Death or Alive part 22

Death or Alive part 22
priyanka hawlader

সকালের সূর্য উঠেছে ঠিকই, কিন্তু পারস্য রাজ্যের আকাশে যেন আজ এক অদৃশ্য ভার লেগে আছে। গা ছমছমে বাতাস বয়ে চলেছে রাজপ্রাসাদের চারদিকে—যেন প্রকৃতিও কোনো এক অশান্ত পূর্বাভাস দিতে চাচ্ছে।
কাল রাতের সেই রাজসভা, সেই ঘোষণা, সেই শপথ—সব মিলিয়ে পুরো পারস্য যেন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ওয়াজফান ও অর্ষার গোপন বিবাহ আর জনসমক্ষে ঘোষিত ভালবাসার কথা এখন আর কেবল পারস্যেই সীমাবদ্ধ নেই।

হাওয়ায় ভেসে খবর পৌঁছে গেছে দূরদূরান্তের বহু রাজ্যেও।
বিশেষ করে মেসোপটোমিয়া রাজ্যে।
সেই রাজ্য, যেখানে এলিনা রয়েছেন।
আর সে খবর পেতে দেরি হয়নি।
খবরটা হাতে পাওয়া মাত্রই এলিনা সমস্ত কিছু ফেলে দিয়ে ছুটে পড়ে পারস্য রাজ্যের উদ্দেশ্যে। তার চোখে ছিল হতবাক বিস্ময়, ঠোঁটে চাপা রাগ, আর হৃদয়ে অসংখ্য প্রশ্ন—যার কোনো উত্তর সে এখনো খুঁজে পায়নি।
জ্যাইমের কিছু না বলা, ওয়াজফানের আচরণ, সব মিলিয়ে এলিনার ভেতরে জমে থাকা এক নীরব আগ্নেয়গিরি যেন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেই বিষাক্ত বাতাসে আজ পারস্য রাজ্যের সকালের সূচনা।
যেখানে প্রেম আর প্রাসাদ—দু’য়ের মাঝখানে জমে উঠছে অদৃশ্য এক অশান্তি।
আর রাজপ্রাসাদের উচ্চতম মিনার থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখা যায়, আজকের সকালের আলো যেন আগের মতো নয়—এক ধরণের অজানা দোলাচল লুকিয়ে আছে সেখানে।
পারস্য রাজ্য যেন হঠাৎ করেই নিঃশব্দ কোলাহলে জেগে উঠলো।
তীব্র গতিতে প্রাসাদের মেইন গেট পার হয়ে, চুল ছেঁড়া উন্মাদ ভঙ্গিতে ছুটে এলো এলিনা। চোখের পাতা ভেজা, নিশ্বাসে গতি নেই, কণ্ঠে শব্দ নেই—শুধু চোখের পানি আর হাঁটার ছন্দ বলে দিচ্ছে, সে কী গভীর ঝড় নিয়ে এসেছেন হৃদয়ে।

ওয়াজফানের কক্ষ তখন নিস্তব্ধ। সিংহাসনের রাজা তার প্রিয় ব্যক্তিগত কক্ষে একা, নিঃশব্দ, চিন্তায় ডুবে।
অর্ষা তখন ইসাবেলার কক্ষে, হয়তো কোনো আলাপ বা হাসিতে মগ্ন।
ঠিক এই সময়েই সেই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে পড়ে এলিনা।
এক মুহূর্ত দেরি না করে, কোনো শব্দ না করে, সে ছুটে যায় ওয়াজফানের দিকে।
কান্না জড়ানো চোখে ওয়াজফানকে জড়িয়ে ধরতে চায় এলিনা—হয়তো পুরোনো সেই আত্মিক বন্ধনের ভরসায়, হয়তো নিজের ভাঙা হৃদয়ের একটা আশ্রয় খুঁজে। কিন্তু…
ওয়াজফান তখন দাঁড়িয়ে, স্থির।
তার চোখে বিস্ময় আর ক্ষুব্ধ এক শীতলতা।

সে সঙ্গে সঙ্গে এলিনার স্পর্শের আগে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এলিনাকে নিজের কাছে আসতে দেয় না। ঠান্ডা অথচ দৃঢ় হাতে সে পিছিয়ে যায়। চোখে যেন এক অদৃশ্য বজ্রপাত।
তারপর, নীরবতা ছিন্ন করে তার কোমর থেকে তরোয়াল বের করে সে সজোরে মেঝেতে আঘাত করে।
মাটিতে সেই আঘাতে তৈরি হয় আগুনের গোল রেখা। একটা জ্বলন্ত সীমারেখা—যেটা এখন ওয়াজফান ও এলিনার মাঝে অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে।
সেই আগুনের ধোঁয়া উঠতে উঠতেই, তার কণ্ঠে বজ্রনিনাদের মতো হুংকার,
দূরে থাকো আমার থেকে, এলিনা!

আমাকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু মাত্র আমি বউ ব্যতীত অন্য কোন নারী কে দেইনা।
আমার দেহ তো দূরের কথা, আমার ছায়াটাও ছোঁয়ার অধিকার কারো নেই।
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস, আমার সর্বাঙ্গে এখন শুধুমাত্র একজন নারীর অধিকার আছে—
তিনি আমার স্ত্রী, আমার রাণী, অর্ষা ওয়াজফান কায়াস্থ!
ঘর জুড়ে তখনও আগুনের রেখা ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। সময় যেন থেমে গেছে।
ওয়াজফানের রূঢ় অথচ দৃঢ় হুংকারে এলিনা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। তার মুখে স্পষ্ট ব্যথা, চোখে জমে থাকা কষ্টের ছায়া।

হঠাৎই তার ঠোঁট কেঁপে উঠে। চোখ ভিজে, কণ্ঠে এক অসহায়তার মায়াজড়ানো চাপা আর্তি,
আমি না তোমার ফিয়ান্সে ছিলাম ওয়াজফান… তুমি কি করে আমাকে রেখে বিয়ে করে নিতে পারো, বলো?
“তুমি বিয়ে করোনি, তাই না? মজা করছো আমার সাথে, তাই না? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি, ওয়াজফান… অনেক বেশি…”
তার কণ্ঠ যেন ভেঙে পড়ে। এলিনার কাঁধ কাঁপছে, চোখের জল ঝরছে ধারা হয়ে।
আর নিশ্চয়ই তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো তাই না—নাহলে আমাদের বিয়েতে রাজি হতে না। তাহলে এখন এমন করছো কেনো আমার সাথে? আমাকে কেনো এতোটা কষ্ট দিচ্ছো বলো?”
ওয়াজফান তখনো নিঃশব্দ। চোখ সরিয়ে নেয় এলিনার মুখ থেকে। কিছুটা নিচে তাকিয়ে গলা ঠান্ডা রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে।

তারপর স্থির কিন্তু রুঢ ভাবে জবাব দেয়,
এসব পাগলামি বন্ধ করো তুমি। আমার বিয়ে হয়েছে, এলিনা। আমার ঘরে এখন আমার একটা মিষ্টি বউ আছে।
একটি ছোট বাক্য—কিন্তু তার শব্দগুলো যেন ছুরির মতো এলিনার হৃদয় চিরে যায়।
তাই যেকোনো সময় এরকম হুট করে চলে আসবে না আমার রুমে। আমার বউ যদি দেখে, খারাপ ভাবতে পারে।

আর হ্যাঁ, এই ‘ভালোবাসা’র ভূতটা নিজের মাথা থেকে বার করে দাও। কারণ আমি না তোমাকে কখনো ভালোবেসেছিলাম, না বাসি, আর না কোনোদিন বাসবো।
আমার জীবন, আমার সবকিছু এখন শুধু একজন নারীর জন্যই—সে আমার নিশ্বাস, সে আমার অস্তিত্ব। যাকে ছাড়া আমি বাঁচতে শিখিনি, আর বাঁচবোও না। সেই মানুষটা হলো আমার স্ত্রী—
অর্ষা।”
এতটুকু বলেই কিছুটা থেমে যায় সে। যেন শ্বাস নিচ্ছে। তারপর আবার বলে—
তোমার জন্য ভালো হবে, তুমি আমার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখো।
আর হ্যাঁ, আমাদের পরিবারের মাঝে যে বিয়ের চুক্তিটা হয়েছিল, আমি এই মুহূর্তে তা চূড়ান্তভাবে ভেঙে দিচ্ছি। এখন থেকে আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।”

দয়া করে এখানে সিনক্রিয়েট করবে না। নিজের রাজ্যে ফিরে যাও, আর সেখান থেকে একজন উপযুক্ত কাউকে খুঁজে তাকে বিয়ে করো।
কথাগুলো যেন ধ্বংস করে দেয় এলিনার সবটুকু আশা, স্বপ্ন, ভালোবাসা।
এবার আর কোনো শব্দ বের হয় না তার মুখে। তার চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরছে অবিরত। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ধীর পায়ে, নিঃশব্দে এলিনা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
পিছনে পড়ে থাকে এক স্তব্ধ ঘর, এক তপ্ত আগুনের রেখা, আর এক রাজা—যার হৃদয় এখন শুধুই তার রাণীর জন্য।

এলিনা খুব বেশি ভেঙে পড়ে। পারস্য রাজ্যের প্রতিটি কোণ তাকে যেন কাঁটার মতো বিঁধে যাচ্ছে—এক মুহূর্তও এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করে না তার। নিজ রাজ্য, ফিরে যেতে চায় সে।
কিন্তু ঠিক প্রাসাদের মূল দরজায় পৌঁছেই থমকে যায় এলিনা।
সামনেই দাঁড়িয়ে জ্যাইম।
চোখে চোখ পড়ে মাত্র—যেন সমস্ত যন্ত্রণা, অভিমান, অপমান একসঙ্গে বুকের ভেতর গর্জে ওঠে।
জ্যাইম কিছু বলার আগেই এলিনা ছুটে আসে, কোনো কথা নয়, কোনো ব্যাখ্যা নয়—
শুধু হুট করে গিয়ে জ্যাইমকে জড়িয়ে ধরে।

