তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৯

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৯
নীল মণ

সন্ধ্যা রাতে করিডোরের কোনায় বসে আজকের নতুন বউ নিয়ে সবাই গল্পে মেতে উঠেছে, গল্পগুলোতে হাসি, হালকা খুনসুটি, আর ছোটখাটো জোকসের মধ্য দিয়ে করিডোর যেন আনন্দের আড্ডায় কেঁপে উঠছে, কিন্তু পরির মনের অবস্থা ভালো নেই, তাই সবাই মিলে ওর মন ভালো করার জন্যই এখানে জড়ো হয়েছে, প্রত্যেকটি হাসি, প্রত্যেকটি ছোঁয়া, প্রত্যেকটি দৃষ্টিকোণ যেন পরির মনকে সামান্য হলেও শান্তি দিতে চাচ্ছে, চৌধুরী বাসার ছোটরা সবাই আছে এখানে উপস্তিত, তারা নিজেরা হাসি খেলা আর কৌতূহল ভরা চিৎকারে পুরো পরিবেশকে আরও উজ্জ্বল করছে, যেন নতুন অতিথির আগমন পুরো করিডোরকে উষ্ণতা আর নরম উত্তেজনায় মুড়ে ফেলেছে।

হুট করে বিয়ে উপলক্ষে রাতে যে ছোট্ট আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে নতুন অতিথি আরোহীর আম্মু আব্বুও ডাকা হয়েছে, উপস্থিত হয়েছে আয়েশা বেগমও, কারণ আসলে বাসা পাশাপাশি, তাই একটু কিছু হলেই আয়েশা বেগমের পরিবার স্বাভাবিকভাবেই উপস্থিত থাকে, সেটা হোক সুখের পরিস্হিতি বা দুঃখের, তাদের উপস্থিতি যেন করিডোরের আলোকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছে, গল্পের আড্ডা আরও জীবন্ত করে দিচ্ছে, প্রতিটি হাসি আর কথোপকথন যেন পাঠকের চোখে পুরো পরিবেশকে স্পন্দনময় করে তুলছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হ্যাঁ ছোটদের আড্ডার আসরে একজন উপস্তিত নেই আর সে হলো এই বাসার বড় ছেলে, থাকবে কি করে, সে তো এখনও ওয়াশরুমে ব্যস্ত, নিজের শরীরের জ্বালা মেটাচ্ছে, আর তিয়াশা বিরক্ত মুখ নিয়ে বেরিয়েছিল, গাউনের ওপর একটি ওড়না পেঁচিয়ে, কারণ গলায় এবং বুকে খানিকক্ষণ আগেই জায়নের দেওয়া ভালোবাসার চিহ্নগুলো এখনও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বান্ধবীর কথা ভেবে বিরক্তি দমন করে এক বালতি পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে, যেন অন্তরে কিছুটা শান্তি এবং স্বস্তি ফিরে আসে।

বৃষ্টি আর নাজিম তাদের বাসায় আছে, আজকে ও আসার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু কোন এক কারণে আসা হয়নি, তাদের অনুপস্থিতি যেন করিডোরের আনন্দের মাঝেও এক নিঃশব্দ ফাঁক তৈরি করছে, যেখানে উপস্থিতরা হাসছে, আড্ডা দিচ্ছে, কিন্তু মনেই তারা তাদের উপস্থিতি অনুভব করছে।
__” আচ্ছা জেমস ভাই বেস তো বিদেশী হয়ে আমাদের বাঙ্গালী মেয়ে পটায় নিয়ে বিয়ে করে নিলে ।”
রায়ান এর কাধে হাত রেখে আকাশ হাসতে হাসতে এই কথা গুলো বলল, যেন তার হালকা ছোয়ায় জেমসের উদ্দেশ্যে মজা ছড়িয়ে দিচ্ছে, করিডোরে সেই শব্দ যেন আনন্দের তরঙ্গ সৃষ্টি করছে, হেসে ওঠার ছটায় ঘরটাকে উজ্জ্বল করে দিচ্ছে।
কিন্তু জেমস তো সোজা সাপটা উত্তর দিয়ে দেয় সবাইকে একমাত্র জায়ন ছাড়া, তাই একটু ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে জেমস জবাব দিল

__” আমার মম বাঙ্গালী সো দ্যাটস মিন আই এম অলসো বাঙ্গালী। এন্ড আমার রেইনবো আমায় আগে
আইস ব্লিঙ্ক করেছিল , আর সেই আইস ব্লিঙ্ক এ আমি ওর জালে ক্যাচ হয়ে যাই।”
কথা শেষ হতেই জেমস একবার ম্লান হাসি দিয়ে পরির দিকে তাকাল। সেই হাসিটা যেন হালকা বাতাসের মতো করিডোরে ছড়িয়ে পড়লো, এবং মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ হাসির ফোয়ারা জমে উঠলো। কিন্তু আকাশের মুখ চুপচাপ, যেন হঠাৎ করে তার ভেতরের কেমন যেন বেকুবত্ব প্রকাশ পেল। নিজের এই অবস্থা দেখে তার গায়ে লালচে রঙের লাজমাখা রঙ ভেসে উঠলো। পরির ঠোঁটে একটু হাসি ফুটলো এত চঞ্চল মেয়ে, যার হাসি সবসময় আনন্দে ভরপুর, আজ হঠাৎ করে এক বাস্তবের সঙ্গে পরিচিত হয়ে কেমন যেন চুপচাপ আছে। কিন্তু ধীরে ধীরে, সবার হাসি ঠাট্টার মধ্যেই সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতার ছোঁয়া পেতে শুরু করলো।

এই হাসি ঠাট্টার মাঝেই তিয়াশা, চোখে চঞ্চলতা আর মুখে দুষ্টু মিশ্রিত হাসি নিয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
__” ভাইয়া জেমস ভাইয়া কিন্তু অনেক ফাস্ট তোমার মত আমার রুহী বেবিকে প্রপোজ করতে তিন বছর লাগায়নি । এক মাসের মধ্যে আমাদের পরি কে বিয়ে করে নিল । কিন্তু তুমি তুমি তো গরুর গাড়ির থেকেও স্লো ।”
তিয়াশার কথা শুনে চারপাশে হো হো করে হাসির রোলার কোস্টার শুরু হয়ে গেল। পরিও আর নিজের হাসি সামলাতে পারল না, ইউভি তো হাসতে হাসতে দুই হাত দিয়ে আকাশের কাঁধ চাপড়ে ধরল। আকাশ নিজেই বুঝতে পারছিলো, আজকে তাকে সবাই মিলেই জবাই করবে। তার মুখের ভাঁজে লাজ আর হালকা রাগ মিশে, মনে হচ্ছিল, সে নিজেই কতটা অসহায়।

