কালকুঠুরি পর্ব ১০

কালকুঠুরি পর্ব ১০
sumona khatun mollika

ভাটাপাড়া এলাকার পশ্চিম পাশটা পুরোটাই মূলত রাগিবের আন্ডারে থাকে। কেও জানেনা তবে মাহার চাচাও এর সাথে জড়িত। মুহিব৷ সামিরের সাথে দু একটা কথা বলে,, খুটিনাটি কাজ করে দেয় তবে সামিরের সব কালাগুণ জানা থাকলেও
মুহিব কিছু না দেখার ভান ধরে থাকে।

মাহবুব উদ্দিন নিজের ছোট বোনের পরিস্থিতিতে বেহাল দশায়। খুব ভালো করেই জানে, তার বোনের এই অবস্থার জন্য কোনোনা কোনো ভাবে সিকান্দার রা জড়িয়ে।
ভার্সিটিতে আজ সাফিনকে ঘিরে বড়সড় মিটিং চলছে,, প্রিন্সিপাল ভার্সিটির ভেতরে কিছু আলোচনা সমালোচনা করতে মানা করেছেন। তাই তারা সবাই আবার বাহিরে তাদের পার্টি ক্লাবে ফিরে গেল,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাদের মধ্যে থেকে একটা লোক বলল,,
– সামির যদি এবারে গোলমাল করে ভোটের দিন তো আর জিন্দা রাখব না।
সাফিন বলে,,
– করবেনা। কারণ সামির এখন কোনো পার্টির না। ও একাই ঠেকাই যারে ভোট দেবে,,, দেবে। তারতো ভোটাধিকার আছে নাকি

তাদের মাঝে একটা কথা নিয়ে খুব নড়াচড়া হতে লাগল,,
– সামির সিকান্দার কোন দলের? ছাত্র লীগের না ছাত্র দলের?
তাদের ভেতর সামির উপস্থিত হলো,, লুঙ্গি উচিয়ে সবার মধ্যে দাড়িয়ে সানগ্লাস নামিয়ে বলল,,
– আমি কারো দলের না। আমি শুধু সাফিনের অবর্তমানে তার দায়িত্ব পালন করেছিলাম তার মানেতো আমি সত্যি সত্যি সভাপতি নই,,

ভিরের মধ্যে একজন বলল,,
– আপনের বাবা, ভাই সকলেইতো ওই পার্টির,,, আপনে আর,
সামির বলল,,,
– আমি কাওরে প্রচারো করবনা,, আমার ভোট দিব গোপনে গহিনে কেন বলব কারে দিব? তোদের মতন ছাপড়ি নই আমি। আমার পড়াশোনা, জীবন জিন্দেগী বলতে কিছু আছে।

সাফিনের দলের এক ছেলে বলল,
– ভাই তাইলে কার দলে?
সামির সানগ্লাস তুলে মাথা নেড়ে,
– আমি? যে দল জিতবে তার দলে।
সাফিন বলল,,
– তুই এখন যেতে পারিস। প্রয়োজনে ডেকে নেব।

সে ভার্সিটির বািরে থেকে লুঙ্গি গুছিয়ে বাইকে ওঠার পর কাশেম পিছে বসে বলল,,
– ভাই,, আপনে এহানেও না,, ওহানেও না। আপনি আসলে কোনহানে?
– ট্যাকা যেইহানে আমিও সেইখানে,, সবার সাথে বেইমানি করলেও ট্যাকার সাথে বেইমানি করতে পারিনা।
– ভাই,, আপনের আব্বায় যে আর ৩-৪ দিনের মধ্যে সিয়াম ভাইয়ের বিয়ার অনুষ্ঠানের ডেট দিছে. শুনছেন?
– শুনছি।
– কেনাকাটা করবেন না?
– করমুতো, ব্র্যান্ড নিউ লুঙ্গি। এক্কের ঝাক্কাস সাজমু।

কাশেম একটু হেসে চুপ করে রইল,, বাড়িতে যাওয়ার পর দেখল বাড়িতে পুলিশ! ইন্সপেক্টর মাহবুব উদ্দিন। সামির ঢুকতেই সোজা তার সামনে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,,
– তুমি রুমাশাকে কি করে চেন?
– কে? আমাশা?