তার চোখ দুটো যেন অপেক্ষা করছিল এই ছায়াটুকুর জন্য—
আর সে চোখ থেকে নিঃশব্দে, টুপটাপ ঝরে পড়ে অশ্রু,
অনবল, নীরব, অথচ কাঁপন জাগানো জলকণা।
এক মুহূর্ত—এক অনন্ত অনুভবের সমান।
জ্যাইম এরকম অবস্থায় এলিনাকে দেখে ভেতরে ভেঙে পড়ে—না, বাইরে সে কিছুই দেখায় না, কিন্তু তার বুকের ভেতর যেন ঝড় বয়ে যায়। এলিনা কাঁদছে, ভেঙে পড়েছে, এলিনা অসহায়। আর জ্যাইম? সে যেন নিজের সমস্ত ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
তার মধ্যে এমন কোনো শব্দ নেই, এমন কোনো বাক্য নেই যা দিয়ে সে এলিনাকে সান্ত্বনা দিতে পারে। যেন প্রতিটি শব্দ আজ নিষ্প্রভ, নিষ্ফল। কষ্টের একটাই রং—কালো, আর তা দু’জনেই এখন সমানভাবে গায়ে মেখে বসে আছে।

এলিনার বুকে তীব্র যন্ত্রণার যে ছোঁয়া, জ্যাইম সেটা অনুভব করতে পারছে নিজের হৃদয়ের গভীরে। কিন্তু কিছু করার নেই তার। এই দুটো জীবন—এলিনা আর তার—দুইটা সমান্তরাল রাস্তায় কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছে।
জ্যাইম ভালবেসেছিল এলিনাকে।
এলিনা ভালবেসেছিল ওয়াজফানকে।
আর ওয়াজফান?
সে ভালবেসে ফেলেছে অর্ষাকে।
এই ভালোবাসার বৃত্তের শেষ কোথায়?

তিনটি হৃদয়! একটি পূর্ণতা পেয়েছে, আর বাকি দুটি পেয়েছে যন্ত্রণা।
জ্যাইম কাঁপা কাঁপা হাতে আলতো করে এলিনার মাথায় স্পর্শ করে। গলা কাঁপা কাঁপা, নিঃস্বরে বলে ওঠে—
এই বদমাশ… কাঁদছিস কেন? কী হয়েছে তোর?”
এই কথার সাথেই যেন এলিনার ভেতরের সমস্ত বাঁধ ভেঙে যায়। সে হঠাৎ করেই জ্যাইমকে আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এক মুহূর্তেই তার কান্না যেন বৃষ্টি হয়ে নামে জ্যাইমের বুকে।
কান্নার ফাঁকে, হাহাকারের সুরে সে বলে ওঠে—
“দেখ, তোর ভাই বিয়ে করে নিয়েছে… সে এরকমটা কী করে করতে পারে? তার ফিয়ান্সে তো আমি ছিলাম, তাই না? আমাকে রেখে সে অন্য কাউকে কী করে বিয়ে করে?”
তার গলায় কষ্টের তীব্রতা—একটুও কম নয়।

“আমি তো তাকে ভালবেসেছি, সেটা তুই জানিস, জ্যাইম! আমি তাকে কতটা ভালোবাসি, সেটা তুই তো জানিস! আমি ওয়াজফানকে ছাড়া বাঁচতে পারব না… প্লিজ, তুই কিছু একটা কর! আমি জানি, তুই বললে ও আমাকে আবারও মেনে নেবে। তুই প্লিজ কিছু কর… আমি ওয়াজফানকে ছাড়া সত্যিই মরে যাব, জ্যাইম!”
তার প্রতিটি শব্দ যেন তীর হয়ে বিদ্ধ হয় জ্যাইমের বুকে। বুকের গভীরে গিয়ে বাজে সেই ছোবল—ভালোবাসা যখন কাউকে দেয় না, তখন বিষ হয়ে যায়।

জ্যাইম নিঃশব্দে এলিনাকে জড়িয়ে ধরে। কিছু না বলে, শুধু বুকে টেনে নেয় তাকে।
তার চোখের কোণে তখন আর পানি নয়, সেখানে একধরনের নিঃশব্দ বিষাদ—হারিয়ে যাওয়া কিছু না-পাওয়ার যন্ত্রণায়। তার কাঁধে মাথা রেখে এলিনা কাঁদে, আর জ্যাইম নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে দূরে—আকাশের দিকে, যেখানে হয়তো কোনো উত্তর নেই, শুধুই একটা প্রশ্ন রয়ে গেছে…
কিছুক্ষণ এলিনা চুপচাপ জ্যাইমকে জড়িয়ে রেখেছিল। যেন এই নীরব আলিঙ্গনে তার সমস্ত যন্ত্রণা ঢেলে দিচ্ছিল। আর জ্যাইম, সে তো নিঃশব্দে সেই যন্ত্রণা নিজের বুকে টেনে নিচ্ছিল।
তারপর জ্যাইম আস্তে আস্তে বলে উঠলো—

