তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৯
ভূমিকা তালুকদার
উফফ!!
জায়ানের ধারালো দাঁতের আঘাত লিয়ানা আর সহ্য করতে না পেরে জায়ানকে ধাক্কা দিলো,
এভাবে কেউ চুমু খায় নাকি? আমার ঠোঁটটা তো কেটে গেলো মনে হচ্ছে, উফ!অনেক ব্যথা করছে!
জায়ান সরে গিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে নিলো,তারপর বাঁকা হেসে-
stupid ! এতটুকু ব্যথাই যদি সহ্য না হয়, তাহলে আমার এতকাছে আসিস কিভাবে, হুঁ? এটা তো কেবল ট্রেইলার ছিলো । আসল সিনেমা এখনো শুরুই হয়নি।
লিয়ানার বুকের ভেতর কাঁপুনি শুরু হলো, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো। ঠোঁট কামড়ে চোখ সরিয়ে নিলো, কিন্তু মুখে অভিমানী গলা,
এটা আবার কেমন ট্রেইলার? এত রাফলি কেউ কিস করে,ভাবলেও ভয় লাগে।
জায়ান এবার ধীরে ধীরে লিয়ানার দিকে এগিয়ে এলো। এক পা, দু’পা তারপর ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে গলা নামিয়ে ফিসফিস করে-
ভয় ? ভালোই তো, ভয় মেশানো প্রেমটাই সবচেয়ে নেশা ধরায়। আর পরের বার,
সে হঠাৎ লিয়ানার কানের কাছে ঝুঁকে নিঃশ্বাস ছুঁইয়ে বললো,
ফ্রেঞ্চ কিস করবো,তখন কীভাবে সহ্য করবি?
লিয়ানা হাত দিয়ে ঠেলে দিলো, চোখ বড় বড় করে—
আস্ত একটা সান্ডা আপনি!
What rubbish!আমি সান্ডা??সান্ডা খেতে চাস নাকি?
লিয়ানা ঘৃণায় মুখ বাঁকিয়ে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছিঃ,জঘন্য! কুমিরের মতো দেখতে,এইসব কি আমি খাবো নাকি? চেঃহ্ থুহ।
জায়ান মাটিতে পড়ে থাকা শার্টটা তুলে গায়ে দিতে দিতে ঠান্ডা স্বরে হেসে বললো—
সান্ডার সাথে কুমির মিলাচ্ছিস? একটু যদি ভণ্ডামী বাদ দিয়ে পড়াশোনাটা ঠিকমতো করতি, তাহলে অন্তত এইসব আজগুবি তুলনা করতে হতো না।
পড়াশোনা?
লিয়ানা চমকে উঠলো। এতক্ষণে যেনো মনে পড়লো ওর এক্সামের কথা। মুখ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে,হায় আল্লাহ! আমি তো একটা এক্সামও ঠিকমতো দিতে পারিনি। এবার তো মনে হয় সবগুলোতেই ফেল করবো। এখন কি হবে আমার?
তারপর কাতর চোখে জায়ানের দিকে তাকালো,
দেখলেন তো! সব দোষ আপনার। আপনার জন্যেই আমি পড়তে পারিনি। এবার যদি আমি ফেল করি, আপনাকেই কিন্তু ফেল করা বউ নিয়ে থাকতে হবে।
জায়ান কিছু না বলে সোজা দরজার দিকে হাঁটতে লাগলো। লিয়ানা পেছন পেছন গিয়ে,
শুনছেন না? আমি কি বলছি?
জায়ান হঠাৎ থেমে ঘুরে দাঁড়ালো। ঠান্ডা মুখে ফিসফিস করে,
ফেল করলে তেমন কিছু করবো না,শুধু একটুখানি গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে চুমু খাবো একশোটা।
তার কথা শুনে লিয়ানার মাথা একদম ঘুরে গেলো।মাথাটা এখনি চক্কর দিতে থাকে, চোখ কপালে উঠে গেলো-
কী! এটা আবার কেমন শাস্তি? এ তো স্বামী না, একেবারে জল্লাদ।
লিয়ানা ঠোঁট বাঁকিয়ে অভিমানী গলায় বললো—
আপনার থেকে তো ওই ইশা……!
