বসল।আদিব চা পান করছে। বিয়ের আলাপে সে মতামত পোষন করল না।
রশীদ বলল ‘ভেবে দেখব। প্রতিটি সিদ্ধান্ত ভেবে চিন্তে নেওয়া উচিত।কি উচিত কি না?
‘উচিত।’ জেবুন্নেছা বলল।

‘আমার চার ছেলের একমাত্র বোন ফারদিনা। ওদের মতামত নিতে হবে।আমরা এই বিষয়ে পড়ে আলাপ করব।
কুদ্দুস উপস্থিত হল। লন্ঠন হাতে। খামার থেকে এসেছে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে এসেছে। কুদ্দুস বলল ‘কি নিয়ে আলাপ হচ্ছিল?’ মুখে অজানা হাঁসি। জেবুন্নেছা বলল ‘ফারদিনার বিয়ে নিয়ে।’
‘আমিও এখনো বিয়ে করেনি’ বলল কুদ্দুস। এরপর হেসে উঠল। সে-ই সাথে সায়েম,রায়ান,আরিব ও হেসে উঠল। ‘তুই কি ভাবছিস,তুই সরদার এর মেয়ে বিয়ে করবি?’ রশীদ জিজ্ঞেস করল।
‘আপনি বললে আমার কোন আপত্তি নেই।’ বলে লজ্জা পেল যেন।সবাই ওর কথা শুনে হেসে ফেলল। রশীদ বলল ‘ফারদিনা তোর বোনের মত।তোর ছোট্ট বোন।কি হয়?
‘বোন। বুঝেছি আমি।’

গতকাল সুফিয়ান আদিব এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দেখা হলেও কথা হয়নি।আজ তাঁর সাথে দেখা করতে যাবে বলে নিশ্চিত করল। তবে এখনি নয়।রাতের খাবার তৈরি করছে। চুলায় ভাত বসিয়েছে।সিদ্ধ ভাতের ঘ্রাণ আসছে।ভাত পুরোপুরি হতে আর মাত্র দশ মিনিট এর মত বাকি।নিব কলম দিয়ে সাদা কাগজে গল্প লিখছে।দশ মিনিটে পাঁচ থেকে ছ’টা লাইন তৈরি করা যাবে।এমন সময় নূপুর এর আওয়াজ ভেসে আসে ।লেখা বন্ধ করল। আশেপাশে আর কোন ঘর নেই।এক বাড়িতে সে একা থাকে। ঠক ঠক শব্দ আসল। দরজায় টোকা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ এর জন্যে ফারদিনাকে সন্দেহ করল। এরপর দরজা খুলে দিল।দরজার ওপাশের মানুষ টা কে দেখে অবাক হল।বাইজি কন্যা মেহের।

‘আপনি এত রাতে এখানে?
‘ভেতরে আসতে বলবেন না।?
সুফিয়ান সেকেন্ড দু’এক চুপ থেকে বলল ‘আসুন।’
‘আপনার ঘরটি সাধারণ এর ভেতরে অসাধারণ। বেশ পরিপাটি। সাজানো গোছানো।’
‘মিথ্যা বলছেন।’
‘ভাতের গন্ধ আসছে।চুলায় নিশ্চয়ই ভাত?
‘হ্যাঁ। আপনি এ রাতে এখানে কেন?
‘আপনাকে দেখতে এলাম।’
‘খোজ পেলেন কিভাবে?
‘রায়ান দিয়েছেন।’

চোখ পড়ল টেবিলে। কিছু বই সাজানো। তৃতীয় সারির বইয়ের নাম সিরি ফরহাদ। মেহের জিজ্ঞেস করল ‘আপনার জীবনে সিরি আছে।?
‘আছে।’
‘সে কি ফারদিনা?
‘ভাত টা নামিয়ে আসি?
‘আসুন।’
ভাত নামিয়ে সুফিয়ান আসলো। মেহের বেতের চেয়ারের উপর বসে আছে।মাঝে ছোট্ট একটা টেবিল। তাঁর উপরে লন্ঠন।সামনের চেয়ারে এসে বসে সুফিয়ান।এক কাপ চা দিল মেহের এর দিকে।মেহের বলল ‘চা আপনি বানিয়েছেন?
‘হ্যাঁ।চা ভালো বানাই।খেয়ে দেখুন।’
‘আপনি খাবেন না?
‘এক কাপ খেয়েছি। বেশি খেলে ঘুমে ধরবে না। আপনি অনুমতি দিলে একটা সিগারেট ধরাই?
‘আচ্ছা’

