প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৫

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৫
অনন্যা

সূর্য মামা উঠার আগেই আজ আহনাফ উঠে পড়েছে।সামনে তার এক্সাম।সে তো ভুলেই বসেছিল যে সে একজন স্টুডেন্ট।মনোযোগ তার পড়ার টেবিলে।ঘণ্টাখানেক পড়ার পর উঠে দাঁড়ালো সে।ঘড়ির কাঁটা আটের ঘরে।আহনাফের ঘুম পাচ্ছে।সে কিচেনে গেল কফি বানাতে।যাওয়ার আগে কুহুর রুমে একবার উঁকি দিয়ে গেল।কি খেলটাই না দেখালো কাল! আহনাফ নিজ ঠোঁট স্পর্শ করতেই মুচকি হেসে ফেলে।কিচেনে যাওয়ার সময় ডাইনিং টেবিলে নজর গেল তার।কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল সে।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার কুহুর রুমের দিকে তাকালো।এরপর জুসের বোতলটা হাতে নিয়ে বললো

-‘এটা তো জুস ছিল…ওয়াইনের বোতল তো পুরো ভরা।তারমানে….
আহনাফের ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল।কিন্তু তিলোত্তমা এমনটা কেন করলো? যদি কাছে আসার’ই হয় তবে এমন করেই কেন? আর শেষে ওমন ভয়ে গুটিয়েই বা গেল কেন?আহনাফ ভাবতে ভাবতেই কিচেনে গেল।তবে এখন ভেবেই হাসি পাচ্ছে যে তিলোত্তমা নেশার ঘোরে কিছু বলেনি।সেও আহনাফকে চাইছে।তবে অভিনয়টা এত নিঁখুত কিভাবে করলো? আহনাফও ধরতে পারলো না! ইস! কাল সিগারেটটা না খেলে আজ সকালটা অন্যরকম হতো রে।আহনাফের নিজের উপর রাগ হলো।হঠাৎ বেল বেজে উঠলো।আহনাফ কপাল কুচকায়।এই সকালে কে এলো?সে দরজার দিকে পা বাড়ায়।ছোট্ট ছিদ্রটা দিয়ে দেখতেই ভড়কালো।দরজা খুললো সে।রাফি রাগি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ বললো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘কি হয়েছে?হঠাৎ…
রাফির রাগি ভাবটা উধাও হয়ে গেল হঠাৎ।সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।আহনাফ মোটেও চমকালো না।এই ছেলে কান্না ছাড়া আর পারে কি?ওহ..বিস্কুট খেতে পারে।আহনাফ বললো
-‘মেয়েদের মতো কান্না করবি না আমার সামনে।আগেও বলেছি…
-‘ভাই আমা..রো….বি ..ঠি…হ..তু..ক..
আহনাফ ধমকে উঠলো।
-‘চুপপপ …তুই নিজে বুঝছিস যে তুই কি বলছিস?কান্না বন্ধ না করলে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিব।
রাফি হেচকি তুলতে তুলতে আবার এক’ইভাবে বললো

-‘আ…মমম..রো..
আহনাফ এবার নিজের পায়ের জুতোটা খুলতে নিলে রাফি বলে উঠলো
-‘রোদের বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুমি কিছু বললে না কেন?
আহনাফ সোজা হলো।এরপর কিছু না বলেই ভেতরে চলে যায়।রাফিও দরজা লাগিয়ে পেছনে ছুটলো।
-‘ভাই! ও ভাই…আমার রোদ…
আহনাফ দুই কাপ কফি বানিয়ে সোফায় এসে বসলো।একটা রাফির দিকে বাড়িয়ে দিল।রাফি নিয়ে টেবিলে রেখে বললো

-‘ও ভাই..আমার রো…
আহনাফ বলে উঠলো
-‘একটু স্ট্রং হ রাফি।এভাবে মেয়েদের মতো করছিস কেন?
রাফি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো
-‘তুমি বুঝবে কি করে আমার কষ্ট? তুমি তো বিয়ে করে শান্তিতেই আছো।
আহনাফ মনে মনে হাসলো।সে নাকি শান্তিতে আছে! ওরে রাফি গতকাল তোর ভাইয়ের ইজ্জত মেরে দিছে তোর ভাবি।এই মধুর কথাটা কি আর বলা যায়! আহনাফ গলা খাকারি দিয়ে বললো
-‘ বিয়ে ঐদিন হচ্ছেই।তবে কে যে কাকে করছে সেটাই দেখার বিষয়।
-‘মানে?
আহনাফ কিছু বললো না।রাফি বললো

