ছায়াস্পর্শ পর্ব ৮ (২)
জান্নাত চৌধুরী
সময়টা প্রায় মাঝ রাতের কাছাকাছি , ঘোনিয়ে এসেছে ইফরাহ্ বিদায় বেলা। বিয়ে বাড়ির সমস্ত নিয়ম শেষে এবার বউ বিদায়ে পালা। আরাধ্য আধসোয়া হয়ে চকির উপরে বসা। ইফরাহ্ কে ধরে ঘর থেকে নিয়ে আসছে যুথি আর রাইসা। তার সামনেই.. শাড়ির আঁচল টেনে হেটে আসছে জহুরা বেগম।
মাটির বারান্দা পেরিয়ে মাত্রই উঠানে পা ফেলেছে সে । চারপাশে মানুষ আস্তে আস্তে জায়গা ফাকা করে দিচ্ছে বিদায় বেলা। প্রতিটি মেয়ের কাছেই নিজের বাড়ি ছেড়ে অপর এক বাড়িতে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া ভীষণ কষ্টে। ইফরাহ্ কে এনে দাড় করানো হয় মাঝ উঠানে , ইসমাইল শেখ এগিয়ে এসে হাতে হাত রাখে তার। বুক কষ্টে ফেটে গেলেও পালন করতে হবে বাবার দায়িত্ব। চোখ জোড়া বারবার ঝাপসা হয়ে হয়েছে
– , আমার লক্ষী বাবা তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী আম্মা। আমার দায়িত্ব কখনোই সঠিক ভাবে পালন করতে পাড়িনি।
এগিয়ে আসেন জহুরা বেগম এসে হাত দাঁড়ায় ইসমাইল ইফরাহ্ মাঝামাঝি খোচা মেড়ে বলে ,
– হইছে যাওয়ার বেলায় আর এসব কথা বলা লাগে না। মাইয়া নিজের মতে বিয়া বসছে। কপালের দোহাই লাগে না
খোঁচা টাহ বেশ ধারালো , তবে ইফরাহ্র মাঝে কোনো অনুভূতি প্রকাশ নেই। উঠানের বাতাস টাও কেমন অশান্ত হয়ে উঠে।
চেয়ারম্যান এগিয়ে আসতে নিবে তার আগেই এক লাফে চকি ছেড়ে উঠে দাড়ায় আরাধ্য গটগট করে এগিয়ে এসে চেপে ধরে ইফরাহ্র হাত।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-আপনাদের নিয়ম কানুন অন্য একদিন হবে .. বিয়েটা যেহেতু শেষ হয়েছে আমি আমার বউ নিয়ে যাচ্ছি। ওদিকে রাত ফুরানোর আগেই সোহাগ রাতের কাজটা তো সারতে হবে নাকি।
জীবনের প্রথম সোহাগ রাত কিনা সাথে কচি বউ… ইসস পুরো জোমে ক্ষীর।
পুরো গ্রাম বাসি লজ্জায় মুখ চেপে হাসছে কেউ কেউ তো.. মুখে ওড়না চেপে ধরেছে ,ছোট নবাবের ঠোট কথা স্বভাব সম্পর্কে তাদের অজানা নয়। ইসমাইল শেখ লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে
রাইসা যুথি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুসকি মুসকি হাসে , আরাধ্যে চোখ এড়াতে পারে না হাসি
-এই শালি হাসো কেন ! বেশি খুশি লাগলে আধবড়া চাচা ধরে বিয়ে করিয়ে দিবো।
আরাধ্যে কথায় চোখ দুটো গোল গোল মার্বেল হয়ে যায় দুজনে সাথে হাসিও থেমে যায়। চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে এসে ধমকে ওঠে ছেলেকে।
-আহ আরাধ্য কিহ হচ্ছে টা কি ?
