প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৮
নওরিন কবির তিশা
পাশের বাগানে বড় বড় শিমুল, বকুল আর কৃষ্ণচূড়ার দল আজ কোকিলের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সেই সুরের সঙ্গে বইছে উত্তুরে হাওয়া ,মিষ্টি হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে খানমহলের চারপাশ । এই স্নিগ্ধ বাতাস কেবল গাছের নবকিশলয়গুলোকে,বা সদ্য ফোঁটা বকুলগুচ্ছকে নয়, ছুঁয়ে যাচ্ছে খান পরিবারের প্রতিটা সদস্যের হৃদয়কেও। আজ যেন এক বিষণ্ণতার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে উৎসবের আমেজ লেগেছে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের শূন্যতা ঘুচিয়ে আজ রাওফিন ফিরছে নিজ মাতৃভূমিতে ।
পরিবারের সকলের মনেই এক চাপা কৌতূহল ও আনন্দ দোলা দিচ্ছে । যেন অনেক দিনের নিভন্ত দ্বীপটি পুনরায় প্রজ্বলিত হবে আজ ।বহু প্রতীক্ষার পর এক নতুন প্রভাতের উদয়ের আকাঙ্ক্ষায় উদগ্রীব সবাই। সকাল থেকেই রান্নাবাড়ায় ব্যস্ত বাড়ির সব রমণীরা। রাওফিনের পছন্দের সব খাবার আছে নিজ হাতে রান্না করছেন,রৌশানারা খান। তার চোখে আনন্দ অশ্রু, মুখে প্রশস্ত তৃপ্তির তার হাসি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিচেনের সম্মুখভাগের বড় ডাইনিংয়ে পার্শ্ববর্তী এক সোফাতে বসে আছে, তিহু রাফা আর নীরা, নীরার হাতে বই। গভীর মনোযোগ দিয়ে একধ্যানে পড়ছে সে, রাফা টুকিটাকি কাজে সাহায্য করছে আবার এসে বসছে।
আর এদিকে তিহু মির্জা সূচনার কাছ থেকে ধমক খাওয়ার পর থেকেই, সোফাতে এসে থ মেরে বসে আছে, কিছুক্ষণ আগেই তাকে, রান্নাঘরে যাওয়া নিয়ে ভীষণ এক ধমক দিয়েছে মির্জা সূচনা। তার ভাষ্যমতে তিহুর শরীর পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। আর আগুনের ধারে গেলে যদি জ্বরটা আরো আসে, এজন্যই তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও যখন সে ফের, মির্জা সূচনা কে সাহায্য করতে গিয়েছিল তখনই এক ধমক দিয়েছেন তিনি।
একাধারে বসে থাকতে থাকতে, বিরক্ত হচ্ছিল তিহু। রাফাটারও আজকে অবসর নেই । বড় ভাই আসছে বলে কথা কত দায়িত্ব তার! বিরক্ত তিহু আশেপাশে ফিরে কি করবে, ভাবতে ভাবতেই দেখতে পায় দুই তলা দিয়ে নামছে দুজন রমণী। তিহুর কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত তারা, সে, নীরাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলল,,,
—-“এই নীরু?”
এক মনে পড়তে পড়তে কল্পরাজ্যে হারিয়ে গিয়েছিল নীরা।তিহুর এমন হঠাৎ ডাকে, কিছুটা কেঁপে উঠে সে বলল,,,
—-“কিছু বলবে বউ মনি?”
তিহু সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা দুইজন রমণীর দিকে ইঙ্গিত করে বলল,,,—“ওরা কারা?”
তিহুর কথায় তাদের দিকে ফিরল নীরা, মোটা ফ্রেমের চশমাটা, হাত দিয়ে সামান্য ঠিক করে; তারপর তিহুর দিকে ফিরে বলল,,,—“ওহ,ওরা!ওদের মধ্যে ব্লাক টপস,আর স্কার্ট পরা মেয়েটা হচ্ছে নাহা আপু আর ব্লু সালোয়ার কামিজ পরা মেয়েটা হচ্ছে মনি আপু।”
নীরার কথায় তিহু একবার ভালো করে মেয়ে দুইটি কে পর্যবেক্ষণ করল । নাহার চেহারায়, ওয়ালিদ খানের মুখাবয়বের গড়ন স্পষ্ট। তবে মুন্নি মেয়েটা একটু অন্যরকম। সুন্দরী? হ্যাঁ অবশ্যই, ডাগর,ডাগর চোখের অধিকারীনি সে, গায়ের রং তিহুর মতো অতটা উজ্জ্বল নয়,তবে সে লাবন্যময়ী,তার কৃষ্ণকালো চুলগুলো ঢেউখেলানো স্রোত তরঙ্গের ন্যায়।
তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে তার চোখগুলো অদ্ভুত রকম ফুলে ওঠা , রক্তিম বর্ণের। যেন কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে সে।তিহু যখন তাদের পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত, ঠিক তক্ষুনি তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল তারা। একবারও তার দিকে ঘুরেও তাকালো না! বেশ অবাক হলো তিহু, কালকে থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষের সাথে তার পরিচয় হয়েছে সবাই তাকে বেশ যত্ন, করেছে। যদিও নীলের বড় ফুফুটা একটু অন্যরকম! কিন্তু এই মেয়ে দুইটা?
