তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৮
নীল মণ
এইটা আমি হসপিটাল ভর্তি হওয়ার আগেই লিখেছিলাম , তাই আর বড় করতে পারি নাই। লেখা ছিল এই টুকুই আর লিখিনি ।
জায়নের মুখের সেই অবস্থা দেখে তিয়াশার বুক কেঁপে উঠল। হাত পা যেন হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে গেল, শরীর কাঁপছে, অথচ ঠোঁট দিয়ে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না। ঘরে কিছুক্ষণ এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে এল। শুধু ফোনের ওপাশ থেকে তিন বান্ধবীর হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকার চাপা ভাবটুকু ভেসে আসছিল। যেন তারা নিজের চোখের সামনে ঘটতে থাকা ঘটনাটা বিশ্বাসই করতে পারছে না।
কিন্তু হঠাৎই ফোনের ওপাশ থেকে রুবিনা মুখ চেপেও হেসে ফেলল। গলা যতই চাপুক, হাসির দম আটকে রাখা গেল না। সেই হাসি শুনে আরোহী তাড়াতাড়ি মুখে হাত চাপা দিল আর ঠাট্টার ভঙ্গিতে বলল,
__”ওফফফ,এবার তিয়াশা শেষ!”
এমন সময় জায়ন ধীরে ধীরে তিয়াশার দিকে এগিয়ে এলো। তার দুটো চোখ স্থির, ঠোঁট চেপে দাঁতে দাঁতে কিড়মিড় করছে। তিয়াশার বুকের ভেতরটা দম বন্ধ হয়ে আসছে। জায়ন হঠাৎ একটু ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে তিয়াশার হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল এবং এক টানে গ্রুপ কল কেটে দিল। মুহূর্তেই ঘরে গুমোট নীরবতা নেমে এলো। তিয়াশা থরথর করে কাঁপছে, আর জায়ন চোখের চশমাটা একবার ঠিক করে নিয়ে হঠাৎ নিজের দুহাত দিয়ে তিয়াশার বাঁকানো, ঢেউ খেলানো কোমর নিজের খুব কাছে টেনে নিল। মাথা আর সামান্য ঝুঁকিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
__”বউ, কার দরকার কলিকাতা হার্বাল ওয়েল?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শব্দগুলো শুনতে যতটা নরম মনে হচ্ছিল, তার ভেতরে ছিল এমন এক অদ্ভুত চাপা গর্জন, যা তিয়াশার বুকের ভেতর ধক করে উঠাল। সে কেমন হকচকিয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপছে, চোখ বড় বড় হয়ে গেছে, মুখ দিয়ে একটাও শব্দ বেরোচ্ছে না। তিয়াশার মুখ লাল হয়ে উঠছে লজ্জায়, শরীরের প্রতিটা শিরা কাঁপছে ভয়ে আর অস্বস্তিতে। হঠাৎ সে ভাঙা গলায় কেমন অসহায় মুখ করে হেসে ফেলল, আর বিড়বিড় করে বলল,
__”আ আমি তো এমনি এমনি মজা করছিলাম ওদের সঙ্গে প্লিজ সিরিয়াসলি নিও না।”
তিয়াশার সেই কাঁপা কণ্ঠস্বর শুনে জায়ন ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে নিল। তার চোখে তখন এক অদ্ভুত দীপ্তি, যেন রাগ আর ভালোবাসার মিশ্রণ। সে আরও কাছে ঝুঁকে গলা নামিয়ে বলল,
