প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৫

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৫
অনন্যা

-‘কে গুলি করেছিল খবর পেয়েছো?
হারুন রহমানের মুখটা বিষণ্ণ লাগছে।সাখাওয়াত আলম সেটা দেখেই উত্তর পেয়ে গেলেন যেন।বললেন
-‘ভালো করে খোঁজ করো।
হারুন রহমান মাথা নাড়লেন।কিন্তু তারপরেও তার মুখে বিষণ্ণতার ছোঁয়া দেখে বললেন
-‘কি সমস্যা?
হারুন রহমান খানিকটা আমতা আমতা করতে লাগলেন।এসির মধ্যে থেকেও তার কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে লাগলো।সাখাওয়াত আলম হাতের ফাইলটা রেখে কপাল কুচকে তাকালেন তার দিকে।

-‘কি হয়েছে দ্রুত বলো সেটা।এমন আমতা আমতা করছো কেন?
হারুন রহমান পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছতে লাগলেন।এরপর আমতা আমতা করেই বললেন
-‘আ’আহনাফ শাহরিয়ারের গা’গার্লফ্রেন্ড কে জানা গেছে স্যার।
সাখাওয়াত আলমের মুখটা খুশিতে ঝলমল করে উঠলো।তিনি বললেন
-‘এতো ভালো খবর।এবার অন্যভাবে শোধ নেওয়া যাবে।
হারুন রহমান একটা শুকনো ঢোক গিলে বললেন
-‘সেটা যে অসম্ভব স্যার।
সাখাওয়াত আলম ভ্রু কুচকালেন।বড্ড বিরক্তি নিয়ে বললেন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘এতো ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বলো না কি ব…
-‘ছোটমা’ই সেই মেয়ে..
সাখাওয়াত আলমের কথার মাঝেই হারুন রহমান কথাটা বললেন।সাখাওয়াত আলম স্তব্ধ হয়ে গেলেন।আস্ত আকাশটা যেন তার মাথায় ভেঙে পড়েছে।পরক্ষণেই একটা ফাইল উঠিয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন
-‘ এটা অসম্ভব।তোমার খোঁজ নেওয়ায় গাফিলতি আছে।ভালো করে খোঁজ নাও।
-‘না, স্যার।আহনাফ শাহরিয়ারকে কাল রাতে ছোট মায়ের বাড়ির সামনে দেখা গেছে। আজকে তারা একসাথে ঘুরতে গিয়েছে।

সাখাওয়াত আলম ক্ষোভে হাতের ফাইলটা দূরে ছুঁড়ে মারলেন।হারুন রহমান জানতেন এমনকিছুই হবে।ভদ্রলোক হাতের ছাতাটা খুলে মেলে নিজেকে আড়াল করলেন।কারণ এই খবর দেওয়ার জন্য এখন তার উপর টেবিলের সব ফাইল ছুঁড়ে মারা হবে এটা তিনি জানেন।বিগত দিন থেকে এমন’ই হয়ে আসছে।সাখাওয়াত আলমের অপছন্দের খবর আনলে এমন’ই হয়।এখনও সাখাওয়াত আলম তার দিকে ফাইলপত্র ছুঁড়ে মারছেন আর জোরে জোরে গর্জন করছেন।হারুন রহমান শক্ত করে ছাতা চেপে ধরে রেখেছেন আর বলছেন
-‘স্যার শান্ত হন…এখনো সময়..ওরি বাবা..স্যা..স্যার এখনো সময় আছে।ছোটমাকে সঠিক পথে আনতে হবে।তাকে জানাতে হবে যে শাহরিয়ার বংশটাই আপনার শত্রু।
সাখাওয়াত আলম সর্বশেষ ফাইলটা ছুঁড়ে মেরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলেন।ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে দেখে তিনি ছাতাটা বন্ধ করলেন।সাখাওয়াত আলমের চোখে-মুখে আগুন।রাগে শরীর কাঁপছে ভদ্রলোকের।

