প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪০

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪০
অনন্যা

-‘এমন ছেলের সাথে আমি আমার মেয়ের বিয়ে কিছুতেই দিব না।
অখিল শাহরিয়ারের কথাটাতে একটা বাজ পড়লো রাহুলের মাথায়।একটু আগেই মেয়েগুলো গিয়েছে।অনেক বুঝিয়ে পাঠানো হয়েছে তাদের।রাহুলের সম্পর্কে এসব জেনে সবার’ই মাথায় হাত।সাজ্জাদ শাহরিয়ার আর আনিসা বেগম যদিও আগে থেকেই জানতেন।তবে আনিসা বেগমের ধারণা ছিল না যে এত মেয়ে…! আত্মীয়-স্বজন সবার সামনে মাথা কাটা গেল আজ তাদের।
-‘আপনি এটা বলতে পারেন না, বড় আব্বু।
রাহুলের কথা শুনে অখিল শাহরিয়ার বললেন
-‘কোন মুখে আবার কথা বলছো তুমি?এই! লজ্জা করে না তোমার?
রাহুল একটুও সময় ব্যয় না করে উত্তর দিল

-‘না..করে না লজ্জা।
আহান শাহরিয়ার বললেন
-‘ভদ্রতা বজায় রাখো রাহুল।এতকিছুর পরেও কি করে এখনো অমাদের সামনে মাথা উঁচু করে আছো তুমি?আবার বলছো লজ্জা করে না তোমার!
রাহুল বললো
-‘যে মেয়েগুলো এসেছিল তাদের মাঝে আমি দশজনকে চিনতাম।আর বাকিদের আমি চিনিই না।হ্যাঁ, আমি মানছি আমি খারাপ।তবে সেটা ছিলাম।রোদকে ভালোবাসার পর আমি একদম বদলে গেছি।
অখিল শাহরিয়ার বুকে হাত চেপে বসে রইলেন।এটা কেমন ছেলের সাথে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন! রাহুলের ভেতরের চরিত্র এত খারাপ! মেয়েটা কেন একে ভালোবাসতে গেল? আজ বিয়ে আর আজ তিনি এসব জানলেন! এখন? কি করবেন তিনি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘এই বিয়ে হবে না।
সাজ্জাদ শাহরিয়ারের কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকালেন।রাহুল অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বাবার পানে।আহনাফ আপেল খাচ্ছে আর রাফি বিস্কুট।সামনের দৃশ্য উপভোগ করছে এরা খেতে খেতে।বর্তমানে সবাই অখিল শাহরিয়ারের বেডরুমে।বাহিরে লোকজনে গমগম করছে।সবাই হয়তো এই সমালোচনায়’ই মেতে আছে।সেটাই স্বাভাবিক।তারা তো মুখিয়েই থাকে একটা কিছু খুঁজতে।আর আজ তো…!
-‘রাগিও না আমাকে ড্যাড।রোদ আমার মানে আমার।বাঁধা দিতে আসলে আমি ভুলে যাব তুমি আমার বাবা।
সাজ্জাদ শাহরিয়ার হঠাৎ একটা অদ্ভুদ কাজ করে বসলেন।তেড়ে এসে দিলেন ছেলের গালে এক চড়।সবাই মুখে হাত দিয়ে ফেললো।রাফি আস্তে ধীরে ফিসফিসানি স্বরে গেয়ে উঠলো

“লেগেছে লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুননন..ধুমতানানানানা..!”
-‘দিনকে দিন বেয়াদব হচ্ছো তুমি…তোমার মতো ছেলেকে কোন ভালো মেয়ে বিয়ে করবে?
রাহুলের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আসে।চোয়াল শক্ত হয় তার।অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাবার পানে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে
-‘হাউ ডেয়ার ইউ! কোন সাহসে আমার গায়ে হাত তুললে!!
সাজ্জাদ শাহরিয়ারের কলার চেপে ধরলো সে।ভড়কে গেল সকলে।আনিসা বেগম মুখে আঁচল চেপে কেঁদে উঠলেন।বেশ ভালো বুঝলেন যে ছেলেকে তিনি মানুষ করতে পারেননি।একটা অমানুষ তৈরি হয়েছে ছেলেটা।সাজ্জাদ শাহরিয়ার অবাক হয়েছেন ছেলের এহেন কাছে।এটা হয়তো আশা করেননি তিনি।তখন আহনাফ উঠে এসে এক ধাক্কা মেরে ছাড়ায় তাকে।