– আপনাকে দাদু বানানোর প্লানিং আব্বাজান। যদিও আমার বউটা এখনো ভীষণ কচি তবে প্লানিং করে রাখতে সমস্যা নেই।
এই যেমন ধরুন , চাঁদনী রাতে বাঁশবাগানের উপরে এক ফালি চাঁদের আলো পড়বে। আমার বিছানায় ফুল ছড়ানো .. সাথে চঞ্চলা সুন্দরী এক বউ। বউ বলবে ..
-থাক তোমার ওইসব নষ্টা কথা আমরা কেউ শুনতে আগ্রহী নই।
-ধ্যাত আব্বাজান কি যে বলেন, এখানে উপস্থিত সকলেই সোহাগ রাতের কার্যক্রম সম্পন্ন করা মানুষ। সাথে কিন্তু আপনিও যোগ আছেন। এই যে আমার শালি সে সবে বাচ্চা তবে ভবিষ্যতে সেও এ রাতের জ্ঞান নিবে। এসব নষ্টা কথা নয় আব্বাজান , এগুলো হলো বায়োলজিক্যাল কথা।
বিরক্তিতে চ সুচক শব্দ উচ্চারণ করে চেয়ারম্যান। এই ছেলের সাথে কথা বলা মানে নিজেকে পাগল করা। এই পাগল কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারলে তার সাথে গ্রামবাসীও একটু শান্তি পাবে।
চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ইসমাইলের শেখের কাছে।
– এবার তবে আমরা আসি ইসমাইল।
মাথা নাড়ে ইসমাইল , জহুরা বেগমের দিকে আড় চোখে একবার তাকায় আরাধ্যে তখনো ইফরাহর হাত ধরে রেখেছে ইসমাইল শেখে অনুমতির অপেক্ষা কিনা ছোট নবাব করে “কাভি নেহি” সে ইফরাহর হাতে টেনে রাইসা দের থেকে একটু দূরে আনে। এদিকে ইফরাহ্ ভরকে যায়, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে পাঁজাকোলা করে তুলে নেয় আরাধ্য …
-চলো তো বউ এসব ন্যাকামিতে থাকলে রাত পেরিয়ে যাবে তোমাকে আদর করা হয়ে উঠবে না।
কথাটুকু বলেই ইফরাহ্ কে কোলে তুলে হাটা ধরে ইফরাহ্ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে আরাধ্য চোখে। বেশ ঘন ভ্রু মানুষটার , চোখের মনি জোড়া কালো কুচকুচে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে চোখে এসে পড়ছে বারবার গাল ক্লিন সেভ তবে নাকের নিচে মোচ রেখেছে। বেশ নায়ক নায়ক এক ভাব।
চোখের কোণা উপচে পানি পড়েছে ইফরাহ্র চোখ থেকে। আরাধ্যের বেশ বিরক্ত লাগে এইসব মেয়ে মানুষ এতো ছিঁচকাদুনে কেন মালিক জানে। হাঁটতে গিয়েও থেমে যায় আরাধ্য ইফরাহ্র মুখে দিয়ে তাকিয়ে
-একি বউ কাঁদছো তুমি? কাঁদে না বউ কাঁদে না। তুমি হলে মীর বাড়ির গিন্নি। তোমার তো শুকরিয়া করা উচিত তুমি ছোট নবাবের কোলে চড়েছো ,।
ইফরাহ্ কিছু বলে না .. আরাধ্য হাঁটা ধরে গেট পর হয়েই ইফরাহ্কে বসিয়ে দেয় পালকিতে !
ধান ক্ষেতের আইল পেরিয়ে গ্রামের কাঁচা মাটির এক বড় রাস্তায় দেখা মিলবে এ রাস্তায় বড় গাড়ি ঢুকবেনা তাই পালকি আনিয়েছে আরাধ্য। তার রক্তকমলিনী কিনা হেঁটে তার বাড়িতে কখনোই নয়।
পরপর চারজন লোক এসে দাড়ায় পালকির পাশে আরাধ্যের ইশারা পেতেই পালকি কাঁধে তোলে তারা। একে একে ইফরাহ্দের বাড়ি , অতি পুরনো আম গাছ সব পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে থাকে পালকি। পালকিতে ঝুলানো কাপড়ের আড়ালে থেকে দুচোখ ডরে তা দেখছে ইফরাহ্…। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস!!
বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মানহা। সেই ছোট বেলা থেকে কতনা স্বপ্ন এঁকেছে দুটি চোখে , নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে পড়ে রয়েছে এই বাড়িতে। আজ তার প্রিয় মানুষের বিয়ে। ভাবতেই শরীর শিরশির করছে তার। এই জন্মে বুঝি এই কষ্টের ইতি কোনো কালেই হবে না।
কাঁদতে কাঁদতে ইতোমধ্যে চোখ মুখ ফুলে উঠেছে তার। মাথায় চলছে নানা প্রশ্নের মেলা। কে দিবে এই উত্তর কার কাছে গেলে শান্তি মিলবে একটু বুকে যন্ত্রণা গুলো কাকে খুলে বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে জোড়ে ডুকড়ে কাঁদতে থাকে সে। হঠাৎ চোখ দুটো যায় তার গায়ের রঙের। শোয়া থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসে সে। হাতের দিকে তাকিয়ে এক হাত রাখে নিজের গালে ধীরে ধীরে সেই হাত নামিয়ে আবারো তাকায় তার হাতে দিকে সাথে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে
-শুনেছি মেয়ে নাকি ভীষণ রূপবতী , তবে কি সেই রূপেই মজেছে তার ভালোবাসা।
কথাগুলো বলেই থেমে যায় মানহা। কাঁপা কাঁপা হাতে মুছে চোখে পানি উপরের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে ইট সিমেন্টের প্লাস্টার করা ছাঁদ। এই সময়ে খোলা আঁকাশটা ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। যেই ভাবা সেই কাজ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পরে সে। তবে বাহিরের আসতেই মনের জমা কষ্ট টুকু যেনো আরো চেপে ধরছে তাকে।
অন্দরমহলে সকলে নতুন বউয়ের অপেক্ষায় সারি হয়ে দাঁড়িয়ে মেঝেতে ছাড়ানো ছিটানো গোলাপের লাল পাপড়ির! অরুনিমা বসে বয়েছে নিচতলায় ছেলে বউয়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা।
চারদিক ভীষণ ভাবে শুন্য হয়ে পড়েছে তার জন্য এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না সে ছুটে চলে যায় ছাদের দিকে।
খোলা আকাশে আজ চাঁদ যেন গোল থালার রূপ নিয়েছে। চাঁদের হলুদ আলোতে পুরো ছাদ জলজল করছে আকাশ ভর্তি তাঁরা মেলা বসেছ। মানহা ছাদের একদম কিনারে এসে বসে । আজ সে বিধাতার কাছে অভিযোগে খাতা খুলতে ইচ্ছে করছে তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে সে ,
– হ্যা বিধিতা কেনো রূপ দিলেন না আমায় , কেনো রূপ না দিয়ে তার জন্য আমার মনে ভালোবাসার জন্ম দিলেন। আমার ভালোবাসা হেরে গিয়েছে , শুনছেন আমার ভালোবাসা হেরে গিয়েছে! এক রূপবতী আমার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে।
থেমে যায় মানহা চাঁদ যেন ঠিক তার মুখের উপর আলো ফেলছে…
হঠাৎ মানহা গুনগুনিয়ে ওঠে..
যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
মি বাইবো না , আমি বাইবো না মোর খেয়ার তরী এই ঘাটে
যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,
চুকিয়ে দেব বেচা কেনা,
মিটিয়ে দেব গো , মিটিয়ে দেব লেনা দেনা
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে
তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে
যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।
যখন জমবে ধূলা তানপুরাটার তারগুলায়
কাটালতা , কাটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আহা , যখন জমবে ধূলা তানপুরাটার তারগুলায়।
ফুলের বাগান ঘন ঘাসের পরবে সজ্জা বনবাসের
শ্যাওলা এসে ঘিরবে দীঘির ধারগুলায়,
তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে,
আর গাইতে পারে না সে , চোখের পানি যেন আজ বাঁধ ভেঙ্গেছে।
-বেইমান হৃদয় বসবাস একজন দেহে , অথচ পুরে ছাই হয় অন্যের কথা ভেবে।
সানাইয়ের সুর বেজে ওঠেছে , হয়তো ছোট নবাব বউ নিয়ে এসছে। মানহা কান পেতে কিছু সময় শোনে সেই সুর বুকের মাঝে ধক করে ওঠে তার। হাতের তালুতে মুছে নেয় চোখ জোড়া …
বসা থেকে উঠে হাটা দেয় অন্দরমহলে দিকে।
বউ এসেছে , আরাধ্য কোলে করে প্রবেশ করিয়েছে তার মহারানী কে। অন্দরমহলে আসতেই পথ আটকে দেয় অরুনিমা ..
– বউরে কোল থেকে নামও , আব্বা।
– কারণ কী মা জননী ,আমার পুতুলের মতো বউয়ের পা মাটিতে পড়লে যদি সে ব্যথা পায়। আমি কোলেই রাখছি আপনি বলেন হ..
ভ্রু জোড়া কুঁচকে আরাধ্যের মুখের পানে তাকায় অরুনিমা। কাঁদতে কাঁদতে বেশ কিছু সময় আগেই ঘুমিয়েছে ইফরাহ্। আরাধ্য একদম চাইছিলো না তার রক্তকমলিনীর ঘুম ভাঙ্গাতে তবে না ভাঙ্গিয়ে ও উপায় নেই আম্মা ছাড়বে না।
ঘুমন্ত ইফরাহ্ কে মাটিতে দার করাতেই ঘুম আলগা হয়ে আসে তার। এই যে রক্তকমলিনী , চলে এসেছি আমরা… আরাধ্যের ফিসফিসিয়ে বলা কথায় চমকে ওঠে ইফরাহ্ চোখ মেলে সামনে তাকাতেই অরুনিমার চোখাচোখি হয় শাড়ির আঁচল মাথা ছেড়ে পড়ে গিয়েছে ইফরাহ্ তুলতে নিলেই অরুনিমা শীতল কন্ঠে বলে …
” থাক থাক এতো ব্যাকুল হতে হবে না ! … অরুনিমা এগিয়ে এসে ইফরাহ্ পা থেকে মাথা অবদ্ধি চোখ বুলিয়ে নিয়েই বলে
– মাসাল্লাল্লাহু , এ যেন আসমানের পরি । যেমন গায়ের গরন ঠিক তেমনি তার রূপ। গায়ের রং খানাও খাসা..
আরাধ্য এগিয়ে আসে অরুনিমার কাছে। মায়ের থেকে ইফরাহ্ কে টেনে নিজের কাছে আনে !
মাত্রই অন্দরমহলে এসেছে মানহা আরাধ্যের পাশাপাশি ইফরাহ্ কে দেখতেই বুকে মোচড় দেয় তার। মস্তিষ্কে যেন রক্তক্ষরণ হয় ..
-ওসব কথা কাল হবে , আপাতত বউ রে ছাড়েন তো আম্মা।
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আরাধ্যের কাছাকাছি এগিয়ে আসে মানহা। কিছু সময় তাকিয়ে থাকে আরাধ্যের মুখের পানে। চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে খুব কষ্টে সামলে নেয় নিজেকে।
আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় ইফরাহ্র মুখোমুখি। বেশ খানিক সময় পর্যবেক্ষণ করে তাকে হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে জড়িয়ে ধরে ইফরাহ্কে। কাহিনী কিহলো বুঝতে চাইছে সকলে। ইফরাহ্ কে বুকে জড়িয়েই.. নিজের কষ্ট গুলো চাপা দিচ্ছে ইফরাহ্ দুহাতে আগলে নেয় মানহা। বেশ কিছু সময় এভাবে থাকার পর মানহা শান্ত স্বরে আরাধ্যের দিকে তাকিয়ে বলে …
-তুমি পড়ে এসো ভাইজান , আমি নতুন বউকে ঘরে দিয়ে আসছি।
কথাটুকু বলেই আরাধ্যের উত্তরের আশায় করে না মানহা দ্রুত ইফরাহ্ হাত ধরে পা বাড়ায় সিঁড়ি দিকে আরাধ্য ভিমড়ি খেয়ে তাকিয়ে থাকে ..