নাহা আর মুন্নি কিচেনে এসে দাঁড়ালো। তাদের দেখে মির্জা সায়মা হেসে বললেন,,,—“কি ব্যাপার? এতক্ষণ পর মনে হলো,বের হওয়া প্রয়োজন? আর মনি,তোর চোখ মুখের এই হাল কেন?”
তখনই পাশ থেকে মুন্নির মা বলল,,—“বাদ দাও তো ভাবি, দেখো হয়তো কাল রাতে আবার কোনো স্যাড মুভি দেখছে, আর কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে। কিছুদিন আগেই তো ঐ যে কি মুভি রিলিজ না স্যাইয়ারা না কি, ওইটা দেখেও তো, দুইদিন যাবৎ শুধু কেঁদেই গিয়েছিল।”
মায়ের কথায় মৃদুমন্দ চাপা হাসলো, মুন্নি। মুভি? আসলেও তো মুভি, তার জীবনের গতিধারা যে এক চমকপ্রদ করুন মোড নিয়েছে। তা হয়তো কোনো মুভিকেও হার মানাবে। যে ব্যক্তিটির, প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি মুন্নির ভালো করে জানা, সেই ব্যক্তি তাই নাকি, বিয়ে করে নিয়েছে । মলিন হাসির রেখা ফুটে উঠল মুন্নির ঠোঁটের কোণে। নাহা একবার সেদিকে তাকালো, বুকের মাঝে কি যেন মোচড় দিয়ে উঠলো তার।
কেউ জানুক বা না জানুক নাহা তো খুব ভালো করেই জানে মুন্নি নীলকে ঠিক কতটা ভালোবাসে? সমুদ্রের অতল স্পর্শিতার ন্যায়, সেই ভালোবাসা যখন হার মেনেছে; তখন থেকে নাহা’র মনেও এক অজানা শঙ্কা দানা বেঁধেছে। মুন্নি আপুর ব্যাপারটা তো তার জানা, তবে সে যে আইয়াজকে পছন্দ করে, না না পছন্দ করে না। রীতিমতো ভালোবাসে।
সে ব্যাপারটা তো সকলের অজানা। তবে যদি তার সাথেও এমন হয়। নানা এসব কি ভাবছে নাহা, এসব কোনদিনই হতে দেবে না সে! কক্ষনো না! হাজারো কল্পনাকে রীতিমতো পা দিয়ে পিষে, নাহা এক ঝলক সোফায় বসে থাকা মেয়েটির দিকে তাকালো.। ভুবনমোহিনী সুন্দরী মেয়েটি,ঠিক যেন কোনো কবির রচিত, কাল্পনিক নায়িকা।
তেমনি তো সব দিক থেকে পারফেক্ট মেয়েটা, সুদীর্ঘ অক্ষিপল্লব বিশিষ্ট তার ডাগর ডাগর মধুরঙ্গা মণির নেত্র, চিকন-জ-লাইন, নব কিশলয়ের মতন কম্পিত একজোড়া গোলাপি অধর।নাসিকাটি পাতলা এবং তীক্ষ্ণ, সব মিলিয়ে সে যেন কোনো দক্ষ কারিগরে পরম যত্নে এক অনবদ্য ভাস্কর্য, সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে নিজ হাতে, পরম যত্ন দিয়ে তৈরি করেছেন।
তবে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপারটি হচ্ছে মেয়েটির একগুচ্ছ সুদীর্ঘ কেশরাজ, হালকা লালচে চুলগুলো বিনুনি আবৃত থাকলেও, সেগুলো সোফার পিছনে ফ্লোরে এসে পড়েছে। সব মিলিয়ে অসাধারণ সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে। নাহা’র নিজেরই তো একপ্রকার ঘোর লেগে গেল। একটা মেয়ে এতটা সুন্দরী হতে পারে? তবে তৎক্ষণাৎ মুন্নির কথা মনে পড়তেই ঘৃণার সহিত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল সে ।
হোক সে ভুবন মোহিনী অপরুপা কিংবা স্বর্গীয় অপ্সরা। তবে তার কারণেই, মুন্নির মত একপাক্ষিক ভালোবেসে যাওয়া মেয়েটা আজ কষ্ট পাচ্ছে। নাহা কক্ষনো ক্ষমা করতে পারবেনা মেয়েটিকে, কক্ষনো না!