-‘দুনিয়ায় ছেলের অভাব ছিল যে এই হতোচ্ছোরার সাথে প্রেম করতে গেল? শাহরিয়ার বংশের দিকেই ওর নজর যায় কেন আমি বুঝি না।রেনানের সাথে প্রেম করে শিক্ষা হয়নি ওর?
রাগেমিশ্রিত স্বরে চেঁচিয়ে বললেন কথাগুলো।হারুন রহমান মিনমিন স্বরে বললেন
-‘ছোট মাকে বুঝিয়ে বললে সে বুঝবে, স্যার।

সাখাওয়াত আলম রাগে চোখে অন্ধকার দেখছেন।মেয়ের উপর’ই রাগ লাগছে তার।সে জানেও না হয়তো এরজন্য তাকে কতটা পস্তাতে হতে পারে।আহনাফের থেকে দূরে না সরলে তার জীবনের ঝুঁকিই বাড়বে।নির্বোধ মেয়ে! আর ছেলে পেল না! আর আহনাফের পেছনে তো কম মেয়ে ঘুরে না! নিশ্চই সে বুঝে গিয়েছে যে কুহু তার মেয়ে।তারমানে ঐদিন আহনাফ’ই গুলি করিয়েছিল? সাখাওয়াত আলমের রাগ এবার ভয়ে পরিণত হলো।পিতৃত্ববোধ জেগে উঠলো।মেয়ে হারানোর ভয় জেঁকে ধরলো তাকে।তার উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যদি মেয়েটার ক্ষতি করে দেয়! রেনানের থেকে সেবার মরতে মরতে বেঁচেছে।এখন যদি কিছু একটা হয়ে যায়?
-‘ওদের উপর নজর রাখো।বেশি করে লোক লাগাও।আমার মেয়ের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, হারুন।আজ রাতেই আমি ওর সাথে কথা বলবো।এখন তুমি ওদের উপর নজর রাখতে বেশি করে লোক পাঠাও।
হারুন রহমান মাথা নেড়ে চলে গেলেন।সাখাওয়াত আলম চোখ বুজে হেলান দিলেন চেয়ারে।কি একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

-‘আমরা এখানে আজ দুপুর পর্যন্ত থাকবো রান্না এখানেই করা হবে।সবাই হাতে হাতে সাহায্য করবে।ওকে?
সবাই উৎফুল্ল হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো আহনাফের কথায়।রাফি ফিসফিস করে বলে উঠলো
-‘ভাই, এর মাঝে টয়লেট পেলে?
আহনাফ সরু চোখে তাকালো ওর দিকে।রাফি তা দেখে মেকি হেসে বলে উঠলো
-‘হে হে…ন’নদী তো আছেই।থাক.. থাক..
আহনাফ কপাল কুচকে বলে উঠলো
-‘নদী!! উফ! ওইপাশে পাবলিক ওয়াশরুম আছে।চোখটা ঘুরিয়ে দেখ একটু।
রাফি দাঁত কেলিয়ে বললো
-‘আচ্ছা ভাই।

আহনাফ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।তার তিলোত্তমার দিকে তাকালো।একটা মাদুর পেতে বসে রয়েছে।রোদেলা আর নিধির সাথে বকবক করছে।তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে একপল রোদেলাকে দেখলো।রোদেলাও কি মনে করে তার দিকে তাকালো।আহনাফ অপ্রস্তুত হলো খানিকটা তবে প্রকাশ করলো না তা।মুচকি হাসি উপহার দিল।রোদেলাও হাসলো বিনিময়ে তবে সেই হাসিতে তার চোখ হাসিনি।বড্ড মলিন ছিল সেই হাসি।এত’ই সহজ বুঝি প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে দেওয়া! তিলে তিলে রোদেলা এর যন্ত্রণা টের পাচ্ছে।বুকে বাঁ পাশটা ব্যথায় চিনচিন করে উঠে।ভেতরে তার মাঝে যে ঝড় চলছে তা কখনো কেউ টের পাবে না।কিছু কষ্ট অপ্রকাশ্য থাকাই ভালো। সে ওদের সাথে আবার আড্ডায় যোগ দিল।হঠাৎ নিধি চাপা বলে উঠলো

