ডার্কসাইড পর্ব ৩০

ডার্কসাইড পর্ব ৩০
জাবিন ফোরকান

~প্রেমেরই নীল ইশারাতে এলোমেলো হাওয়া~
– হাত কোমরে…হ্যাঁ, পা একবার ডানে আরেকবার বামে, নাউ ওয়ান টু থ্রি ফোর….
~মনেরই মাঝে জাগানো আরো আরো চাওয়া~
– ফাস্ট ফাস্ট,জগিং!
সঙ্গীতের তালে তালে নিহাদের প্রশিক্ষণ চলছে।বিপরীত প্রান্তে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা রোযাকে সে নিজের মতন শরীরচর্চা শিখিয়ে দিচ্ছে।তবে দেবের গানের সাথে এই ধরণের উৎকট কার্যক্রমের অর্থ রোযা বুঝে উঠতে পারছেনা কিছুতেই।ধাম ধাম বিটের সঙ্গে তীব্র মিউজিক জিমরুমের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে চলেছে।বুক কাপছে রীতিমতো।

~আগুন আগুন ভালবাসা নেভালে যে নেভে না
ও,ও,ও,ও….মন মানে না, মানে না~
– এসব কি নিহাদ?আমি নাচ শিখতে এসেছি তোমার কাছে?
– এটাকে বলে ওয়ার্ম আপ।
– তোমার ওয়ার্ম আপের গুষ্টির তুষ্টি।
খিলখিল করে হাসতে থাকলো নিহাদ।তাতে রোযা চাইলেও কেনো যেন রাগ করতে পারলোনা ছেলেটার উপর।হাতে তোয়ালে তুলে নিহাদ ভলিউম কমিয়ে রোযার দিকে ফিরল,ফ্লোরের ম্যাটে বসে পড়েছে মেয়েটি।হাঁপাচ্ছে।ঘেমেও গিয়েছে খানিক।পরিধানের টি শার্টের গলার অংশ সিক্ত হয়ে উঠছে ক্রমান্বয়ে।ভিন্ন আরেকটি তোয়ালে তার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে নিহাদ বিড়বিড় করলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– নট ব্যাড।আগের চাইতে অনেক উন্নতি হয়েছে।
প্রশংসার বিপরীতে ঘাড় মুছতে মুছতে শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রোযা।খুব বেশিদিন হাতে নেই,নিহাদ চলে যাবে।তার কাছ থেকে সেল্ফ ডিফেন্স টেকনিক কিংবা প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করার মতন ফাইটিং স্কিল শেখার বাসনা অনুভব করেছে রোযা।হয়ত খুব বেশি লাভবান হবেনা,কিন্তু জরুরী দরকারে একেবারে অসহায় হয়ে পড়তে রাজী নয় সে।নিজের মাঝে অদ্ভুত এক স্পৃহা অনুভূত হচ্ছে।সংগ্রামের চেতনা, ধ্বংসের প্রেরণা; প্রয়োজনে রক্ষার আকাঙ্ক্ষা।
পাঁচ মিনিট বিশ্রাম দিয়ে রোযাকে পুনরায় উঠতে নির্দেশ করলো নিহাদ।হাত তুলে আয়তাকৃতির একটি ডিভাইস দেখালো।
– এটা কি জানো?
– ভিডিওতে দেখেছি।খুব সম্ভবত ইলেকট্রিক টিজার।
– হুম,গুড।

নিহাদ বোতাম চাপতেই বৈদ্যুতিক ঝলকানি দৃশ্যমান হলো প্রান্তে,সঙ্গত করলো চিরচির ধ্বনি।
– এটা ২-৩ মিলিঅ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে সক্ষম।যা সাধারণত মারাত্মক ক্ষতি না করলেও শরীর অবশ করে দেয়া কিংবা হৃদযন্ত্রের অক্ষমতা সৃষ্টি করতে যথেষ্ট।হাতে রাখবে,সুযোগমত শত্রুর গায়ে চেপে ধরবে।খুবই কার্যকরী।
রোযার দিকে ডিভাইসটা ছুঁড়ে দিতেই সেটা হাতে নিয়ে কয়েকবার চালু করে দেখলো সে।আরেকটা লোহার তৈরি ধারালো ফলাযুক্ত বস্তু নিজের দুই আঙ্গুলে আংটির মতন গলিয়ে নিহাদ বললো,
– এটাকে বলে কিটি নাকেল্স।তোমাকে যে হার্ড পাঞ্চিং শিখাচ্ছি,সেগুলো এটা পড়ে করলে একেবারে র*ক্তার*ক্তি হয়ে ছাড়বে।
তীর্যক হাসি ফুটিয়ে সেটাও রোযাকে ধরিয়ে দিয়ে এক পা দূরে সরে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো নিহাদ।উপদেশ দিলো,