আরোহীর মুখে হাসি ফুটেছিল, কিন্তু হাসিটা ছিল হালকা, খেলার মতো, যেন গম্ভীর কথার ভীড়ে একটি ক্ষণিকের নরম উষ্ণতা ঢুকেছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
__” আরে তিউ বেবি তাও আমি পেছন দিয়ে চাপ দিয়েছিলাম বলে প্রপোজ টা করেছিল নইলে দেখতি
তোদের চুন্নু মুন্নু হয়ে যেত তাও তোদের এই আকাশ ভাই এর গাড়ি সেখানেই দাড়ানো , আর বিয়ে জায়ন ভাইয়া না থাকলে সেটার আসাও আমার ছিল না এই ভীতু মার্কা পিঁপড়ের কাছ থেকে।”
আকাশের মুখে কেমন যেন একটি অচেনা অসহায়তা ভেসে উঠলো। চোখে একটা লজ্জার দৃষ্টি । সে ধীরে ধীরে আরোহীর দিকে তাকাল, মনে মনে যেন নিজের অনুভুতি প্রকাশ করলো,

__”সোনা তুমিও আমার সঙ্গে এরকম করছো ? আমায় তুমি পিপড়ে বলতে পারলে?”
ইউভি একটু হেসে তারপর হাসিটা থামিয়ে আরোহীর দিকে তাকিয়ে আকাশের উদ্দেশ্যে বলল,
__” হ্যাঁ বনু এটা কিন্তু তুমি ঠিক করলে না , আমার ভাই টাকে পিঁপড়ে বলা তোমার মোটেই উচিত হয় নি ।”
আরোহীর হৃদয় হঠাৎ কেঁপে উঠলো, মনে মনে সে ভাবলো, হয়তো ইউভি ভাইয়া সত্যিই রেগে গিয়েছে। আর আকাশের চোখে, এক ভরসার আলো ভেসে ওঠা, মনে মনে সে আওরালো
__” আমার ইউভি ভাইয়াই সব থেকে বেস্ট ।”
আরোহী মুখ খুলে সরি বলতে যাবে, কিন্তু ইউভি তার আগেই না থেমে এক বাক্য ছুঁড়ে দিল, হেসে হেসে ব্যাঙ্গ করে,

__” পিঁপড়ে না বলে গাধা বলা উচিত ছিল বোন তোমার।”
এই বলেই ইউভি আবারো পেট চেপে শব্দ করে হেসে উঠলো তার সঙ্গে সঙ্গ দিল বাকি সবাই কিন্তু আকাশের
চোখে রাগ মুখে ফুসসে রাগে মনে হচ্ছে এই মীরজাফর ইউভি ভাই কে এখন ই যদি উদুম কেলাতে পারত কিন্তু হয় তো মেজো ভাই তাই সম্ভব না।
হঠাৎ, এমন এক নিঃশ্বাসে ভরা মুহূর্তে, রায়ান উঁচুস্বরে ইউভির দিকে তাকিয়ে বলল,
__” ইউভি ভাই আকাশ ভাই তো না হয় গাধা তাই তিন বছর লাগিয়েছে । তুমি তো পাঁচ বছর লাগিয়েছ তোমার হিল্লেও বড় ভাই করেছে । আর তোমাকে অনুক্ষেপি যদি বলে বসতে তুমি বসে পরবে , তোমায় যদি সারা রাত ছাদে থাকতে বলে তুমি ছাদেই থাকবে তাহলে তুমি কি ইউভি ভাই?”

এই শব্দগুলো বাতাসের মধ্যে ঝাঁকুনি দিলে, ঘরের সমস্ত দৃষ্টিই এক মুহূর্তে রায়ানের দিকে ঝুঁকে পড়ল। অনন্যা আর ইউভি একবারে এমনভাবে তাকাল চোখে আগুন, দৃষ্টিতে এমন ক্ষুধা যেন একজন প্রাণী শিকারের দিকে ঝুঁকেছে যেন তারা তাকে গিলে ফেলবে, কিন্তু রায়ান এর এতে কিচ্ছু যায় আসে না।
অনন্যা তো চোখ বড় বড় করে দাঁতে দাঁত চেপে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো,
__” রায়ান এর বাচ্চা তোকে শীল বাটনা দিয়ে বেটে ভর্তা বানিয়ে দেব ।”

অনন্যার সেই দুষ্টু মিষ্টি গম্ভীর হুমকির মাঝেই হঠাৎ আকাশের গোমরা মুখের বরফ ও ভাঙলো, সে ও জোরে হেসে উঠলো, এমনভাবে যেন অনেকদিন জমে থাকা হাসি একসাথে বেরিয়ে এলো। তার হাসির সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও থামতে পারলো না।
মারিয়া, তিয়াশা, পরি, এমনকি জেমসও সবাই যেন একসাথে হাসির বিস্ফোরণ ঘটালো। হাসতে হাসতে তিয়াশার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো, বুক দুলে উঠছিল আনন্দে।
কিন্তু হাসির মাঝেও ইউভির রাগ থামলো না। দাঁত কিরিমিরি করে, চোখে তীব্র দৃষ্টি নিয়ে সে রায়ানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
__” খুব বেড়েছিস কিন্তু রায়ান তুই , আমি তোর থেকে অনেক বড় কিন্তু সম্মান দিবি আমায় । আর দেখব আরেকটু বড় হ তোর ও জায়ন ভাই ছাড়া গতি হবে না।”
ইউভির সেই রাগী গলা সবার মুখে আবারো মৃদু হাসির ঝড় তুললো। রায়ান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে জবাব দিল,

__” ইউভি ভাই হতে পারো তুমি আমার বড় কিন্তু তোমার ঐ হৃদয়পাখি না কি পাখি বলে ডাকো তার থেকে গুণে গুণে আমি দুই মিনিট এর বড় তাই আমি সম্বন্ধী লাগি এজন্যে সম্মান ঠম্মান করতে পারব না বরং তোমার আমায় করা উচিৎ আর বাকি রইল আমার হিল্লে…. । ”
এই বলে সে একবার চোখ সরাসরি মারিয়ার দিকে ফেললো। মুহূর্তেই মারিয়ার বুক ধক করে উঠলো, হৃদস্পন্দন অকারণে বেড়ে গেল। বুঝতে পারছিল না কেন রায়ানের সেই দৃষ্টি দিল তাকে কেমন কেঁপে উঠতে বাধ্য করলো। রায়ান আবারো ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে গম্ভীর সুরে যোগ করলো,
__” শুধু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষা আর তার ঠিক বয়সের অপেক্ষা ,বাসায় বলব না মানলে সোজা তুলে নিয়ে যাব , আর যাকে নিয়ে যাব তার পারমিশন চাই না । ভালোয় ভালোয় গেলে তার জন্যই ভালো হবে নইলে বুঝবে তাসনিন রায়ান চৌধুরী কতখানি ভয়ঙ্কর।”