-‘ও ভাই! আমি কিন্তু রোদকে তুলে নিয়ে আসবো বলে দিলাম।আমার এসব সহ্য হচ্ছে না আর।
আহনাফ হেসে ফেললো হঠাৎ।হো হো করে হাসতে লাগলো যেন জোকস্ শুনেছে কোনো।
-‘তুই কিডন্যাপ করবি রোদকে!! হাহা হাহা..ও আল্লাহ!
রাফি বললো
-‘হাসার কি আছে?
-‘তুই এই কাজ করতে পারলে তো হয়েছিল’ই।বাদ দে…
রাফির মানে লাগলো কথাটা।সে পারবে না? রাফির জেদ হলো এবার।আহনাফ কিছু বলতে নিলে রাফি হাত উঁচু করে বললো

-‘থেমে যাও ভাই।
রাফি তিবার ঘুরলো আহনাফের দিকে।এ যেন বাংলা সিরিয়াল চলছে।আহনাফ কপাল কুচকায়।রাফি বললো
-‘অনেক হয়েছে আর নয়।এবার রাফি তার আসল রূপ দেখাবে।
আহনাফ কফিতে চুমুক বললো
-‘বাব্বাহ!.. আচ্ছা তুই যদি এমনটা পারিস তাহলে আমি আহনাফ তোর বিয়েতে লুঙ্গি ড্যান্স দিব।যা প্রমিস।
রাফি অবাক হয়ে বললো
-‘তুমি লুঙ্গি ড্যান্স দিবে! সিরিয়াসলি?
-‘হ্যাঁ..
রাফি উঠে দাঁড়ালো।এরপর বললো

-‘আর আমি রাফি যদি না পারি তাহলে টিকটক করে তিলে তিলে নিজেকে শেষ করে দিব।হাহ্! টাটা ভাই…
রাফি ভীষণ ভাব নিয়ে চলে যেতে নিল।আহনাফ পেছন থেকে বলে উঠলো
-‘টিকটক আইডি কি আমি খুলে দিব?
রাফি দাঁড়িয়ে পড়লো।এরপর বললো
-‘লুঙ্গি কি আমি কিনে পাঠাবো ভাই?
আহনাফ রাফির কনফিডেন্স দেখে বাহবা দিল।তবে মুখে বললো
-‘সময় কথা বলবে..
রাফি চলে গেল।আহনাফ নিঃশব্দে হাসলো।

শাহরিয়ার কুঞ্জে হৈচৈ লেগে গেছে।শাহরিয়ার বংশের দুটো ছেলের বিয়ে একদিনে…এটা কি কম কথা! আগে থেকেই সবাই প্ল্যানিং শুরু করে দিয়েছে।রোদেলা ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে নেমে এসেছিল।কিন্তু সবার এতো হৈচৈ দেখে আর বের হয়নি এখনো।কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করবে সেই লিস্ট করা হচ্ছে।এ বলছে তার নাম লিখেছো..সে বলছে এর নাম লেখো ভালো উপহার আনবে..আবার একজন বলছে..একে দাওয়াত দিলে কাচের বাটি দিবে একে দাওয়াত দিও না।মূলত লিস্ট করছিল জেরিন বেগম আর আনিসা বেগম।অখিল শাহরিয়ার আর সাজ্জাদ শাহরিয়ার শুধু দেখে যাচ্ছে এদের।
রাহুল বললো

-‘সবাইকে জানিয়েই বিয়ে করবো।কিপটামো না করে সবাইকে দাওয়াত দাও।বেইবি তুমি কি ভার্সিটি যাচ্ছো?
সবার সামনে বেইবি বলায় রোদেলা একটু ভড়কালো।জেরিন বেগম আর আনিসা বেগম মিটিমিটি হাসলেন।রোদেলা জবাব বললো
-‘হ্যাঁ..
-‘আসো আমি পৌঁছে দিয়ে আসি।
-‘নাহ, লাগবে না।আপনি তো মাত্র ঘুম থেকে উঠলেন বোধহয়।আমাকে ড্রাইভার আংকেল পৌঁছে দিবে।
রাহুলের ভালো লাগলো কথাটা।মেয়েটা খেয়াল করেছে যে সে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।ভালো লাগা কাজ করলো তার মনে।সে মুচকি হেসে বললো

