তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৭
ভূমিকা তালুকদার
রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা শুধু এয়ারকন্ডিশনের হালকা গুনগুন শব্দ। স্ক্রিনে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট সিসিটিভি ফুটেজ চলছে, সেই রাতের,যখন জায়ানের
গাড়ি হাইওয়েতে ছিঁড়ে গিয়ে উল্টে পড়েছিলো। জায়ান হাতের আঙুলের গাঁট মটকালো, ঠাণ্ডা, বিষাক্ত দৃষ্টি মনিটরে গেঁথে দিলো।
ফুটেজ স্লো মোশনে চলতে লাগলো।
গাড়ি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে একের পর এক, তারপর,একটা কনটেইনার ট্রাক, ঠিক ডান দিক থেকে সরে এসে তার গাড়ির সামনে ঘুরে যায়। জায়ানের চোখ সংকুচিত হয়ে যায়। মাউস ধরে ফুটেজে জুম করলো, ট্রাকের নম্বর প্লেট পরিষ্কার হলো। সে থামল না,আরও জুম করলো, যতক্ষণ না ড্রাইভারের মুখ স্ক্রিনে ভেসে উঠে।এক মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা আরও গাঢ় হয়ে উঠলো। তারপর জায়ানের ঠোঁটের কোণে একটা পৈশাচিক হাসি ফুটে এলো,এমন হাসি, যেটা কোনো সাধারণ মানুষ দিতে পারে না। চোখে ঝলসে উঠল সেই ভয়ানক শীতল আগুন, যেটা কেবল জায়ান খানের ভিতরেই জ্বলে।
সে হালকা গলায় ফিসফিস করে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দশ মিনিটের মধ্যে… এই জানো*য়ারের বাচ্চাটাকে আমার সামনে চাই। জীবিত। তা না হলে তোর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিবো, মার্কো।
মার্কো ইতিমধ্যেই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, ফোন হাতে। কথাটা শোনা মাত্রই সে নম্বর ডায়াল করলো। লাইন ওপাশে কনেক্ট হওয়ার আগেই জায়ান আবার ঠাণ্ডা গলায় বলে,
নাম, ঠিকানা, বাপ-দাদার খোঁজ, কতগুলো শ্বাস এখনো ফুসফুসে আছে,সব বের কর। আর ট্রাকের কন্টেইনারে কী ছিলো, তাও জানতে চাই। আজ রাতের আগে।
ওকে।
জায়ান ধীরে ধীরে সোফার পেছনে হেলান দিলো। তার মুখে কোনো রাগ নেই বরং শীতল নীরবতা, যা ঝড়ের আগে প্রকৃতির নীরবতার মতো। চোখ বন্ধ করল, ঠোঁটের কোণে এখনও সেই শয়তানি হাসি খেলা করছে। তারপর জায়ান,মার্কো দুজনেই চুপচাপ বেরিয়ে পড়ে গাড়ি নিয়ে।
গ্যারেজের ধাতব দরজাটা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেলো। বাইরে থেকে আলো এসে এক মুহূর্তের জন্য ভেতরের ছায়ার মধ্যে ঢুকে আবার মিলিয়ে গেল। ভেতরে শুধু ঝুলে থাকা একটা বাল্ব, হালকা হলুদ আলোয় ঝিমঝিম করছে, যেন যে কোনো সময় নিভে যাবে। স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, পেট্রোলের তীব্র ঘ্রাণ আর রক্তের লুকানো গন্ধ মিশে আছে বাতাসে।কোণায় বাঁধা মানুষটা কাঁপছে চোখে কালো কাপড়, হাত পেছনে শক্ত করে বেঁধে রাখা। নিঃশ্বাস দ্রুত, গলার শিরা ফুলে উঠছে।
জায়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো।
তার পায়ের আওয়াজ গ্যারেজের ফাঁকা মেঝেতে ধাতব শব্দ হচ্ছে।
টিক…টিক…টিক। হাতের গ্লাভস ঠিক করতে করতে সে থেমে দাঁড়ালো সেই লোকটার সামনে।
একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বললো।
তুই জানিস, আমি তোর মুখ থেকে একটা কথাও টেনে না নেওয়া পর্যন্ত তোর শরীরের কোনো হাড় ঠিকঠাক থাকবে না।
লোকটা কাঁপতে কাঁপতে –
“প্লিজ… আমি কিছু জানি না… আমি শুধু,
চড়ের শব্দ কংক্রিট দেয়ালে প্রতিধ্বনি করল।লোকটার মাথা পাশে হেলে পড়লো, ঠোঁট থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।জায়ান নিচু হয়ে তার কানে ফিসফিস করে বলল,
মিথ্যা বলিস না। আমার মিথ্য একদমই পছন্দ না। যা জিজ্ঞেস করছি ঠিকঠাক জবাব দে, না হলে তোর শরীরের ভেতর থেকে হাড় গুলো আলাদা করে দেখাবো।
