The Silent Manor part 23

The Silent Manor part 23
Dayna Imrose lucky

সুফিয়ান কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে নিস্তেজ ভঙ্গিতে নিরুত্তাপ গলায় বলল ‘এসব নিয়ে তুমি ভেবো না। স্বপ্নের অর্থ হয় না।’ ফারদিনা দৃষ্টি নিচু করে তাকিয়ে আছে। সুফিয়ান সিগারেট ফেলে দিল নদীর জলে।ঘার ঘুরিয়ে তাকাল ফারদিনার দিকে।আজ মিষ্টি রঙের শাড়ি পড়েছে ফারদিনা। শাড়িতে ফারদিনার শরীরের আবেদনময়ী তন্বী শরীরের একটি বাক স্পষ্ট।যা সুফিয়ান কে আকৃষ্ট করল।কোমর পর্যন্ত লম্বা খোলা চুলে আজ যেন আফিমের নেশা ধরানোর ঘ্রাণ। তাকে আজ অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে।

কিন্তু মুখ গম্ভীর হয়ে থাকায় বোধহয় সম্পুর্ন সৌন্দর্য টা ফুটে উঠছে না। সুফিয়ান দৃঢ়তার সাথে বলল “হঠাৎ তোমার মন খারাপ কেন হল?কিছুই বলছো না। তুমি চুপ থাকলে আমার যেন সব এলোমেলো মনে হয়।” ফারদিনা এবারো চুপচাপ। সুফিয়ান এর ভালো লাগছে না ফারদিনার নিরবতা। দোষটা তাঁর।সে যদি খারাপ স্বপ্নের কথা না বলতো তবে, তাঁর মন বিষিয়ে উঠত না।মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করল।নিয়ম অনুযায়ী কেউ দোষ করে অন্যর মনে আঘাত দিলে তাকেই সুদরে নিতে হয়।সে আঘাত করেছে ফারদিনার মনে।এখন মন ভালো করার দায়িত্ব তাঁর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সুফিয়ান গলা পরিষ্কার করে বলল “তুমি কথা না বললে নদীতে ঝাঁপ দেব। গভীরতায় ডুবে মরে যাব। তোমার কষ্ট হবে না?” ফারদিনা কোন প্রতিক্রিয়া করছে না।ভুলভাল উপায় মনে হচ্ছে।এই উপায় মন ভালো না, বরং খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষ টা জলে ডুবে মরে যাবে?এটা কেমন উপায়?এটা কোন মাধ্যম এর মধ্যে পড়ে না মন ভালো করার। সুফিয়ান নিজেই নখ খুঁটতে শুরু করল। তারপর ভেবে বলল ‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমার আমার বিয়ের পর আমরা শীঘ্রই বাচ্চা নেব।মেয়ে বাঁচ্চা।মেয়েই হবে দেখো।লাল টুকটুকে মেয়ে।

তোমার মত সুন্দরী, তোমার মত নাক, তোমার মত চুল, তোমার মত তেজ,সব তোমার মত হবে। আমার আর একটা ফারদিনা হবে।তবে ওর নাম কি রাখা যায় বলোতো!” সুফিয়ান ঢং করে চিন্তা করল।বলল ‘উমম ওর নাম দেব সমুচা।দেখো সমুচা উচ্চারণ করার সময় মুখটা উউউ হয়ে যায়।” সুফিয়ান ভেঙিয়ে দেখালো।ফারদিনা সুফিয়ান এর কথা শুনে হেসে উঠল।হাঁসির বন্যা বইলো যেন।ফারদিনার হাঁসি দেখে সুফিয়ানও নিঃশব্দে হাসল। মুগ্ধতার সাথে তার হাসি দেখে বলল “এভাবে হেসো না সুন্দরী, তোমার হাঁসি দেখলে যে পরান জ্বলিয়া যায়।”
ফারদিনা হাঁসি নিয়ন্ত্রণ করে বলল “সত্যিই জ্বলছে তো?