“আমি চেষ্টা করেছিলাম এলিনা। অনেক চেষ্টা করেছি যাতে তোর আর দা’র বিয়েটা হয়। কিন্তু আমি বারবার ব্যর্থ হয়েছি। এখন আর আমার কিছুই করার নেই রে… দা ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলেছে। আমি চাইলেও কিছু বদলাতে পারবো না।
যদি পারতাম… তাহলে সব ঠিক করে দিতাম। তোর মুখে সেই চেনা হাসিটা ফিরিয়ে আনতাম। কিন্তু আমি তো নিঃস্ব, এলিনা। হাজারটা চাওয়া থাকলেও কিছুই করতে পারবো না।
তুই নিজেকে সামলা বোকা মেয়ে। ভালোবাসার জন্য কেউ মরে? আমি তোকে দা’র থেকেও হাজার গুণে ভালো কাউকে এনে দেবো বিয়ের জন্য। তুই নিজেকে ধরে রাখ। প্লিজ, এরকম ভেঙে পড়িস না…”
জ্যাইমের কথাগুলো শুনে এলিনা আস্তে করে তার ঘাড় থেকে মাথা তোলে। চোখে কোনো কথা নেই, শুধু নীরবতা। সেই নীরবতাই যেন একটা চিৎকার। আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না সে। ধীরে ধীরে পা বাড়ায় নিজের রাজ্যের দিকে।

জ্যাইম চেয়ে থাকে এলিনার চলে যাওয়ার পথের দিকে। দূরে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে তার সবচেয়ে আপন মানুষটা। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুগুলো আর ধরে রাখতে পারে না সে।
হঠাৎ পাশে থাকা একটা দেয়ালে জোরে ঘুষি মারে। সঙ্গে সঙ্গে হাতটা কেটে যায়। রক্ত পড়ার কথা ছিল… কিন্তু রক্ত ঝরে না। শুধু লালচে দাগ, আর ফেটে যাওয়া চামড়া।
জ্যাইম সেই ক্ষতবিক্ষত হাতটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। তারপর নিজেই নিজের কাছে অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে—

“সব ক্ষত থেকে রক্ত ঝরে না আর নাই…
সব ক্ষত চোখে দেখা যায় না।
আর না দেখা ক্ষতের ব্যাথ্যাটাও খুব বেশি।
কারণ, সেটাতে না ওষুধ লাগানো যায়। আর নাই সারিয়ে তোলা।
ওটা সবসময় ওরকম ক্ষতই থেকে যায়। ঠিক এরকমই কিছুটামন ভাঙার ব্যাথ্যা সেটা তুই বুঝবিনা দা, কারণ মন তো আমার ভেঙেছে তোর না।
তারপর নিঃশব্দে রাতের আকাশের দিকে চেয়ে থাকে সে। যেন আকাশও আজ তার ব্যথা বুঝে গেছে।

পারস্য রাজ্যের আকাশ যেন আজ অন্যরকম এক আলোয় ভেসে আছে। দূরের পাহাড় থেকে মৃদু ধোঁয়ার মতো মেঘ নেমে এসেছে, সূর্যের প্রথম কিরণ ঠিক যেন সোনার মত ঝলমল করে জেগে তুলেছে সমগ্র প্রাসাদকে। আজকের দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতো নয়। আজ এই রাজ্যের বুকে রচিত হতে যাচ্ছে এক নতুন ইতিহাস—বাদশা ওয়াজফান আর মানবকন্যা রাজকন্যা অর্ষার মহা-বিবাহ।
চারিদিকে উৎসবের ছোঁয়া। রাজপ্রাসাদের প্রতিটি প্রাচীর যেন কথা বলে উঠছে—প্রাচীন শিলালিপির মতো মুগ্ধ করা এক প্রেমকাহিনির। প্রাসাদের প্রতিটি ধাপে সাজানো হয়েছে রক্তরঙা গোলাপে, কোথাও কোথাও ঝুলছে সোনালি ঝাড়বাতি, যা সূর্যের আলোয় ঠিক যেন আগুনে পোড়া সোনা।
নৃত্যরত দাসীদের পদধ্বনিতে উঠোন কেঁপে কেঁপে উঠছে। ঢোল, শঙ্খ, তবলা আর সরোদ—সুর আর ছন্দে যেন দোল খাচ্ছে রাজ্যজুড়ে এক অপার প্রেমের আহ্বান।

