তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭০ (২)
নীল মণ
জায়ন দের রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে চারজন আকাশ, ইউভি, রায়ান আর জায়ন। সবাই এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কোনো বড় গোপন প্ল্যান চলছে, অথচ সেটা সামলানোর মতো সাহস কারোর নেই। এদিকে তিয়াশার চোখ টিভিতেই আটকে ছিল, কিন্তু হঠাৎ দরজার কাছে চারজনকে একসাথে ঘুঁঝঘুঁঝ করতে দেখে তার মনে সন্দেহ জাগল। কপাল কুঁচকে সবার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠল,
__”কি ব্যাপার? কিছু হয়েছে নাকি? ওইভাবে দাঁড়িয়ে আছো সবাই?”
মুহূর্তেই চারজনের মধ্যে এক অদ্ভুত অস্বস্তি নেমে এল। ইউভি দাঁতে দাঁত চেপে আকাশের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
__”যা না তুই বল?”
তার গলায় স্পষ্ট ভয় আর দোটানা যেন বোনের সামনে পড়ে গেলেই খবর আছে।
আকাশের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, কেউ তাকে এখনি সাপের গর্তে ঠেলে দিচ্ছে,
গেলেই ছোবল মারবে । থরথর করে কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলল,
__”আমি পারবো না।”
এই সুযোগটা রায়ান একদম মিস করল না। ঠোঁট বেকে মুচকি হেসে মজা নিয়ে জবাব দিল,
__”তাহলে ভাইয়া বাদ দাও ব্যাচেলর পার্টি।”
তার গলায় খুনসুটির স্বর, চোখেমুখে দুষ্টু ঝিলিক যেন এই ঝামেলাটা জিইয়ে রাখাই তার সবচেয়ে বড় আনন্দ।
আকাশ তেড়ে তাকাল রায়ানের দিকে ,ধীর কিন্তু বিরক্তি মেশানো গলায় বলল,
__”দিন দিন এত আপদ তৈরি হচ্ছিস কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার চোখে তখন স্পষ্ট ধমক যেন ছোট ভাইটা আস্তে আস্তে মীর্জাফার হয়ে যাচ্ছে।
সামনে দাঁড়িয়ে জায়ন পুরো কথাবার্তা শুনছিল। সবাই ধীম গলায় বললেও তার কানে পৌঁছে যাচ্ছিল। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল ধীরে ধীরে। হাত শক্ত করে দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল,
__”কাজের কাজ কর। দাঁড়িয়ে ভাট বকিস না। সামনে দেখে বউ কি ভাবে তাকাচ্ছে দেখছিস না? জানতে পারলে তোদের সব কজনকেই মরিচ জুস খাওয়াবে।”
তার গলায় রাগের ঝাঁজ, মুখে বিরক্তি যেন সত্যিই এখন কাউকে না কাউকে ঝাঁটিয়ে দিতে চাইছে।
এদিকে তিয়াশা ভেতরে ভেতরে রেগে যাচ্ছিল। সবাই দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা কিছু ফন্দি এটে বসে আছে ।তখনই হঠাৎ আকাশ সাহস করে ঠেলে দিল জায়নকে রুমের ভেতর।
হঠাৎ করে জায়ন রুমের ভেতর ঢুকতেই পেছনে ঘুরে আকাশের দিকে কটমট করে এমন ভাবে তাকাল যেন গিলে খাবে । চোখে স্পষ্ট বিরক্তি যেন বলছে, “তুই মরলি আজ।”
এমন সময় তিয়াশার গম্ভীর কণ্ঠ কানে এল,
__”কি হলো? সবাই এমন করে সংয়ের মত দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
তার গলায় রাগের সাথে কৌতূহলও স্পষ্ট যেন কোনো অজুহাত সে মানবে না।
জায়ন হঠাৎ মুখ পাল্টে নিল। মুহূর্তের মধ্যে বিরক্তি মুছে মুখে আনল চাপা হাসি, হাত নিয়ে গেল কানের লতিতে যেন খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলছে,
__”আসলে বেইব, হয়েছে টা কি… ওরা একটু…”
তিয়াশা অবাক হয়ে তাকাল, চেহারায় সন্দেহ জমে আছে। তারপর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