সবার মুড সিরিয়াস কিন্তু সামিরের কোনো ধ্যান নেই সেদিকে। মাহবুব উদ্দিন রেগে লাল হয়ে আছে। সামির বড়সড় হাই তুলে কথাটা বলে তার মেজাজ আরো বিগড়ে দিল,,
– আমাশা নয় রুমাশা।
– আরে আমাশা ডায়রিয়া যেই হোক আমি চিনিনা। ইনায়া,, আমাকে চা দিয়ে আয়,,,
যোগ্য প্রমাণের অভাবে সামিরকে ভালোমতো জালে ফেলতে পারলোনা মাহবুব উদ্দিন। তবে সালার সিকান্দার একদম শয়ে শ নিশ্চিত হেলাফেলার বিষয় নয়। সামির রুমাশার পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় কালপ্রিট।

এই মাহবুব উদ্দিন আজ পর্যন্ত ৩ বার সালার সিকান্দার এর বাড়িতে এসেছে,, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ বের করতে। খবর পাওয়া গেছিল জাল টাকা আর ড্রাগস পাচারের, তবে সালার সিকান্দার বা সাফিন কেওই কাচা হাতের পাবলিক না। তা ছাড়া সামির যেখানে উপস্থিত সেখানে ধরা পরার সম্ভাবনা খুব বলতে খুবি কম।

সামির বলেছিল সাফিনকে যে মাহবুব উদ্দিন কে উড়িয়ে দেই। কিন্তু সেটা মুখের কথা নয়। উপরমহল থেকে যখন জানাজানি হবে রাজনিতীর মুখোশ পরে ওরা সকল প্রকার অবৈধ কাজে জড়িয়ে পরিস্থিতি নিশ্চয়ই মিষ্টি বিলি করার মতো হবেনা।
সাফিন মানা করায় সামির কিচ্ছু বলেনি বা করেওনি। যদি না সাফিন মানা করতো কবেই মাহবুব উদ্দিন কে উড়িয়ে দিত সামির।

সামিরের এমন খাপছাড়া গোছের আচরণ তার আসল রূপটাকে খুব সুন্দর করে ঢেকে রাখে। সিয়াম যথারীতি সামির বা সিফান তুলনায় শান্তশিষ্ট।

সিভান সামিরের ঘরে শুয়ে ফোনে কার্টুন দেখছিল। সামির গিয়ে তার ছোটখাটো গায়ের ওপর শুয়ে পরতেই সিভান উল্টে তার পিঠের ওপর বসল। সামির জিজ্ঞেস করল,
– তুইযে সারাদিন শুয়ে বসে নষ্ট করিস,, তোর ভবিষ্যৎ কি রে!!
– তুমি মরে শেখ মুজিবের কোলে গেলে আমি তোমার পোস্ট এ বসে যাব!
– আমার পোস্টে বসবি তুই?
– নিসন্দেহে!
– মরে আবার পয়দা হতে হবে তোকে,, আমি জন্মগত হারামি,,
– হব সমস্যা কোথায়! আচ্ছা কাকা? তুমি কি ইনায়ার ব্যাপারে কিছু ভাবলে? বয়ের ব্যাপারে?

সামির মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে বলল,,
– ভাঙা টিন বলেছে বিয়ার প্রস্তুতি নিতে,, ইলেকশন এর পরই নাকি আমাকে বিয়ে করতে হবে।
– ভালোই হলো,,
– পাকা কথা বের করে দেব,, পড়তে বসিসনি কেন?
– মন চায়নি,,,
চা নিয়ে ইনায়ার প্রবেশ। সামির তাকে বলল,

– ওই শোন,, চা রেখে এখানে বোস।
তারপর চোখমুখ কচলে নানান এঙ্গেল থেকে ইনায়াকে দেখতে দেখতে সামির বলল,
– ইশশ,, নাহ!!
ইনায়া আর সিভান দুজনেই জিজ্ঞেস করে,,
– কি না?

– কিছুনা। যাতো তোরা আমি ঘুমাবো। যা বের হ।
ইনায়া বড্ড চিন্তায় পরে যায়, সামির তার চেহারা পর্যবেক্ষণ করে নাহ কেন বলল!! সিভান তার জামা ধরে টেনে বলল,
– কি ভাবছ?

