প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৪

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৪
অনন্যা

-‘ডোন্ট হরণ মাই ইজ্জত..
আহনাফকে চোখ খিঁচে থাকতে দেখে কুহু ওর বাহুতে মৃদু ধাক্কা মারে।
-‘এই আহনাফ! কি ভাবছেন? দিন না একটু…
আহনাফ ধরফরিয়ে চোখ খুলে।সে কি দিবা স্বপ্নও দেখা শুরু করলো নাকি? আহনাফ তার মাইন্ড অন্যদিকে নিতে বললো
-‘গান শুনবে?ওয়েট…
আহনাফ কুহুকে বলার সুযোগ না দিয়ে গিটার নিয়ে আসলো।কুহুর স্বপ্নে শোনা গানটাই গাইলো সে।এদিকে কুহুর মন-মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু লাল জুসটা ঘুরছে।আহনাফ কুহুর এক হাত ধরে উঠিয়ে আনলো।গিটারে টুংটাং সুর তুলে সে।

হতে পারি রোদ্দুর
হতে পারি বৃষ্টি
হতে পারি রাস্তা তোমারই জন্যে
হতে পারি বদনাম
হতে পারি ডাকনাম
হতে পারি সত্যি তোমারই জন্যে
হতে পারি গল্প
তুমি কাছে টানলে
হতে পারি জানলা
এই হাওয়াও তোমার কারণে
আহনাফ কুহুর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে গাইতে লাগলো পরের স্টেপ
শুধু তুমি চাও যদি
সাজাবো আবার নদী
এসেছি হাজার বারণে
শুধু তোমারই জন্যে
শুধু তোমারই জন্যে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহনাফ চোখ বুজে গাইছে।প্রত্যেকটা লাইন যেন হৃদয়স্পর্শক। সবটা তিলোত্তমার জন্য।এদিকে কুহু এই সুযোগে ডাইনিংএ রাখা বোতল থেকে গ্লাসে ঢেলে পুরোটা এক নিশ্বাসে পান করে ফেললো।মাথা ঘুরছে এবার তার।সে এবার গ্লাসে ঢাললো না।বোতলটা মুখে দিয়ে পান করতে লাগলো।এদিকে আহনাফ চোখ খুলতেই দেখে তিলোত্তমা নেই।সে আশেপাশে তাকায়।ওর দিকে চোখ যেতেই চক্ষু চড়কগাছ।দ্রুত বেগে গিটারটা রেখে গিয়ে হাত থেকে টেনে নেয় বোতলটা।
-‘কি করছো তুমি? আল্লাহ! এটা কি করলে?
আহনাফের ধমক শুনে কুহু কেঁদে ফেললো বাচ্চাদের মতো করে।আহনাফ বুঝলো নেশা হয়ে গেছে। সে লেবু পানি করতে কিচেনে গেল।কুহু আহনাফকে যেতে দেখে পিছু পিছু গেলো।শরীর টলছে তার।হঠাৎ আহনাফকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো

-‘উমম,..আহনাফ…এতো হ্যান্ডসাম কেন আপনি?
আহনাফের হাত থেমে যায়।একটা শুকনো ঢোক গিললো সে।নিজেকে সামলে সে কুহুর হাত ছাড়িয়ে নেয়।কুহু ঠোঁট উল্টায়।আহনাফ গলার স্বর কঠিন করে বললো
-‘বড্ড বেয়াদব হয়েছো তুমি।কোন সাহসে বোতলটা ধরেছো! বেয়াদব!
কুহু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো।আহনাফ ভড়কে গেল।নেশার ঘোরে না থাকলে আহনাফের ধমক শুনে বোধহয় আহনাফকে ঘর থেকেই বের করে দিত।আহনাফ অস্থির চিত্তে বললো

-‘আরেহ্…কাঁদে না..তিলোত্তমা কাঁদে না……দেখি..
আহনাফ কুহুর গালে হাত রেখে পানি মুছিয়ে দিতে লাগলো।
-‘কি এক জ্বালা! আমার’ই ভুল হয়েছিল তোমাকে গ্লাসটা দেওয়া।তিলোত্তমা…
কুহু আহনাফের বুকে আঁকিবুকি করছে।আহনাফের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে।সে ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেললো।কুহু খিলখিল করে হেসে ফেললো।এরপর মাতাল স্বরে বলে উঠলো
-‘রেনানের বডিটা কি জোস্!
আহনাফের ঠাণ্ডা মেজাজ মুহূর্তেই গরম হয়ে গেল।সে গম্ভীর স্বরে বললো
-‘কি বললে আবার বলো…
-‘রেনানের বডি..

