Death or Alive part 10

Death or Alive part 10
priyanka hawlader

এক সুন্দর সকাল
সকালটা যেন ছিল এক নিঃশব্দ সিম্ফনি। আকাশ এখনও পুরোপুরি নীল হয়ে ওঠেনি, কিন্তু তাতে সূর্যের লালিমা ঠিক যেন ক্যানভাসে রঙ ছড়ানো কোনো শিল্পীর তুলির টান। নরম রোদের আলো জানালার কাঁচে পড়ে তৈরি করেছে সোনালি ছায়া। দূরের গাছে বসে পাখিরা ডেকে উঠছে এক অনামা সুরে। বাতাসে মিশে আছে ভেজা মাটির ঘ্রাণ, শিশিরে ধুয়ে আসা পাতার স্নিগ্ধতা, আর সেই অস্পষ্ট শব্দ—পাহাড়ের গা বেয়ে ঝরে পড়া ছোট্ট এক ঝর্ণার কলকল।
এই সকালটা পৃথিবীর মতোই প্রাচীন, অথচ প্রতিদিনই নতুন। ঠিক যেমন তার হৃদয়ের কিছু অনুভব, বারবার ফিরে আসে, অথচ প্রতিবারই আলাদা রূপে।

জানালার পাশে ক্যালিয়ন
কক্ষটা শান্ত। ঘরের ভেতরে পাতলা আলো এসে মিশেছে মেঝেতে রাখা বইয়ের খোলা পাতায়। তবু কক্ষের সমস্ত আলো যেন থমকে আছে এক মানুষে—ক্যালিয়নে।
সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। তার চোখ বাইরের দিকে, অথচ মন গভীর ভিতরে, কোথাও বহু দূরের এক স্মৃতির দিকে ছুটে চলেছে। পাথরের মতো স্থির মুখে লুকিয়ে আছে অস্থিরতা, ঠোঁটের কোণে জমে থাকা এক দীর্ঘ নীরবতা। সকাল যতই রঙিন হোক না কেন, ক্যালিয়নের ভেতরে যেন আজও এক পূর্ণিমা রাত ঘুমিয়ে আছে, জেগে আছে, আবার কাঁপিয়ে দিচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই রাতের চিত্র।
কল্পনায় হারিয়ে যায় সে — সেই পূর্ণিমা রাতে,
“সেদিন আমি জানতাম না…” ক্যালিয়নের মনে গুঞ্জন তোলে অতীতের এক নিঃশব্দ স্বীকারোক্তি।
সেই রাত ছিল নীরব, অথচ ভয়ংকর সুন্দর। চাঁদ ছিল পূর্ণ, তার আলোয় মধুপুর গড়ের জঙ্গল এমন ভাবে ঝিকমিক করছিল, যেন দুনিয়ার সব আলো-অন্ধকার এক হয়ে এসেছে ওই নির্জন বনের ভিতর।
সে জানত না, নেকড়ে রক্ত পূর্ণিমার আলোয় দুর্বল হয়ে পড়ে। সে জানত না, ওই রাতেই তার শক্তি নয়, তার সীমা প্রকট হয়ে উঠবে। সে জানত না, ভাগ্য তাকে সেখানে টেনে নিয়ে যাবে শুধু একটা মুহূর্ত দেখানোর জন্য—এক এমন মুহূর্ত, যেটা তার গোটা অস্তিত্ব পাল্টে দেবে।

সে শুধু জানত—তার শত্রু কোথায় লুকিয়ে আছে।
আর তাই সে ছুটেছিল। নেকড়ে রূপে, অন্ধকার ছিঁড়ে, গর্জনে কাঁপিয়ে দিয়ে সে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গলের গভীরে।
প্রথমে শিকারি ছিল সে—গর্বিত, অজেয়।
কিন্তু সময় যত গড়ায়, পূর্ণিমার আলো তার শরীরের প্রতিটি শিরায় যেন বিষের মতো ঢুকে যায়। সে অনুভব করে, তার শক্তি কমছে, পেশিরা কাঁপছে, চোখ ঝাপসা হচ্ছে। হঠাৎ করে তার চারপাশের গন্ধগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে, কান ঝিম ধরে আসছে।
তবু থেমে যায়নি সে। যুদ্ধ শুরু হয়। পায়ের নীচে মাটি কেঁপে ওঠে, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের গন্ধ।
সেই রাতে ক্যালিয়ন লড়েছিল তার শেষ শক্তি দিয়ে, একেবারে সীমান্তে দাঁড়িয়ে। কিন্তু সে জানত না, ওই সীমান্তের ওপারে শুধু পরাজয় নয়, অপেক্ষা করছিল কিছু আর… অনেক গভীর।
যুদ্ধে হেরে গিয়ে,