-‘আচ্ছা যাও তাহলে…আমি নিয়ে আসবো বরং।
রোদেলা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো।বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল।ভেতরটা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।রোদেলা ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে গাড়িতে বসলো।জানালার কাচ খুলে দিল সে।একটু প্রাকৃতিক হাওয়া প্রয়োজন।রোদেলা মুখটা বাহিরে নিয়ে প্রাণ ভরে প্রকৃতির সুবাস নিতে চাইলো।বিধিধাম! পাশ দিয়ে গরুর চামড়া বহনকারী একটা গাড়ি যাচ্ছিল।বিশ্রি গন্ধ একটা।রোদেলা প্রাণ ভরে সেই গন্ধ’ই নিল। গন্ধে ভেতরটা উল্টে আসতে চাইলো তার।ওয়াক করে উঠলো।চোখ-মুখ খিঁচে মাথা ভেতরে আনে।দ্রুত জানালার কাচ আটকায়।
-‘শালার জিন্দেগি একটা আমার! ওয়াক! জন্মের মতো সুবাস নিয়ে নিয়েছি প্রকৃতির।
রোদেলা গা এলিয়ে দিল সিটে।গন্ধটা এখনো নাকে লাগছে তার।উফ! কি জ্বালা! রোদেলা পানির বোতল বের করলো ব্যাগ থেকে।মুখে দিতে যাবে ঠিক সেই সময় গাড়ি সজোরে ব্রেক কষে।রোদেলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।পানিতে জামা ভিজে গেল তার।কপালে আঘাত পেয়েছে।সে বলে উঠলো

-‘চাচা এটা কি করলেন?
-‘হঠাৎ গাড়ি এসে পড়লো একটা।আপনি ঠিক আছেন?
রোদেলা বললো
-‘কোন বা/লে আসলো সামনে? উড়ায় দিবেন না একদম! আমি তো ছিলাম’ই।শালা মরলে বুঝতো।
হঠাৎ সামনের গাড়ি থেকে হাফ প্যান্ট আর টি-শার্ট পড়া রাফি নেমে এলো।হাতে বিস্কুটের প্যাকেট।রোদেলার মাথা মুহূর্তেই গরম হয়ে গেল।রাফি গাড়ির কাচে নক করলো।রোদেলা বিরক্ত নিয়ে তা খুললো।এরপর বললো
-‘কি চাই?
রাফি বিস্কুট মুখে দিয়ে হেসে বললো

-‘তোমাকে..
-‘হুয়াট?
রাফি বলে উঠলো
-‘আহনাফ ভাই তোমাকে নিয়ে যেতে বলছে।আজকে নাকি শপিং যাবে তাই।আসো..
রোদেলা কপাল কুচকালো।কেউ তো কিছু বললো না তাকে এই বিষয়।আর আহনাফ ভাই আর মানুষ পেল না! এই বিস্কুটখোর মদনাকেই পেল!রোদেলা বললো
-‘আমার গাড়ি আছে।আমি যেতে পারবো।
রাফি সাথে সাথে বাঁধ সেধে বললো
-‘না, না..আমার সাথেই যেতে হবে।ভাইয়ের নির্দেশ।তানাহলে তোমার মতো চোরনিকে কে গাড়িতে নেয় বলো!
রোদেলা ক্ষেপে গেল কথাটা শুনে।সে কিছু বলতে মুখ খুলতে নিলেই রাফি তার মুখে বিস্কুট পুড়ে দেয়।এরপর গাড়ির দরজা খুলে বললো

-‘ঝগড়া করার মুডে নেই।জলদি আসো।আমার আবার অনেক কাজ আছে।তোমার মতো চোরনিকে এই রাফি নিজে ড্রাইভ করে পৌঁছে দিবে সেটার জন্য তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
রোদেলা ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো শুধু।ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই গাড়ি থেকে নামলো।ড্রাইভারকে বললো
-‘চাচা আপনি বাসায় চলে যান।
ড্রাইভার সম্মতি জানিয়ে গাড়ি ঘোরায়।রাফি বিশ্ব জয়ের হাসি দিল। রোদেলা গিয়ে গাড়ির ব্যাক সিটে বসলো।রাফি তা দেখে বললো

-‘এক্সকিউজ মি! আমি ড্রাইভার নই আপনার।সামনে এসে বসো।
-‘ইহহহ! শখ কত! এই রোদেলা যার তার পাশে বসে না।মাইন্ড ইট।
রাফি ওকে ব্যাঙ্গ করলো।রোদেলা আবার ক্ষেপে গেল।রাফি বললো
-‘হয় সামনে আসো নয়তো..
-‘নয়তো…
রাফি দুই কাঁধ উঁচু করে বলে উঠলো

-‘নয়তো আমিও গাড়ি স্টার্ট করবো না।আর ভাইকে বলবো তুমি রাজি হওনি যেতে।ভাইয়ের রাগ তো জানোই।
রোদেলা ভারি বিরক্ত হলো।মনে মনে রাফির গোষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে সামনে এসে বসলো।রাফিও বসলো।রাফি ভাবছে বিস্কুটের প্যাকেটটা এখনো আস্ত আছে।ভাবা যা…কথাটাও সম্পূর্ণ করতে পারলো না সে।রোদেলা হঠাৎ এক হাঁচি দিল আর সেই হাঁচির শব্দে রাফি কেঁপে উঠে বিস্কুটের প্যাকেট হাওয়ায় উড়িয়ে দিল।আত্মাটা একটা লাফ দিয়ে উঠলো তার।মাইয়া মানুষও এত জোরে হাঁচি দিতে পারে এটা রাফির জানা ছিল না।রোদেলা রাফির দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।রাফি এখনো স্তব্ধ।হুশ ফিরতেই যে’ই না ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে যাবে ওমনি রোদেলা সেই কাজটা করে দিল।রোদেলা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে মিকা কান্না করে রাফির মতো বলতে লাগলো