-‘বাবার সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে!! জা’নো’য়ার একটা! আইডল হয় না উনি তোর! আইডলকে অন্তত সম্মান দে।
সবাই ভড়কে তাকালো আহনাফের দিকে।রাহুল এখন নিজের মাঝে নেই।সে চেয়ারে লাথি মেরে বললো
-‘না দিব না। বলেছি না আমার আর রোদের মাঝে যে আসবে সেই আমার শত্রু।রোদ আমার মানে আমার।কি করে উনি বলতে পারলো যে এই বিয়ে হবে না? হাউ? বা/লের সম্মান করবো উনাকে আমি!!
আহান শাহরিয়ার এবার ঠাস করে রাহুলের গালে চড় মারলেন।

-‘মুখের ভাষা ঠিক করো, রাহুল।
-‘আহান শাহরিয়ার!!!!
ঠাস! ঠাস! পরপর দুটো থাপ্পরে হতভম্ব হয়ে গেল রাহুল।আহনাফ আর রাফি মেরেছে।রাহুল রেগে লাল।রাফি বলে উঠলো
-‘আওয়াজ নিচে…সাহস কি করে হয় ওনার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার!
রাহুল বলে উঠলো
-‘একটা বাহিরের ছেলে হয়ে তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তোলার!! ইউ..
রাহুল হাত উঠাতে নিলে আনিসা বেগম বলে উঠলেন
-‘থাম তুই প্লিজ…থেমে যা…বন্ধ কর এসব ঝামেলা।
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন কথাটা বলে।রাহুল থেমে গেল।রাফি এখনো রাহুলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।আহনাফ বললো

-‘শাসনটা ছোট বেলায় করলে আজ আর এইদিন দেখতে হতো না।
আনিসা বেগমের বুক ভার হয়ে এলো।মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।হঠাৎ’ই তিনি ঢলে পড়লেন।দৌঁড়ে গেল জেরিন বেগম।ধরলেন তাকে।
-‘হায় আল্লাহ! আপা..আপা চোখ খুলো…
রাহুল রেগে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।আহনাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
-‘শেষে আমার বিয়েটা না আবার আটকে যায়!
রাফি বললো
-‘বিয়ে তো হয়েই গেছে।প্যারা নাই।
আহনাফ কিছু বলে না।বাকিরা জেরিন বেগমের জ্ঞান ফেরাতে ব্যস্ত।

জোরে জোরে বজ্র পড়ছে বাহিরে।তুফান উঠেছে বেশ।মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে চূড়ে যাচ্ছে।একেকটা বজ্রপাতের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে রোদেলা আর কুহু।দুজন সেন্টারের একটা কক্ষে বসে।সাথে রয়েছে রাইফা,নিধি,নাতাশা।মাঝে মাঝে লোকজন এসে কুশল বিনিময় করছে তাদের সাথে আবার ছবি তুলছে কেউ। কুহু বললো
-‘আকাশ যে হারে পা’দা’পা’দি শুরু করছে..বরযাত্রী আসতে পারবে আদেও?
সবাই ফিক করে হেসে ফেললো।তখন খুব জোরে আবার একটা বজ্রপাতের শব্দ হলো।চেঁচিয়ে উঠলো সকলে।রোদেলা বললো
-‘আজ এত বজ্র পড়ছে! খুব’ই ভয়ংকর আবহাওয়া।
রাইফা দুষ্টু হেসে বললো
-‘হ্যাঁ ভয়ংকর’ই বটে…

রাইফার কথার গভীরতা বুঝতে পেরে কুহু তার বাহুতে মৃদু থাপ্পর বসায়।রোদেলা কিছু বললো না।নাতাশা বললো
-‘জুনিয়র বাচ্চগুলো বিয়ে করে নিল আর আমার একটা হিল্লে হলো না এখনো।পটাইতেই পারলাম না।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।ঠিক তখন আয়ান প্রবেশ করলো।সবাইকে হাসতে দেখে কপাল কুচকে আসে তার।কপালের ভাঁজ ঠিক হয়ে গেল ঠিক যখন তার চোখ নাতাশার দিকে গেল।মেয়েটা আজ নীল রঙের একটা জামদানি শাড়ি পড়েছে।চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে তাকে।আগে কখনো তো আয়ানের এমন মনে হয়নি।কুহুর থেকে কোনো মেয়েকেই তার সুন্দর লাগতো না।এই প্রথম নাতাশাকে ভালো লাগছে।মনের মাঝে অজানা এক সুর বয়ে চলেছে।মুগ্ধ নয়নে নাতাশার দিকে তাকিয়ে সে।আর বাকিরা আয়ানের দিকে তাকিয়ে।মিটিমিটি হাসছে সকলে।নাতাশা একটু নড়েচড়ে বসে।আয়ানের এভাবে তাকানোতে মেয়েটা বেশ লজ্জা পেয়েছে।মনের মাঝে রঙিন প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে।

