প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২০ (২)
অনন্যা
আকাশে মিটমিট করে তারা জ্বলছে।ধীরে ধীরে তিমিরে ঢাকা পড়ছে চারদিক।ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় রাস্তাটা খানিকটা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।মৃদু বাতাস বইছে।কুহু বড্ড বিরক্ত আজ।আয়ান তাকে মাঝরাস্তায় এসে বলেছে আজ আহনাফের বার্থ ডে আর এখন তারা সেখানেই যাচ্ছে।নাতাশা তাদের ইনভাইট করেছে।কুহুর প্রথমে বড্ড খারাপ লেগেছিল।আহনাফ তো নিজেই তার কাছে এসেছিল অথচ সে তাকে বার্থ ডে উইশ করতে পারেনি উল্টো গুলি….কুহুর মনটা আবার মন খারাপ ছেয়ে গেল।সে জানেই না আজ আহনাফের জন্মদিন।
এখন যে যাচ্ছে সে কোনো গিফট্ও তো কিনেনি।আয়ান কি যেন একটা কিনেছে।তো? সে তো আর কিনেনি।এভাবে খালি হাতে যাবে সে! আহনাফ কি ভাববে? কুহুর ভাবনার মাঝেই বাইকটা এসে একটা বড় বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামলো।কুহু ঝুঁকে গেল আয়ানের দিকে।আয়ানের কাঁধে রাখা হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।আয়ান সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো সে।কুহুও নামলো।আয়ান নিজের হেলমেটটা খুলে কুহুরটাও খুলে দিল।কুহু আজ সবুজ রঙের একটি থ্রি পিস পড়েছে।মেকাপ বলতে ঐ একটু চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক।নিজের গায়ের রং ওসব আটা-ময়দা মেখে সাদা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তার নেই।সে নিজের এই রূপ নিয়েই সন্তুষ্ট।এদিকে আয়ানও তার সাথে ম্যাচ করে সাদা রঙের শার্টের উপর সবুজ রঙের কোর্ট পড়েছে।
কুহু খেয়াল করেও করেনি যেন এমন একটা ভাব।আয়ান মনে মনে খুশি অনেকটা নিজের সুহাসিনীর সাথে ম্যাচিং ড্রেস আপ করতে পেরে।আয়ান সামনের উঁচু বিল্ডিংটার দিকে তাকালো।এই ঠিকানাই তো দিয়েছিল নাতাশা।আয়ান পকেট থেকে ফোন বের করে নাতাশার নম্বরে কল লাগালো।কুহু এদিক সেদিক দেখতে লাগলো।হঠাৎ’ই তখন তাদের সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে থামলো।কুহু তাকালো সেদিকে।কপালে ভাঁজ পড়েছে কয়েকটা।তখন’ই গাড়ির দরজাটা খুলে গেল।নেমে এলো স্যুট-বুট পড়া এক সুদর্শন যুবক।কুহুর কুচকানো ভ্রু সিথিল হয়ে গেল।হৃদপিণ্ডটা কেমন যেন করে উঠলো।বিরবির করে আওড়ালো—“রেনান!”
রাহুল অপর পাশের দরজাটা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল।খানিকটা জেন্টেলম্যান সাজার চেষ্টা।রোদেলা তার হাতটা ধরে নেমে এলো।সে আজ মেরুন রঙের একটা গাউন পড়েছে।অপরূপা লাগছে আজ তাকে।কিন্তু রোদেলা নিজের রূপ নিয়ে আজকাল আর ওতো ভাবে না।যে রূপ তার আহনাফ ভাইকে প্রেমে ফেলতে পারেনি সে রূপ দিয়ে আর কি হবে! রোদেলা নামতেই তার চোখজোড়া গিয়ে আটকালো সামনে দাঁড়ানো কুহুর উপর।কুহুও তার দিকেই তাকিয়ে।রোদেলা কেমন করে যেন হাসলো।কুহু রাহুলের জন্য এগিয়ে গেল না আর।রোদেলা নিজেও এগিয়ে গেল না।কুহুর প্রতি তার অনেক অভিযোগ..অনেক।আহনাফ ভাইকে সে কেড়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে।বন্ধু হয়ে বন্ধুর পেছনে ছুড়ি মেরেছে সে।রাহুল রোদেলার দৃষ্টি লক্ষ করে সামনে তাকালো।কুহুর দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে উঠলো
-‘হ্যালো!
