Death or Alive part 20
priyanka hawlader
সকালের আলো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে পারস্যের সেই নিঃশব্দ রাজপ্রাসাদে। সূর্যের কিরণ এখানে পূর্ণ শক্তিতে প্রবেশ করতে পারে না—শুধু একটি সোনালি ছায়া বিছিয়ে দেয় অর্ষার কক্ষে, যেন এক কোমল পরশ।
অর্ষা তখনো আধো ঘুমে। তার কেশরাশি এলোমেলো হয়ে বিছানায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার পাতলা কোমল পোশাকের নিচে, বুকের পাশে লুকিয়ে আছে ওয়াজফান। বিশাল শরীর নয়, শুধু মাথাটুকু সে রেখেছে ওখানে, যেন কোনো দস্যি শিশু তার আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে বুকের নিচে।
ঘুম ভেঙে যায় অর্ষার। চোখ মেলে তাকায় ছাদের দিকে, তারপর নিজেকে নাড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই মুখে উঠে আসে কষ্টের ছায়া—
“উঁহ… উঠতে পারছি না। সারারাত ভাব ধরে শুয়ে ছিলেন আমার উপর… আহ! শরীরটা কেমন যেন ব্যথা করছে। সরুন তো! এতো বড় শরীরটা আমার উপর রেখে শুয়ে আছেন—একটু সরে দাঁড়ান।”
কিন্তু ওয়াজফান সরেনি। উল্টো পোশাকের ভিতর থেকে ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“এখন তো শুধু মাথাটাই রেখেছি তোমার উপর, আর তাতেই কষ্ট! যদি পুরো আমিটাই রাখি? তখন কি করবে, হুম? খুব তাড়াতাড়ি আমার পুরো ভার সহ্য করার সময় আসবে… এখনই প্র্যাকটিস করে নাও, লিটল মনস্টার।”
অর্ষার গাল লাল হয়ে ওঠে। সে চুপ করে যায়—কারণ জানে, ওয়াজফান যা বলে তা শুধুই কথা নয়… অদ্ভুত এক পূর্বাভাস।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অর্ষা বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় নিজের শরীরের অস্বস্তি অনুভব করছিল। ওয়াজফানের মাথা এখনো তার বুকের কাছাকাছি, পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে আছে—সেই গম্ভীর কিন্তু শান্ত শ্বাসপ্রশ্বাস যেন ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ছিল।
তবে অর্ষা এবার কৌশলে পরিস্থিতি থেকে বের হতে চাইল। গলাটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“চলুন… আমি একটু ওয়াশরুমে যাব।”
ওয়াজফান চুপ। তার ঠোঁটে হালকা হাসি, কিন্তু চোখে ধরা পড়ে এক ধরণের বশীকরণের ছায়া। সে জানে, অর্ষা কথাটা বলেছে শুধুই রক্ষা পাওয়ার জন্য। একটুও অবাক না হয়ে সে গা ছমছমে কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে উঠল—
“যতই কথা ঘুরাও, মনে রেখো… আমি কিন্তু এক চুল পরিমাণ ছাড়ও দেবো না। তোমাকে নিজেই মানিয়ে নিতে শিখতে হবে, লিটল মনস্টার। আমি জানি, যেদিন আমি তোমায় পুরোপুরি ধরব… সেদিন তুমি কাঁদবে। অনেক কাঁদবে। হয়তো কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞানও হয়ে পড়বে। কিন্তু সেদিন আমি তোমার কান্নায় একটুও থামব না… সেটা জানাই থাক, আমার ছোট্ট মনস্টার।
শেষ কথাটার পর, সে ধীরে ধীরে অর্ষার পোশাকের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে আনে। তার চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ—তীক্ষ্ণ অথচ গভীর এক দৃষ্টিতে।
এই সুযোগেই অর্ষা হঠাৎ ঝাঁপিয়ে উঠে পড়ে। নিজের ওড়না টেনে নেয় বুকে, পা ছোঁ মেরে মেঝেতে নামিয়ে দেয়, আর কোনো রকমে ব্যালান্স রেখে দরজার দিকে ছুটছিল। তার ওড়না একপাশে পড়ে যাচ্ছিল, চুল এলোমেলো, পায়ের শব্দে রাজপ্রাসাদের নীরবতা ভেঙে পড়ছিল তখনই পেছন থেকে ওয়াজফান হঠাৎ গম্ভীর গলায় না, বরং একেবারে অন্যরকম স্বরে বলে উঠল—
“ওই… আমার লাড্ডু! Stop.”
শব্দটা শুনেই অর্ষা যেন থমকে দাঁড়ায়। সে এক মুহূর্ত দ্বিধায় পড়ে যায়—এই মাত্র যিনি ভয়ঙ্কর গলায় শাসাচ্ছিলেন, তিনিই এখন তাকে এমন নামে ডাকছেন?