গভীর রাতে, এক ঝোপের পাশে পড়ে থাকে ক্যালিয়নের নেকড়ে রূপ। রক্তে ভেজা শরীর, ক্ষত-বিক্ষত পাখার মতো ছড়িয়ে থাকা চারপাশ।
আর তার চোখ—কখনো এতটা অসহায় হয়নি।
নির্জনতায় শুধু পাতার মর্মর ধ্বনি আর দূরের কোথাও কোনো অলীক সুর।
তার বুকের নিচে জমে থাকা রক্তে প্রতিফলিত হয় চাঁদের আলো। সে এক অপার্থিব দৃশ্য—যেন কোনো দেবদূতের অভিশপ্ত রূপ বিশ্রাম নিচ্ছে পৃথিবীর বুকেই।
তার মনে তখন ভেসে উঠেছিল একটি প্রশ্ন—

“এই যদি হয় আমার শেষ রাত, তবে কেন এত আলো চারপাশে?”
কিন্তু তখনও সে জানত না, সেই রাত তার শেষ হবে না।
বরং সে রাত থেকেই তার জীবন নতুন করে শুরু হবে।
বরং সেই রাতই হবে এক অভিশপ্ত প্রাণীর জীবনে নতুন কিছু শুরুর সময়।
রাত পার করে আসা সেই ক্লান্ত শরীরটার ভেতরে যখন ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে আসতে শুরু করল, চারপাশের কুয়াশা তখনও পুরোপুরি কাটেনি। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা, কিন্তু আলো ধীরে ধীরে ফিল্টারের মতো প্রবেশ করছে তার চেতনায়।

ক্যালিয়নের দৃষ্টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগল। প্রথমে সে টের পেল ঘাসের কোমল স্পর্শ, শরীরজুড়ে তীব্র ব্যথা, আর ক্ষত থেকে আসা কষ্টের চাপা যন্ত্রণা। তবে সেসবকেও ছাপিয়ে গেল এক দৃশ্য…
তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আছে ছোট্ট একটি মেয়ে।
দুই পাশে গোছানো দুইটি বেণি, মুখে মাটির রঙ লেগে আছে, কিন্তু চোখদুটো অবাক করা শান্ত—অদ্ভুত রকম সাহসী। মাটিতে বসেই হাতে ধরে রাখা একটি পাতা চিপে চিপে সে বের করে আনছে সবুজ রস, আর সেই রস সে সাবধানে লাগিয়ে দিচ্ছে ক্যালিয়নের ক্ষততে।

ক্যালিয়ন কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে ছিল।
তার হৃদয়ে যেন কোনো এক অলীক কাঁপন বাজতে শুরু করেছিল।
এতটুকু একটা মেয়ে… আর সে? এক বিশাল, রক্তমাখা নেকড়ে—এক ভয়ংকর অস্তিত্ব!
এখনও তার শরীর রূপান্তরিত, চোখে তীব্র হলুদাভ আভা, নখর আর দাঁতের ধার একটুও কম নয় আগের তুলনায়, তবু সেই ছোট্ট মেয়েটির চোখে ছিল না এক বিন্দু ভয়।
বরং ছিল মায়া। দায়িত্ব। সাহস।
ক্যালিয়ন শুয়ে শুয়ে শুধু তাকিয়েছিল তার দিকে।
তার গর্জন থেমে গিয়েছিল।

তার রাগ, অহংকার, শক্তি—সব যেন হার মেনেছিল মেয়েটির কোমল স্পর্শে।
একটি শিশুর কোমল হাতের স্পর্শে সে বুঝেছিল, ভয় নয়, ভালোবাসা অনেক বড়ো এক শক্তি।
আর সেই মুহূর্তেই ক্যালিয়নের হৃদয়ে এক নতুন বোধের জন্ম হয়।
সে চেয়ে ছিল, চেয়ে ছিল, আর চেয়ে ছিল…
সেই ছোট্ট মেয়েটির দিকে, যে তাকে সারিয়ে তুলছিল—
ভয় না পেয়ে, ঘৃণা না করে, ভালোবাসা দিয়ে।
আর সে মেয়ে আর কেউ নয়…
অর্ষা।