-যাহ শালা এ তো দেখি ,চোখের সামনে বউ চুরি । সব শত্রু আমার , সব শত্রু!
করতে করতে সিঁড়ি দিকে তাকিয়ে থাকে আরাধ্য। প্রায় ঘরের একদম কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে তারা।
আরাধ্যের ঘরে প্রবেশ করতেই কাঁচা ফুলের এক মিষ্টি সুবাস ভেসে আসে ইফরাহ্ নাকে। মানহা হাত ধরে একদম বিছানার কাছাকাছি এনে দার করায় তাকে..
-তুমি ভীষণ সুন্দরী মেয়ে , সাথে ভাগ্যবতী।
মানহার বলা কথায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ইফরাহ্ হয়তো কথার মানে বুঝতে চাইছে।
মানহা বেশি ঘাটায় না মেয়েটার বয়স কম। তার ভালোই বয়সে ছোট হবে সে। তার হয়তো হিংসা হওয়ার কথা তার ভালোবাসার মানুষ কেড়েছে এই মেয়ে। তবে এখন ভীষণ করুণা হচ্ছে তার।সাথে রাগ হচ্ছে নিজের প্রতি। যেখানে মেয়ে হয়ে সে তার রূপ মুগ্ধ সেখানে ছোট নবাব তো বেটা ছেলে।
পুরো ঘর নিস্তব্ধতা ইফরাহ্ আড়চোখে একবার ঘরটা একটু পর্যবেক্ষণ করছিলো হঠাৎ মানহার কন্ঠে চমকে যায় সে
– ওখানে দুধের গ্লাস রেখেছি ,ছোট নবাব আসলে তাকে দিও। তার পাশেই রয়েছে , পানের প্লেট একটা পান খাইও কিন্তু।
কথাগুলো বলেই , ইফরাহ্ কে ধরে খাটে বসিয়ে দেয় মানহা। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একবার তাকায় খাটের পানে। বেলি আর গোলাপের মিশ্রনে সাজানো হয়েছে খাট। ভাগ্য চাইলে হয়তো আজ এ খাটে সে থাকতো। কিন্তু আফসোস তার নিজের হাতে সাজানো খাটে অন্য কেউ।
-” হয়েছে তোর ” আরাধ্যের কন্ঠে ধ্যান ভাঙ্গে তার। আরাধ্য এগিয়ে আসছে রুমের দিকে। মানহা কথা বাড়ায় না মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যা ঘর ছেড়ে। বেশ চমকায় আরাধ্য এই মেয়ে এত চুপচাপ ভেবে কপাল কুচকে নেয়। তবে আপাতত মাথাকে বেশি চাপ দিতে চাইছে না বলেই । দরজা লাগিয়ে একদম বেডের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় সে।
বেশ বড় এক ঘোমটা টেনে বিছানায় বসা ইফরাহ্। আরাধ্য বেশ রাগ লাগে এতো বড় ঘোমটা টানার কি দরকার? এই মেয়ে এত নাটক করে কেন খোদা জানে। এইযে আরাধ্য তাকে দেখতে পাচ্ছেনা এতে কি তার রাগ লাগছে না।
লাল পড়েছো যে ?
