Death or Alive part 23

Death or Alive part 23
priyanka hawlader

একদিকে পারস্য রাজ্যে চলছে খুশির বহিঃপ্রকাশ,
আর অন্যদিকে মেসোপটেমিয়া রাজ্যে নেমে এসেছে কিছুটা কষ্টের ছায়া।
সেই রাজ্যেই এখন অবস্থান করছে জ্যাইম।
কারণ, সে থাকতে চায় না সেই বিয়েতে—
যেখানে তামশাহ হবে না,
নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে কষ্টে দেখে
আর এখানে যে তাকে কষ্ট দিয়েছে,
তারই বিয়েতে উপস্থিত থাকার কোনো মানেই হয় না তার কাছে।
সে এখন ব্যস্ত—

ভালোবাসার মানুষটিকে সামলাতে।
এলিনার কান্নায় যেন মেসোপটোমিয়া রাজ্যের আকাশটাই ভারী হয়ে উঠেছে।
চাঁদের আলো আজ যেন মেঘে ঢাকা, আর বাতাসে মিশে গেছে এক নিঃশব্দ হাহাকার। কান্না নয়—এ যেন আত্মার আহাজারি, যার প্রতিটি ধ্বনি বাতাস কাঁপিয়ে দিচ্ছে। মেয়েকে এরকম অবস্থায় দেখে এলিনার বাবার অনেক কষ্ট হচ্ছে আর সাথে ওয়াজফানের ওপর রাগ ও হচ্ছে কিন্তু তার কিছুই করার নেই সে জিনের বাদশার মুখের উপর কিছুই বলতে পারবে না।
আর অন্য দিকে এলিনার এই কষ্টের মধ্যে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য তো আছেই মালালালা। সে নানা কথায় এলিনার এই কষ্টে ভরা মনটাকে আরো বেশি বিষিয়ে দিচ্ছে।
রুমের ভেতর এলিনা দগ্ধ কণ্ঠে চিৎকার করছে।
আর জ্যাইম…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জ্যাইম তাকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে আলতো হাতে শান্ত করতে চাইছে—
কিন্তু প্রতিটি কান্নার ধ্বনি, প্রতিটি কষ্টের টান যেন ছুরির মতো বিঁধে যাচ্ছে তার বুকের গভীরে।
সে এলিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
“পাগল হয়ে গেছিস তুই?
এমন করছিস কেন? শুধু একজনের জন্য নিজের জীবনটা ধ্বংস করছিস,
তুই তো এমন ছিলিস নারে ,
তুই তো আমার এলিনা—স্ট্রং গার্ল!
নিজেকে সামলা প্লিজ…”
এলিনার চোখে তখন কান্না নয়, এক অদ্ভুত নিষ্পলক শূন্যতা।
সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো—
“তুই আমার কষ্টটা বুঝবি না জ্যাইম।
কারণ তুই কখনও নিজের চেয়েও বেশি কাউকে ভালবেসিস নি।
তাই হারানোর এই বিষ যে কতটা যন্ত্রণা দেয়, সেটা তোর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়…”
জ্যাইম স্তব্ধ হয়ে গেল।
চোখের কোনায় কষ্ট লুকিয়ে ধীরে মনে মনে বলে,
“আমি বুঝব না?

আমি তো নিজের হাতে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে তুলে দিয়েছি অন্য কারো কাছে।
এই ব্যথা… আমার চেয়ে বেশি কে বুঝবে বল?”
তার গলা কেঁপে ওঠে, কিন্তু চোখে জল আনতে দেয় না।
সে আবারও এলিনার দিকে এগিয়ে এসে বলে—
“দেখ, আমি তোর কষ্টটা বুঝতে পারছি… কিন্তু প্লিজ এরকম জেদ করিস না।
তুই যদি এভাবে চলিস, তোর শরীরটাই ভেঙে পড়বে।
তোর পরিবার তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে।
তাদের কথা ভেবেও নিজেকে শক্ত কর।
আর বিশ্বাস কর, একদিন আল্লাহ তোকে এমন কাউকে পাঠাবেন

যে তোর চেয়ে
ও বেশি তোকে ভালোবাসবে।
যার ভালোবাসায় কোনো ছায়া থাকবে না।”
এলিনা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
তার কণ্ঠে কেবল একটাই উত্তর:
“আমার কাউকে চাই না জ্যাইম…
আমি শুধু ওয়াজফানকে ভালোবেসেছি…
আর আমার শুধু ওকেই দরকার।”
এই কথাগুলো…

