তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১১
নওরিন মুনতাহা হিয়া
_ আদ্রিয়ান জিয়ার কর্মকাণ্ডে ভীষণ বিরক্ত। যদি এখন ঘর ভর্তি লোক না থাকত। তবে জিয়ার এমন অসভ্যতা আর উগ্র ব্যবহারের জন্য। তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিত আর্দ্র। নারীদের থেকে দূরে থাকায়, পছন্দ করে আদ্রিয়ান। তার বন্ধু বা কলিগদের মধ্যে যদি কোন মহিলা থাকে, তবে সে তাকে ইগনোর করে বা তার থেকে দুরত্ব বজায় রাখে। মেডিক্যাল পড়াশোনা করার সময়, তাকে অনেক মেয়ে প্রেমের প্রসস্তাব দিয়েছে, কিন্তু আদ্রিয়ান সব প্রপোজাল রিজেক্ট করে দেয়। যার জন্য তার জীবনে কোন নারীর অস্তিত্ব নাই, আর ভবিষ্যতে ও থাকবে না।
জিয়া আর ফারহানা বেগম কথা বলছেন, তাদের সাথে কারান ও যোগ হয়েছে। জিয়া শক্ত করে হাত ধরে রাখার জন্য, আদ্রিয়ান কোথা ও যেতে পারছে না। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে,আশেপাশে তাকিয়ে থাকে। তখনই তার চোখ যায়, আবিহার পাশে বসে থাকা মেঘের দিকে। মেঘের চোখ – মুখ লাল রক্তের বর্ণ ধারণ করেছে, তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানির বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে। মেঘের অশ্রুসিক্ত চোখে, আদ্রিয়ান আর জিয়ার হাতের বন্ধনের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান যখন মেঘের দিকে তাকায়, তখন মেঘ তার চোখ সরিয়ে নেয়। মেঘ অন্যপাশে ঘুরে যায়, মূল কারণ তার এখন আদ্রিয়ানকে সয্য হচ্ছে না।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আদ্রিয়ান মেঘের অন্য পাশে, ঘুরে যাওয়ার বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নেয়। জিয়া আর ফারহানা বেগম কথায় মাঝে, আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে উঠে __
“- জিয়া তুমি কি আমার হাতটা ছাড়বে? আমি একটু ছাদে যাব, এতো মানুষের মধ্যে ভীষণ বিরক্ত ফিল হচ্ছে আমার __.
আদ্রিয়ান জিয়ার অনুমতির অপেক্ষা করে না, সে তার পুরুষালি শক্তি ব্যবহার করে। এক ঝটকায় তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। মেঘ এখন অন্যপাশে ঘুরে রয়েছে, তার দ্বারা জিয়া আর আদ্রিয়ানকে এতো কাছাকাছি দেখা সম্ভব না। আদ্রিয়ান যখন তার হাত ছাড়িয়ে, জিয়ার থেকে দূরে সরে যেতে চাই। তখন জিয়া বলে উঠে __
“- আদ্রিয়ান তোমার সাথে হাসপাতালের বিষয়ে, কিছু জরুরি কথা আছে আমার। চলো আমি ও যাব ছাদে, এখানে এতো মানুষের ভিড়ে কথা বলা যাবে না.
আদ্রিয়ান বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে, এরপর দাত কটমট করে বলে __
“- হুম চলো __.
জিয়া ফারহানা বেগম আর কারানের থেকে বিদায় নিয়ে, আদ্রিয়ানের সাথে ছাদে যায়। প্রায় পাঁচ মিনিট পর, মেঘ আবার এইদিকে ফিরে তাকায়। আগের স্থানে আদ্রিয়ান, আর জিয়াকে না দেখে আশেপাশে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ মেঘের চোখ যায় সিঁড়ির দিকে, আদ্রিয়ান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে আর জিয়ার তার পিছুপিছু যাচ্ছে। মেঘের মুখে বিরহের হাসি ফুটে উঠে, কি পরিমাণ কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে সে হাসছে তা শুধু মেঘই যানে।
নিজ স্বামীর পাশে অন্য নারীকে সয্য করা, ঠিক কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা হয়ত মেঘ উপলব্ধি করতে পারছে এখন। তবে স্বামী শব্দটা উচ্চারণ করতে গিয়ে, মেঘ আবার হেসে উঠে। সত্যি কি আদ্রিয়ান তার স্বামী ছিল? কখনো কি তাকে ভালোবাসে গ্রহণ করেছিল? বিদেশে আসার পর কি একবার ও মেঘের খুঁজ নিয়েছে সে? তার কাছে শুধু জেদ আর কেরিয়ার ছাড়া অন্য কিছু কখন গুরুত্বপূর্ণ ছিল? মেঘের প্রতি সে কখন কোনো দায়িত্ব কি পাল করছে? শুধু কি কবুল বললে স্বামী হওয়া যায়? স্ত্রী প্রতি কি স্বামীর কোন দায়িত্ব থাকে না? স্ত্রীকে ভালোবাসা, যত্ন করার ও তো স্বামীর কতৃব্য। কিন্তু আদ্রিয়ান তা কখনো পালন করে নি।
সিড়িঁ দিয়ে ছাদে উঠে যায় আদ্রিয়ান আর জিয়া। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ছাদ সহ, সম্পূর্ণ বাড়ি সাজানো হয়েছে। ছাদে লাল, নীল অসংখ্য মরিচা বাতি জ্বলছে। আদ্রিয়ান ছাদে এসে দাঁড়ায়, তার পিছনে আসে জিয়া। আদ্রিয়ান বলে _
“- হাসপাতালের বিষয়ে কি জরুরি কথা বলবে বলো জিয়া?