—–“আচ্ছা কথা কি একবার বললে শুনতে পাস না? বললাম তো আজকে আমার পক্ষে পানি মন্ত্রীর সাথে দেখা করা সম্ভব নয়! যদি তার বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে সে আরো ২ দিন অপেক্ষা করুক। আই হ্যাভ নাথিং টু ডু। গট ইট?”
নীলের তীক্ষ্ণ কন্ঠে, অপর প্রান্তে থাকা লোকটা চুপসে গেল। অতঃপর স্থির কন্ঠে বলল,,—“আচ্ছা ভাই। আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
নীল:“দেখাদেখির তো কিছু নেই, আমি বলেছি মানে সেটাই ফাইনাল। আগামী দুই দিনের আগে উনি যদি আমাকে নক করে তাহলে আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবে না;”
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিল নীল। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে আসছে তার। এই পানি মন্ত্রী টাও জুটেছে, বিগত এক সপ্তাহ ধরে তাকে ফোন করেই যাচ্ছে, জিজ্ঞাসা করলেই বলে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করা প্রয়োজন;একান্তে। নীল বোঝেনা;কেন একান্তে দেখা করা প্রয়োজন?
নীলের কন্ঠে এক ঝলক সিঁড়ির দিকে তাকালো তিহু, নীলের পরনে আজ গতানুগতিক একই শুভ্র পাঞ্জাবি। তবে আজ তাকে একটু অন্যরকম লাগছে। তিহু চোখ সরু করে, ব্যস্ত হয়ে পড়ল নীলকে বিশ্লেষণ, তার নীল মনিযুক্ত তীক্ষ্ণ চোখের উপরে থাকা ভ্রুদ্বয় সামান্য কুঁচকানো, মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। নিশ্চয়ই আবারো কোথাও কোনো ঝামেলা পাকিয়েছে! আফটার অল নেতাদের তো এই একটাই কাজ, ঝামেলা বাঁধানো। তিহু সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে, পাশ ঘুরলো।
নীল এক ঝলক আর চোখে তাকালো তার দিকে। অতঃপর কিচেনের সামনে এসে মির্জা সূচনা কে উদ্দেশ্য করে বলল,,—“এদিকের অবস্থা কতদূর আম্মু? রাওফিন কিন্তু চলে এসেছে।”
রাওফিন নীলের মাসখানেকের বড় হওয়ায়, দুজনের সম্পর্কই বন্ধুর মত। তাই কক্ষনো সে, রাওফিন কে ভাই বা ভাইয়া বলে না, নাম ধরেই সম্বোধন করে। মির্জা সূচনা ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলল,,,—“এদিকে সবকিছু সম্পন্ন।”
তার কথা শেষ হতে দেরি, সঙ্গে সঙ্গে মহলের বাইরের নীল আকাশ স্পন্দিত হলো এক ভিন্ন শব্দে , তবে এ কোনো পাখপাখালির গান নয়, এ এক যান্ত্রিক পাখির হুঙ্কার। সেই শব্দ ক্রমেই ঘন হয়ে আসছে, আর পরিবারের সকলের হৃদয়ে এক চাপা উত্তেজনা যেন তরঙ্গ তুলছে, ব্যতিব্যস্ত সকলে হাতের কাজ ফেলে, ছুটে চলল বাহির অঙ্গনে।
মহলের সবাই উপস্থিত বাইরের বিশাল উদ্যানে। এক লৌহকঠিন পক্ষী ধীরে ধীরে আঙ্গিনার এক বিশাল সবুজে আবৃত ফাঁকা জায়গাটায় নেমে আসছে। তার যান্ত্রিক ডানার তীব্র ঝাপটানিতে চারপাশের গাছপালা দুলে উঠছে, যেন এক অজানা ঝড়ে সব কম্পমান। যন্ত্রপাখিটির উদরে লুকিয়ে আছে পাঁচ বছরের প্রতীক্ষার প্রতিমূর্তি। সে যখন ভূমি স্পর্শ করল, সমস্ত বাতাস যেন এক লহমায় স্তব্ধ হয়ে গেল। নীরবতার এই ক্ষণটি যেন সকল ইন্দ্রিয়ের উপর জয়ী হলো।
ধীরে ধীরে যন্ত্র পক্ষীরাজের মাঝ থেকে নেমে আসলো নিখুঁতভাবে তৈরি ডার্ক নেভি স্যুট পরিধানরত,এক সুদর্শন পুরুষ। দেখতে অনেকটা ব্রিটিশদের মতো পুরুষটির, মুখাবয়ব চঞ্চলতা বিহীন । কেবল শান্ত, নিবিড় এক প্রশান্তি। সেই প্রশান্তির মধ্যে দিয়েও তার তীক্ষ্ণ চোখদুটি আপনজনকে খুঁজে ফিরছে। দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রৌশানারা খান এই দৃশ্য দেখে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। সকল বিধিনিষেধ, সকল জড়তা ভেঙে তিনি প্রায় ছুটে গেলেন তার পুত্রের দিকে। তার চোখে তখন আনন্দের অশ্রু, মুখে এক তৃপ্তির হাসি।