জ্যাইমের হৃদয় যেন ছিঁড়ে গেল ভেতর থেকে।
এক মুহূর্তে এলিনাকে ছেড়ে দেয় সে—
পেছন ফিরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু পরমুহূর্তেই…
আবার ফিরে এসে তার প্রিয় বন্ধুটাকে আগলে নেয়।
কারণ প্রেম যদি ভাঙেও…
বন্ধুত্ব ভাঙে না।

দীর্ঘ সময়ের প্রতীক্ষার পর অবশেষে এসে পৌঁছেছে সেই পবিত্র মুহূর্ত—
কবুল বলার পালা।
কাজী সাহেব প্রথমে অর্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে ওঠেন—
“মা, তুমি কি বিয়েতে রাজি আছো? থাকলে বল—
কবুল, কবুল, কবুল…”
অর্ষা নিঃশব্দে বসে আছে।
তার মাথা নিচু, দৃষ্টি মাটির দিকে নিবদ্ধ।
মনের ভেতরে ঝড় চলছে—
আজকের এই দিনেও তার মনটা যেন ভারে ডুবে আছে।
দেশকে মনে পড়ছে খুব বেশি…
মা-বাবার কথা যেন মুহূর্তে বুকে এসে আছড়ে পড়ছে।
আর সেই বেদনাই

তার চোখ বেয়ে নেমে এনেছে অশ্রুর ঝরনা।
ওয়াজফানের চোখে পড়ে যায় সেই অশ্রু।
এক মুহূর্ত দেরি না করে
সে উঠে দাঁড়ায়,
তারপর এসে হাঁটু গেড়ে বসে অর্ষার সামনে।
তার হাতে আলতো ছোঁয়ায় মুছে দেয় অর্ষার কান্না,
আর খুব কোমল সুরে জিজ্ঞেস করে—
“কি হয়েছে, বাচ্চা আমার? কাঁদছো কেনো?”
অর্ষা কিছুক্ষণ নীরব থাকে।
মনের ভিতরের ভার যেন ঠাঁই খুঁজে বেড়ায় ঠোঁটের ভাষায়।
শেষমেশ সে ভাঙা কণ্ঠে, কাঁদো কাঁদো সুরে বলে ওঠে—
“আজকের এই দিনে বাবা-মাকে খুব বেশি মনে পড়ছে আমার।
ইস… তারা যদি আমার পাশে থাকতো,
আজ কতই না ভালো হতো!”

ওয়াজফান হালকা হাসে, তার চোখে মায়া।
“ও এই কথা? আচ্ছা, তাহলে এবার ঝট করে কবুলটা বলে ফেল।
তারপর আমাদের বিয়ের পরে
আমি তোমাকে তোমার বাবা-মার কাছে নিয়ে যাব।
তাহলে এখন দেরি না করে,
তাড়াতাড়ি কবুলটা বলে ফেলো দেখি।”
অর্ষা নিঃশব্দে বসে থাকে আরেকটুক্ষণ।
তারপর নিচু মাথায়,
নিম্ন সুরে,
মৃদু কণ্ঠে বলে ওঠে—
“কবুল… কবুল… কবুল!”
কাজী সাহেব বলতেই যাচ্ছিলেন—
“আচ্ছা বাবা…”
ঠিক তখনই ওয়াজফান তার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে
এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে—
“কবুল, কবুল, কবুল!”
কাজী সাহেব:

“আলহামদুলিল্লাহ, বিয়ে সম্পন্ন।”
তারপর একটু হেসে বলে ওঠেন—
“আচ্ছা, আপনি যদি অনুমতি দিতেন,
তাহলে এতক্ষণ চেপে রাখা ভারসাম্যগুলো ছাড়তে পারতাম।”
ওয়াজফানের মুখের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়।
তার চোখ রাগে লাল হয়ে ওঠে।
সে এক দৃষ্টিতে কাজী সাহেবের দিকে তাকায়।
কাজী সাহেব ভয়ে চোখ সরিয়ে নেয়,
জিভে যেন তালা পড়ে যায়।
ওয়াজফান এবার ঘুরে তাকায় আয়রাকের দিকে।
তার গলায় রাগান্বিত, শীতল হুঁশিয়ারি—
“এটাকে এর দুনিয়ায় ফেলে দিয়ে আয়।
আজ ওর ভাগ্য ভালো—
আমার বিয়ে বলে আমি ভালো মেজাজে ছিলাম,
তাই একে না মেরেই ছেড়ে দিচ্ছি।”
আয়রাক মাথা ঝুঁকিয়ে আজ্ঞাবহ ভঙ্গিতে কাজী সাহেবকে নিয়ে চলে যায়।
প্রাসাদ ছাড়ার আগে—
সে এমনভাবে কাজী সাহেবের সমস্ত স্মৃতি মুছে দেয়,
যেন এই রাজ্যে তিনি আর কোনোদিন ছিলেনই না।