সেই পূর্ণিমা রাতের শেষে, রক্ত আর নিঃশ্বাসে ডুবে থাকা এক অভিশপ্ত প্রাণী প্রথমবারের মতো ভালোবাসায় পড়েছিল।
ভয়াবহ এক দানবের চোখে প্রথমবারের মতো জ্বলে উঠেছিল আলো।
আমি জানতাম না কারো স্পর্শ এতটা শান্তি দিতে পারে…
আমি জানতাম না, এক ছোট্ট হৃদয় আমার ভিতরের অন্ধকার ভেঙে দিতে পারে।
সেই মেয়েটা—যার কোমল হাতে জড়িয়ে ছিল সবুজ পাতার রস, যার সাহস আর নিঃশব্দ যত্ন বদলে দিয়েছিল এক ভয়ংকর রূপকে—সে কিছু না বলেই নিজের কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। আর তারপর…
চলে যায়।
নিঃশব্দে, মাটির ওপর হালকা পায়ের শব্দ ফেলে… চাঁদের আলোয় ঝলমল বনের ভেতর মিলিয়ে যায় সে।
কিন্তু রেখে যায় এক চিহ্ন।

না, চোখে দেখা কোনো দাগ নয়। বরং গভীর, অদৃশ্য এক ছাপ…
এক ভয়ংকর নেকড়ে হৃদয়ের ভেতরে।
ক্যালিয়ন তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ।
তাকে সারিয়ে দিয়ে চলে যাওয়া সেই ছোট্ট মেয়েটির মুখটা, স্পর্শটা, সাহসের নিঃশব্দ জবাব—সবকিছু ছাপ ফেলে গিয়েছিল তার হাড়-মজ্জায়।
তখনও সে জানত না এ অনুভবের নাম কী। কিন্তু এটুকু বুঝেছিল—এই মেয়ে তার কাছে আর পাঁচজনের মতো নয়।
নীরব প্রতীক্ষার শুরু
দিন যায়। ক্ষত শুকিয়ে আসে। শরীর ফেরে শক্তিতে।

কিন্তু ক্যালিয়নের ভেতরের কিছু একটা বদলে গেছে।
সে ফিরে যায় তার পরিচিত পৃথিবীতে—যেখানে ভয়, শত্রুতা আর রক্ত তার নিত্যসঙ্গী।
তবু কেমন করে যেন মন পড়ে থাকে মধুপুরের জঙ্গলে, সেই বৃক্ষতলে, সেই মেয়েটির চোখে।
অবশেষে একদিন সে আবার যায়—মধুপুর গড়ে।
সন্ধ্যার আলো ফেলে জঙ্গলের পথ মাড়িয়ে, সে খুঁজে বের করে সেই গ্রাম, সেই পথ, সেই খুদে মেয়েটি।
আর জানতে পারে—
তার নাম অর্ষা।

সে তখন নবম শ্রেণিতে পড়ে।
ভালোবাসার প্রথম সংযম
ক্যালিয়নের বুকটা ধক করে ওঠে।
এইটুকু মেয়েটি! যে এখনো জীবন বুঝে উঠতে শেখেনি, ভালোবাসার মানে জানে না—তার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো হবে অন্যায়। হবে ভুল।
তাই সে প্রতিজ্ঞা করে—
সে অপেক্ষা করবে।
অর্ষার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার দিন পর্যন্ত, সে নিজেকে আটকে রাখবে।
তার আগে সে কোনো কথা বলবে না, কোনো স্পর্শ দেবে না।
শুধু… অপেক্ষা করবে।
আড়াল থেকে দেখা
তবু মন কি সবসময় যুক্তি মানে?

যখনই মনে হতো অর্ষাকে একটিবার দেখা দরকার, ক্যালিয়ন ছুটে যেত মধুপুরে।
নেকড়ের মতো চুপিচুপি থাকত আড়ালে—গাছের ছায়ায়, পরিত্যক্ত মন্দিরের স্তম্ভের ফাঁকে, ঝোপের গভীরে।
সেখানে দাঁড়িয়ে সে দেখত অর্ষার হাঁটাচলা, কথা বলা, হাসি, এমনকি তার চুলে পাখি আটকে যাওয়া।
আর প্রতিবার, নিজের বুকের ভেতর এক তীব্র তৃষ্ণা নিয়েই সে ফিরে আসত।
কারণ সে জানত,