-‘অ্যা..আমার বিস্কুট…এটা তুমি কি করলে চোরনি? আমার বিস্কুটের সাথে কিসের শত্রুতা তোমার?
রাফি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।রোদ তাকে নকল করলো? রোদেলা বলে উঠলো
-‘এটাই বলতেন না?
কিছুক্ষণ নিরব থেকে দুজনেই হেসে উঠলো।এই প্রথম বোধহয় ঘটলো এমন।গাড়িটা তাদের হাসির শব্দে মুখরিত হলো।রাফি স্টার্ট দিল গাড়ি।রোদেলা হঠাৎ’ই হাসি থামিয়ে নিজেকে গম্ভীর করলো।এটা কি করলো সে? এই মদনার সাথে হাসলো কেন সে?উফ! এদিকে রাফি হেসেই চলেছে।

সূর্যের কিরণ আজকে ঝলসে দিচ্ছে যেন সব।আনোয়ারা বেগম কাপড় ধুয়ে ছাদে দিয়ে এসে মাত্র সোফাতে বসেছিলেন।অমনি বেল বেজে উঠলো।উনি বিরক্ত নিয়ে দরজা খুললেন।দরজার অপর পাশের মুখটা দেখতেই সেই বিরক্তি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
-‘আরেহ! নাতাশা! এসো এসো..
নাতাশা হেসে সালাম দিল তাকে।আনোয়ারা বেগম জবাব দিয়ে ভেতরে নিয়ে এলেন ওকে।নাতাশা আজকে খয়েরি রঙের একটা শাড়ি পড়েছে পড়েছে।ওকে একবার নিচ থেকে উপর পরখ করতেই আনোয়ারা বেগম হা হয়ে গেলেন। দেখতে ভারি মিষ্টি লাগছে তাকে।আনোয়ারা বেগম মনটা বলে উঠলো
-‘ইশ! এমন একটা মেয়ে যদি আমার ছেলের বউ হতো!
নাতাশা আনোয়ারাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো

-‘আন্টি.. আয়ান কোথায়?
আনোয়ারা বেগম হুশে ফিরলেন।
-‘ঐ হতোচ্ছারা তো ঘুমাচ্ছে।ঘুমায় রাত করে আর উঠে দেরি করে।একটা বিয়ে দিলে যদি ঠিক হয় এখন।
বিয়ের কথা শুনে নাতাশা হেসে বললো
-‘পাত্রী দেখবো নাকি?
আনোয়ারা বেগম আবার তাকালেন ওর দিকে।নাতাশা একটু ভড়কালো।আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘মা তুমি কি বিবাহিত?
-‘আরে না আন্টি।
-‘তুমি ছেলেটাকে ঠিক করতে পারবে না?ছেলে কিন্তু খারাপ নয় ও।
নাতাশা মনে মনে বিশ্বজয়ের হাসি দিল।বাহিরে লাজুক হাসলো।আনোয়ারা বেগম তো আগেই বুঝেছিলেন।ওর হাসি আনোয়ারা বেগমকে পজিটিভ সংকেত দিল।ছেলেটার একটা ব্যাবস্থা করতে পারলে তার মরেও শান্তি।হেসে জড়িয়ে ধরলেন নাতাশাকে।

-‘শুনছেন? আপনার জন্য চা নিয়ে এসেছি।
নাতাশা আস্তে করে বললো কথাটা।এরপর ফিক করে হেসে ফেললো।মাথায় শাড়ির আচল দিয়ে বউ সেজেছে সে।ইশ! শ্বাশুড়ি পটে গেছে।ভাবা যায়! নাতাশা নিজের খুশিটাকে একটু সামলে গলা খাকারি দিয়ে আয়ানকে ডাক দিল।
-‘আয়ান?আয়ান শুনছো?
আয়ান উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে।গায়ে একটা পাতলা টি-শার্ট আর শর্ট প্যান্ট।নাতাশা এবার আয়ানের বাহু ধরে ডাকলো।আয়ান ঘুমের মাঝেই বললো
-‘উমম..সুহাসিনী…ঘুমাতে দে।
নাতাশা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।এরপর বললো