মাত্র আঠারো বছরের এক ছেলের কণ্ঠে এই দুঃসাহসী ঘোষণা শুনে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সবার চোখ বিস্ফারিত, বিস্ময় আর অবিশ্বাসে ভরা। আকাশ আর ইউভি অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো, যেন মনে মনে বলছে”এই ছেলে কি বললো?”
জেমস এর তো কাশি ই উঠে গেলো , মনে মনে ভাবছে
__” লিটল বয় জাষ্ট লাইক মাই স্যার ,,, টু মাচ স্ক্রে ওহ মাই গড ।”
কিন্তু অনন্যা, তিয়াশা আর আরোহীর মুখে তখন অন্যরকম মুচকি হাসি। তারা ভালো করেই জানে এই কথা কার উদ্দেশ্যে ছোঁড়া হয়েছে। রায়ানের চোখে যে জেদ, যে দৃঢ়তা ফুটে উঠেছে, তাতে তার মনের গোপন সত্য লুকোনো নেই।

মারিয়ার কেন জানিনা এক অজানা ভয় কাজ করছে বুকের ভিতর সে রায়ান এর কথা বুঝতে পারে নি কিন্তু
রায়ান এর ওই হুট করে তাকানো যেন তাকে অনেক কিছু বলে দিতে চাইছে । যেই তাকানোর অর্থ ছিল এক সতর্কতা।
ইউভি আর আকাশ বুঝে পায় না মাঝে মাঝে এই ছেলে কার কথা বলতে চায়। তারা কোউতুহলের
সঙ্গে অনেক বার রায়ান কে জিজ্ঞেস ও করেছিল
কিন্তু রায়ান কোন জবাব ই দেয় না।
আজও তার সেই রহস্যময় হাসি আর দৃষ্টি মিলিয়ে গেল হাওয়ায়, রেখে গেল অস্থিরতা আর একরাশ কৌতূহল।
এই গম্ভীর পরিবেশ ঠিক করতে এতক্ষণ পরেই পরি নিজের নরম গলায় বলে উঠলো,

__” হ্যা আমাদের রায়ান বাকি সবার মত না কিন্তু একটা কথা আমাদের সবার বিয়ে হওয়ার পেছনে একজন ই আছে, সে হলো আমাদের জায়ন ভাইয়া।”
পরির সেই সহজ সরল স্বীকারোক্তি যেন মুহূর্তেই এই দুষ্টু মিষ্টি আবহে আরো আলোর ফোঁটা ছুঁড়ে দিল। অনন্যা আর আরোহী তো একসঙ্গে বলে উঠলো,
__” আমাদের জায়ন ভাইয়া বেস্ট।”
তাদের কণ্ঠে গর্বের ঝিলিক ছিল, মুখে ছিল প্রশংসার উচ্ছ্বাস। এই প্রশংসা শুনে তিয়াশার বুকের ভেতরে কেমন যেন মিষ্টি গর্বের ঢেউ খেললো। চোখের কোণে হাসির আলো ফুটলো, কিন্তু গর্বের মাঝেই আবার সেই বদমাইশ বরটাকে মনে পড়ে গেল, ।কিন্তু তার বদমাইশ বর টা কয়দিন ধরে ভালোই জ্বালাচ্ছে ,বুকের ভেতরে হালকা দুষ্ট অভিমান জমে উঠলো। আর সেই অভিমানই যেন তার মুখ দিয়ে এমন কিছু কথা বের করিয়ে দিল, যা এই মুহূর্তে বলা তার উচিত ছিল না,

__” কিন্তু রুহি বেবি আর পরি বেবি তোদের কপাল গুলো অনেক ভালো, তোদের বরগুলো কত ইয়াং, আমার আকাশ ভাইয়া তো এত হ্যান্ডসম, উফফ
আর এত কিউট এর জেমস ভাইয়ার কথা গুলো তো বললামই না মেয়েরা দেখলে চোখে ডুবে যেতে চাইবে। আর আমার আর অনুর কপাল দেখ, বুড়ো বর জুটেছে কপালে ইস আমিও যদি ইয়াং বর পাইতাম একটা।”
শব্দগুলো ঠোঁট পেরিয়ে আসতেই হঠাৎ করে পুরো করিডোর যেন থমকে গেল, এক মুহূর্ত আগেও যেখানে আড্ডা ছিল চনমনে হাসি আর খুনসুটিতে ভরা, সেখানে হঠাৎ নেমে এলো এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। তিয়াশা অজান্তেই কথা বলেই চলেছে, কিন্তু চারপাশের মুখগুলো হঠাৎ স্থবির হয়ে উঠল সবার দৃষ্টি তখন তার পেছনে দাঁড়ানো সেই মানুষটার দিকে, যার চোখে ঝিলিক দিচ্ছিল অগ্নিশিখার মতো এক তীব্র আগুন।
ইউভির ও রাগ হচ্ছিল তার বোনের উপর যে সে তাকে বুড়ো বলেছে কিন্তু আবার মায়াও হচ্ছিল কারন জানে
তার বোনের কপালে এখন দুর্ভোগ আছে।
কিন্তু তিয়াশা তখনো বুঝতেই পারছে না তার ঠিক পেছনে কে দাঁড়িয়ে আছে। সে গলা খাঁকারি দিয়ে হেসে উঠতে চাইলো, ঠোঁট নেড়ে বলল,

__” হ্যা তোরা কিন্তু তোদের বর গুলোকে সাবধানে….”
কিন্তু বাক্যটা শেষ করার আগেই আরোহী হাসার ভান করে অস্থির ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলল,
__” বোইন এখন চুপ যা প্লীজ।”
তিয়াশা অবাক হয়ে উঠল সবার চোঁখ মুখ দেখে , তারপর চারিপাশে সবার মুখের দিকে একবার দেখে একটু হেসেই বলে উঠলো,
__” তোমাদের মুখ গুলো দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন
আমার বদমাইশ বর আমার পে পেছনেই দা দাঁড়ানো….”