__”ওরা একটু কি? বলবে তো?”
জায়ন মুখটা সাইডে ঘুরিয়ে এক নিঃশ্বাসে সব বলে ফেলল,
__”ওরা একটু কালকে ব্যাচেলর পার্টি করতে চায়। আর চাইছে আমিও যেন যাই। আমি বারবার বারণ করেছি, বলেছি এসব ঠিক না। এটাও বলেছি আমার বউ এর এসব পছন্দ না, তাই আমারও পছন্দ না। আমি যাব না, কিন্তু ওরা ধরেছে আমায় না নিয়ে যাবে না।”
একটানা কথাগুলো শেষ করতেই ঘরে নীরবতা নেমে এল। তিয়াশা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। জায়নের বুকের ভেতর তখন ধকধক করছে যেন বুঝে গেছে, এই বউ কিছুতেই যেতে দেবে না । আবার সেদিনের মত ঝড় না তুলে দেয় ।
তাই সে নাটকীয় মুখ করে আকাশ আর ইউভির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
__”দেখলি তো? শুধু শুধু আমার বউর মন খারাপ করে দিলি। কত করে বললাম এসব ঠিক না…”
কিন্তু বাক্য শেষ হলো না তার আগেই তিয়াশা টিভির দিকে চোখ ঘুরিয়ে শান্ত স্বরে বলে উঠল,
__”যাবে যাবে, এত ঢং করার কি আছে? আর তুমি না গেলে ভাইয়ারা যাবে কিভাবে? ঠিকই তো বলেছে।”
মুহূর্তেই সবার মুখ হাঁ হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল, আজ হয়তো সূর্য সত্যিই পশ্চিম দিক থেকে উঠেছে। আকাশ, ইউভি, রায়ান তিনজনের চোখেমুখে অবিশ্বাস জমে উঠল তারা কী ঠিক শুনছে?
জায়নও হতবাক,সে ভেবেই নিতে পারছিল না বউ এত সহজে মেনে নেবে। কানকে যাচাই করার জন্য আবার একটু নাটকের সাহায্য নিয়ে বলল,
__”না না জান, আমি যাব না। তুই পরে যদি রাগ করিস? আমি চাই না আমার বউ রাগ করুক।”
তিয়াশা তখনও টিভির রিমোট নিয়ে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে নির্লিপ্ত গলায় বলল,
__”আমি কেন রাগ করবো? তুমি যাও, আমি কিছু বলছি না।”
জায়নের ভেতরটা আনন্দে ভরে গেল। মনে হচ্ছিল একপ্রকার যুদ্ধ জিতে এসেছে। কিন্তু বাইরে থেকে সেটা প্রকাশ করল না নিজের খুশি কে ভেতরে লুকিয়ে গম্ভির ভঙ্গিতে বলল,
__”ঠিক আছে, তুই বলছিস বলেই যাচ্ছি। নইলে যেতাম না আমার ওসব মোটেই পছন্দ না।”
তিয়াশা এবার চুপ রইল। তবে মুখে কিছু না বললেও বোঝা যাচ্ছিল, আসলে সে সবই বুঝছে।
এদিকে ইউভি আর আকাশ খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে গেল। মুখে চাপা হাসি ফোটাল দুজনেই যেন স্বস্তি ফিরে এসেছে। আর রায়ান তো ঠোঁট বেকে হেসেই চলেছে ,ওর কাছে সবকিছুই যেন মজা।
হঠাৎ আকাশ ঘরে ঢুকে বোনের দিকে চাটুকারিতার ভঙ্গিতে বলে উঠল,
__”বোন, একটু যদি আমার জলপরী, অনু, পরি আর বৃষ্টি আপুকে ম্যানেজ করে দিস, তাহলে খুব ভালো হয়। জানিস তো, সবাই তোর মতো এত শান্ত না।”
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রায়ান সঙ্গে সঙ্গে ইউভির কানে ফিসফিস করে বলল,
__”আকাশ ভাইয়া এত বাটারিং করছে তিউ আপুকে , শেষে আবার কেস না খেয়ে যায়।”
ইউভি হাসি চেপে রায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
__”ঠিক বলছিস। বড় ভাইয়ের নাটকটা দেখলি না? নোবেল ছুঁড়ে মারা উচিত, উনি নোবেল প্রাপ্য।”
এই বলে ইউভি এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল আর রায়ান মুচকি
হেসেই যাচ্ছে।
তিয়াশা এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে শান্ত গলায় বলল,
__”তোমরা নিশ্চিন্তে যাও, এত বলতে হবে না। আমি সবাইকে বলে দেব।”
এরপরে আকাশ, ইউভি আর রায়ান যেন বুকের ভেতর জমে থাকা বোঝা নামিয়ে ফেলল। তাদের চোখেমুখে এখনো লেগে আছে সেই দুষ্টু উচ্ছ্বাস যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ জিতে এসেছে তারা। ইউভি বারবার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে নিচ্ছিল, ঠোঁটে চাপা হাসি ফুটে উঠছিল, যেন নিজেকে বোঝাচ্ছে বাঁচলাম।
ঘরের বাতাসে তখন ছিল চাপা উল্লাস। সবার মুখে ছিল একেকটা অদৃশ্য গল্প। কারো মনে স্বস্তি, কারো মনে দুষ্টুমি, কারো মনে আবার নীরব কৃতজ্ঞতা। টিভির হালকা শব্দ আর চাপা হাসির ফিসফিস মিলে সেই মুহূর্তটাকে আরও আপন করে তুলেছিল।
এরপর রাতের খাবার খেয়ে সবাই যে যার মত নিজেদের রুমে চলে গেল, কারও গায়ে আনন্দের ঘোর, কারও মনে বিয়ের তোড়জোড়ের ক্লান্তি, কেউ আবার ভবিষ্যতের চিন্তায় ডুবে গেছে। ঘর ভরে উঠলেও রাত নামার সাথে সাথে যেন চারপাশে নেমে এলো এক ধরনের নীরবতা, কেবল করিডোরে ডিম লাইটের ম্লান আলো, আর দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ।
কিন্তু এই নীরবতার মাঝেই এক ব্যক্তি ঘুমোতে গেল না। ইউভি জানে, তার মন শান্ত হবে না যদি না সে একবার নিজে যাচাই করে নেয় তার হৃদয়পাখি সত্যিই কি মন থেকে রাজি আছে। বনুর কথা যদি না মানে , বুকের ভেতরে অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি হলো। যদি অনন্যা রাজি না থাকে, তবে আবারো ছাদে রাত কাটাতে হবে?