কুহু বড্ড অবাক হয় রাহুলের এই অপরিচিতদের মতো করা আচরণে।রাহুল যা করেছে তাতে তো তার উচিত ওকে ঘৃণা করা।কুহু কেন তাহলে তা পারে না? কেন বেহায়া মনটা বারবার বলে রেনান ফিরুক..সবকিছু ঠিক করুক সে।কুহুর ভাঙা হৃদয় সে জোড়া লাগাক।কুহুর নিজের ভাবনার উপর হাসি পায়।
-‘ঐ তো মিস নাতাশা! সুহাসিনী..আয়..
কুহুর হাত ধরে আয়ান সামনের দিকে অগ্রসর হলো।রেনান দেখলো আয়ানের ধরা কুহুর হাতটা।কেমন একটা যেন লাগলো তার।পরক্ষণেই রোদেলার দিকে তাকালো সে।টাইয়ের নট একটু ঢিলে করলো।হালকা কেঁশে রোদেলাকে বললো
-‘ভেতরে যাই আমরা?
রোদেলা উপর নিচ মাথা নাড়ালো।
-‘আরে! রোদেলারাও দেখি এসে গেছে! পার্ফেক্ট টাইমিং।
আয়ান তাকালো তাদের দিকে।খেয়াল’ই করেনি এতক্ষণ সে।ওরা মুচকি হাসলো।আয়ানও মুচকি হাসলো।ওরা একসাথে লিফট্এ উঠলো।কুহু আর আয়ান পেছনে দাঁড়িয়ে।তাদের সামনে রোদেলা আর রাহুল।আয়ানের পাশেই নাতাশা।আয়ান তার সাথে কথা-বার্তা বলছে।কুহুর দৃষ্টির সামনে দাঁড়ানো যুবক-যুবতীর দিকে।রাহুল রোদেলার হাত ধরতে চাইলে রোদেলা সরিয়ে নেয়।রাহুল আবার ধরতে চাইলে রোদেলা আবার সরিয়ে নেয়।এক পর্যায় রাহুল জোর করে ওর হাতটা ধরলো।আঙুলে আঙুলে আলিঙ্গন হলো।কুহু কপাল কুচকে দেখছে সবটা।রোদেলা আজ তার সাথে একটা কথাও বলেনি।কেন বললো না? রোদেলা কি তবে রেনানের সাথে রিলেশনে গিয়েছে? কিন্তু সে না আহনাফকে ভালোবাসে! কুহুর বুঝে আসছে না কিছু।
লিফটের দরজা খুলে গেল।সবাই একে একে বের হলো।রুফটপে আয়োজন করা হয়েছে।চারদিকে সুন্দর করে লাইটিং করা।আলোয় আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশ।কুহু মুগ্ধ নয়নে চারপাশ দেখতে লাগলো।আয়ান আস্তে করে বলে উঠলো
-‘সুন্দর’ই লাগছে তাই না?
-‘হুম..
কুহু চারদিক দেখতে দেখতেই উত্তর দিল।নাতাশা বলে উঠলো
-‘ঐ তো আহনাফ! দাঁড়ান আমি ডেকে আনছি..
আয়ান বাঁধ সেধে বললো
-‘আরে নাহ্ থাক।কথা বলছে তো…
নাতাশা শুনলো না।সে গিয়ে আহনাফকে জানান দিল যে তার তিলোত্তমা চলে এসেছে।আহনাফের বাজপাখির ন্যায় চোখগুলো সোজা কুহুর দিকে গিয়ে আবদ্ধ হলো।কুহু তার দিকেই তাকিয়ে ছিল।আহনাফ আজ সাদা রঙের একটা শার্ট পড়েছে।হাতে কোর্ট ঝোলানো।কুহু নাকের ডগার কাছের চশমাটা ঠেলে পেছনে দিল।আহনাফ তাকে উপর থেকে নিচ পরখ করলো।হালকা হেসে বিরবির করে আওড়ালো—“তিলোত্তমা।” তার পাশে এসে তখন রোদেলা দাঁড়িয়েছিল।অনেকটা খুশি নিয়ে সে আহনাফ ভাইয়ের কাছে এসেছিল।তিলোত্তমা নামটা আস্তে করে বললেও রোদেলা শুনেছে তা। মুখের হাসিটা উবে গেল তার।আহনাফের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো সে।কুহুর দিকে তাকিয়ে সে।রোদেলার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে গেল।কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আসছে তার।ঠিক তখন রাহুল তার হাতটা নিজের শক্তপোক্ত হাতের আগলে নিল।
-‘কি খবর ব্রো?আয়োজন কিন্তু বেশ হয়েছে!