জায়ান ধীরে ধীরে একটা মেটাল রড তুলে নিলো, যেটা পাশে পড়ে ছিলো। হলুদ লাইটের আলোয় রডের মাথায় শুকনো রক্তের দাগ চকচক করলো।
লোকটার গলাটা শুকিয়ে গিয়ে বড় বড় ঢুক গিলতে লাগলো।গলায় শুধু কর্কশ আওয়াজ।
প্লিজ… আমি কিছুই জানি না…
জায়ান এবার থেমে গেলো না। সে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে লোকটার সামনে বসলো। হাতের রডটা নিয়ে আস্তে আস্তে মেঝেতে বাজাতে লাগলো,টাং… টাং… টাং…। প্রতিবার শব্দের সাথে লোকটার শরীর কেঁপে উঠছে।
তারপর হঠাৎ করে জায়ান তার হাতে থাকা গ্লাভস খুলে নিলো, ঠাণ্ডা চোখে তাকালো লোকটার দিকে,
তুই জানিস না,তোকে কে পাঠিয়েছিলো আমায় মারতে? আচ্ছা।এবার আমি তোর শরীরকে মনে করিয়ে দেব।
তারপর সে লোকটার বাম হাতটা ধরে টেনে সামনে আনলো, আর হঠাৎ করে রডের ভারী আঘাত নামিয়ে দিলো আঙুলের ওপর।আঙুল ভেঙে গেলো। লোকটার মুখ থেকে বিকট চিৎকার বেরোলো, কিন্তু গ্যারেজের মোটা দেয়াল শব্দটাকে আটকে রাখলো।
জায়ান ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলে,
প্রথম আঙুল গেলো। এখনো তুই বলছিস কিছু জানিস না?
লোকটা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করছে,
“না… না… প্লিজ… আমি বলব… আমি বলব…
জায়ান ধীরে ধীরে মুখের কোণে হালকা এক পৈশাচিক হাসি টানলো। তার চোখে কোনো আলো নেই, শুধু এক অদ্ভুত অন্ধকার গভীরতা।
এই তো ভালো… বল। আমি শুনছি।
লুকটা কাপতে কাপতে কেঁদে কেঁদে বলে,
মাফিয়া এরেনজো মারিনো। যেদিন তাঁর কেসের শুনানি ছিল, তিনি আমাকে বলেছিলেন যেন আমি আপনাকে কোর্টে আসার আগে, মেরে দিই, আমি..
আমি সেই মতোই দিন গুনছিলাম, আমি জানতাম না আপনি দেশেই নেই, আপনি তো এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি কোর্টে চলে যান আার পুরো প্লেন…
বল!
পুরো প্লেন জলে যায়। আমি জানতাম এরেনজো আমাকে মেরে ফেলবে যদি আপনাকে জীবতো দেখতো। তাই কোর্টের শুনানি শেষে আপনার কারে ব্রেক ফিল করে ক্র্যাশ করাই।
“আ..আমায়,আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমাকে ছেড়ে দিন,মারবেন না।
জায়ান চিৎকার করে-
কত টাকা পেয়েছিলি? আমায় মারার জন্যে?? বল তো।
দদদদ,,দশ মিলিয়ন ইউরো।
জায়ান এবার পিছনে থাকা মার্কোকে হাতের ইশারা দেয়,মার্কো টেবিল থেকে এক বোতল কেমিক্যাল (পেট্রোল মিশ্রিত কেমিক্যাল) নিয়ে এসে। ধীরে ধীরে লোকটার গায়ে ঢালতে লাগলো। চোখে কোনো অনুভূতি নেই,শুধু হালকা শ্বাস। কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমটা কেমিক্যালের গন্ধে ভরে উঠল।
এরপর, জায়ান একটা লাইটার জ্বালালো। ছোট্ট আগুনের আলোয় তার চোখে ভয়ংকর প্রতিশোধের ঝিলিক।
তোর এই কুকর্মের জন্যে আমার দু- মাস সময় লস হলো।এবার বুঝবি আগুনে পুড়লে ঠিক কতটা যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়।
সে লোকটার গায়ে লাইটার ধরালো। মুহূর্তের মধ্যে শিখা লাফিয়ে উঠলো। লোকটার দেহো জ্বলতে শুরু করলো। চিৎকারে গ্যারেজ কেঁপে উঠল। তাপের গন্ধ, পুড়ে যাওয়া চামড়ার গন্ধ বাতাসে মিশে গেলো।
জায়ান দাঁড়িয়ে দেখছে, একদম পাথরের মতো মুখে। সে হেঁটে গিয়ে গ্যারেজের দরজা খুলল, পেছন ফিরে তাকালো না। আগুনের লাল আলো তার কালো কোটে প্রতিফলিত হচ্ছিলো।ভারী ধূসর অন্ধকার ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে সেই আলো,পুরো গ্যারেজ আগুনে দাউ দাউ।
জায়ান মার্কোর গায়ে হাত রেখে –
আগুন কি আমরা লাগিয়েছি??এটাতো electricity থেকে লেগেছে তাই না??