– সবশেষে বলবো,প্রতিপক্ষ একজন মানুষ,মানুষ হয়ে মানুষকে কিভাবে আ*ঘাত করবো?এই ধরনের চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে দাও।তোমার দিকে কেউ চোখ তুললে সেই চোখ গে*লে দেয়ার মতন মানসিকতা থাকতে হবে।মুখোমুখি লড়াইয়ে সামান্যতম দূর্বলতার প্রদর্শন তোমার পরাজয়।আসমান ভাই আমাকে এই কথাটা সবসময় বলতো।
সম্মতি জানালো রোযা,বুঝতে পেরেছে।
– চেষ্টা করবো।
– গুড। এখন আসো,দেখি আমার সঙ্গে কতটা সুবিধা করতে পারো।

রোযা পজিশন নিয়ে তৈরী হলো।নিহাদ সোজাই দাঁড়িয়ে আছে, কোনোপ্রকার প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন নেই তার।তর্জনী আঙ্গুল কুচকে ইশারা করলো।তৎক্ষণাৎ দৌঁড়ে গেলো রোযা,শরীরটাকে উপরে তুলে হাওয়ায় ভাসানোর চেষ্টা করলো,উদ্দেশ্য নিহাদের বুক।পা তুললেও ক্ষিপ্র গতিতে তা এড়িয়ে মাথা নুইয়ে তার অন্য পা টেনে হ্যাঁচকা টান দিলো নিহাদ,হুড়মুড় করে ভারসাম্য ভেঙে মেঝেতে পড়লো রোযা।কিন্তু গতদিনের শিক্ষা মাথায় রেখে সময় ব্যয় করলোনা, উভয় হাতে ভর দিয়ে শরীর তুলে লা*থি হাকালো নিহাদের কাঁধ বরাবর।সামান্য পেছালো নিহাদ তাতে, হেসে উৎসাহ দিলো,

– নট ব্যাড।
অতঃপর উভয়ে নিজেদের লড়াইয়ে এতটাই মশগুলো হয়ে পড়ল যে খেয়ালই করলোনা কখন জিমের ভেতর তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটেছে। দরজার ফ্রেমে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে নিহাদ আর রোযাকে পর্যবেক্ষণ করে গেলো আসমান,নিঃশব্দে।
রোযাকে অষ্টম বারের মতন মেঝের ম্যাটে আছড়ে ফেলার পর বেচারীর দম আটকে এলো।হাত তুলে সময় চেয়ে পা ছড়িয়ে বসে হাঁপাতে থাকলো।থামলো নিহাদ,হাতের উল্টোপিঠে মুখ মুছে নিয়ে পানির বোতল তুলে চুমুক দিলো।জানালো,

– মোটামুটি ভালোই।
– অযথা প্রশংসা উন্নতি রুখে দেয়।
গভীর কন্ঠস্বরটি কর্ণগোচর হতেই রোযা ঘুরে তাকালো।জিমের ভেতর প্রবেশ করলো আসমান।পরিধানে হাতাবিহীন কালো টি শার্ট এবং ট্রাউজার।নিহাদ মাথা চুলকে হাসার চেষ্টা করে বললো,
– বেচারী চেষ্টা তো করছে একটু উৎসাহ দেয়াই যায়।
– যথেষ্ট নয়।
– তো কি চাও?তোমার মতন কঠোর হই?একটা ভুলের জন্য ত্রিশটা করে পুশ আপ দিতে বলি?নাকি প্রথম সেশনেই মে*রে শরীরের জয়েন্ট ঢিলা করে দেই?
জবাব দিলোনা আসমান।তাকালো মেঝেতে বসে থাকা রোযার দিকে।তার দৃষ্টিতে এমন এক কাঠিন্য যার দরুণ আনমনে ঢোক গিলে তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো রোযা।যদিও নিহাদের সঙ্গে লড়তে গিয়ে তার শরীর থরথর করে কাপছে এখনো।