কথাটা শেষ হবার আগেই জায়ানের হাতের মুষ্ঠি শক্ত হয়ে গেলো। মুষ্টি শক্ত করে চোখ লাল হয়ে উঠে।দাঁতে দাঁত চেপে ধীরে ধীরে লিয়ানার দিকে তাকালো।
লিয়ানার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। ঠোঁট কামড়ে মনে মনে ফিসফিস করে, গেলাম! কেনো যে সাপের সামনে নেউলের কথা বলতে গেলাম।নিজের হাতে নিজের বিপদ ডেকে আনার জন্য আমি লিয়ানা সেরাহহ রেহ।
জয়ান গভীর গলায় গর্জে উঠলো,
থেমে গেলি কেন? পুরো কথাটা মুখ দিয়ে বের কর,তারপর দেখ!
লিয়ানা একরকম সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেললো,
সমস্য কিহ!! যদি ওই ইশান শেখের সাথে বিয়ে হয়ে যেতো,তখন কি করতেন আপনি?গুন্ডামী করেও লাভ হতো না।
জায়ান এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। মুখে বিষাক্ত হাসি ফুটিয়ে, ফিসফিস করে ছুঁড়ে দিলো এক লাইন,
তখন তোকে বিধবা বানিয়ে দিতাম।ব্যাস্।
কথাটা বলেই জায়ান নিচে নামতে শুরু করে।লিয়ানা এবার ভয়ে মুখে তালা মেরে আস্তে আস্তে জায়ানের পেছন পেছন নিচে নামতে থাকে। সবার চোখ তখনও জায়ানের দিকেই ছিল, কিন্তু হঠাৎ করেই লিয়ানা সামনে গিয়ে একটানে চেয়ারটা টেনে নিয়ে থপাশ করে বসে পড়লো।আচমকা লিয়ানার ভঙ্গিমা দেখে এক মুহূর্তের জন্য পুরো ডাইনিং স্পেস থমকে গেলো। সবাই তাকিয়ে রইল লিয়ানার দিকে। কিছুক্ষণ আগেই যে মেয়েটা চোখ ভরে কান্না করে সাগর বানিয়ে দিচ্ছিলো, মুখ ভার করে চুপচাপ বসে ছিলো, সেই মেয়েটা হঠাৎ যেন একেবারে উল্টে হয়ে গেলো।তার ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি ভরা হাসি , চোখ দুটো ঝিকমিক করছিলো ছোট্ট রোদেলার মতো। মনে হচ্ছিল,ঝড় থেমে যাওয়ার পর হঠাৎ যেন আকাশে রংধনু উঠে এসেছে।
বাকিরা কিছুই বুঝতে পারছিল না। আসলে তারা জানতই না, এটাই তো আসল লিয়ানা। স্বভাবেই সে দুষ্টু, মিষ্টি, চঞ্চল এক প্রাণচঞ্চল মেয়ে।
কয়েক মাস ধরে মন খারাপ থাকায় সে নিজের মতো করে হাসিখুশি থাকতে পারছিলো না। আজ এতদিন পর যেন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, আর সেই প্রাণবন্ত স্বভাবটাই ফিরে এসেছে চোখেমুখে।
তারপর লিয়ানা এবার সরাসরি মার্কোর দিকে তাকিয়ে কৌতূহলী গলায় বলল-
মাহতাব ভাইয়া, আপনার বয়স কতো?
উনত্রিশ প্লাস কেনো??
লিয়ানা আবার ঝটপট বলে উঠল,
এখনও বিয়ে করছেন না কেন? বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন তো! আমার কাছে অনেক ভালো ভালো মেয়েদের সন্ধান আছে। চাইলে আপনার বিয়ের ঘটকালি আমি করে দিতে পারি।
বলেই মিষ্টি দুষ্টু ভঙ্গিতে মিটমিট করে হেসে ফেললো লিয়ানা।
লিয়ানার কথা শুনেই এলেক্স সঙ্গে সঙ্গেই সামনে এগিয়ে এসে মুখ গম্ভীর করে বলে উঠে-
আরে তুমি ওর কথা বাদ দাও তো! তুমি আমার জন্য মেয়ে দেখো।
লিয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকালো,
আপনি করবেন?