“তোমার জন্য অন্তর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আগুনের উত্তাপে-আর সেই উত্তাপ নেভাতে তোমার একরাশ হাসিই যথেষ্ট’
“তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?
“প্রমাণ লাগবে? ঝুঁকে বলল।
“প্রমাণ দাও,যাও নদীতে ঝাঁপ দাও।” দুষ্টুমির কন্ঠে বলল ফারদিনা।
সুফিয়ান এক ভ্রু কুঁচকে বলল “নদীতে ঝাঁপ দিলে আমি মরব না, সাঁতার কেটে উঠে যাব।আমি তো তোমার মায়াজালে আটকেছি। সেখান থেকে আর চাইলেও বেরোতে পারব না। যদি ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয় তোমাকে সাথে নিয়ে দেব, প্রমাণ সার্থক,আমরাও সফল।’
“এ জনমে তাহলে আমাদের পূর্ণতা মিলবে না। পুনর্জন্ম আর হবে না।”
“ভালোবাসার প্রমাণ হয় না বুদ্ধু মেয়ে। প্রমাণ সে-ই চায় যে ভালোবাসে না।সত্যিকারের ভালোবাসা উপলব্ধি করে নিতে হয়।’

“তোমার আর আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে তো?
“যদি উপর ওয়ালা চান, নিশ্চয়ই হবে।’ বলে মৃদু হাসল।
‘তুমি আদিব ভাইয়ের সাথে কথা বলবে? আব্বার সাথে? আমাদের বিষয়ে?
সুফিয়ান চোখ সরিয়ে বলল “সময় হোক,আমি তাদের সাথে কথা বলব!”
“সত্যি বলবে তো? উৎফুল্ল হল ফারদিনা।
“মিথ্যা যদি প্রেমের সেতুর বন্ধনে জায়গা পায়,তবে সে প্রেম সফল হয় না।’বুঝেছো?
“হুঁ’ নিস্তেজ এর সাথে বলল ফারদিনা। সুফিয়ান বলল “এক অক্ষরে জবাব দিচ্ছ যে,কথা বলার ইচ্ছে নেই?
“আছে!”

“এবার দুই অক্ষরে জবাব দিয়েছো। আমার সাথে একাধিক শব্দে কথা বলবে।যা অকাজের তাও বলবে। তোমার মুখে প্রতিটি কথাই শুনতে ভালো লাগে। মানুষ গান শুনতে পছন্দ করে,কানে যদি গানের সুর ভেসে আসে,সে ধ্যান দিয়ে শুনে।আমি তোমার প্রতিটি কথার শব্দেই সুর পাই।যা আমাকে মুগ্ধ করে।”
“আমি কি সত্যিই তোমার হয়ে গেছি?” গালে হাত দিয়ে নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ফারদিনা।
সুফিয়ান ফারদিনার মুখের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ গভীরে নিয়ে বলল “তুমি আমার শিরায় উপশিরায় গেঁথে গেছো।মস্তিষ্কের নিউরন এর ভাজে তুমি। মানুষ তাই জীবন থেকে সরাতে পারে,যার সাথে দেহের সম্পর্ক থাকে।আত্মার সাথে সম্পর্কিত সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয় না।”

“আর যদি মরে যাই? এরুপ প্রশ্ন করতে ফারদিনার ভালো লাগে।ভালোবাসার মানুষটির চোখে নিজেকে হারানোর ভয় দেখতে কার না ভালো লাগে?সবার ভালো লাগে।সে উপভোগ করে সে-ই আনন্দ। সুফিয়ান হয়ত এখন তাকে বকাবকি করবে।রাগে উঠে যাবে। এরপর সে আবার রাগ ভাঙ্গাবে।
সুফিয়ান উত্তেজিত হল না। শান্ত হয়ে বসে রইল।
শান্ত চোখে চেয়ে বলল “তাহলে আমিই আমার জন্য কবর খুঁ’ড়ব।সেই কব’রে তোমাকে নিয়ে চিরদিনের জন্য একটা ঘুম দেব” বলে পেছনে হাত রেখে ভর দিয়ে ঝুকল। ঠোঁটের কোণে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাঁসি আনল।
নীরবতায় কেটে যায় অনেক সময়। নদীর জল শান্ত। কিছু মাঝিরা নৌকা বাইছে।মেলার অনেক মেয়েরা নৌকায় উঠছে।মাঝিরা তাঁদের নিয়ে নদীর মাঝে চলে গেছে। হাঁসি আর আনন্দে কাটছে আজকের দিন। সুফিয়ান বলল