– গুড থিংকিং।ইউ শুড লার্ন টু প্রোটেক্ট ইওরসেল্ফ।
মৃদু কন্ঠে উচ্চারণ করলো আসমান,একই সাথে পাশের স্পিকারের গান বন্ধ করে দিলো।নিহাদ তেঁতে গিয়ে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিল কিন্তু হাত তুলে তাকে থামিয়ে সরে যেতে ইশারা করলো।অতএব সরে দাঁড়ালো সে।রোযার মুখোমুখি হলো আসমান। মাস্কটা টেনে উপরে তুলে শীতল নয়নে চাইলো।এক অজানা শিহরন খেলে গেল রোযার শিরদাঁড়া বেয়ে।বুকের ভেতর বাদ্য বাজিয়ে নাচতে আরম্ভ করলো অবাধ্য হৃদযন্ত্র।
– যেকোনো মুখোমুখি লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পয়েন্ট নাম্বার এক কি?
এক সেকেন্ড সময় নিলো রোযা উত্তর করতে,
– মস্তিষ্ককে সদা সজাগ রাখা এবং পর্যবেক্ষণ।
– রাইট।পয়েন্ট নাম্বার দুই?
– পয়েন্ট দু….

বাক্য সমাপ্ত করতেও সক্ষম হলোনা রোযা।রীতিমত বিদ্যুৎ গতিতে ছুটলো আসমান,কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার কন্ঠ চেপে ধরে আছড়ে ফেলল টেবিলের উপর।সমস্ত পিঠে তার চিনচিনে ব্যথা ছড়িয়ে পড়লো।নাকমুখ কুঁচকে আসমানের দিকে চাইলো।
– পয়েন্ট দুই, সদা প্রস্তুত থাকা।শত্রু আক্রমণের আগে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ দেবে না।
রোযাকে ছেড়ে দিলো আসমান। খুকখুক করে কেশে উঠে দাঁড়ালো সে।শরীর এখনো ঝনঝন করে চলেছে।তাকে আ*ঘাত করার ক্ষেত্রে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখেনি আসমান। রোযাকে এক নজর অবলোকন করে এগিয়ে সে বিড়বিড় করলো,
– এক্সকিউজ মি।
কোমরে হাত স্থাপন করলো আলতোভাবে,পিছনে হেলিয়ে পা দুটোর অবস্থান ঠিক করলো।অতঃপর বাহুতে স্পর্শ করে তা মুষ্টিবদ্ধ করে যথাযথ ভঙ্গিতে উত্তোলন করলো সামনে।সম্পূর্ণ সময়টা রোযা স্থির হয়ে থাকলো,মোমের পুতুলের ন্যায়।

– তুমি একজন নারী।তোমার নমনীয় শরীর অ্যাডভান্টেজ।একজন পুরুষের তুলনায় দ্রুতগতি অর্জন করতে পারবে যথাযথ চর্চার মাধ্যমে।
আসমানের প্রত্যেকটা কথা নিজের মস্তিষ্কে গেঁথে নিতে থাকলো রোযা।মুঠো পাকিয়ে রোযার মুখোমুখি দাঁড়াতে দাঁড়াতে আসমান বললো,
– নিজেকে কখনো দূর্বল ভাববেনা।যতক্ষণ মাথায় থাকবে আমি নারী,আমি দূর্বল,ততক্ষণ শত চেষ্টাও বিফলে যাবে।বি কনফিডেন্ট।কনফিডেন্স ইয দ্যা কি।প্রতিপক্ষের উপর তোমার সর্বোচ্চ আক্রোশ ঢেলে দাও। নাউ….কাম ফাইট মি!
শক্ত একটি ঢোক রোযার কন্ঠনালী বেয়ে পাকস্থলীতে নেমে গেলো।ব্যাপারটা তার জন্য হয়েছে ক্লাসটিচারের অনুপস্থিতিতে প্রিন্সিপালের ক্লাসে ফেঁসে যাওয়ার মতন!আড়চোখে নিহাদের দিকে চাইতে মাথা নেড়ে তাকে উৎসাহ দিলো।অধিক সময় নষ্ট করলোনা রোযা।যা আছে কপালে।দীর্ঘ একটি প্রশ্বাস গ্রহণ করে ছুটে গেলো কি*লিং মেশিনের দিকে।