আহনাফ ওর হাতে চাপ প্রয়োগ করতেই ও আর্তনাদ করে উঠলো।আহনাফ বললো
-‘সুযোগ দিচ্ছি তার মানে এই না যে যা খুশি তাই বলবে…রেনানের নামও যদি কোনোদিন শুনি আর তোমার মুখে..তাহলে সেলাই করে দিব তোমার ঠোঁট।তবে সুতো দিয়ে নয় অন্যকিছু দিয়ে। গট ইট?
কুহু খিলখিল করে হেসে উঠলো আহনাফের রাগ দেখে।এরপর বলতে লাগলো
-‘জেলাস? হুম হুম?
-‘Isn’t it normal?
কুহু ঢুলুঢুলু চোখে চেয়ে আহনাফের পানে।আচমকা সে বলে বসলো
-‘ইউ লুক সো ইয়াম্মি…আহনাফ..
কথাটা বলেই কুহু আহনাফের শার্টের দুটো বোতাম খুলে ফেললো।আহনাফ হকচকিত হলো।সে ধরে ফেললো কুহুর হাত।

-‘কি করছো তিলোত্তমা? সব ওয়াইনের প্রভাব।লেবুর পানিটা করতে দাও।
কুহুকে দূরে সরিয়ে আহনাফ লেবু কাটতে লাগলো ।অমন সময় কুহু বললো
-‘আপনি আমাকে চান না তার মানে? আমি ধ’র্ষি’তা বলে?আমি কালো বলে এমন করছেন তাই না?আমি সুন্দর আর পবিত্র হলে এমন করতে পারতেন না।তাই না?
আহনাফের হাত থামে।ঘুরে তাকালো সে।কুহুর চোখ টলমল করছে জলে।আহনাফ বললো
-‘ভবিষ্যতে যেন আর এসব না শুনি।তুমি আমার কাছে পবিত্র এক পুষ্প।আর আমি তোমাকে কতটা চাই সেটা যদি আজ বুঝাই তাহলে কাল তুমি আমার কি হাল করবে সেটা ভেবেই শরীর কেঁপে উঠছে আমার।জল্লাদ বউ একটা!
শেষের লাইনটা আস্তে বললো সে।লেবুর রস একটা গ্লাসে নিল।এরপর একটু পানি দিয়ে পেছন ঘুরে বললো
-‘এই নাও তিলো…

আহনাফ বলতে পারলো না পুরো কথাটা।কুহুকে দেখে থমকে গেছে সে।মেয়েটা শাড়ির আচল ফেলে মেঝেতে বসে রয়েছে।কেমন করে তাকিয়ে আছে আবার দেখো! আহনাফের হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।কুহু এখনো এক’ইভাবে তাকিয়ে।আহনাফ উল্টোদিক ঘুরে গেল।এ কোন বিপদে পড়লো সে! সে জানে আজ তাদের মাঝে কিছু হলে সকালে কুহু রিগ্রেট করবে এর জন্য।আহনাফ তা চায় না।আহনাফ সামনে ঘুরে কিছু বলতে নিবে দেখলো কুহু একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে।ভয়ে লাফিয়ে উঠলো ছেলেটা।কুহু বললো
-‘আই ওয়ানা টেস্ট ইউ…
-‘চটকে ভর্তা বানিয়ে ফেলবো একদম।বেয়াদব!
কুহু আবার বললো

