প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১৩
অনন্যা
-‘তিলোত্তমা কেডা রে?
রোদেলা ফুল স্প্রিডে ড্রাইভ করছে তার এদিকে খেয়াল নেই।কুহু রোদেলার পাশে বসে।বুকবুক ঢিপঢিপ করছে।বারবার সাইড মিরোরে দেখছে যে পেছন পেছন কেউ আসছে নাকি! নিধি পেছনে বসে।সে বলে উঠলো
-‘এই বল না!
কুহু ‘চ’- সূচক শব্দ করে বললো
-‘তোর নানি তিলোত্তমা।
নিধি মুখ ভেংচি কাটলো।কুহু আবার সাইড মিরোরে তাকালো।হঠাৎ রোদেলা ব্রেক কষলো।ওরা ঝুঁকে গেল সামনের দিকে।কোনোমতে আঘাত পাওয়া থেকে বাঁচলো।কুহু বলে উঠলো
-‘বাঙ্গির মাইয়া! মারবি নাকি?
রোদেলা ভয়মিশ্রিত নয়নে তাকালো কুহুর দিকে।কুহু কপাল কুচকালো।রোদেলা সামনের দিকে তাকাতে বললো ইশারায়।কুহু সামনের দিকে তাকাতেই থমকে গেল।বুকের বা পাশে হাত দিয়ে ইশারায় রোদেলাকে গাড়ি ব্যাকে নিতে বললো।রোদেলার হাত অবশ হয়ে গেছে যেন।তার হাত নড়ছে না।কুহু চেতে বললো
-‘বাঙ্গির মাইয়া গাড়ি ব্যাকে নে….ওরা নিশ্চই নিধির বাপের আত্মীয়।বিয়ে খেতে এসেছিল।কনে নেই দেখে বুঝে গেছে।
চারদিক তিমিরে মোড়া।দুটো গাড়ি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। রোদেলা হাত সামনে আনতেই দেখলো তার হাত কাঁপছে।কুহু বলে উঠলো
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-‘ওরে আমার নানি…কাঁপাকাঁপি শুরু করেছিস কেন?তাড়াতাড়ি কর না শা/লি!
সামনের গাড়ির দরজা খুলে গেল।আহনাফ নেমে এলো।সে বলতে লাগলো
-‘স্টপ তিলোত্তমা…বাহিরে এসো…
জানালার কাচ আটকানো ছিল।আহনাফের হাতের ইশারায় ওরা বুঝলো ওদের নামতে বলছে।রোদেলা দ্রুত বেগে গাড়ি পেছনে নিয়ে যেতে লাগলো।আহনাফ বারবার থামতে বলছে তাদের।তারা গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো যেতে লাগলো। আহনাফ ‘চ’ সূচক শব্দ করে দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসলো।
-‘হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? গাড়ি স্টার্ট কর….
আদিত বললো
-‘দোস্ত আমরা এখন ডিগবাজি ভাবিকে নিয়ে কি করবো? আমাদের আরিফের বউকে নিয়ে ভাবা উচিত।
আহনাফের রাগে মাথায় আগুন জ্বলছে।সে বললো
-‘আরে গর্ধবের সমন্ধি! ওর বউ নিয়ে ভেগে যাচ্ছে ওরা।
রাফি,নাতাশা আর আদিত বলে উঠলো—“অ্যা!!” রাফি বিয়ে বাড়ির বাহিরেই ছিল।নওশাদ আহমেদ কোনো সুবিধার লোক না।এটা ওদের সবার’ই জানা। যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয় তাহলে যেন রাফি পুলিশে কল করতে পারে তাই সে বাহিরে ছিল।আহনাফ প্ল্যান এ টু জেড রেডি করে রেখেছিল।কতগুলো প্ল্যান আর ফেল হবে হাহ্! কিন্তু সবশেষে যে নাকের ডগা দিয়ে কনে পালিয়ে যাবে এটা ভাবতেও পারেনি।
রাফি বলে উঠলো
-‘আপনি কোনো টেনশন করবেন না ভাই।আমরা এখন’ই ধরে ফেলবো ওদের।নাম আমার রাফি কাইশ্যা, নজরে একবার যে পড়ে সে’ই যায় ফাইস্যা..হুহ্!