__”তাহলে ওদের এটাও বলে দিস তোর বরের পারফরমেন্স টা , বিনা হার্বাল ওয়েলেই তোকে দশ দিন বিছানায় শুইয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে। সেটা তুই ভালো করেই জানিস।”
কথাগুলো বলতে বলতে তার কণ্ঠস্বর আরও ভারী হয়ে উঠল। যেন প্রতিটি শব্দ দিয়ে সে তিয়াশার বুক কাঁপিয়ে দিতে চাইছে। জায়ন আরও ফিসফিস করে বলল,
__”ধৈর্যের পরীক্ষা নিস না বউ। তোকে আমি ভালোবাসি, তাই নিজেকে আটকে রাখছি, নিজের ভেতরের আগুনকে চেপে রাখছি। আমাকে উস্কাস না, আমি এমনিই উন্মাদ পাগল। মনে রাখিস, বাঘ জোর করে ঘুমিয়ে আছে, তাকে জাগাস না। একবার যদি জাগি, তোকে বারবার ছিঁড়ে খেয়ে ফেলার পরেও শান্ত হব না। বারবার ভাঙব, আবার বারবার তৈরি করব তোকে। শুধু ঠিক সময় হতে দে, আর এটা ভাবিস না আমি এই কথা টা ভুলে যাব, পনেরো দিন লাগুক কিংবা এক মাস লাগুক যেদিন তুই সুস্থ হবি, সেদিন তোর এই বরের ম্যান পাওয়ার এর ইজ্জত এর ফালুদা করার পানিশমেন্ট তুই এমন ভাবে পাবি, যা তুই কল্পনা ও করতে পারবি না।”
শব্দগুলো শেষ করেই জায়ন হঠাৎ তার কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিল। তিয়াশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ-মুখ অবশ হয়ে গেছে, যেন নিজের কানে শোনা কথাগুলো বিশ্বাসই করতে পারছে না। সে নির্বাক হয়ে শুধু তাকিয়ে রইল জায়নের পেছনের দিকে, যেভাবে সে রাগে গর্জে গর্জে বাইরে চলে গেল। তিয়াশার শরীর হঠাৎ ভয়ে কুঁকড়ে উঠল, ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে ফিসফিস করে বলল,
–“আমার শরীর খারাপের জন্য নিজেকে আটকাচ্ছে আর আমি কিনা কিসব ভাবতে শুরু করেছি? হায় রে তিয়াশা তুই কি করে ভুলে গেলি তোর বরকে ?”
এদিকে বাইরে গিয়ে জায়ন নিজেও কাঁপতে কাঁপতে ফোন বের করল। কাকে যেন কল দিল। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হতেই তার বিরক্ত গলা কেঁপে উঠল,
__”হেলো ডক্টর, ক্যান ইউ প্লিজ সে আমার ওয়াইফ ফুললি রিকভার কবে হবে?”
ওপাশে কী বলা হলো সেটা শোনা গেল না। কিন্তু জায়ন এক হাত দিয়ে কপাল টিপে ধরল। বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। সে বিড়বিড় করে বলল,
__”আমি কিছু জানি না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ওয়াইফ কে সুস্থ করে দিন। নইলে আমি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হবো।”
তারপর আবার গলা শক্ত করে বলল,
__”আপনার অত মানে বুঝতে হবে না, আমার ম্যান পাওয়ারের উপর আঙুল তোলা হচ্ছে এই আপনার জন্য।”
বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিল সে। ফোন বন্ধ করেই নিজের চুলের মুঠি টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে উঠল,
__,”বা** জিন্দেগী……শা* লাস্টে কিনা নিজের বউ এর মুখ থেকেই শুনতে হলো আমার কলিকাতা হার্বাল ওয়েল দরকার, ছ্যা…. ফা**কিং হেল ।”