-‘এই আয়ান ভাইয়া তোর দিকে তখন থেকে এমন ক্যাবলার মতন তাকিয়ে আছে কেন রে?
কুহু ভড়কে তাকালো আয়ানের দিকে।আয়ান আর নাতাশা একটু দূরে একটা বেঞ্চে বসে আছে।নাতাশা বকবক করছে তার সাথে অথচ সে নিশ্চুপ হয়ে কুহুর দিকে অনিমেষ তাকিয়ে।কুহু তাকানোর পরেও তার নজর একচুল সরলো না।কুহু’ই নজর সরিয়ে নিল।আয়ান বোধহয় হাসলো তা দেখে।নাতাশা আয়ানের বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো
-‘এই হাসছো কেন তুমি?
আয়ান সামনের নদীর দিকে তাকিয়ে বললো
-‘কিছু না।বলো তুমি কি বলছিলে…

তাদের সম্পর্ক এখন তুমি তুমিতে এসে ঠেকেছে।তবে নাতাশা জানে সে আয়ানের বন্ধু হতে পেরেছে শুধু। ভালোবাসার মানুষও হয়ে যাবে একদিন।এ তার বিশ্বাস।নাতাশা হঠাৎ কি একটা ভেবে বললো
-‘আচ্ছা তুমি যদি কোনোদিন কুহুকে না পাও তাহলে কি করবে?
নাতাশা আয়ানকে তাদের এই আয়োজনের আসল কারণ বলেনি।বলেছে সবাই এমনি আনন্দ করবে।আয়ানের ঠোঁটে ফুটলো বিষাদপূর্ণ এক হাসি।তবে হঠাৎ’ই সেই হাসি গায়েব হয়ে গেল।চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।গাঢ় স্বরে বললো
-‘ছিনিয়ে নিব তাও অন্য কারো হতে দিব না।
নাতাশা খানিকটা ভড়কালো।হালকা হেসে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো

-‘ ধরো যদি না পাও?অন্যকেউ যদি…
-‘নিজের জিনিস আগলে রাখতে জানি আমি।
আয়ানের গুরুগম্ভীর স্বর।নাতাশা চট করে বলে বসলো
-‘কুহু যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে?
আয়ান কেমন করে যেন তাকালো তার দিকে।আয়ান বেশ বুঝলো নাতাশা আহনাফ আর কুহুর সম্পর্কে জানে।তাকে বাজিয়ে দেখছে এখন।আয়ান দৃঢ় স্বরে জবাব দিল
-‘ওদের বিচ্ছেদের দায়িত্ব তাহলে আমার।
-‘আয়ান!
আয়ান কিছু বললো না।নাতাশা খেয়াল করেছে যে আয়ান আজ একটু বেশিই গম্ভীর।খুব বেশি কথা বলছে না।এখন আবার এসব বলছে।এই আয়ানের সাথে তো তার প্রথম দেখা হয়নি।এই আয়ানকে দেখে তো সে প্রেমে পড়েনি।আয়ান শেষে তার হবে তো?

রাইফার স্কুল থেকে একটা জরুরি কল আসায় সে সাইডে এসে কথা বলছিল।কথা শেষ হতেই পেছনে ঘুরে চমকে উঠলো।আদিত পেছনেই দাঁড়িয়ে।রাইফা বুকে থুথু দিয়ে বললো
-‘আজরাইলের মতো হাজির হয়েছো পুরো।তা এখানে কি?
আদিত বলে উঠলো
-‘তোমার গায়ে কিন্তু হেব্বি শক্তি মাইরি।আরেকটুর জন্য আমার বংশগতি বন্ধ করে দিয়েছিলে!
রাইফা বিরক্তিতে ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।সে মনে করেছিল এটা আহনাফ।কিন্তু পরে সবাই একে আদিত আদিত বলায় তার ভুল ভাঙে।সে যাইহোক এই ছেলেকে তার মোটেও ভালো লাগেনি।কেমন ফ্ল্যার্ট করছে দেখো! আদিত তখন বলে উঠলো