রাফি গাড়ি স্টার্ট করলো।নাতাশা আর আদিত হাতে তালি দিল ওর ছড়া শুনে।আদিত হঠাৎ বলে উঠলো
-‘এই তুই জানলি কীভাবে যে কনে ওদের সাথে পালিয়েছে?
আহনাফ সামনের দিকে তাকিয়েই বললো
-‘বিয়ে বাড়িতে তিনজন কালো বোরকা পড়া মেয়ে।থামতে বলায় আবার দৌঁড় দেওয়া।অপরাধ না করলে দৌঁড় দিবে কেন? আর বিয়ে বাড়িতে কি অপরাধ করতে পারে? তারউপর আবার মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।অফকোর্স মেয়ে পালিয়েছে ওদের সাথে।
নাতাশা আর আদিত হা হয়ে গেল।নাতাশা বলে উঠলো
-‘এইটুকু সময়ে এতকিছু ভেবে ফেলেছিস!ওয়াও!!
আহনাফ কিছু বললো না।আদিত বললো
-‘তাহলে ওরা আমাদের দেখে ভাগছে কেন?ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লক্ষ তো আমাদের এক’ই।
আহনাফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-‘সেটা তুই জানিস, আমি জানি।ওরা জানে? গর্ধব!
আদিত বিজ্ঞদের মতো উপর নিচ মাথা নাড়লো।
রোদেলা হাইস্প্রিডে ড্রাইভ করছে।নিধি বললো
-‘তারমানে এটা রোদের আহনাফ ভাই?
কুহু উপরনিচ মাথা নাড়লো।তারা সবটা বলেছে ওকে।নিধি বললো
-‘তোর ভাই তো সেই হ্যান্ডসাম।
ভাইয়ের কথা বলতেই কুহুর আত্মাটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো।রীতিমতো চেঁচিয়ে উঠলো মেয়েটা।রোদেলা কপাল কুচকে বললো—“হুয়াট?”
কুহু বলে উঠলো
-‘এই যা! আয়ান ভাইয়াকে তো আনতেই ভুলে গেছি।উনাকে তো ওখানেই ফেলে এসেছি।
নিধি বলে উঠলো
-‘ওই যে ঐ ছেলেটা যে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর পেছনে ছুটছিলো?
কুহু পেছনে ঘুরলো তাৎক্ষণাৎ কথাটা শুনে।
-‘পেছনে আসছিল! গাঁধি তুই বলবি তো একবার!
-‘আমি কি জানতাম নাকি যে ঐটা তোর আয়ান ভাই।শা/লা তোদের কাজিনগুলা তো সেই হ্যান্ডসাম।
কেউকিছু বললো না।হঠাৎ কুহু জানালা দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো আহনাফদের গাড়ি।শ্বাস নিতে ভুলে গেল মেয়েটা।
-‘রোদ তোর খাটাশ ভাই আমাদের সমানে চলে এসেছে…স্প্রিড বাড়া….
রোদেলা তাকালো গাড়িটার দিকে।রাফি ড্রাইভ করছে।রাফিকে দেখতেই কপালে ডোজনখানেক ভাঁজ পড়লো মেয়েটার।এই মদন এখানে কি করে?বিরক্তরা ঘিরে ধরলো তাকে। নিধি গ্লাস খুললো। আহনাফদের গাড়িতে “Gasolina” গান বাজছে।নিধি বলে উঠলো
-‘এই সেই তো…দারুণ একটা ভাইব পাচ্ছি এখন..