“সময় গড়াচ্ছে। কিছু খেয়ে নাও,যাও। ঝিলমিল কে ডাকি”
“তুমি সাথে থাকলে খিদে পায়না।”
সুফিয়ান কিছুটা ধমকের সুরে বলল ‘নাটক বন্ধ কর।চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। তুমি মেলার দিকে চলে যাও।”
“তুমি আসবে না?
“তোমার সঙ্গে যাব না।পড়ে যাব।”
“যদি চলে যাও?
“যাব না, নদীর তীরে ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ বসে থাকি। এরপর আসব।” সুফিয়ান এর মুখে উদ্বিগ্নতা।
ফারদিনা সুফিয়ান এর অভিব্যক্তি দেখে কিছু বলল না। তাকে রাগানোর জন্য এবং মেলায় নেয়ার জন্য বলল “তুমি না আসলে আমি আজমাত এর সাথে কথা বলব।ঘুরব।” সুফিয়ান চোখে অগ্নিময় ভাব নিয়ে তাকালো ফারদিনার দিকে।বলল “ঐ বেটাকে আমি সত্যি সত্যি জলে ডুবিয়ে মারব। তুমি কি সেটা চাও?

“আমি কথা বলব,ওর দোষ কোথায়?
“তোমাকেও ডোবাবো।”
“তুমি যা পারবে না,তা বলো না।”
সুফিয়ান এর রাগ হল। আজমাত এর জন্য প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছে।রাগ দেখাতে চাচ্ছে না। কিন্তু না চাইতেও মুখের রং পাল্টে গেল। নিজেকে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য নিয়ন্ত্রণ করে বলল “ভালোবাসা বি’ষের চেয়েও বি’ষাক্ত।এই বিষ যে একবার পান করে,সে এমন কিছু নেই যা পারে না।”
“তারমানে তুমি আমাকে মেরে ফেলবে?” সুফিয়ান এবার পুরোপুরি রেগে গেল।বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ফারদিনাও দাঁড়ালো। সুফিয়ান চোখ চওড়া করে বলল “ অপ্রীতিকর ভাবনা কেন তোমার! ভাবনা টা কে বদলে শুভ কিছু ভাবো। তোমাকে মারবো কেন, তোমার জন্য দরকার হয় অন্য কাউকে মারব,এটা ভাবতে পারো।তা রেখে সবসময় উল্টো টা পাব।”

“তুমি রেগে যাচ্ছ।আমি মেলার দিকে যাচ্ছি।রাগ কমলে এসো।”
ফারদিনা ঝিলমিল কে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে মেলার দিকে চলে যায়।ফারদিনা যেতে যেতে পেছন ঘুরে দেখল কয়েকবার। সুফিয়ান দেখছে না তাঁর দিকে। নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুদূর গিয়ে আবার পেছন ঘুরল অনেক আশা নিয়ে। এবার সুফিয়ান এর সাথে চোখে চোখ পড়ল।ফারদিনা একরাশ হাঁসি দিয়ে চলে যায়। সুফিয়ান ফারদিনার যাওয়ার পানে দেখছে। যতক্ষণ না ফারদিনার ছায়া চোখের আড়াল হল ততক্ষনে অবধি চেয়ে থাকল।
রাঙা ঘাস খাচ্ছে। সুফিয়ান ওর কাছে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে বলল “বুঝেছিস রাঙা,মেয়ে মানুষ কে বোঝানো কঠিন বিষয়।আর আমারটাকে বোঝানো আরো বড় কঠিন কাজ।যা বারণ করব, ঘুরেফিরে সেটাই করবে।ও জানে,কোন কথায় আমি রাগ করব,কোন কথাটায় ওকে দুটো কথা শোনাবো,আর ও আমার বকাঝকা শোনার জন্য ই আমাকে রাগায়।আমার রাগে আনন্দিত হয়। কিন্তু ও জানে না, ওকে হারিয়ে ফেলার কথা শুনলে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে।” রাঙা হ্রেষাধ্বনি তুলল লম্বা সুরে।ও যেন বলছে “হুঁ তুমি ঠিক বলেছো,সে বুঝে না।”

দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যার প্রহরে মেলা অন্য মুখ নিয়েছে। চারপাশ মশাল, লন্ঠন এর আলোয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছি নতুন ভাবে।ভাজা পিঠার গন্ধে চারপাশ মো-মো করছে। নাগরদোলা থেকে ঘররর জাতীয় শব্দ আসছে। তাঁর সাথে নৌকায় লন্ঠন জ্বালিয়ে দম্পতিরা নদীর ঢেউ উপভোগ করছে।
রশীদ তালুকদার বেশ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। গাম্ভীর্য এর ব্যাখা তিনিও জানেন না। আজকাল হঠাৎ হঠাৎ যেন তাঁর মন ওঠানামা করছে। এতক্ষণ বেশ আনন্দে ছিল। গ্রামের অনেক মানুষ এসে ভির জমিয়েছে প্রশংসা করেছে।কেউ কেউ অভিযোগ ও করেছে।অভিযোগ নিয়ে তাঁর মাথা ব্যথা নেই।প্রশংসা যতদিন থাকবে, অভিযোগ ও থাকবে। অন্যর ভালোর জন্য যত করা হবে দিনশেষে কোন না কোন কারণে তাদের জন্যই ঠকে যেতেই হবে।এটাই বিচিত্রময় দুনিয়ার একটি অংশ যেন। মানুষের চাহিদা বেশি,যত পায় ততই চায়। দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখি মানুষ কারা? যদি প্রশ্ন করা হয় উত্তরে কি মিলবে?’ দুনিয়াতে সুখি সে-ই যার চাহিদা কম।যে অল্পতে খুশি হয়।

রশীদ এর কাছে এগোয় কুদ্দুস। এতক্ষণ পিঠা খাচ্ছিল। পিঠার ক্ষুদ্র একটা অংশ দাঁতে ঢুকে পড়েছে।আঙুল এর সাহায্যে এনে পুনরায় খেয়ে ফেলল। রশীদ বলল “অসহ্য’ আজকাল তোর ভাব-সাব রাক্ষস এর মত হয়ে গেছে।’
“আপনি কি চান,আমি না খেয়ে থাকি,আমি অসুস্থ হলে আপনার সেবা কে করবে?ঐ দাসীরা!”
“তুই ভালো করেই জানিস, আমার শরীরে কোন নারীর স্পর্শ কোনদিন লাগেনি।আর লাগাতেও চাই না।”
কুদ্দুস মাথা নিচু করে বলল “তাহলে আপনার চার ছেলে,আর মেয়ে আপনার নয়?
রশীদ এবার ওর দিকে কটমট করে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল “আমি দুধ কলা দিয়ে গাধা পুষেছি।”
“ওটা সা’প হবে।গাধা না।” কুদ্দুস বলল।