-‘রাইফা..রাইট?
রাইফা মুচকি হেসে বললো
-‘রাইফা আপু হবে কথাটা।
আদিত হো হো করে হাসতে লাগলো।এই পুচকে মেয়ে নাকি আপু হবে তার! আদিত বলে উঠলো
-‘নাইস জোকস্….সাইজটা দেখেছো নিজের? পুচকে মেয়ে একটা।এই কোন ক্লাসে পড় তুমি? ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার?
রাইফা হতভম্ব।তার ফেইসটা কি এতোটাই বাচ্চা বাচ্চা লাগে! পরক্ষণেই দাঁতে দাঁত চেপে বললো
-‘আমি একজন শিক্ষিকা।চাকরি করি আমি।
আদিত নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো

-‘ওরি বাবা কত বড় মানুষ!….সিনিয়র হওয়ার খুব শখ দেখছি!
-‘আরেহ! আশ্চর্য তো!
আদিত রাইফাকে ভেঙিয়ে ওর মতো করেই বললো
-‘আরেহ! আশ্চর্য তো!
রাইফা রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো।আদিত বুকের বাঁ পাশে হাত দিয়ে ‘আহ্’ শব্দ করে উঠলো।রাইফা ভ্রু কুচকালো।আদিত বলে উঠলো
-‘তোমার নাম রাইফা না রাইফেল রাখা উচিত ছিল।আহ্..মিস রাইফেল!
রাইফা মেজাজ বিগড়ালো।তার এতো সুন্দর নামটাকে এভাবে বললো! সে বলে উঠলো
-‘ম্যানারলেস ছেলে কোথাকার! সিনিয়র হই তোমার।সঠিক বয়সে বিয়ে করলে তোমার সন্তান আমার স্টুডেন্ট হতো আজ।
কথাটা বলেই হনহন করে চলে গেল রাইফা।আদিত হা করে তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে।সঠিক বয়সে বিয়ে করলে মানে? তার সন্তান ওর স্টুডেন্ট..কি অলক্ষণে কথা বলে গেল এটা! আদিতের মাথায় হাত।এরপরেই কুটিল হেসে বললো

-‘আমার সন্তান তোমার স্টুডেন্ট হোক আর যাই হোক ওর জননী তো তোমাকেই বানাবো মিস রাইফেল….
কিছুক্ষণের মাঝে আরিফ বড় বড় পাতিল আর রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে হাজির হলো।হৈ-হুল্লোর বেঁধে গেল।এরকম একটা পিকনিকের শখ কুহুর ছোটবেলা থেকে ছিল।সামনে একটা স্নিগ্ধ নদী থাকবে হালকা বাতাস বয়ে যাবে।রৌদ্রজ্জ্বল আকাশটা হঠাৎ করেই গুম মেরে গিয়েছে।সবাই একটু ভয় পেল যদি বৃষ্টি আসে! তখন’ই আহনাফ সবাইকে বললো যে তেরপল আছে, সমস্যা নেই।খুশি আর দেখে কে! আহনাফ না জেনেই কুহুর একটা ইচ্ছা পূরণ করে ফেলেছে।কুহু আহনাফকে ধন্যবাদ বলবে এ জন্য।আহনাফের দিকে তাকাতেই দেখলো আহনাফ তার দিকেই তাকিয়ে।কুহু মুচকি হাসলো আজ তার দিকে তাকিয়ে।আহনাফের মনে হলো ওর হাসি সোজা তার বুকে বিঁধলো।আহ! এতো শান্তি! আহনাফ ঠোঁট চোকা করে চুমু ছুড়লো।কুহু মুখ কুচকে ফেললো এতে।শব্দ না করে ঠোঁট নেড়ে বললো—“বানিক চন্দ্র।”