-‘আই ওয়ানা টেস্ট ইউ আহনাফ…
আহনাফ এবার এক আঙুল তুলে বললো
-‘তিলোত্তমার বাচ্চা! একদম সিডিউস করবে না।
কুহু ধমকে বললো
-‘চুপ বাঙ্গির পোলা।রোমান্স বুঝিস না তুই?
-‘তুই চুপ কর।গরিবকে আর এভাবে কষ্ট দিস না..প্লিজ..
-‘কি করবি দিলে?
আহনাফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো
-‘তুলে একটা আছাড় মারবো।
কুহু এবার কেমন করে হাসলো যেন।নেশার ঘোরে মাথা গেছে মেয়েটার।এমনিতে তো কাছে ঘেষে না আর এখন! অজানা ভয়ে ভেতরটা শুকিয়ে গেল আহনাফের।না জানি সকালে কোন বাঙ্গি ক্ষেতে কুহু তাকে ছেড়ে দিয়ে আসবে।আহনাফ নিজেকে কিছু গালি দিল।কেন যে তখন দিতে গেল!কুহু হঠাৎ হাতে ছুড়ি তুলে নিল।ভড়কে গেল আহনাফ।

-‘ভালোবাসবি কিনা বল?
-‘আরেহ!
আহনাফ আতংকিত হয়ে গেল।কুহু ছুড়িটা একটু চেপে ধরতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো
-আচ্ছা..আচ্ছা…বাসবো…ছুড়িটা রাখো..
কুহু ঠোঁট উল্টে বললো
-‘সত্যি তো?
আহনাফ মাথা ঝাকায়।কুহু রাখলো ছুঁড়িটা।আহনাফ সঙ্গে সঙ্গে কুহুর কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল।কুহুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।আহনাফ ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।
-‘আমার ভালোবাসা তুমি সহ্য করতে পারবে?শুধু শুধু মরতে চাইলে আমার কাছে।
আহনাফ নিজের কক্ষে এলো ওকে কোলে নিয়ে।কুহু
ঢুলুঢুলু স্বরে গান গেয়ে উঠলো আচমকা
“লিখবো তোমার হাতে
আমি আমার মরণ”

-‘তাই?
-‘হুম..
আহনাফ বাঁকা হেসে ওকে নিয়ে ওয়াসরুমে এলো।এরপর বললো
-‘এতো মরার ইচ্ছা ভালো নয়।আপাতত বাথটাব আর পানির সাথে রোমান্স করো।
কথাটা বলেই সে কুহুকে বাথটাবে ছুঁড়ে মারলো।পানি ছিটকে এলো।কুহু চেঁচিয়ে উঠলো—“বাঙ্গির পোলাআআ!” কুহু রেগে আহনাফের হাত ধরে টান মেরে বসে।আহনাফ তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার উপর।
-‘আরেএএ!
কুহু আহনাফের পিঠে উরাধুরা কিল মারতে লাগলো।আহনাফ ভড়কে গেল।কোনোমতে ওর হাত দুটো ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো

-‘জামাই মারো লজ্জা করে না?মামলা ঠুকে দিব তোমার নামে আমি।
কুহু কিছু বলছে না।দোষী বাচ্চার মতো নিচে তাকিয়ে সে।আহনাফ কপাল কুচকায়।ভয় পেয়েছে বোধহয়।আহনাফ ওর হাত ছেড়ে দিল। ভাবলো একটু শাসন করা যাক।জীবনে আর এই সুযোগ আসবে কিনা কে জানে! আহনাফ একটু ভাব নিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি কুহু একটা অতি আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে বসে।আহনাফের প্যান্টটা নিচে টান মারলো আচমকা।বেল্ট পড়েনি আহনাফ।কি এক কপাল! প্যান্টটা পড়ে গেছে।সে একবার নিচে তাকাচ্ছে তো আরেকবার কুহুকে দেখছে।পরপর’ই আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।কুহু ভয়ে পেছনে সরে যায়।বাচ্চাদের মতো এক আঙুল মুখে তার।বোকা বোকা চাউনি নিক্ষেপ করে আছে আহনাফের পানে যেন কিচ্ছুটি করেনি সে।