কাঁপতে কাঁপতে নিজের কথা শেষ করলো কারণ তার আগেই একটা শক্ত পোক্ত হাত তার ঘাড়ে পরতেই তিয়াশা বুঝে গেল এই স্পর্শ কার, মুহূর্তেই তিয়াশার গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে , ঠোঁট শুকনো হয়ে টেনে আনল এক হাসি, ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ মেলে তাকাতেই দেখল হ্যাঁ, সেই অগ্নিদৃষ্টি ভরা তার বর ঠিক তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে।
তিয়াশার চোখ হঠাৎ বড় হয়ে উঠল, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে, ভয়ে ফিসফিস করে মুখে এনে ফেলল,
__” আ আমি কি কিছু বলি নাই বর।”
এই সরল বাক্যটা যেন মুহূর্তেই রাগী সিংহের গুহায় ঢোকা একটি ছোট্ট হরিণশিশুর কান্না। জায়নের মুঠোতে তিয়াশার ঘাড় শক্ত হয়ে চাপা পড়েছে, তার চোখে ফুটে উঠেছে প্রচণ্ড অগ্নিদৃষ্টি। একবার আকাশের দিকে তাকাল, একবার জেমসের দিকে সে দৃষ্টি এমন শীতল ও ভয়ঙ্কর যে আকাশ বুক কাঁপিয়ে ঢোক গিলল, মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগল,

__” বইন বাকি সবাই প্রশংসা করলে আমি হইলে গর্বে ফাটতাম, কিন্তু তুই ক্যান আমায় টেনে নামালি? আমার কপালে তো এখন দুর্ভোগ বসে গেল রে।”
অন্যদিকে জেমস ভয়ে কাশতে কাশতে নিজের মনে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে, ভাবছে,
__” ওহ মাই গড, লিটল গার্ল ইজ ইন বিগ ট্রাবল, মাই গড ইটস স্কেরি লাইক হেল।”
বউয়ের মুখে অন্য ছেলের প্রশংসা শুনে জায়নের বুকের ভেতরটা মুহূর্তেই আগুনে জ্বলে উঠেছিল। হোক তারা তার ভাই, । তিয়াশার ঠোঁট থেকে বেরোনো সেই শব্দগুলো জায়নের কানে গিয়ে যেনো জ্বলন্ত আগুনের শিখা ঢেলে দিল। বুকের ভেতর হঠাৎই এমন এক তীব্র রাগের ঢেউ উঠল যে তার পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। পেশীগুলো ফুলে শক্ত হয়ে উঠছে, চোয়ালের হাড় দাঁত কিড়মিড় করতে করতে আঁটসাঁট হয়ে গেছে। তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে এমন এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টি, যেন মুহূর্তেই সামনে দাঁড়ানো ছোট্ট বউটাকে গ্রাস করে ফেলবে।

তিয়াশার ঘাড়ে হঠাৎ শক্ত করে নেমে এলো তার হাত, এমন এক চাপে যে তিয়াশা ভয়ে কেঁপে উঠল, বুকের ভেতরটা হুহু করে শূন্য হয়ে গেল। চারপাশের পরিবেশ মুহূর্তেই জমে গেল বরফের মতো। সবাই নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে শুধু সেই আগুনে জ্বলতে থাকা দম্পতির দিকে। জায়ন দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে ফুঁসতে ফুঁসতে ভয়ঙ্কর গম্ভীর কণ্ঠে ছুঁড়ে দিল,
__” কে সুন্দর আরেকবার বল? কিছু বলছি না বলে পেয়ে বসেছিস? তোকে বলেছিলাম না অন্য কোন ছেলের নাম মুখে নিবি না?”
তার কণ্ঠের এমন প্রচণ্ড গর্জন যেন সারা করিডোর প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে, দেয়াল পর্যন্ত কেঁপে উঠছে। সবার বুকের ভেতরে হঠাৎ এক অচেনা ভয়ের শীতলতা নেমে এলো। আরেকটু থেমে আবারও বজ্রের মতো গর্জে উঠল,
__” বলেছিলাম বল?”

সেই গর্জনে করিডোরে বসে থাকা সবাই অজান্তেই কেঁপে উঠল। এমনকি তিয়াশার চোখের কোণ থেকে অশ্রুর বিন্দু গড়িয়ে নামল ভয়ে, কিন্তু সেই অশ্রু জায়নের অগ্নিদৃষ্টিতে ধরা পড়ল না। বরং তার হাতের শক্ত চাপে তিয়াশার ঘাড়টা ব্যথায় জ্বালা করতে শুরু করল। বুক কাঁপতে কাঁপতে, গলা শুকিয়ে আসতে আসতেই তিয়াশা হাত বাড়িয়ে আরোহীর হাত আঁকড়ে ধরল, তারপর থরথর কাঁপা কণ্ঠে নিজের বাঁচার শেষ যুক্তিটুকু মনে করিয়ে দিল,
__” তু তুমি কি কিন্তু কথা দিয়েছিলে আমায় আর ব্যথা দেবে না, বকবে না।”
কিন্তু জায়নের মাথা তখন একেবারেই আগুনে ভরপুর। সেই শান্ত প্রতিশ্রুতির কথা যেন তার কানে আসছেই না। ভয়ঙ্কর রাগে ঠাণ্ডা অথচ ভয়াবহ গম্ভীর কণ্ঠে ছুঁড়ে দিল একের পর এক তীর,

__” তোর কথা দেওয়ার ১০৮ ,তুই এখানে বসে পরপুরুষের প্রশংসা করবি, নিজের বরকে বুড়ো বলবি, ভুলে গেছিস তোর বর একটা পাগল? আর কি বলছিস বুড়ো? তাহলে সেই বুড়ো বরকেই সামলাতে তোর হিমশিম খেতে হয় কেন, বল?”
এই কথাগুলো বাতাসে ভেসে আসতেই চারপাশের সবাই একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল। যেন সময়ই থমকে দাঁড়াল। তিয়াশা ভয়ে ভয়ে কেঁপে উঠছে, তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভয়ের শীতলতায় জমে গেছে, মনে মনে নিজেকেই অভিশাপ দিচ্ছে ,কেন যে বললাম?
কিন্তু জায়ন থামল না। বুক ভরে এক গভীর নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে আবারও গর্জে উঠল এমন এক ভয়ঙ্কর কণ্ঠে যে শোনামাত্র কারও শরীর শিউরে উঠল,