কাজী সাহেব নিজের কেবিনে দাঁড়িয়ে আছেন—নীরবতা যেন ঘন কুয়াশার মতো তার চারপাশে ঘিরে রেখেছে।
তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে, অথচ কেবিনে এসির ঠাণ্ডা বাতাস ভেসে বেড়াচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। কেবল কিছুক্ষণ আগেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ধূসর স্মৃতি যেন কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে তার চেতনায়। যেন সে এক অচেনা ঘোরে ডুবে ছিল, আর এখন ধীরে ধীরে বাস্তবতার আলোতে ফিরছেন।
তিনি চোখ মুছলেন ধীরে, টেবিলের ওপর হাত রাখলেন—আঙুলের স্পর্শে যেন কিছুটা স্থিরতা পেলেন।
“আমি এখানে… কেন এসেছি?” — মৃদুস্বরে যেন নিজেকেই প্রশ্ন করলেন।
কানভর্তি এক অজানা শব্দ, এক চাপা গুঞ্জন যেন তাকে বারবার বিভ্রান্ত করে তুলছিলো। সেই অদ্ভুত যন্ত্রণাটাও মাথায় আবার ফিরে এসেছে। যেন কারো অদৃশ্য হাত বারবার মগজটা চেপে ধরছে।
হঠাৎই আবার —বজ্রপাতের মতো ছড়িয়ে পড়ে সেই শব্দ।

এইবার তার মুখে প্রশান্তির এক অদ্ভুত হাসি ফুটে ওঠে।
“আহ্… কি শান্তি!” — চোখ বন্ধ করে বলে উঠলেন,
“মাথাব্যথা তো যেন… একটু হ্রাস পেল।”
এই কথার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সময় থেমে যায় এক নিঃশব্দ মুহূর্তে।
তারপর ধীরে ধীরে তিনি চেয়ারে বসে পড়েন। পেনটা তুলে নেন, চোখ নামিয়ে দেন টেবিলের উপর ছড়ানো নথিপত্রে।
মাথার ভেতরকার গুঞ্জন, সেই বিভ্রান্তি, সেই অস্থিরতা—সব পেছনে ফেলে তিনি আবারও ডুবে গেলেন পরিচিত কর্মজগতের ব্যস্ততায়।

ওয়াজফান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। তারপর একবার গভীর দৃষ্টিতে অর্ষার শান্ত মুখের দিকে তাকায়।
তার চোখে তখন অদ্ভুত এক কোমলতা, যা কেবলমাত্র এই মেয়েটির জন্যই সংরক্ষিত।
একপলকে তাকিয়েই যেন সমস্ত যুদ্ধ, সমস্ত জেদ নিঃশেষিত হয়ে যায়।
সে একটু ঝুঁকে আসে, তারপর অর্ষার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়—
মৃদু, নিঃশব্দ এক চুম্বন, যেন প্রাচীন কোনো প্রতিজ্ঞার মতো।
তার ঠোঁট ছুঁতেই অর্ষার নিঃশ্বাস কেঁপে ওঠে।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, সে গভীর গলায় ইসাবেলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— “অর্ষাকে রুমে রাখো আসো। ”

ইসাবেলা কিছু না বলে মাথা নেড়ে অর্ষার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর তাকে রুমে দিয়ে ইসাবেলা নিজের রুমে চলে যায়।
ওয়াজফানের ছায়া তখন আরেক দিকে অগ্রসর,
যার বুকের মাঝে এখন অদ্ভুত এক কাঁপুনি।
কারণ সে জানে, এই রাত্রি যেন কেবল শুরু…
আর অর্ষা— সেই অজানা শুরুতে নিঃশব্দ এক চরিত্র।

ওয়াজফানের কক্ষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা।
নরম আলোয় ভেসে থাকা সেই ঘর এখন কেবল ওয়াজফানের নয়—এখন সেটিই তার নিজের ঘর, তার নতুন জীবনের প্রথম আশ্রয়।
তার শরীরে এখনো বিয়ের সাজ, গায়ে ঝলমলে অলংকারের ঝঙ্কার, চোখে এক অনির্বচনীয় দ্বিধা।
সে ধীরে এগিয়ে যায় বারান্দার জানালার কাছে। বাতাসে হালকা শিরশিরে ঠান্ডা, দূরে গাঢ় আকাশে তারার ঝিলিক।
অর্ষা তাকিয়ে থাকে সেই নক্ষত্রবিন্দুগুলোর দিকে, যেগুলো সাক্ষী থাকবে তার জীবনের নতুন অধ্যায়ে।
তার মনের গহীনে তোলপাড় করা চিন্তা…