এই ভালোবাসা এখনও সময় পায়নি।
এই ভালোবাসা এখনও “সম্ভব” নয়।
এই ভালোবাসা এখনও… শুধু প্রতীক্ষা।
“সে চলে গিয়েছিল, কিন্তু রেখে গিয়েছিল এমন এক ছায়া…
যে ছায়া থেকে জন্ম নিয়েছিল এক নেকড়ের সবচেয়ে মানবিক অনুভব।
সময় এক অদ্ভুত খেলোয়াড়।
যে নেকড়ে সেই রাতে চাঁদের আলোয় পড়েছিল রক্তাক্ত হয়ে, সে আজ এক মানুষ, এক অপেক্ষার প্রতিমূর্তি।
সে গুনছিল দিন, মাস, বছর—শুধু একটি মুহূর্তের জন্য।
অর্ষার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার সেই মুহূর্ত।
আর অবশেষে… সেই দিন আসে।
সেই দিন সকালে ক্যালিয়ন ফিরে আসে মধুপুরে।

তার বুকের ভেতর ঢেউ খেলে যাচ্ছে—আনন্দ, উত্তেজনা, ভয়, আশা… সবকিছুর মিশেল।
সে আবার হাঁটে সেই চেনা পথ, সেই কুঁড়েঘর, সেই পুরনো পুকুরঘাট, সেই মন্দির ধ্বংসাবশেষ।
আশায় ছিল—হয়তো দেখা মিলবে তার সেই চেনা চেহারার, একটু বড় হয়ে যাওয়া অর্ষার।
কিন্তু মধুপুর ছিল স্তব্ধ।
শুধু পাখিরা গাইছিল, গাছেরা দুলছিল, বাতাসে ভেসে আসছিল শালপাতার মিহি শব্দ।
অর্ষা ছিল না।
ক্যালিয়নের বুক ছিঁড়ে যাচ্ছিল।

তার মনে হচ্ছিল—প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা বছর সে যেন এক মিথ্যে প্রতীক্ষায় কাটিয়েছে।
সে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে—গ্রামের প্রতিটি ঘর, প্রতিটি পথ, বৃদ্ধ কারো কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, শিশুদের মুখ দেখে চেনা মুখ খোঁজে।
শেষমেশ, তার জানা হয় এক কঠিন সত্য—
অর্ষা এখন মধুপুরে নেই।
সে এখন ঢাকায়, পড়াশোনা করছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অনার্স কমপ্লিট করার জন্য চলে গেছে বহু দূরে।
ক্যালিয়নের ভিতর আবার ঝড় ওঠে।
সে ভাবে—“আমার এই অপেক্ষার কি কোনো শেষ নেই?”

তবু সে জানে, তার ভালোবাসা একতরফা নয়, বরং এক নেশা… এক নিয়তি।
আর তাই সে আবারও অপেক্ষা করে না। সে খুঁজে বের করে।
বিভিন্ন সূত্রে, ছদ্মবেশে, বহু প্রক্রিয়ায় অবশেষে সে জেনে ফেলে অর্ষা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কোন ডিপার্টমেন্টে, কখন ক্লাসে যায়, কোন পথ দিয়ে হেঁটে আসে, কখন লাইব্রেরিতে বসে।
এরপর থেকে ক্যালিয়ন তার ছায়া হয়ে ওঠে।
সে আড়াল থেকে অর্ষাকে দেখত, রক্ষা করত, এমনকি অনেক অজানা বিপদ থেকে তাকে অদৃশ্যভাবে বাঁচিয়ে রাখত—কখনো সে জানত না, কখনো টেরও পেত না।
কিন্তু ক্যালিয়ন জানত, অর্ষার স্বপ্ন এখনো তার ভিতরে গড়ে উঠছে।
সে জানত, এই মেয়েটিকে ছোঁয়ার আগে তাকে মুক্ত থাকতে দিতে হবে।
এই ভালোবাসা কোনো শিকল নয়—তবে শিকল হয়ে উঠবে, যদি সে অস্বীকার করে।
তবু ক্যালিয়নের ভিতর লুকিয়ে ছিল এক ভয়ানক প্রতিজ্ঞা।
সে ভেবেছিল—

যেদিন অর্ষা তার স্বপ্নপূরণ করে মধুপুরে ফিরবে,
সেদিনই আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াবো।
আমি তাকে দেখাবো আমার রূপ, আমার হৃদয়, আমার দুনিয়া।
তাকে বলব—এই আমি, সেই ক্ষতবিক্ষত নেকড়ে তোমারই জন্য বেঁচে আছি।
তবে যদি অর্ষা তার রূপ দেখে ভয় পায়? যদি সে ফিরতে না চায়?
তাহলে?
তাহলে সে তাকে তুলে নিয়ে যাবে।
বিয়ে করে নিজের করে রাখবে।