ধীরে ধীরে সে ঘুরে দাঁড়ায়। এসে দাঁড়ায় খাটের পাশে। গাল লাল হয়ে আছে, চোখ বড় বড়। একহাত কোমরে রেখে বলে উঠল—
“এই যে, আপনি আমাকে কী বললেন?”
ওয়াজফান একটুও ভ্রুক্ষেপ না করে চোখের পলক না ফেলে উত্তর দিল,
“লাড্ডু।”
অর্ষার চোখ ছানাবড়া।
“আমি লাড্ডু! কেন বলেন আমাকে লাড্ডু? আমি কোন দিক দিয়ে লাড্ডু? দেখুন তো ভালো করে! আপনি কখনো আমাকে মনস্টার বলেন, আবার কখনো লাড্ডু! আমি কি মনস্টার? আমি তো একটা মানুষ!”
ওয়াজফান হালকা হাসে। এই সুযোগে অর্ষার হাত ধরে তাকে আবার ধীরে ধীরে বিছানায় টেনে শুইয়ে দেয়। নিজের পাশে, অর্ষা প্রতিবাদ করার আগেই, সে তার আঙুল দিয়ে অর্ষার ঠোঁট ছুঁয়ে যায়… তারপর ধীরে ধীরে সেই আঙুল তার চিবুক, গলার কাছ দিয়ে নেমে আসে বুক বরাবর… চোখে তখন আগুনের ঝিলিক, কিন্তু ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি।
“পুরোটার কথা তো জানি না…”
ওয়াজফান নিচু গলায় বলে,
“…কারণ এখনো আমার পুরোটা খাওয়া হয়নি। তবে যেটুকু খেয়েছি… তা একেবারে লাড্ডু টেস্ট। পুরোটা লাড্ডুই লাগবে আমার ঠোঁটের নিচে… আবার।”
অর্ষা শিউরে ওঠে। চোখে ভয় আর লজ্জা একসাথে খেলা করে। সে জানে, ওর প্রতিটি বাক্যের মানে কী। নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেয়, গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে—
“তাহলে… তখন মনস্টার বলে ডাকেন কেন?”
ওয়াজফান একটুও না থেমে তার চুলের গোড়ায় আঙুল বুলিয়ে মৃদু স্বরে বলে ওঠে—
“কারণ তুমি আমার কিউট লিটল ফেয়ারি টেল।
মানুষদের আমি আগে মনস্টার বলে ডাকতাম… কারণ তারা আমার ধৈর্য, আমার সহ্য সীমা সবকিছু ভেঙে দিয়েছিল।
কিন্তু তুমি…
তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম, তুমি ছিলে এক অপার শান্তি। তুমি ছিলে এক নিঃশব্দ জাদু।
তোমাকে দেখে আমার ভিতরের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অংশটা কাঁপে—তোমাকে হারানোর ভয়ে।
তোমার মুখ দেখেই তখনই আমার মুখ থেকে প্রথম শব্দ বের হয়েছিল—‘লি… মনস্টার’।
তোমার জন্যই মনস্টার নামটা এখন এত সুন্দর। ”
অর্ষা চুপ করে যায়। চোখ দুটো মেঝের দিকে। ওয়াজফানের স্পর্শ, তার গলা, তার স্বীকারোক্তি… সবকিছু মিলিয়ে তার হৃদয় দুলে ওঠে।
বাইরে হালকা হাওয়া বইছে, যেন এই নরম কথোপকথনের সাক্ষী হতে চায় পারস্য প্রাসাদের দেয়ালরাও।
কথার পর আর কোনো শব্দ ছিল না। শুধু নিঃশ্বাসের শব্দে কক্ষটা পূর্ণ হয়ে উঠছিল ধীরে ধীরে।
ওয়াজফান আর অর্ষা—দুজনেই চুপচাপ তাকিয়ে থাকে একে অপরের চোখে। সেই দৃষ্টির গভীরে লুকানো ছিল জ্বলে ওঠা আগুন, অভিমান, আকর্ষণ, আর এক অদ্ভুত মায়া।
ধীরে ধীরে ওয়াজফান এগিয়ে আসে। তার আঙুল ছুঁয়ে যায় অর্ষার কপাল—আর সেখানে নরম, শান্ত এক চুমু রাখে। তারপর দুই চোখে, একে একে গালে, নাকে… স্পর্শগুলো এতই কোমল, যেন শীতের সকালে রোদের পরশ।
তবে তার ঠোঁট যখন ধীরে ধীরে অর্ষার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে, তখনই অর্ষা হঠাৎ নিজের হাত ঠোঁটে চেপে বলে ওঠে—
“ছিঃ! আপনি ব্রাশ করেননি। এখন ঠোঁটে চুমু খাবেন না! সরুন তো এখান থেকে!”