“মা… বাবা… তোমরা কি মেনে নেবে এই বিয়ে?
আমার এই বন্দিত্বমাখা ভালোবাসা?”
ঠিক সেই মুহূর্তেই—
তাকে ছিন্ন করে তার ভাবনার জটিলতা,
সে অনুভব করে—
একটা দৃঢ় হাত আলতো করে এসে রাখা হয়েছে তার কোমরের ওপর, তারপর ধীরে এসে তার পেটে।
সে জানে, সে বুঝতে পারে, কে এই স্পর্শের মালিক।
এটা ওয়াজফান।
সেই পুরুষ, যার চোখে আগুনের দাবানল—
যার ভালোবাসায় লুকিয়ে আছে দখলদারি, বুনো উন্মাদনা, আর এক অন্ধ তৃষ্ণা…
অর্ষার নিঃশ্বাস থমকে যায়।
তার মনে হয় যেন তার পেছনে দাঁড়ানো মানুষটি আরেকটা ভাষায় বলছে—

“তুমি শুধু আমার… আমার একার…”
ওয়াজফান অর্ষাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
“কি হয়েছে আমার লাড্ডু? মন খারাপ?”
তারপর আকাশের দিকে ইশারা করে বলে,
“চলো তোমার মন ভালো করে দেই… ঘুরতে যাবে ওই আকাশের বুকে?”
ওয়াজফানের কথায় অর্ষা অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়,
“আকাশের বুকে আবার কিভাবে ঘুরতে যায়?”
ওয়াজফান হেসে বলে,

“আমি তো মানুষ না, এটা ভুলে গেলে? আমার প্রথম আকাশের উপর পর্যন্ত যাওয়ার অধিকার আছে।
চলো, আজ তোমাকে ও ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। তবে তুমি যাও, যেয়ে আগে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে এসো।”
অর্ষা ওয়াজফানের কথামতো যেয়ে একজোড়া হোয়াইট জিন্সের প্যান্ট আর শর্ট টপ পরে ফিরে আসে।
ওয়াজফানও নিজের পোশাক পাল্টে নেয়—লম্বা একটা কালো পোশাক পড়ে, যেন সে এই রাতের অন্ধকারের অংশ হয়ে গেছে।
তারপর…

অর্ষা ওয়াজফানের পায়ের ওপর নিজের পা জোড়া রাখে।
ওয়াজফান ডানা মেলে দেয়…
আর ধীরে ধীরে…
উড়তে শুরু করে।
আকাশ ভেদ করে তারা উড়ে চলে—
ভালোবাসা, বিস্ময় আর এক অদ্ভুত বাস্তবতার ভেলায় ভাসতে ভাসতে…
আকাশের বুক চিরে ওয়াজফানের বাহনে উড়ে যাচ্ছে অর্ষা।
তীব্র বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে, চোখে জল টলমল করছে, কিন্তু সেই জল ভয়ের নয়—চমকে ওঠা এক রোমাঞ্চে ভেজা বিস্ময়ের।
অর্ষা দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে ওয়াজফানের গলা, যেন এই বিশাল আধারের মধ্যে পড়ে না যায়, যেন সেই একমাত্র আশ্রয় ও নিরাপত্তা।

আশেপাশে ছড়িয়ে আছে তারারা, এত কাছে, যেন হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যায়।
তার চোখে বিস্ময়ের ঝলক—
“এই আমি… এত ওপরে… তারার মাঝে… এটা স্বপ্ন তো না?”
কিন্তু ওয়াজফান?
তার দৃষ্টি একটুও আকাশের দিকে নয়।
তার দৃষ্টি আটকে আছে অর্ষার মুখে, তার চোখে, তার কাঁপা ঠোঁটে।
তার কাছে এই আকাশ, তারা—সবই তুচ্ছ।
সে শুধু তার “লিটল মনস্টার” কেই দেখতে চায়,
যার মোহে নিজের জগতের চেয়েও বেশি আসক্ত সে,
যার প্রতিটি প্রতিক্রিয়া তার জন্য মূল্যবান।
একটা ধীরে ছুঁয়ে যাওয়া হাসি ওয়াজফানের ঠোঁটের কোণে—
সে ফিসফিস করে, “তুমি আমার আকাশের সব থেকে উজ্জ্বল তারা… বাইরে কিছু দেখার দরকারই পড়ে না আমার।”
অর্ষা বিস্ময়ে তার দিকে তাকায়।

