মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ১০
ইশরাত জাহান
জারা এবার শান্ত হলো।শান্ত বলতে সে ইচ্ছাকৃত চুপ থাকলো।মুখভঙ্গি এমন করলো যেনো সে বীরের কাছে মিনি বিড়াল।বীর এটা দেখে জারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”সেদিন যদি তুমি না পালাতে তাহলে এতদিনে আমাদের বিয়েটা হয়ে যেতো।”
জারা এখনও চুপ।বীর জারার হাতের দিকে তাকিয়ে আবারও রক্তবর্ণ চোখজোড়া নিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে থাকে।করা লক্ষ করেনি।বীর জারার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে,”আংটিটা কোথায় রেখেছিস তুই?”
জারা ব্যাথা পেলো খুব।ব্যাথাতুর নয়নে বীরের দিকে চেয়ে বলে,”আমার ফ্রেন্ডের বাসায় আছে।”
“খুলেছিস কেন আংটিটা?”
“আমি তো আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা তাই।”
“একবার আমার জীবনে আসবি আবার চলে যাবি এটা তো হতে পারে না।নিজ থেকে যখন আমার কাছে এসেছিস যাওয়ার অনুমতি না নিয়ে যেতে পারবি না।”
“আচ্ছা আচ্ছা এবার ছাড়ুন।”
বীর ছেড়ে দিলো জারার চুল।এরপর চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,”বেড টি নেও।”
জারা চা নিলো।বীর দুষ্টু হেসে বলে,”আজকে আমাদের বিয়েটা হলে এই মর্নিংটা আরও বেশি সুন্দর হতো।আমাদের একটা বেড কিস হয়ে যেতো।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাশি উঠলো জারার।খুকখুক করে কেশে জারা বীরের দিকে তাকালো।দরজায় কড়া নাড়ল মৌ।বীর ওকে দেখে বলে,”কিছু বলবি বোন?”
“মার্কেটে যাবে বলেছিলে তো ভাইয়া।”
“হ্যাঁ ও রেডি হলেই যাবো।”
“আমি ভাবীকে রেডি করে দিচ্ছি।”
“ভাবী?এত তাড়াতাড়ি?”
“বিয়ে তো আজ নাহয় কাল করবেই।সে তুমি যখনই করো।ভাবী বলে অভ্যাস করে নিচ্ছি।”
বীর হেসে চলে গেলো।মৌ জারার কাছে একটি প্যাকেট দিয়ে বলে,”কালকে ভাইয়া এটা আনিয়েছিল।এটা পরে বাইরে আসো।আজ অনেক শপিং হবে।ভাইয়ার পকেট ফুটো করে দিবো আমরা।”
মৌ মজা করে বললেও জারা মনে মনে বলে,”আজ আবারও পালাবো।যদি পালাতে না পারি তাহলে ওই মাফিয়ার পকেট আমি সত্যি সত্যিই ফুটো করে দিবো।”
ফ্যামিলি ড্রামা শেষ করে মায়া উপরে চলে আসে।আয়নার সামনে এসে শাড়িটা ঠিক করে নেয়।মায়ার চুল অন্যান্য মেয়েদের মত কোমড় অব্দি লম্বা না।গলার নিচে তিন কি চার ইঞ্চি লম্বা।চুলগুলোকে একটু কুকরিয়ে নিলো।ঠোঁটের লিপস্টিক ঠিক করে হাতঘড়ি পরে নিলো।অতঃপর ফোনটা হাতে নিয়ে তারেকের সাথে কথা বলতে বলতে বের হয়ে যায়।অফিসে অনেক কাজ জমা হয়ে আছে।তারেককে বলে,”আমি বের হয়ে যাচ্ছি।তুমি সরদার বাড়িতে এসে পায়েশ আর কিছু ফল নিয়ে যেও।আমি দুপুরে ওখানে আসব।”