ওয়াজফান থেমে যায় না। হালকা ভ্রু কুঁচকে বলে—
“চুমু খেতে কি ব্রাশ করতে হবে? এই অদ্ভুত ভাবনা বাদ দাও, লিটল মনস্টার। হাত সরাও, আমি এখনই খাব!”
“না! আমি চাচ্ছি না!” অর্ষা গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।
কিন্তু ওয়াজফান তার না মানে না। সে ধীরে ধীরে অর্ষার হাত সরিয়ে নেয়।
তারপর দৃঢ়ভাবে ঠোঁট চেপে ধরে অর্ষার ঠোঁটে। সেই চুমু ছিল না শুধু একরাশ ভালোবাসা—ছিল মালিকানা, উন্মাদনা, দাবির ঘোষণা।
চুমুটা দীর্ঘ… গা ছমছম করা এক সময়ের জন্য যেন সারা পৃথিবী থেমে যায়।
অর্ষা নিঃশ্বাস হারিয়ে ফেলে, চোখ বন্ধ হয়ে যায় নিজের অজান্তেই।
অনেকক্ষণ পর ওয়াজফান ধীরে ধীরে ঠোঁট সরিয়ে নেয়। তারপর তার গলা যেন আরও গম্ভীর হয়ে ওঠে,
“রোমান্স করার সময়… বমাকে আর কখনো আটকাবে না। এবার থেকে নয়…”
সে এগিয়ে আসে আরও কাছে। কানে মুখ নিয়ে যায়—
“…কারণ তুমিও এখন জানো, আমি ছাড়া তুমি আর পালাতে পারবে না।”
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ওয়াজফান তার কানে ছোট্ট একটা কামড় দেয়, একেবারে হালকা।
কিন্তু সেই মুহূর্তে অর্ষা কেঁপে ওঠে। তার শরীর যেন সাড়া দিয়ে ওঠে আকস্মিকভাবে।
সে ওয়াজফানের জামার কলার খামচে ধরে ফেলে—অনিচ্ছা আর অজানা উত্তেজনার মাঝামাঝি এক অনুভব নিয়ে।
ওয়াজফান সেই অবস্থাতেই তার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
“তোমার শরীর কিন্তু সত্যি কথা বলে দেয়, লিটল মনস্টার….
এরপর ওয়াজফান কানের পাশে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“তুমি জানো, তুমি কতটা লিটল? সবকিছুই এত ছোট… এত কোমল… মনে হয় যেন একটা কাচের পুতুল।”
তার কণ্ঠ নরম, কিন্তু তাতে এমন এক রোদের ঝিলিক, যা গায়ে লাগলে জ্বলে ওঠে শরীরের ভেতরের সব স্নায়ু।
“তুমি কিভাবে… আমার সবটা সহ্য করবে, বলো তো? কিভাবে আমাকে নিজের মধ্যে নেবে, বেবি?”
অর্ষার নিঃশ্বাস যেন আটকে যায়। শরীরটা শক্ত হয়ে আসে, আর মুখটা গরম হয়ে ওঠে অনিচ্ছাকৃত লজ্জায়।
সে চোখ বন্ধ করে ফেলে, কিছু বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে এক মুহূর্তে।
ওয়াজফান তখনো তার মুখের খুব কাছে। তার ঠোঁট অর্ষার গালের কিনারায় স্পর্শ করে,
“কিন্তু তুমি পারবে… কারণ তুমি আমার। একেবারে… আমার তৈরি করা হবে তোমার ভিতরটা, আমার মতো করে।
ওয়াজফানের কথাগুলো অর্ষার কানে ঢোকে ধীরে ধীরে, যেন বিষাক্ত এক কুয়াশা তার চারপাশে ঘিরে ধরে।
“তুমি এত লিটল বেবি… তোমার সবকিছুই তো খুব ছোট… আমাকে কিভাবে নেবে নিজের ভিতরে, বেবি?”