ঠিক তখনই হঠাৎ পেছন থেকে ভেসে এল আকাশের বিস্মিত কণ্ঠস্বর,
__”ভাইয়া তুমি এই জিনিস ব্যবহার করো?”
জায়ন বিরক্ত হয়ে পেছনে তাকাল,চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ, আর তার পাশে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইউভি। মুহূর্তেই রাগের ঝড় নামল জায়নের মুখে। সে এক ধাপ এগিয়ে আকাশকে পেছন থেকে হালকা লাথি মেরে গর্জে উঠল,
__”আমায় কি তোদের মত ভেবেছিস, রাস্কেল? আমি যদি চাই না…”
কথাটা শেষ না করেই মুখ ঝামটি দিয়ে ফোস ফোস করে ভেতরে চলে গেল।
আকাশ আর ইউভি কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর ইউভি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
__”হ্যা রে আকাশ, ভাইয়া কি আমাদের ইনডাইরেক্টলি অপমান করে গেল?”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে হালকা রাগ নিয়ে বলল,
__”না ইউভি ভাই, ভাইয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ডাইরেক্টলি অপমান করে গেল।”
দুজনেই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, আর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করার শব্দ ভেসে এলো যেন ভেতরের আগুনটা আবারও আটকে রাখা হলো।
পরের দিন বিকেলে কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই আকাশ, আরোহী, পরি, জেমস, ইউভি, সাগর, আহান, নাজিম, পলাশ আর অবশ্যই জায়ন। চারপাশটা সরগরম হলেও সবার দৃষ্টি এক জায়গাতেই গিয়ে আটকে আছে পরি আর জেমসের উপর। কারণ খুব স্পষ্ট, তাদের দুজনের গলায় এখনও ঝোলানো রয়েছে তাজা ফুলের মালা। মুহূর্তেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য বিয়ে করা বর বউ তারা।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরির থেকে অনেক বেশি লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে জেমস। ওর গাল লাল হয়ে গেছে, যেন একেবারে ছোট্ট ছেলেটা ধরা খেয়ে গেছে। অথচ পরির মনের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। চোখে মুখে অজানা চাপা কষ্ট লুকোনো, কারন সে অন্য কোথাও বিয়ে করতে চায়নি, এ জন্যই আজ তাকে জেমসের সঙ্গে কাজী অফিস পর্যন্ত আসতে হলো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরোহী একবার তার হাত চেপে ধরল, অন্য হাতে স্নেহভরে কাঁধে হাত রেখে সাহস জোগাতে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
—”আর দোস্ত, সব ঠিক হয়ে যাবে। সময় হলে আংকেল আণ্টি ঠিক মেনে নেবে, চিন্তা করিস না।”
কিন্তু তবুও পরি কোনো উত্তর দিল না,চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মাঝে মাঝে জেমস উদ্বিগ্ন চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে, যেন দুনিয়ার সব সান্ত্বনা সে শুধু চোখ দিয়েই দিতে চাইছে। অথচ সবার মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে পরিকে বুকে টেনে নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না।
যখন ওদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হচ্ছিল তখন অবশ্য জেমসের মা বাবা ভিডিও কলে উপস্থিত ছিল। পর্দার ওপার থেকে হাসি মুখে দোয়া দেখাতে দেখা গেল তাদের।
গত রাতেই তিয়াশার কাছ থেকে সব শুনে জায়ন জেমসকে সঙ্গে নিয়ে পরির বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু বহু বোঝানোর পরেও পরির বাবা কিছুতেই রাজি হলেন না। তার একটাই কথা বিদেশী ছেলের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেবেন না। আর তখনই তো জায়ন তার পুরোনো ফর্মুলা কাজে লাগাল, যে ফর্মুলা সে নিজের বিয়েতে প্রয়োগ করে ছিল।
বিয়ের পর অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে সবার হাসি ঠাট্টা জমে উঠল। সাগর জেমসের কাঁধে হাত রেখে হেসে হেসে বলল,
__”দেখলে হাফ বিদেশী ভাই, তোমারও জোগাড় আমরা করে দিলাম!”
জেমস মাথা নিচু করে লজ্জায় হেসে ফেলল। তবুও বিনয়ী ভঙ্গিতে মুচকি হেসে উত্তর দিল,
__”ব্রো, তুমি কিছু করোনি… যা করেছেন সব স্যার করেছেন।”
শব্দটা বের হওয়া মাত্রই সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। কারণ সত্যিই তো, সাগররা শুধু এই কাজী অফিসে উপস্থিত থেকেছে। কাজের আসল কারিগর তো জায়ন। তাই সাগর একটু অপ্রস্তুত হয়ে গলা খাঁকরে নিয়ে দৃষ্টি এদিক সেদিক ঘুরিয়ে নিল।
এদিকে নাজিম, আকাশ আর পলাশ দাঁত কেলিয়ে হেসে চলেছে। নাজিম তো আর থামতে না পেরে বলেই ফেলল,
__”কিরে সাগর হিরো সাজতে গেছিলিস, তাই না?”
সবার হাসির মাঝে সাগর মুখটা কেমন অসহায় করে ফেলল। দুই হাত তুলে বলল,
__”ভাই, শুধু হাফ বিদেশী ভাই না…… তোরা সবাই সুযোগ পেলে আমায় ঘোল খাওয়ানোর তালে থাকিস। নিহাত আমি একেবারে ভদ্র ছেলে।”
তার কথায় সবাই আবার হেসে উঠল।
আকাশ এবার মুখটা কাছে এনে নীচু স্বরে নাজিম, পলাশ আর সাগরকে ফিসফিস করে বলল,
__”সবচেয়ে বেশি ঘোল খাওয়ায় তো আমাদের বড় ভাই।”
ওদের ওই ফিসফিসানি দেখে জায়নের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। সে ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