মাথায় থাকা ঘোমটা হালাকা উচু করে , আরাধ্যের মুখের দিকে তাকায় ইফরাহ্। ডান ভ্রু হালকা উঁচু করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আরাধ্য চোখে। গায়ে থাকা কালো রংয়ের শার্টের বোতাম খুলেছে সে
কে বলছে লাল পড়তে ?
—বিয়েতে সকলেই লাল পড়ে। তাই আমিও …
খুলে ফেলো , মানাচ্ছে না তোমাকে।
বেশ অবাক হয় ইফরাহ্, চোখ দুটো বেশ বড়ো হয়েছে। কাজল কালো সাদা মনির চোখ জোড়ায় জমানো ভীষণ কৌতুহল
—তাহলে পাঠিয়েছেন কেন। আপনার পছন্দ সই রঙটাই পাঠাতেন।
আরাধ্য চুপ থাকে তার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। নিজেকে থামানো বেশ দায় উঠেছে তার। বার বার শুষ্ক ঢোক গিলছে সে…
‘শাড়ি তুমি খুলবে নাকি আমি…
বাকি কথা শেষ করার আগেই আরাধ্য খেয়াল করে ইফরাহ্ উঠে দাঁড়িয়েছে। তবে খাট থেকে মেঝেতে পা বাড়ানো আগেই ইফরাহ্র হাত ধরে থামিয়ে দেয় সে।
‘চেঞ্জ করতে বলি নি খুলতে বলেছি !
বিরক্ত লাগে ইফরাহ্র এক ঝটকায় নিজের গা থেকে হাত সরিয়ে দেয় সে। বেশ অবাক হয় আরাধ্য। হাতের দিকে তাকিয়ে খানিকটা বাঁকা হাসে সে …
এক পা এক পা আরো খানিকটা এগিয়ে এসে চেপে ধরে ইফরাহ্ দুই বাহু
-আমায় আঘাত করলে মেয়ে ? আমি ছুয়ে দিলে বুঝি শরীরে আগুন ধরে।
ইফরাহ্ কিছু বলেনা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়তে.. লাভ হয়না আরাধ্য আরো কিছুটা শক্ত করে চেপে ধরে ইফরাহ্ বাহু।
-তা বিয়ে করে বরকেই মানছো না যে ? , এই শিক্ষা পেয়েছো বুঝি স্কুলের মাস্টার মশাইয়ের থেকে , স্বামীকে অবমাননা করা?
– ছাড়ুন আমার লাগছে ?
– লাগার জন্য তো ধরেছি … পালাতে দেবো না বলেই তো তুলে এনেছি। এখন তুমি বন্দি মহারানী।
হঠাৎ আরাধ্যের চোখ যায় টেবিলে উপর ঢেকে রাখা দুধের গ্লাসে।
ইফরাহ্ তখনো ছটফট করছে নিজেকে ছাড়তে, পুরুষালী শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানো ভীষণ কষ্ট। আরাধ্য হাত বাড়িয়ে দুধের গ্লাস নেয়। পুরো এক গ্লাস দুধ পুরোটাই ঢালে ইফরাহ্ শরীরে।
মাথা বেয়ে তরল গড়িয়ে পড়ছে পুরো শরীরে ইতোমধ্যে শান্ত হয়ে গিয়েছে ইফরাহ্। আরাধ্য মুসকি হাসে। ইফরাহ্র মুখে বিন্দু বিন্দু দুধের ফোটা। গোলাপি ঠোঁট জোড়া কাপছে তাতে বেশ কিছু ফোটা লেগে রয়েছে। ধীরে আরাধ্য ঝুকে যায় ইফরাহ্র উপর বেশ সাবধানে দখলে নেয় ইফরাহ্ ঠোঁট। পঞ্চাদশীর শরীরে প্রথম পুরুষ ছোঁয়া বরফের মতো জমে গিয়েছে মেয়েটা। ধীরে ধীরে আরাধ্যে হাত পেঁচিয়ে নেয় ইফরাহ্র ধনুকের ন্যায় বাকানো কোমড়।
সময় পেড়িয়ে যায় বেশ কিছুটা। ইফরাহ্ ঠোঁটের কোণে হতে লাল তরলের দেখা মিলছে আরাধ্য ছেড়ে দেয় তার ঠোঁট।।
নেশাত্মক চোখে তাকিয়ে থাকে সাদা মনির মায়াবী চোখ জোড়ায়।
-পাপ পূণ্যের মিলোন খেলায় আজ জয় হয়েছে আমার।
তাচ্ছিল্যের হাসে ইফরাহ্ , মনে একরাশ অভিমান এসে ভির করেছে তার ভাঙ্গা কন্ঠে বলে
-কাপুরুষ সবসময় নিজেকে বড় মনে করে, তাদের তালিকায় আপনার নাম বড় অক্ষরে লেখা উচিত ছিলো!