__” আর ভাবলি কী করে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব? মনে তো হচ্ছে তোর এই ফর্সা গাল চাপকে লাল করে দিই। তোর বুকের পাটায় এত বড় সাহস হয়েছে তুই আমার এখানে বসে পরপুরুষের প্রশংসা করিস? চল, আজ তোর প্রশংসাই করাচ্ছি। ভুলে গেছিস তাই না এই আবরার জায়ন কেমন? আজ আবার মনে করিয়ে দেব, এতবার বলার পরও তুই সুধরাবি না!”
এই কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে আর এক মুহূর্ত সময় নিল না, হুট করে তিয়াশাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে কোলে তুলে নিল। তিয়াশা হাত পা ছুঁড়ে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে, বুক কেঁপে কেঁপে মনে মনে জানছে আজ তার কপালে কালো মেঘ নেমে এসেছে। কিন্তু জায়নের শক্ত বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করা অসম্ভব।
সোজা নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে লাগল জায়ন, যেন পৃথিবী থেমে গেছে। চারপাশের মুখগুলো সাদা হয়ে গেছে ভয়ে। ইউভি সাহস করে ভাঙা গলায় ডেকে উঠল,

__” ভাইয়া, বলছি যে….”
কিন্তু তার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই জায়ন ঘুরে এমন অগ্নিদৃষ্টি ছুড়লো যা এসে সোজা ইউভির চোখে গিয়ে বিধল। সেই দৃষ্টি এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে মুহূর্তেই ইউভির ঠোঁট শুকিয়ে গেল, কথা গলায় আটকে গেল। আর কারও সাহস হলো না কোনো শব্দ উচ্চারণ করার।
তিয়াশা তখন কাঁপতে কাঁপতে বুকের ভেতর আতঙ্ক আর অসহায়তা নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
__” ছা ছাড়ো প্লিজ, আমার ভয় লাগছে তোমাকে।”

কিন্তু তিয়াশার কথায় সে কোন জবাব দিলো না কারন তখন জায়নের রাগে শরীর কাঁপছিল। বুক থেকে যেন আগুন বেরোচ্ছে, চোয়ালের পেশি টনটন করছে, আর চোখে সেই অগ্নিদৃষ্টি যেটা যে-ই একবার দেখে ফেলে, বুকের ভেতরটা হিম হয়ে যায়। তিয়াশাকে ঘরে এনে বেডের উপর এমনভাবে ফেলে দিল যেন পৃথিবীর ভারটাই তার ওপর নামিয়ে দিল। নিজের রাগ সামলানোর ক্ষমতা তার আর নেই, তাই এক হাত দিয়ে তিয়াশার লম্বা কালো চুল শক্ত করে টেনে ধরলো, আরেক হাত দিয়ে তার সরু চোয়াল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত ঘষে বললো,
__” কি হলো বল? কোথায় সাহস পেয়েছিস এই কথা বলার?”
তিয়াশার মাথার ত্বক টনটন করছে, ব্যথায় চোখ বুজে আসছে, ঠোঁট কাঁপছে, বুক ওঠানামা করছে আতঙ্কে। তবু ভাঙা কণ্ঠে সে চেষ্টা করলো বোঝাতে,

__” আ আমরা সবাই তো মজা করছিলাম , তুমি হাতটা সরাও প্লীজ, খুব লাগছে আমার।”
কিন্তু জায়নের রাগে কান ঢাকাই যাচ্ছে না। তার কণ্ঠে এখন গর্জন, কাঁপন ধরানো গম্ভীরতা,
__” লাগার জন্যই ধরেছি তোকে তো মনে হচ্ছে … আর কি বললি? মজা? হুঁ আমাকে নিয়ে গতকাল ওদের সামনে মজা করেছিস, আমি কি কিছু বলেছি? বল?”
এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে তিয়াশা সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। বুকের ভেতরে শুধু ঢাকের মতো শব্দ হচ্ছে। তার ভয় আর অসহায়তা মিলেমিশে একটা অশ্রুর ঢেউ গড়িয়ে নিয়ে গেল চোখ থেকে। তিয়াশাকে নিঃশ্চুপ দেখে জায়ন আরোও বেশি জোরে গর্জে উঠলো,

__” আনসার মি, ড্যাম ইট!”
তিয়াশা কেঁপে উঠে তারাতারি করে জবাব দিল ,
__” না না কিছু বলনি ।”
জায়নের হাতের চাপ তখনও ঢিলা হয়নি। তার চুল টেনে ধরা, চিবুক শক্ত করে ধরে রাখা, আর চোখের সেই দাউ দাউ জ্বলা আগুনে তিয়াশার নিঃশ্বাসই যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। জায়ন বুক ফুলিয়ে এক নিঃশ্বাস নিলো, যেন রাগকে ভেতরে চেপে রাখতে গিয়ে বুক ফেটে যাচ্ছে।
__” তাহলে আজকে কেন বলেছি বল ? ”
তিয়াশা হেঁচকি তোলা গলায় ভাঙা স্বরে বললো,

__” আমি আমি আকাশ ভাইয়া আর জেমস ভাইয়ার কথা বলেছি তাই । আর কখনো বলবো না কারো কথা এবার ছাড়ো প্লীজ।”
এই কথায় জায়নের মগজে যেন আরো আগুন ঢালা হলো। দাঁতে দাঁত চেপে, বুক ফুলিয়ে বজ্রকণ্ঠে ছুঁড়ে দিলো হুঁশিয়ারি,
__” আমি আর তোর নিজের ভাই , নিজের বাপ চাচা বাদে বাকি সবাই পরপুরুষ নেক্সট টাইম কারো কথা
মুখে আনবি তো ঐখানেই জানে মেরে ফেলবো রোদ
বলে দিলাম ।”

এই রাগভরা ঘোষণা দিয়ে সে এক ঝটকায় তিয়াশার চুল আর চোয়াল ছেড়ে দিলো। কিন্তু সেই ছাড়াটাও যেন শীতল স্রোতের মতো নয় বরং বিদ্যুৎ চমকের মতো আঘাত হয়ে নামলো তিয়াশার ভেতরে। জায়ন তখন কোমরে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, তার বুক ওঠা নামা করছে, আর চোখে এখনো সেই তীব্র রক্তিম আগুন।
__” রুমের বাইরে পা রাখবি তো তোর খবর আছে। মজা না ,মজা করা বার করছি তোর ।”
এই কথা ছুঁড়ে দরজায় শব্দ করে বেরিয়ে গেলো সে, যেন ঝড় বয়ে গেল ঘরের ভেতর দিয়ে।
বিছানায় পড়ে থাকা তিয়াশা এখনো থরথর করে কাঁপছে। বুকের ভেতরটা দম বন্ধ হয়ে আসছে, চোখ ভিজে যাচ্ছে অশ্রুতে। অনেকদিন পর আজ আবার সে দেখলো জায়নের সেই পুরোনো ভয়ঙ্কর রূপ যেটা সে ভুলেই গিয়েছিল। মনে মনে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে শুধু একটা কথাই ভাবলো,
__” এই শয়তান লোক কদিন আগে আমি মরে যাচ্ছিলাম বলে পাগল হয়ে যাচ্ছিল আর এখন নিজেই মারার কথা বলছে ।”