সুফিয়ান সিগারেট বের করে ম্যাচ দিয়ে ধরালো। লম্বা একটা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়ল।মেহের তাকিয়ে থেকে বলল ‘আপনি যেভাবে বসে সিগারেট টানছেন দেখে ইংরেজদের মত মনে হচ্ছে। ভালো লাগছে!’
সুফিয়ান চাপা স্বরে হেসে উঠল। অসাধারণ হাঁসি। মেহের বলল এর আগে এত সুন্দর হাঁসি দেখেনি।আজই দেখেছে।বলল ‘আপনার হাঁসি অনেক সুন্দর।’
‘ফারদিনাও বলেছে।’
‘বলেছে?
‘মুখে বলেনি তবে ওর চাহনি দেখে বুঝেছি।’
‘সবার চাহনি দেখে মনের কথা ধরে ফেলেন?
‘ধরতে পারি।’
‘বলুন তো আমি কি ভাবছি?
‘আপনি ভাবছেন,লোকটা আমার জন্য বিরক্ত নয় তো।’
‘সত্যিই তাই ভেবেছি।বললেন না তো, আপনার জীবনের সিরি কে?
‘এখনি বলব না।’
‘কেন?

‘যাকে ভালোবাসি তাঁকেই বলিনি।’
‘আমি এসেছি বলে বিরক্ত হয়েছেন?
‘একটু হয়েছি।কেন এসেছেন এখনো পরিষ্কার করে বলেননি।’
‘জানতে এসেছিলাম, আপনার জীবনের সিরি কে?
‘অন্য একদিন বলব।’
‘সেদিন আমাদের বাড়িতে আসবেন।আমি ঠিকানা লিখে দিয়ে যাচ্ছি।’ বলে একটা সাদা কাগজে কিছু লিখল। কাগজটা সুফিয়ান এর দিকে এগিয়ে দিল।সে নিল।
‘আজ তাহলে উঠি!’

সুফিয়ান এখন তালুকদার বাড়ি যাবে।আদিব এর সাথে কথা বলে দ্রুতই ফিরবে। সঠিক সময়ে ঘুম দরকার। না হলে বিষিন্নতা দেখা দেয়।আজ চাঁদ যেন একটু দ্রুতই দেখা দিল। পূর্ণিমা এখন। পূর্ণিমার চাঁদ নাকি সুন্দর হয়।রাতটা চাঁদের মৃদু আলোয় আলোকিত।চাঁদের আলো ধরেই তালুকদার বাড়ির পথে হাঁটছে সুফিয়ান।
আদিব বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল।সিগারেট টানছে। সুফিয়ান এর সাথে দেখা হয়।আদিব আগ বাড়িয়ে বলল ‘আমি জানি তুই কি বলতে এসেছিস।যাক গে,সেসব ছাড়। সন্ধ্যা থেকেই তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জানিস তো, আমার বাকি তিন ভাইয়ের সাথে একদম মানসিকতা মিলে না।’
‘আমি জানি আদিব ভাই’
‘কিসের আদিব ভাই!তুই আমার বন্ধু। আমি তোকে ভাই-টাই এর চোখে দেখি না।তুই ডাকবি।ডাকবি তো?
‘ডাকব।’

‘সামসুল আসছিলো।’ বলে একটা সিগারেট সুফিয়ান এর দিকে এগিয়ে দিল।
‘ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।চাঁচা কি বললো?
‘টাকা দিয়েছে।ওর বউ নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য শহরে নিতে হবে’
সুফিয়ান সিগারেট এর ধোঁয়া ছেড়ে বলল ‘কত দিয়েছে?
‘পনেরো টাকা।’
‘কি বলছিস এত টাকা?
‘আব্বা শুধু দিয়েছেই না বরং, অনেক কথাও শুনিয়েছে। তাঁর টাকা হজম হওয়া এত সহজ নয়।জানিস তো?
‘হুম।’
‘ভেতরে চল।’
‘না যাবো না এখন।’
‘কেন, অসুবিধা কোথায়?