-‘ সুহাসিনীর বিয়ে হয়ে গেছে এটা তোমার নাতুসিনী…উঠো এখন..
আয়ান উঠলো না ওভাবেই পড়ে রইলো।নাতাশা কিছু একটা ভাবলো।এরপর আয়ানের কানের সামনে মুখ নিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো আয়ান বলে।আয়ান ধরফরিয়ে উঠে বসলো।আত্মা কেঁপে গেছে তার।কানটাও বোধহয় গেল।ঘুমঘুম চোখে নাতাশার দিকে তাকালো সে।ভেতরটা ধ্বক করে উঠে ছেলেটার।নাতাশা খিলখিল করে হাসছে।শাড়িতে ওকে আজ এই প্রথম দেখলো আয়ান।হা হয়ে গেল ছেলেটা।এদিকে নাতাশা হেসেই চলেছে।আয়ানকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার হাসি থেমে গেল।লাজুক হাসলো মেয়েটা।বললো

-‘কেমন লাগছে আমাকে?
আয়ান আনমনেই বলে উঠলো
-‘অপরূপা…
নাতাশা অবাক হলো।আশা করেনি এটা সে।ভেবেছিল এড়িয়ে যাবে বোধহয়।নাতাশা হেসে বলে উঠলো
-‘ধন্যবাদ..
আয়ান হুশে ফিরলো।এরপর নিজেকে ঠিকঠাক করে বলে উঠলো
-‘তু’তুমি এখানে কি করছো?
নাতাশা বসলো ওর পাশে।আয়ান একটা বালিস নিয়ে নিজেকে ঢাকার প্রয়াস চালালো।নাতাশা তা দেখে ফিক করে হেসে ফেললো।আয়ান অপ্রস্তুত হলো খানিকটা।নাতাশা বললো
-‘ছেলে মানুষ হয়ে এতো লজ্জা পাও!
আয়ান প্রতুত্তর করে না।নাতাশার চোখ হঠাৎ বিছানার পাশে একটা ছবির উপর গেল।ছবিটা হাতে উঠিয়ে নিল সে।আয়ান ভড়কে গেল।নাতাশা ততক্ষণে দেখে ফেলেছে ছবিটা।কুহুর হাস্যজ্জ্বল একটা ছবি।আয়ান খপ করে সেটা কেড়ে নিল।নাতাশা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।

-‘এসব আর কতদিন?
-‘যতদিন বেঁচে থাকবো।
নাতাশা বললো
-‘কুহু আহনাফের সাথে সুখে সংসার করছে।আর তুমি এভাবে কেঁদেকেটে ভাসাচ্ছো! তোমার কি উচিত না এক’ই কাজ করে ওদের মনে জ্বালা ধরিয়ে দেওয়া?
আয়ান কপাল কুচকে বললো
-‘মানে?

-‘তুমিও সেইম কাজ করো।বিয়ে না করো গার্লফ্রেন্ড বানাও।ওদের সামনে তাকে নিয়ে ঘুরো।কুহুকে বুঝিয়ে দাও যে আয়ান সিদ্দিকি তার জন্য মরে যাচ্ছে না।আয়ান সিদ্দিকির তাকে ছাড়াই চলে।বুঝিয়ে দাও যে আয়ান সিদ্দিকিকে না বেছে নিয়ে সে কত বড় ভুল করেছে।গার্লফ্রেন্ড অথবা বউ যে’ই হোক তাকে কুহুর সামনে নিয়ে গিয়ে কেয়ার করো..ভালোবাসো..জ্বালা ধরিয়ে দাও।জাগো আয়ান..জাগো..জেগে উঠো আয়ান সিদ্দিকি..জাগোওওওওও…
আয়ান হঠাৎ জোরে গর্জন করে উঠলো।নাতাশা ভয়ে খাট থেকেই পড়ে গেল।পাশের বাড়ির ছাদ থেকে দুটো কাক কা কা করতে করতে উড়ে গেল ভয়ে।আয়ানের চোখে আগুনের আভা।সে বলে উঠলো
-‘তুমি ঠিক বলেছো নাতাশা।আয়ান সিদ্দিকি বুঝিয়ে দিবে তাকে যে সে কত বড় ভুল করেছে আয়ানকে বেছে না নিয়ে।তুমি সঠিক সময় সঠিক কথা বলেছো নাতাশা।তুমিই আমার সত্যিকারের বন্ধু।নাতাশা…নাতাশা!
নাতাশা হাত উঁচু করে নিচ থেকে বললো