নিধি গানের তালে তালে হাত দুলিয়ে নাচতে লাগলো।আহনাফদের গাড়িতে আহনাফ বাদে বাকিরা শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে।মনে হচ্ছে কোনো পিকনিকে যাচ্ছে তারা।রোদেলা এবার জেদ ধরেছে যেন যে কিছুতেই ওদের হাতে ধরা দিবে না।তারকাছে এখন এটা একটা প্রতিযোগিতার মতো হয়ে গেছে।রাফির আগে যেতেই হবে আগে।ঠিক সেই মুহূর্তে শোনা গেল রাফির স্বর
-‘গাড়ি থামাও চোরনি…বিস্কুট নিয়ে ভেগেছো ভেগেছো…আজ অন্যের বউ নিয়েই ভেগে গেলে…চোরনি কোথাকার! গাড়িটাও কি চুরি করা নাকি যে এতো স্প্রিডে চালাচ্ছো?
রোদেলার রাগ উঠে গেল।সে সামনের দিকে নজর রেখেই বলে উঠলো
-‘তুই চোর.. তোর বাপ চোর..তোর চৌদ্দগোষ্ঠী চোর।
রাফি বিরবির করে বললো
-‘চৌদ্দগোষ্ঠীর মাঝে তুইও তো পড়িস হাদা!
আহনাফ চেঁচিয়ে বলে উঠলো
-‘এগুলো কেমন ভাষা, রোদ?স্টপ দ্যা কার..
রাফি বলে উঠলো
-‘তুমি পারবে না আমার সাথে চোরনি…গাড়ি থামাও…আমাদের ভাবিকে আমাদের হাতে তুলে দাও…
ভাবি বলায় ওরা বুঝলো যে আহনাফরা বরপক্ষ।রোদ ক্ষেপেছে আজ।সে কিছুতেই গাড়ি থামাবে না।নিধি গান ইনজয় করছে।কুহু পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে আহনাফ তার দিকেই তাকিয়ে।নাতাশা বলে উঠলো
-‘আসল কথা বলছিস না কেন গরুগুলো….রোদ স্টপ…আমরাও বিয়ে ভাঙতে এসেছিলাম।
কুহু তাকালো নাতাশার দিকে।এর সাথেই না আয়ান ভাইয়ার ভাব জমেছে! অনেকটা সুন্দর তো! তাও তো তার ঘাড় থেকে নামছে না!হঠাৎ নাতাশার বলা কথাটা মাথায় সেট হতেই বলে উঠলো–“অ্যাঁ!!” নিধি বললো—“কিন্তু আমি তো আপনাদের চিনি না।”
রোদ চেঁচিয়ে বলে উঠলো
-‘যা খুশি হোক কিন্তু আজ এ গাড়ি থামবে না। এই মদনা বললো কেন যে আমি ওর সাথে পারবো না? আমাকে চিনে ও?আজ ওকে দেখিয়ে দিব এই রোদেলা শাহরিয়ার কি জিনিস…
রোদেলা কথাটা বলে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে রাস্তা বদল করলো।ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যে আহনাফরা হকচকিত হয়ে গেল।কুহু আর নিধি পড়ে যেতে যেতে বাঁচলো।কুহু বলে উঠলো
-‘বেবি শান্ত হ…ওরা যদি সত্যিই এরজন্য এসে থাকে তাহলে তো আমাদের’ই লাভ।
নিধি পেছন থেকে বলে উঠলো
-‘আস্তে রোদ….মরে যাবো তো…
কুহু বলে উঠলো—“ছিঃ! কিসব অশ্লীল কথা!”
রোদেলা হাই স্প্রিডে ড্রাইভ করছে।ঐ ছেলেটাকে সে সহ্যই করতে পারে না।ওদের গাড়ির সামনে হঠাৎ আরেকটা গাড়ি এসে পড়লো।রোদেলা ব্রেক কষতে কষতে দেরি হয়ে গেল।চোখ বুজে ফেললো সে।বুঝলো যে দেরি হয়ে গেছে। তিনজনেই গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।কুহু চেঁচিয়ে বললো—“ওরে বাঙ্গি রেএএএ..!!”