“মেরে তোর চামড়া তুলে ফেলব।” রশীদ আশেপাশে তাকাল।আদিব ওরা এবং অনুচারী সবাই নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। কুদ্দুস বলল “উত্তর পেলাম না। তাঁরা আপনার সন্তান কিনা, আমার আগেও সন্দেহ হত। আপনার মত আপনার তিন ছেলে হয় নাই।আদিব ভাই একটু শান্ত।আর ফারদিনা..!” কথা শেষ করতেই রশীদ বলল “ওরা আমারই সন্তান। আমার স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর ছোঁয়া লাগেনি।আর লাগাবোও না।এটাই বলতে চেয়েছি। বুঝেছিস?
“বুঝেছি!”
‘আমার চার ছেলে আর মেয়ে আমার সন্তান।কার সন্তান?
“আপনিই তো বললেন আপনার।”
রশীদ ছড়ি মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে বলল “আজকাল তুই অনেক কথা শিখেছিস।মুখে মুখেও কথা বলছিস।এত সাহস কোথা থেকে এলো দেখে নেব”

‘কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। আপনার সাথে থাকতে থাকতে আমার ও সাহস বেড়ে গেছে।” রশীদ চুপচাপ।ওর সাথে কথা বললে মেজাজ বিগড়ে যাবে।মেলার মধ্যে মাথা গরম করা যাবে না।গলায় কাশি দিল। আশেপাশে অনেক মেয়েরা ঘোরাফেরা করছে।কন্ঠ শীতল করে বলল “আশেপাশে কত মেয়েরা ঘুরছে,দেখ কাউকে পছন্দ হয় কিনা?
“আয় হায়, মাত্রই তো বললেন আপনার শরীরে অন্য মেয়েদের ছোঁয়া লাগতে দিবেন না।এখন মেয়ে দেখতে বলছেন! এই বয়সে বিয়ে করলে আপনার ছেলেরা ছিঃ ছিঃ করবে।এখন তাঁদের বিয়ে করার বয়স।”
“আমি আমার কথা বলিনি কালুর ঘরের কালু,তোর কথা বলেছি।”
কুদ্দুস হা করে বলল “তওবা তওবা, আমি একজনকে ভালোবাসি।তারেই চাই।অন্য কারো দিকে চোখ তুলেও চাই না।”

রশীদ মুখ ভেঙিয়ে বলল ‘আহ আমার প্রেমিক পুরুষরে,এখনি আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।”
কুদ্দুস তাঁর সামনে থেকে সরে গিয়ে পেছনে দাড়িয়ে বলল “আপনার পেছনে দাড়িয়েছি। আপনার আমার দিকে চাইতে হবে না। সামনের দিকে তাকিয়ে বলেন।” রশীদ হেরে যাচ্ছে।আজ অবধি সে কারো সাথে হেরে যায়নি কথায়।আজ হেরে যাচ্ছে।কুদ্দুস ধীরে ধীরে চালাক হয়ে যাচ্ছে।সে আর তাল মেলালো না।প্রসঙ্গ পাল্টে নিল।বলল “ফারদিনা কোথায়?

“আজমাত সাহেব এর সাথে গল্প করে।”
“ওর দিকে নজর রাখতে বলিস অনুচারীদের। আমার একটামাত্র মেয়ে।”
“আমিও আমার আব্বার একমাত্র ছেলে। আব্বা বেঁচে নেই।আমি আছি।”
“তো,তা জেনে আমি কি করব? বড্ড কথা বলিস। বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।যা,চা এর ব্যবস্থা কর। সন্ধ্যা বেলা চা না,খেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। নিয়ে আয়।” কুদ্দুস দ্রুত চলে যায়।
আজমাত নুরবেক নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এটা ওটা লিখছে।মাথায় বোলার হ্যাট। দিনের বেলা হ্যাট পড়ে।এখন সন্ধ্যা। সন্ধ্যার পর কেউ হ্যাট পড়ে না।ফারদিনা ঝিলমিল তাঁর পাশেই দাঁড়ানো। ঝিলমিল আজমাত কে বলল “আপনে মাথায় ঐটা কি পইরা আছেন?