সুফিয়ান সিগারেট ফেলে দিল। ‘তোর মামাতো ভাই এসেছে?
‘না। আগামীকাল আসতে পারে। নিশ্চিত নই।ওকে দিয়ে তোর কি কাজ?
‘কিছু নয়।চল। ঝিলমিল এর হাতে এক কাপ চা খেয়ে আসি।’
ঝিলমিল রান্না ঘরে কুদ্দুস এর সাথে রান্নাবান্নার কাজ করছিলো। এমন সময় ডাক পড়ে আদিব এর।আদিব বলল ‘আমাদের দুজনের জন্য দু কাপ চা আমার ঘরে নিয়ে আয়।ঝিলমিল সুফিয়ান কে গভীর ভাবে লক্ষ্য করল।বলল ‘তোমরা যাও,আমি নিয়া আইতেছি।’
আদিব এর ঘরটা হল ঘরের কাছেই।ঘরটা থেকে পুকুর টা স্পষ্ট দেখা যায়।পুকুরের জল কখন কখন মাছের সাঁতারে ঢেউ উঠে সেটাও দেখা যায়।সুফিয়ান বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। চিন্তিত ভঙ্গিতে আদিব কে লক্ষ্য করে বলল ‘আমি একটা বিষয় ভেবে পাই না।”

‘কোন বিষয়ে? আদিব কিছু দলিল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে।
‘পাঁচুকে কারা মারলো! সামসুল সামান্য একজন কৃষক, শত্রু নেই। তাহলে ওকে এভাবে কারা মারলো।’
‘হয়ত পূর্ব পুরুষদের শত্রু।’
‘না।এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে।যা আমরা দেখছি না।তুই কি বলিস?
আদিব ঢোক গিলে বলল ‘উমম হুম, এরকমই কিছু হবে।সেসব ছাড়।চা চলে এসেছে।চা পান কর’
ঝিলমিল দু কাপ চা নিয়ে উপস্থিত হয়।এক কাপ আদিব এর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল ‘তোমায় সরদার এখনি ডাকতেছে।’

আদিব সুফিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল ‘তুই থাক।আমি আসছি।’
ঝিলমিল সুফিয়ান এর দিকে চা এগিয়ে বলল ‘তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে’
‘তুই মিথ্যা বলে আদিব কে যেতে বললি কেন?
‘তুমি বুইঝা ফালাইছো?
‘কে মিথ্যা বলে আর কে সত্য বলে তা বোঝা যায়। এখন বল মিথ্যা বললি কেন?
‘আইজ পূর্ণিমা। পূর্ণিমার রাইত অনেক সুন্দর হয়।ফারদিনা চাইছে তুমি ওরে লইয়া একটু ঘুইরা আসো!’
‘আজ আমার সময় নেই। তাছাড়া চাঁচা আছেন বাড়িতে।জেনে গেলে আমাকে উনি অসৎ ভাববেন!’
‘তোমারে আলিমনগর এর সবাই চেনে, তোমার মত সৎ পোলা আর নাই।যাও সমস্যা হইবে না।’
‘সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুরে বেড়ানোটাও অন্যায় জানিস তো?
‘এটা কোথায় বলা যাবে?
‘আমার বইয়ে।’বলে মৃদু হাসল।
‘তার মানে তুমি যাইবা না’
সুফিয়ান চায়ে এক চুমুক দিয়ে বলল শিমুল তলায় অপেক্ষা করছি।যা ওকে পাঠিয়ে দে।আর শোন, ওকে বলবি চুল গুলো খোঁপা করে আসতে।মনে থাকবে?
‘থাকবে।’