বলেই কল কেটে দেয় মায়া।বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকালো।নিজের গাড়িটা আনা হয়নি তার।আনবেই বা কিভাবে?বিয়ে করে সরদার বাড়িতে আসবে এমনটা তো বুঝেনি সে।মায়া ভাবলো আজ সে রিক্সায় করে যাবে।কিন্তু হঠাৎ করেই গ্যারেজ থেকে গাড়ির শব্দ কানে ভেসে আসলো।সেদিকে তাকাতেই মায়া দেখতে পেলো রাজ পিছন সিটে বসে আছে।সামনে ড্রাইভার আছে।মায়া সেদিকে তাকিয়ে পাত্তা দিলো না।নিজের মতো যেতে নেয়।অনেক নাটক করেছে আজ সে এখন আর নাটক করতে ইচ্ছা করছে না।বিশেষ করে রাজের সামনে তো না।এই রাজ খুবই চালাক।মায়ার সমস্ত অভিনয় বুঝে নেয় সে।এটা মায়া হারে হারে বুঝেছে।মায়া নিজের মত হাঁটতে থাকলেও রাজের গাড়িটি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।মায়া বিরক্তিকর চাহনি দিলো।এতে কি আদৌ রাজের যায় আসে?সে এক টেডি হাসি দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বলে,”গাড়িতে ওঠো মায়াবতী।”
“নো নীড মন্ত্রী মশাই।”
“বাট আই নীড মায়াবতী।”
“বললাম তো প্রয়োজন নেই।”
“ইংরেজি বুঝি তো আমি।”
বলেই মায়ার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দেয় রাজ।মায়া কিছু বলল না।বর্তমানে সে লোকসমাজে এই মন্ত্রীর বদনাম করবে।বুঝতেও দিবে না কাউকে যে বউ হয়ে এসে বিষ ঢালছে বরের জীবনে।তাই চুপ করে আছে মায়া।ড্রাইভার একমনে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত।রাজ তাকে একপলক দেখে মায়ার কাছে নিজের মাজাটা এগিয়ে দিলো। আড়চোখে দেখলো মায়া।আবারও ফিরে তাকালো জানালার দিকে।মায়ার এই চোখের পাতা নাড়ানো খুব ভালোভাবেই দেখেছে রাজ।বউয়ের থেকে লাইসেন্স পেয়ে যেনো রাজের মন বানরের মত লাফাতে শুরু করল।তাই তো সে আর ধীরে ধীরে না এগিয়ে সোজা মায়ার গায়ে ঘেষে বসে।মায়া এবার রাজের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে বলে,”সোজা জানালা দিয়ে আমাকে বাইরে ফেলে দিলেই তো হয়ে যায়।”
রাজ জিহ্বায় কামড় দিলো।ঠোঁট দিয়ে জিহ্বার এমনভাবে চু চু শব্দ করলো যেনো তার খুব খারাপ লাগবে এমন করলে।মায়ার কোমরটা জড়িয়ে নিজের দিকে এগিয়ে আনল রাজ।মায়া রাজের কানের কাছে মুখটা নিয়ে বলে,”হারিয়ে যাচ্ছি না আমি যে এখনই কাছে আসতে হবে।সামনে ড্রাইভার আছে দেখবেন তো নাকি?”
রাজ মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”বউকে ভালবাসবো আমি ড্রাইভার কি করবে শুনি?”
মায়ার কানে আর গলায় রাজের গরম নিশ্বাস।সবকিছুকে উপেক্ষা করে মায়া বলে,”উনি কি ভাববেন?”
“এতগুলো টাকা খরচ করে বিয়ে করলাম আমি।এতগুলো টাকা দিয়ে ড্রাইভার রাখছি আমি।এতগুলো টাকা খরচ করে গাড়িটাও কিনলাম আমি।এখন রোমান্স করতেও লোকের পরোয়া করবো আমি?এটা কিন্তু আমার মত বোকাসোকা জামাইয়ের প্রতি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে মায়াবতী।
“আপনি বোকাসোকা?”
“সেটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো একটু কাছে আসো।”
“কাছেই তো আছি।”
“আরো কাছে আসো।”
“বিরক্তিকর দূরে সরে বসুন।”
রাজ কোমড়ে ব্যাথা লাগার অভিনয় করে বলে,”কোমড়টা ওদিকে সরছে না বউ।”
“আমার দিকে তো আপনার কোমড়টা ভালোই ছুটে আসছিল!”
“আমি কি করবো বলো?আমার কোমড়টা বড় অবাধ্য।বউকে পাশে পেলে তার কাছে ছাড়া কোথাও যেতে চায়না।”
মায়া বিরক্তিতে চুপ করে থাকে।রাজ মায়ার হাতটা ধরে উপরে উঠায়।আঙুল দিয়ে মায়ার হাতের উপর নাচাতে থাকে।রাজের এহেন কান্ড ধৈর্য নিয়ে দেখছে মায়া।কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরার পর এখন সে নিজেই বিরক্ত।তাই ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়।রাজ এটা দেখে মায়ার কোমড়ের নিচ থেকে হাত বোলাতে শুরু করে।মায়া ওর হাতের বড় বড় নখগুলো রাজের হাতে বসিয়ে দেয়।রাজ হাত না সরিয়ে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”এভাবে হার্ড রোমান্স করতে তো চাইনি মায়াবতী।তুমি কি এই হার্ড রোমান্স চাও?আমি কিন্তু অমত করবো না।বিকজ আই এম ইওর হাসব্যান্ড ফর রোমান্স এন্ড লাভ।”
মায়া মুখটা উঁচিয়ে কিছু কটুকথা শুনিয়ে দিতে চায় কিন্তু রাজ সেই উচু মুখটাতে তার ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে নেয়।ঠোঁটটা বের করে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,”বলোতো আমার সানগ্লাসটা কোথায়?”
ড্রাইভার গাড়ি চালানোতে মন দিয়ে আছে।সে কি জানে নাকি?আন্দাজে বলে,”আপনার চোখে স্যার।”
আন্দাজে বলা কথাটা ছিলো ভুল।রাজের সানগ্লাস ছিলো সিটের সামনে।রাজ দুষ্টু হেসে মায়ার কানে মুখটা রেখে ফিসফিস করে বলে,”ওই ব্যাটা আমাদের দিকে তাকাবে না মায়াবতী।”
“তো?”
“তো কিছু না চোখ বন্ধ করো।আমি স্বামীর দায়িত্ব পালন করি।”
বলেই রাজ মায়ার ঠোঁটে এবার নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।মায়া চোখটা বড় বড় করে আছে।নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে রাজকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।চাইলেই কি সম্ভব?রাজের কোথায় বিদেশ থেকে ফাইট শেখা আর সে তো বীরের থেকে বাংলাদেশে শিখেছে।রাজ নিজেও তার হাত দিয়ে মায়ার দুইহাত শক্ত করে ধরে নিজের অধিকার হাশিল করে নিচ্ছে।মায়া নড়াচড়া শুরু করে দেয়।রাজ বিরক্ত হয়ে মায়ার কানের কাছে ঠোঁটটা রেখে বলে,”দুষ্টুমি করবে না মায়াবতী।ড্রাইভার বুঝে যাবে তো।”
বলেই আবারও শুরু করে দিলো রাজ।রাজের এই ঠোঁটের কাজ চালানোর মাঝেই গাড়িতে জোরে ঝাঁকা লাগে।রাজ একটু সরে যায়।ঠোঁটটা হাত দিয়ে মুছে ভ্রু কুঁচকে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,”গাড়ি এভাবে থামালে কেন?”