তাকে ভালোবাসায়, অধিকার আর আবেগে গলিয়ে দেবে—এক নেকড়ের রাজ্যে।
এই ছিল ক্যালিয়নের হৃদয়ের গভীরতম, অন্ধতম প্রতিজ্ঞা।
সময় কতটা কেটে গেছে, ক্যালিয়ন তা ঠিক মনে করতে পারে না।
তার অপেক্ষা আর পাগলপারা ভালোবাসার গল্পটা যেন তার নিজেরও অবিশ্বাস্য মনে হয় এখন।
তবু একদিন—সেই কাঙ্ক্ষিত দিন—তার কাছে পৌঁছে যায় এক বাতাসে ভেসে আসা খবরের মতো।
অর্ষা ফিরে এসেছে।
মধুপুরে।
নিজের অনার্স শেষ করে।

তার বুকের ভেতর বাজে গর্জনের মতো ধ্বনি।
এই কি সেই মুহূর্ত, যার জন্য সে প্রাণপণে নিজেকে আটকে রেখেছিল?
এই কি সেই দিন, যার জন্য সে নিজেকে বারবার রক্তের ক্ষুধা থেকে সরিয়ে মানবিকতার পাথরে দাঁড় করিয়েছিল?
একটি সুযোগ, একটি মুখোমুখি
অবশেষে…
সে দাঁড়ায় অর্ষার সামনে।
সে আসে এক মানুষ হয়ে।
সে ধীরে ধীরে অর্ষার জীবনে পা রাখে, এমনভাবে যেন সে কোনো দিন ছিল না আবার যেন সব সময় ওখানেই ছিল।
আলতো হাসি, চুপচাপ উপস্থিতি, চোখে চোখ রাখা কয়েক সেকেন্ড…
এরপর এভাবেই সে জায়গা করে নেয় অর্ষার মনে।
বর্তমান,

জানালার পাশে ক্যালিয়ন
ক্যালিয়নের দৃষ্টি জানালার কাঁচ ছুঁয়ে বাইরের সকালে স্থির।
সেই ভাবনার ভিতর থেকে সে ফিরে আসে বাস্তবে।
সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে, মনে মনে বলে—
এখন শুধু অপেক্ষা, কখন সে নিজে এসে আমার সামনে দাঁড়াবে।
কখন সে বলবে—তুমি কে?
তখন আমি তাকে আমার সমস্ত সত্যি জানাবো।
তাকে বলব—তুমি আমার আলো, আর আমি সেই ছায়া…
যার হৃদয়ে জন্মেছিল এক পবিত্র অভিশাপ ভালোবাসা।
ক্যালিয়ন বলে উঠে আমি আসছি my red wine
আমি কাল আসছি তোমাকে সারা জীবনের মতো নিজের করে নিতে।

একটি নতুন সকালের সূচনা।
বাইরে রোদের আলো ঝিকিমিকি খেলছে পাতার গায়ে, দূরের পাহাড়ের গায়ে যেন সূর্য তার সোনালি তুলির আঁচড় বুলিয়ে দিয়েছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এক মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। কিন্তু এই সব সৌন্দর্য যেন ঢুকতেই পারছে না সেই ঘরের ভেতরেযেখানে এখনো ঘুমিয়ে আছে অর্ষা।
রুমটা অদ্ভুত নিস্তব্ধ।
দিনের আলো বাইরে যতই উজ্জ্বল হোক না কেন, ঘরের ভেতরে যেন এক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। জানালার পর্দা যেন ইচ্ছে করেই সব আলোকে আটকে রেখেছে, চারপাশে এক অলৌকিক ঘুম ঘনিয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে অর্ষা হঠাৎই গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,

“মা… এক কাপ চা দাও তো…”
চোখ বন্ধ রেখেই সে হাতটা বাড়িয়ে দেয়, যেন চায়ের কাপটা ধরবে।
কিন্তু… কোনো সাড়া নেই।
শুধু নিঃশব্দ, নিস্তব্ধতা।
অবচেতনভাবে সে একটু পরই ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়।
আর ঠিক সেই মুহূর্তেই, তার নিঃশ্বাস আটকে যায়।
তার সামনে যা দেখা যাচ্ছে, তাতে যে কেউ স্তব্ধ হয়ে যাবে।
আশেপাশের কিছুই চেনা লাগছে না!
নরম, গাঢ় লাল রঙের সিল্কের পর্দা, মাথার উপরে ঝুলছে সোনালি কারুকার্যময় ঝাড়বাতি, মেঝেতে পাতানো মখমলের কার্পেট—সবকিছু যেন কোন রূপকথার জগত থেকে উঠে আসা।
আর তার নিজেকে ঘিরে থাকা খাটটা?