সুফিয়ান হাতে বাঁশি নিয়ে শিমুল তলায় বসে আছে।সুর ধরার চেষ্টা করছে।অথচ নতুন সুর এর সন্ধান করতে পারল না। উদাসীন লাগছে। দৃষ্টি এলোমেলো করে ফেলল।ডান দিকে খোলা মাঠ।মাঠ এর সংস্পর্শে শিমুল গাছ।ঠিক তাঁর বা দিকে তালুকদার বাড়ির পথ।ফারদিনা লন্ঠন হাতে আসছে। সুফিয়ান এর চোখ পড়ে সেদিকে।মনের অজান্তেই ঠোঁটের ফাঁকে হাঁসি চলে আসল। বাঁশির সুর তৈরি হল।ফারদিনা শুনছে।এই সুর সেদিন এর মত নয়।এ যেন প্রেমের বার্তা।ফারদিনা লন্ঠন হাতে বসে তার পাশে। লন্ঠন রেখে দেয় একপাশে। সুফিয়ান সুর থামিয়ে বলল ‘কেমন লাগলো?

‘খুব সুন্দর। আজকের সুরে কি ছিল?
‘কাউকে কাছে টানার।’
‘সে কে?
‘তুমি’ বলে সুফিয়ান হেসে পুনরায় বলল ‘খোপা চুলে সুন্দর লাগছে। কিন্তু একটা জিনিস এর কমতি আছে।’
‘সেটা কি?
‘মালা।’
‘আমার বুঝি মালা দেয়া উচিত ছিল? সুন্দর লাগছে না নিশ্চয়ই! আগামীকাল পড়ব।’
সুফিয়ান পাঞ্জাবির পকেট থেকে গোলাপ ফুলের একটা মালা বের করল।ফারদিনার চুলের খোঁপায় গুঁজে দিল।সে বেশ অবাক হল।বেশ খুশিও হল।বলল ‘তুমি কিনে এনেছো?
‘আমিই বানিয়েছি।গোলাপ আমার পছন্দের ফুল। আমার হাতে লাগানো গাছ। গন্ধটা সুন্দর না?

‘সুন্দর।’
‘তুমি’ খুশি হয়েছে?
‘অনেক খুশি হয়েছি।’
‘আজ পূর্ণিমা।আজ কেন বেড়োতে চাইলে?কি আছে এ রাতে?
‘আজকের রাতটা সুন্দর হয়। অনেক আলোকিত হয়। চারদিকে তাকিয়ে দেখো,কতটা আলোকিত। সুন্দর না?
‘খুব সুন্দর! তুমি অনুমতি দিলে আমি একটা সিগারেট ধরাই?
‘ধরাও। ধোঁয়া আমার দিকে আসবে।দেখো’
সুফিয়ান সিগারেট ধরিয়ে ফুঁকে।সরু ঠোটে ধোঁয়া ছাড়ল। ধোঁয়া উড়ে ফারদিনার দিকে গেল।সে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। সুফিয়ান বলল ‘তুমি অল্পতেই খুশি হয়ে যাও।চলো হাঁটি’
খোলা মাঠের মাঝ বরাবর পর্যন্ত দুজনে চুপচাপ।ফারদিনা কথা না বলে চুপচাপ থাকতে পারে না। কষ্ট হয়।দম আটকে আসে। সুফিয়ান বলল ‘কিছু বলো।’
‘তোমার চোরদের খবর কি?
‘ওদের আজকে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি। কিছু কাজ আজ করেছে। আগামীকাল থেকে সময়মতো কাজে আসবে।’
‘তোমার ওদের নিয়ে পরিকল্পনা কি?

‘ভালো মানুষ মানুষ হিসেবে গড়া।খেটে খাওয়ার আনন্দ।অন্যায় থেকে দূরে থাকা।’
‘চোর কখনো ভালো হয় না।এখন তোমার ভয়ে ওঁরা দুদিন আসবে ঠিকই।এরপর সুযোগ বুঝে তোমার ক্ষতিটাই আগে করবে। দেখে নিও।’
‘ওরা পরিবর্তন হবে।আজ ওদের দেখেই বুঝেছি।’
‘আর একটা সিগারেট ধরাও।’
সুফিয়ান ধরিয়ে বললো ‘বাশি বাজাবে?
‘আমি পারি না।’
‘চেষ্টা কর।’ ফারদিনা আইল এর উপর বসে।পাশে সুফিয়ান বসল।বাঁশির সুর ধরল। কিন্তু সুরের কোন মানে হল না।সুফিয়ান হেসে উঠল। তাঁর হাসিতে ফারদিনাও হেসে উঠলো। হাঁসি থামিয়ে ফারদিনা বলল ‘তুমি আমাকে শিখিয়ে দিবে?