রাওফিন যখন দেখল তার মা ছুটে আসছেন, তার নিজের হৃদয়ের বাঁধটিও যেন ভেঙে গেল। পাঁচ বছরের সকল শূন্যতা, সকল কষ্ট যেন এক লহমায় মিলিয়ে গেল যখন সে তার মায়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে ধরা পড়ল। এক নীরব, কিন্তু গভীর আবেগে পূর্ণ সেই দৃশ্য, যা হার মানাবে ভাষার বর্ণনাকে । অন্যান্য পরিজনেরাও তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো, যেন আজ এক নবসূর্যোদয়ের সূচনা হলো খান মহলের আঙ্গিনায় ।
সময়টা সন্ধ্যার কিছু পর,ঘড়ির কাঁটায় সবে সন্ধ্যা ছয়টা কি সাতটা? খান মহলের সকালে জমায়েত হয়েছে বিশাল ড্রয়িং রুমে। বিভিৎ জিনিসের রকমারি সাজানো হয়েছে সেখানে।প্রত্যেকের জন্যই গাদা খানেক দ্রব্যাদি।একে একে সবাইকে নিজের জিনিস বুঝিয়ে দিচ্ছে রাওফিন। হঠাৎই তিহুর সম্মুখে এসে থমকে দাঁড়ালো সে। ভ্রু জোড়া সামান্য কুঁচকে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে বললো,,,
———“তোমাকে তো ঠিক…”
তার মুখের কথাটা শেষ করার আগেই লুফে নিয়ে রাফা এক লহমায় বলে উঠলো,,,
———“ভাইয়া এটা,বউমনি নীল ভাইয়ার….”
তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,রাওফিন নিজের খসখসে কন্ঠে বলল,,,
———“ওহ,তাহলে তুমিই নুরাইন?”
তিহু এক ঝলক নীলের দিকে তাকালো, অতঃপর সম্মতির সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল,,
———“জ্বী আমিই নুরাইন,নুরাইন হক।”
রাওফিন, এবার এক ঝলক নীলের দিকে তাকালো। তারপর তিহুর দিকে ফিরে হেসে বলল,,,
———“ওহ হাই,আমি মাহমুদুল। মাহমুদুল হক। বাই দা ওয়ে সেম সারনেম।”
তিহু:“হুম তাই তো দেখছি।”
রাওফিন এবার তিহুর দিকে ফিরে প্রফুল্ল হেসে বলল,,,
———“So, does this mean we’re like brother and sister?”(তাহলে কি এর অর্থ এই যে, আমরা যেন ভাই-বোন হয়ে গেলাম?)
তিহু খানিক হাসলো। অতঃপর মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,,
———“Maybe!”
রাওফিন এবার কিছুটা, হতাশাগ্রস্থ,আর অনুশোচনা সম্পন্ন দৃষ্টি নিয়ে বলল,,,
———“বাট স্যরি সিস্টার, আমি যখন মিমিয়ার কাছে তোমার কথা শুনেছি তখন আর টাইম নাই। তোমার জন্য কিছুই আনতে পারিনি। আই এম রিয়েলি স্যরি।।”
তিহু:“ইটস ওকে ব্রাদার, সিস্টার যখন বলেইছো, তাহলে, দেনা পাওনার হিসাবটা না হয় পরে চোকানো যাবে। আফটার অল ছোট বোন হিসেবে তোমার কাছ থেকে তো, কোনো স্পেশাল ইভেন্টের জন্য আমার গিফটের প্রয়োজন হবেনা, না? যে কোনো মুহূর্তেই আমি সেটা পেতে পারি।”
রাওফিন মুগ্ধ হলো,তিহুর এমন আন্তরিক আচরণে। মির্জা সূচনা বৌমার আন্তরিকতায় মুচকি হাসলেন। মির্জা সায়মা তার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,,
————“যে যাই বলুক আপা,আমাদের নুরাইনটা কিন্তু খাঁটি সোনা।তোর সংসারটা একমাত্র ওই সামলাতে পারবে।”
মির্জা সূচনা এক ঝলক বোনের সরল মুখপানে তাকালেন । অতঃপর ফের বৌমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
————“আমি জানি।”
হঠাৎই, এত কথোপকথন এর মাঝে একজনকে খুঁজে চলল রাওফিনের, দৃষ্টি জোড়া। দুই একবার আশে পাশে তাকিয়ে সে মির্জা সূচনার উদ্দেশ্যে বলল,,,
————“মামিমা, মুন্নি কই?”