ধীর পায়ে ইউভি এগিয়ে গেল অনন্যার রুমের সামনে, আলো-আঁধারি করিডোরে তার পদচারণা যেন আরও জোরে বাজতে লাগল তার নিজের কানে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় ডাকল,
__”পাখি… এই পাখি…”
তার গলায় এমন এক কাঁপন ছিল, যেন ভিতরের অস্থিরতা সামলাতে পারছে না।
__”পাখি, দরজা খোল…”
কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে গেল। অনন্যার শান্ত মুখ দেখে ইউভির ভেতরটা হঠাৎ হালকা লাগল। অনন্যা অবাক চোখে তাকাল, তার কণ্ঠে নরম স্নিগ্ধতা
__”কিছু হয়েছে? এভাবে ডাকছেন যে?”
ইউভি এক চিলতে হাসি দিয়ে উত্তর দিল,
__”না পাখি… একটু দেখতে ইচ্ছে করছিল তোকে তাই।”
অনন্যা হতবাক হলো। তার চোখে কৌতূহল
“এখনই? একটু আগেই তো খাবার টেবিলে দেখা হলো, এত তাড়া কেন?” ঠিক এই ভাবনায় তার ভুরু কুঁচকে দিল।
সে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইউভি আবার বলল,
__”তোকে বনু কি কিছু বলেছে?”
শুনেই অনন্যার কাছে একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল । কপালে ভাঁজ ফেলে, দুই হাত বুকে গুঁজে মুচকি হেসে বলল,
__”ওহ্, তাহলে এই ব্যাপার! হ্যাঁ, বলেছে…আপনারা নাকি কি ব্যাচেলর না কিসের যেন পার্টি যাবেন।”
ইউভি একটু থতমত খেল, তারপর আমতা আমতা করে বলল,
__”হ্যা পাখি । তোর কোন সমস্যা নেই তো?”
অনন্যার চোখে একটু দুষ্টুমি ভেসে উঠল, কিন্তু কণ্ঠটা থাকল শান্ত,
__”আরে না না, কিসের সমস্যা?”
ইউভি যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। আবারও প্রশ্ন ছুঁড়ল,
__”সত্যি তো?”
অনন্যা এবারও নরম গলায় জোর দিয়ে বলল,
__”হ্যাঁ বাবা, সত্যিই বলছি… কোনো সমস্যা নেই।”
এই কথাটুকু শোনার পরই ইউভির বুক ভরে গেল আনন্দে। হঠাৎ করেই সে অনন্যার হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নিল। অনন্যা তার বুকে মিশে যেতেই দুজনের শরীরেই যেন অদ্ভুত এক ঝড় বয়ে গেল, বুক ওঠানামার সাথে সাথে তাদের নিঃশ্বাস মিশে গিয়ে তৈরি করল অচেনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
অনন্যা মাথা নিচু করে আছে, তার গাল গরম, ঠোঁট কাঁপছে। ইউভি আঙুলের ডগা দিয়ে তার চিবুক ধরে আস্তে আস্তে ওপরে তুলতে লাগল। চোখে চোখ পড়তেই ইউভি দেখল অনন্যার মুখ কান টকটকে লাল। সেই দৃশ্য দেখে তার ঠোঁটে এক চোরা বাঁকা হাসি খেলে গেল। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগল তার ঠোঁট অনন্যার ঠোঁটের দিকে।
অনন্যা চোখ বন্ধ করল, বুকের ভেতর ঢেউ খেলে গেল। সে জানে, সে এই মানুষটিকে এড়াতে পারবে না, তবুও শেষ মুহূর্তে ভেতরের সব ভয়, লজ্জা, আর জমে থাকা টান মিলে তাকে পিছু হটতে বাধ্য করল। হঠাৎই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ভেতরে চলে গেল, দরজা বন্ধ করে দিল কপাটের শব্দে।
ইউভি মুহূর্তের জন্য থ হয়ে গেল। তারপর কি মনে করে দরজায় কান পাতল। ভেতর থেকে স্পষ্ট শোনা গেল অনন্যার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ। সেই আওয়াজে ইউভির ঠোঁটের কোণে এক চোরা হাসি ফুটে উঠল। চাপা স্বরে বলল,
__”পাখি, ঠিক করলি না কাজটা… ঠিক আছে, আর তো মাত্র দশ দিন। তারপর তোর সব রাত নির্ঘুম বানানোর দায়িত্ব আমার। টেক ইওর টাইম, পাখি… এই দশ দিন ভালো করে ঘুমিয়ে নে।”
এই বলে ইউভি দুই হাত পকেটে গুঁজে শিশ বাজাতে বাজাতে চলে গেল হলুদ লালচে আলোর করিডোর পেরিয়ে।