রাইফা খুক খুক করে কেঁশে উঠলো।আয়ান হুশে ফিরলো।অপ্রস্তুত হলো ছেলেটা।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আমতা আমতা করতে লাগলো।কি বলতে এসেছিল সেটাই ভুলে গেছে বেচারা।শেষে বাহিরে চলে যায়।আয়ান চলে যেতেই সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।নিধি বললো
-‘কে যেন একটু আগে বলছিল যে তার একটা হিল্লে হলো না এখনো…এহুম এহুম…
নাতাশা নতমুখে লাজুক হাসে।তবে এতদিনের কষ্ট সফল হতে যাচ্ছে?আয়ান কি তবে…ইশ! নাতাশা হেসে ফেললো।কুহু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।আয়ান তাকে ভুলতে পারছে তাহলে।কুহু আয়ানের কাজটাতে অনেক কষ্ট পেয়েছে।তার কাজটা পাগলামো ছাড়া আর কিছুই ছিল না।তার জন্য কুহু নিজেকে অপবিত্র ভেবে এসেছে এত বছর।কত রাত কেঁদেছে সে! বিশ্বাস হচ্ছে না তার যে আয়ান এমন একটা কাজ করেছে।হতাশার শ্বাস ছাড়লো কুহু।

সময় পেরিয়েছে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।বাহিরে এখনো তাণ্ডব চলছে বাতাসের সাথে বৃষ্টির।দুটোই যেন তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে।সাথে আছে বজ্রপাত।কুহু আর রোদেলা বিরক্ত হয়ে গেছে।রোদেলা বারবার সময় দেখছে।এমন ভারি লেহেঙ্গা আর সাজে এতক্ষণ থাকা যায়! এখনো আসছে না কেন? এদিকে কুহু ঘুমিয়ে পড়েছে গালি দিতে দিতে।রোদেলার ঘুম আসছে না।সে চিন্তায় আছে।রাহুলের সাথে ঘটা ঘটনাটা তাকে জানিয়েছে রাফি।একটা প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে সবে।এরপরেরটা তো আসল।সেটা নিয়েই চিন্তায় আছে সে। হঠাৎ তখন চেঁচামেচির শব্দ কানে আসে।ঝিমিয়ে যাওয়া সবাই হুশে আসে।সবার ঠোঁটের কোণে উজ্জ্বল এক হাসির ছটা দেখা যায়।নিধি দৌঁড়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়।পরপর কতগুলো কালো রঙের গাড়ি এসে ভিড়েছে সামনে।সামনে একটা গাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো।বুঝতে বাকি রইলো না যে বরযাত্রী চলে এসেছে।নিধি চেঁচিয়ে উঠলো

-‘বর এসেছে…বর এসেছে..
রাইফা আর নাতাশাও উচ্ছ্বাস নিয়ে দাঁড়ালো।কুহু এদের চেঁচামেচিতে একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমে ঢলে পড়লো।নিধি,রাইফা,নাতাশা আর রোদেলার কাজিন যারা ছিল তারা সবাই দৌঁড়ে বাহিরে যায়।সবাই চেঁচাচ্ছে “বর এসেছে” বলে।
রোদেলার একটু ইচ্ছা হলো জানালার ধারে গিয়ে দেখতে।যেই ভাবা সেই কাজ।রোদেলা ভারি লেহেঙ্গাটা হাত দিয়ে উঠিয়ে ধীর পায়ে জানালার কাছে যায়।উঁকি দিতেই নজরে আসে শেরোয়ানি পড়া দুই যুবক।রোদেলা উঁকি ঝুকি দিয়ে খুঁজতে থাকে কাউকে।হঠাৎ তখন সেই কেউ একজন উপর দিকে ঠিক তার দিকেই নিশানা করে তাকায়।হাতে তার বিস্কুটের প্যাকেট।রোদেলা ভড়কে যায়। রাফি এক চোখ মারে।রোদেলা সাথে সাথে সরে আসে জানালা থেকে।বিছানায় এসে বসলো সে।লাজুক হাসি লেপ্টে মেয়েটার ঠোঁটের কোণে।কুহুর দিকে তাকায় সে।এরপর বললো