-‘ছোট মায়ের সাথে কথা হয়েছে স্যার?
সাখাওয়াত আলম সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে ছিলেন।হারুন রহমানের কথা শুনে সোজা হয়ে বসলেন ভদ্রলোক।চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।এরপর বললেন
-‘রিসিভ করে না কল করলে।মায়ের মতোই ত্যাড়া হয়েছে।
হারুন রহমান বললেন
-‘ছোট মা কি আর এ বাড়িতে আসবে না স্যার?
সাখাওয়াত আলম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
-‘তার শর্ত সম্পর্কে তো জানোই।
-‘স্যার একটা কথা বলতাম যদি কিছু মনে না করেন….
-‘আহা হারুন! তুমি আবার এসব বলছো কেন? বলো তুমি…
হারুন রহমান খানিকটা আমতা আমতা করেই বললেন
-‘ইয়ে আসলে…স্যার..জীবন তো একটাই।বড় ম্যাডামও নেই।ছোট মা কে এতোবছর খোঁজার পর পেয়েছেন।
-‘ঝেড়ে কাঁশো, হারুন..
হারুন রহমান একটা শুকনো ঢোক গিলে বলেই দিলেন এবার
-‘স্যার…রাজনীতি ছেড়ে দিন।
সাখাওয়াত আলম তাকালেন তার দিকে।হারুন রহমান বললেন
-‘প্রতিশোধ নিয়ে কি’ই বা হবে বলুন! এর চেয়ে ছোট মা যা চাইছে তাই করুন না স্যার! রাজনীতি ছেড়ে দিন। মেয়ে নিয়ে একটা ছোট্ট সুখী সংসার গড়ে তুলুন।ছোট্ট একটা জীবন।এসব জঘন্য খেলা খেলে জীবনটা নষ্ট করবেন না, স্যার।
সাখাওয়াত আলম বলে উঠলেন
-‘আমার স্ত্রীর খুনিকে তুমি ছেড়ে দিতে বলছো, হারুন!কি করে বললে তুমি এটা? যার জন্য আমার ওয়াইফের প্রাণ গেল আমার মেয়ে আমার থেকে এতগুলো বছর দূরে রইলো এমনকি আমি জানতাম’ই না যে আমার মেয়ে বেঁচে আছে.. তাকে ছেড়ে দিতে বলছো তুমি!!
হারুন রহমান হাসলেন।বললেন
-‘মেয়ের ইচ্ছার গুরুত্ব দিবেন না একটাবার! আপনার কারণে ছোট মা আজও এ বাড়িতে পা রাখেনি।এমপির মেয়ে হয়েও সে…
-‘আর ওর মায়ের খুনি! তাকে ছেড়ে দিব আমি? ওকে কিছুতেই বাঁচতে দিব না আমি।ওকে মেরে আমি রাজনীতি ছাড়বো।ছাড়বো না কে বলেছে! অবশ্যই ছাড়বো তবে ওকে শেষ করে।
হারুন রহমান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
-‘আপনি কি তা পারবেন, স্যার?
সাখাওয়াত আলম তাকাতে পারলেন না হারুন রহমানের চোখের দিকে।সত্যিই তো! সে কি পারবে…যাকে শেষ করার জন্য এতোকিছু সেও তো একটা সময় তার হৃদয়ের একটা অংশ ছিল।প্রাণপ্রিয় বন্ধুর বুকে সে কি করে গুলি করবে? নাহ নাহ তাকে পারতেই হবে।সে বন্ধু ছিল না কখনোই।বন্ধু হলে কোনোদিন পারতো না এমন কাজ করতে।সাখাওয়াত আলম একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।এতোগুলো বছরে অনেকবার সুযোগ এসেছিল তার প্রতিশোধ নেবার কিন্তু সে পারেনি।আর কোনোদিন পারবে কি না এটাও তার জানা নেই।
-‘হাই জানেমান…
আরিফ চোখ বুজে ছিল।হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠ কানে আসতে চোখ খুললো সে।নিধিকে দেখতেই হতবাক হলো সে।তার পাশের আরেকটা বেডে নিধির থাকার ব্যবস্থা করা হলো।যদিও তেমন আঘাত পায়নি সে।যথাসময়ে রাফি ব্রেক কষেছিল।তাও কপালে আঘাত পায় সে।কপালের কোণে ফুলে নিলচে হয়ে গেছে। আরিফ বলে উঠলো
-‘একি অবস্থা তোমার!