‘দেব।অন্য একদিন।’
ফারদিনা কিছুক্ষণ নিরবে নিভৃতে সুফিয়ান কে দেখল। এরপর দৃঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ‘তুমি সবসময় পাপ পূণ্যের হিসেব কর।প্রেম পাপ নাকি পবিত্র?
সুফিয়ান নিঃশ্বাস ভারী করে বলল ‘প্রেম পবিত্র। কিন্তু মানুষ প্রেম কে পাপ করে তোলে।’
‘একটা প্রেমের ছন্দ শোনাও।’
‘-প্রদীপ জ্বলে মনের কোণে, তোমার চোখে সুখের ঢেউ,
সন্ধ্যার মিষ্টি হাওয়া বলে তুমি মিষ্টি কেউ,
তুমি হাসলেই রাতটা জাগে, তারারা গায় মৃদু গান,
প্রেমে ভেজে প্রদীপ শিখা, তুমি-আমি এক স্বপ্নমান’-

মাঠের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সুফিয়ান। পাশেই ফারদিনা। সুফিয়ান এর শালটা দমকা হাওয়া তে উড়ছে। মাঠের শেষ প্রান্তে তীব্র বাতাস।যেন ঠান্ডা শুরুর প্রথম ধাপ এখানে শুরু হয়।ফারদিনা বলল ‘তোমার মা বাবা নেই?
‘না। দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। আমায় একা রেখে।’
‘কিভাবে মারা যান?
‘মায়ের জন্ডিস হয়।টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি।১৮৬৯ সালের ৩০ অক্টোবর রোজ বুধবার,বেলা ঠিক সাড়ে এগারোটায় আমার মা মারা যান। তাঁর শোক সহ্য করতে না পেরে আব্বাও কিছুটা সময়ের মধ্যে মারা যান।’ সুফিয়ান ফারদিনার মুখোমুখি হয়ে বলল ‘আমিও যাকে ভালোবাসি,সে মানুষ টা আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগেই যেন সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিয়ে নেন।’

‘আমার কখনো কখনো কি মনে হয়,বলব?
‘বলো’
‘আমি অনেক বেশি সুখি।বাকি সুখ পাওয়ার আগেই বোধহয় আমি দুনিয়া থেকে চলে যাব।’
‘এগুলো তোমার মনের ভুল। আমাদের ভাগ্যে কি আছে, আমরা জানি না।তবে সবসময় আশা রাখতে হবে,আমরা ভালো কিছু পাব।আমরা সৃষ্টিকর্তার উপর যেমন ভরসা রাখব,তিনি ঠিক তেমনটি উপহার দিবেন।বুঝেছো?
‘হুম।’
সুফিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চারদিকে দেখল।বলল ‘আমার মনে হচ্ছে কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের উপর নজর রাখছে।চলো ফিরে যাই।’
যেতে যেতে ফারদিনা বলল ‘তুমি কি নাচ পছন্দ কর?
‘কেন?

‘ঐদিন তুমি বাইজি দের নাচ দেখলে। এইজন্য মনে হল।’
‘ভুলবশত ওদের নাচ দেখে ফেলেছি।’
‘ওরা অনেক সুন্দরী।মেহের,কাশমিরা। সুন্দর না?
‘তোমার থেকে বেশি নয়।’
বাড়ির কাছাকাছি তাঁরা চলে আসে। সুফিয়ান একবার থ’হয়ে দাঁড়িয়ে আশেপাশে দেখল। অজানা কারো নজর টের পাওয়া যাচ্ছে। নিশ্চয়ই কেউ নজর রাখছে। কিন্তু কাউকে দেখা গেল না।ফারদিনা প্রাচির এর দরজা খুলে প্রবেশ করতেই সুফিয়ান বলল ‘শোনো’
‘কিছু বলবে?
‘পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও তুমি সুন্দরী।’
সকাল সকাল রশীদ তালুকদার এর খোঁজে আসেন গ্রামের দারোগা নুরুল হুদা খান।ঘরের সামনে চেয়ারে বসে আছেন‌। রশীদ তালুকদার হাতে ছড়ি নিয়ে ঘরের ভেতর থেকে বেশ গম্ভীর মুখে বের হন।দারোগার বিপরীত চেয়ারে বসল। কুদ্দুস চা নিয়ে আসে।চা দিয়েছে কাঁচের পাত্রে। রশীদ বলল ‘অতিথিদের রুপার পাত্রে চা দিবে।এটা কতবার বলেছি?