এলেক্স বুক চিতিয়ে, একেবারে ভরসার ভঙ্গিতে,
Of course!জায়ান করে ফেলেছে, নাও আই এম ভেরি ভেরি জেলাস।
লিয়ানা চওড়া হাসি দিয়ে আবার খুনসুটি শুরু করলো,
আপনি তো বিদেশি মেয়েদের করবেন, আমি তো বিদেশি কাউকেই চিনি না।
আরে রাখো তোমার বিদেশি, বাঙালি হলেও চলবে। আমি একেবারে খাঁটি বাংলা পারি,দেখছো না!
আচ্ছা তাইলে তো খুব ভালো! কেমন মেয়ে লাগবে বলেন,
তোমার কি কোনো ছোট বোন-টোন নেই? মানে জায়ানের কোনো “sister in law”নেই??
আছে তো, আমার দুটো বোন আছে,তবে একজন কাজিন। একজন ৯-এ পড়ে, আরেকজন ১০-এ।
lol!তোমার থেকেও পিচ্চি!
আমি মোটেও পিচ্চি নই।
লিয়ানা সরাসরি জয়ানের দিকে তাকালো,
আমাকে পিচ্চি বলল, আপনি কিছু বলছেন না কেন?
জায়ান কোনো কথা বললো না, শুধু চুপচাপ এলেক্সের দিকে তাকিয়ে রইলো।মুহূর্তেই লিয়ানার মেজাজ ঘুরে গেলো। কোনো উত্তর না পেয়ে ব্রেডটা মুখে পুরে নিলো, তারপর চেয়ার থেকে উঠে সোজা কিচেনের দিকে চলে গেলো।লিয়ানা ধীরে ধীরে কিচেনের দরজার সামনে গিয়ে থামলো। ভিতরে তাকাতেই চোখে পড়লো, মিসেস হান মৃদু গুনগুন করতে করতে লাঞ্চের শেষ কাজগুলো সামলাচ্ছেন। মসলা ভাজার শব্দ, তেলে পেঁয়াজ-পোস্ত ফোড়নের খচমচ আওয়াজে কিচেন যেনো জীবন্ত এক মঞ্চ হয়ে উঠেছে।ক্যাবিনেটের ওপরে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে পড়লো লিয়ানা।
মিসেস হান পেছন ঘুরে প্লেট নামাতে গিয়ে হঠাৎ লিয়ানাকে দেখলেন। তার কচি মুখে নির্লজ্জ কৌতুকের হাসি। মুহূর্তেই ভ্রু তুলে তাকালেন তিনি, তারপর ঠোঁটের কোণে টান পড়ল,আধো মায়া মেশানো এক মৃদু হাসি।প্রায় পাঁচ-ছয় বছর হলো তিনি এই বাড়িতে। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে পৃথিবীতে আর তেমন আপন কেউ নেই তার। অথচ এই বাড়ি, এই বিশাল Shadow Empire,এর মাঝে তিনি যেন নিজের এক আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। সবার জন্য রান্না করাই তার ধ্যান, তার বেঁচে থাকার উপায়।আর সত্যি কথা বলতে কী, জায়ানদের কাছে তার হাতের রান্না খুবই পছন্দের। তিনি জানেন, বাইরে থেকে যতই কঠিন মুখে থাকুক, ভেতরে জায়ান একজন উদার মনের মানুষ
মিসেস হান, আমায় রান্না শিখাবেন?
চমকে তাকালেন মিসেস হান। মুচকি হেসে উত্তর দিলেন,
জি ম্যাম, বলুন কি শিখতে চান?