আহনাফ ঘুরে তাকালো তাদের দিকে।মুচকি হাসলো সে।রোদেলার দিকে তাকালো একবার।এরপর বলে উঠলো
-‘কাকে মারার প্ল্যান করে এভাবে সেজে এসেছিস হুম? মারাত্মক লাগছে কিন্তু তোকে।মাশাআল্লাহ!
আহনাফ রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো শেষের কথাটা।রোদেলার মন এতেই খুশিতে ভরে উঠলো।কিন্তু পরক্ষণেই তা মিলিয়ে গেল।আহনাফ ভাইয়ের হৃদয়ে অন্যকেউ রয়েছে।সে হয়তো এমনি বোন হিসেবে বলেছে কথাটা।রোদেলার মনটা তিক্ততায় ভরে গেল।কাজল কালো আঁখি জলে টইটুম্বর হলো।আহনাফ ততক্ষণে কুহুর কাছে চলে গিয়েছে।রোদেলা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর ট্রাই করতে লাগলো।রাহুলের একটা কল আসায় সে সাইডে চলে গেল। তখন হঠাৎ কোথা থেকে রাফি রোদেলার সামনে এসে দাঁড়ালো যার দরূণ আহনাফ আর কুহুকে দেখা গেল না আর।
-‘হেই চোরনি! কেয়া খবরাখবর হে?
রোদেলার খারাপ লাগাটা রাফিকে দেখে রাগে পরিণত হয়ে গেল।খেকিয়ে বললো
-‘ আপনার বউ চোরনি।
রাফি ফিক করে হেসে ফেললো।
-‘সেটাই তো বললাম।
-‘হুয়াট?
রাফি বিস্কুটের প্যাকেট থেকে একটা বিস্কুট রোদেলার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
-‘খাবে?
রোদেলা বলে উঠলো
-‘আপনার বউকে দিন গিয়ে। বিস্কুটখোর মদন কোথাকার!ধুর!
রোদেলা অন্যপাশে চলে গেল।রাফি বলে উঠলো
-‘এই তুমি কিন্তু আবার আমাকে অপমান করলে, চোরনি।
রোদেলা থামলো।পেছন ঘুরে তাকালো।এরপর নিজের জিহ্বা বের করে ভেঙালো ওকে।রাফি হেসে ফেললো।রোদেলা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল।রাফি হঠাৎ নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সেদিকে তাকালো।রাহুল তার কাঁধে হাত দিয়েছে।
-‘সীমা অতিক্রম করো না ছেলে।আবেগ সামলাও।
রাফি হেসে ওর হাতটা সরালো।এরপর বললো
-‘বিস্কুট খাবেন? ওহ নো! আপনি তো আবার বাঁশ খাবেন সামনে।বিস্কুট খেয়ে পেট ভরে গেলে! নাহ্ থাক বাবা।
রাফি দাঁত কেলিয়ে চলে গেল।রাহুল রাগে গজগজ করতে লাগলো।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হলো তার।
-‘তিলোত্তমা!
কুহু তাকালো আহনাফের দিকে তবে একবার তাকিয়েই সে দৃষ্টি সরিয়ে নিল।আহনাফ কেমন স্বরে বললো
-‘আমাকে বার্থ ডে উইশ করবে না?
কুহু খানিকটা অপ্রস্তুত হলো যেন।চশমাটা ঠিকঠাক করে বললো
-‘শুভ জন্মদিন।
আহনাফ হাসলো।একটু ঝুঁকে বললো
-‘আর আমার গিফট্?
কুহু পেছনে সরে গেল।
-‘আমি তো জানতাম না আপনার বার্থ ডে আজ।মাঝ রাস্তায় আসার পর আয়ান ভাইয়া বললো।তাই আরকি..