ইয়েসস্
তারপর দুজনেই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়,মার্কো গাড়ি চালাচ্ছে আার জায়ান পাশের সিটে বসা, চোখে সানগ্লাস। বাইরের ভোরের হালকা বাতাস এসে তাদের মুখে হালকা শীতলতা ছড়াচ্ছে। দু-জোড়া চোখে নতুন কোনো ভয়ানক আভাস ফুটে উঠেছে।
ভোরের আলো জানালার পর্দা ফাঁক দিয়ে আস্তে আস্তে লিয়ানার মুখে পড়তে শুরু করে।সে চোখ আংশিক খোলে, চোখে অর্ধেক অন্ধকার, অর্ধেক আলো।একটা অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতি। আজকের সকালের আবহটা তার কাছে ভিন্ন, যেন তার জীবনের সব স্মৃতি আর বর্তমানের এক সঙ্গে মিলেমিশে গেছে।
লিয়ানা ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে বসে, মাথায় হাত দিয়ে নিজেকে সামলাচ্ছে,আশেপাশে তাকাতে থাকে,এইটা কার রুম,কোথায় সুয়ে ছিলো সে সারারাত ,এইসব ভাবতে আর মনে মনে রাগ, অভিমান, এবং এক ধরনের অপূর্ণতার অনুভূতি জেগে ওঠে। হঠাৎ তার স্মৃতিতে ফিরে আসে,বিয়ের সেই মুহূর্ত, জায়ানের উপস্থিতি, সেই অদ্ভুত কেঁপে ওঠার অনুভূতি, যা এখনও তার মনকে স্পর্শ করে রেখেছে ।তার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ইশানের সাথে না তার জায়ান ভাইয়ের সাথে তবে এটা কার বেড রুমে শুয়ে আছে সে বুঝতে পারছেনা।তবে জায়ানের প্রতি রাগ আর অভিমান মিলেমিশে সে হঠাৎ ফুপিয়ে ওঠে।
বিছানা থেকে নেমে, বড় বড় পা ফেলে রুমের মধ্য দিয়ে হেটে যেতে থাকে। রুমটা তার কাছে অচেনা, চারপাশের অন্ধকার আর ভোরের আলো মিলেমিশে বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি করছে। বাড়ির লোকজন কোথায়,কেউ নেই। লিয়ানা শুধু তার অভিমান, রাগ, স্মৃতি আর অজানা ভয়ের সঙ্গে লড়ছে।তারপর ডাইনিং স্পেসে দাঁড়িয়ে কেঁদে উঠে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদার সশব্দে ঠিক সেই মুহূর্তে রান্নাঘর থেকে একজন মধ্যবয়সী ফরাসি মহিলা এগিয়ে আসে । তিনি সকালের নাস্তা বানাচ্ছিলেন, হঠাৎ এরকম কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে আসেন।লিয়ানাও মহিলাটিকে দেখে,
কান্না থামাতে থামাতে তার দিকে তাকায়।
আপনি কে? আপনি কি জানেন আমি কোথায়?,তার চোখে অসহায়তার ছায়া।
আপনি কি বিদেশি? আমার ভাষা বোঝতে পারছেন?