-‘তোকে ঠকানোর শাস্তি হারে হারে পাবে শয়তানটা।খুব বড় ধরনের একটা শাস্তি।সবকিছু শুধুই তোর জন্য।তুই সুখী হ কুহু।দুনিয়ার সব সুখ তোর হোক।আমার জন্য তুই যা করেছিস আমি কৃতজ্ঞ থাকবো রে, সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।আহনাফ ভাই তোর হোক।তোরা সুখী হ।
রোদেলা আঁখি টইটুম্বর হয় জলে।সে গিলে ফেলতে চায় কান্নাগুলোকে।জোরে একটা শ্বাস নেয় সে।এরপর ঠোঁট গোল করে ছাড়ে।ঠোঁটের কোণে এক হাসি ঝুলালো।এরপর কুহুর বাহুতে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকলো
-‘কুহু! বেবি উঠ! বর এসে গেছে তো…এই কুহু!!
কুহু একটু নড়লো তবে তাকালো না।রোদেলা আবার ডাকে

-‘এই কুহু!! উঠ না!
-‘উমম..ঘুমাতে দে…
কুহুর ঘুম ঘুম স্বর।রোদেলা বললো
-‘কিসের ঘুম? আজ না তোর বিয়ে!!
কুহু ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।ঘুমঘুম স্বরে খেকিয়ে বললো
-‘বাঙ্গির বিয়ে! করবো না বিয়ে…যা সর তো!
রোদেলা বললো
-‘চুপপ…উঠ এখন…তানাহলে তোর বাঙ্গির মা কি বাপ করে ছাড়বো বলে দিলাম।
কুহু তাও উঠলো না।রোদেলা ‘চ’ সূচক শব্দ করলো।ভাবলো কাজী আসার আগ মুহূর্তে ডাকবে বরং।সেই পর্যন্ত নাহয় ঘুমাক।

আহনাফ আর রাহুল একসাথে রাজকীয় সোফায় বসলো।সুদর্শন দুই যুবকের দিকে সকল রমণীর আকর্ষণ গিয়ে রয়েছে। পেছনে দাঁড়ানো যুবকটাও তাদের কুনজর থেকে বাঁচতে পারলো না।পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই যুবক স্টেজ থেকে নামতেই এক রমণী তার সামনে দাঁড়ালো।লোকটার কপাল কুচকে আসে।মেয়েটা বললো
-‘হেই হ্যান্ডসাম! নম্বরটা দেওয়া যাবে?
আহান শাহরিয়ার থতমত খেলেন। যুবকবেশী আহান শাহরিয়ার। খুকখুক করে কেঁশে উঠলেন ভদ্রলোক।মেয়েটা বললো
-‘আপনার বয়স আমার থেকে দশ বছরের বেশি হবে আই থিংক।বাট ইটস্ ওকে।নম্বরটা দিন।
আহান শাহরিয়ার ধমকে বললেন

-‘চুপ বেয়াদব মেয়ে।
তার ধমকে কেঁপে উঠলো মেয়েটা।পেছনে আরোকিছু মেয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ভেবে যে এই মেয়ের পর তারা আসবে।কিন্তু আহান শাহরিয়ারের ধমকে তারাও ভয় পেল।
-‘হ্যান্ডসাম বলে ভাব নিচ্ছেন!!
মেয়েটার কথা শুনে আহান শাহরিয়ার কি বলবেন বুঝতে পারলেন না।হঠাৎ আহনাফ ডেকে উঠলো তাকে
-‘বাবা..এদিকে এসো তো একটু…
আহান শাহরিয়ার পেছনে ঘুরে বললেন

-‘আসছি…
এরপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ইশারায় আহনাফকে দেখালেন।পরপর’ই চলে গেলেন।মেয়েটা হা করে তাকিয়ে রয়েছে।
-‘বাবা!! হুয়াট দ্যা ফারাক্কা! এত বড় ছেলের বাপ হয়েও এত সুন্দর আর ইয়াং!!! ড্যাম..কীভাবে?ওহ মাই গড! আমার মাথা ঘুরছে…
বাকি মেয়েগুলোর রিয়াকশন খানিকটা এমন..”অ্যাঁ!!”