না, এটাকে খাট বললে অসম্পূর্ণ বলা হবে।
এ যেন রাজাদের বিশ্রামের আসন। বিশাল, রাজকীয় এক খাট, কালো কাঠে খোদাই করা ড্রাগনের মত নকশা, আর বিছানাটা ঢাকা গাঢ় লাল রঙের সিল্ক ও মখমলের চাদর দিয়ে।
অর্ষা চোখ কচলে আবার দেখে।
সে কি এখনো ঘুমে?
না কি স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে গেছে?

রুমের কোণায় চোখ যায় তার। দেয়ালের গায়ে ঝুলে থাকা পেইন্টিংগুলো যেন কোন এক রাজপরিবারের ইতিহাস বলে দিচ্ছে। কোথাও আগুনের আলোর মত কমলা আলো জ্বলছে, আবার কোথাও কৃত্রিম ছায়া—সব মিলিয়ে পুরো রুমটা যেন এক প্রাচীন রাজপ্রাসাদের গোপন গহ্বর।
রুমটা এত বড় যে, মনে হচ্ছে একটানা দৌড়ালেও হয়তো তার শেষ মাথায় পৌঁছাতে সময় লেগে যাবে।
ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় অর্ষা। পা ফেলে যখন মখমলের কার্পেটে, তখন পায়ে যেন সূতোর কোমল ছোঁয়া লাগে। সে চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে—এটা কোথায়? কিভাবে এখানে এল সে?
তার মনের ভেতরে তখনই গুনগুন করে বাজতে থাকে এক অচেনা সুর…
একটা অনুভূতি যেন গলার কাছটায় এসে জমাট বাঁধে।

কে এনেছে তাকে এখানে?
আমি কি এখনো দুঃস্বপ্নেই বন্দি?
অর্ষার চোখে তখন শুধু বিস্ময়, একরাশ শঙ্কা আর একফোঁটা মুগ্ধতা।
ঘরের দেয়ালে ঝোলানো প্রাচীন ঘড়িতে তখন ধ্বনি বাজে—
টং… টং… টং…
তারপর… নিস্তব্ধতা।

ঘরের প্রতিটি কোন যেন ধ্বনি গিলে নিয়ে আরও গভীর রহস্যে নিমজ্জিত হয়।
ঘরের অস্বাভাবিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হলেও অর্ষার অন্তর্দৃষ্টি তাকে ধীরে ধীরে সজাগ করে তুলছিল। সে মাথায় হাত রাখে, একবার চোখ মুছে নেয়—এই জায়গাটা স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব, এবং তাকে কেউ ইচ্ছে করে এখানে এনেছে।
তার মুখের অভিব্যক্তি দৃঢ় হয়ে ওঠে। ভীত না হয়ে, বরং নিজের মধ্যে জেগে ওঠে আত্মরক্ষার ইচ্ছা। চোখের দৃষ্টিতে তীব্রতা এনে সে ভাবে,
“না, এটা কোনো সাজানো স্বপ্ন নয়। আমাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে। এখন পালাতে হবে… যত দ্রুত সম্ভব।”
নিঃশব্দে, সতর্ক ভঙ্গিতে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। তার বুকের ভিতর ধুকপুক শব্দ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু পায়ে নেই কোনো কম্পন।
ঠিক তখনই…

একটা ভারি শব্দে দরজাটা নিজে থেকে খুলে যায়।
অর্ষা থমকে দাঁড়ায়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার এক মুহূর্তের জন্য। দরজার ফাঁক দিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে প্রবেশ করে এক বিশাল আকৃতির পুরুষ। তার ছায়া প্রথমে মেঝের উপর পড়ে, তারপর ধীরে ধীরে চেহারা প্রকাশ পায় আলোয়।
লম্বা, সুঠাম দেহ।
কালো পোশাকে মোড়া রাজার মতো পদক্ষেপ।
চুলগুলো গাঢ়, অথচ চোখের সামনের কিছু অংশে এসে পড়ে অবহেলার মতো।
কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা দৃষ্টিগ্রহণ করে—
তা হলো তার লাল রঙা চোখ।
সেই চোখ যেন রক্তে আগুন।