ইয়েসস্ ম্যম, আমি মিসেস হান। ফরাসি ওইমেন । কিছুটা বাংলা জানি বলতে পারি কিন্তু বেশি নয়।বাট হোআট হেপেন? কান্না করছেন কেনো? । জায়ান স্যার চলে আসবেন। আপনার কিছু লাগলে,আমাকে বলুন,I’ll help।
লিয়ানার চোখে হালকা প্রশান্তি ফোটে, কিন্তু অভিমান ও ভয়ের মধ্যে এখনো অদ্ভুত টাণাপোড়া। সে ধীরে ধীরে মহিলার দিকে তাকিয়ে, স্বস্তি খুঁজছে, যেন নতুন কোনো আশা তার দিকে তাকাচ্ছে।লিয়ানা চোখ বড় বড় করে মিসেস হানের দিকে তাকিয়ে বলল,
আচ্ছা, এটা কোন জায়গা?আমি এখন কোথায় আছি?এটা কি ঢাকার বাহিরে?
ঢাকা মিন্ Capital city of Bangladesh???
মিসেস হান একটু অবাক হলেন, লিয়ানার কথাগুলো শুনে। তিনি বোঝতে পেরেছেন, এই মেয়েটি আসলে জানেই না সে কোথায় আছে।
দেখুন মিসেস লিয়ানা,আপনি তো বাংলাদেশে নেই।এটাতো ফ্রান্স। ঢাকা থেকে অনেক দূর,আই মিন বাংলাদেশ থেকে।
লিয়ানার চোখ জ্বলে উঠল। বাংলাদেশে নেই মানে কি?
তার কণ্ঠে অবিশ্বাস, আতঙ্ক।
মিসেস হান নরম ভঙ্গিতে বোঝাতে লাগলেন,
না, না, আপনি এখন বাংলাদেশে নেই। জায়ান স্যার,তিনি আপনাকে কাল রাতে এখানে নিয়ে এসেছেন। আর এখন, আপনি এখানে, অন্য দেশের রাজধানীর কাছে।
লিয়ানার চোখে হঠাৎ ঝাপসা হয়ে উঠলো, তার মনের ভেতর প্রশ্ন ঘুরতে থাকে,এই জায়ান খান নামক মানুষ কি চায়? আমার সঙ্গে কি করতেই চাইছেন? কী এমন পাপ করেছি যে তার শাস্তি দিতে এত দূরে এনেছেন?
লিয়ানা চোখ মেলে জানালার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। বাইরে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু তার মন এখনো অন্ধকারে ডুবে। তার শরীর কেঁপে উঠছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে,তার জীবন আগে যেমন ছিলো, তা আর থাকবে না।লিয়ানা হঠাৎ রাগে লাল হয়ে ওঠে, কাঁদতে কাঁদতে উঠে বসে। মনের মধ্যে হাজারো গালি,জায়ানকে উদ্দেশ্য করে, নিজের অবস্থা নিয়ে, নিজের অসহায়তা নিয়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে, বাইরে গাড়ির আওয়াজ,মার্কোর ল্যাগজারি গাড়ি এসে থামে Shadow Empire এর সামনের রাস্তার ধারে।জায়ান সরাসরি সদর দরজা খুলে প্রবেশ করে। লিয়ানার চোখ পড়ে জায়ানর দিকে। সে দৌড়ে এসে জায়ানের বুকে সজরে আঘাত করতে থাকে,হাত পা ছুরতে থাকে।। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
আমায় বলুন,উত্তোর দিন,কোথায় নিয়ে এলেন? দয়া করে দেশে ফিরে চলুন।আমায় নিয়ে যান।আমি দেশে ফিরবো।
জায়ান এবার লিয়ানার দিকে একটু ঝুকে কানের পাশে হালকা হেসে বলে,
আমাদের যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে ভুলে গিয়েছিস?? বিয়ের পর যে স্বামীর সাথে সাথে থাকতে হয় জানিস না??এখন থেকে আমি যেখানে থাকবো সেখানে তোকেও থাকতে হবে, মাই ডিয়ার ওয়াইফি।
এবার রুমে চল,তোর সাথে বোঝাপরা আছে অনেক।অবশ্য কাল বাসরটা সারতে পারিনি।তুই চাইলে ..
