মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৬
ইশরাত জাহান

ঘরে এসে উকি দিয়ে রাজ বলে ওঠে,”লেটস গো ফর বাসর মায়াবতী।”
বলেই দরজাটা লাগিয়ে যেই পিছনে ঘুরতে যাবে ওমনি তার গলায় ছুরি নিয়ে দাড়ায় মায়া।রাজ দাড়িয়ে যায় রোবটের মত।মায়া রাগী কণ্ঠে বলে,”বাসর করতে চান আমার সাথে তাই না?আজ এই বাসর হবে আপনার কবরস্থানে।”
“আগে বলবে তো।তাহলে কবরস্থানে ফুলগুলো নিয়ে বাসরঘর সাজাতাম।এর জন্য বরকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে হয় নাকি?”

“আপনার বাসর আমি করাচ্ছি মন্ত্রী মশাই।”
মায়া যেই ছুরিটা চালানো শুরু করবে ওমনি মায়ার হাতে কামড় দিলো রাজ।ব্যাথা পেয়ে হাত সরিয়ে নেয় মায়া।হাত থেকে ছুরিটি ছো মেরে কেড়ে নেয় রাজ।রাজের ঠোঁটে মায়ার হাতের ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।যেটা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে নেয় রাজ।এমন ভঙ্গিতে রক্ত মুছে যেনো ওটা ফলের জুস আর রাজের কাছে খুবই স্বাদের।মায়া চেয়ে চেয়ে দেখছে রাজের এই তামাশা।নাক মুখ ফুলিয়ে মায়া কোমড় থেকে গুলি বের করতে নিবে ওমনি রাজ এসে মায়ার দুই হাত নিজের হাতের সাথে নিয়ে উচু করে দেয়ালের সাথে আটকে নেয়।মায়ার চোখ মুখে হিংস্রতা দেখা যায়।যেটা দেখে রাজ বলে,”তোমার এই হিংস্রতার কারণে তোমার যে নিশ্বাস অতিবাতিহ হয় এটা দেখলে আমার নেশা জাগে মায়াবতী।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া মিনিট দুই চুপ করে রাজের প্রেমাত্মক চোখের দিকে চেয়ে থাকে।রাজের কথার মানেটা যখনই তার মস্তিষ্কে পৌঁছায় তখনই চোখটা বড় করে তাকালো।রাজ এটা দেখে ঠোঁটটা প্রসারিত করে মায়ার গোলাপী ওষ্ঠে নিজের কালো ওষ্ঠ মিলিয়ে দিলো।মায়া চাইলেও পারছে না রাজকে থামাতে।তার দুইহাত যে রাজের এক হাতের মাঝে আবদ্ধ। দশ মিনিট ধরে এভাবে ওষ্ঠের কার্য চালানোর পর রাজ অনুভব করলো মায়ার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।মায়ার ওষ্ঠ ছেড়ে দিতেই রাজ বুঝতে পারে মায়া রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে হাইপার হয়েগেছে।নিজের জেদে এখন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে মায়া।এসি চলা সত্ত্বেও মায়ার এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় রাজ।মায়ার হাতটা ছেড়ে আলতো করে ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়।বীরকে কল করে।বীর ফোন রিসিভ করতেই রাজ বলে,”এসি চলা সত্ত্বেও মায়াবতী অতিরিক্ত ঘামছে আর হাপিয়ে উঠছে।এভাবে হাঁপাচ্ছে কেন?ওর তো অবস্থা খুবই খারাপ।”

“ওর ট্রমা এখনও মস্তিষ্কে চেপে আছে।কেন জানিনা ছোট থেকেই তোকে সহ্য করতে পারেনা।ছোট বেলায় তোর নাম নিলেই ও চারপাশ ভাংচুর শুরু করে যার তার গায়ে না দেখেই হাত তুলতো।ওকে এসাইলাম থেকে আনার আগে ডাক্তার বলেছিলো অতিরিক্ত হাইপার হয়ে গেলে ওকে কোনো কিছুতে জোর না করতে।আর ঘামছে যেহেতু তাহলে ওকে শাওয়ার নিতে বল।আমার এখানে থাকতে মৌ ওকে ওয়াশরুমে নিয়ে মাথায় পানি দিয়ে দিতো।তুইও পারলে তাই কর।”
রাজ কল কেটে দিলো।মায়াকে কোলে করে দাড়ায়।মায়া ছড়ানোর চেষ্টা করে বলে,”এখন আবার কি?”
“ওয়াশরুমে চলো।”
“কেন?”
“বাথরুম বিলাস।”
“কিঃ?”
“বাসরে আজ বাথরুম বিলাস হবে।”