আর ভেতরে, দরজার ওপাশে, অনন্যা তখনও বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ইউভির শেষ কথাগুলো কানে বাজতে বাজতে সে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলল। শরীর কাঁপছে, বুক ধুকপুক করছে, চোখের ভেতর অচেনা এক শিহরণ ভয় আর আকাঙ্ক্ষা মিলেমিশে তৈরি করল এক অদ্ভুত অস্থিরতা।
__”কি ব্যাপার ইউভি ভাই, এত খুশি কিসের?”
রুমে ঢুকতেই আকাশ বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ফোন স্ক্রল করতে করতে কৌতুকের সুরে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল। কণ্ঠে যেন একরাশ দুষ্টুমি মাখানো বিস্ময়।
ইউভি হাঁফ ছেড়ে সোফায় গা এলিয়ে দিল, যেন বুকের ভেতরে জমে থাকা চাপ এক নিমিষে হালকা হয়ে গেছে। ঠোঁটে মৃদু হাসি খেলল, চোখে সেই খুশির ঝিলিক,
__”আরে, আমার পাখি কিছু বলল না বলল কোনো সমস্যা নেই।কে জানে বনু ওকে কি বলেছে, দেখলাম একদম শান্ত, স্বাভাবিক আছে। কোনো রাগ, কোনো প্রশ্নই করল না।”
এই কথা শুনে আকাশ ফোন থেকে দৃষ্টি সরাল না, তবুও ঠোঁটে চাপা হাসি ফুটল। সে যেন নিজের অজান্তেই খুশির সুরে বলল,
__”সত্যি ভাইয়া! আমার জলপরিও তো অবাক করে দিল। আমি ভেবেছিলাম ও এবার রীতিমত আগুন ধরিয়ে দেবে, রাগ ঝেড়ে আমার গায়ে একগাদা কথা ছুড়ে দেবে। কিন্তু না, একেবারে সুন্দরভাবে হেসেই বলল ‘যাও’। আমি তো তখন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটা আমার জলপরী!”
ইউভির চোখ বড় বড় হয়ে উঠল, ঠোঁটে অবিশ্বাসের হাসি,
__”আমারও তো ঠিক তাই লাগছে! যেন স্বপ্ন দেখছি। বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝলি।”
আকাশ এবার ফোনটা একপাশে রেখে সোজা হয়ে বসল, ভ্রু উঁচু করে হেসে বলল,
__”সত্যি বলি ভাইয়া, আমাদের বউগুলো এত ভালো কবে থেকে হলো আল্লাহই জানে। আমরা তো ভাবছিলাম যুদ্ধ শুরু হবে, কিন্তু উল্টো দেখছি শান্তির পতাকা উড়ছে।”
আকাশের এই কথা শুনে দুজনেই একসাথে হেসে উঠল। হাসিটা শুধু ঠোঁটে আটকে থাকল না, চোখের ভেতরও ছড়িয়ে পড়ল, যেন বুকভরা স্বস্তি ও আনন্দ একসাথে হালকা করে দিল তাদের শরীর।
এই হাসি-মজার মাঝেই মনে হচ্ছিল ভালোবাসা কেমন অদ্ভুত জিনিস, মুহূর্তেই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভাবনাকে গলিয়ে দিতে পারে মিষ্টি এক প্রশান্তিতে।
রাত পেরিয়ে সকাল নামল নরম সোনালি আলো নিয়ে। সূর্যের কিরণ জানলার ফাঁক গলে ধীরে ধীরে ঢুকে এলো, আর সেই আলোর ছোঁয়া এসে পড়ল জায়নের চোখে-মুখে। ঘুম ভাঙার বিরক্তি নিয়ে সে এপাশ-ওপাশ করছিল, আধা উলঙ্গ শরীরটাকে বিছানার চাদরে এলোমেলো করে রেখে দিয়েছিল।
হঠাৎ কানে এলো ধাতব টুং টাং শব্দ যেন কারও চুড়ি ন উঠেছে। এক লহমায় জায়নের চোখ খুলে গেল, চোখের সামনে যে দৃশ্যটা ধরা দিল, তা দেখে বুকের ভেতর ধক করে উঠল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিয়াশা ভেজা চুলে টাওয়াল চালাচ্ছে, গায়ে নীল সিল্কের শাড়ি, আর সেই শাড়ির ভাঁজ ফাঁক করে ঝলমল করছে ঢেউ খেলানো কোমর আর মসৃণ পিঠ।
এই দৃশ্য যেন পুরো ঘুমটাকেই উড়িয়ে দিল ,চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দিল, বুকের ভেতরে অস্থিরতা ছড়িয়ে গেল। কতদিন হলো বউকে ঠিকমতো ছুঁতে পারছে না, এই সামান্য দূরত্বই রোজ যেন মাইলের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরক্তিতে মাথার বালিশ ছুঁড়ে ফেলে উঠে পড়ল জায়ন, দাঁত চেপে বিড়বিড় করল,