আই এম ফুল রেডি।
আমি যাবো না! কোথাও যাবো না? আমি নিজে নিজেই ফ্লাইট বুক করবো, দেশে চলে যাবো।
জায়ানের এবার সহ্যসীমা অতিক্রম হয়ে যায়, চোখে হঠাৎ এক অদ্ভুত তেজ ফোটে ওঠে, দাঁতে দাঁত পিষে, চুলগুলো হালকা নাড়া দেয়। তারপর জোড় করে লিয়ানাকে কাছে টেনে এনে, কাঁধে তুলে নেয়, ধীরে ধীরে উপরে সিঁড়ি বেয়ে নিয়ে যায়।লিয়ানা হাত পা ছুঁড়তে থাকে,জায়ানের পিঠে ঘুষি মারতে থাকে।কিন্তু জায়ানের চোখে সেই স্থিরতা, লিয়ানা বুঝতে পারে,এবার আর কোন উপায় নেই।
তারপর জায়ান চুপচাপ ধীরে ধীরে লিয়ানাকে নিজের বেডরুমে নিয়ে যায়। লিয়ানাকে ধীরে ধীরে বেডের ওপর বসিয়ে ধরে। কণ্ঠে একধরনের জোর, আবার আবেগের তেজ,
Come on, বেবি কাল রাতে তোর ঘুমের কারণে বাসরটা সারতে পারিনি।
প্লিজ, একটু একা থাকতে দিন। ভালো লাগছেনা। একটু সরে বসুন।আপনাকে কিছু বলেও লাভ নেই আমার কোনো কথার ঠিকঠাক জবাব আপনি দিবেন না জানি।
আহাাহহহ।ওকে,কিন্তুু একটা চুমু খেতে দে, গড প্রমিজ, দিনের বেলা আর কিছু করবো না,একবারে রাতে করবো।
জায়ানের এসব কথা লিয়ানার ভালো লাগছেনা।সে কিছু বলতেই যাবে তখনি,জায়ানের হাত চলে যায় লিয়ানার দিকে, এক হাতে লিয়ানার গাল জোরে চেপে ধরে আরেক হাতে শার্টের বোতামগুলো খুলে ফেলে।জিব দিয়ে ঠোঁটটা একটু ভিজিয়ে নেয়।তারপর লিয়ানার কোমড় শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।জায়ানের উদুম বুকের তিব্র তাপ লিয়ানার পুরো শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে।বুকে ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো।জায়ান যখনি লিয়ানার অধর স্পর্শ করতে যাবে তখনি লিয়ানা জায়ানের বুকে মুখ গুজে কেঁদে ফেলে হাউমাউ করে।
কেন বিয়ে করলে আমাকে? ভালোবাসেন না বলে ছিলেন। তাহলে কেনো??দয়া করেছেন আমার উপর? আমি চেয়েছি আপনার দয়া??
জায়ান এবার তাচ্ছিল্য হেসে,
ভালোবাসলেই কি বিয়ে করতে হয়??আমার তো রাত হলেই একটা বউ বউ অভাব ফিল হয়।কি করবো বল।তাই বিয়ে করে নিলাম তোকে।
এবার লিয়ানার অধরে আঙুল ছুইয়ে,
তবে তোকে ছুঁতে আমার কোনো বিয়ের প্রয়োজন ছিলো না।এমনিতেও আমি বিয়েতে বিশ্বাসী নই।বরং তোর শরীরে যেনো কোনো কলঙ্কের দাগ না পরে তাই আর কি এইসব বিয়ে টিয়ে করা।
নে এবার আমায় কড়া করে একটা চুমু খা তো।বোকার মতো কাঁদিস না ।অসহ্য লাগে। আই ডুন্ট লাইক ফা*কিং ক্রায়িং। নাও স্টপ।
লিয়ানার চোখ বেয়ে সেই জল পড়েই যাচ্ছে, থামার নাম নেই।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের জল মুঁছতে মুঁছতে-
আপনি আমার থেকে দূরে গিয়ে বসুন না,কিসের বিয়ের অধিকার খাটাতে চাচ্ছেন??
মানিনা আমি এই বিয়ে,ছুঁবেন না আমায়। আপনি জানেন??গত দুমাস প্রায় দুইশো কল করেছি আমি আপনায়। ফোন বন্ধ করে উধাও হয়ে গিয়েছেন।একবারও ভেবে দেখেছেন কিসের মধ্যে দিনপার করেছি?