মায়াকে ওয়াশরুমে এনে বাথটাবে ছেড়ে দেয়।রাজ ওর পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খুলে মায়ার পাশে বসে।পাশে থাকা হ্যান্ড শাওয়ার নিয়ে মায়ার মাথায় পানি ঢালতে থাকে।মাথার মাঝ বরাবর পানি পড়ার সময় চোখটা বন্ধ রাখে মায়া।এতে করে একটু শান্তি মেলে মনে।মস্তিষ্ক ঠান্ডা তো সকল কিছু ঠান্ডা।মায়ার মাথার পানি সব গড়িয়ে ঠোঁট থেকে গলার দিক থেকে চলে যাচ্ছে।যেটা লোভাতুর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে রাজ।নিজেকে সংযত রাখতে চেষ্টা চালাচ্ছে এখন।মায়াবতীকে কষ্ট দিবে না সে।কিন্তু যখনই তার চোখটা চলে গেলো মায়ার হাঁটুর দিকে।দেখতে পেলো লেহেঙ্গার নিচের অংশ উঠে হাঁটু বের হয়ে আছে।লেহেঙ্গার নিচের অংশ পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে মাত্র।যেটা দেখা মাত্র ঢোক গিলতে থাকে রাজ।রাজের গলার মাঝে বরাবর অংশটা ফুলে উঠেছে ঢোক গেলার সময়।নিয়ন্ত্রণ হারানোর অবস্থা তার।মায়া ধীরে ধীরে চোখ খোলে।রাজ দুষ্টু হাসি মুখের কোনায় ফুটিয়ে বলে,”আমরা তো স্বামী স্ত্রী মায়াবতী।”

“তো?”
“একটা বৈধ চুমু দেওয়া তো খারাপ কিছু না।”
মায়া তাকালো রাজের দিকে।রাগটা অনেক সংযত হয়েছে মায়ার।তাই স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে আছে রাজের দিকে।কোনো না কোনো দিক থেকে মায়া নিজেও রাজের প্রতি দূর্বল।যেটা মায়া দেখাতে চায় না।মায়ার কোনো উত্তর বা বাধা না পেয়ে রাজ ভেবে নিলো মায়া রাজি তার প্রস্তাবে।মায়ার গলার পিছনে হাত রেখে সামনের দিকে গলার উন্মুক্ত স্থানে মুখ ডুবিয়ে দিলো রাজ।ধীরে ধীরে রাজের মুখটা মায়ার দাড়ি সোজা চলে আসে।মায়া নিজেও চোখটা বন্ধ করে নেয়।রাজ মুখটা উপরে এনে চোখ বন্ধ থাকা মায়ার মুখের দিকে চেয়ে আছে।নাকের ডগায় অধর ছুঁয়ে নিচে নামে রাজ।মায়া আবারও চোখ খুললো।রাজ মায়াকে টাওয়াল দিয়ে বলে,”আজকের মত বাথরুম বিলাস এখানেই শেষ।বাকিটা তুমি সুস্থ হলে হবে।”

রাজ চলে যেতেই মায়া উঠে টাওয়াল প্যাঁচালো নিজের শরীরে।কিন্তু এই অবস্থায় বাইরে বের হতে চায় না।কারণ রাজ তাকে দেখলে আবারও অঘটন ঘটিয়ে দিবে।এই যে লুচু লোক।কখন কি করে ঠিক ঠিকানা নেই।মায়া গলা উঁচিয়ে বলে,”শুনছেন?”
রাজ মাথা শুকাতে ব্যাস্ত।মায়ার ডাক শুনে বলে,”বলো।”
“আমার ড্রেস দিয়ে যান।”
“টাওয়াল দিয়েছি তো।”
“এই অবস্থায় বের হবো নাকি?”
“আমিই তো আছি ঘরে।আর কেউ তো নেই।তাহলে সমস্যা কোথায়?”
“আপনি আমাকে ড্রেস দিবেন কি না বলুন।”