এই বাক্যগুলো তার শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেয়। অর্ষা যেন শ্বাস নিতে ভুলে যায়। বুকটা ধকধক করতে থাকে, মুখটা তপ্ত হয়ে ওঠে। এমন কথা সে কখনো শুনেছে, কিন্তু তার উদ্দেশে—এইভাবে, এমন গম্ভীর অথচ গলিত কণ্ঠে—না, কখনো না।
তার মুখটা সেদিকে না তাকিয়েই নিচু হয়ে আসে। চোখ দুটো অস্থির, ভ্রু কেঁপে ওঠে। শরীরটা টেনে ছোট করতে করতে সে যেন নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে চায়।
সেই লজ্জা সহ্য হয় না আর।
সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে ওয়াজফানের দিকে—কিন্তু মুখ তুলে নয়, একেবারে নিচু হয়ে তার বুকের পাশে মুখ গুঁজে দেয়।
ওয়াজফানের জামা শক্ত করে মুঠো করে ধরে। এক হাতে বুকের কাপড়টা এমন করে চেপে ধরে যেন সেই কাপড়ই হবে তার লজ্জা ঢাকার একমাত্র পর্দা। চোখ বন্ধ করে মুখটা গুঁজে দেয় সেই উষ্ণতা ভরা বুকে। যেন নিজেকে আড়াল করতে চাইছে, অথচ কোথাও না কোথাও সে আশ্রয়ও খুঁজে নিচ্ছে।
তার কান দুটো তখন এত লাল হয়ে উঠেছে, যেন সেখানে আগুন জ্বলছে। ভেতরটা গলতে শুরু করেছে, শরীরের প্রতিটি ছন্দ যেন ওয়াজফানের নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে যেতে চাইছে।
তার হৃদয়ের ধুকপুকানির শব্দ স্পষ্ট হয়ে বাজছে মাথার ভেতরে।
ওয়াজফান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর ঠোঁটে এক রকম বিজয়ী কোমলতা নিয়ে ফিসফিস করে বলে—
“কি হয়েছে? আমার লাড্ডু লজ্জা পেয়েছে? হ্যাঁ? আমার লজ্জাবতী লতাপাতা…”
অর্ষা কিছু বলে না। শুধু বুকের ভেতর আরও গুটিয়ে আসে। নিজেকে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে ফেলতে চায় তার মধ্যে। যেন বলতে চায়—এই বুকেই হারিয়ে যেতে চাই আমি… এই বুকেই যেন সব কিছু শেষ হয়।
তার চোখ থেকে জল পড়ে না, কিন্তু চোখের ভেতরটা এক রকম ভারি হয়ে আছে—ভয়ের জন্য না, ভালোবাসার জন্যও না—এ এক অজানা শান্তি, অজানা আত্মসমর্পণ।
ওয়াজফান এবার আর কিছু বলে না। সে দুই হাত বাড়িয়ে অর্ষাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে।
তাকে টেনে আনে নিজের বুকের ঠিক মাঝখানে। তার গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে, চুপচাপ।
এই মুহূর্তটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত মুহূর্ত।
শব্দহীন এক গভীরতা। শুধু দুইজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ।
ওয়াজফানের চোখ অর্ধনিমীলিত। সে একটানা চেয়ে থাকে চুলের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা অর্ষার কপালের দিকে। চুমু খেতে ইচ্ছে করে আবার, কিন্তু এবার সে আর কিছু করে না।
কারণ এই এক মুহূর্তেই সে পেয়েছে—যা চেয়েছিল অনেকদিন ধরে।
অর্ষা এবার ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ভাবে—
“এই লোকটা… যতই পাগল হোক, যতই অদ্ভুত কথা বলুক… এর বুকেই আমার সবচেয়ে বেশি শান্তি। এর ঘ্রাণ, এর ত্বক… এত কাছ থেকে কখনো নিইনি… কিন্তু আজ যেন এর ভেতরে ঢুকে পড়েছি।
এমন এক ঘ্রাণ… যা আমার স্নায়ু পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এটা শুধু ঘ্রাণ না, এটা একধরনের নেশা…
আমিও বুঝি আসক্ত হয়ে পড়ছি।”
সে আর কিছু ভাবে না। শুধু অনুভব করে—এই বুকের নিচেই যদি জীবনটা থেমে যায়, তাহলেও হয়তো আপত্তি থাকবে না তার।
আজ বহু দিন পর পারস্য রাজ্যের রাজপ্রাসাদ যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল।
রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে প্রাচীন বনভূমির ওপারে ইসাবেলার নানি বাসা। সেখানে কাটানো অনেকটা সময় পেরিয়ে সে অবশেষে আজ নিজের রাজ্যে ফিরে এসেছে। সোনালি চুলে হালকা ধুলো জমে থাকলেও মুখভরা এক ক্লান্ত মিষ্টি হাসি, আর চোখ দুটোয় যেন জমে আছে হাজারটা গল্প।
রাজপ্রাসাদে পা রেখেই প্রথম কাজ—ফ্রেশ হয়ে নিজের কক্ষে কিছুটা বিশ্রাম নেওয়া। কিন্তু মন যেন টিকছিল না। অবচেতনে কেউ একজনকে খুঁজছে সে…
অবশেষে, বিশ্রাম সেরে ধীরে ধীরে পা রাখে পরিচিত করিডোরে। সেই করিডোর, যে পথ ধরে হেঁটে গিয়ে বারবার দেখা হয়েছে অর্ষার সাথে।
হালকা কড়া নাড়ার পর দরজা খুলে যায়, আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চেহারাটা দেখেই অর্ষা যেন আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়ে—
অর্ষা:
“ইসাবেলা!”