আহনাফের ঠোঁটের কোণে কেমন দুষ্টু হাসি খেলছে।সে নেশালো স্বরে একটু সুর টেনে বললো
-‘উম..তিলোত্তমা….আমার গিফট্ চাই।
কুহু আশেপাশে তাকালো একটু।এরপর আহনাফের বুকে এক আঙুল দিয়ে দূরে সরানোর চেষ্টা করে বললো
-‘অনেক মানুষ এখানে…ভদ্রতা বজায় রাখুন।অন্যথায় আমি নিজের আসল রূপে আসবো।
আহনাফ সোজা হয়ে গেল সাথে সাথে যেন সে ভয় পেয়েছে।আহনাফ বললো
-‘ভয় পেয়েছি ম্যাডাম।
কুহু সেসব কথায় গেল না।সে বলে উঠলো
-‘আপনি রেনানের সম্পর্কে জানলেন কীভাবে?
আহনাফ পেছনে ঘুরে রাহুলের দিকে তাকালো।এরপর হেসে বললো
-‘এসব আমার বাম হাতের খেলা। তারউপর আমার’ই চাচাতো ভাই।
কুহু বলে উঠলো
-‘রেনান বলেছে এসব আপনাকে?
-‘নাহ্।
-‘তাহলে?
আহনাফ প্রসঙ্গ বদলাতে বললো
-‘ঐ দেখো তোমার হ্যান্ডসাম শ্বশুর আসছে।
কুহু ভড়কে পেছনে তাকালো।আহান শাহরিয়ার ফর্মাল ড্রেসে এসে হাজির হয়েছেন।কুহু আহনাফের সৌন্দর্যের রহস্য আহান শাহরিয়ারকে দেখেই বুঝতে পারলো যেন।সত্যিই ভদ্রলোক এখনো অসম্ভব হ্যান্ডসাম।দেখে তো মনে হয় তার বাবা বয়সের’ই।অথচ তার বাবাকে দেখো! টাকলা হয়ে বসে আছে।অনেকে তো তাই টাকলা এমপি বলেও ডাকে।কুহুর বড্ড খারাপ লাগে।হাজার হোক বাবা তো।সে বললে অন্য কথা, অন্যকেউ কেন বলবে? কুহুর ভাবনায় ভাঁটা পড়লো আহান শাহরিয়ারের কথায়
-‘কেমন আছো বউমা?উম..ইউ লুক সো প্রিটি..
কুহু ভড়কালো।বউমা! সে একটু অপ্রস্তুত হয়ে সালাম দিল।আহান শাহরিয়ার হেসে জবাব দিলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
-‘সবসময় হাসি-খুশি থাকো, মা। আর এই হতোচ্ছোরাটাকে একটু ঠিক করো তো।একটু আগেও সিগারেট খেয়ে এসেছে।তাও একটা নয় তিনটা।
আহনাফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো—“বাবা!”
-‘এখন খাও থাবা..টাটা মাই ডিয়ার সন।
আহান শাহরিয়ার আহনাফের কানে কানে বললো কথাটা।এরপর’ই তিনি চলে গেলেন।কুহুর দিকে নজর যেতেই সে দেখলো কুহু রাগি চোখে তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফ কিছু একটা বলতে নিবে তখন কুহু বলে উঠলো
-‘বিড়িখোর খাটাশ! কথা বলবেন না আমার সাথে।
কুহু কথাটা বলেই চলে গেল।আহনাফ সুর টেনে বলে উঠলো
-‘নাআআআ..তিলোত্তমা শুনো তো…পাখি শুনো না!
কুহু আয়ান আর নাতাশার কাছে চলে গেল।আহনাফ পেছন পেছন সেদিকেই গেল।রোদেলা সবটা দূর থেকে দেখলো।তাচ্ছিল্য করে হাসলো নিজের ভাগ্যের উপর।আকাশের পানে তাকিয়ে বললো
-‘এতো যন্ত্রণা কেন দিচ্ছো আল্লাহ? আমি যে আর সইতে পারছি না।প্রিয় মানুষটাকে নিজের পেতে যে লড়বো সেটাও তো পারবো না।নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বিরূদ্ধে কি করে লড়বো আমি?
রোদেলার চোখের কোণে পানি জমলো।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কষ্টগুলো উগড়ে দিতে চাইলো।
-‘স্যার সব তৈরি।আপনি নির্দেশ দিলেই…
-‘ধৈর্য ধরো হারুন।
সাখাওয়াত আলম সোজা হয়ে বসলেন।আঁধারে মোড়া পুরো রুম।সাখাওয়াত আলম হালকা হেসে বললেন
-‘তার জন্মদিন বলে কথা আর আমি গিফট্ দিব না! এমন গিফট্ দিব যে…হাহা হাহা
সাখাওয়াত আলম হাসতে লাগলেন জোরে জোরে।হারুন রহমান বললেন
-‘ছোট মা জানলে অনেকটা ক্ষেপে যাবে।
-‘জানবে কি করে?