মির্জা সূচনা, একবার আশে পাশে তাকালেন। মুন্নিকে দেখতে না পেয়ে রুমিন আরার উদ্দেশ্যে বললেন,,,
————“রুমি, মুন্নি কই রে?”
রুমিন আরা:“দেখো ভাবীজান হয়তো, রুমে ঘুমিয়ে আছে। বলছিল তো মাথায় ব্যথা করছে।”
মির্জা সায়মা:“তাই বলে রাওফিন এতদিন পর আসলো একবার দেখাও করলো না?”
রুমিন আরা:“ওই যে তখন আমাদের সাথে গেল না তার পরে তো রুমে গিয়ে দরজা দিয়েছে।”
কেউ ব্যাপারটা তত একটা গুরুত্ব না দিলেও। তিহুর কেন জানি মনে খটকা লাগলো। অদ্ভুত একটা রহস্যময়ী মেয়ে মুন্নি! এবাড়ির সবার সাথে হয়তো একদিনে তিহুর আলাপচারিতা ঠিক মত হয়নি । তবে অনুমান নির্ভর, প্রচেষ্টাতে সে যতদূর বুঝেছে । মুন্নি মেয়েটা বড়ই অদ্ভুত। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়।
যেখানটা তিহুর আরও বেশি অদ্ভুত লাগার কারণ। তা হচ্ছে মুন্নি, সকালবেলায় গার্ডেন এরিয়ায়, নীলের দিকে এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বারংবার তাকাচ্ছিল। হঠাৎই, কল্প লোকে ডুবে তিহুর চিকন ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো।
দুই তলার করিডোর দিয়ে, নীলের রুমটার দিকে যাচ্ছিল তিহু। হঠাৎই এক পরিচিত মুখের দর্শন পেতেই থমকালো তার পথচারনা। রহস্যময়ী সেই মানবীটিকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলল তিহু। না চেনার তো কোনো কারণ নেই । সকালেই বেশ ভালো করে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে সে। তবে তার তো এখানে থাকার কথা নয়, এদিকের সমগ্র এরিয়া জুড়ে তো শুধু একটাই রুম। সেটাও নীলের, মানবীটি এক ঝলক তাকালো তার দিকে।তিহু স্বভাবসুলভ মুচকি হেসে বলল,,,
————“ওহ তুমি এইখানে, তোমাকে তো সবাই নিজে খুজছিল. বাই দা ওয়ে তোমার মাথা ব্যথা করছিল শুনলাম । কমেছে?”
————“কি করে ফাঁসিয়েছো নীল ভাইকে?”
প্রশ্নের জবাবে এমন উত্তর হয়তো আশা করেনি তিহু। হঠাৎই তার ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। সরু চোখে, সন্দিহান দৃষ্টির নিক্ষেপ করে বলল,,,
————“মানে?”
কিছুটা তেঁতে উঠলো যেন মুন্নি। তার কাছে মেয়েটির এমন প্রশ্ন ন্যাকামি ভিন্ন অন্য কিছু লাগছে না । বিরক্তিকর কণ্ঠে সে বলে উঠলো,,,
————“মানে বুঝছো না? কচি খুঁকি নাকি তুমি? আমি বলছি তুমি কি করে আমার নীল ভাইকে ফাঁসিয়েছো?”
প্রথম সাক্ষাতেই মুন্নির আমার উগ্র আচরণে, বিষ্ময়ে ছেয়ে গেল তিহুর সুশ্রী মুখাবয়ব। এতক্ষণ যাবৎ মুচকি হাসির রেখা বিদ্যমান, মুখশ্রীতে মুহূর্তেই নেমে আয় এলো একরাশ বিস্ময় আর বিরক্তি।
তিহু:“কি সব বলছো? মাথা ঠিক আছে তোমার?”
মুন্নি:————“মাথা ঠিক থাকবেনা মানে? তোমার মথো ক্লাসলেস মেয়েকে চিনতে, মাথা ঠিক রাখার প্রয়োজন হয় না। থার্ড ক্লাস মেয়ে কোথাকার। যখনই দেখলে, বড়লোক তখন আর নিজের লোভ সামলাতে পারলে না তাই না? জিভ লকলক করে উঠলো?”