তাকে রুখে দিলো আসমান এক হাতেই।রোযার মুষ্টিবদ্ধ হাত আঘা*ত হানলো তার প্রশস্ত হাতের তালুতে। নির্বিকারচিত্তে রোযার হাত চেপে ধরে মুচড়ে দিলো আসমান,বিন্দুমাত্র পরোয়া করলোনা যন্ত্রণা প্রদানে।ককিয়ে উঠলো রোযা,আর্ত দৃষ্টিতে তাকালো আসমানের উদ্দেশ্যে,তবুও টললোনা হিমালয়।
– আই সেইড ফাইট মি।
রোযা উন্মুক্ত হাতটিতে ঘুষি হাকালো,আসমানের বুকে।বিনিময়ে শুধু নিজের হাতেই ব্যথা অনুভব করলো, যেন মানবদেহ নয় পাথরে হাত তুলেছে! নিটল আসমান তার উদ্দেশ্যে একটু ঝুঁকলো,
– টু ফাইট মি…হেইট মি ফার্স্ট!
– হোয়াট?
– তোমার আঘাতে বোঝা যাচ্ছে,তুমি সর্বশক্তি প্রয়োগ করছোনা।নিজেকে রুখে রাখলে পরাজয় নিশ্চিত।পরাজয়ের পরিণাম মৃ*ত্যু।কিসের নিয়ন্ত্রণ এত?
– তুমি ব্যথা পেলে…
– ফরগেট ইট।
– আহ!

রোযার হাত পিছমোড়া করে নিয়ে চাপলো আসমান, সজোরে।শিরা উপশিরাজুড়ে যেন তড়িৎ খেলে গেলো মেয়েটির,কুঞ্চিত হয়ে এলো সমস্ত দেহ, কুঁকড়ে গেলো অবয়ব।
– আসমান ভাই।এতটা কঠোর…
বলতে চাইলেও শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপে নিহাদের কন্ঠ মিইয়ে গেলো।মাথা নেড়ে দুহাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বললো,
– ওহ,ভুলে যাও,আমি কিছু বলিনি।মনে করো আমি এখানে নেই,অদৃশ্য জীবাণু।তুমি চালিয়ে যাও।
রোযার দিকে মনোযোগ ফেরালো আসমান।তার বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে রোযা।তবুও বিন্দুমাত্র ছাড় প্রদান না করে ঝুঁকে তার কানের কাছে শক্ত কন্ঠে উচ্চারণ করলো,
– প্রতিপক্ষের উপর সর্বোচ্চ ঘৃণাই আক্রোশের জন্ম দেয়।আক্রোশ জন্ম দেয় শক্তির। সো, হেইট মি।
– কিভাবে?

– কল্পনা করো।এমনকিছু,যা তুমি খুব ঘৃণা করো।
– আমি তোমার মত এতটা কঠোর মানসিকতা রাখিনা আসমান!
না পারতে চেঁচিয়ে উঠলো রোযা।মাস্কের অন্তরালে মৃদু হাসির রেখার উৎপত্তি ঘটলো আসমানের অধরজুড়ে।সে সফল হচ্ছে।রোযার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।উল্টো ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ তাকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে আসমান হাত বাড়ালো কন্ঠে।শক্তিশালী বাহুতে আবদ্ধ করে তীব্র দৃষ্টিপাত ঘটালো রোযার পরিশ্রান্ত নয়নমাঝে।
– কঠোর হতে হবে।নাহলে জীবন তোমাকে অচিরেই গুঁড়িয়ে দেবে পদতলে।
– শুধুমাত্র কঠোরতাই কি মুক্তির চাবিকাঠি?
– সন্দেহ আছে?
– হ্যাঁ।

– বাজে কথা বলোনা।ঘৃণা করতে শিখো।অনুভূতি দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়না।
– হয়ত যায়না কিন্তু চেষ্টা করতে দোষের কি?
– অপ্রয়োজনীয়।
– দরকারি।
ক্রমেই অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে আসমান।রোযার কন্ঠে তার হাত দ্বিগুণ শক্তিতে চেপে বসেছে,নিশ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তাতে।
– কল্পনা করো যে আমার জায়গায় তুমি যাকে ঘৃণা করো সে দাঁড়িয়ে।তোমার চাচা আজাদ।
– উহু,কল্পনা করতে পারছি না।
– তুমি তাকে ঘৃণা করো না?
– করি।কিন্তু সবথেকে বেশি নয়।
এক সেকেন্ডের জন্য থমকালো আসমান।অতঃপর জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি এই জগতে সবথেকে বেশি কাকে ঘৃণা করো?
– তোমার ভাগ্যকে।