আর চেহারাটা—কঠিন, শীতল, অথচ অদ্ভুত রকমের সুন্দর।
অর্ষার মনে বিদ্যুৎ খেলে যায়।
চোখ বড় হয়ে যায় বিস্ময়ে।
“এই লোকটা… এ তো সেই!
আমি যাকে বাঁচিয়েছিলাম…
আর যিনি আমাকে দেয়ালে চেপে ধরেছিলেন সেইদিন মারার জন্য…!”
তাঁর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে সেই পুরুষ। মাথা নিচু, কিন্তু শরীরভঙ্গি স্থির ও দুর্বার।
অর্ষা নিজেকে শক্ত করে দাঁড় করিয়ে নেয়।
সে আর পিছু হটবে না। তার ভিতরের অগ্নি জ্বলে ওঠে।
তার কণ্ঠে গর্জন যোগ হয়।

“এই! আপনার তো সাহস কম না…! আপনি আমায় এখানে কেন তুলে এনেছেন?”
সে চোখে চোখ রাখে, পেছনে এক পা-ও না সরে।
“কী ভেবেছেন? আমাকে ভয় দেখাবেন? আমি কিন্তু সেই মেয়ে, যে ছেলেদের প্রপোজের চড়ে জবাব দেয়!
অর্ষার এমন আতঙ্কে কাঁপা চিৎকার যেন গোটা পাহাড়কে কাঁপিয়ে তুলল। শব্দটা গড়িয়ে গেল উপত্যকার গহীনে, যেন প্রকৃতিও থমকে দাঁড়ালো এই কান্নার তীব্রতায়।
কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই, আগুনের মতো চোখ নিয়ে ওয়াজফান এক ঝটকায় সামনে এগিয়ে এলো। তার চোখে জ্বলছিল বুনো হিংস্রতা, ঠোঁটজোড়া তিরস্কারে বাঁকানো। সে কোনো শব্দ না করে অর্ষার গলা দু’হাতে চেপে ধরল। এতটাই শক্তি দিয়ে ধরল, যেন এক মুহূর্তেই তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ওয়াজফান ঠাণ্ডা অথচ আগুন ছোড়ার মতো কণ্ঠে বলল,

“Don’t. Shout. আমার সামনে গলা উঁচু করার সাহস আজ পর্যন্ত কেউ দেখায়নি। তুই তো একটা নগণ্য মানব কন্যা, তোর এই ক্ষীণ গলাটা চিরতরে থামিয়ে দিতে আমার দুই সেকেন্ডের বেশি লাগবে না। যদি আরেকবার চেঁচানোর চেষ্টা করিস, তবে মনে রাখ, তোর এই গলা দিয়ে আর কোনো শব্দ বের হবে না — চিরদিনের জন্য।
অর্ষার চোখ তখন ভয়, হতাশা আর দমবন্ধ হওয়ার আতঙ্কে ছলছল করছিল। তার হাত দুটো প্রাণপণে ওয়াজফানের হাত থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছিল, কিন্তু ব্যর্থ। তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে ছিল সেই পুরুষটার দিকে, যে মানুষ না, যেন কোনো প্রাচীন অভিশপ্ত অন্ধকার।
ওয়াজফান তার মুখটা অর্ষার খুব কাছে নিয়ে এল, নিঃশ্বাস পড়ল তার কানে।

“আর রইল কথা, তোকে এখানে কেন এনেছি — সেটা শোন। তুই কালো জাদু করেছিস। তুই ভেবেছিলি আমাকে বশ করতে পারবি? হাহ! আমার মতোকে? তুই আমার জীবনে এসে সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছিস।”
তার ঠোঁটজোড়া বাঁকা হাসিতে উঠল, যেন এক নরকদূত তৃপ্ত হচ্ছে তার শিকারের অসহায়তায়।
“এবার আমি তোর প্রতিটা নিশ্বাস, প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত — সবকিছুকে তোর জন্য নরকে পরিণত করব। তোকে আমি একটু একটু করে তিলে তিলে শেষ করে দেব। তুই কাঁদবি, আর আমি দেখব — তোর কান্নার মধ্যেও কি তুই বাঁচতে পারিস। এই জাদু, এই মায়া, এই চক্রান্ত — সবকিছুর বদলা আমি নেব। আজ থেকে শুরু তোর নরক-যন্ত্রণা। Welcome to my hell, little monster.”