লিয়ানা হালকা হেসে মাথা নাড়লো। গলায় সরলতা মেশানো অনুরোধ,
আরে, আমি তো আপনার থেকে অনেক ছোট। ডাবল না, ট্রিপল বয়সেরও ফারাক। আমায় ‘ম্যাডাম’ বা ‘ম্যাম’ না বলে দয়া করে নাম ধরে ডাকবেন, প্লিজ।আপনি আমার মায়ের মতো
কিছুক্ষণের জন্য থমকে রইলেন মিসেস হান। লিয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতরটা নরম হয়ে গেলো। কী নিষ্পাপ মেয়ে! কথার ভঙ্গিতে নেই অহংকার, নেই হিংসার ছাপ। নিজের মনে ভাবলেন,যদি আমারও এমন একটা মেয়ে থাকত,এরকমই বয়স হতো। কতটা মিষ্টি করে কথা বলে! মনটা ভরে গেল।
ওকে,মিসেস লিয়ানা । তুমি চাইলে হাতে ধরে ধরে সব শিখিয়ে দেবো। কিন্তু যদি জায়ান স্যার রাগ করেন,পরে আমায় বকবেন।
কথা শেষ করার আগেই লিয়ানার নরম হাসি,বাধা দিল,
আহ্ মিসেস হান, আপনি বুঝতে পারছেন না ব্যাপারটা। আমি তো গরম জল ফোটানো ছাড়া আর কিছুই জানি না। নিজের স্বামীকে এক কাপ কফি বানিয়ে খাওয়াতেও পারব না! এখন বুঝলেন আমার বিপদটা?
মিসেস হান হেসে ফেললেন। লিয়ানার কণ্ঠে নির্ভেজাল,যেন ছোট্ট মেয়েটা সত্যি সত্যিই তার মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখতে চাইছে।ডাইনিং স্পেসটা তখনও উষ্ণ আলোয় ডুবে আছে। কাঁচের ঝাড়বাতি থেকে নেমে আসা নরম হলুদ আলো টেবিলের ওপর এক ধরনের সোনালি আবেশ ফেলেছে। চেয়ারগুলো অর্ধেক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, কেউ বসে, কেউ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
হঠাৎই পিছন থেকে নাদিয়া গলা নামিয়ে মার্কোর কাছে এসে দাঁড়ালো, কফির মগটা একহাতে ধরা। ঠোঁটে চিরচেনা চওড়া হাসি।
মার্কো, এই শোন, আজ রাতের পার্টির খবর কি?
জায়ান:
কিসের পার্টি আবার?
মার্কো ভুরু কুঁচকে, তারপর হেসে মাথা নেড়ে বললো,
কিসের পার্টি মানে? ওহ, আমার তো মনে হয় বলাই হয়নি তোদের।
ঠিক তখনই পাশ থেকে এলেক্স উঠে দাঁড়াল, মুখে অর্ধেকটা ঠাট্টা অর্ধেকটা সিরিয়াস ভাব।
আমাকে বাদ দিয়ে পার্টির প্ল্যান করে করিস কীভাবে? বাংলা ভাষায় যদি বলি, বেইমান রে…….!
আরে থাম তো! আগে শুনে নে,We’re hosting a grand comeback party for Zayan. Just imagine,the most extravagant celebration in all of France ., মানে পার্টিটা জায়ানের কাম বেক এর,সাথে আমাদের সেদিনের কেস জিতার।যা করার প্লেন করেও করা হয়নি।
পার্টির কথা কানে যেতেই লিয়ানা যেনো তাড়াহুড়ো করে ডাইনিং স্পেসে চলে আসে।
পার্টি? আমিও যাবো।
জায়ান লিয়ানার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললে,
একদম না। আমি বলেছি না মানে না,বাড়িতেই থাকবি তুই।এখন উপরে যা।
লিয়ানা এবার নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে, ঘাড় উল্টিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,
আমি গেলে কি হবে, আপু? আমিও যেতে চাই
নাদিয়া এবার জায়ানের দিকে তাকিয়ে,
আমাদের সাথে গেলে কি হবে??একদিনই তো।
জায়ানের চুপচাপ দৃষ্টি এবং নীরবতা দেখে, লিয়ানার মন আরও খারাপ হয়ে গেলো। সে নীরব হয়ে সোফায় বসে রইল।
জায়ান ধীরে ধীরে লিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,
এত ডং করতে হবে না,নিয়ে যাবো।
লিয়ানা এবার হেসে জায়ানের দিকে তাকালো, মনে মনে ভাবল,পার্টিতে কি পরা উচিত। হাত দিয়ে নিজের টি-শার্ট ধরে বললো,
দেখুন তো, আমি আপনার জামা পরেই আছি এই দামড়া মার্কা গেঞ্জি পড়ে কীভাবে যাবো।?