একটুও দেরি না করে জড়িয়ে ধরে তাকে।
দুজনের সেই আলিঙ্গনে জমে থাকা দূরত্ব মুহূর্তেই গলে যায়।
একসময় অর্ষা হাত ধরে তাকে নিয়ে বসায়, নরম মাদুরে, জানালার পাশে।
অর্ষা হাসিমুখে,
এতোদিন পরে কোথা থেকে ফিরলে, পাগলী? কোথায় ছিলে এতদিন তুমি?
ইসাবেলা: আমি… আমি নানু বাসায় ছিলাম এতদিন।
অর্ষা: তা ওখানে তোমার দিন কেমন কাটলো? নিশ্চয়ই অনেক মজা করেছো!
ইসাবেলা : হুম… একটু একটু মজা হয়েছে। কিন্তু… জানো, দিনগুলো খুব একটা ভালো কাটেনি।
তোমাকে ছাড়া একদম ভালো লাগছিল না।
দিন দিন তোমার এমন অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে… যেন তুমি ছাড়া দিনটাই অসম্পূর্ণ লাগে।
ইসাবেলার চোখে তখন এক অদ্ভুত শূন্যতা, মায়া আর সত্যি ভরা।
অর্ষা সেই কথা শুনে মৃদু হেসে দেয়, তার স্নিগ্ধ কণ্ঠে যেন আকাশ ভরে ওঠে শান্তিতে।
অর্ষা: ও তাই নাকি! আমিও তো আমার পুকি বান্ধবীকে অনেক মিস করেছি।
তুমি ছিলে না, মনে হচ্ছিলো পুরো প্রাসাদটাই শুন্য শুন্য লাগছে।
ইসাবেলা : শুনেছি তুমি নাকি কোথাও চলে গিয়েছিলে?
এই পারস্য রাজ্য থেকে তো ‘দা ভাই’ হুকুম ছাড়া কেউ পালাতে পারে না…
তুমি তাহলে কীভাবে পালালে?”
অর্ষা চুপ করে থাকে এক মুহূর্ত। চোখের পাতা একটু দপদপ করে ওঠে। তারপর ঠোঁটের কোণে এক মৃদু হাসি—
অর্ষা : হুমম… এতদিনে অনেক কিছু হয়ে গেছে।
তা তোমাকে আস্তে আস্তে সব খুলে বলবো… সবটা একসাথে বললে তুমি হজম করতে পারবে না।
ইসাবেলা : ঠিক আছে, তা বলো!
আমি অপেক্ষা করছি, একদম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুনতে হবে…
পুরো কাহিনী না শুনে আমি কিন্তু তোমায় ছারছি না।
দুজনের হাসি মিশে যায় বাতাসে। জানালার বাইরে দূপুরের আলো নরম হয়ে আসছে। ঠাণ্ডা হাওয়ায় তাদের হাসির শব্দ মিশে এক দৃষ্টিনন্দন বন্ধুত্বের ছায়া তৈরি করে।
বিকেলে,
অর্ষা ওয়াজফানের রুম থেকে বের হয়ে করিডর পেরিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছিলো। করিডর পেরোতেই তার পা থমকে যায়। কানে ভেসে আসে কিছু ফিসফিস কন্ঠ। কিছু অশ্লীল কথা। অর্ষা পাশে তাকাতেই দেখতে পায় কিছু দাসী তাকে নিয়ে কানাঘষা করছে।
তারা বলছে,,
এই মেয়েকে তো দেখি দিনরাত ২৪ ঘন্টায় প্রায় সময় এখন বাদশাহ রুমে কাটাতে। মতলব কি তার বাদশাহ ফাঁসিয়ে এ রাজ্য দখল করা নাকি। একে তো শুরু থেকেই দেখে মনে হয়েছিল এ চরিত্রহীন মেয়ে। না হয় দাসী হয়েও কি কেউ রাতে বেলা নিজের মনিবের সাথে রাত কাটায় নাকি।
কিছুটা তাচ্ছিল্য কন্ঠে পাশ থেকে ভেসে আসে একজন দাসীর কন্ঠ,
আরে এসব মানুষের বাচ্চা এরা জন্ম নেয় তো শুধু টাকা কামানোর জন্য টাকা ছাড়া তো আর কিছু বুঝেই না। সামান্য টাকার জন্য এরা নিজের দেহ টাকেও বিলিয়ে দেয়।
তখন তার কথায় সমর্থন জানিয়ে আরেকজন দাসী বলে ওঠে,
হ্যাঁ জানিস ঐদিন আমি ওই নষ্ট মেয়ের রুমের সামনে দিয়ে আসতে গিয়ে দেখি সে বাদশার বুকে শুয়েছিল। না জানি রাতের আঁধারে আরো কত কি করেছে। নষ্ট চরিত্রের মেয়ে বাদশার ফিয়ান্সে আছে সেটা জেনেও এই মেয়ে টাকার লোভে বাদশাহ পিছু ছাড়ে না। কি লোভী মেয়ে রে বাবা!