“সামনের দিকে দেখেন স্যার।”
রাজ সামনে তাকাতেই দেখলো সামনে কিছু গুন্ডা মুখে মাস্ক পরে দাড়িয়ে আছে।পিছনে তাকাতেই দেখলো পিয়াশের গাড়িটা আসছে।কিন্তু ওরা আসার আগেই রাজের গাড়ির পিছনে আরো কিছু গুণ্ডা হাজির।ওরা গার্ডদের গাড়িগুলো ঘেরাও করে আছে।মায়া ও রাজ ভ্রু কুঁচকে দুজন দুজনের দিকে তাকালো।রাজ কিছু একটা ভেবে ফোন বের করে কাউকে ম্যাসেজ দিলো।অতঃপর গাড়ি থেকে বের হয়।একসাথে গাড়ি থেকে মায়া ও রাজ বের হয়।সামনের গুন্ডাগুলোর লিডার বলে ওঠে,”শাহমীর রাজকে একা পেয়েছি।ওকে ধর সবাই।মেরে এখানেই শেষ করে দিতে হবে।”
আরেকজন বলে ওঠে,”কিন্তু বস আমাদের তো মেয়েটাকে নিয়ে কোনো কথা বলেনি।”
“আরে বলেনি তো কি হয়েছে?ওকেও ওপারে পাঠাতে হবে।দেখছিস না একসাথেই আছে।”
বলেই দুইদল করে দুদিকে যায় ওরা।মায়া আর রাজের কাছে এসে ওদের আক্রমণ করতে গেলেই দুজনে তাদের পা দিয়ে লাথি মেরে সরিয়ে দেয় গুন্ডাগুলোকে।রাজের এমন করাটা স্বাভাবিক।ছেলে মানুষ মারামারি জানে কিন্তু মায়া যেভাবে ওদেরকে লাথি দিলো যেনো ও ফাইট শিখেছে।গুন্ডা ছেলেটা পুরো মাটিতে শুয়ে পড়ে।ওদের লিডার দাড়িয়ে থেকে শুয়ে থাকা ছেলেটাকে লাথি দিয়ে বলে,”শালা!গায়ে কি শক্তি নেই?মেয়ে মানুষের কাছে লাথি খেয়ে চেগায়ে থাকো।”
“গুরু মেয়ে তো না যেন এটম বোম।এমন জোরে লাথি দিলো যে আমার হাতটাই ব্যাথা করছে।অবশ হয়ে গেছে জায়গাটা।”
“তাই নাকি তাহলে আগে আমি ওই মেয়ের সাথেই ফাইট করে নেই।তারপর নাহয় মন্ত্রীকে দেখা যাবে।”
বলেই মায়ার দিকে এগোতে নেয়।মায়া এটা দেখেই শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে নেয়।রাজ এবার রিল্যাক্স করে গাড়িতে হেলান দেয়।সামনে দাড়িয়ে থাকা আরেকটা গুন্ডা ছেলে বলে ওঠে,”ওয় তোর বউকে মারতে যাচ্ছে।মনে কি ভয়ডর নেই?”
রাজ তাকে আরেক লাথি দিয়ে বলে,”আব্বে ব্যাটা ভয়ডর হলে আমার তোদের জন্য হয় রে।আমার যে এনাগন্ডা বউ তোদের এমন অবস্থা করবে যে হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা পাবি না।”
বলতে না বলতেই লিডারের হাতটা ধরে মুচড়ে রাখে মায়া।হাতটা অনেক জোরেই মুচড়ে ধরেছে।লিডারের মুখ থেকে বের হচ্ছে চিৎকার।যেটা শুনে রাজ বলে ওঠে,”আব্বে ব্যাটা আস্তে চিল্লা।কান ফেটে গেলো আমার।”
মায়া ওই লিডারকে নিচে ফেলে দিয়ে উচু হিল পরা পা দিয়ে ওর আরেকহাতে পিষতে থাকে।এবার লিডার চিল্লিয়ে বাকিদের বলে ওঠে,”হা করে দেখছিস কি?যা ওদেরকে একসাথে ধর।”