আমার টি-শার্ট পরতে কে বলছে তোকে ,কিছু না পেলে রুমে বসে থাকতি, বাহিরে এলি কেনো।
অদ্ভুত তো।
এটা কি তোর বাড়ি? যে এখানে তোর জামাকাপড় থাকবে?
এভাবে কেনো বলছেন,আপানার বাড়ি কি আমার বাড়ি না??
যেটা শুধু আমার, সেটা তোর,আর এই Shadow empire এর প্রতিটি কোণা আমার,তবে একার না,এটা এখানের প্রত্যেকের।এটা আমাদের ইমোশন।তবে তুই থাকবি আমার একান্ত ব্যক্তিগত সাম্রাজ্যেতে।
মানে কি??আমি কোথাও যাবো না, আমি এখানে সবার সাথেই থাকবো।
ভালো আছি, ভালো হয়ে থাকতে দে, মেজাজ খারাপ করাস না, তা না হলে এখনই নিয়ে গিয়ে রুমে তালা মেরে রাখবো।
জায়ানের সিরিয়াস মুডের কথা শোনার পর লিয়ানা আর কিছু বলার সাহস পেলো না। চুপচাপ হয়ে গেলো। যদি কিছু বলে, জায়ান নিশ্চয়ই তাকে সত্যি সত্যি তালা মেরে আটকিয়ে রাখবে।কোনো বিশ্বাস নেই এই লোকের সঙ্গে।
সন্ধ্যা নামতেই রুমে হালকা সোনালী আলো ছড়িয়ে পড়লো। বেডের ওপরে এলোমেলো ঝাপটে রাখা এক কালো রঙের গ্রাউন, যেটা জায়ান বিশেষভাবে লিয়ানার জন্য এনে দিয়েছে। গ্রাউন এর মোলায়েম কাপড়ে হালকা সিল্কের ছোঁয়া, আলোয় যেনো তা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, আর সেই নিখুঁত কালো রঙ লিয়ানার ফর্সা ত্বকে বেশ মানিয়েছে।
লিয়ানা গ্রাউন ড্রেসটা পড়ে নিজেকে দেখে একটু থমকে রইলো। চোখে একরাশ বিস্ময়, গালে লালিমা। হাত ছুঁয়ে নিলো কাপড়ে থাকা চকচক করা পাথর গুলোর উপর। তারপর ধীরে ধীরে সব ঠিক করলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে পুরো শরীরের প্রোপরশন দেখছে। হালকা হেঁচকা হেঁচকা, গ্রাউন এর ফ্লাওয়ার ডিজাইন তার কোমর এবং কোমর থেকে নিচে ফুটে আছে। , লিয়ানা নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো, যেন জামার প্রতিটা ফোটা তার নিজের মনের সঙ্গে একরকম কথা বলছে।আর ভাবছে ছেলে মানুষের চয়েস এতোটা নিখুঁত কি করে হতে পারে।
চুলগুলো বেশ বড় লিয়ানার যার কারনে হালকা কার্ল করে নিলো। মনে হচ্ছে, পুরো universe এখন শুধু তার জন্য থেমে আছে,তারপর ঠোঁটে একটুনি পিংক লিপগ্লস দিলো আর গালে হাল্কা ব্লাসন।বেস্ লিয়ানা একদম রেডি। গ্রাউন হাত দিয়ে সামলিয়ে, ধীরে ধীরে সিঁড়ির দিকে নামতে শুরু করে। প্রতিটি ধাপ যেন তার কোমলতাকে আরও প্রকাশ করছে। গ্রাউনটা ধীরে ধীরে ভাঁজ হয়ে নিচের দিকে নেমে আসছে, হালকা হাওয়ায় এর নরম ফাঁপা ঢেউ যেন প্রতিটি ধাপের সঙ্গে মিলছে।