তিহু মুন্নির এমন কথায় তেঁতে উঠল। মাত্রই কি বলল মুন্নি? থার্ড ক্লাস, তাকে থার্ড ক্লাস বলা! ক্ষিপ্ত বাঘিনীর ন্যায় তিহু বলল,,
————“ওই,গলা নামিয়ে। আর তুই থার্ড ক্লাস কাকে বললি? তোর নিজের কোনো ক্লাসের ঠিক আছে। কতটুকু জানিস তুই আমার সম্বন্ধে? আমার বাপ দাদার যে সম্পত্তি আছে, তা দিয়ে তোর মতো হাজারটা মেয়েকে আমার বাসায় ঝি করে রাখা যাবে। তাই গলা নামিয়ে কথা বল।”
মুন্নি বেশ অবাক হলো,তিহুর এমন আচরণে। সে হয়তো কল্পনা করতে পারেনি তিহুর এতটা রুড হতে পারে, কেননা, তিহুর চেহারায় মিষ্টি মিষ্টি ভাব আছে যা দেখলে সহজে কেউ ধরতেই পারবে না,তার ভেতরকার আগ্নেয়গিরির উদগীরণ ঠিক কতটা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। তবে মুন্নিও কি কম যায় নাকি? সেও তিহুর কথার জবাবে বলল,,,
————“ভাষা ঠিক কর, তোর কথাতেই বোঝা যাচ্ছে তোর ভদ্রতার শিক্ষা….”
তাকে কথা শেষ করতে দিল না তিহু, কথার মধ্যিখানেই তাকে থামিয়ে সে বলে উঠলো,,,
————“বিশ্বাস কর আমি ভদ্র নই! চরম অভদ্র আমি, একেবারে খেতাব প্রাপ্ত অভদ্র । তাই যদি চাস আমি ভদ্রতা বজায় রাখি তাহলে, নিজে ভদ্রতার সীমানার মধ্যে থাকার চেষ্টা কর।”
কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে যায় তিহু। এক মুহূর্তের জন্য পিছনে ঘুরে তাকায় না। এদিকে মুন্নির বিস্মিত আঁখি যুগল, অবাক বিশ্লেষণে ব্যস্ত গাম্ভীর্যময়ী রমণীটিকে, এ যেন মির্জা সূচনারই, সেকেন্ড ভার্সন। একদম সেইরকমই গাম্ভীর্য দাম্ভিকতা ঝরে পড়ছে মেয়েটির কথা আর চালচলনে।
আকাশে অর্ধচন্দ্র বিদ্যমান, সময়টা রাত দশটার কিছুটা পরে। নীলের রুমটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিল তিহু। কি বিশাল রুম! তবে সবচেয়ে সুন্দর লাগার মত জিনিসটা হচ্ছে, উত্তর সাইডের সুইমিং পুলটা। রুমের সাথে লাগাতার, সুইমিং পুল, আর তার স্বচ্ছ পানিতে দৃশ্যমান নানা রঙা পাথরগুলো নজর কাড়ে । চারিধারের, হরেক রকম নাম না জানা বাহারি ফুলের সমাহার।
তিহু, এক নজরে পানির দিকে তাকিয়ে নিজের রাগটা সংযত করার চেষ্টা করছে। সফলও হয়েছে কিছুটা তাতে। তৎক্ষণাৎ রুমের মাঝে কারো পদধ্বনির শব্দে সেখান থেকে রুমে আসলো সে।
নীল সবে নিজের পাঞ্জাবিটা বদলে, একটা ফুল স্লিভ শার্ট, আর ট্রাউজার পরে বেরিয়ে। লোকটাকে একেক সময় একেক রকম লাগে তিহু কাছে, এই যেমন এখন একেবারে হলিউডের কোনো বড় তারকার মতো লাগছে, আবার কখনো কখনো তাকে অভিজ্ঞ নেতাদের থেকেও দ্বিগুণ গাম্ভীর্যপূর্ণ লাগে তাকে। তবে লোকটিকে যেন এই লুকেই বেশ ভালো লাগছে তিহুর।
সে মুগ্ধ নয়নের নীলকে যখন বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তৎক্ষণাৎ মুন্নির ব্যাপারটা মাথায় আসাতেই,সংবিৎ সে দৃষ্টি নামালো। অতঃপর নীলের দেখে ফিরে বলল,,,
—-“আপনার ফোনটা একটু দিন তো!”