ওরা মায়া আর রাজের দিকে এগোতে আসলেই রাজ ওদেরকে মেরে মাটিতে শুইয়ে দেয়।অন্যদিকে মায়া লিডারের পকেট থেকে ছুরি নিয়ে অন্য লোকেদের যাকে সামনে পাচ্ছে তার গায়েই আঘাত করতে থাকে।অবশেষে সবাই কুপোকাত হয়ে পড়ে আছে।মায়া ওর শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে লিডারের গায়ে লাথি মেরে বলে,”আমি মেহেরুন জাহান মায়া।আমার কাছে আসার চেষ্টা করবি তো ত্যাগ করবি এই দুনিয়া।”
মায়া এখন হিংস্র হয়ে উঠেছে।গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে লাথি মেরেই যাচ্ছে লিডারকে। ছুরি দিয়ে যেই তাকে আঘাত করতে নিবে ওমনি রাজ এসে মায়ার কোমড় ধরে উচু করে নিয়ে অন্যপ্রান্তে আসে।মায়া তবুও হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে।এদেরকে দেখে এখন মনে হবে টম অ্যান্ড জেরি।মাথায় রাগ চেপে আছে তাই লাফালাফি আর রাজ তাকে কোমড় ধরে উচু করে নিয়ে আসছে।এদেরকে আজ শেষ না করা অব্দি মায়ার শান্তি নেই।মায়া চিল্লিয়ে বলে ওঠে,”ছাড়ুন আমাকে।আমি আজ ওদেরকে শেষ করেই ছাড়বো।আপনি আমাকে ছাড়ুন।”
“মায়াবতীর মাথা এবার গেছে রে।পিয়ু বেবী তাড়াতাড়ি তোমার দিকের ফাইট শেষ করে এদিকে আসো।আমার বউ বাড়াবাড়ি কিছু করার আগে লোকগুলোকে নিয়ে চলে যাও।”
মায়া অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ঝাড়ি মেরে বলে,”মজা করছেন আপনি?”
“আরে না বউয়ের সাথে মজা করা যায় নাকি?বউকে তো প্রেমের ডোজ দিতে হয়।মাথা ঠাণ্ডা করতে হবে দেখছি তোমাকে এখন।”
পিয়াশ আর বাকি গার্ডগুলো মারামারি শেষ করে চলে এলো এদিকে।ঠিক তখনই পুলিশের গাড়ি চলে আসলো।পুলিশ বের হয়ে সবাইকে নিয়ে যায়।রাজ পুলিশের কাছে এসে সিরিয়াস হয়ে কাঠিন্য কণ্ঠে বলে,”ওদেরকে এমন থেরাপি দিবে যেনো ওরা বলে দেয় কে ওদের কে পাঠিয়েছে।”
“ওকে স্যার।”
পুলিশ যেতেই রাজ শক্ত রাগান্বিত চোখজোড়া স্বাভাবিক করে মায়ার দিকে তাকালো।মায়া রাগে এখনও হাসফাঁস করছে।রাজ এসে মায়ার হাত ধরতে নিলে মায়া ঝাটকা মেরে সরিয়ে নেয়।রাজ বুঝলো এবার তার মায়াবতী পুরোই রক্তবতী হয়ে গেছে।তাই আর কোনো কথা না বলে মায়ার দুইহাত তারই শাড়ির আচল দিয়ে বেঁধে গাড়িতে উঠলো।পিয়াশ হা হয়ে ওদেরকে দেখে বিড়বিড় করে বলে,”একজন সাইকো তো আরেকজন লুচ্চা প্লাস সাইকো।”
পাশে থাকা গার্ড হেসে দেয়।পিয়াশ ওদেরকে চোখ গরম দিয়ে বলে,”চলো কাজ আছে আমাদের।”
সোনালী কারো সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে।পাশে তাকিয়ে দেখে মালিনী আছে।সোনালী বলে ওঠে,”নতুন আপডেট পাওয়া গেছে।”
“কি?”
“শাহানা পারভিন মানে মোহনের প্রথম বউয়ের সেই গার্মেন্টস ওপেন হয়েছে।”
“এটা কিভাবে সম্ভব?ওদের পরিবারের কেউই তো বেচে নেই।”
“সেটাই তো আমি ভাবছি।মোহনা আর শাহানা তো সেদিনকেই নিঃস্ব হয়ে যায়।শাহানার এক্সিডেন্ট নিজের চোখেই দেখেছি আমরা।এদিকে মোহনা তো লাপাত্তা।ও আবার ফিরে আসেনি তো?”