আয়ান উদাস হয়ে বসে রয়েছে।গেল ডিভোর্স করাতে আর ফিরে এলো বিয়ের ডেট ফিক্সড করে।জীবনটা বেদনা।আয়ান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।সন্ধ্যায় চাঁদটাকে সুন্দর লাগছিলো।ঠিক করলো ছাদে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।চাঁদকে আজ নিজের কষ্টের কাহিনী শুনাবে সে।তার সাথেই কেন সবসময় এমন হয়?সে বিরবির করতে করতে ছাদে এসে উপস্থিত হলো।আশ্চর্য হলো ছেলেটা।চাঁদ নেই।তার আসার খবর শুনে কি চাঁদও পালালো? ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো চাঁদ আছে তবে কিরণ নেই।চন্দ্রগ্রহণ আজ?আয়ান আসতেই চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে গেল! ক্ষেপে গেল আয়ান।হাতে তালি দিয়ে বলতে লাগলো

-‘বাহ্! বাহ্! বাহ্!একটু আগে তো ঠিক’ই আলো দিচ্ছিলে।আমাকে দেখেই এখন তোমার গ্রহণ লেগে গেল! নাটক মারাও! দেখবোই না তোকে।ইচ্ছা তো করছে…
আয়ান পাগলের মতো একটা ছোট্ট ইটার টুকরো তুলে চাঁদের দিকে নিশানা করে ছুঁড়ে মারলো।উল্টে এসে তার কপালে লাগলো সেটা।সে কপাল ধরে নিচে বসে আর্তনাদ করে উঠলো।
-‘তুই শা’লা.. মামা নামের কলঙ্ক।মামা পদ থেকে তোকে বহিষ্কার করলাম আমি।
হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই বিরক্ত নিয়ে পেছনে তাকালো সে।কালো আলখাল্লার মতো পোশাক দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।
-‘ওমাআআআ..আসতাগফিরুল্লাহ.. লা হাউলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ..আউজুবিল্লা হি মিনাশ শায়তানির রাজিম….
আয়ান সব দোয়া-দরূদ যেন একেবারেই পড়ে ফেলবে।

-‘ওমা আজরাইল এসে পড়ছে তোমার ছেলেকে নিতে…আমারে মাফ করেন।আল্লাহ…আল্লাহ…আমার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।আমার রুহু কি বেরিয়ে যাচ্ছে? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ….
রাইফা নিকাবটা খুলে ফেললো।বলে উঠলো চেতে
-‘বা/ল আমি এটা।এমন করছিস কেন?
আয়ান এখনো চোখ বুজে বুকে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে চলেছে।রাইফা এগিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলো।আয়ান চোখ খুলে দিল চিৎকার।রাইফা ভড়কে দুই কদম পিছিয়ে গেল।আয়ান খেকিয়ে উঠলো
-‘এই ছেমরি! ছাগল না গাঁধা তুমি? মারতে চাইছো তোমরা আমাকে তাই না?
আয়ান কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠলো।রাইফা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।সে কি করলো?প্রশ্নটা করেই বসলো
-‘আমি কি করলাম?
আয়ান কাঁদতে কাঁদতেই খেকিয়ে উঠলো

-‘কি করেছো! এতো রাতে এমন কালো পোশাক পড়ে আজরাইলের মতো এসে বলছো কি করেছি!
রাইফা হতভম্ব হলো।সে বললো
-‘মামির শরীর খারাপ লাগছিল।তোর সামনে দিয়েই না তাকে নিয়ে পাশের বাড়ি গেলাম প্রেশার মাপতে!
আয়ান জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁদছে।রাইফা এগোতে নিলে আয়ান আবার চেঁচিয়ে উঠলো
-‘একদম কাছে আসবে না…
রাইফা ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।
-‘মামির প্রেশার হাই।তোকে না দেখতে পেয়ে আরো হাই হয়ে যাচ্ছে বোধহয়।দ্রুত নিচে আয়…আমার সাথেই আয়…
রাইফা আবার এগোতে নিলে আয়ান আবার কাঁদতে কাঁদতে খেকিয়ে উঠলো