নীল কোন কথা না বলে বেড সাইড টেবিলের ওপর পড়ে থাকা,আই রিটেইল বক্সের দিকে ইশারা করলো। তিহু নীলের ইশারায় এক ঝলক সেদিকে তাকালো। অতঃপর বিড়বিড় করে বলল,,,—-“এই লোক কি দৈনিক ফোন বদলায় নাকি?”
নীল হয়তো শুনতে পেল তিহুর কথাটা। সোফাতে বসে, ল্যাপটপটা অন করতে করতে সে বলল,,,—-“ফোনটা তোমার আমার না।”
তিহু তখন সবে, ফোনটা রিটেইলস বক্স থেকে, আনবক্সিং করে হাতে ধরেছিল। নীলের এমন কথায় অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো,সে। একবার হাতে থাকা আইফোনটার দিকে আরেকবার নীলের দিকে তাকিয়ে বলল,,,—-“এই ফোন নিয়ে আমি কি করবো?”
নীল ভাবলেহীন ভাবে বলল,,,—“চাইয়া থাকবা।”
তিহু:“মানে?”
নীল:“যেহেতু তুমি ফোন দিয়ে করার কিছু পাচ্ছো না তাই তাকিয়ে থাকবা সর্বক্ষণ!”
তিহু:“আমার এত দামী ফোন লাগবে না।”
নীল:“বাট আমার লাগবে!”
তিহু:“মানে?”
নীল:“এত মানে মানে করো কেন? দিয়েছে যখন নিয়ে নাও। আর একটাও প্রশ্ন নয়।”
তিহু কিছু একটা বলতে গিয়েও থামল। অতঃপর ফোনটা, হাতে নিয়ে একবার সবগুলো ফাংশন চেক দিয়ে, ডায়াল করল কাঙ্খিত নম্বর টিতে।
মাহার সাথে কথা শেষে প্রায় অর্ধ ঘন্টা পর রুমে প্রবেশ করলো তিহু। নীল তখন, নিজের সমস্ত কর্মব্যস্ততার সমাপ্তি ঘটিয়ে সবে, ল্যাপটপটা অফ করেছে । তিহুকে দেখেন সে বলল,,,,—-“নুর!”
নীলের কণ্ঠে যেন অন্যরকম কিছু ছিল। তিহু না চাইতেও ঘুরে তাকালো। নুর নামটা কিছুটা ‘নুইর’ হয়ে পৌছলো তার কর্নকুহরে। আকস্মাৎ সে বলল,,—“কিছু বলবেন?”
নীল:“শোনো তো একবার!”
তিহু এগিয়ে আসলো। নীল তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল,,,—“এফবি একাউন্ট আছে তোমার?”
তিহু:“হুম ছিলো তো।”
নীল:“পাসওয়ার্ড মনে আছে?”
তিহু:“থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে।”
নীল:“বলো।”
তিহু কোন কথা না বলে চুপটি করে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকলো। নীল পরপর দুইবার, পাসওয়ার্ড বলতে বলার পরও অপর পাশ থেকে কোনরূপ জবাব না আসায়। বিরক্ত হয়ে বলল,,,—“কি বললাম শুনতে পাচ্ছ না? পাসওয়ার্ড কি?”
তিহু আমতা আমতা তা করে বলল,,—“ইয়ে মানে!”
নীল ভ্রু কুঁচকে তাকালো তার পানে। নীল,,,—“ মানে কি?”
তিহু:“আসলে!”
নীল:“কোনো আসলে, নকলে আমি শুনতে চাচ্ছি না। যা বললাম সাফ সাফ তার আন্সার দাও। ফেসবুক পাসওয়ার্ড কি তোমার?”
তিহু দ্রুত কণ্ঠে বললো,,,—“কু*ত্তা*র বাচ্চা!”
তিহুর কথায় দেখতে মত ভীষম লেগে গেল নীলের। বুকে থাপ্পর দিতে দিতে নিজেকে সামলিয়ে সে বলল,,–“কিইই?”
নীলের এমন অবস্থা থেকে তিহু বলল,,,—“আরে ,আরে এমন করছেন কেন?আপনাকে তো বলিনি!”
নীল:“তো!”
তিহু:“এটা আমার ফেবু পাসওয়ার্ড!”
নীল:“লাইক সিরিয়াসলি? কোনো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড এরকম হয়?”
তিহু কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,,,—“এসব আপনি বুঝবেন না মিস্টার! এমন পাসওয়ার্ড যে কেউ কোনোদিন আন্দাজই করতে পারবে না!