নিচে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা জায়ান একদম নীরব, শুধু লিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে বিস্ময় আর প্রশান্তি,একই সঙ্গে এক অদ্ভুত আকর্ষণ। প্রতিটি মুহূর্তে লিয়ানার প্রতি তার নজর কাঁপছে, যেন এই দৃশ্য তার মনের গভীরতায় চিরকাল গেঁথে থাকবে।
লিয়ানার বাদামী চোখ ঝলমল করছে লাইটের আলোয়, চোখের গভীরে লুকানো হালকা উজ্জ্বলতা। ঠোঁটগুলো মৃদু হাসছে, আর নাকের ছোটো নরম গোলাপি রং যেনো তার সতেজতা আরও ফুটিয়ে তুলছে। চুলগুলো ঝলমল করে নরমভাবে পড়ে আছে,এক কোনায় ছুটো একটা সাদা পাথরের ফেঞ্চি ক্লিপ। মাঝে মাঝে হালকা হাওয়ায় দুলছে, যা জায়ানের চোখে এক রূপকথার দৃশ্যের মতো মনে হচ্ছে।স্লিপিং বিউটি থেকে সোজা রুপানজেল।তার নিজস্ব রাজ্যের রানী,কেবল মুকুট বিহীন।লিয়ানার ধীরে ধীরে নেমে আসা, চোখের খেলা, হাসি, চুলের স্পর্শ,সবকিছু জায়ানের চোখে এক অদ্ভুত আবেগ সৃষ্টি করছে। সে বুঝতে পারছে, এই মুহূর্তটা শুধু একটি সাধারণ দৃশ্য নয়,একটি নিখুঁত, শান্ত কিন্তু গভীর রোম্যান্টিক মুহূর্ত।মন চাইলো কোমড় ধরে একটা চুমু খেতে। জায়ান গভীর নিঃশ্বাস ফেলে, চোখের সামনে এই দৃশ্য নিজেকে জমে থাকার মতো মনে হচ্ছে।
সে লিয়ানার প্রতি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, কিন্তু নিঃশব্দ, যেনো শুধু এই মুহূর্ত উপভোগ করতে চায়।সামনেই নাদিয়া নীল রঙের আর এলেনা লাল রঙের বোল্ড ড্রেসে। মার্কো এবং এলেক্স দাঁড়িয়ে আছে, ব্লেজার ও কোর্ট-প্যান্ট পরা, চোখ সবার লিয়ানার দিকে,জায়ান ধীরে ধীরে লিয়ানার দিকে এগোচ্ছে। চোখে আগুন। জায়ানের পড়নে, কালো ব্লেজারের ভিতরে সাদা শার্ট, ব্ল্যাক ফর্মাল প্যান্ট, হাতে রোলেক্সের ঘড়ি, বুকের কাছে সানগ্লাস ঝুলছে,সব মিলিয়ে এক পরিপাটি,সামনের চুলগুলো কপাল ছুয়ে পড়ে আছে। জায়ান ধীরে ধীরে লিয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রতিটি ধাপ যেন সময়কে থামিয়ে দিয়েছে। সে প্রথম সিঁড়ির ধাপে পা রেখে হাত বাড়িয়ে দিলো লিয়ানার দিকে।লিয়ানা এক মুহূর্ত থমকে গেলো,তার ভীষণ লজ্জা লাগছে। তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে জায়ানের হাত ধরে নিলো। স্পর্শে হালকা কম্পন,কাঙ্খিত, অব্যক্ত।
শুধু এই মুহূর্তেই নয়,সকলেই থমকে দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখের খেলা, হাতের স্পর্শ, এবং শরীরের ভাষা যেনো পুরো পরিবেশকে রোম্যান্টিক এবং গভীরভাবে নাটকীয় করে তুলেছে।তারপর সকলে এক সাথে স্যাডো এমপিয়ার এর গেট পেড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো,সাথে কয়েকজন বডিগার্ডও পিছনে আরেকটি গাড়িতে উঠে পড়ে।