ইনায়া হাঁটু ভেঙে বসে বলল,,
– সিভু,, আমি কেমন দেখতে রে?
– তুমিতো একদম ঐশ্বরীযা রায়ের মতো দেখতে। খুব সুন্দর কেন ইনু ?
– না এমনি।

সাফিন আর রাগিব সামনাসামনি বসা। সাথে তিহান ও আছে,, রাগিব যেহেতু এলাকার নির্বাচন সভাপতি, তাকে প্রত্যেকবার সবাইকে সাবধান করে দিতে হয়।
তিহান বলল,,,
– রাগিব ভাই,, এদের ভালো করে বুঝিয়ে দেন,, এবার যদি কাহিনি করে পুরা খেয়ে দেব একদম।

সাফিন তখনও চুপপ।
রাগিব বলল,,,
– এবার ঝামেলা লাগলে আমি তোদের কাওকে আর ইলেকশনে দাড়াতে দেবনা। নাই বিজনেস এ কেও পার্ট নিতে পারবি। ঝামেলা তো করতেই হবে একজায়গায়। সেখানে আমি সামিরকে পাঠিয়ে দেব। সামির সাফিনের সাথে থাকবেনা।

সাফিন হালকা মাথা দুলিয়ে বলল,,
– তুমি চাইলে সামিরকে জাহান্নামে নিয়ে যাও কিন্তু সামিরের যেন চুল পরিমাণ কোনো আঘাত না লাগে। সহি, সুস্থ ভাবে যেন সামির ঘরে ফিরে আসে।

রাগিব বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল,
– সামির সিকান্দার এর ক্ষতি করবে এমন সাহস কারো নেই এই এলাকায়।
তিহান বলল,,
– ওইজন্যইতো ওর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।

বাড়ি ফেরার রাস্তায় সিয়াম সাফিনকে বলছে,,
– ভাই,, একটা জিনিস বুঝিনা,, সামিরের সুস্থতায় তিহানের কি লাভ?
সাফিন সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বাকা হেসে বলল,
– আবু সালার সিকান্দার ভুল করে হরেও একটা সঠিক মাল পয়দা করেছে। বিরোধী দলের লোকো চায় ওর যেন ক্ষতি নাহয়।

নির্বাচনের আর মাত্র ১৭ দিন বাকি। সাফিন সামিরকে নিয়ে অতোটা টানাটানি করছেনা। কারণ ভার্সিটি ক্যাম্পাস তার দখলে। না হলেও ভার্সিটির ছেলেপেলে সব তাকেই ভোট দেবে। তাছাড়া কাউন্টারও সাফিনের দখলে,, প্রাক্তন মেয়রের ছেলে বলে কথা।
এইযে নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে, এদের কারো সাথে সামিরকে দেখতে পাওয়া যায় না। বলা বাহুল্য,, সামির নিজ ইচ্ছে তেই আসেনা ।

তাছাড়া সামির সিকান্দার সকলের হাতের চতুর গুটি। যারযত অপকর্মে সকলের সামিরকে চায়। এতগুলো দলের ভেতরে,, সামিরকে হাত করতে পারা দল একমাত্র তিহানের দল। বিগত যেকয়দিন সাফিন গারদে ছিল,, পুরোর পুরো ঝামেলা হয়েছিল তিহানের। এর কারণ পরে জানা যাবে।

আজকে রাফিদের বাড়ি থেকে কয়েকজন মহিলা এসেছে আংটি পরাতে। মুহিব বড্ড ভাঙা মনে সেই দৃশ্য দেখলো,,, রাফির সাথে বিয়ে হলে মাহা চিরজীবন নিসন্তান থেকে যাবে, বিধায় মাহার বাবার করা বেল পেপার অনুযায়ী সকল সম্পত্তি মুহিব আর মধুর বাচ্চাদের হবে।

মাহার তাতেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার সম্পত্তি চাইনা। চাই একটা শান্তির খুঁটি। একটা শিতল অস্তিত্বের ছায়া। কিন্তু তা হয়ত সম্ভবপর না। চাচি বেচে থাকতে তো নাইইই।

কালকুঠুরি পর্ব ৯

জায়নামাজে হামলে বেচারি কুব আকুতি করছে,, “” হে দয়ালু সৃষ্টি কর্তা, আমি ছাড়া তোমার আরো বান্দা আছে কিন্তু তুমি ছাড়া আমার কেও নাই, কিচ্ছু চাইনা, শুধু একটু শান্তি চাই, শক্তি দাও খোদা। ধৈর্য দাও। বাকিটা তোমার হাতে সপে দিলাম তুমি যা ইচ্ছে কোরো। “”

কালকুঠুরি পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here