__”উফফ, এরকম বউ সামনে থাকলে ঠিক থাকা যায় নাকি? বা** এর জীবন!”
কোনো সময় নষ্ট না করে সে এগিয়ে গেল তিয়াশার দিকে, এক ঝটকায় কোমর জড়িয়ে মুখ গুঁজে দিল ভেজা চুলে। তিয়াশা একটুও কেঁপে উঠল না, বরং যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই হুট করে পাওয়া উষ্ণ ছোঁয়ায়। কারণ সে জানে এই ছোঁয়া কার, এই ঘ্রাণ কার, আর এই বুকে লুকোনো অস্থিরতাটুকু শুধু তার জন্যই।
একটু খিলখিল করে হেসে তিয়াশা হাত বাড়িয়ে জায়নের চুল এলোমেলো করে দিল। জায়ন চোখ বন্ধ করে সেই ঘ্রাণ টেনে নিতে নিতে হাঁসি-ভাঙা কর্কশ স্বরে ফিসফিস করল,
__”বলেছি না, শাড়ি পরবি না , পরলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। মনে হয় খেয়ে ফেলি তোকে, তারপর সারা দিন-রাত এই রুমেই আটকে রাখি। কতদিন হয়ে গেলো আমাদের বনানীর বাসায় জাই না।”
তিয়াশা এবার হেসে মুখ ঘুরিয়ে হুট করে ঠোঁটে এঁকে দিল নরম চুমু, গলায় মিষ্টি সুরে বলল,
__”আমি কি কখনো বারণ করেছি? আমিও তো মিস করছি আমার এই পাগল বরের পাগলামি।”
জায়ন অসহায় মুখে এক গভীর নিঃশ্বাস ফেলল, কণ্ঠে চাপা আকুতি,
__”কবে যে ওই ডাক্তার পারমিশন দেবে আমায়! মাথা একদম কাজ করে না ।”
তারপর আরেকটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আরও শক্ত করে তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরল। কণ্ঠে এবার হালকা গম্ভীরতা,
__” বউ আজ অফিসে যাচ্ছি না, কিন্তু বেরোতে হবে। টার্কি থেকে আমার এক ফ্রেন্ড আসছে, জীবনে প্রথমবার বিডি তে পা রাখবে।”
তিয়াশার চোখে কৌতূহল ঝলমল করল,
__”কোন ফ্রেন্ড তোমার? আমাদের বাসায় আসবে?”
জায়ন একটু থেমে আবারো একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠলো ,
__”নাহ, বাসায় নয়। তবে একদিন অবশ্যই ইনভাইট করব। জানিস, ওর হাত তিন বছর আগে আমার পেছনে না থাকলে আমার এই নতুন কোম্পানি এত তাড়াতাড়ি দাঁড়াতই না।”
তিয়াশার চোখে হঠাৎ কৃতজ্ঞতার আলো ফুটল, মনে হলো অদেখা কাউকে নিয়েই শ্রদ্ধা জমে উঠছে।
__” তাহলে কোথায় থাকবে সে তো বিডি তে প্রথম? নিজের ফ্রেন্ড কে হোটেল এ রাখবে ?”
তিয়াশার কথা শুনে একটু হেসে তিয়াশার হাত থেকে টাওয়াল টা নিয়ে নিজেই তিয়াশার চুল মুঝতে মুঝতে বলল,
___”তোর বর যদি দুই দিনে একটা বাসা কিনে ফেলতে পারে, তাহলে সে তো দশ মিনিটেই কিনে ফেলবে, বুঝলি? তোর বর শুধু ঢাকার বড় বিজনেস ম্যান। আর সে? সে হলো পুরো ইস্তাম্বুলের নাম্বার ওয়ান টেকনোলজি কোম্পানির ওনার। ঢাকার থেকে চারগুণ বড় জায়গায় রাজত্ব করে । এবার ভেবে দেখ, সে কেমন মানুষ? ঢাকায় আসছেও নিজের প্রাইভেট জেট করে। এ হলো আমার এক পাওয়ারফুল ফ্রেন্ড, তবে তোর বর ও কম পাওয়ার ফুল না , ?”