অর্ষার জন্য আনা হয়েছে এক বিশেষ রাজকীয় বেনারসী লাল লেহেঙ্গা—যেটা চোখে পড়লেই মনে হবে, ঠিক যেন সেই লেহেঙ্গার জমিনে সূক্ষ্ম সোনালি জরির কাজ, প্রতিটি আঁচলের শেষ প্রান্তে সূচিশিল্পীরা মুছে দিয়েছেন নিজের নিঃশ্বাস—এমন নিপুণ, এমন পূর্ণতা।
তার মাথার ঘোমটাটি ছিল টুকটুকে লাল, তার উপর সূর্যরশ্মির মত খেলা করছিল সোনার জরির কাঁচমালার কাজ। যেন তার মাথায় নামানো হয়েছে রক্তচাঁদের নরম আলো।
অর্ষার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে রাজসভা , যেটা সাজানো হয়েছে বাংলাদেশি ঐতিহ্য আর পারস্যের রাজকীয়তার মেলবন্ধনে। কক্ষে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন রূপকথার কোন পরী এখানে বসবাস করে।
সাজসজ্জার দায়িত্বে ছিল পারস্য রাজ্যের বিখ্যাত কসমেটিক শিল্পীরা। ঠোঁটে হালকা গোধূলির ছোঁয়া, চোখে এক অনন্ত বিষণ্নতা আর অহংকারের সমান মিশ্রণ—যেন এক রাজ্যের রাণী হয়েও আজ তার মন খালি, বুক ভরা ভালোবাসায়।

সাজতে সাজতে আয়নার দিকে তাকায় অর্ষা—নিজেকে দেখে চমকে ওঠে। আয়নায় সেই সাধারণ মেয়েটাকে আর খুঁজে পায় না। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক রাজরানী—একজন প্রেমিক পুরুষের অপেক্ষায় থাকা নববধূ, যার হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে ভয়, ভালবাসা আর আত্মসমর্পণের এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব।
আর অন্যদিকে ওয়াজফান বসে আছে নিজের রাজসভায় তার পরনে, শেরওয়ানি, মাথায় সোনালী পাগড়ি, চোখে সেই পরিচিত আগুনের ঝলক।

কাজী সাহেব একাকী বসে আছেন নিজের অফিসে। কাগজপত্রে মনোযোগ, কিন্তু হঠাৎ এক অদ্ভুত ঠাণ্ডা হাওয়ার পর তার চোখ চমকে ওঠে। সামনে, যেন হাওয়া থেকে উদ্ভব হয়ে, দাঁড়িয়ে আছে এক লম্বা, চোরা গড়নের যুবক—রীতিমতো অপূর্ব সুন্দর তার চেহারা, চোখে এক অচেনা দীপ্তি।
হঠাৎ ছেলেটিকে দেখে কাজী সাহেব ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে ওঠেন,
—“আ… আপনি এখানে এলেন কীভাবে? গেট তো লক করা ছিল!”
ছেলেটি মৃদু হেসে উত্তর দেয়,

—“তোমাদের মত মানবদের দরজা দিয়ে আসতে হয়… আমাদের নয়।”
কাজী সাহেব থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করেন,
—“কে আপনি? কেন এসেছেন এখানে?”
—“আমি একজন জিন,” ছেলেটি বলে, “আপনাকে এখান থেকে তুলে নিতে এসেছি।”
কাজী সাহেব তো অবাক, আতঙ্কে গলা শুকিয়ে আসে,
—“আরে মিয়া, আপনি মজা করছেন নাকি? জিন আবার মানুষের মতো দেখতে হয় নাকি?”
ছেলেটি কিছু না বলে কাজী সাহেবের হাত ধরে, হঠাৎই দু’জনেই মাটি ছেড়ে ওপরে উড়ে উঠতে শুরু করে। নিজেকে এরকম আকাশে ভেসে যেতে দেখে কাজী সাহেবের প্যান্ট তো প্রায় ভিজেই যায়!
আর আপনাকে দুই আঙ্গুল দিয়ে বালে,
উমহুম! কিরে তুই মুইতা দিছোছ। তোরে আকাশে উঠায়া হারতে পারি নাই আর তার মধ্যেই তুই কাম ছারছোছ।
কাজী সাহেব আয়রাক এর কথায় পাত্তা না দিয়ে
ভয়ে কাঁপা গলায় বলেন,

—“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
—“জাহান্নামে,” ছেলেটি শান্তভাবে উত্তর দেয়।
—“আপনি কি জান কবজের ফেরেশতা? আমার জান নিতে এসেছেন নাকি?”
—“ফেরেশতা না আমি, আমি জীন,” আয়রাক স্পষ্ট করে বলে।
কাজী সাহেব চোখ কুঁচকে দেখে, এবার তার মাথায় ভিন্ন এক সংশয় ভর করে।
—“কি! আপনি সত্যিই জিন! শুনেছি জিনেরা নাকি সুন্দর সুন্দর মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে… এখন তো দেখছি আপনি একজন সুন্দর ছেলেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন!”
ভয় আর কৌতুক মেশানো কণ্ঠে আবার বলেন,