জমে গেলো শরীর।একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো রোযার দিকে।অজান্তেই হাতের বাঁধন সামান্য ঢিল হয়ে এলো। অতর্কিতেই ঘটনাটি ঘটলো।রোযা ঝুকলো,নিজের কপালে আসমানের কপাল ঠুকলো,সজোরে,সর্বশক্তি দিয়ে।ভারসাম্য হারিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হতেই বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে দুহাতে ঠেলে আসমানকে ম্যাটে আছড়ে ফেললো রোযা।তরতর করে চড়ে বসলো উপরে,দুহাত তার জড়িয়ে গেলো গলায়, দূর্বল এবং তুলনামূলক অরক্ষিত শারীরিক অংশ হিসাবে কার্যকারিতা বেশি।

দৃশ্যটি লক্ষ্য করতে করতে ট্রেডমিলের উপর বসে পড়ে একটা চিপসের প্যাকেট খুলে মুখে পুরতে পুরতে সুগভীর মনোযোগে তাকিয়ে থাকলো নিহাদ।ক্রমেই নাটকীয় রূপ ধারণ করছে আসমান রোযার সম্মুখ লড়াই।ভালোই লাগছে তার,চিপসের সঙ্গে কিছুটা পপকর্ন হলে মন্দ হতোনা।আর থ্রি ডি চশমা।পুরোই সিনেমা হল ভাইব।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে নিলো আসমান দ্রুতই,বিস্ময়ের ঘোর কেটেছে।অদ্ভুত এক ক্রোধ অনুভূত হলো তার হৃদয়ে।ঠিক কার প্রতি তা বোঝা সম্ভবপর হলোনা।রোযার উভয় হাত চেপে ধরলো শক্ত করে,কিন্তু বর্তমানে রোযাও নাছোড়বান্দা।ঘু*ষি হাকালো আসমানের চোখ বরাবর,তড়িৎ প্রতিক্রিয়ায় তা পড়লো গাল বরাবর।দর্শক নিহাদের তাতে চোয়াল ঝুলে পড়লো,অভিজ্ঞ আসমানকে পাল্টা আ*ঘা*ত করা মরুভূমির বুকে অতর্কিতে জলের উৎস খুঁজে পাওয়ার মতোই অচিন্তনীয় ব্যাপার।এই মেয়েটা ব্যাপারটাকে কতই না সহজভাবে দেখালো!কিঞ্চিৎ সন্তুষ্ট হলো আসমান।

– ইউ ম্যানেজড টু পাঞ্চ মি।
হাঁপাচ্ছে রোযা,প্রচণ্ডভাবে।এটুকু করতেই তার জান যায় যায় অবস্থা।দুর্বল হয়ে এসেছে শরীর।সুযোগ গ্রহণ করে তাকে মেঝেতে ঠেলে পাল্টা চড়াও হলো আসমান।রোযার উভয় হাত ম্যাটে চেপে ধরলো, দৃষ্টিতে মেলালো দৃষ্টি।এবার বাধা প্রদানের খুব বেশি প্রচেষ্টা করা হলোনা রোযার তরফ থেকে।তার শারীরিক সীমা ছাড়িয়েছে উপলব্ধি করে নিজেকে সংযত রাখলো আসমান।একটু ঝুঁকলো নিচে।নিঃশ্বাস আটকে তার নিগূঢ় চাহুনিতে যেন নিজেকে বিলিয়ে দিলো রোযা,অজান্তেই।কয়েক ইঞ্চির ফারাক উভয়ের চেহারার মাঝে,চাইলেই একে অপরকে ছুঁয়ে দেয়া যায়।আসমান একটি হাত তুললো,তর্জনী এবং বৃদ্ধার সাহায্যে রোযার কপালজুড়ে এলোমেলো হয়ে লেপ্টে থাকা চুলের গুচ্ছ আনমনে সরিয়ে দিতে দিতে মৃদু কন্ঠে বিড়বিড় করলো,