তিয়াশার চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল, ঠোঁট হালকা খোলা যেন এই গর্বের ভাগ সে নিজেও নিচ্ছে। আর জায়ন আবার বাঁকা হাসি দিয়ে বউকে আরও কাছে টেনে নিয়ে ফিসফিস করল,
__”এসব বাদ দে, এখন আমার এখন তোকে একটু টেস্ট করতে ইছে হচ্ছে । আই ফিল হাংরি, বেইব!”
লজ্জায় তিয়াশা মুখ গুঁজে দিল জায়নের বুকে, চাপা স্বরে মিনতি করল,
__”গলায় দাগ বসাবে না কিন্তু, দুপুরে সবাই মিলে শপিংয়ে যাবো।”
কথাটা শুনে জায়নের ভ্রু কুঁচকে গেল, বউ এর বাইরে যাওয়া তার একদম ভালো লাগে না , গেলে সে নিজে নিয়ে যাবে তাই একটু গম্ভীর স্বরেই বলল,
__”যেতে হবে না। আমি কাল নিয়ে যাব।”
কিন্তু তিয়াশা যে হাল ছাড়ার মেয়ে নয়। সে ঠোঁট ফুলিয়ে আঙুল দিয়ে জায়নের বুকের ওপর অলস আঁকিবুকি কাটতে কাটতে ছলছল চোখে জায়ন এর দিকে তাকিয়ে বলল,
__”যেতে দাও না, প্লিজ। সবাই যাচ্ছে, আমারও তো মন চাইছে।”
এই চাহনিটুকুই জায়নের বুক কেঁপে উঠল। ভেতরে ভেতরে গজরালেও মুখে কেবল একটাই চিন্তা ঘুরছিল
__”এইরকম মায়াবী চোখে তাকালে কীভাবে না বলি?”
তাই শেষমেশ হাল ছেড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে কোমর জড়িয়ে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে দিল। কর্কশ অথচ নরম কণ্ঠে শর্ত শুনিয়ে দিল,
__”যেতে পারিস, তবে শর্ত আছে শাড়ি পরে নয়, ঢিলেঢালা থ্রি-পিস পরবি। রাস্তায় সাবধানে চলবি। আর আম্মুদের কাছ থেকে একচুলও সরে কোথাও যাস না।”
তিয়াশা ঠোঁট বাঁকা করে দুষ্টু হাসি দিল মনে হচ্ছিল মাথার ভেতরে কিছু একটা ফন্দি পাকাচ্ছে। ঠাট্টার ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে নরম স্বরে বলল,
__”জো আজ্ঞা, জাহাঁপনা।”
এরপর জায়ন আর কিছু শুনল না, আর কিছু দেখল না। এক ঝটকায় ঠোঁট বসিয়ে দিল তিয়াশার ঠোঁটে। আর সেই চুমু ছিল গভীর থেকে গভীরতর, যেন পুরো পৃথিবীটাকেই দুজনের মাঝখানে আটকে ফেলেছে।
সন্ধ্যারাতে ঢাকার এক নামকরা ফাইভ-স্টার ক্লাব, চারপাশ আলো ঝলমল করছে। ভেতরে প্রবেশ করতেই চারদিকে আলোর ঝলকানি, উঁচু ছাদের নিচে ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি, আর চারদিকে বাজছে বেজি ডান্স মিউজিক। বড় বড় টেবিলে সাজানো ড্রিংকস, ফিঙ্গার ফুড আর বিদেশি খাবারের সমাহার। আজকের রাতটা একেবারেই স্পেশাল ইউভি আর আকাশের ব্যাচেলর পার্টি।
ক্লাবের ভেতরে এক টেবিলে সাজানো বোতল ভর্তি দামি ওয়াইন, ককটেল আর নানা রকম বিদেশি ড্রিঙ্কস। চারপাশে ডান্স ফ্লোরে লোকজন নাচছে, আলো ঝলকানি পড়ছে একেকজনের মুখে।
ক্লাবের দরজা দিয়ে ঢুকেই যেন সবার চোখ একদিকে গিয়ে আটকে গেল,
আবরার জায়ান চৌধুরী।
কালো ব্লেজারের মধ্যে লম্বা সুঠাম দেহটা আরও ছায়ামূর্তির মতো লাগছিল। ভেতরের কালো শার্টের কলার হালকা খোলা, গলায় চিকচিক করা প্লাটিনাম এর চেইনের ঝলক। হাতে দামী রিস্ট ওয়াচ । চুলে জেল দিয়ে সযত্নে সেট করা, যেন প্রতি গোছা আলো কেড়ে নিচ্ছে। আর চোখে সাদা ফ্রেমের চশমা যেটা এক অদ্ভুত কনট্রাস্ট তৈরি করেছে, সবাই তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। গা থেকে ভেসে আসছে একরকম রাফ, কিন্তু অদ্ভুত আকর্ষণীয় অরা।