__”আমার পিন্ডি না চটকে সবাই বাসায় চল। আমার বউ অসুস্থ সেটা কি তোরা ভুলে গেছিস?”
শব্দগুলো এমনভাবে উচ্চারিত হলো যে মুহূর্তেই সবার হাসি চুপসে গেল।
তারপর জায়ন জেমসের দিকে এগিয়ে এসে নিজের গাড়ির চাবি তার হাতে ধরিয়ে দিল। কঠিন অথচ নির্ভরতার ভঙ্গিতে বলল,
__”আমার গাড়ি নিয়ে পরিকে নিয়ে বাসায় চলে আসো। আমি ইউভির সঙ্গে আসছি।”
কোনো উত্তর শোনার অপেক্ষা না করেই সে গম্ভীর মুখে গটগট করে সরে গেল।
জায়নের পেছনে তাকিয়ে আকাশ, নাজিম, সাগর আর পলাশের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। পলাশ মুখ হাঁ করে ফিসফিস করে বলল,
__”শা*___কানে যেন মেশিন লাগানো । কী করে শুনল বেটা?”
আহান আর ইউভি মুচকি হাসল, তারপর পলাশের পিঠে হালকা চাপড়ে দিয়ে ঠাট্টার ভঙ্গিতে বলল,
__”তোদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওর নামে কিছু বলছিস।”
এতটা শুনে বাকিদের মুখে আবার অট্টহাসি ফেটে পড়ল।
চৌধুরী বাসার আবহটা সেদিন ছিল একেবারেই অন্যরকম। জেমস আর পরিকে আপাতত গেস্ট রুমেই রাখা হয়েছে, সেখানেই সাজানো হয়েছে তাদের বাসর,সবাই খুব সহজভাবে মেনে নিয়েছে। জায়ন আগেই বলে দিয়েছিল এই নিয়ে কারো কোনো আপত্তি যেন না থাকে।
পরে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে তারা ক্যালিফোর্নিয়া ফেরত যাবে না বাংলাদেশেই
থাকবে যদি থাকে তবে সম্পূর্ণ দায়িত্ব জায়ন ই নেবে। জেমস এর এখানে কেউ নেই তাই মেহজাবীন বেগম নিজের ছেলের মত তাদের বরন করেছে ।জেমস যেহেতু ভদ্র, সবার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ, তাই আনন্দ আলোয় ভরে উঠেছে চারদিক। সন্ধ্যায় হালকা একটা খাওয়ার আয়োজন রাখা হলো, আর মেহজাবীন বেগম সবার জন্য নির্দেশ দিলেন,
__”আজকে সন্ধ্যা রাতে সবাই কিন্তু ভালো জামাকাপড় পড়বে । যতোই হোক বিয়ে বলে কথা ।”
পরির কাছে আপাতত আরোহী আর অনন্যা আর তিয়াশা ছিল । কিন্তু তিয়াশা মহারাণী কে নিয়ে আবার নিজের রুমেই চলে গেছে।
সারা ঘর জুড়ে সাদা আলো জ্বালিয়ে ,সোফার কোণে বসেছিল তিয়াশা। কোলে মহারানীকে নিয়ে ব্যস্ত সে।হালকা নীল রঙের গাউনে যেন তাকে অপরূপ লাগছিল, মুখে এখনো অসুস্থতার আভা স্পষ্ট তবু, সেই নীল গাউনের মধ্যে তার সৌন্দর্য এতোটাই দীপ্ত হয়ে উঠেছিল যে চোখ ফেরানোই কঠিন। তিয়াশা নরম আঙুলে মহারানীর নরম ফেদার আঁচড়াতে আঁচড়াতে হালকা হাসিমুখে বলছিল
__” তোমার বাবা আজকে খুব ব্যস্ত বুঝলে , সেই কখন
তোমার আঙ্কেল আন্টির বিয়ে দিতে গেছে , বিয়ে দিয়ে
বাসায় ও চলে আসলো কিন্তু তার তো মনেই নেই যে সে এমন অভ্যাস বানিয়েছে এই কদিনে তার অসুস্থ বউ এর পাশে থাকতে থাকতে এখন আর এই অসুস্থ বউ এর তাকে ছাড়া একদম ভালো লাগছেনা।”
কথাগুলো বলতে বলতে তিয়াশা হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ওর কণ্ঠে অভিমান মিশ্রিত আদরের ছোঁয়া যেন নিজের অজান্তেই মনের ভেতরকার দুঃখটা কথার সঙ্গে বেরিয়ে আসছিল।
ঠিক তখনই, দরজাটা আস্তে খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ল জায়ন। পা টিপে টিপে এগিয়ে এলো, কিন্তু তিয়াশা এতটাই মহারানীকে নিয়ে মগ্ন যে তার খেয়ালই হলো না। সোফার পেছনে এসে হাঁটু গেড়ে বসল জায়ন। হঠাৎ কানের কাছে গরম নিঃশ্বাস ফেলে দিতেই তিয়াশার শরীর কেঁপে উঠল। ভয়ে নয়, বরং সেই পরিচিত ঘ্রাণ, সেই প্রিয় মানুষটার হঠাৎ উপস্থিতি যেন তার রক্তে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিল। কানের কাছে ঠোঁট স্পর্শ করে জায়ন ফিসফিস করে বলল,