-‘আছি ..আছি..
আয়ান ভড়কে গেল।ওর দিকে তাকিয়ে বললো
-‘তুমি নিচে কি করছো?
নাতাশা মেকি হেসে বললো
-‘কিছু না.. কিছু না..
রান্নাঘর থেকে আনোয়ারা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন
-‘এমন করে চেঁচাচ্ছিস কেন রে আজাতের বংশধর? খুন্তি নিয়ে আসবো নাকি?
আয়ান খুকখুক করে কেঁশে উঠলো।কিছুদিন আগেও বাড়িতে অল্পকিছু হলেও সম্মান ছিল তার।বাড়িতে বেশিদিন আছে বলে সেটাও আর তার মা এখন তাকে দেয় না।আয়ান সেসব ভাবলো না আর।সে বলে উঠলো
-‘কিন্তু মেয়ে পাবো কোথায় আমি, নাতাশা?
নাতাশা কোমড় ধরে উঠে বসলো।মনে মনে বললো

-‘কানা নাকি বে?চোখের সামনে এত সুন্দর মেয়ে দেখেও জিজ্ঞাসা করছে মেয়ে কোথায় পাবে?
নাতাশা একটু ভাবুক হওয়ার ভান করলো।এরপর বললো
-‘এমন একজন যাকে তুমি খুব বিশ্বাস করো।তাহলে সুবিধা হবে।
আয়ান একটু ভেবে বললো
-‘আমার তো তুমি ছাড়া মেয়ে বন্ধু নেই।..উম..নাতাশা?
নাতাশা বুঝলো আয়ান কি বলবে।মনে মনে বাঁকা হেসে নিজেকে বাহবা দিল সে।মুখে বললো
-‘বলো।
নাতাশার ভাবনায় গোবর ঢেলে আয়ান বললো
-‘তোমার পরিচিত কেউ নেই?
নাতাশা বোকা নয়নে তাকালো।আয়ান বললো
-‘নেই?
নাতাশা রেগে চেঁচিয়ে বললো
-‘না নেই।

নাতাশা কথাটা বলেই উঠে চলে যেতে নিল।নাতাশাকে কি এর চোখে পড়ে না? আয়ান এদিকে বুঝলো না নাতাশার রাগের কারণ।কি একটা ভেবে সে নাতাশা বের হওয়ার আগেই বলে উঠলো
-‘তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হবে? মিথ্যা মিথ্যা..
নাতাশার পা থেমে গেল।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।পেছনে ঘুরে বললো
-‘এত করে বলছো বিধায় রাজি হলাম।তানাহলে আমার এসবে একদম ইন্টারেস্ট নেই।
নাতাশা বলেই চলে গেল।আয়ান হাবার মতো তাকিয়ে রইলো। সে এতবার কই বললো? সে যাইহোক এবার সে বুঝাবে কুহুকে যে সে কত বড় ভুল করেছে।আয়ান পৈশাচিক হাসি দেয়।

ঘড়ির কাঁটা দশের ঘরে পৌঁছাতেই কুহুর ঘুম ভাঙলো।পিটপিট করে তাকাতেই চমকে উঠলো।আহনাফ একদম তার মুখের সামনে তার দিকেই তাকিয়ে।কুহু কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
-‘ক’কি দ’দেখছেন?
আহনাফের ছোট্ট জবাব–
-‘তোমাকে।

কুহুর হঠাৎ কাল রাতে কথাগুলো মাথায় আসতেই ভয়েরা ঘিরে ধরলো।কি নাটক’ই করলো সে কাল! কিন্তু আহনাফ তাও তাকে কাছে টেনে নেয়নি।শেষে যদিও কুহুর নিজের’ই অতীতের কথা মনে পড়ে বাজে হাল হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু আহনাফ তো চাইলেই পারতো সেসব অবজ্ঞা করে জোর করতে।কারণ কুহু যেভাবে উসকিয়ে দিয়েছিল তাকে তাতে…ছেলেটা সত্যিই ভালো।কুহুর মনে আর সন্দেহ নেই।রেনান ভুলভাল বুঝিয়েছিল তাকে গতকাল। কিন্তু ভয়টা হচ্ছে আহনাফ কি বুঝে গেল? আহনাফ হঠাৎ ওর দিকে আরো ঝুঁকলো।তার নিশ্বাসও কাউন্ট করা যাবে এত নিকটে সে।কুহু একটা শুকনো ঢোক গিললো।আহনাফ তার সিগারেটে পোড়া ঠোঁট নেড়ে বললো
-‘গতকাল সিডিউস করে পরে ওভাবে দূরে সরিয়ে দিলে! দ্যাটস্ নট ফেয়ার, তিলোত্তমা।

কুহুর ভেতরটা কেঁপে উঠলো।সে কিছু বলতে নিলে আহনাফ তার ঠোঁটে আঙুল স্পর্শ করে বললো
-‘শশশ! কোনো কথা নয়।নরমাল একটা জুস খেয়েই আপনার নেশা হয়ে গেল, ম্যাডাম?এত নাটক কেন করলেন?ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে?তবে এখন বলুন তো..আমি কি পাস করেছি এই পরীক্ষায়?
আহনাফের গরম শ্বাস আছড়ে পড়ছে তার মুখের উপর।কুহু কিছু বলে না।আহনাফ আঙুল সরিয়ে নিয়েছে।তবে কুহুর উত্তর না পেয়ে বললো