অর্ষা এতক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল কিন্তু এখন আর সে থাকতে পারেনা। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এগিয়ে আসে দাসীদের দিকে, রুক্ষ সুরে অর্ষা জিজ্ঞেস করে,
কাকে নিয়ে এসব আজেবাজে কথা বলছেন শুনি।
তখন একজন দাসী তাচ্ছিল্য হাসির সাথে বলে ওঠে,
দেখো যাকে নিয়ে কথা বলছিলাম আর সেই এসে হাজির। তা মহারানী এখানে আপনাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। যদিও আপনি বাদশা সাথে কয়েক রাত থেকে নিজেকে মহারানী মনে করতে পারেন। কিন্তু এই কথাটা মাথায় রেখে নাও এ রাজ্যের মহারানী প্রিন্সেস এলিনা। তুই তো শুধু তুচ্ছ নষ্টা চরিত্রের দাসী মাত্র।
অর্ষা এবার রেগে রুক্ষ সুরে বলে ওঠে,
mind your language….
কারো সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে এরকম উল্টাপাল্টা মন্তব্য করাটা ঠিক না আর তাছাড়া আপনারা তো এ প্রাসাদে এসেছেন এই নতুন এই কয়দিন যাবদ। আগের দাসীরা অনেকেই মারা যাওয়ার জন্য আপনাদের কিছুদিন যাবদ এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আপনারা আমার সম্পর্কে এতটা জেনে গেলেন। কয়েকটা দিন পেরোতে দিতেন তারপর নিজে থেকেই বুঝে যেতেন আমি কি রকম। আর তারপর না হয় আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে। আসলে মানুষের ব্যবহারেই তাদের বংশের পরিচয় পাওয়া যায়। আর আপনাদের ব্যবহারে বোঝাই যাচ্ছে যে আপনারা আমাকে নষ্ট মেয়ে বলছেন কিন্তু আপনারা যে নিজেরাও নষ্ট চরিত্রের নষ্ট মন মানসিকতার। আগে নিজেদের মন মানসিকতাকে বদলান তারপরে এসেন মানুষের সম্পর্কে সমালোচনা করতে।
অর্ষা কথা শুনে একজন দাসী তাচ্ছিল্য হাসির সাথে বলে ওঠে,
দেখো দেখো কে আমাদের নষ্ট চরিত্রের বলছে আসলে সে নিজেই হচ্ছে একটা লম্পট নষ্টা চরিত্রের মেয়ে যে শুধু টাকা ছাড়া আর কিছু বুঝে না টাকার জন্য দিনরাত যেকোনো সময় বাদশার কাছে দেহ বিক্রি করতে পারে।
সে নিজেই এসব নষ্টা কাজকর্ম করে বেড়াবে আর আমরা সেটা বললেই শুধু দোষ। চোরের মার বড় গলা। দিনরাত নিজে দেহ ব্যবসা করে বেড়াবে আর মানুষ তার সম্পর্কে কিছু বললেই তখন তাদের দিকে তেরিয়ে আসবে। এর মত এরকম নষ্টা চরিত্রের মেয়ে আমি আর একটাও দেখিনি। আরে বাবা নিজের দেহ ব্যবসা করবি তো কর কিন্তু অন্যের ফিয়ান্সে আছে জেনেও শুধু শুধু নিজের নষ্টামি ছড়িয়ে তাদের সম্পর্কটা কেন নষ্ট করতে হবে তোর। যদি এতই নষ্টামি করে টাকা কামানোর শখ থাকে তাহলে যা না মেয়ে বাজারে ওখানে নিজের দেহ বেচে ভালো টাকা পাবি।
অর্ষার চোখ দু’টো জলে ভরে গেছে। সে আর কিছু বলতে পারে না। বুকের গভীর থেকে উঠে আসা কষ্ট যেন গলার ভেতরটাকে চেপে ধরে আছে।
দাসী, ( মৃদু হেসে)
বাদশাহর রক্ষিতা!