[স্থান, ম্যানসি]
.Château de Vaux-le-Vicomte(১৬৫৮–১৬৬১ সালে নির্মিত)
ফ্রান্সের এক অনন্য, বিলাসবহুল ও ঐতিহাসিক (প্রাসাদ), যাকে বলা হয় Versailles এর প্রেরণা। এটি ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত, মূলত নিকোলাস ফুকে নামের এক ফরাসি অর্থমন্ত্রীর জন্য। স্থপতি লুই লে ভাউ, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার আন্দ্রে লে নোত্রে, আর বিখ্যাত চিত্রশিল্পী শার্ল লে ব্রঁ এই তিনজন কিংবদন্তি শিল্পীর সহযোগিতায় তৈরি হয়েছিল এই অসাধারণ প্রাসাদ।
(🚫তথ্যেটি সম্পুর্ন সত্যে,কাল্পনিক নয়,যা বাস্তবে আছে,রিসার্চ করে এড করা হয়েছে)
রাতের আকাশে হালকা নীলাভ ধোঁয়া ছড়িয়ে আছে, আর Château de Vaux-le-Vicomte-র সিলুয়েট দূর থেকে লাইটের ঝলকানি দিয়ে আলোকিত। প্রবেশদ্বারের চারপাশে সোনালী লাইটের সারি, ঝিলমিল করছে যেন রাজকীয় স্বপ্ন। ভেতরে ঢুকতেই, বিশাল হলের সিলিং থেকে ঝরছে বিশাল ক্রিস্টাল চ্যান্ডেলিয়ার,প্রতিটি ঝলকানি যেন কোনো গল্প গল্পের অংশ হয়ে পড়েছে।ফর্মাল বাগানগুলোতে জ্যামিতিক পথে হাঁটছে অতিথিরা, সুপারফরমাল ফরাসি বাগানের সঙ্গে মিল রেখে সোনার আলোতে ভাসছে। জায়গার প্রতিটি কর্ণারে সজ্জা,মোমবাতি, ফুল, ছোট ছোট ফোয়ারা, আর থিম অনুযায়ী আলো,সবকিছু এক সঙ্গে মিলিয়ে এক অপূর্ব রাজকীয় আবহ তৈরি করছে।। ফ্রান্সের বড় বড় সামাজিক ও ব্যবসায়িক লিজেন্ড, বিলিয়নেয়ার, শিল্পী, ও রাজনৈতিক নাম,সবার চোখে ছাপ পড়ার মতো ধরণ, কেউ কেউ হালকা হাসি, কেউ কেউ চোখে রহস্যের ঝলক,সব মিলিয়ে পার্টির অভ্যন্তরকে মনে হয় যেন কোনো সিনেমার সেট।সকল বড় বড় ফেমাস ম্যান উইমেনরা এখানে আমন্ত্রীত। একদিকে বাগানের সুইমিং পুলের জলপ্রপাত, অন্যদিকে কাচের আলো ছাপিয়ে ঝলমল করছে
তখনি কালো রঙের বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল কার এসে দাঁড়ায়,একে একে মার্কোরা,সকলে নামে গাড়ি থেকে,শেষে জায়ান বের হয় কার এর ডুর ওপেন করে,আপরপাশে গিয়ে গাড়ির ডোর খোলে হাত বাড়িয়ে দাড়ায়,জায়ানের হাত ধরে নেমে আসে,
“লিয়ানা খান, ওয়াইফ অফ জায়ান খান।”
দূর থেকে ডিজে মিউজিকের সুর কানে ভেসে আসে,
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ১৮
Brazil,Morocco,landon to ibiza
Straight to la, New York
Begas to Africa,
Dance the night away,
Live your life and stay young on the floor….
Dance the night away,
Grab somebody, Drink a little more…
Lalalaalalala..