আহানাফ ওর কথা বুঝতে পেরেই চোখমুখ শক্ত করে তাকালো।কুহু জিহ্ব দেখিয়ে ভেঙালো যেন সে কোনো পরোয়াই করে না।আহনাফের রাগ বলো।বানিক চন্দ্র বলে যে কোন গালিটা দিয়েছে সে এটা ভালোই বুঝেছে।বড্ড বেয়াদব হচ্ছে মেয়েটা। এমন একটা গালি সে আহনাফ শাহরিয়ারকে দিল! একটা মেয়ে দিল! পরক্ষণেই ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো
-‘একটা মেয়ে আবার কি! তার তিলোত্তমাই তো।
আহনাফ মনে মনে ঠিক করলো এই মেয়েকে সে ঠিক করবে।মুখের ভাষা এতো খারাপ হয় কোনো মেয়ের একে না দেখলে জানতো না সে।কি সুন্দর গালিগুলোর নতুনরূপ বের করে বলে।ভালো জায়গায় ব্রেন না খাঁটিয়ে উল্টোপাল্টা জায়গায় খাটায়।হাতে পাক না সে বুঝিয়ে দিবে সব।আহনাফ শাহরিয়ারকে তো আর চেনে না।
আনন্দঘন পরিবেশটাকে থমথমে বানাতে রাহুলের আগমন’ই যথেষ্ট ছিল।হঠাৎ একটা কালো রঙের গাড়ি থামতে দেখে সকলের চোখ জায়গায় সেখানে।গাড়ির দরজা খুলে যখন রাহুলকে নামতে দেখা গেল তখন সবার হাসিই উবে গেল।রাফি বিরক্তমেশানো স্বরে বলে উঠলো

-‘এ হা’লারে দাওয়াত দিল কোন হা’লায়?
সবার মুখ থেকেই একটা করে গালি বের হলো রাহুলকে দেখে।কুহু বিরবির বললো
-‘বিন বাজানোর আগেই সাপ হাজির! উন্নতি হয়েছে তো বেশ!
এদিকে আহনাফ হাস্যজ্জ্বল মুখে দুই হাত পাখির মতো মেলে এগিয়ে গেল।
-‘ভাইইইই….বুকে আয় ভাই…
রাহুল কপাল কুচকালো।আহনাফ তাকে জড়িয়ে ধরেছে ততক্ষণে। আদিত আরিফের কানে কানে বললো
-‘অষ্টম আশ্চর্য জিনিস, আরিফ।ছবি তুলে রাখ, পরে মিউজিয়ামে দিয়ে আসবো।
আরিফ সত্যিই ছবি তুলে ফেললো।
-‘কেমন আছিস আমার সোনা ভাই? তোর পা/ছা ঠিক হয়েছে? দেখি..দেখি..
আহনাফ ওইদিকে হাত দিতে নিলে রাহুল পিছিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-‘হোয়াট দ্যা…

সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে।রাহুল কুহুর দিকে তাকালো।কুহুর হাতে ধারালো ছুঁড়ি ছিল।সবজি কাটতে নিয়েছিল আরকি।সেটাই সে দাঁত কেলিয়ে উঁচু করে দেখালো আবারো।রাহুলের হাত আপনাআপনি সেই আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় চলে গেল।পরক্ষণেই নিজেকে ঠিক করে বললো
-‘কি উপলক্ষে এই আয়োজন?
-‘আপনের পা/ছা ঠিক হওয়ার আনন্দে।আপনি নাকি আজকাল বসতেও পারছেন।সেই খুশিতেই আরকি।
রাফির কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো।রাহুল রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো রাফির পানে।এই ছেলেটাকে এবার দেখতেই হচ্ছে।বড্ড বাড় বেড়েছে। আহনাফ বলে উঠলো

-‘আমি একটা তিলোত্তমা পেয়েছি।মানে তোর ভাবি।সেই খুশিতে…
আয়ান কোল্ড ড্রিংকস্ পান করছিল।আহনাফের কথা শুনে মুখের সবটা সামনে ছিটকে মারলো।নাতাশা একটা শুকনো ঢোক গিললো।আয়ান হতভম্ব। এই খুশিতে আহনাফ আয়োজন করেছে! আর সেও কিনা এখানে খুশিমনে হাজির হয়েছে! আয়ান রেগে নাতাশার দিকে তাকালো।তিলোত্তমা নামটা ঐদিন পার্টিতে আহনাফ সবার সামনে কুহুকে বলেছিল।নাতাশা সেইদিনের কথা ভুলেই গিয়েছিল।সে কিছু বলতে নিলে আয়ান হেসে ফেললো।নাতাশার হাতে থাকা বোতলের সাথে মৃদু ধাক্কা মেরে চেয়ার্স বললো সে।নাতাশার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।কি হলো এটা? আয়ান কি আগে থেকেই জানতো?নাতাশার বুঝে এলো না কিছু।
রাহুল কুহুর পানে তাকালো।এরপর মৃদু হেসে বললো