হারুন রহমান বললেন
-‘পাপ তো বেশিদিন চাপা থাকে না স্যার।
-‘রাখলেই থাকবে।
হারুন রহমান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।সাখাওয়াত আলম বললেন
-‘গুলিটা ডিরেক্ট যেন ওর মাথায় লাগে।বাঁচার চান্স যেন না থাকে।
-‘আচ্ছা স্যার।
হারুন রহমান বলে উঠলেন
-‘স্যার…
-‘বলে ফেলো..
সাখাওয়াত আলম রেকিং চেয়ারে আবার হেলান দিলেন।
-‘নওশাদ আহমেদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। বিভিন্ন অনৈতিক কাজ-কর্মের সাথে জড়িত।আমার মনে হয় উনি আপনার মাধ্যমে নিজের পথের কাঁটাকে উপড়ে ফেলতে চাইছে।কিছুদিন আগে আহনাফরা গিয়ে ওনার মেয়ের বিয়ে ভেঙে এসেছে।সেজন্য উনি বেশ ক্ষীপ্ত আহনাফের উপর।আর তাছাড়া ঐ বিয়ে ভাঙার কারণেই উনার অতগুলো টাকা লস গিয়েছে।কারণ উনি উনার বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথেই ওনার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন।বিয়ে ভাঙায় ভদ্রলোক চেতে ডিল কেনসেল করে দেয়।
সাখাওয়াত আলম হালকা করে রেকিং চেয়ারটা দোলাচ্ছেন।
-‘বুঝলাম..তবে আমি এমনি এমনি হাত মেলাইনি।আহনাফের মৃত্যুর দায়ভার তো কাউকে নিতেই হতো তাই না?
হারুন রহমান চমকালেন।এতোটা ভেবে দেখেনি সে! সাখাওয়াত আলম যেন বুঝলেন তার মনের কথা।তিনি হেসে বললেন
-‘এজন্য’ই আমি সাখাওয়াত আর তুমি হারুন।এতোই যদি বুঝতে তাহলে আজ তুমি আমার জায়গায় থাকতে।
হারুন রহমান মাথা নাড়লেন।
-‘লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান… আপনারা সবাই জানেন আজকের অনুষ্ঠানের মূল কারণ।আজকে আমাদের আহনাফের পয়দা দিবস।আমাদের আহনাফ এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিল।সেই ছোট্ট পিপড়ার মতো আহনাফ আজকে হাতি হয়ে গিয়েছে গাইজ।দাঁড়ান চোখটা মুছে নেই…আপনারা তো জানেন’ই আমি কত ইমোশনাল…
আদিত একটু কান্নার ভান করে মিছে মিছে চোখ মুছলো টিস্যুতে।সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।আদিত বলে উঠলো
-‘ইটজ্যাক্টলি! এভাবেই সেদিন ওর পরিবার খুশি হয়েছিল।তো আসল কথায় আসি।আজকে আমরা আহনাফের জন্মদিন উপলক্ষে কাটবো..মানে আরকি কেক।তো আসুন ভাইও বোনেরা আমরা একত্র হয়ে আহনাফকে কেক কাটতে উৎসাহিত করি…
সবাই আরেকদফা হাসলো।মাঝের টেবিলটাতে কেক রাখা।সুন্দর করে তার মাঝে লেখা –“Happy Birthday Ahnaf.” আহনাফ এগিয়ে গেল।কুহু দূরে দাঁড়িয়েছিল।আহনাফ তা দেখে সবার মাঝেই ওকে ডাকলো
-‘তিলোত্তমা..কাম হেয়ার..
কুহু ভড়কালো এভাবে সবার সামনে ডাকায়।আয়ান বেশি ভড়কালো।আহনাফ আবার ডাকলো
-‘এসো না..তিলোত্তমা!
আয়ান ভড়কে বললো–“তিলোত্তমা!”