রাগী কণ্ঠে বলার কারণে রাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে।ওয়াড্রোপ খুলে নীল রংয়ের একটি নাইট ড্রেস নিয়ে মায়ার দিকে ছুঁড়ে মারে।মায়া ধরে নেয় ড্রেসটি।হাতা কাটা নাইট ড্রেস দেখে মায়া নাক ফুলিয়ে বলে,”এমন লাগামহীন মন্ত্রী মশাইয়ের কাছে এসব ছাড়া কোনো কিছুই আশা করা যায় না।”
“তুমি চাইলে তোমার আশার বাইরের বাকিটুকু শেষ করে দিতে পারি।”
“মুখটা বন্ধ করুন আপনার।”

রাজ ব্ল্যাঙ্কেট জড়িয়ে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো।মায়া নাইট ড্রেস পরে বাইরে আসে।রাজ মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে মোহিত নয়নে।মায়ার মুখে এখন কোনো মেকআপ নেই।একদম ন্যাচারাল মুখ।ফর্সা মুখটাতে রক্ত জমাট ঠোঁট দেখতে আকর্ষণীয় লাগে রাজের কাছে।দুই হাত মাথার নিচে রেখে মায়ার দিকে তাকিয়েই বলে,”ভাবছি এবার থেকে প্রতিদিন তোমার ঠোঁটে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হবো আমি।তুমি আমাকে দায়ী করতে পারবে না।স্বামী হয়ে বউয়ের ঠোঁটে রক্ত জমাট বাদিয়ে দিতেই পারি।”

মায়া হাতে থাকা টাওয়াল ছুঁড়ে মারল রাজের চোখের উপর।লাইট অফ করে রাজের পাশে শুয়ে পড়ে।মাঝে দিলো কোলবালিশ।রাজ মুখ থেকে টাওয়াল সরিয়ে কোলবালিশে দিলো এক লাথি।কোলবালিশ গড়িয়ে পড়ল খাটের নিচে।অসহায় কোলবালিশের জীবন নেই তাই তো আর ব্যাথা অনুভব করতে পারল না।নাহলে এই রাতে সে কান্না করে দিতো এভাবে লাথি খাওয়ার জন্য।মায়া বুঝতে পেরেও পাত্তা না দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে চোখ বন্ধ রেখেছে।মনে মনে ভিন্ন এক অঘটন ঘটানোর পাঁয়তারা চালাতে চায়।

ভাবছে এখন রাজকে খুন করলে সোজা জেলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।এর থেকে বরং আগে সোনালী ও মোহন সরদারের ব্যাপারটা শেষ করে রাজের বিচার করবে।শত্রু হলেও স্বামী হয়ে যেনো রাজ তার উপকার করল।রাজ এসে মায়ার কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়ে।মায়া ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে।রাজ মায়ার গলার কাছে মুখ গুজে ফিসফিস করে বলে,”জোর করে আমার বক্ষ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পারবে না তুমি।তোমাকে আমার বক্ষে স্বাগতম করেছি নিজ দায়িত্বে।এটা আর কোনোদিন এই বক্ষ থেকে আলগা হবেনা।”