আজমাত চোখ এক পলকে উপরে নিয়ে তাকিয়ে হ্যাট টা খুলে হাতে নিল। হেসে বলল “এটা বোলার হ্যাট।দিনে মোটামুটি রোদ ছিল। তীব্র না হলেও রোদ শীতেও আমার সহ্য হয় না।তাই হ্যাট পড়েছি।”
“আপনে অনেক ধলা।এত ধলা মানুষ আবার ভালো লাগে না।আপনারে সবাই কি কয় জানেন,ধলা বিলাই।” ফারদিনা আজমাত এর আড়ালে চাপা স্বরে হাসলো। আজমাত ঝিলমিল এর কথা এড়িয়ে গেল।বলল “ফারদিনা, আজ সুফিয়ান কে দেখিনি,সে কেন আসলো না?
“এসেছিল। বিকেল পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিলাম।বলেছে পড়ে আসবে,এখনও দেখছি না।মেলা তো শেষ হতে চলল।”
ঝিলমিল বলল “সারাদিন সুফিয়ান সুফিয়ান করিস না তো,আর শুনতে ভালো লাগে না।”
“তুই কাউকে ভালোবেসেছিস,তুই এসব বুঝবি না।”
“আমি ঐসব চেতনায় নাই।খাই দাই ঘুরি ফিরি।”

“এইজন্যই তোর নাম মুচমুচি আর টুংটাং।” আজমাত ফারদিনার কথা শুনে হেসে ফেলল। তাঁর হাসির সময় দীর্ঘ হয়। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে তাঁকে দেখছে। বিদেশের মানুষ দেখা যায় না সচরাচর। ওঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে “এই বেডা হয়ত, বাংলা কইতে পারে না।”
আজমাত ফারদিনাকে বলল “তুমি অনেক মজার মানুষ।”
“আপনিও ভালো মানুষ।”
“আমার এত প্রশংসা কর না।দেখবে বরফ এর মত গলে গিয়েছি।মেয়ে মানুষ এমনিতেই আ’গুন এর মত। ওদের সংস্পর্শে গেলেই ছেলেরা দুর্বল হয়ে পড়ে।”
ঝিলমিল বলল “সবাই পড়ে না।আপনার শরীর দুর্বল তাই অল্পতেই পইড়া যান। বেশি বেশি বাদাম খাইবেন, দেখবেন আর পড়বেন না।”

ফারদিনা এবারো হাসলো। তাঁর হাসির শব্দ হাওয়া তে উড়ে গিয়ে রায়ান এর কানে পৌঁছাল।রায়ান তাঁর আলোচনা রেখে ঘুরে একবার ফারদিনার দিকে তাকাল। আজমাত ফারদিনা, ঝিলমিল একসাথে দাঁড়ানো।
আজমাত বলল “তোমার হাঁসিও সুন্দর। এভাবে কারো সামনে হেসো না।” তখন তাঁর কাঁধে কেউ হাত রাখে। হঠাৎ কেউ হাত রাখায় খানিকটা বিচলিত হল।চেয়ে দেখল সুফিয়ান। সুফিয়ান কে দেখে ফারদিনা নিশ্চুপ হয়ে গেল। আজমাত এর সাথে কথা বলা সুফিয়ান এর পছন্দ না। কিন্তু সে বলছে‌। ইচ্ছে করেই আজমাত এর সাথে কথা বলছিলো। সুফিয়ান আজমাত কে লক্ষ্য করে বলল “ফারদিনার হাঁসি সুন্দর। কিন্তু ও তোমার মায়ের মত।নারী মানেই মায়ের জাত।”

আজমাত ভ্রু উঠিয়ে বলল “এ কি বলছো, তাঁর বয়স কত কম। আমার মায়ের সাথে তাঁর কোন মিল নেই।”
“মিল আমি করিয়ে দিচ্ছি।এই দেখো,চোখ,নাক,হাত,চুল,যা আছে সব তোমার মায়ের আছে।মনে করে দেখো, মস্তিষ্কে একটু চাপ দাও।”
ঝিলমিল ফারদিনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল “ব্যাটার ঈর্ষা হইতেছে। ভালোবাসার আরেক নাম ঈর্ষা।”
আজমাত ফারদিনার দিকে একবার, সুফিয়ান এর দিকে একবার চেয়ে বলল “মা? আশ্চর্য ডাক।এই ডাকে কখনোই একজন সুন্দরী নারী কে ডাকা যায় না। সুফিয়ান সবসময় যৌক্তিক কথা বললেও আজ ভুল বলছে। আজমাত এর মোটেই ভালো লাগছে না।
সুফিয়ান হাত ঘষতে ঘষতে বলল “আচ্ছা আর একটু সহজ করে দিচ্ছি,মা ডাকটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে তাই না।খালা,চাচী, এগুলো ডাকা যায়।কি বলো?
আজমাত মাথা আওড়ালো “আচ্ছা।’