এরপর কোনো এক পৈশাচিক তৃপ্তিতে তার চোখ জ্বলে উঠল। সে হঠাৎ অর্ষার গলা ছেড়ে তাকে এমনভাবে ধাক্কা দিল যে অর্ষা সোজা গিয়ে আছড়ে পড়ল পাথরের মেঝেতে। তার কপালে লেগে গেল একটি কেটে যাওয়া দাগ। শরীরটা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল।
ওয়াজফান ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর চুপচাপ পেছন ফিরে ধীর পায়ে অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল — যেন এই অন্ধকারই তার আসল ঘর।
অর্ষা মেঝেতে পড়ে ছিল নিঃশ্বাসের লড়াইয়ে। দৃষ্টি ঝাপসা, বুক ধড়ফড় করছে। সে ভাবে, এই রাত, এই জায়গা, এই পুরুষ — সব মিলিয়ে আজ থেকে তার জীবন আর কখনো আগের মতো থাকবে না।
তার নিঃশ্বাস ভারী, বুকটা যেন হাপরের মতো উঠানামা করছিল। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছিল চুপিচুপি। সমস্ত শরীরটাতে যেন একটা শীতল কাঁপুনি বয়ে যাচ্ছিল। সেই কাঁপুনি শুধু শীতের নয়—ভয়, আতঙ্ক আর মানসিক বিপর্যয়ের এক জটিল মিশ্রণ।

ধীরে ধীরে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ায় সে। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে। নিজেকে জোর করে সামলাতে চেষ্টা করে। তারপর ফিসফিস করে বলে,
— “আমি ভেবেছিলাম এই লোকটা একটু অস্বাভাবিক, হয়তো পাগলাটে স্বভাবের… কিন্তু না! এ তো সম্পূর্ণ উন্মাদ! এমন পাগলামো কথা কেউ বলে? কালো জাদু! বশীকরণ! কাকে কী বলছে সে! এই যুগে এসেও কেউ এইসব মানে?”
সে অস্ফুটে হাসে একবার, তীব্র ব্যঙ্গাত্মক সে হাসি। তারপর নিজের কাঁধে হাত রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে বলে,
— “আমি আজ পর্যন্ত বহু পাগল মানুষ দেখেছি, কিন্তু এর মতো পাগল আমি জীবনে দেখি নাই। ওর চোখে একটা অদ্ভুত উন্মাদনা, যেন মানুষ না… অন্য কিছু। এর যদি সত্যিই কালো জাদুতে বিশ্বাস করে, তাহলে তো আমি অনেক বড় বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি। না, না… আমি এখানে এক মুহূর্তও থাকব না। যেভাবেই হোক, আমাকে পালাতে হবে! এখনই!”

একটা তীব্র সংকল্প নিয়ে সে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার হাতলটা জোরে টেনে ধরে সে খুলে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু দরজাটা নড়েও না। বাইরে থেকে তালা মারা!
তার মুখটা এক ঝটকায় ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে তখন জোরে জোরে দরজার কপাটে ধাক্কা দিতে থাকে। তারপর হঠাৎ ভয়ে চিৎকার করে ওঠে,কেউ আছে? আমাকে এখানে বন্ধ করে রেখেছে! দয়া করে! কেউ থাকলে দরজা খুলে দিন! আমি এখানে থাকতে চাই না! কেউ একটা খুলে দিন! প্লিজ!”
তার কণ্ঠস্বর যেন পুরো রাজপ্রাসাদ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সে বারবার কাঁপতে কাঁপতে দরজার সামনে গিয়ে গিয়ে চিৎকার করতে থাকে। হাত দিয়ে দরজায় আঘাত করতে করতে তার আঙুলগুলো লাল হয়ে যায়।
তার চোখ তখন জলের কুয়াশায় ভরে উঠেছে।
সে আবার ফিসফিস করে বলতে থাকে,

Death or Alive part 9

এখানে কেউ শুনছে না… কেউই না… আমি কি সত্যিই আটকে গেলাম?”
আর এরপর সে ধীরে ধীরে দরজার পাশে বসে পড়ে, দুই হাঁটু কোলে তুলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে। তার সমস্ত অস্তিত্বে তখন একটাই শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল— “পালাতে হবে… যেভাবেই হোক…”

Death or Alive part 11

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here