বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৪

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৪
shanta moni

দরজা কাছ থেকে কাউকে সরে যেতে দেখে শুভ্র কপাল কুচকে তাকায়, দরজা হালকা খুলা। শুভ্র নিজের কাছ থেকে জেরিনকে সরিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে
শুভ্র: এই রকম গায়ে পড়া মেয়ে আমার একদম পছন্দ নাহ, দূরে থাক। গ্রেস্ট রুম গুছানো হয়ে গেলে। আমার রুম থেকে বিদায় হ,
শুভ্রের এমন কথায় জেরিন চোখ মুখ ছোট ছোট করে ফেলে। ঠোঁট উল্টে বলে,
জারা: আরে ইয়ার এমন করছিস কেনো। আমি তো আর এমনি এমনি তোকে জড়িয়ে ধরেনি। ওইখানে তেলাপোকা ছিল৷ সেই ভয়ে তো ধরেছি।

শুভ্র কোনো কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। আর কতোক্ষন কথা বল্লে হয়তো এই মেয়েকে সে আছার দিবে।
শুভ্রের চলে যাওয়ার দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে জেরিন।
মুখে কেমন রসহ্যময় হাঁসি।
শুভ্রকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতোটা বিরক্ত’
আজকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসে শুভ্রের খালামনি রিনা খান সাথে তার দুই মেয়ে। রিনা খানের দুই মেয়ে এক ছেলে বড়, ছেলের নাম রাশেদ আর বড় মেয়ের নাম জেরিন ছোট মেয়ে জুই। বড় মেয়ে খুবই উগ্র স্বভাবের বিদেশিদের মতো চলাফেরা। ছোট মেয়ে জুই তার বিপরীত শান্ত স্বাভাবের দেখতে ভীষন মিষ্টি, পোশাকে তার শালীনতা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজকে কাউকে না জানিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এয়ারপোর্টে এসে শুভ্রকে ফোন করে, শুভ্র সবাইকে রিসিভ করতে যায় এয়ারপোর্টে। চৌধুরী বাড়ির সামনে আসতেই গাড়ি থেকে নামতে জেরিন পড়ে যায়। পায়ে ব্যাথার জন্য হাঁটতে পারে না। যার জন্য রিনা খান বলেন জেরিনকে কোলে নিয়ে বাড়িতে আসতে। না চাইতেও শুভ্র জেরিনকে কোলে করে নিয়ে বাড়িতে ডুকে। গেস্ট রুম ঠিক করা নেই, যার জন্য নিজের রুমে নিয়ে যায়। নিজের রুমে এসে বেডের উপর বসাতেই, জেরিন হটাৎ চিৎকার করে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে, এমনিতেই শুভ্র সারাদিন ব্যস্ততায় জন্য মেজাজ চটে ছিলো, তার ভিতরে আবার এই ভাবে গায়ে পড়ে জড়িয়ে ধরায় যেনো রাগে শরীর জলছে। তার বউ ছাড়া অন্য মেয়ে তার জন্য বিষ।

শুভ্র রোদের রুমের সামনে এসে থামে এখনো ফ্রেশ হয়নি। বউয়ের জন্য মনটা ছটফট করছে। শুভ্র দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে দরজা বন্ধ, কয় একবার রোদকে ডাকও দেয়। কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সারা শব্দ নেই। শুভ্র পকেট থেকে রুমের চাবি বের করে দরজা খুলে। রোদ শুভ্রের গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ মুখ মুছে ঘাপটি মেরে রুমে বসে আছে। রুমে দরজা খুলে শুভ্রকে আসতে দেখে, বসা থেকে উঠে চলে যেতে নেয়। শুভ্র রোদের হাত টেনে ধরে, রোদের মুখ অন্যদিকে ফেরানো। রোদের মুখে কোনো কথা নেই, হাত মুচড়া মুচড়ি করতে থাকে ছাড়ানোর জন্য, কিন্তু কোনো ভাবেই শুভ্র হাত ছাড়ছে না। শুভ্র রোদের হাত টেনে ধরে নিজের কাছে এনে, রোদ মাথা নিচু করে আছে। রোদের দিকে খেয়াল করতেই কপাল কুচকে যায় শুভ্র। শান্ত কন্ঠে বলে

শুভ্র: কি হয়েছে রোদ..?
রোদ কোনো কথা বলছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রোদ ছোটাছুটি করতে থাকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য
শুভ্র বিরক্ততে ‘চ’ শব্দ করে বলে
শুভ্র: এমন করছিস কেনো কি হয়েছে বলবি..?
রোদ নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে।
রোদ: ছেড়ে দিন আমাকে আপনি আমাকে ছুঁবেন না..!
শুভ্র: আমি বাধ্য নই তোর কথা শুনতে, আমি একবার না ১০০ বার ছুঁয়ে দিব তোকে..!
রোদ রাগে তেতে উঠে বলে,
— ওই নোংরা হাত দিয়ে ছুঁবেন না আমায়_
শুভ্র রোদকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেঁপে ধরে দাঁতে দাঁত চেঁপে কটমট করে বলে,,
–আমি নোংরা হ্যা…
রোদের কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়তেই রাগে তেতে উঠে, শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে উঠে
রোদ: ওই নোংরা হাত দিয়ে ছুঁবেন না আমায়। ওই হাত দিয়ে ছুঁয়ে আমাকে অপবিত্র করবেন না।
রোদের এমন কথায় শুভ্র রাগে রক্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে, এমনিতেই মেজাজ খারাপ, বউয়ের কাছে এসেছিলো মন ভালো করতে কিন্তু বালের বউ উল্টো পাল্টা কথা বলে আরো মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছে। শুভ্র রাগে ফুসতে ফুসতে বলে