-‘কি বলছিল মেয়েটা?
আহনাফের কঠোর স্বর শুনে আহান শাহরিয়ার একটা শুকনো ঢোক গিললেন।যেন আহনাফ তার বাবা আর সে তার ছেলে।
-‘জি’জিজ্ঞাসা করছিল যে আমি পাত্রপক্ষ নাকি..
আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে।
-‘আরে এটাই বলছিল।তুমি সবসময় এমন করে তাকাও কেন? আ’আমি যাই বেয়াইয়ের সাথে দেখা করে আসি।
আহান শাহরিয়ার চলে যেতে নিলে আহনাফ বলল
-‘মেয়েদের দিকে তাকাবে না একদম।মায়ের কাছে নালিশ করবো তাকালে।
আহান শাহরিয়ার মেকি হেসে বললেন

-‘পাগল নাকি! আ’আমি যাই।
চলে গেলে আহান শাহরিয়ার।আহনাফ হাসলো।রাহুল ফোন স্ক্রল করতে ব্যস্ত।রোদেলাও তাকে ভালোবাসে বিধায় সবাই রাজি হয় কোনোমতে।তাও অখিল শাহরিয়ার মানতে পারছেন না।রাহুল ভালো হয়ে গেছে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না তার।রাহুল সেসব পরোয়া করে না।সে শুধু তার রোদকে চায়।একবার বিয়েটা হোক এরপরেই সে দেশ ছাড়বে রোদকে নিয়ে।
বহু প্রতিক্ষার পর অবশেষে আসে সেই কাঙ্খিত সময়।কাজী সাহেব উপস্থিত হয়েছেন।প্রথমে কনেদের বিয়ে পড়ানো হবে।আহনাফের বিয়ে বিয়ে ফিলিংস হচ্ছে এখন।রাহুলের ভেতরেও ঢোল বাজছে।আনোয়ারা বেগম জানিয়েছেন যে মেয়েদের কবুল পড়ানোর আগে সামনে আনার নিয়ম নেই।আবার বিয়ের সময় বরপক্ষের দুইজনের বেশি থাকতে পারবে না।এটাও তাদের নিয়মের মাঝের অংশ।আসলে নিয়ম নাকি কোনো পরিকল্পনা?

-‘এই বাঙ্গির নাতি উঠ না!! কাজী আসছে…কুহু…
রোদেলা কুহুকে ধাক্কাচ্ছে আর ডাকছে কিন্তু কুহু ঘুমে বিভোর।সবার মুখে চিন্তার ছাপ।কুহু উঠছে না কেন? এত ডাকের পরে উঠবে না এমন মেয়ে তো সে না।এদিকে কাজী বোধহয় চলে আসলো।সবার মাঝেই অস্থিরতা কাজ করছে।আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘পানি দে..সাজ নষ্ট হয় হোক।এমন ঘুমে দেখলে মান-সম্মান নষ্ট হবে।
রোদেলা শেষবারের মতো ডাকলো—“কুহু উঠঠ!!”
না..মেয়েটা উঠলো না।রোদেলা পানির গ্লাস হাতে নিল।হঠাৎ তখন
-‘শানায়া!!

তাৎক্ষণাৎ চোখ মেলে চাইলো কুহু।ঘুরে দরজার দিকে তাকালো সে।ঠোঁটে হাসির ঝলক দেখা গেল তার।সবাই ভড়কে গেল।এতক্ষণ এত ডেকেও কাজ হলো না সাখাওয়াত আলমের এক ডাকেই উঠে গেল!! আর শানায়া! এটা আবার কে?
কুহু ঝট করে উঠে বসে।সাদা পাঞ্জাবি সেট পরিহিত সাখাওয়াত আলম এগিয়ে এলেন মেয়ের নিকট।কুহু বললো
-‘দেরি হলো কেন?
-‘খুব সরি মা…নির্বাচন খুব নিকটে তাই কাজের চাপটাও বেশি।বাবা সরি মা…খুব সরি…
সবাই দেখছে শুধু।কুহু বললো

-‘তুমি না এলে উঠতাম’ই না আজ।
সাখাওয়াত আলম হাসলেন।আনোয়ারা বেগম বললেন
-‘তার মানে তুই নাটক করছিলি?
কুহু কিছু বললো না।মাথা নত করে রাখলো।হারুন রহমান বললেন
-‘আপা কেমন আছেন?
আনোয়ারা বেগম তাকালেন তার দিকে।মুখ কুচকে বললেন
-‘আপনিও এসেছেন!
আয়ান বললো
-‘আহহা মা! ওনাকে ইনভাইট করেছি যখন আসবেন না কেন..?
আনোয়ারা বেগম কিছু বললেন না।হারুন রহমান বললেন
-‘আপনার টানে চলে আসলাম আপা।আমি জানি আপনি অনেক খুশি হয়েছেন..