ঝিলমিল বিড়বিড় করে বলল “বেচারা বাঙালির কথার প্যাচ বুঝতেছে না।”
মেলার চারদিক জমজমাট।সবাই আনন্দিত।যে যার মত আনন্দ করছে। কিন্তু আনন্দ নেই আদিব এর মনে। আজও সে নূরজাহান এর অপেক্ষায় ছিল। কোথাও তাঁর দেখা মিলেনি। কৃষ্ণপুর এর অনেক এর সাথে দেখা হয়েছে। নূরজাহান এর কথা সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারেনি।সে কেমন আছে? কোথায় আছে? স্বামী সংসার নিয়ে ভালো আছে তো?হয়ত এখন সন্তানের জননী হয়ে গেছে।আদিব ভাবছে।সাথে ঘন দীর্ঘ শ্বাস এর দেখা। আকাশ টা ভারী। কারণে না অকারণে বোঝা যাচ্ছে না।ঠিক তেমনি তার মনটাও ভারী। নূরজাহান আসেনি বলে।দেখা হলে আর কি হত, দুচোখ ভরে একবার দেখত। তাঁর মুখ থেকে শুনতে চাইতো! তুমি সুখে আছো,যতটা সুখে আমি রাখতে চেয়েছিলাম, তাঁর থেকে হয়ত বেশিই আছো। ব্যস। এতটুকু বলার জন্য অপেক্ষা।

সন্ধ্যার আকাশে নীলচে ধূসর ছায়া,বাতাসে হালকা শীতলতা। আদিব একদল জড় হওয়া লোকের ফাঁক দিয়ে তাকাল। তাদের ঠিক ওপাশটায় কাউকে দেখা যাচ্ছে।এক অচেনা সুদর্শনা নারী।কালো রঙের শাড়ির উপর হীরক পাথর বসানো।পাথর গুলো মশাল, লন্ঠন এর আলোয় চিকচিক করছে।আদিব ধীরে ধীরে সেদিকে এগোলো। অচেনা নারী রানীর বেশে দাঁড়িয়ে রশীদ তালুকদার এর সাথে কথা বলছে। তাঁর পেছনে অনুচারীগন।আদিব এগিয়ে গেল। অচেনা নারী আর কেউ নয়, নূরজাহান।
বহু বছর পর, অবশেষে, সে তাকে দেখতে পেল।আদিব ঘুরে ঘুরে নূরজাহান কে দেখল।চোখ দুটো অস্বাভাবিক ভাবে দৃষ্টি মেলল। নূরজাহান আদিব এর দিকে দেখল না। রশীদ তালুকদার হেসে হেসে কথা বলছে। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তাদের দেখাসাক্ষাৎ বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। কুদ্দুস এসে হাজির হয়। চোখে মুখে হতাশার ছোঁয়া নিয়ে রশীদ এর কানে ফিসফিসিয়ে বলল “ঐদিকে চলুন।কথা আছে।” রশীদ নূরজাহান এর থেকে কিছুক্ষণ এর জন্য বিদায় নেয়। কুদ্দুস এর সাথে নীরব স্থানে চলে গেল।