‘জ্বী অনেক বার।’
‘তাহলে ভুলে যাস কেন?
কুদ্দুস এর মাথা নিচু। ‘এরপর থেকে অতিথিদের রুপোর পাত্রে চা দিবি।মনে থাকবে?
‘থাকবে।’
দারোগা নুরুল হুদা খান বলল ‘আমাকে এত সম্মান দেখানোর কিছু নেই। গতকাল আমার চিঠি নিশ্চয়ই পেয়েছেন।কি বুঝলেন?
রশীদ বলল ‘আপনার সাতটা বানান ভুল ছিল।নিব কলমের কালি কম ছিল।’ কুদ্দুস রশীদ এর কথা শুনে দাঁত বের করে হেসে উঠল। নুরুল গলা পরিষ্কার করে নড়েচড়ে বসল।বলল ‘আমি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।আর আপনি তামাশা করছেন?
‘চা ঠান্ডা হয়ে যাবে।আগে চা পান করুন।চা পান করলে কি হয় জানেন?
‘না’

‘চা মন চনমনে রাখে।চায়ে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের পলিফেনল দূর করে। ভাবছেন আমি কি করে জানলাম’,বলছি। ডাক্তার এব্রিয়ান চার্রলস এর একটা বই থেকে।আরো অনেক কিছু জেনেছি।পড়ে বলব। আপনার প্রশ্ন বলুন!’
নুরুল বিরক্ত স্বরে কিছু বলতে চাইল। তাৎক্ষণিক বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে তিনজন রাইডার্স ভেতরে প্রবেশ করে। দু’জন কে দেশীয় বলে মনে হচ্ছে।বাকি একজন কে দেখে রশীদ চোখ ভাঁজ করে তাকাল। যুবকটি কে ভিনদেশী মনে হল।গায়ের রং উজ্জ্বল গমের মতো, চোখ দুটো ধূসর নীল।পাহাড়ের বরফ গলা জলের মতো স্বচ্ছ। ঘন বাদামী চুল বাতাসে উড়ে পড়ে কপালে। মুখে হালকা দাড়ি, তাতে এক অদ্ভুত পুরুষালি আকর্ষণ। সে লম্বা, সুঠাম, পেশীবহুল।চোখে নরম এক উষ্ণতা,যা তাকে করে তুলেছে এক রহস্যময় ও সুদর্শন যুবক। বয়স আনুমানিক ত্রিশ।
দেশীয় ছেলে দুজন অশ্ব থেকে নেমে আসে। রশীদ কে প্রণাম করল।বলল ‘সরদার,ও হচ্ছে আজমাত নুরবেক।’ বলে আজমাত এর দিকে দেখাল।আজমাত অশ্ব থেকে নেমে বলল

The Silent Manor part 12

“সিজদিন আইল আবদান কোওজ। মেন সায়াকাততাপ কেলদিম’
কুদ্দুস তাঁর কথা শুনে রশীদ কে ফিসফিসিয়ে বলল ‘কি বলল উনি?
‘মনে হয় আমায় গালি দিছে।’
পাশ থেকে দেশীয় ছেলেটি বলল ‘না।ও বলেছে আপনাদের গ্রাম অনেক সুন্দর। আমি ঘুরতে এসেছি।’ওরা হচ্ছে কিরগিজ।
রশীদ বিড়বিড় করে বলল ‘এই ইংরেজ বিলাই আমাদের বাড়ি আসলো কেন?

The Silent Manor part 14

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here