রুম থেকে গটগট করে বেরিয়ে এসে আবারো করিডোরে দাঁড়ালো জায়ন। তার চোখ এখনো অগ্নিদৃষ্টিতে ভরা, চারপাশে যারা দাঁড়িয়ে ছিল তাদের বুক কেঁপে উঠলো, কিন্তু কারো মুখের হাসি চাপাও যাচ্ছিল না কারণ সবাই জানে, রাগে জায়ন যতই ভয়ঙ্কর হোক, এ দৃশ্যের মজা কিন্তু কম কিছু নয়।
হঠাৎই জায়ন তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ঘুরিয়ে আকাশ আর জেমসের দিকে তাকালো। দুজনেই তখন একে অন্যের দিকে তাকিয়ে গিলে ফেলল একটা অদৃশ্য ঢোক। পরমুহূর্তেই জায়নের কণ্ঠে বজ্রপাতের মতো গর্জন শোনা গেল,
__” তোরা দুজন… এদিকে আয়।

আকাশের বুক তখন প্রায় ধপধপ করে বাজছে। সে জেমসের দিকে একটু হেলে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” দেখো হাফ-বিদেশী ভাই, আজকে আমাদের কপালে কালো মেঘ জমেছে, দুর্ভোগ তো চেপেই বসেছে।”
জেমস তো মুখটা কুঁচকে শ্বাস গিলে নিয়ে বিরবির করে উত্তর দিলো,
__” ব্রো, প্লীজ, চুপ থাকো। স্যার যদি শুনে ফেলে, শাস্তি কিন্তু ডাবল হয়ে যাবে!”
এই ফিসফিসানি শুনে পেছনে দাঁড়ানো ইউভি, অনন্যা, আরোহী, পরি, রায়ান আর মারিয়ার হাসি আর চাপা রইল না। সবাই মুখ চেপে, পেট ধরে ফিকফিক করে হাসছে।
এর মধ্যেই জায়নের রাগী কণ্ঠ আবার কাঁপিয়ে দিল চারদিক,

__” এত ফরমা দিয়ে ঘুরিস কেন সব সময়? দিবি দে! নেক্সট টাইম তোদের দুজনকে যদি দেখি আমার বউ এর সামনে দাঁড়িয়ে স্টাইল মারতে এসেছিস তাহলে বলে দিচ্ছি সব কিছুর মধ্যে পানি ঢেলে দেবো।
বেয়াদপ এর দল ”
তার সেই হুঁশিয়ারিতে আকাশের মুখ লম্বা হয়ে গেল, আর জেমস কপাল চুলকাতে লাগলো যেন হঠাৎ কোন বড় পরীক্ষা দিতে বসে গেছে। কিন্তু পেছনে যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের মুখে তখন এমন হাসি যেন লাফিং গ্যাস খেয়েছে হাসি থামছেই না।
অনন্যা দাঁতে দাঁত চেপে হাসতে হাসতে রায়ানকে ঠেলা দিয়ে বলল,
__” এদের অবস্থা দেখে আমার মনে হচ্ছে বেচারা দুজন এখনি কান ধরে উঠবস শুরু করে দেবে।”
রায়ান এর জবাব একটাই ,

__” একদম ঠিক করেছে বড় ভাই ।”
আরোহী আবার কানে কানে পরিকে বলছে,
__” জেমস ভাইয়ার মুখটা তো দেখ, মনে হচ্ছে কোর্ট মার্শাল চলছে!”
সবাইয়ের হাসি, আকাশ জেমসের ভয়, আর জায়নের রাগ পুরো করিডোরে এক অদ্ভুত মিশ্র আবহ তৈরি হলো। যেন ভয় আর আনন্দ একসাথে খেলছে সবার হৃদয়ের ভেতরে। জায়ন গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে থাকলেও, বাকিদের জন্য এ দৃশ্যটা নিখাদ বিনোদন এক নাটকীয় মুহূর্ত, যেটা নিয়ে আগামী কয়েকদিন পুরো বাড়ি সরগরম থাকবে।
এর মধ্যেই নিচে থেকে গৃহকর্মীদের কণ্ঠ ভেসে এলো,

__”খাবার রেডি, সবাই চলে আসেন টেবিলে।”
একটু আগেও করিডোরজুড়ে হইচই, হাসি ঠাট্টা, রাগ ভয় সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা জমে ছিল। সেই আবহ ভেঙে এবার সবাই ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যেতে লাগল। কারো চোখে এখনো হাসির ঝিলিক, কেউ আবার নিঃশব্দে মুখ চেপে হাসছে, যেন উপরের নাটকীয় দৃশ্যটা হজম করেই নামছে। আবার কারো চোখে কৌতূহল, নিচে গিয়ে কীভাবে অন্যদের কাছে বিষয়টা লুকাবে সেটা নিয়ে ভাবনা।

ড্রয়িং রুমে থাকা পরিবারের অন্যরা উপরে চেচামেছি খানিকটা আঁচ পেয়েছিল বটে। কিন্তু তারা ভেবেছে হয়তো তারা হয়ত মজা করছে, কারন হাসি ঠাট্টার শব্দও ভেসে আসছিল। তাই কেউ বাড়তি চিন্তা করল না।
সবাই একে একে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসতে লাগল। বড় টেবিল সাজানো হয়েছে নানা পদে কাবাব, রেজালা, পোলাও, সালাদ, চিকেন ফ্রাই সব কিছুতেই যেন বাড়তি যত্নের ছাপ। হাসির ফোয়ারার পর এবার পরিবেশ কিছুটা গম্ভীর হলেও খাবারের সুগন্ধ চারদিকে মিশে আলাদা উষ্ণতা তৈরি করছিল।
প্রান্তিক সাহেব চোখ বুলিয়ে নিলেন টেবিলে বসা সবার উপর। এক এক করে গুনে নিলেন মুখগুলো আকাশ আছে, জেমস আছে, ইউভি আছে, বাকি ছেলেমেয়েরা সবাই আছে। কিন্তু এক্ষণই চোখে ধরা পড়লো তার বউমা তিয়াশা, কোথাও নেই। ভ্রু একটু কুঁচকে গেল তার। তীক্ষ্ণ চোখে হঠাৎ জায়নের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
__”মেজো আম্মু কোথায়?”