___” আমায় এত মিস করছিলে জান ?”
তিয়াশার চোখ অনিচ্ছায় বন্ধ হয়ে এলো, জায়ন এর বিদেশি পারফিউম এর নেশার মত মাদকতা মিশ্রিত গন্ধে তার শরীর একেবারে অবশ হয়ে গেল। আলগা হতে লাগল তার কুট হাত আর সেই ,হাত থেকে মহারানী ছুটে গেল দূরে, আর তিয়াশা মাথা পেছন দিক দিয়ে ঠেকিয়ে দিল জায়নের বুকে। চোখ বন্ধ, কান লাল, পেটে প্রজাপতিরা যেন অস্থির নৃত্য করছে। ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে শুধু একটা কথাই বের হলো
__” উমমম , খুব মিস করছি ।”
এই দৃশ্য দেখে জায়নের মাথাও ঠিক রইল না। সে নিজের ঠোঁট দিয়ে তিয়াশার গলা ভিজিয়ে দিতে দিতে বলল,
__” আমার তোমাকে চাই খুব গভীর ভাবে জান , তুমি কি চাও আমাকে?”
তিয়াশা যেন আর নিজেকে সামলাতে পারছিল না, ভেজা ঠোঁটের আগুনে সে একেবারে পাগল হয়ে উঠছিল। পেছন থেকেই ডান হাত দিয়ে জায়নের চুল খামচে ধরল, আরেক হাত সোফার হাতলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
__” আমিও খুব চাই তোমাকে বর, এখন তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি বর।”
জায়নের বুক কেঁপে উঠল এই স্বীকারোক্তিতে, মুহূর্তেই তার ভেতরের বাঁধ ভেঙে গেল। জায়নের বুক থেকে গলা পর্যন্ত ঘামে ভিজে উঠল শার্টের তিনটে বোতাম খুলে গলা আলগা করে নিল। ঠোঁট রেখে দিল তিয়াশার কাঁধে, ভিজিয়ে দিতে লাগল তিয়াশার গলা থেকে কাধ। গাউন এর উপর থেকেই বুকে হাতের খেলা শুরু করল , নিজেকে সামলাতে না পেরে গাউনের ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে উন্মুক্ত বুকে তুলল বন্য ঝড়, নিঃশ্বাস ভরা কণ্ঠে উন্মাদ হয়ে বলল,
__” ডি ডিড ইউ লাইক ইট বেইব?”
তিয়াশা চোখ বন্ধ করে গোঙাতে গোঙাতে কাঁপা ঠোঁটে উত্তর দিল
__” আই লাভ ইট বর ।”
এই কথা শুনতেই জায়ন তার চোখের সাদা ফ্রেমের আই গ্লাস টা এক হাত দিয়ে খুল তিয়াশার হাতে ধরিয়ে বলে উঠলো,