প্রায় তিরিশ মিনিট হয়ে যায় আদ্রিয়ান আর জিয়া এখনো ছাদে অবস্থান করছে। কারান আর আবিহাকে প্রায় সকলেই, গায়ে হলুদ দিয়েছে। শুধু জিয়া, আর আদ্রিয়ান ছাড়া। অনুষ্ঠানের এক কোণায়, মলিন মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেঘ। সকলে নাচ, গান সহ কতো আনন্দ করছে, কিন্তু মেঘের আনন্দ করছে। কিন্তু মেঘ শান্ত হয়ে, মাটির দিকে মাথা নিচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুইটা ভুল হলো, আদ্রিয়ানকে ভালোবাসা। আর অন্যটা পড়াশোনার জন্য, আমেরিকায় আসা৷
আদ্রিয়ান আর জিয়ানকে এখন ছাদ থেকে, না আসতে দেখে ফারহানা বেগম চিন্তিত হয়ে যান। সকলের গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ, কিন্তু ওরা এখন ও আসছে না। ফারহানা বেগম দেখে, মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওনি মেঘের কাছে যান, ফারহানা বেগম বলে __
“- মেঘ তুমি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
ফারহানা বেগমের কণ্ঠ শুনে, মেঘ নিচ থেকে মাথা উঠায়। এরপর জোর পূর্বক, মুখে হাসি বজায় রেখে বলে __
“- আসলে আন্টি মাথাটা একটু ব্যাথা করছিল, আর এতো মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। যার জন্য দূরে এসে, একটু দাঁড়িয়ে আছি __.
“- ওহ্। আচ্ছা মেঘ শুনো, তুমি একটা উপকার করবে আমার?
“- কি উপকার আন্টি?
“- দেখো না আদ্রিয়ান আর জিয়া, সেই কখন ছাদে গিয়েছে। কিন্তু এখন আসছে না, সবার গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ। শুধু ওরা ছাড়া। তুমি একটু ছাদে গিয়ে, আদিয়ান আর জিয়াকে ডেকে নিয়ে আসবে?
ফারহানা বেগমের মুখে, আদ্রিয়ান আর জিয়ার কথা শুনে মেঘের মন আবার খারাপ হয়ে যায়। মেঘের এখন নিজের উপর, নিজেরই ভীষণ রাগ হচ্ছে। সে কি করে আদ্রিয়ান আর জিয়াকে একসাথে দেখবে? কিন্তু ফারহানা বেগমের মুখের উপর না, কি করে করবে। মেঘ বাধ্য হয়ে বলে __
“- হুম আন্টি যাচ্ছি __.
মেঘ মনে বিরক্তি আর কষ্ট নিয়ে, মুখে হাসি নিয়ে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায়, ছাদের উদ্দেশ্য। ছাদে এখন আদ্রিয়ান আর জিয়া, ছাড়া অন্য কোনো মানুষ নাই৷ মেঘ ছাদে উঠে পড়ে, নিজেকে শক্ত করে৷ যাতে আদ্রিযান আর জিয়াকে একসাথে দেখলে, তার কষ্ট না হয়। মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে যখন, আদ্রিয়ান আর জিয়াকে ডাকতে যাবে। তখনই তার চোখ আটকে যায়, তার কণ্ঠ দিয়ে কোনো প্রকার শব্দ উচ্চারণিত হয় না। মেঘের সারা শরীর অবশ হয়ে যায়, মেঘ সামনে থাকা দৃশ্যটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।
জিয়া আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে, তার সমস্ত মুখে কিস করছে। তার চোখ, নাক, গাল সব জায়গায় জিয়া তার ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে। আর আদ্রিয়ান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কোনো প্রতিবাদ করছে না। মেঘ তার স্বচোখে, জিয়া আর আদ্রিয়ানের এমন ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত দেখছে।
মেঘ দুই পা পিছিয়ে যায়, দাঁড়িয়ে থাকার মত শক্তি তার শরীরে অবশিষ্ট নাই। সামনে থাকা দৃশ্যটা তার, মন, অন্তর সব তছনছ করে ফেলেছে। মেঘ বোভা প্রাণীর মত ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, তার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয়। জিয়া যখন আদ্রিয়ানের সারা _ মুখে চুমো খেলো তখন মেঘের মনে হয়েছিল। তার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে, তার বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১০
জিয়া আদ্রিয়ানের মুখে চুমু খাওয়ার পর, তার ঠোঁটর দিকে অগ্রসর হয়। মেঘ আর সেখারে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না, শরীরে থাকা বিন্দুমাএ শক্তি নিয়ে সে দৌড়ে ছাদ থেকে বের হয়ে গেলো ___.