রোদেলা কাষ্ঠ হাসলো।কুহুকে আসতে না দেখে সে নিজে গিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে এসে ওকে আহনাফের পাশে দাঁড় করালো।রাহুল একটা শুকনো ঢোক গিললো।ভাল্লাগছে না এসব তার।কেন লাগছে না? ভেতরের সত্ত্বাটা তাকে প্রশ্ন করলো।রাহুলের জানা নেই এর উত্তর।নিশ্চুপ রইলো সে। এদিকে সবাই “হোওওও” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।আয়ান কপাল কুচকে তাকিয়ে।মাথায় ঢুকছে না কিছু।তার ভাবনার মাঝেই নাতাশা পাশে এসে দাঁড়ালো।
-‘আপাতত ইনজয় করুন।পরে ভাববেন ওসব।
আয়ানের কপালের ভাঁজ আরো বাড়লো।কি হচ্ছে মাথায় আসছে না তার।এদিকে কুহুকে আহনাফের পাশে দাঁড় করিয়ে রোদেলা বললো
-‘মাশাআল্লাহ!
কুহু চমকালো।রোদেলা কেন বললো এটা? কুহুর ভাবনার মাঝেই আহনাফ কুহুর হাত দিয়ে ছুড়ি ধরে কেক কাটলো।কুহু এখনো হতভম্ব নয়নে রোদেলার দিকে তাকিয়ে।আরিফ ফটাফট ছবি তুলে ফেললো।আহনাফ কেক কেটে এক টুকরো তার বাবাকে খাওয়ালো।আহান শাহরিয়ার হয়তো আশা করেনি সেটা।তবে মুখে হাসি বজায় রেখে তা বুঝতে দিলেন না।আহনাফ আরেকটা টুকরো এনে কুহুর মুখের সামনে ধরলো।কুহু অল্প খেয়ে আহনাফকে খাইয়ে দিল।আহনাফ পুরোটা মুখে পুরে নিল যার দরূণ তার মুখের লালা কুহুর হাতে লাগলো।কুহু নাক কুচকে ফেললো।রোদেলা ঠোঁট কামড়ে রেখেছে।চোখ জ্বলছে তার।মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।তবে সে কাঁদবে না। আহনাফ সবাইকে একটু একটু করে খাওয়ালো।
এরপর আদিত আবার মাইক নিয়ে বলে উঠলো
-‘বন্ধুগণ! এখন’ই কিন্তু সব শেষ নয়। এখন আমরা নাচবো, গাইবো আনন্দ করবো।আনন্দের সাগরে ভেসে ভেসে চান্দে চলে যাবো আমরা…….হুরেএএএএ!!!
তখন’ই হঠাৎ আলো নিভে গেল সব।সামনের দিকে ফোকাস করে আলো অন হলো।কেউ নেই।সবাই কপাল কুচকালো।হঠাৎ’ই তখন আহনাফ গিটার হাতে হাজির হলো।সবাই হাত তালি দিল।আহনাফ মুচকি হাসলো।কুহুর দিকে তাকিয়ে গিটারে টুং টাং করে সুর তুললো…
হতে পারে রূপকথার এক দেশের
রাতের আকাশের এক ফালি চাঁদ
তোমার আমার চিরকাল
তুমি-আমি হাতে রেখে হাত
ছুঁয়ে দিয়ে আঙুলে আঙুল
দেখতে পারো কিছু আদুরে সকাল
আহনাফ কুহুর সামনে চলে এলো গাইতে গাইতে।কুহু অপ্রস্তুত হলো।আয়ান ভ্রু-ট্রু কুচকে তাকিয়ে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে এসেছে তার।কোনো এক অযাচিত ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
হতে পারে এ পথের শুরু
নিয়ে যাবে আমাদের অজানায়
তুমি-আমি আমাদের পৃথিবী
সাজিয়ে নিবো ভালোবাসায়
“ভালোবাসি” বলে দাও আমায়
বলে দাও, “হ্যাঁ, সব কবুল”
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি ক….
প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২০
আহনাফের গানের মাঝে হঠাৎ কুহু তাকে ধাক্কা মারলো।সবাই চমকে উঠলো এহেন কাণ্ডে।আহনাফ তাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গিয়েছে।হঠাৎ কুহুর এমন আচরণের কারণ বুঝলো না সে।রেগে ধাক্কা মারলো? আহনাফেরও রাগ হলো আজ।সবার সামনে এভাবে অপমান করলো তাকে! রাগে চোয়াল শক্ত হলো ।সে ঘুরে তাকালো।তখন’ই ভড়কালো।কুহু পড়ে আছে পাশে।আর তার জায়গাটা রক্তে ভরে উঠেছে।ঘটনাটা বুঝতে বেগ পোহাতে হলো আহনাফকে।পরক্ষণেই সে “তিলোত্তমা” বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