“নূরজাহান…” আদিব কণ্ঠে মাত্র কিছু শব্দ, কিন্তু বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।
নূরজাহান কিছুক্ষণের জন্য স্থির থাকে। তারপর হালকা হাসি ফোটে তার মুখে। “আদিব… তুমি?”
তারা দু’জন কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। বাতাসে শুধু দূরের নদীর ঢেউয়ের কলকল শব্দ। আদিবের চোখে অতীতের ছবি ভেসে ওঠে।যে মুহূর্তগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। স্মৃতির পাতায় গেল না।আর ভেবে কিছু হবে না। তাঁর সামনে থাকা মানুষ টা এখন অন্য কারো।
“বহু বছর হয়ে গেছে। আমি ভাবিনি কখনো, তোমাকে আবার দেখব।” আদিবের কণ্ঠে মিশ্র অনুভূতি,আশা, ব্যথা, আর শান্তি।

“ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে যাওয়ার পর দেখা না হওয়াই ভালো।এতে যন্ত্রণা বাড়ে।”
“কেমন আছো? আদিব বিমর্ষ কন্ঠে বলল।
“এতক্ষণ পড়ে?
“এটাতো আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।”
“সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাদের নদী পথে যেতে হবে। আবার কখনও ভাগ্যে থাকলে গল্প করব!”
“এড়িয়ে যাচ্ছ?
নূরজাহান চুপচাপ।আদিবের দিকে স্পষ্ট চোখে দেখছে না। কিছুক্ষণ মাটির দিকে দেখছে, কিছুক্ষণ আশেপাশে।আদিব নূরজাহান এর আড়ালে চোখের জল মুছল।চোখ দুটো নিমিষেই লাল হয়ে গেল। আড়ালে মুছলেও নূরজাহান দেখে ফেলল। কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষা করে বলল “আমি যতক্ষন তোমার সামনে থাকব, তোমার কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।” আদিব ভেজা চোখেই চোখ মেলে তাকাল। তাঁর সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কে নিয়ে সে কত স্বপ্ন দেখেছে।তার সাথে, সারাটা জীবন পাড় করবে,সুখে দুঃখে পাশে থাকবে,একে অপরের হাঁসি কান্নার সঙ্গী হবে।আজ নূরজাহান ঘর বেঁধেছে ঠিকই,তবে অন্য কারো সাথে।আদিব ভাবতে পারছে না।

“আমি চলে যাচ্ছি।দেরি হয়ে যাচ্ছে।” নূরজাহান বলল।
“নতুন করে যাওয়ার কি আছে’ জীবন থেকে তো অনেক আগেই চলে গেছো।”
“বাধ্য হয়েছি।”
“কে বাধ্য করেছে?
“সেসব বলতে চাচ্ছি না।আজ দীর্ঘ সময় পাড় হয়ে গেছে।অতিতের স্মৃতি আর মনে করতে চাই না।”
“তোমার স্বামী কেমন আছেন, তাকে দেখতে পাচ্ছি না যে’

The Silent Manor part 22

নূরজাহান এর উজ্জ্বল মুখটা হঠাৎ করেই শীতল হয়ে গেল। নিঃশ্বাসে ভারী কিছুর আভাস।আদিব বুঝতে পারছে না। অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল “বলো না,সে কেমন আছে? নিশ্চয়ই খুব সুখে আছো, সন্তানের জননী হয়েছো!”
“আর একদিন কথা হবে‌। আব্বা রাগ করবেন। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
“কি লুকাচ্ছো? তোমার স্বামীর কথা বলতেই তোমার আচরণ বদলাল কেন?বলো,সব কিছু ঠিক আছে তো?
নূরজাহান ভাঙ্গা কন্ঠে বলল “একটা যুদ্ধে সে মা’রা গেছে।”
‘মারা গেছে, কিভাবে? আশ্চর্য মুখে জিজ্ঞেস করল রশীদ। কুদ্দুস বলল “হুম। কিছুক্ষণ আগে জয়নব এর বাড়ি থেকে একজন লোক আসছিল।সেই বলছে, ঝুমকু কে কেউ মেরে বাড়ির সামনে ফেলে গেছে।_

The Silent Manor part 24

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here