রহস্যময় হাসে আরাধ্য , আবারো কিছু এগিয়ে যায় ইফরাহ্ দিকে।
হঠাৎ কোনো সতর্ক বার্তা ছাড়াই ইফরাহ্ ধপ করে বিছানায় সুয়ে যায় সে। ভেজা কাপড় ভাড়ি গহনা সাথে দুধের কাঁচা এক গন্ধ গা গুলিয়ে আসছে ইফরাহ্র। আরাধ্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয় তাকে কিছু সময় পর একে এক তার শরীরের সব অলংকার খুলে ফেলে দেয় সে। ভেজা বেনারসির আঁচল বুক থেকে নামিয়ে আরাধ্য মুখ গুজে দেয়।
পুরুষালীর আদুরে স্পর্শে থেকে থেকে কেপে ওঠে ইফরাহ্। এদিকে আরাধ্যে হাত এলোমেলো বিচরণ করতে থাকে তার সর্বাঙ্গে।
-মা মাফ করুন। এমন করবেন…
উন্মাদ হয়ে উঠেছে আরাধ্য আশেপাশে খেয়াল নেই তার। পুরো দিন দুনিয়া ভুলতে বসেছে। এত কিছুর মাঝেই ফুঁপিয়ে কাঁদার এক আওয়াজ কানে আসে তার। ইফরাহ্ বুক হতে মাথা তুলতেই বুঝতে পারে কাঁদছে মেয়েটা। এক হাতে নিজের চুল খামচে ধরে উপায় নেই এই মেয়ে এখন তার ভীষণ প্রয়োজন আরাধ্য আবারো মনোযোগ দেয় নিজের কাজে।
ধাপে ধাপে এগিয়ে যখন শীর্ষ চুড়ায় পৌঁছে। তখনি মায় হয় মেয়েটার জন্য আরাধ্য কামুক স্বরে বলে ,
-কাদঁছো তুমি , ভীষণ লাগছে।
তুমি চাইলে আমি হালকা বিরতি দিতে তে পারি রক্তকমলীনি।
তবে দুঃখিত পাখি ,নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি
একবারে থামতে বলো না জান।
ইফরাহ্ কাঁদতে থাকে রিতিমত হেঁচকি উঠে গিয়েছে তার।কাপা কাপা গলায় হাত জোড় করে আরাধ্যের কাছে
দূ … দূরে থাকুন প্লিজ! আ …আমি প্রস্তুত নই।
দ্রুত ইফরাহ্র উপর থেকে ছিটকে সরে যায় আরাধ্য… বড় বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে চেঁচিয়ে ওঠে সে । সামলাতে পারছে না নিজেকে …
ছায়াস্পর্শ পর্ব ৭
এই কেউ পানি আন … বরফ আন।
দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পাশে থাকা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ইফরাহ্। রাগী চোখে তাকায় আরাধ্য সাথে দাঁত খিচে বলে …
আমার হাতে না দিয়ে নিচে ঢাল বেয়াদব !
-আমি প্রস্তুত নই ,সর চোখের সামনে থেকে ….বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায় আরাধ্য গটগট করে ঘরের দরজা খুলে বেড়িয়ে যায় সে।