অর্ষা এবার একপা এগিয়ে যায়, থেমে যায় আর এক মুহূর্তও সহ্য করতে না পেরে হঠাৎই দাসীর দিকে এগিয়ে যায়। তার ক্ষীণ, কাঁপা হাতটা শূন্যে উঠে এসে একটা চড় বসে যায় দাসীর গালে।
ঘরটা যেন মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়।
চড়টা খুব শক্ত ছিল না, তবে অর্ষার মতো মেয়ের কাছ থেকে এমন আচরণ যেন বজ্রপাতের মতো আঘাত হানে উপস্থিত সবার মনে। মুহূর্তের মধ্যেই দাসীর চোখের মণি আগুনে লাল হয়ে ওঠে। সে আর এক সেকেন্ড দেরি না করে রাগে ফুঁসে উঠে অর্ষার গালে ঝাঁপটে বসায় এক বিশ্রী চড়—এই চড় আর দশটা চড়ের মতো ছিল না।
অর্ষার ছোট্ট মুখটা ঘুরে যায়, শরীরটা ভারসাম্য হারিয়ে পেছনে ছিটকে পড়ে যায় মেঝেতে। তার মাথার চুলগুলো ছড়িয়ে যায় চারপাশে, মাথাটা নিচু হয়ে যায়।
( অর্ষা যতই স্ট্রং হোক না কেন সে একটা মানুষ আর দাসী একটা জিন তাই তার শক্তি অর্ষার থেকে অনেকগুন বেশি)
ঘরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
অর্ষা মেঝেতে পড়ে থেকেও আর কোনো শব্দ করে না। সে শুধু স্থির, নীরবভাবে তাকিয়ে থাকে নিচে—ছাদের কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুর দিকে। চোখে তখনও জমে আছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ জলকণা। যেন কোনো দাগ না রেখে ঝরে পড়া অশ্রু।
চারপাশে লোকজন থাকলেও যেন কেউ নেই। কেউ তার পাশে এসে হাত বাড়ায় না। কেউ বলে না, “তুমি ঠিক আছো তো?”
সে মাটিতে বসে থাকে নিঃশব্দে।
সে চুপ করে মেঝেতে বসে থাকে। তার চোখের কোণ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে এক ফোঁটা অশ্রু।
একটা অশ্রু, যা হয়তো একদিন সমুদ্র হবে।
একটা নীরবতা, যা হয়তো একদিন বিদ্রোহ হয়ে উঠবে।
ঘরে স্তব্ধতা।
হাওয়া থেমে গেছে।
সবচেয়ে তীক্ষ্ণ শব্দ—অর্ষার নিঃশব্দ কান্না।
মুহূর্তেই অর্ষার মুখে ছিটকে আসে রক্তের একফোঁটা। গাল বেয়ে সেই রক্ত মেঝেতে পড়তেই যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। তারপর… ছলছল রক্তের ধারায় মেঝে ভরে যায়। আশেপাশের দাসীরা হতবাক। নিঃশব্দ হয়ে যায় ঘর।
অর্ষা ধীরে ধীরে নিচু হয়ে থাকা মাথাটা তুলে। চোখের কোণে তখনও কষ্ট আর লাঞ্ছনার ছায়া।
তখনই তার চোখ স্থির হয়ে যায় এক জায়গায়।
সামনে… মাটিতে পড়ে আছে এক দেহ। রক্তমাখা। সেই দেহে মাথা নেই। মাথাটা কিছু দূরে গড়িয়ে পড়ে আছে, খোলা চোখে যেন হতভম্বভাবে তাকিয়ে আছে শূন্যের দিকে।
সে ছিল সেই দাসী—যে এক মুহূর্ত আগেও অর্ষার গালে চড় মেরেছিল।
চারপাশে হিম নীরবতা। কেবল রক্ত ঝরার শব্দ।
অর্ষার চোখ এবার সরে যায় সেই দৃশ্য থেকে আর থেমে যায় এক পরিচিত মুখের উপর।
ওয়াজফান।
তার হাতে রক্তমাখা তলোয়ার। মুখে রক্ত ছিটকে লেগেছে। চোখ জ্বলছে আগুনের মতো সোনালী রঙে। চেহারা রুক্ষ, কঠোর, তীব্র রাগে গজগজ করছে পুরো শরীর। কিন্তু সেই রাগের মাঝেও, তার চোখ যখন অর্ষার চোখে পড়ে—তখন মুহূর্তের জন্য সে শান্ত হয়ে যায়।
ওয়াজফান ধীরে তলোয়ারটা মাটিতে ফেলে দেয়। ধাতব আওয়াজে কেঁপে ওঠে রাজপ্রাসাদের পাথরের মেঝে।
তারপর কোনো কিছু না বলেই দৌড়ে আসে অর্ষার কাছে। মেঝেতে বসে থাকা অর্ষাকে দু’হাত দিয়ে ধীরে কোলে তুলে নেয়।
তারপর ওয়াজফান এক হাত দিয়ে অর্ষার চোখের পানি মুছে দেয়। অন্য হাত দিয়ে তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে। ও জিজ্ঞেস করে,
You are okay, my baby?
কোথাও ব্যথা পাওনি তো?