-‘এই আবার আসছো কেন? মারবা আমাকে তাই না?
রাইফা বিরক্ত হয়ে একাই চলে গেল।আয়ান স্বস্থির শ্বাস ছাড়লো।বুক এখনো ধুকপুক ধুকপুক করছে।আয়ান উঠতে নিলে বুঝলো জায়গাটা ভেজা।কি একটা মান-সম্মান প্লাস্টিক হওয়ার মতো অবস্থা! আয়ান খানিকটা ইতস্ত নিয়ে উঠে।বালতি ভরে পানি নিয়ে এসে ঢেলে দিল জায়গাটাতে।আত্মাটা আবার লাফিয়ে উঠলো যখন দেখলো রাইফা দরজার কোণে দাঁড়িয়ে।রাইফার মুখ থমথমে।সে শুধু বললো
-‘কাউকে বলবো না এই কথা।নিচে আয় আপাতত…
কথাটা বলে সে চলে গেল সেখান থেকে।আয়ান অনুভূতিহীন।চাঁদকে দুঃখের কথা শোনাতে এসে আরেকটা দুঃখ কপালে জুটে যাবে তা কি জানতো সে! ধপ করে বসে পড়লো মেঝেতে।ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো।

-‘ঘুমিয়ে পড়।আমি আছি…
রোদেলা বললো
-‘সমস্যা নেই আপনি যান।ঘুমান গিয়ে।
রাহুল কি ভেবে হঠাৎ বললো
-‘তুমি আমাকে একটা নিকনেম কেন দিচ্ছো না বেবিগার্ল?
রোদেলা ভড়কে তাকায়।শুকনো হেসে বলে
-‘কি নিকনেম দিব?
-‘তুমি বলো…
রোদেলা একটু ভেবে লাজুক হাসলো।রাহুল কপাল কুচকে হেসে বললো
-‘বলো..
রোদেলা মিনমিন করে বললো
-‘জান…

রাহুল শব্দ করে হেসে ফেললো।রোদেলা লজ্জায় গুটিয়ে গেল।রাহুল ওর গালে হাত রেখে বললো
-‘খুব পছন্দ হয়েছে আমার।আচ্ছা এখন ঘুমাও তাহলে।গুড নাইট বেবিগার্ল।
রাহুল রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।রাহুল যেতেই রোদেলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
-‘জা”’নো”য়া”র বলতে কষ্ট হয় রে হতোচ্ছারা তাই জান বলছি।সর্ট কাটে জান ডাকছি।শা’লা বিদেশি পাঠা!
রাহুল হঠাৎ কি মনে করে আবার ফিরে আসে।রোদেলা ভড়কে গেল।রাগীভাবটা হাওয়ায় ভাসিয়ে মুখে হাসি ফুটালো।রাহুল ফিরে এসে বলে উঠলো

-‘ভালোবাসি বেবিডল।
রোদেলা মনে মনে বললো–“তুই আস্ত এক ড্রেনের নল।” লাজুক হেসে বাহিরে বললো
-‘আপনিও না!
রাহুল বললো
-‘ আমাকে বলো।
-‘বিয়ের পর।
রাহুল ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো
-‘এজ ইউর উইশ।উমম…ক্যান আই কিস ইউর ফরহেড?
রোদেলা এবার লাজুক হেসে বললো
-‘মরার পর..
ভড়কে গেল রাহুল।
-‘হুয়াট!!
-‘বিয়ের পর…