আনোয়ারা বেগম তার দিকে মুখ কুচকে তাকালেন।কিছু বলতে নিবে তখন কাজী এসে উপস্থিত হলো।সাথে আহান শাহরিয়ার আর রাফি।সবাই চুপ হয়ে গেল।সাখাওয়াত আলম মেয়ের পাশে বসে।কুহু রাইফা,নিধি আর নাতাশাকে খুঁজছে।ওরা কোথায়? কাজী এসে বসলেন।খাতাটা খুললেন।প্রথমে কুহুকে বলতে বলা হয়।বাবার নামের জায়গায় যখন সাখাওয়াত আলম বলা হলো তখন অনেকের মাথায় বাজ পড়লো।আনোয়ারা বেগমের তেমন কোনো রিয়াকশন দেখতে পাওয়া গেল না।আগে থেকেই জানেন বলে মনে হচ্ছিল।আয়ানের ক্ষেত্রেও সেইম।কুহু ঝটপট কবুল বলে ফেলে।সাখাওয়াত আলম হাসলেন।বললেন

-‘গুড গার্ল।একদম কান্নাকাটি করবে না।বিয়ে হচ্ছে আনন্দের বিষয়।হাসি মুখে থাকবে।
কুহু বাবার বাহু জড়িয়ে ধরে হাসলো।আহান শাহরিয়ারও মৃদু হাসলেন।সাখাওয়াত আলমের সাথে তখন চোখাচোখি হলো তার।ঠিক কতগুলো বছর পর আজ সাখাওয়াত আলম তার দিকে চেয়ে হাসলেন? উত্তর জানা নেই আহান শাহরিয়ারের।তবে ভেতরটা শান্তি পেল কেন যেন।রোদেলার বিয়ে পড়ানোর সময় বোম’ই ফাটলো বোধহয় যখন বলা হলো আহান শাহরিয়ার ছোট পুত্র আরিশ শাহরিয়ারের নাম।যদিও পাত্রপক্ষের এই দুজন বাদে কেউ নেই তবে অনেকেই জানেন যে আহান শাহরিয়ারের একটাই পুত্র।রাহুল তো তার ছেলে নয়।তাহলে? রোদেলাও খুব দ্রুত কবুল বললো যেন এটা কোনো একটা প্ল্যানের অংশ ছিল।বাহিরে তখন জোরে একটা বজ্র পড়লো।চমকে উঠলো প্রত্যেকে।লাইট অফ হয়ে যায় সাথে সাথেই যা তাদের ভয়কে দ্বিগুণ করে দেয়।

রোদেলা এদিকে উঠে দাঁড়ায়।সময় হয়েছে।সবাই ফ্ল্যাশ লাইট অন করে।রাফি রোদেলার কাছে এসে ওর হাত ধরে।রোদেলাও কিছু না বলে তার সাথে যায়।রাফির অপর হাতে বিস্কুট ছিল।সে বললো
-‘মৃত মানুষকে কবুল বলে কেমন লাগছে চোরনি?
-‘হেব্বি লাগছে।ইচ্ছা করছে তার কবরের পাশে শুয়ে থাকতে।
রাফি কথাটা শোনামাত্র রোদেলার পিঠে থাপ্পর লাগায়।
-‘একদম জিহ্ব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।
রাফির রাগি স্বর।রোদেলাও চেতে বললো
-‘আমার জিহ্ব তোর বাপের সম্পত্তি যে ছিঁড়বি? আবার থাপ্পরও মারলি!! বিয়ের পরেই মার!! করবো না আমি তোর সংসার।
রোদেলা যাওয়ার পথে অন্ধকারে রাফির হাত ছেড়ে দেয়।রাফি ভড়কে যায়।এরপর ফিসফিসানি স্বরে বলতে থাকে

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৩৯

-‘ভুল হয়ে গেছে আমার।সরি সরি…ও বউ..সোনা বউ..সুন্টুমুন্টু বউ…কই গেলে বউ আমা..
হঠাৎ একটা গুলির শব্দ হয়।থেমে যায় বিয়ে বাড়ির কোলাহল।ভেসে আসে একটা মেয়ের চিৎকার।রাফির ভেতর কেঁপে উঠে।বিস্কুটের প্যাকেটটা পড়ে যায় ফ্লোরে।অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।রাফি পাথর বনে গেছে যেন।হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠে
-‘চোরনিইইই!!

প্রণয়ের অন্তিমক্ষণ পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here