হলঘরে মুহূর্তেই এক অদ্ভুত চাপা নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সবার চোখ একবারে জায়নের দিকে গিয়ে ঠেকল। কারণ সকলে জানে তিয়াশা না আসার পেছনে এরই মধ্যে কিছু একটা ঘটেছে।
জায়ন তখন ঠাণ্ডা মুখে, কিন্তু ভেতরে ঝড় চাপা দিয়ে, মায়ের উদ্দেশ্যে ইশারা করে বলল,
__”মা এক প্লেট খাবার আলাদা করে বেড়ে দাও তো। আমি নিয়ে যাচ্ছি উপরে।”
জায়ন তার আম্মু কে এক প্লেট আলাদা আলাদা করে খাবার বেড়ে দিতে বলতে বলতে প্রান্তিক সাহেব কোথায় গম্ভীর স্বরে জবাব দিয়ে বলল ,
__” উপরে আছে , নিচে আসার দরকার নেই আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি ।”
তার গলা ভারী, স্বরটা অদ্ভুত কষা। মনে হচ্ছিল যেন সে কাউকে কিছু বোঝাতে চাইছে না, বরং সবার কৌতূহল একেবারে থামিয়ে দিতে চাইছে।
প্রান্তিক সাহেব তার ছেলের কথায় আর কিছু না বলে অনু কে বলে উঠলো,

__” ছোট আম্মু যা তো আমার মেজো আম্মু কে ডেকে নিয়ে আয় ।”
এই এক কথাতেই ঘরের বাতাস যেন জমে গেল। জায়নের চোখ এক মুহূর্তের জন্য সরু হয়ে এল, বাবার দিকে তাকিয়ে তার ঠোঁট আঁটসাঁট হয়ে গেল। সে চেষ্টা করল উত্তরটা সংক্ষেপ রাখতে,
__”বাবা, আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি তো।”
প্রান্তিক সাহেব এবার একরকম শেষ সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দিলেন,

__”না, নিয়ে যেতে হবে না। সবার সাথেই খাবে আমার মেজো আম্মু। তুমি নিজের খাবার খেতে বসো।”
তার স্বরে কোনো তর্কের অবকাশ নেই, স্পষ্ট কর্তৃত্ব আর এক ধরনের স্নেহমিশ্রিত কঠোরতা মিশে আছে। যেন তিনি বুঝিয়ে দিলেন এই বাড়ির নিয়ম সবার জন্য একই, কেউ আলাদা হবে না।
জায়নের বুকের ভেতর তখন একরকম অদৃশ্য চাপা আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। সে চেয়ারে বসে পড়ল ঠিকই, কিন্তু শ্বাস যেন ভারী হয়ে উঠল। দাঁতে দাঁত চেপে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠাণ্ডা মুখে চেয়ারে বসে পড়ল।
এদিকে অনন্যা চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। তার চোখে এক অদ্ভুত কৌতূহল যেন কোনো রহস্য উন্মোচন করতে যাচ্ছে।

খাবার শেষে করিডোর জমে উঠেছে ছোটদের হৈচৈয়ে, সবাই ভিড় করেছে পরি আর জেমসের রুমের সামনে। রুমটা ফুলে ভরা, মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে আছে চারপাশে। পরি একপাশে খাটের কিনারায় বসে আছে লজ্জায় লাল মুখে, মাথা নিচু করে ঘোমটার ভেতর দিয়ে কেবল কাঁপা আঙুলে চাদরের কোণা চেপে ধরে আছে। আর দরজার সামনে যেন এক অদৃশ্য প্রাচীর সব ভাইবোনেরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেই না জেমস ঢুকতে যাবে, তখনই ওরা হাত পেতে দাঁড়িয়ে দিচ্ছে বাঁধা, যেন বিয়ের আসল খেলা এখনই শুরু হয়েছে।
একটু পাশেই জায়ন গম্ভীর মুখে তিয়াশার কোমর জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। কারন সে এখন জেমস আর আকাশের আসে পাশে ও তিয়াশা কে ঘেঁষতে দেবে না। তিয়াশা ও অসহায় মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
ঠিক তখনই অনন্যা হেসে চেঁচিয়ে উঠলো,

__” তাড়াতাড়ী ১ লাক ফেলন হাফ বিদেশী ভাই ।”
শুনেই জেমসের চোখ যেন ডিশের মতো বড় হয়ে গেল। মাথা নাড়তে নাড়তে আরোহীও সঙ্গ দিয়ে বলল,
__” হ্যা তাড়াতাড়ী ফেলেন নইলে কিন্তু বান্ধবী পাবেন
না।”
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। আকাশ কানে কানে ইউভি ঠেলা দিয়ে বলল,
__” শা* বউ এর কাছে যেতে গেলে নাকি এক লাখ দিয়ে যেতে হবে ।”
ইউভি একটু মুখ চেপে হেসে বলল,

__” আমাদের বড় ভাই কত দিয়েছিল মনে আছে তো ।”
ইউভির এই খোঁচা শুনে রায়ান সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল,
__” ওর জন্যেই জায়ন ভাই বড় ভাই আর তোমারা ছোট ভাই ।
সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে, এই মজার দৃশ্য দেখে তিয়াশারও মনে হচ্ছিল একটু কাছে গিয়ে মিশে যায় হাসিতে, কিন্তু জায়নের শক্তকরে ধরা হাত যেন সেই চাওয়াকে দমিয়ে রাখছে। তবুও সাহস সঞ্চয় করে ভয়ে ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল,
__” একটু যাই না ।”
এই সরল অনুরোধ শুনে জায়নের ভ্রু আরও কুঁচকে গেল। সে চারদিকে একবার তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে গভীর স্বরে বলল,
__”আমি দিয়ে দেবো। ওকে এখন রুমে ঢুকতে দে আর এসব বন্ধ কর।”
সবার মুখের হাসি থমকে গেল। তিয়াশা বিরক্ত মুখে জায়নের হাত ছাড়িয়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে, বিড়বিড় করতে করতে,