মায়ার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মুছলো না হাত দিয়ে।রাজ বুঝতে পারবে সে কান্না করছে।আর মায়া চায় না তার কান্না কেউ দেখুক।এই রাজ যত পারুক ইমোশন হোক। এতে তারই ভালো।বর্তমানে মায়ার মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব।তার মাকে যদি অসম্মান করে বাড়ি থেকে বের করে না দিতো।মা যদি ওইদিন এক্সিডেন্ট করে মারা না যেতো।মা যদি গুন্ডাদের কাছে ধরা না পড়তো তাহলে মায়া হয়তো এই পরিবারেই বেড়ে উঠতো।খুশি খুশি হয়ে আপন করে নিতো রাজকে।কিন্তু এই রাজের জন্যই তো তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।তাকে দুই বছর এসাইলামে থাকতে হয়েছিল।কোনোদিন ভুলবে না সেই তিক্ত অতীত।যারা যারা এই তিক্ত অতীতের কারণ তাদের প্রত্যেককে নিজের হাতে মারবে মায়া।তবে মোহন সরদার আর রাজকে মারবে তিলে তিলে।ভালোবাসার আঘাত দিয়ে জর্জরিত করবে সে।এটাই এখন মনে মনে স্থাপন করে নিলো।

গভীর রাতে বীরের কাছে কল করেছে তার গার্ডেরা।বীর ঘুমের মাঝে কল রিসিভ করতেই ওরা বলে,”স্যার জারা ম্যাম পালিয়েছে।”
বীরের ঘুম ভেংগে গেলো।চোখ মেলে বলে,”তোরা কি করছিলি যে ও পালালো?”
“একটুর জন্য ওয়াশরুম গিয়েছিলাম।”
“সবাই মিলে একসাথে ঢুকেছিলে যে একটা মেয়ে তোমাদের মত গার্ড থাকতেও পালাবে।কতক্ষন হয়েছে নিখোঁজ?”
“পাঁচ মিনিট হবে।দারোয়ান দেখেছে ম্যাম পিছনের গেট দিয়েই দৌড়ে গেছে।সাথে সাথে সেও দৌড় দেয় ম্যামের পিছনে আর আমাকে কল করতে থাকে।”
“রেডি হও গাড়ি নিয়ে আমি আসছি।”

কল কেটে বীর টেডি হাসি দিয়ে বলে,”বী রেডি জানেমান।আজকে পালানোর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।নিষেধ করেছিলাম শুনলে না।এবার বুঝবে বীরের ভালোবাসা কতটা কঠিন।”
ফাঁকা রাস্তা চারপাশে অন্ধকার।জায়গায় জায়গায় সোডিয়ামের আলো।রাস্তার দুইপাশে দিয়ে ঘন জঙ্গল।রাস্তার এক কোনা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে জারা।একমনে দৌড়ে বান্ধবীর বাড়িতে যেতে চায়।সেখানে তার পাসপোর্ট আছে।কানাডা চলে যাবে সে।জারা দৌড়ের মাঝে গাড়ির শব্দ পায়।পিছনে ঘুরে পরিচিত গাড়ি দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো।বীর তাকে পেলে আজ অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।এই বীর একটা সাইকো।যাকে তাকে খুন করে।আজকে হয়তো তাকেও খুন করে দিবে।দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিলো জারা।কিন্তু বীরের সাথে কি পেরে ওঠা সম্ভব? বীর গাড়ি থামিয়ে দাড়ালো।দেখছে জারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টায় আছে।ড্রাইভার বীরকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,”ম্যামকে গিয়ে আটকাবেন না স্যার?”

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৫

“উহু।”
ড্রাইভার মনে মনে বলে,”তাহলে এত রাতে আমাকে বউয়ের কোল থেকে ডেকে আনলি কেন?”
মনের কথা অপ্রকাশ্য রেখে ড্রাইভার বলে,”তাহলে?”
বীর তার প্যান্টের পকেট থেকে বন্দুক বের করে।সোজা টার্গেট করে দূরে থাকা জারার দিকে।নিশানা বরাবর শুট করে দিলো বীর।জারা সাথে সাথে বসে পড়ল মাটিতে।পায়ে হাত দিয়ে দেখলো রক্ত।পিছনে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।বীর ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।এভাবে আসলে মিনিট পাঁচ লেগে যাবে বীরের।কারণ বেশ খানিকটা দূরেই ছিলো বীর।আস্তে আস্তে বীরের পা জারার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে।জারা থরথর কাপছে।এখন পালাতেও পারবে না সে।

মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here