নিধি দাঁত কেলিয়ে বললো
-‘তুমি একা একা হসপিটালে থাকবে এটা কি মানায়, বলো? তাই আমিও চলে এসেছি।
আরিফের হঠাৎ মাথায় এলো যে আহনাফরা হকস্টিক নিয়ে বেরিয়েছিল।যে ছেলে কিনা নিজের প্রিয়তমাকে হকস্টিক মারতে পারে সেই ছেলে আরেকজনের প্রেমিকাকে মারতে পারবে না? আরিফ বলে উঠলো
-‘এই তোমাকে কি আহনাফরা মেরেছে?
নিধি কপাল কুচকালো।
-‘তোমার বন্ধু আহনাফ আর রোদের কাজিন আহনাফ কি একজনই নাকি?
-‘রোদকে চেনো তুমি?
দুজনেই বোকা বোকা নয়নে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো।নিধি হঠাৎ বলে উঠলো
-‘এই তুমি নাকি সুইসাইডের ট্রাই করেছিলে?
আরিফ মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বললো
-‘তোমাকে ছাড়া আমি কি করে…
নিধি চেতে বলে উঠলো
-‘এক থাপ্পরে পা/ছা ফাটিয়ে দিব বেয়াদব ছেলে!
আরিফের মুখটা কালো হয়ে গেল।নিধি নরম সুরে বললো
-‘তোমার কিছু হলে আমার কি হতো?
ওদের কথার মাঝেই আহনাফরা হাজির হয়।সাথে কাজী নিয়ে এসেছে।কুহু আর রোদেলাও আছে।তারা ঠিক আছে তেমন আঘাত পায়নি।আদিত বলে উঠলো
-‘তোরা বিয়েটা করে আমাদের শান্তি দে একটু।ভাই রে ভাই! কি একটা অবস্থা! আরেকটু হলে সবকটা মিলে একসাথে পটল তুলতাম।একটুর জন্য বেঁচে গেছি।
রোদেলা মাথা নিচু করে রেখেছে।রাফি ওর কানে কানে বললো
-‘এত বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিলাম।থ্যাংকস্ মি লেটার, চোরনি।
রোদেলা রাগি চোখে তাকালো তার দিকে।রাফি ভয় পাওয়ার অভিনয় করলো।রোদেলা ভেঙালো ওকে।রাফি চোখ বড়বড় করে ফেললো।রোদেলা হাসলো।রাফি অবাক হলো।এই মেয়ে হাসতেও জানে! ওরি বাবা!
কুহু রোদেলার পেছনে দাঁড়িয়ে।সে তাকিয়ে তাকিয়ে নিধি আর আরিফকে দেখছে।একটু পর এদের বিয়ে হবে।অন্যের পূর্ণতা দেখতেও ভালো লাগে।সেও তো এমন এক পূর্ণতার স্বপ্ন দেখেছিল যা একজন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।সে যদি ওমন খারাপ না হতো তাহলে তাদের সম্পর্কটাও বোধহয় পূর্ণতা পেত।হঠাৎ তখন আহনাফ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো
-‘আমাদেরও এমন একটা দিন আসবে।আপনি কি সেটাই ভাবছেন, তিলোত্তমা সুন্দরী?
ভড়কালো কুহু।আহনাফের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো সে।আহনাফ হাসছে।কুহু ভেবে পায় না তার মাঝে কি দেখে এই লোকটা এমন পাগল হলো।কুহু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না।নজর সরিয়ে নিল।আহনাফ আবার তার কানের কাছে মুখ নিল…
-‘কোনো কারণ ছাড়াই পাগল করে ফেলেছেন।ইশ! আমাদের যে কবে এমন একটা দিন আসবে!