__” বেইব ক্যান ইউ হেল্প মী টু টেক ইট ?”
তিয়াশা আস্তে করে চশমা টা জায়ন এর হাত থেকে নিয়ে সোফার পাশে রেখে দিলো।
তখন আর কোনো বাধাই কাজে এল না, জায়নের হাতের ঝড় তিয়াশার বুকের উপর আরো গভীর হয়ে উঠল , জায়ন গাউন এর হাতা কাঁধ থেকে আলগা হয়ে নামাতে লাগল , ঘামের ফোঁটা তার কপাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তিয়াশার কাঁধে, তিয়াশার গায়ের মিষ্টি গন্ধে যেন তার শ্বাস আরও অস্থির হচ্ছে, হঠাৎ জায়ন পেছন থেকে উঠে সামনে এসে দাড়ালো , চোখে ক্ষুধার্ত তৃষ্ণা, মাত্রাধিক কন্ঠে নিচে ঝুঁকতে ঝুঁকতে কাপা গলায় বলে উঠলো,
___” বেইব ইউর স্মেল ফাঁ*ক মাই মাইন্ড , সরি বেইব
আই জাস্ট ওয়ান্ট টু টেস্ট ইউ লিটল মোর ।”
এই বলেই তিয়াশার বাঁকানো ঢেউ খেলানো কোমর ধরে এক ঝটকায় তার ছোট্ট শরীর তুলে নিল নিজের পাহাড় সমান বুকে , তিয়াশাও তার দুই পা দিয়ে আঁকড়ে ধরলো জায়ন এর কোমর আর দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো জায়ন এর গলা । দুজনেই উন্মাদ হয়ে পাগলের মত একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট বসাতে লাগল গভির ভাবে খুব গভীর একবার উপরের ঠোট একবার নিচের ঠোট যেন অনেক দিনের তৃষ্ণা মেটাতে চাইছে ।
দুজনের ই ঠোঁট ভিজে একাকার হয়ে উঠল ।
জায়ন এবার মুখ নামিয়ে নিল তিয়াশার গলায়, ভিজিয়ে দিল প্রতিটি স্পর্শে , তিয়াশার গলা ভেজাতে ভেজাতেই শুইয়ে দিল খাটে, তিয়াশার গাউন বুকের থেকে নামিয়ে দিল কোমড়ে,তিয়াশার বুকের অন্তর্বাস এর মাঝে উন্মাদ হয়ে মুখ বসিয়ে দিল আর জায়ন এর হাত চলে গেল গাউনের অভ্যন্তরীন । এরপর তিয়াশার উন্মুক্ত উরুতে হাতের ঝড় চালাতে শুরু হলে
তিয়াশা কেঁপে কেঁপে উঠছিল,
__” উমমম….”
বলে খামচে ধরলো জায়ন এর চুল।
তিয়াশার বুক থেকে পেট পর্যন্ত ভিজিয়ে দিল নিজের ঠোঁট দিয়ে আর ছড়িয়ে দিল অজস্র ভালোবাসার লালচে চিহ্ন । জায়ন তিয়াশার শরীরে মুখ ডুবিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো ,
__” বেইব ইউ আর টু সেন্সেটিভ , এন্ড ইটস মেক মি
ক্রেজি । ”
কণ্ঠে অসহায়তা, চোখে উন্মাদনা। কিন্তু হঠাৎ করেই সে থেমে গেল, ভেতরের সেই দানবীয় ক্ষুধাকে যেন আর সামলাতে পারছিল না। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়াল, সোজা চলে গেল ওয়াশরুমে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে সেদিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করল, ঠান্ডা পানি গায়ে পড়তে লাগল, কিন্তু সেই পানিও তার শরীরের উষ্ণতায় আরও গরম হয়ে উঠছিল ।অথচ বারবার মাথায় ঘুর পাক খেতে লাগল কয়েক সেকেন্ড আগের তিয়াশার অস্থির মুখ, উত্তেজনায় ভেজা চোখ আর ভয়ংকর তৃষ্ণার্ত শরীর দেয়ালে হাত ছুঁড়ে মারল, চোখের সামনে সব ভেসে উঠছে , যা তাকে করে তুলছে এক তৃষ্ণার্ত হিংস্র পশু , এক হাত দিয়ে মার্বেল এর দেওয়াল চাপরালো আর মুখ থেকে বের হলো একটাই
বাক্য……
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৭
___” ওহ ফাঁ*ক”
অন্যদিকে তিয়াশা বিছানায় শুয়ে রাগে ফুঁসছিল। এক ঝটকায় সোয়া থেকে উঠে ফুঁসতে ফুঁসতে বালিশ ছুড়ে মারল ওয়াশরুমের দরজার দিকে। ঠোঁট কামড়ে বিড়বিড় করে বলল,
__”আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আবার বালতি ভরে পানি কে ঢালতে বলেছিলো ?……. ধুররর”