—“তাহলে এখন কি জিনদের মধ্যেও লেসবিয়ান বের হইছে? আপনি কি একজন লেসবিয়ান জিন? ছি ছি ছি… ছেলেরা ছেলেদের ভালোবাসে আজকাল? আমার ঘরে বউ পোলাপান আছে ভাই! ছেড়ে দেন প্লিজ!”
আয়রাক “লেসবিয়ান” শব্দটা আগে কখনও শোনেনি। মুখে কিছু না বললেও কাজী সাহেবের অতিমাত্রায় বিব্রত অভিব্যক্তি দেখে সে শব্দটির অর্থ খানিকটা আন্দাজ করতে পারে।
রাগ সামলে বলে,
—“আপনি কী বলছেন! আমি ওরকম হতে যাব কেন? আমি কোন লেসবিয়ান না। আমার রাজ্যে কি পরীর অভাব পড়েছে যে আমি কোন ছেলে বিয়ে করতে যাব!”
তবু কাজী সাহেব থেমে থাকেন না। ভয় এখনো যায়নি, তাই খোঁচানো তার চালু থাকে,

—“আচ্ছা, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে? কোন মেয়ে ক্রাশ আছে? নাকি মেয়েদের ভালো লাগেনা, ছেলেদের পছন্দ হয়?”
আয়রাক এবার চুপ। মনে মনে ভাবে, ‘এই পাগলটা থামবে কবে?’
কাজী সাহেব এবার মুখ চিপে গম্ভীরভাবে বলেন,
—“আমি বুঝে গিয়েছি, আপনি একজন লেসবিয়ানই।”
এইবার আয়রাক রাগে জ্বলে ওঠে। চোখের দৃষ্টি ছায়ার মত গাঢ় হয়ে আসে।
গলা শক্ত করে বলে,

—“আইজ পথমবার কইছস, তাই মাফ কইরা দিলাম। দ্বিতীয়বার যেদিন কইবি, ঐদিন তোর জিব্বা ডারে টাইনা বাইর কইরা ওজন করমু।
এবার কাজী একটু ভয় পায় তবুও কাজী সাহেব থামেন না, তার ঘ্যানঘ্যানানি চলতেই থাকে।
আয়রাক হঠাৎই রেগে গিয়ে কাজী সাহেবের হাতটা ছেড়ে দেয়, আবার হুট করেই ধরে ফেলে।
রাগান্বিত গলায় হুঁশিয়ারি দেয়,
—“আর যদি একটা শব্দও মুখ দিয়া বাইর হয়, তাইলে তোর হাতটা পুরোপুরি ছেড়ে দিব… তারপর নিজেই বুঝবি কই নামাসি।
আর কিছু বলার আগে, ভয়ে কাজী সাহেব এবার মুখে তালা মেরে ফেলেন। শুধু মাথা নেড়ে ঘন ঘন ‘না না’ বলতে থাকেন।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আয়রাক রাজ্যে এসে পৌঁছায়। সঙ্গে করেই নিয়ে আসে ভয়ে কাঁপতে থাকা কাজী সাহেবকে। রাজ্যপ্রাসাদের রাজসভায় ঢুকেই আয়রাক সরাসরি ওয়াজফান-এর সামনে হাজির করায় তাকে।
ওয়াজফান তখন রাজসিংহাসনে বসে আছেন, গা জুড়ে রাজকীয় বিয়ের পোশাক। ঠিক তখনই তার নাকে এক বিশ্রী গন্ধ এসে লাগে—মুখ কুঁচকে যায় তার। হাত দিয়ে নাক চেপে রাখেন সে। বিরক্তিতে বলেন,
—“উমহুম! ভীত মানব কোথাকার! সামান্য ভয়েই প্যান্ট ভিজে গিয়েছে। যাও, যাও! আগে পাক-পবিত্র হয়ে এসো। তারপর না হয় আমার বিয়ের কাজ শুরু হবে।”
আয়রাক কিছু না বলে চুপচাপ কাজী সাহেবকে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যায়। তার হাতে এক জোড়া কাপড় ধরিয়ে দিয়ে বলে,

—“ফ্রেশ হয়ে নিন।”
কাজী সাহেব থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলেন,
—“এই মুহূর্তে আমাকে কাপড় না দিয়ে বরং আমার বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে আসো! এই ভয়ের মধ্যে থাকলে তো নিজের চাপ আটকে রাখতে পারবো না… বারবার প্যান্টই নষ্ট হবে! কতগুলো প্যান্ট দিবেন চেঞ্জ করতে?”
আয়রাক ঠাণ্ডা মুখে বলে,