রোদেলা ইনোসেন্টভাবে বললো যেন এটাই বলেছিল একটু আগে।রাহুল ভাবলো হয়তো সে-ই ভুল শুনেছে।মুচকি হেসে চলে গেল।রোদেলা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।আস্ত এক আপদ জুটছে কপালে।তবে রাহুল তাকে সত্যিই ভালোবাসে এটা সে বুঝলো।ভালোবেসে মরেই যাক তাতে তার কি? কুহুও তো তাকে সত্যিই ভালোবেসেছিল।মেয়েটার হাহাকার সে নিজ চোখে দেখেছে।রেনানের খারাপ রূপটা মানতে মেয়েটার কত কষ্ট হয়েছে সে নিজে দেখেছে সব।তাছাড়া সেদিন যদি রাহুল কুহুকে না ঠকাতো তাহলে আহনাফের সাথে কুহুর পরিচয়টা আজ অন্যভাবে হতো।রোদেলা তার ভালোবাসা হারাতো না।সব দোষ রাহুলের।হারে হারে এবার সে রাহুলকে বুঝাবে ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা।রোদেলা একটু খারাপ হোক এবার।ভালো থেকে কি’ই বা পেল? প্রতিশোধের খেলায় সেও নামুক এবার।
রোদেলা শুয়ে পড়লো।ক্লান্ত চোখজোড়া আবেশে বুজে আসতে চাইলো।ঘুম ছাড়া এখন শান্তি মেলে না তার।চারদিক থেকে কষ্ট যেন রোদেলাকে গিলে খাচ্ছে।এর মাঝে নতুন জুটেছে ফোনের সেই আগন্তুক।এতদিন জানতো ঐটাও রাহুল।এখন দেখছে অন্যকেউ।সে যেই হোক তার প্ল্যানে বাঁধা না দিলেই হলো।ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল মেয়েটা।

আহনাফ কুহুকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে দিল।এহ! কি সহজ-সরল লাগছে দেখতে! আর কাজ-কর্মগুলো! আহনাফের পুরো গা কাঁটা দিয়ে উঠলো।কিরকম হারে বজ্জাদ বউ জুটছে কপালে! ভাগ্যিস ছোট প্যান্টটা ছিল তার।তারপরেও এমন অবস্থায় একটা মেয়ের সামনে…আহনাফের একটু হলেও লজ্জা লেগেছে।আহনাফ কুহুর ভেজা শাড়িটাতে চোখ বুলালো।এই শাড়ি কে চেইঞ্জ করবে এখন? মহারাণী তো বেহুশ।এভাবে ঘুমালেও তো ঠাণ্ডা লেগে যাবে।আহনাফ কুহুর বাহুতে মৃদু ধাক্কা মেরে ডাকতে লাগলো
-‘তিলোত্তমা…ড্রেসটা চেইঞ্জ করে নাও,..তিলোত্তমা?
আহনাফ বুঝলো এভাবে কাজ হবে না।সে টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি ছেটাতে লাগলো।কুহু চোখ খিঁচে ফেললো।কিছুক্ষণ বাদে পিটপিট করে তাকালো।নেশা পুরোপুরি কাটেনি তার।আহনাফের পরণে শুধু ভেজা প্যান্টটা।উদাম গায়ে আহনাফকে এত কাছে দেখে সে হেসে আহনাফের গলা জড়িয়ে টান মেরে বসে।আহনাফ পড়ে যায় তার উপরে।আল্লাহ! আর কত কন্ট্রোল করবে সে! কুহু ঠোঁট নেড়ে কিছু বলতে থাকে।আহনাফ তা শোনার জন্য ওর মুখের কাছে কান নিল।

-‘ভালোবাসি..আহনাফ..
আহনাফ মুচকি হাসলো।তবে সেই হাসি তার দীর্ঘস্থায়ী হলো না।কুহু আহনাফের কানকে মুরগির ঠ্যাং মনে করেছে বোধহয়।সে দিল এক কামড়।আহনাফ জোরে আর্তনাদ করে উঠলো।
-‘তিলোত্তমার বাচ্চাআআআ…ছাড় আমাকে…দজ্জাল বউ ছাড় আমাকে…ও আল্লাহ গোওও…
কুহুর থেকে বহু কষ্টে নিজের কান ছাড়ালো সে।কান ধরে আর্তনাদ করতে লাগলো সে
-‘ওমা…আল্লাহ গো..তিলোত্তমার বাচ্চা..নেহাত ভালোবাসি তাই কিছু বলতে পারছি না।তানাহলে তুলে একটা আছাড় মারতাম।আল্লাহ গো…
কুহু খিলখিল করে হেসে উঠে।
-‘কি মজা মুরগির লেগ পিসটা! জীবনে খাইনি এমন।
আহনাফ বোকা বনে গেল।তার কানকে মুরগির লেগ পিস বানিয়ে দিল! আহনাফ কুহুর মাথায় আস্তে এক গাট্টা মেরে বললো