-‘কংগ্রাচুলেশন…
রাইফা কুহুর বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দুষ্টু হাসলো।নিধি আর রোদেলাও মজা নিচ্ছে।রোদেলা একপল রাহুলের দিকে তাকালো।রাহুলও তাকালো তখন।রোদেলা লাজুক হাসলো।রাহুল কপাল কুচকালো।হঠাৎ ওর এই হাসির অর্থ খুঁজে পেল না সে।সে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো এর কারণ।রোদেলা আবার লাজুক হাসলো।আচ্ছা তবে কি রোদ ওর প্রেমে পড়ে যাচ্ছে! রাহুলের মনটাও খুশিতে ভরে উঠলো।প্রেমিক মন তার অন্যকিছু ভাবতে চাইলো না।এসব দেখে দূর থেকে একজন জ্বলে ছাই হয়ে গেল বুঝি! হাতটা মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেললো সে।

-‘রাজনীতিতে আমি আর ফিরবো না।তাই আমার কাছে দয়া করে এসব আবদার করবেন না।
হতাশ হলেন রবিউল খান।আহান শাহরিয়ারকে ছাড়া তাদের দল নেতিয়েই গেছে খানিকটা।আহান শাহরিয়ার আবার ফিরলে হাড্ডাহাড্ডি একটা লড়াই হতো।কিন্তু সে নারাজ।আহান শাহরিয়ারকে আবার অনুরোধ করলেন তিনি
-‘আহান তোমাকে আমাদের দরকার।তুমি…
-‘অন্য কথা থাকলে বলুন রবিউল সাহেব।
এবার বড্ড রাগলেন রবিউল খান।
-‘এতো দেমাক দেখিয়ো না আহান।ফিরলে তোমারও লাভ হতো।
-‘প্রয়োজন নেই এতো লাভের।

রবিউল খান এবার রেগে কল কেটে দিলেন।সামনে নির্বাচন আসছে।আহান ফিরলে তাদের লাভ হতো।আহানকে টেক্কা দেওয়ার মতো ক্ষমতা সাখাওয়াতের নেই।জনগণ আহানের পদত্যাগে সেবার বড্ড আফসোস করেছিল।এখন সে ফিরলে জনগণ খুশিই হতো।তার জয় নিশ্চিত।দলেরও লাভ হতো এতে।রাগে মাথার চুল ছিড়ার মতো অবস্থা হলো রবিউলের।
আহান শাহরিয়ার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রিয়তমা স্ত্রীর হাস্যজ্জ্বল ছবির দিকে তাকালেন।
-‘যে রাজনীতি আমার প্রিয়তমাকে কেড়ে নিয়েছে সে রাজনীতিতে আমি আর ফিরবো না।যে রাজনীতির কারণে আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আজ আমার প্রাণের শত্রু সে রাজনীতিতে আমি ফিরতে চাই না।এখন আমি ঘৃণা করি এই রাজনীতিকে…ঘৃণা।

শেষের কথাটা মন্ত্রের মতো জব করতে করতে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন।গাল বেয়ে উষ্ণ তরল বয়ে গেল বোধহয়। হঠাৎ কেবিনে তখন কেউ নক করলো।আহান শাহরিয়ার চমকে উঠলেন।হাতের পিঠে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলেন।এরপর গম্ভীর স্বরে বললেন

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৪

-‘কাম ইন…
দরজা ঠেলে তখন যে প্রবেশ তাকে দেখে আহান শাহরিয়ার থম মেরে রইলেন কিছুক্ষণ।এখন এখানে বোধহয় সে তাকে আশা করেনি।সে যে আবার তার কেবিনে কোনোদিন আসতে পারে এটাই বোধহয় তার কাছে নিছক স্বপ্ন বৈ আর কিছু না।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ২৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here