—“তাহলে চাপ যাতে না আসে, তার ব্যবস্থাই করছি। এক কাজ করি—আপনাকে দ্বিতীয়বার মুসলমানি করিয়ে দেই। তবে এবার একটা কাটা না… দুটোই কাটা হবে। তখন ঠিকই চাপ সামলাতে পারবেন।”
এই বলে আয়রাক কোনো রকমে বিরক্তির সাথে কাপড়টা তার হাতে ধরিয়ে বাইরে বের হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর কাজী সাহেব নতুন পোশাকে, খানিকটা ভয়ে চুপসে গিয়ে আবার রাজসভায় এসে হাজির হন। সেখানে তিনি ওয়াজফানকে বিয়ের সাজে বসে থাকতে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলেন,
—“তাহলে আসল লেসবিয়ান আপনি নাকি? আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চলেছেন? আমার বউ আছে ভাই, প্লিজ, আমাকে বিয়ে করবেন না!”
এমন কথা শুনে পুরো সভা স্তব্ধ। ওয়াজফান কিছুটা হতভম্ব হয়ে চোখ বড় করে তাকান। আর আয়রাক চুপিসারে মুচকি হেসে ওঠে।
ওয়াজফান কপালে হাত দিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলেন,

—“কি বলছেন আপনি! নাউজুবিল্লাহ! আমার ঘরে সুন্দরী বউ থাকতে আমি কেন আপনাকে বিয়ে করতে যাবো? তবে হ্যাঁ—যদি আপনি এই ‘শব্দটা’ আরেকবার উচ্চারণ করেন, তবে সত্যি সত্যিই আপনাকে আয়রাকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেবো!”
পেছনে দাঁড়ানো আয়রাক হঠাৎ কাশতে কাশতে বলে ওঠে,
—“কি বলছেন এটা বাদশাহ!”
ওয়াজফান হেসে বলে,

—“আরে তুই ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি তো এমনি বললাম।”
এবার কাজী সাহেব একটু গম্ভীর গলায় বলে ওঠেন,
—“তাহলে আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে?”
আয়রাক তখন কিছুটা বিব্রত মুখে উত্তর দেয়,
—“আমাদের জীনে বাদশাহের বিবাহর জন্য।”
তারপর সে চোখ রাঙিয়ে বলে,
—“আর একটা কথা বললেও আপনার জিব কেটে ফেলবো।”
ওয়াজফান কে আজ এরকম মেজাজে দেখি পুরো রাজপ্রাসাদ এর সবাই অবাক। আজ যেন তারা নতুন ওয়াজফান কে দেখছে।
চারদিকে শান্ত কিন্তু ঠিক তখনই ওয়াজফান আবার নিজের আগের রূপে ফিরে যায় সেরা আগে কন্ঠে বলে ওঠে,

আজ আমার বিয়ে বলে আমি এতটা শান্ত মেজাজ আছি তাই বলে আমার এই রূপ দেখে কেউ আবার প্রশ্রয় পেয়ে যেও না। আজ আমার মিজাজ ভালো আছে আর তা না হলে এতক্ষণ এখানে যে সবকিছু হয়েছে তাতে এখানে কয়েকটা লাশের বন্যায় বয়ে যেত। আমি চাইনা আমার বিয়েতে এরকম কিছু হোক যাতে অর্ষার মন খারাপ হয়। তাই তার জন্য আজকের দিনটা হাসিখুশি কাটাতে চাই। তাই আজকের দিনটা সবার জন্য ছাড় দিচ্ছি। আমার বিয়ে উপলক্ষে সবাই হাসিখুশি আজকের দিনটা কাটাও আর আমাকে কেউ রাগতে বাধ্য করো না।

ওয়াজফান দাসীকে ইশারা করে।
দাসী ও ওয়াজফানের ইশারা বোঝা যায়—
আর ইসাবেলাকে যে বলে অর্ষা কে নিয়ে নিচে যেতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সিড়ি বেয়ে,
ইসাবেলার হাত ধরে নিচে নেমে আসে অর্ষা।
তার মাথায় লম্বা ঘোমটা টানা।
তাকে সাজানো হয়েছে পুরো রানীদের মতো করেই।
ওয়াজফান উঠে—
অর্ষাকে নিয়ে এসে নিজের পাশের সিংহাসনে বসায়।
তারপর…
অর্ষার মুখে টানা ঘুমটাটা তুলে দেয়।
অর্ষার চেহারা দেখে ওয়াজফান তো পুরোই ফিদা,
দ্বিতীয়বার যেনো আবার নতুন করে তার নেশায় নিজে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
ওয়াজফান কিছু সময় আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অর্ষার দিকে।
এর মধ্যে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
সেই গন্ধ সোজা এসে লাগে ওয়াজফানের নাকে। আর অর্ষা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
সঙ্গে সঙ্গেই—