আমি পারবোনা।সত্যিই পারবো না।আপনার মতো পাষাণ লোকের সাথে সংসার সম্ভব না।
জায়ানের চোখে তখন এক অদ্ভুত রঙ,রাগ, উত্তেজনা, এবং অশান্তি। সে ধীরে ধীরে লিয়ানার গাল ধরে স্পর্শ করে আরও শক্ত করে, যেনো তার নিজের আবেগের চাপ লিয়ানাকে ছুঁয়ে বলছে,
হ্যাঁ,আমি পাষাণ অনেক পাষাণ,আার এই পাষান হৃদয়ের অমানুষটার সাথেই তোকে আজীব কাটাতে হবে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।নিজেকে সেভাবেই তৈরি করে নে।
তারপর শার্টের গুতোম গুলি লাগাতে লাগাতে জায়ান বাঁকা হেসে বলে-
এভাবে ভেঁ ভেঁ করে না কেঁদে যদি একবার আমার বুকে থাকা দেহের প্রতি কোনায় কোনায় থাকা যন্ত্রনার দাগ গুলি দেখতি নিজের অর্ধেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যেতি।
জায়ানের কথা গুলি লিয়ানার কানে যেতেই মুখ ঘুরিয়ে সেখানে তাকাতেই জায়ান শার্ট দিয়ে নিজের শরীর মুড়িয়ে নেয়।বেড থেকে উঠেই কড়া গলায় আদেশ ছুরে মারে সে
এই Disgusting 3rd class শাড়ি তারাতাড়ি খুল, আমি এসে যদি দেখি আবার এইটা,তাইলে নিজের হাতেই টেনে খুলে দিবো।
গো নাও,হারি আপ।
জায়ান কথাগুলো বলেই ধীরে ধীরে বেড থেকে নেমে আসে। তার পায়ের শব্দ যেন পুরো বাড়িটাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। পা ভারী, কপালে ঘাম, শরীরে উত্তাপ,মাথাটা টনটন করছে, মুখে এক অদ্ভুত ক্রোধের রেখা। হাত মুষ্টি বন্ধ।
সে ডাইনিং স্পেস পেরিয়ে এগিয়ে যায়, সঙ্গে নিয়ে নেয় দুটো অ্যালকোহলের বোতল। তার হাঁটার ভঙ্গি দেখে বোঝা যায়, সে নিজেকে কষ্ট করে কন্ট্রোল করছে,চোখ লালচে, মুখে থমথমে আবহ।কয়েক সেকেন্ড পরে সে পৌঁছে যায় শ্যাডো এম্পায়ারের বিশাল সুইমিং পুলের ধারে। নীলাভ পানির ওপর ভোরের আলো ঝিকমিক করছে। সে ধীরে ধীরে পুলের ধারে বসে দুটো পা জলে ডুবিয়ে দেয়। জলের ঠাণ্ডা স্পর্শেও শরীরের আগুন কমছে না।
প্রথম বোতলের মুখ দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খুলে ফেলে। ঢকঢক করে পুরো বোতল মুখে ঢেলে দেয়। এক বিন্দু ফেলে না। শেষ ফোঁটা গলায় নামতেই সে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেয়। যেন নিজের যন্ত্রণা ম*দে ডুবিয়ে দিতে চাইছে।নিজেকে পরিশুদ্ধ করছে।দ্বিতীয় বোতল খুলে এবার মুখে না দিয়ে, পুরোটা নিজের গায়ে ঢেলে দেয়। মাথা থেকে গলা, বুক,সব অ্যালকোহলে ভিজে যায়।মনে হয়, সে যেন শরীরের বিষাক্ততা ধুয়ে ফেলছে।বোতলের বাকি অংশ জলের ভেতর ছুড়ে ফেলে। গ্লাস ভেঙে টুন টুন শব্দে ডুবে যায় বোতলটা।তার চুল ভেজা, চোখ লাল, মুখে ভয়ংকর অভিব্যক্তি। নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে বেপরোয়া ভাবে আঁচড়ে ধরে। তারপর দাঁত চেপে আকাশের দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে ওঠে—
মাত্র দুই মাসে শরীরে জ্বালাপোড়া লেগে গেলো?
আর আমি..
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৬
আমি জায়ান! গত ১০ বছরে,
১২০ মাস, ৫২০ সপ্তাহ, ৩৬৫০ দিন, ৮৭,৬০০ ঘণ্টা,
৫২,৫৬০,০০০ মিনিট, ৩৩৫,৩৬০,০০০ সেকেন্ড।
প্রতিটা মুহূর্তে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়েছি।
তার হিসেব দিতে পারবি তো?