__”সবসময় বেশি বেশি।”
তার এমন করে চলে যাওয়ায় চারপাশে মুহূর্তেই এক নিস্তব্ধতা নেমে এলো। সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে, কিন্তু জায়ন আর কিছু না বলে গম্ভীর মুখে তিয়াশার পেছন পেছন চললো।
এদিকে অবশেষে জেমস হাতে নোটের বান্ডিল দিল, আর দরজা খুলে গেল। চারপাশের হাসি আর কোলাহলের ভেতর দিয়ে সে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকলো। ফুলে সাজানো ঘরটায় পরি বসে আছে মাথা নিচু করে, শরীর কাঁপছে লজ্জায় আর টানটান উত্তেজনায়। জেমস গিয়ে ধীরে ধীরে বসলো পরির পাশে, আর কাঁপা হাতে ঘোমটা সরিয়ে দিল।
তারপর নরম কণ্ঠে, যেন সমস্ত প্রতিজ্ঞা আর ভালোবাসা মিশিয়ে বলল,
__”ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড, ডোন্ট বি স্যাড। আই অলোয়েস বি উইথ ইউ, মাই রেইনবো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আই নো, আই এম নট পারফেক্ট ফর ইউ বাট আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট ফর ইউ ।”

শব্দগুলো শুনেই পরির বুকের ভেতর জমে থাকা সমস্ত ভয় আর দুঃখ যেন এক নিমেষে গলে গেল। চোখে জল টলমল করে উঠল, ঠোঁটের কোণে ফুটলো ভালোবাসার এক ঝিলিক। মনে মনে সে ভাবলো,ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই মানুষটার হাত ধরেই জীবন পার করবে।
অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গালে, তবুও সেই অশ্রুতেই ছিল আনন্দের নরম আলো। তারপর কী মনে করে, লজ্জায় লাল মুখে জেমসের গলায় হাত রাখল আর ফিসফিস করে বলল,

__”আমার পারফেক্ট চাই না, বেস্ট চাই না। আমার শুধু আপনাকে চাই। আপনার হাত ধরে বাকি পথটা চলতে চাই।”
পরির কণ্ঠের সেই মধুরতায় , তার স্পর্শে জেমসের শরীরে ঝড় উঠল, বুকের ভেতর জ্বলে উঠল অন্য রকম আগুন। সাহস সঞ্চয় করে সে পরির চোখের দিকে তাকাল, আর কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__”রেইনবো ক্যান আই কিস ইউ?”
এই কথাতেই পরির সারা শরীর কেঁপে উঠলো এক নতুন অনুভূতিতে। লজ্জায়, সুখে, ভালোবাসায় সে মাথা নিচু করে নীরবে সম্মতি জানাল।
আর এক মুহূর্ত দেরি না করে জেমস ঝুঁকে পড়লো, আলতো স্পর্শে শুরু হলো তাদের মিলন তারপর অনেক গভীরতায় দুটো হৃদয় মিশে গেল, দুটো শরীর ডুবে গেল এক নতুন কামনার আগুনে, যেখানে ছিলো শুধু ভালোবাসার রঙ, প্রতিশ্রুতির আলো আর এক জীবনের শুরুর প্রথম অঙ্গীকার।

এদিকে তিয়াশা মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে, ঠোঁট ফোলানো অভিমান যেন ছোট্ট মেয়ের মতো কিন্তু বুকের ভেতরটা ভরে আছে রাগ আর কষ্টের মিশেলে। জায়ন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো, ভিজে চুল এলোমেলো, শরীরে শুধু ট্রাউজার আর ঢিলেঢালা টিশার্ট, যেন রাতের ক্লান্তি তার চোখের পাতায় স্পষ্ট আঁকা। একে একে রুমের সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ধীর পায়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল বউয়ের পাশে। সে জানে তার বউ রেগে আছে, জানে কথা বলতে চাইবে না, তবুও বুকের ভেতরে যে আগুন জ্বলছে তারাও কম না।
কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলো, নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই এক অদৃশ্য টান তাকে হার মানিয়ে দিল। আর না পেরে হঠাৎই হাত বাড়িয়ে তিয়াশার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে নিল নিজের দিকে, বুকের ভেতর টেনে নিল এমনভাবে যেন সারা পৃথিবীর সব নিরাপত্তা কেবল তার বুকেই আছে।
__”কাছে আয়।”

তিয়াশা ভ্রু কুঁচকে রাগে হাত ছাড়িয়ে দিতে চাইলো, ঠোঁট কামড়ে ফিসফিস করে বলতে চাইলো
” ছাড়ো আমায়”, কিন্তু জায়নের বাহু ছিল লোহার মতো, আরও শক্ত করে আঁকড়ে নিল। তার গরম নিশ্বাস তিয়াশার গালে ছুঁয়ে গেল, আর হঠাৎই গভীর, কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠল,
__”নড়িস না জান মাথা ঠিক থাকবে না, কিছু করে বসবো। বুঝিস না কেন আমার সহ্য হয় না তোর মুখে অন্য পুরুষের নাম শুনতে? তোর জন্যে শুধুই আমি। তুই না মানলেও আমি। তুই আমায় না রাখলেও আমি। তোর সবকিছু জুড়ে শুধু আমি শুধু এই আমি।”

এই অকপট, একগুঁয়ে স্বীকারোক্তিতে তিয়াশার বুকের ভেতরটা কেমন যেন অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠল। মুখে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে এক অচেনা উষ্ণতা ভরে গেল। যেন এই পুরুষটা যতই রাগী, একগুঁয়ে আর কড়া হোক না কেন, তার ভালোবাসার শেকড় গেঁথে আছে তিয়াশার ভেতরের গভীরতম জায়গায়।
জায়ন আরও নিচু স্বরে গম্ভীরভাবে বলে উঠল,
__”এবার আমায় ঘুমোতে দে। তোর চুলে মুখ গুঁজে থাকতে চাই,বিকজ আই এম সো টায়ার্ড। আর এদিকে ঘুরবি না তোর নিঃশ্বাস আমার শরীরে স্পর্শ করলে আবার ইলেকট্রিক শক লাগবে আমার।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৮

তার কণ্ঠে রাগের সাথে মিশে ছিল এক অদ্ভুত মায়া, ক্লান্তির সাথে মিশে ছিল ভালোবাসার গভীর টান।
এইসব শুনে তিয়াশা ঠোঁট চেপে রাখতে পারল না। রাগ অভিমান সব গলে মুচকি হাসি এসে পড়ল ঠোঁটের কোণে। ভেতরে ভেতরে সে বুঝে ফেলল এই পুরুষটার থেকে দূরে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব। চোখ আস্তে আস্তে ভারী হয়ে এলো, বুকের ভেতর মায়ামাখা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ল, আর মুহূর্তের মধ্যেই দুজনেই তলিয়ে গেল ঘুমের দেশে যেখানে রাগ নেই, কেবল আছে ভালোবাসা আর দুজনার নিঃশ্বাসের মিশে যাওয়া নীরব সুর।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here