তার গাল লাল হয়ে যায়, চোখে লজ্জা আর একটা চাপা প্রশ্রয়ের ছায়া খেলে যায়।
সেই মুহূর্তটা যেন আটকে যায় সময়ের মধ্যে।
ওয়াজফানের চোখে নেমে আসে এক প্রকার ধূসর নেশা, যার ভাষা কেবল অর্ষার নিঃশব্দ দৃষ্টি বুঝতে পারে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, তার গভীর চোখ দুটি যেন অর্ষার অন্তর জগতের অজানা অলিন্দে প্রবেশের অধিকার দাবি করে।
একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, ওয়াজফান নরমভাবে অর্ষার ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়, যেন ফুলের পাঁপড়িতে প্রথম শিশিরবিন্দু ঝরে পড়ছে। তারপর এক অদ্ভুত উন্মাদনায় সে তার ঠোঁটকে চেপে ধরে, যেন সেই স্পর্শে চিরস্থায়ী করে রাখতে চায় অর্ষাকে।
হঠাৎ, অর্ষার গলায় মুখ ডুবিয়ে ওয়াজফান তার নিঃশ্বাস মিশিয়ে দেয় অর্ষার গায়ে। তার ঠোঁট একের পর এক চুমু আঁকে, কখনও কোমল, কখনও বুনো… যেন অর্ষা তার প্রিয় কবিতা, আর প্রতিটি শব্দ সে পড়ে নিচ্ছে তার শরীরে।

তবে অর্ষা সেই মোহাচ্ছন্নতা ভেঙে, ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে—
“কি করছেন আপনি? থামুন… এটা তো বেডরুম নয়!”
ওয়াজফান থমকে দাঁড়ায়। তারপর এক রহস্যময় হাসি নিয়ে অর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে—
“তাহলে চলো… বেডরুমে।”
তারপর যেন হাওয়ায় ভেসে চলে যায় সে, নিজেকে এক নিঃশব্দ অদৃশ্যতায় মিশিয়ে দেয় অর্ষার রুমের অন্ধকারে।

বেডরুমে এসে ওয়াজফান যেন সম্পূর্ণ অন্য এক উন্মাদ পাগল হয়ে যায়।
তার চোখ দুটো ঝড়ের মতো তীব্র, ঠোঁট চাপা উত্তেজনায় থরথর করছে।
অর্ষাকে কোল থেকে বিছানায় নামিয়ে সে নিজেও একটানে তার পাশে বসে পড়ে।
“তুমি জানো তো, তোমাকে পেলে আমি পাগল হয়ে যাই…”
তার গলায় ঝরা কণ্ঠ, চোখে লালচে উত্তেজনা।
অর্ষা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওয়াজফান তার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়।
চুমুটা প্রথমে ধীরে শুরু হলেও পরক্ষণেই তা হয়ে ওঠে তীব্র, দাবিয়ে রাখা আগুনের মতো।
তার হাত অর্ষার গলায়, ঘাড়ের কাছ দিয়ে ধীরে ধীরে কাঁধে নামতে থাকে।
অর্ষা আতকে উঠে। হঠাৎ তার টপের বোতাম খুলে দিতে গেলে সে দুহাতে ওয়াজফানের হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।

“কায়াস্থ… না… প্লিজ…”
তার কণ্ঠে ভয়, অস্থিরতা। চোখে জল টলটল করছে।
ওয়াজফান থেমে যায় না। তবে চোখে হঠাৎ এক অদ্ভুত ছায়া নেমে আসে।
তার কণ্ঠ বদলে যায়—আরও গভীর, আরও ঝাঁঝালো।
“কি হয়েছে জান? হাত ধরলে কেন?
আজ কিন্তু থামবো না।
আজ না কোনো না শুনবো, না নিজেকে আটকে রাখবো।”
সে এগিয়ে আসে আবারও, ঠোঁট আরেকবার অর্ষার গালে ছুঁয়ে যায়।
এবার অর্ষা ধীরে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে বিছানার কিনারে দাঁড়ায়। কণ্ঠে যেন কাঁপন, “আমি… আমি অসুস্থ, কায়াস্থ …

ওয়াজফানের চোখে বিরক্তির ছায়া নেমে আসে, “তুমি তো সেদিনও বলেছিলে অসুস্থ, আজ আবার? মিথ্যে বলছো, না? আমার থেকে পালাতে চাও তাই তো?”
অর্ষা মুখ নিচু করে ফেলে। খুব ধীরে বলে, “না… সত্যি। এখনো সাতদিন হয়নি…”
ওয়াজফান গভীরভাবে তার মুখের দিকে তাকায়। তারপর বলে, “আমি নিজে দেখে নিতে চাই… সত্যি না মিথ্যে।”