“এটা কি সিনেমা নাকি যে ওইটুকু পুঁচকে মেয়ে এতবড় ক্ষমতার সাথে ফিরে আসবে?”
“আসতেও তো পারে।”
“তাহলে এই বাড়িতে আসছে না কেন?শাহমীর রাজকে স্বামীর পরিচয় দিয়ে তো তাকে অনেককিছুই করার কথা।”
“যে ডোজ আমরা দিয়েছি তাতে কি আর সে চাইবে রাজকে স্বামীর পরিচয় দিতে?একেবারে এই বাড়ির থেকে বিদায় দিতেই তো ওইদিন আমরা প্ল্যান করেছিলাম।”
মালিনী হেসে দিয়ে বলে,”সেই!এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছি।বেচারা রাজ বিদেশে পড়াশোনা করছে।ও জানতেও পারল না তার পুতুল বউ আর শাশুরির সাথে কি হচ্ছে।এদিকে রাজের যমজ ভাই যে কি না মানসিক রোগী তার ব্রেইন ওয়াশ করে আমরা মোহনাকে নির্যাতন করেছি।একদিকে তুমি শাহানাকে অত্যাচার করেছো আরেকদিকে মোহনাকে তাজ।যদি মোহনা ফিরেও আসে তো আমাদের কোনো চিন্তা নেই।ওর প্রথম টার্গেট থাকবেই তো ওর পুতুল বর মানে রাজ।”
“যেটা আসলে করেছে ওই তাজ।যে এখন পুরোই লাপাত্তা।”
বলেই হেসে দিলো দুজনে।অথচ তারা জনেই না তাদের গুটি পাল্টে যাচ্ছে।রাজ তার ভালোবাসা দিয়ে তার মায়াবতীকে নিজের করে নিচ্ছে।সোনালী এবার হাসি থামিয়ে বলে,”আমি ভাবছি একবার ওই গার্মেন্টসের দিকে যাবো।শিবপুরে গার্মেন্টস এর ওনারকে দেখতে হবে।”
“কেন?”
“কারণ সে যেই হোক না কেন আসলে তো তার পরিচয় মোহনা সরদার।যাকে জীবিত রাখা মানে আমার মিহিরের অধিকার এই বাড়ি থেকে অনেকটাই অর্ধেক পর্যায়ে চলে যাওয়া।মোহনা তার ব্যাবসাটা পেয়ে যাবে। মহসিন সরদার কিন্তু এই বাড়ি লিখে দিয়েছিলো রাজের নামে।আর মোহনার জন্য আমাদের বংশীয় ব্যাবসা।মোহনা আসলে ওই তো পেয়ে যাচ্ছে তাহলে আর আমার ছেলে সে কি পাবে তাহলে?”
“কথাটা ঠিক।এদিকে আমার ছেলেটা যে কোথায় কে জানে?কতটাই না খুঁজেছি তাকে আমি।আজও পেলাম না।ওদের জন্যই আমার ছেলেটা আমার কোল থেকে হারিয়ে গেলো।”
মায়াবতীর ইচ্ছা সিজন ২ পর্ব ৯
সোনালী মিহিরকে টেক্সট করল।বিপরীতে মিহির জানালো সে আসবে কিছুদিন পরেই।যেটা দেখে সোনালী হেসে দেয়।মালিনীকে বলে ওঠে,”বর্তমানে তুমি তোমার নতুন বৌমা মায়াকে একটু আদর যত্ন করো।মোহনাকে ওর শত্রু বানাতে কাজে দিবে। আফটার অল একজন রাজের ছোটবেলার বউ তো আরেকজন রাজের আসল বউ।”
মালিনী মাথা নাড়ালো।ওরা তো জানেই না ওরা যাকে দুজন ব্যাক্তি মনে করছে তারা আসলে একজনই।