সাথে আছে নাজিম, জেমস, সাগর, পলাশ আর আহান এদের ও আজকে পুরো হিরো লাগছে । প্রত্যেকেই ফ্যাশনেবল, নিজেদের মতো করে চমকাচ্ছে। ইউভি আর আকাশ তো আজকে দিনের নায়ক, হাসি-ঠাট্টা আর মজার মধ্যে মেতে আছে।
কিন্তু দলের মধ্যে আরোও একজন আলাদা করে দৃষ্টি কাড়ছে রায়ান। সবার থেকে ছোট কিন্তু তার চেহারা যেন জায়ন ছাড়া বাকি সবাই কে হার মানিয়ে দিচ্ছে।রায়ানের গায়ে আজ পার্টি-ওয়্যার হিসেবে ছিল ডার্ক নেভি ব্লু স্লিম ফিট ব্লেজার, ভেতরে সাদা শার্ট, শার্টের বোতাম খোলা নেই কিন্তু গলার কাছে হালকা ঢিলা, যাতে তার চেহারার সরলতা আরও ফুটে ওঠে। পায়ে কালো লেদার লোফার, আর কব্জিতে সিলভার রিস্টওয়াচ, যা আলো পড়লেই চিকচিক করে উঠছিল। হাতে তার রঙিন জুসের গ্লাস, অন্যরা যেখানে ওয়াইন এর গ্লাস তুলে টোস্ট করছে, ওখানে রায়ান হালকা লজ্জিত হেসে জুস খাচ্ছে।
সবার গ্লাস একসাথে ঠুকলো, আর মুহূর্তেই ভেতরে বাজতে লাগল তীব্র বিটস। বিটস এর তালে তাল মিলিয়ে আকাশ আর সাগর একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে হাসতে লাগল। জেমস মিউজিকের সঙ্গে হাত নাড়তে নাড়তে বলল।
__” ওয়াও আফটার সো মেনি ডেইস আই ফিল লাইক
হ্যাভেন এগেইন।”
জায়ান ঠোঁটে গ্লাস ছুঁইয়ে হালকা বাঁকা হাসি দিল, বন্ধু আর ভাইদের উচ্ছ্বাস দেখে চোখের কোণে একরকম আনন্দ খেলা করছিল।
আহান তো হাসতে হাসতে বলেই উঠলো,
__” ভাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না , তোদের বউ আজকে তোদের ফ্রিডম দিয়েছে।”
আহান এর কথায় নাজিম একটু অবাক হয়ে বলে উঠলো,
__” সত্যি সত্যি আমায় যখন বৃষ্টি বলল জাও তখন তো আমি আকাশ থেকে পড়লাম, এইটাও সম্ভব?”
,ইউভি হাসতে হাসতে চারপাশে তাকাল, গলায় হালকা ভয়ের সুর এনে বলল,
__” এখন বউ দের কথা বলো না , ভয় লাগে বাবা কখন কি হয় ।”
__ ” কিন্তু বড় ভাই এর কালকের নাটক টা কিন্তু সেই
আর আকাশ ভাই এর বাটারিং যদি দেখতে সাগর ভাই তোমরা। নোবেল ছুঁড়ে মারতে ।”
রায়ান এর এই কথায় পলাশ তো বলেই ফেলল ,
__” ভাই আমাদের জায়ন যে তার বউ রে ভয় পায়
এটাই শুনে আমি বেড থেকে পড়ে গেছি ।
জায়ন কিছু বলল না শুধু বাকা হাসলো , তারা তো জানেনা বউ তার মত পাগল ক্ষেপলে মাথা ঠিক থাকে না।
__” আরে পলাশ ভাই কি যে বলো, সেদিন কে বনুর
রূপ দেখলে বুঝতে পুরো ক্যাফে তে ঝড় তুলে দিয়েছিল। বড় ভাই ভয় না পেয়ে যাবে কোথায় ।”
আকাশের কথা শেষ হতেই জায়ন এবার মুখ খুলল,
__” আমার বউ এর প্রসঙ্গ ছার, শুধু এনজয় কর।”
কিছুক্ষন পরে গেটের কাছে একটু শব্দ হতে লাগল কিন্তু সেদিকে তাদের কোন নজর নেই তবে সাগর এর চোঁখ সেদিকে ঠিক ই গেল , সেদিকে লক্ষ করতেই
সাগর জোড়ে হেসে উঠলো , একা একাই বলতে লাগল
__” ভাই ওড়না পেচায় কারা ক্লাব এ আসে, দেখ দেখ ভাই মেয়ে গুলো কেমন ওড়না পেঁচায় ক্লাবে এ ঢুকতে লাগছে ।”
জায়ন ভ্রু কুঁচকে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল,
__” ওদিকে নজর দিতে হবে কেন তোর সে তারা যা পরে আসুক ।”
সবাই ই সাগর এর দিকে তাকাল একটু রাগী চেহারা দিয়ে , সাগর চুপ হয়ে গেল। কিন্তু সাগর কি এক মিনিট এর বেশি চুপ করে থাকার মানুষ আবার সেদিকে তাকিয়ে দেখল মেয়ে গুলো ওড়না গুলো খুলে দিল