অর্ষা সাথে সাথে চোখ বড় করে তাকায়। মাথা নাড়ায় না বোঝাতে। তার গাল লাল হয়ে উঠছে লজ্জায়।
কিন্তু ওয়াজফানের মুখে তখনো কোনো নরমভাব নেই।
সে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে আসে, কিন্তু এবার অর্ষা পেছন দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় বাধা দেওয়ার জন্য। কণ্ঠে একটুও কাঁপন নেই এবার, “না প্লিজ না।”
এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায় ওয়াজফান। তার চোখে ভিন্ন কিছু ঝলক মেলে। সেই জেদ, সেই অধিকারবোধ… আর একটুখানি দ্বিধাও।
সে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ফিসফিস করে বলে,

“তোমার এই ‘না’… একদিন ‘হ্যাঁ’ হয়ে যাবে, আমি জানি। কিন্তু আজ না টা আমি মানছি না। এরপর এগিয়ে গিয়ে হাত রাখে অর্ষার জিনসে এরপর নিজে চেক করে।
অন্য দিকে অর্ষা লজ্জায় চোখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ওয়াজফান হঠাৎ রাগে ফেটে পড়ে দেয়ালে ঘুষি মেরে দেয়।
“ফাকিং পিরিয়ড! এই একটা জিনিস পুরো মুডটাই বরবাদ করে দিলো… বাল!”
তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠেছে, কপালের শিরাগুলো স্পষ্ট, চোখে জ্বলজ্বল করছে নিয়ন্ত্রণহীন রাগের আগুন।

রুমের নিরবতা থরথর করে কাঁপে তার পায়চারি আর ভারী নিঃশ্বাসে।
অর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে, ভয় পায়নি সে… বরং একটা অজানা কষ্টে গলে যাচ্ছে তার মন।
সে জানে—ওয়াজফান রেগে আছে, কিন্তু রাগটা আসলে নিজের অক্ষমতার ওপর।
সে চায় অর্ষাকে ছুঁতে, ভালোবাসতে… কিন্তু সে কষ্ট দিতে চায় না।
হঠাৎ থেমে যায় ওয়াজফান।
চোখ সরু করে তাকায় অর্ষার দিকে।
তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে…

একদম তার সামনে দাঁড়িয়ে গভীর এক দৃষ্টিতে দেখে।
চোখে যেন একরাশ রক্তমাখা অভিমান, অভ্যস্ত নিয়ন্ত্রণচ্যুত ভালোবাসা।
কোনো কথা না বলে ওয়াজফান হঠাৎ তাকে কোলে তুলে নেয়।
অর্ষা অবাক হলেও প্রতিবাদ করে না।
ধীরে ধীরে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
তারপর পাশে বসে কপালের ওপর ভোঁতা চুমু এঁকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে—
“আমি কিছু করছি না, জান।
তোমার কষ্ট আমি দেখতে পারি না…
এই সময়টায় তোমার শরীর ব্যথা পায়, মুড সুইং করে… আমি জানি।
তাই আজ কিছু করবো না।

তবে… আমি শান্তিতে ঘুমাতে চাই। আর এখন তাতে আটকাবে না আমায় একটুও।
কারণ… তোমার গায়ের গন্ধ না পেলে আমার ঘুম আসে না।
অর্ষা চোখ বন্ধ করে ফেলে।
তার ঠোঁটের কোণে নরম একটা হাসি খেলে যায়।
এই পাগল, উগ্র, রুক্ষ ছেলেটার ভিতরের কোমল মানুষটা কেবল সে-ই দেখে।
এরপর ওয়াজফান অর্ষার জামাটা খুলে ফেলে এরপর অর্ষার অন্তর্বাস এ হাত দিতেই অর্ষা কেপে উঠে চোখ দিয়ে না বুঝাতে চায় তবে ওয়াজফান তা শুনে না খুলে ফেলে সেটাও।
ওয়াজফান তার পাশে এসে শুয়ে পড়ে।
তাকে জড়িয়ে ধরে, মাথা রাখে অর্ষার বুকের উপর।

“আমি কিছু করবো না।
শুধু থাকবো তোমার খুব কাছে।
তুমি তো আমার শান্তি…” — ওয়াজফানের কণ্ঠে নরম নিঃশ্বাস।
রুমটা নিঃশব্দ হয়ে যায়।
একটা উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে দুজনের মাঝখানে।
তীব্র বাসনার মাঝে জন্ম নেয় এক শুদ্ধ ভালোবাসা… যেখানে শুধু স্পর্শ নয়, অনুভূতির ভাষাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে শক্তিশালী।
ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে যায় দুজন।