কুহু ভেবে পায় না এই লোক মনের কথা কি করে বুঝে ফেলে! সে আস্তে করে বললো
-‘কোনোদিন আসবে না।
আহনাফ হেসে বললো
-‘আসবে ম্যাডাম..খুব শীঘ্রই আসবে…
কুহু সরে গেল যেন আহনাফ আরকিছু বলতে না পারে।কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।আহনাফ নিধির উদ্দেশ্যে বললো
-‘তুমি দেনমোহর হিসেবে কি চাও?বাড়ি-গাড়ি, টাকা..?
নিধি আরিফের দিকে তাকালো।আরিফ এদিকেই তাকিয়ে।নিধি লাজুক হেসে বললো
-‘ওর একটা কিডনি….
সবাই একসাথে চেঁচিয়ে উঠলো—“অ্যাঁ!!”
নিধি আবার একইভঙ্গিমাতে বললো
-‘সাথে ওর হৃদপিণ্ডটা যেটাতে নাকি আমি বসবাস করি।
কাজী সাহেব বললেন
-‘কিন্তু মা…দেনমোহর যে সাথে সাথে দিতে হয়…তার আগে তো তোমাকে ছুঁতে পারবে না।
নিধি বললো
-‘উমম..আমরা তো হসপিটালেই আছি।সমস্যা নেই।
আরিফ বিছানা ছেড়ে নেমে বলে উঠলো
-‘…আ’আমি বিয়েই করবো না…
সবাই ওর দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো।এতো কষ্ট করে এই পর্যন্ত আসার পর এখন বলছে বিয়ে করবে না! সুইসাইড করে ফেলে আবার এখন বলে বিয়ে করবো না! আরিফের মনটা বললো “আরিফ পালা..দৌঁড় দে..”।আরিফ পালাতে নিলে সবাই ওকে খপ করে ধরে ফেললো।আদিত বললো
-‘এখন বিয়ে করবি না কেন?সুইসাইড করে ফেলতে পারো..এই হৃদয়টা তোমার বলে পাম মারতে পারো এখন সেটা কেন দিতে পারবা না, সোনা?
আহনাফ বললো
-‘নাতাশা ডাক্তারকে নিয়ে আজ’ই এর হৃদপিণ্ড আর একটা কিডনি বের করা হবে।
সবার ঠোঁটে লুকায়িত হাসি।আরিফ চেঁচিয়ে উঠলো
-‘আমি বিয়া করুম না…আম্মা বাঁচাওওওওও…
রাফি বলে উঠলো
-‘এই হৃদয়ে শুধু তোমার’ই বসবাস
আরিফ ভাই খাইছে এখন আইক্কাওয়ালা বাঁশ!
সবাই হাসলো শুনে।
নিধি হঠাৎ বলে উঠলো
-‘এই আমি না এসব টুকটাক অপারেশন পারি।
কুহু আর রোদেলা চমকে তাকালো তার দিকে।সাথে আরিফও।কারণ..
-‘ তুই না কমার্সের স্টুডেন্ট!
রোদেলার কথা শুনে নিধি মুখ চেপে হেসে বললো
-‘ইউটিউব দেখে শিখেছি…
সবাই একসাথে বলে উঠলো—“অ্যাঁ!!”
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ১২
কাজী সাহেব যেন এসেও বিপাকে পড়ে গেছেন।দেনমোহরে কিনা কিডনি আর হৃদপিণ্ড চেয়ে বসলো!এখন আবার বলছে ইউটিউব দেখে অপারেশন করা শিখেছে।মনে হলো যেন কাঁথা সেলাই!
আদিত বলে উঠলো
-‘তাহলে আর দেরি কেন.. লাগা অপারেশন…
আরিফ চেঁচিয়ে উঠলো—-“নাআআআআ….আম্মাআআআ…!”