অর্ষা কাঁপা চোখে তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ে—না।
তারপর অর্ষার কপালে এক নিঃশব্দ চুমু দেয়। যেন সব ব্যথা মুছে ফেলতে চায়।
হঠাৎই সে ঘুরে দাঁড়ায়।
তার চোখে আগুন। তার কণ্ঠে গর্জন।
How dare you?
ওয়াজফানের হুংকারে পুরো রাজপ্রাসাদ স্তব্ধ হয়ে যায়। যেন মেঘ ডেকে ওঠে আকাশে। বাতাস বন্ধ হয়ে যায়।
চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সকল দাসী, রক্ষী, এমনকি প্রাসাদের কর্তাব্যক্তিরাও থমকে দাঁড়ায়। কেউ নড়ে না। কেউ কথা বলে না। সবার চোখ তখন একটাই দৃশ্যের দিকে—ওয়াজফান ও অর্ষা।
সবাই জানে—আজ রাজপ্রাসাদে শুধু রক্ত ঝরেনি, ন্যায় ও অন্যায়ের সীমারেখা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
ওয়াজফান একদৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিল।
তার চোখে ছিল আগুনের ঝিলিক। থেমে থাকা নিঃশ্বাস আর গর্জে ওঠার আগের মুহূর্তের নীরবতা যেন চারপাশকে জমিয়ে রেখেছিল।
হঠাৎ… ওয়াজফান আবারো হুংকার দিয়ে গর্জে ওঠে:
— “সাহস কোথা থেকে এলো তোমাদের? সাহস কীভাবে হলো আমার লিটল মনস্টার সম্পর্কে এই আজেবাজে, নোংরা কথা বলার?!”
তার কণ্ঠে বজ্রধ্বনির মতো রাগের স্রোত। চারদিক কেঁপে ওঠে।
— “তোমরা কি জানো, তোমাদের অবস্থান কোথায়? তোমরা তো ওর পায়ের নখের যোগ্য নও! তোমাদের মতো সামান্য, তুচ্ছ, অজ্ঞ, অপদার্থ দাসীদের মুখে আমি আমার অর্ষার নাম শুনতে চাই না—একটাও না!”
এক পা সামনে এগিয়ে, বজ্রনয়নের দৃষ্টিতে সকল দাসীদের দিকে তাকিয়ে ওয়াজফান বলে ওঠে:
— “ভালোকরে শুনে রাখো—অর্ষা এখন থেকে এই রাজ্যের মহারানী। আমি তাঁকে আমাদের রাজকীয় রীতি অনুযায়ী, সকল প্রথা মেনে, বিয়ে করেছি। ও আমার স্ত্রী, আমার রাজরানী। তাই ওর সম্পর্কে কোনো কথা বলার আগে হাজারবার ভাববে।
ঘরে তখন ঠাণ্ডা বাতাসও নড়ছে না। সব দাসী চুপ—ভয়ে গুঁড়িয়ে থাকা ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে।
ওয়াজফান একদম দাঁতের ফাঁক গলে রুক্ষ গলায় আবার বলে ওঠে,
— “তোমাদের মতো নোংরা মুখগুলোকে শাস্তি দেওয়া হবে, এমন শাস্তি যাতে পরবর্তীতে কেউ সাহস না পায় আমার রানীর নামে মুখ খোলার।
তারপর উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে,
— “আয়রাক!
তার ডাকে এক নিমেষে ছুটে আসে রাজপ্রাসাদের প্রধান রক্ষী, আয়রাক। তার পোশাকের ঝংকার, তলোয়ারের গাঢ় ছায়া, সমস্ত পরিবেশে তীব্রতা এনে দেয়।
ওয়াজফান এবার ঠাণ্ডা অথচ কাঁপন ধরানো কণ্ঠে আদেশ দেয়,
— “এই দাসীগুলোর জিহ্বা কেটে ফেলা হোক। এদের মুখ থেকেই আমার লিটল মনস্টার সম্পর্কে আজ এই ঘৃণ্য শব্দগুলো উচ্চারিত হয়েছে। এবার যেন কেউ আর কখনো এমন সাহস না দেখায়।”
দাসীরা শিউরে ওঠে। কেউ জ্ঞান হারাতে বসে। কেউ পায়ের ওপর কাঁপতে থাকে।
আর ঠিক তখনই, ওয়াজফান ঘুরে দাঁড়ায়, কোলে থাকা অর্ষার দিকে একবার গভীরভাবে তাকায়, যেন তার চোখের ভাষা বলে, “তোমার অপমান আমার অস্তিত্বে আগুন লাগায়।
Death or Alive part 19 (2)
তারপর কোলের মধ্যে অর্ষাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে রওনা হয় নিজের রুমের দিকে।
তার পেছনে পড়ে থাকে রক্তাক্ত মেঝে, স্তব্ধ দাসীরা, আর প্রাসাদের ভিতরে ছড়িয়ে পড়া এক শীতল আতঙ্ক।