দু’দিন কেটে গেছে বিয়ের…
কিন্তু এই দু’দিনেই হাজার রকমভাবে অর্ষাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এক অন্যরকম অভ্যস্ততায় বেঁধে ফেলেছে ওয়াজফান।
সে কাঁদিয়েছে, পাগল করেছে, আবার ঠিক সেইভাবে আদরেও ভরিয়ে দিয়েছে।
আজ রাতে নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্ষা।
চোখে তার শান্ত এক আলোর রেখা, ঠোঁটে অন্যমনস্ক এক হাসি।
নিজেকে সে আজ আর আগের সেই অর্ষা বলে মনে করে না। যে ওয়াজফান থেকে পালাতে চাইতো,
এই দু’দিনে সে বুঝে গেছে…

ওয়াজফান তার নেশা। তার অভ্যেস। তার… ভালোবাসা।
হঠাৎই গলার কাছে একটা ঠাণ্ডা স্পর্শে কেঁপে ওঠে সে।
চোখ বন্ধ করে ফেলে নিজেকে।
এই স্পর্শ… এই হিমেল আঙুলের খেলা…
এটা কারো অন্য কারো হতে পারে না।
এটা শুধু তার ব্যক্তিগত পুরুষের — তার কায়স্থ সাহেবের।
পেছন থেকে ওয়াজফান জড়িয়ে ধরে অর্ষাকে।
তার কাঁধে মুখ গুঁজে, গলায় ঠোঁটের নরম আঁচড়ে ছুঁয়ে যেতে থাকে একের পর এক শিহরণ।
অর্ষার সারা দেহ বেয়ে ঝড়ের মতো কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ে।
“তুমি এখনো কাঁপো আমার ছোঁয়ায়,”

ওয়াজফানের গলা গভীর, রুক্ষ মোলায়েমতায় ভরা।
“এটাই প্রমাণ, আমি এখনো তোমার রক্তে নেশা হয়ে আছি।”
অর্ষা কিছু বলে না।
সে চুপচাপ নিজের অস্তিত্ব ওয়াজফানের জুড়ে দিয়ে দেয়।
তার হাত দুটো ওয়াজফানের হাতে বন্দি, গলা ওয়াজফানের ঠোঁটে, আর মন…?
মন তো অনেক আগেই বন্দি হয়ে গেছে এই পাগল পুরুষটির হৃদয়ে।
ওয়াজফান তার গলার চুমুগুলোকে আরও গভীর করে তোলে।
তার নিঃশ্বাসে বেড়ে ওঠে উন্মাদনা।
একটা পাগলামি মিশে যায় ভালোবাসায়।
সে চায় অর্ষাকে নিজের করে…..
এই অধিকার, এই কামনা—এ যেন তার নেশার এক উগ্র ভাষা।
“তোমার ভাবনার সময় শেষ,” ওয়াজফান ফিসফিসিয়ে বলে,
“এখন আমার সময়… আমার নিয়ম… আমার লাড্ডু ।
অর্ষা হঠাৎ একটু সরে আসে ওয়াজফান থেকে।

তার বুক উঠানামা করছে দ্রুত, চোখে ভয়ের ছায়া—আর সেই ভয়ের নিচে চাপা পড়া আকর্ষণ।
ওয়াজফান সেটা দেখে বাঁকা হাসে।
তার চোখে যেন আগুনের সঙ্গে খেলছে খুশির ঝলক।
“তুমি কি পালাতে চাও, লিটল মনস্টার?”
তার কণ্ঠে খেলাচ্ছলার মতো শীতল হুমকি।
“ঠিক আছে… পাঁচ মিনিট দিলাম তোমাকে।
যদি লুকিয়ে থাকতে পারো, তাহলে বেঁচে যাবে।
আর যদি না পারো…” — সে এগিয়ে আসে এক পা, ঠোঁটে বাঁকা হাসি —
“তাহলে আজ এত কাঁদাবো, মনে থাকবে সারাজীবন।”
কথা শেষ হওয়ার আগেই অর্ষা দৌড়ে পালায়।
তার পায়ের শব্দ ধ্বনিত হয় রুমের মেঝেতে।
পেছন থেকে ওয়াজফান হেসে ওঠে, তার চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদ আনন্দ।
“Run, little monster… run…”