-‘আই থিংক.. আই উইন।রাইট?
কুহু ঠোঁট কামড়ে উপর নিচ মাথা নাড়ে। আহনাফের ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল তা দেখে।
-‘এখন তাহলে আমার প্রাইজটা?
কুহু কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো
-‘আ’আমি আসলে ও’ওভাবে কিছু করতে চাইনি ক’কাল।আ’আসলে কাল…
আহনাফ তার কথা সম্পূর্ণ হতে দেয় না।বাঁধা দিতে চায় তার ওষ্ঠের দ্বারা।কুহু ভড়কায়।পুরো কথাটা শোনা দরকার তার।কুহু ডানদিকে ঘুরে গেল তাই।আহনাফের ওষ্ঠ তার গাল স্পর্শ করলো।আহনাফ বিরক্তিতে ‘চ’ সূচক শব্দ করে।কুহু বললো

-‘পুরো কথাটা শোনেন আগে।আমি কালকে সব রেনানের কথাতে ভুল বুঝে করেছি।
আহনাফের রাগ উঠে গেল এমন সময় রেনান নামক আপদটার কথা বলাতে।কুহু বলে উঠলো
-‘সে আমাকে গতকাল উল্টোপাল্টা বলেছে যে আপনি আমাকে শুধু ভোগ করতে বিয়ে করেছেন।আপনি…
আহনাফ আচমকা কুহুর হাত ছেড়ে দিল।
-‘ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে ফেললে?
কুহু কিছু বলতে নিলে আহনাফ তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো
-‘ওয়াও! এই বিশ্বাস তোমার আমার উপর? ওহ..তুমি তো আমাকে ভালোই বাসোনি কোনোদিন।বিশ্বাস করবে কেন আবার!
-‘আহনাফ!
আহনাফ উঠে গেল।এরপর বললো

-‘একটু আগে আমার কাজের জন্য আমি খুব দুঃখিত।আপনার যদি মনে হয় আমি আপনাকে এজন্য’ই এখানে রেখে দিয়েছি তাহলে প্লিজ চলে যাবেন।আমি আটকাবো না।
আহনাফ কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলে কুহু তার হাত ধরে ফেললো।
-‘আহনাফ ভুল বুঝছেন আপনি আমাকে।আমি ওকে বিশ্বাস করিনি।আমি তো শুধু…
-‘শুধু? গতকালকের নাটকটা?হাহ্! তুমি একটু হলেও বিশ্বাস করেছো, কুহু।বাদ দাও।
কুহু! আহনাফের মুখে কুহু ডাকটা বড্ড বেমানান লাগলো।বুকটা চিনচিন করে উঠলো।কুহু হঠাৎ’ই ভাঙা স্বরে বলতে লাগলো

-‘আহনাফ ভুল বুঝবেন না প্লিজ।আপনাকে বিশ্বাস না করলে আপনার কাছে নিজেকে সপে দিতাম আমি বলুন!
-‘বললাম তো বাদ দাও।তবে এমনকিছু মনে হলে চলে যেও কুহু। আহনাফ শাহরিয়ার কেমন তা সে মুখে বলে বুঝাতে চায় না।যেদিন চিনবে ঠিক করে সেদিন ফিরে এসো বরং।হাত ছাড়ো কুহু..ছাড়ো..
আহনাফ কুহুর হাত ঝাটকা মেরে সরিয়ে চলে যেতে নেয়।আহনাফ মনে মনে কাউন্ট করছে আর দরজার দিকে এগোচ্ছে।..1..2…3..4..5
কুহু দৌঁড়ে এসে আহনাফকে জাপটে ধরলো পেছন থেকে।কাঁদছে মেয়েটা।
-‘এইভাবে কষ্ট দিবেন না আহনাফ।আমি আপনাকে ছাড়া থাকার কথা যে এখন ভাবতেও পারি না।ভালোবাসি আহনাফ…এভাবে কষ্ট দিবেন না।
আহনাফ হাসছে এদিকে।বহু কষ্টে গম্ভীর স্বরে বললো

-‘রাগ উঠে আছে, কুহু।ছাড়ো..
কুহু কাঁদতে কাঁদতেই বললো
-‘বা/লের কুহু..তোর নানি কুহু…আমি তিলোত্তমা।কোনো কুহু টুহু না।
আহনাফ বললো
-‘ছাড়ো আমাকে।রাগের মাথায় কিছু করে কষ্ট দিতে চাইছি না তোমাকে।
কুহু ছাড়লো তো না বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
-‘না, না ছাড়বো না।
কুহু হঠাৎ ওকে পেছন থেকে ছেড়ে সামনে এসে জড়িয়ে ধরে।আহনাফ ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে।কুহু বলে উঠলো
-‘আমি বিশ্বাস করি আপনাকে।অনেক বিশ্বাস করি।
-‘প্রমাণ?

আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞাসা করলো।কুহুর ভেতর উথালপাতাল করছে।সে কিছু ভেবে না ভেবেই আহনাফকে ছেড়ে পা উঁচু করে ওর ওষ্ঠে চুমু খেতে চায়।আহনাফ লম্বা হওয়ায় পৌঁছাতে পারছে না।থুতনিতে চুমু খেল তাই।আহনাফ বললো
-‘রাগ উঠে আছে…মরতে চেও না…
-‘মেরে ফেলুন…তবুও ছেড়ে যাবেন না।
-‘আর ইউ সিউর?
কুহু কিছু বলে না।আহনাফ তাচ্ছিল্য করে হেসে চলে যেতে নেয়।কুহু কেঁদে বলে উঠলো
-‘ইয়েসস…কিল মি…

আহনাফ থামে।ফিরে তাকায় কুহুর দিকে।ঠোঁটের কোণে খেলে গেল অদ্ভুদ এক হাসি। মনে মনে বললো—-“তু তো ফাঁস গেয়া, বাঙ্গি..!” হঠাৎ’ই আহনাফ এসে কুহুকে কোলে তুলে নিল।আহনাফ বিছানায় শুয়ে দিতেই কুহু নাক টেনে বললো
-‘রিভালবার কি সাথে করেই এনেছিলেন? এখানেই মারবেন?
আহনাফ থেমে গেল।বলদ হয়ে গেল।সে বললো
-‘রিভালবার দিয়ে কি করবো?
-‘আপনি না বললেন যে মারবেন।
আহনাফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে।এরপর হঠাৎ’ই হেসে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো
-‘এই মার সেই মার নয় লা..এই মার আহনাফের স্পেশাল ভালোবাসার মার।
কুহু হতভম্ব হয়ে বললো

-‘অ্যাঁ!!
আহনাফ বললো
-‘প্রাকটিকাললি বোঝাই আসো…
কুহু কিছু বলার আগেই আহনাফ কুহুর ওষ্ঠ আকড়ে ধরে।গভীর থেকে গভীর হচ্ছে সে।কুহু যেন চেয়েও পারলো না বাঁধা দিতে।আহনাফ কুহুর হাত নিজের হাত দ্বারা আকড়ে ধরে।আহনাফ বেসামাল হয়ে যাচ্ছে।দিন দুনিয়া ভুলে বসেছে। প্রিয়তমাকে আজ ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিবে সে।সবটা দিয়ে ভালোবাসবে আজ সে।ওষ্ঠ ছেড়ে গলায় মুখ গুজতে যাবে ওমন সময়..ঠাস করে বেলুন ফাটানোর শব্দ হলো।
-‘আম্মাআ..
-‘সারপ্রাই..

ভয়ে আর্তনাদ করে দূরে সরে আসে আহনাফ।কুহু নিজেও ভয় পেয়েছে।আহনাফ পেছন ঘুরে তাকায়।দেখলো তার কলিজার বন্ধুমহল হাতে বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে।বিয়ে ঠিক হয়েছে এজন্য হয়তো এসেছে শুভেচ্ছা জানাতে। সবাই হা করে তাকিয়ে রয়েছে ওদের দিকে।আহনাফ রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো তাদের পানে।ওরা হা করে তাকিয়ে ।
কুহু এদিকে লজ্জা পেয়ে আহনাফকে ধাক্কা মেরে দৌঁড় লাগালো ওয়াসরুমের দিকে।আহনাফ রেগে লাল।এদিকে কুহুর দৌঁড় দেখে সবাই হাসিতে ফেটে পড়লো।আহনাফের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে তো আরো হাসছে ওরা।ফ্লোরে বসে পড়েছে হাসতে হাসতে।আহনাফের রাগকে বাড়িয়ে দিতে আদিত গান ধরলো একটা
তুমি জ্বালায়া গেলা মনের আগুন
নিভায়া গেলা না..

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৪

আহনাফ বালিস ছুঁড়ে মারলো ওর দিকে।আহনাফ রেগে ওদের দিকে তেড়ে যেতে নিলে সবকটা ওঠে দৌঁড় লাগায়।হাসছে আর দৌঁড়াচ্ছে সব।আহনাফও তাড়া করেছে ওদের।আজ একটাকেও ছাড়বে না সে।তার ফ্ল্যাটের চাবিটা ওদের কাছ থেকে আজ’ই নিয়ে নিবে সে।তানাহলে বা’সর আর হবে না তার।ছোডোবেলার স্বপ্নখান স্বপ্নই রয়ে যাবে।

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here