একটা জোরে বজ্রপাতের মত শব্দ হয়!
রাজসভায় উপস্থিত সবাই মুহূর্তেই বুঝতে পারে—
এখন এখানে শব্দ ও বায়ু দূষণ কে ছড়িয়েছে!
ওয়াজফান, বেচারা…
তার এমন এক সুন্দর মুহূর্ত
এরকম দুর্গন্ধ দিয়ে নষ্ট করে দিলো কাজী সাহেব।
ওয়াজফান অনেক বেশি রেগে যায়।
তবুও, নিজের রাগ কন্ট্রোলে রেখে
কাজী সাহেবের দিকে তাকিয়ে কড়া সুরে বলে—
“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”
কাজী সাহেবের হাত পা তখন কাঁপছে।
ঠিক তখনই আবারও সেই বজ্রপাতের মতো শব্দ!
আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে
আরো বেশি বাজে, সহ্য-অযোগ্য দূর গন্ধ।
ওয়াজফান এবার আর সহ্য করতে না পেরে রেগেমেগে বলে—

**“কাজীর বাচ্চা!
কি মরা পচা খাইছোস?
উমহুম! কি গন্ধ!
কন্ট্রোল রাখতে পারছ না?
কি ধুপ ধাপ দিয়াই যাইতাসোস!
এরেকবার গন্ধ পেলে ডিরেক্ট কেটে দেবো—
তাহলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে!
বালের ভালো মুড টারেই নষ্ট করে দিলো।
বিয়ে শুরু কর হালার পো!”**
কথাটা বলে ওয়াজফান দাসীর দিকে তাকায়।
তারপর আদেশ করে—
“এখানে সুগন্ধি ধূপ ছড়ানো হোক।”
বাকি সবাই মিটি মিটি হাসছে।
কাজী সাহেব ভয়ে ভয়ে বলে,
“একটা খাতা ও কলম লাগবে…”
ওয়াজফান চোখ তুলে তাকায় আয়রাকের দিকে।
একটুও দেরি না করে আয়রাক দ্রুত উঠে যায়,
খাতা আর কলম এনে পৌঁছে দেয় কাজী সাহেবের হাতে।

এরপর—
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।
তবে কণ্ঠে বেশ ভয়, জড়তা ভরা সুর।
কাজী সাহেব (ভয়ে ভয়ে):
“বাবা, দেনমোহর কত বাঁধবো?”
ওয়াজফান:
“লিখুন—
ওয়াজফান কায়াস্থ এর সবটুকু নিশ্বাস।
যা অর্ষা নিজের সাথে সবসময়ই পাবে।
আর হ্যাঁ—
অর্ষা কায়াস্থ যেই মুহূর্তে নিজের নিশ্বাস ত্যাগ করবে,
ওয়াজফান কায়াস্থ ও ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের সবটুকু নিশ্বাস ত্যাগ করবে সঙ্গে সঙ্গে।
আমি নিশ্বাস সেই পর্যন্ত নিতে চাই যতদিন পর্যন্ত আমার লিটল মনস্টার নিশ্বাস নেবে।
এই কথাটা শুনে অর্ষা কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পড়ে।
এতোক্ষণ যাবৎ তার মনটাই খারাপ ছিলো।
আজকের দিনে নিজের পাশে মা-বাবাকে ভীষণভাবে মিস করছে সে।

হুট করেই কাজী সাহেব বলে ওঠে—
“নিশ্বাস এটা আবার কোনো দেনমোহর হলো নাকি!
এটা দেনমোহর হিসেবে গণ্য করা হবে না।
অন্য কিছু বলুন।”
ওয়াজফান (রাগে ঠাণ্ডা গলায়):
“তাহলে লিখুন—
কাজী সাহেবের মাথা, কল্লা, কলিজি ভুনা।
আর দেনমোহর পুরোটাই উসুল—
কারণ বিয়ে পড়ানো শেষ হলে সত্যি এগুলোকেই ভুনা করে খাওয়া হবে!”
কাজী সাহেব আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে।
ভয়ে ভয়ে বলে—

“তুমি ভুল বুঝছো বাবা,
আমি ওরকমভাবে বলিনি।
আমি বলতে চাচ্ছিলাম, আমাদের নিয়মে দেনমোহর হয় টাকা দিয়ে।
তাই যদি বলেন, কত টাকা?
আচ্ছা, সমস্যা নেই,
তুমি যেহেতু এটা বলছো, তাহলে আমি এটাই লিখছি।
ওয়াজফান:
“আচ্ছা দারান—

Death or Alive part 21

আমি যেটা বলেছি, সেটার সঙ্গে আরও কিছু এড করতে চাই।
লিখুন—
৭২ লাখ।”
এটা শুনে অর্ষা একটু লাজুক চোখে তাকায় ওয়াজফানের দিকে।
কারণ এই “৭২ লাখ” এর মানে আর কেউ না বুঝলেও—
সে ঠিকই বুঝেছে…
অর্ষা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।মনে মনে বলে এই পাগল লোক কি বলছে এইসব।

Death or Alive part 23

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here