শুভ্র: আমি ছুঁলে তোর নোংরা লাগে হ্যা,
রোদ: হ্যা নোংরা লাগে, শরীর ঘিন ঘিন করে। আপনি আমার কাছে আসবেন না।
অন্য যে নারী নিয়ে মোজে ছিলেন তার কাছে যান, ভুলেও আমার কাছে আসবেন না।
শুভ্র রাগে মাথার রগ গুলো ফুলে গেছে।
চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের গোলা বেড় হচ্ছে, শুভ্র রোদের কাছে এগিয়ে এসে এক হাত দিয়ে চুলের মুঠি ধরে অন্য হাত দিয়ে শক্ত হাতে গাল চেপে ধরে বলে
শুভ্র : মুখে ভুলি ফুটছে হ্যা, মুখে মুখে তর্ক করিস। আমার স্পর্শ নোংরা বলিস তুই। দুইদিন কি একটু ভালো ভাবে কথা বলছি, আর মাথায় উঠছিস কি। নিজের অবস্থান ভুলে গেছিস এতো তাড়াতাড়ি হ্যা..!
রোদের গাল দাঁতের সাথে লেগে পিষে যাচ্ছে। গালে আর চুলের ব্যাথায় গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে থাকে।

শুভ্র রোদকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। রোদ গালে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে, অশ্রু ভেজা চোখে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে
রোদ: ধন্যবাদ আপনি আমাকে আমার অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি বোকা বার বার বোকামি ছাড়া কিছুই করিনা।
রোদ চোখের পানি মুছে কন্ঠ স্বর কঠোর করে বলে,
রোদ: আর যাই হোক আপনার মতো চরিত্রহীন মানুষের সাথে আমি থাকবো না। কখনোই না,,
রোদের মুখে চরিত্র কথাটা শুনে শুভ্র রোদের গালে ঠাসসস ঠাসসস করে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়ের গতি এতোটা জোরে ছিল, যে রোদের ঠোঁট কেঁটে রক্ত পড়ছে। শুভ্রের ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে খুন করতে, কতোক্ষন ধরে কি সব আবল তাবল বলে মেজাজ খারাপ করে দিচ্ছে। যেই খানে বউ ছাড়া অন্য মেয়ে কেমন তাকিয়ে দেখে না। সেখানে এই মেয়ে কিনা তাকে চরিত্রহীন বলছে।

শুভ্র রোদকে ধাক্কা দেয়। রোদ ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। শুভ্র রেগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলে।
শুভ্র: তুই কি থাকবি, আমি তোকে আর রাখবো না৷ যাহ তুই, শা-লি আমার স্পর্শ তোর নোংরা লাগে, ফি-ল আসে না। যাহ আজকের পর থেকে তোকে আর ছুঁবোই নাহ।
শুভ্র রাগে নিজের মাথায় হাত দিয়ে চুল চেঁপে ধরে বিড়বিড় করে বলে,
শুভ্র: বা*লের জীবন ছেহহহ, ৪০০ গ্রাম একটা মেয়েকেই সামলাতে পারি না।
শুভ্র কথা গুলো বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। রোদ ফ্লোরে পড়ে কাঁদতে থাকে।
অনেক হয়েছে আর না। রোদ আস্তে আস্তে ফ্লোর থেকে উঠে, চোখের পানি মুখে, বিড়বিড় করে বলে
রোদ: ভাগ্য আমার বেলায় তুমি বড্ড নিষ্ঠুর।
রোদ আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলে..
রোদ: আমার কপালে একটু সুখ লিখলে কি এমন ক্ষতি হতো বিধাত।

সকাল ৮:০০
বাহির থেকে অনেক মানুষের কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রোদের রুম এখনো বন্ধ হেনা বেগম রুহি অনেক বার ডেকে গেছে। কিন্তু রোদের কোনো শারা শব্দ পায়নি। সকাল যখন ১০:৩০ দিকে এখনো যখন রোদ দরজা খুলছে না দেখে। হেনা বেগম ভয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকে। শুক্রবার হওয়াতে শুভ্র বাড়িতে ছিলো। রুমে বসে নিজের কাজ করছিলো। হেনা বেগম চেঁচামেচিতে রুমের বাহিরে আসে। রুমে বাহিরে আসতেই হেনা বেগম বিচিলিত হয়ে বলে
শুভ্র রোদ এখনো দরজা খুলছে না। রুমের ভিতর থেকে কোনো শারা শব্দ পাচ্ছি না। তুই তাড়াতাড়ি দেখ রোদের কিছু হয়ে যাইনি তো।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৩

শুভ্রের কপালে চিন্তার ছাপ, তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে গিয়ে আবার আসে,হাতে চাবি নিয়ে। দৌড়ে রোদের রুমের দিকে যায়। রুমের কাছে এসে দরজা খুলে আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

বাঁধনহারা প্রেম পর্ব ৪৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here