আর তা দেখতেই সাগর মাথা ঝাঁকালো এদিক ওদিক
নেশা হয়ে গেলো না তো , আমার নিজের মুখ খুলল
__” হ্যা রে ভাবী দের কোন যমজ বোন ঠোঁন আছে নাকি , আমার চোখে ভাবীরা কেন ভাসছে ?”
সবাই ভাবলো সাগরের নেশা হয়ে গেছে আবোল তাবোল বকছে, এরমধ্যে পলাশ ও বলে
উঠলো ,
__” ভাই এই ওয়াইন এ কিছু আছে মনে আমিও কেন আমার পাঁচ ভাবি কে দেখতে পাচ্ছি ?
এবার সবার চোখ একসাথে গেটের দিকে ফিরল—আর মুহূর্তেই শ্বাস আটকে গেল সবার। জায়ানের হাত থেকে গ্লাস পড়ে গেল, ঠাস করে কাঁচ ভাঙার শব্দে পুরো টেবিল কেঁপে উঠল। সঙ্গে শব্দ হলো আর কিছু পড়ার কিন্তু সেদিকে কারো নজর নেই , নজর তো গেটের দিকে ।ইউভি আর জেমস তো এতটাই টাস্কি খেয়েছে যে মুখ হা করে গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে রইল, ঠোঁট বেয়ে ওয়াইন গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল।
নাজিম তো কাপা গলায় বলেই ফেলল
__” আমি আজ দেহ ত্যাগ করবো ।”
রায়ান মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে মুখ ঘুরিয়ে।
কিন্তু এদিকে যে আকাশ টাস্কি খেয়ে পরে আছে সেদিকে শুধু আহানের ই নজর গেলো।
গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে পাঁচজন রমণী। প্রত্যেকেই “সিকুইন পার্টি ওয়্যার বডিকন ড্রেসে” ঝলমল করছে। আলাদা আলাদা রঙের সিকুইন ড্রেসে দাঁড়ানো তারা যেন পাঁচ তারকা প্রত্যেকেই নিজস্ব আলোয় উজ্জ্বল।
সিকিউরিটি গার্ড তাদের ভেতরে ঢুকতে দিল, আর তারা পাঁচজন একে একে এগিয়ে আসতে লাগল। কিন্তু আশ্চর্য হলো তারা একবারও ছেলেদের দিকে তাকাল না। যেন একেবারেই ইগনোর করে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তাদের ভেতর সবচেয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিল তিয়াশা। লাল সিকুইনের ড্রেসে সে যেন এক অদ্ভুত আলোর ছটা নিয়ে এসেছে। খোলা চুল কাঁধে নেমে এসেছে, মুখে হালকা মেকআপ, চোখে একরকম আত্মবিশ্বাসী দীপ্তি। তার রূপের ঝলক যেন এক মুহূর্তে পুরো ক্লাবের আলোকে হার মানিয়ে দিল।
কিন্তু তারা তো তাদের মধ্যেই হাসা হাসিতে মত্ত, তাদের স্বামীরা যে এখানে উপস্তিত সেদিকে নজর ই দিলো না বরং উপেক্ষা করল তাদের উপস্থিত।
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭০
জায়ানের মনে হচ্ছিল চোখের সামনে যা দেখছে সেটা হয়তো সত্যি নয়। চোঁখে যেন রক্ত শিক্ষা ধারণ করছে , তার বুক ধুকপুক করছে, শ্বাস আটকে আসছে। অথচ তিয়াশার চোখে এক ফোঁটা দ্বিধা নেই।
নাজিম না পেরে অবাক হয়ে সামনে এগিয়ে গেল, কিছু একটা বলার আগেই তিয়াশা ঠান্ডা গলায় মুখ ফিরিয়ে বলল,
__”এক্সকিউজ মি ম্যান, সাইড প্লিজ।”
আর এই একটা লাইনেই যেন পুরো ফ্লোর জমাট বেঁধে গেল। আলো, মিউজিক, হাসি সবকিছু থেমে শুধু পাঁচজনের পদচারণার শব্দ কানে বাজতে লাগল।