নীল মুখটা গোবেচারার মতো করে বলল,,,—“ হুম বুঝলাম।”
কিছুক্ষণের মাঝে নীল ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে,তিহুর একাউন্টে ঢুকলো। সামান্য স্ক্রল করতেই তার সামনে ভেসে উঠলো সর্বশেষ পোস্টটা। যেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা,,
“আজ একটা শ্বশুরবাড়ি নাই দেইখ্যা, আম্মুর শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হয়. জীবনটা বেদনার”
নীল বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো তিহুর দিকে। জীবনে কি যে পাপ করেছিল যার দরুন এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে, ভাবার চেষ্টা করল সে! এদিকে তিহু দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বলল,,,—“আরে মিস্টার আপনার কাম হইলে বলুন তো। ঘুমাবো আমি।”
নীল ফোনটা তার হাতে দিয়ে বলল,,,—“হুম,এই নাও হয়ে গিয়েছে।”
তিহু ফোনে ফেসবুক একাউন্ট অন করা দেখে। ভাবলো একবার গ্রুপে ঢোকা যাক। তবে তার ফোনে কি এমবি আছে? হয়তো না। সে দ্রুত নীলের দিকে ফিরে বলল,,,—“আচ্ছা আপনাদের এখানে ওয়াইফাই আছে না?”
নীল:“হুম!”
তিহু:“আপনার নিজস্ব ?মানে শুধু আপনার রুমের জন্যই তো? নাকি পুরো মহলের সবার?”
নীল:“আমি আমার জিনিস কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি না। তাহলে ওয়াইফাইটা অবশ্যই শুধুমাত্র আমার রুমের জন্যই হবে। মহলের টা আলাদা। এখানে আসে না।”
তিহু মুখ বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,,,—“ঢঙ্গে আর বাঁচি না! বললেই হয় মহলের টা এখানে পায়না তা না আবার ঢং করে, বলা হচ্ছে আমি আমার জিনিস কারো সাথে শেয়ার করি না।”
তিহুকে এমন চুপ করে থাকতে দেখে নীল বললো,,,—“কিছু বলবে নাকি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?”
তিহু:“পাসওয়ার্ড টা একটু দিবেন?”
নীল:“আই লাভ ইউ!”
নীলের কথায় তিহুর চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম, বিস্ময়পূর্ণ কন্ঠে সে বলল,, —“কি বললেন?”
নীল:“এটা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড!”
তিহু:“একটু আগে তো খুব আমাকে বলছিলেন। তা আপনার কি মনে হয়?কোনো স্বাভাবিক মানুষের ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড আই লাভ ইউ হতে পারে?”
নীল:“এটা আমি না, ইজাজ দিয়েছে! আর চুপচাপ বসে কোনো কাজ থাকলে সেটা করো । বকবক করে আমার মাথা খেয়ো না।”
বলেই নীল মোবাইলে ক্রলিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়ল।তিহু নাক মুখ শিটকে একবার সেদিকে তাকালো। অতঃপর নিজেও বিছানায় গিয়ে একবার নিজের মেসেঞ্জার চেক দিতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর তিহু হঠাৎই বলল,,,—-“এই যে শুনছেন?”
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে, হয়তো একটু ঘুম ঘুম আসছিল নীলের। তিহু কণ্ঠে সে বলল,,,—“হুম বলো!”
তিহু:“একটা রিকোয়েস্ট করব রাখবেন? প্লিজ!”
নীল:“বেশি ঢং না করে বলে ফেলো.”
তিহু:“অ্যাকচুয়ালি আমি, গ্রুপে ঢুকে দেখছিলাম। কালকে আমাদের একটা ক্লাস টেস্ট আছে।P.C. (Professor Chief) স্যার নিজে যাওয়ার জন্য জরুরী তলব করেছেন। তাই যদি আপনি আমাকে একটু দিয়ে আসতেন! না মানে আপনার ভার্সিটি অব্দি যাওয়া লাগবে না শুধু বাড়ি থেকে বের হতে আমাকে হেল্প করতে পারলেই হচ্ছে আর…..”
প্রেমের নীলকাব্য পর্ব ৭ (২)
তাকে কথার মাঝে থামিয়ে নিল বলল,,,—-“এত ফর্মালিটিস এর দরকার নেই। বলেছো যখন অবশ্যই কালকে তুমি ভার্সিটিতে যাবে। আর এখন ঘুমিয়ে পড়ো।”
তিহু অতি ভদ্র মেয়ের মতো বলল,,,—“আচ্ছা!”
নীল সোফাটাতে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু তিহুর চোখে ঘুমের লেশ মাত্র নেই। মনে আনন্দের জোয়ার বইছে তার, কাল মাহার সামনে গিয়ে এতদিনের অ্যাডভেঞ্চারের কথাগুলো বলতে না পারলে এক দন্ড শান্তি মিলবে না তার। কত কত কথা জমা হয়ে আছে…!!