-‘শালি পাগল..মাথা গেছে পুরো।
কুহু আহনাফের এহেন কাজে ঠোঁট উল্টে কান্না শুরু করে দিল।হকচকিত হয়ে গেল আহনাফ।নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হলো সে।ঝুঁকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
-‘সোনা বউ আমার…কাঁদে না…সরি..সরি..কাঁদে না..আমার বউ না ভালো..
কুহু আহনাফের কথার মাঝেই ঘটিয়ে ফেললো ভয়ংকর এক ঘটনা।ভালো বউয়ের প্রমাণ দিল বোধহয়। আহনাফের চক্ষু চড়কগাছ।হৃদপিণ্ডটা এতো জোরে লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে বাহিরে এসে পড়বে।কুহু আহনাফের ওষ্ঠযুগল নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে।হাত দিয়ে বিছানার চাদর খাঁমচে ধরলো আহনাফ। আহনাফের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো বুঝি কুহুর এমন কাজে! আহনাফ পারলো না আর নিজেকে সামলাতে।চুম্বন দীর্ঘ করলো সে। কুহু ছটফট করতে লাগলো।তবে আহনাফ এবার ছাড়ছে না। বাধ্য হয়ে কুহু জোরে এক ধাক্কা মারলো তাকে।আহনাফ ছিটকে দূরে সরে এলো।
কুহু গড়গড়িয়ে ব/মি করে দিল।আহনাফ ভড়কে গেল। কুহু ব/মির মাঝেই বললো
-‘কি খেয়েছিস বাঙ্গির পোলা? গন্ধ,..সিগারেট খেয়েছেন আবার?

কুহু আবার ব/মি করে দিল।আহনাফ দূরে সরে এলো।কুহু জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।নেশা এবার কাটলো বোধহয়! আহনাফের মনে পড়লো একটু আগে বাথরুমের ঘটনার পর একটা সিগারেট খেয়েছিল।লজ্জাটা ভুলতে চেয়েছিল মূলত।আবার নিজের উপর রাগ হলো তার।এখন কি হবে? কুহুর দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সে।তাকে উসকিয়ে দিয়ে এখন ধমকাচ্ছে সে।আহনাফ ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে ওকে কোলে তুলে নিল।বাথটাবে ছুঁড়ে মারলো।কুহু পিটপিট করে তাকালো।আহনাফ উঠে এলো বাথটাবে।কুহু আহনাফকে তার দিকে আসতে দেখে কুকড়ে গেল।মানসপটে কিছু ভেসে উঠতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।

-‘আবার কি হলো?
কুহু কিছু বিরবির করছে।আহনাফ কপাল কুচকায়।
-‘রেনান..ছেড়ে দাও আমাকে…আ’আমার এত বড় সর্বনাশ করো না…ছেড়ে দাও.,.
আহনাফ থমকে দাঁড়ায়।এরপর কুহুর পাশটায় বসে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
-‘রিল্যাক্স.. রেনান নই আহনাফ আমি।তোমার অনুমতি ব্যতীত তোমাকে আমি কিছু করবো না।
কুহু ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।আহনাফ ওর কপালে চুমু দিয়ে বললো

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৩

-‘এখন তো আমার কান্না করা উচিত।বউ আমার আস্ত এক তারছিড়া।এই রোমান্টিক মুডে গিয়ে উসকাচ্ছে আবার এই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে।অথচ মাঝপথে আমার ইজ্জত ঠিক’ই মেরে দিয়েছো।আসো এক সাথে কাঁদি…ও আল্লাহ গোওও…ও আব্বাগোওও..!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here