ওয়াজফানের গলায় শিকারির মতো নরম ঝঙ্কার।
“If I catch you, I’ll f** you…
সে থামে এক মুহূর্ত, চোখে একধরনের লালসা আর ভালোবাসার অদ্ভুত মিশ্রণ।
“I’ll make you cry in ways you never imagined.”
তার হাসি গা শিউরে ওঠার মতো।
কিন্তু এই ভয়, এই দৌড়—সবটাই যেন এক নিষিদ্ধ খেলার অংশ।
যেখানে ভয়ই ভালোবাসার মুখোশ পরে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্ষা দৌড়ায়… জানে ওয়াজফান তাকে ধরবেই।
তবু এই পালানোর মধ্যে একটা উত্তেজনা, একটা শিহরণ, একটা চুপিচুপি ভালোবাসা মিশে থাকে।
অর্ষা প্রাণপণে দৌড়ায় রাজপ্রাসাদের করিডোর ধরে।

তার নিঃশ্বাস অগোছালো, চোখে আতঙ্ক আর এক চিলতে উত্তেজনা।
ওয়াজফান পেছনে আসছে—সে জানে… সে টের পাচ্ছে…
“কোথায় লুকাবো?”
হৃদয়ের মধ্যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে থাকে।
“ও তো আমাকে খুঁজে পাবে… সবখানে…”
হঠাৎ চোখ পড়ে আয়নাঘরের দিকে।
স্মৃতি ঝলসে ওঠে মস্তিষ্কে—
এই ঘর, যেখানে চারদিকজুড়ে শুধু আয়না…

একমাত্র ঘর এই রাজ্যে, যেখানে জিন প্রবেশ করতে পারে না।
তার মনে পড়ে—ইসাবেলা একবার বলেছিল,
“জিনেরা আয়নায় নিজেদের বিকৃত প্রতিবিম্ব সহ্য করতে পারে না।
তারা আয়নার আলোয় ধ্বংস হয়ে যায়…”
আর এই আয়নাঘর বানানো হয়েছিল একসময় দোষী জিনদের শাস্তি দিতে।
এখানে ঢুকলে তারা আর বেরোতে পারত না।
“ওয়াজফানও তো এক জিন… ও তো পারবে না এই ঘরে ঢুকতে… পারবে না…!
এই প্রাসাদে দুটো রুমে আয়না রাখা একটা তার আর একটা ইসাবেলার তবে ডাকা থাকে কোন জিন পাশে না থাকলে তারা সেগুলো খুলে মুখ দেখে।
এই ভেবে অর্ষা দ্রুত আয়নাঘরের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে।
দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে দেয়।

ঘরটা অন্ধকারে ভরে যায়।
চারদিকে কেবল নিঃস্তব্ধতা আর আয়নার নীরব উপস্থিতি।
তার বুক ধক ধক করছে।
সে নিজেকে দেয়ালের এক আয়নার সঙ্গে সঁপে দেয়—
চোখ বন্ধ করে ধীরে নিঃশ্বাস নেয়।
“ও এখানে আসতে পারবে না… পারবে না…”
কিন্তু—
ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা শক্ত হাত তাকে খপ করে টেনে নেয় নিজের দিকে।
তার দেহ জমে যায়।
কান ঘেঁষে ঠান্ডা নিঃশ্বাসে ফিসফিস করে উঠে এক ভয়ংকর চেনা কণ্ঠ—
“I catch you, baby…”
অর্ষা দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

শরীর কাঁপছে তার।
ওয়াজফান তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তার ঠোঁট অর্ষার কানের কাছে ছুঁয়ে যায়।
“এখন তোমার কান্নার পালা শুরু বেবি…
তুমি কি ভেবেছিলে আয়নাঘরে ঢুকলে আমি আসতে পারবো না?”
তার কণ্ঠে হঠাৎ এক ঠান্ডা হেসে ওঠে।
“তুমি ভুলে যাচ্ছো একটা জিনিস…
তোমার স্বামী কে ?
আমি… এই জিন জাতির বাদশা।
এই ফাকিং আয়নাগুলো আমাকে ঠেকাবে?
আয়নার ভয়ে অন্য জিনেরা পালায়… আমি না।
আমার প্রতিচ্ছবিও জানে, কে আমি।”
অর্ষার চোখ বড় হয়ে যায়।

Death or Alive part 22

ওয়াজফান তার চিবুকে আঙুল রেখে মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করে।
আলো না থাকলেও অর্ষা দেখতে পায়—ওয়াজফানের চোখ জ্বলছে, আগুনের মতো।
“তুমি আমার। কোথায় লুকাবে?”
তার ঠোঁট ছুঁয়ে যায় অর্ষার গলার নিচে।
“যেখানে যাবে, সেখানেই আমি থাকবো। কারণ আমি তুমিতেই বাস করি।

Death or Alive part 23 (2)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here