– আমার ভাগ্য শুধুমাত্র আমার রোযা।তাকে ঘৃণা করার অধিকার আমি ব্যাতিত আর কারো নেই।
দৃষ্টির সঙ্গে কণ্ঠের গাম্ভীর্য সম্পূর্ণ বেমানান ঠেকলো।একপ্রকার শীতল মস্তিষ্কে হু*মকি প্রদানের মতন।এক মুহূর্তের জন্য নিজের হৃদয়ে অনুভূতির ঝংকার অনুভব করলো রোযা,ইচ্ছা হলো ওই শোষণীয় কৃষ্ণগহ্বর হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিজেকে লুকিয়ে নেয়ার।কিন্তু নিলো না।কত থাকবে লুকিয়ে নিজের অন্তরের কাছ থেকে?তাই মোকাবেলা করলো সে, নির্ভীক সৈনিক হয়ে।

– আমার অনুভূতি শুধুমাত্র আমার।তাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকারও আমি ব্যাতিত আর কারো নেই আসমান।
থমকালো আসমানের আঙুল,কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো সে রোযার আবেগে উদ্ভাসিত নয়নে।নিঃশব্দে নিজেকে গুটিয়ে নিলো পরমুহুর্তেই। সরে গেলো।একটি কথাও বললোনা আর।উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পোশাক ঝাড়লো।এক নজর অদূরে দৃষ্টিপাত করে কি যেন ভাবলো।তারপর প্রস্থান করলো জিমরুম থেকে।
আসমান চলে যেতেই আস্তে করে নিজের জায়গায় উঠে বসলো রোযা।হাঁটু জড়িয়ে বসে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সমস্ত শরীর তার অবশ হয়ে আছে।থেকে থেকে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে অঙ্গ প্রত্যঙ্গে।কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই।অন্তরে বইছে চিন্তার ঝড়।বড্ড কন্টকাকীর্ণ এক পথে হাঁটতে আরম্ভ করেছে সে।এই হিমালয়কে টলানো দুরূহ ব্যাপার।সহজে কিছুই হাসিল হবে না।

পোশাক ঝেড়ে উঠতেই ট্রেডমিলে শরীর এলিয়ে বাদশাহী আয়েশী ভঙ্গিতে চিপস ঠুসতে থাকা নিহাদের উপর দৃষ্টিপাত হলো। রোযাকে তাকাতে দেখে নিজের ফোন দিয়ে এতক্ষণ ভিডিও করতে থাকা নিহাদ টুপ করে ভিডিও বন্ধ করে দাঁত দেখিয়ে হাসলো।
– আ কমপ্লিট সিনেমা! নাম দিলাম “আমার অধিকার নিয়ে কথা বলার তুই কে?”!যখন মন চাইবে দেখবো, আহা একটা মাস্টারপিস!ব্লকবাস্টার হিট খাবে ইন্ডাস্ট্রিতে।
প্রতি উত্তরে রোযার তরফ থেকে ছুটে আসা ওয়াটার পটের নিশানা এড়িয়ে খিলখিল ধ্বনি তুলে হাসতে থাকলো নিহাদ।

টিমটিমে হলদে ল্যাম্পশেডের আভায় উদ্ভাসিত হোটেলরুমটি নৈঃশব্দ্যপূর্ণ।জানালার পাশে বসে আরামকেদারায় দুলছে একটি অবয়ব।হাতে ভেপ, থেকে থেকে ঠোঁটে ছুঁইয়ে আস্বাদন করে চলেছে তামাকের স্বাদ।সেই ধোঁয়াটে কুয়াশা ভেসে বেড়াচ্ছে আবদ্ধ বায়ুজুড়ে।বিছানার একপাশে হাঁটুতে হাঁটু তুলে বসে থাকা আকাশ স্থির নয়নে পর্যবেক্ষণ করছে মানুষটিকে।দেখে মনে হচ্ছে না এত গুরুতর সংবাদেও তার মাঝে কোনোপ্রকার ভ্রুক্ষেপ রয়েছে।দীর্ঘ সময় বাদে তার কণ্ঠে শুধুমাত্র একটি শব্দই উচ্চারিত হলো।
– ওহ আচ্ছা।
আকাশ একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে বাধ্য হলো।এই একমাত্র বান্দা যে আসমানের নাম উচ্চারণ করা সত্ত্বেও সামান্যতম টলেনি।সাইফ হুসেইন,কি বলা যায় এই পুরুষটিকে?আসমানের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী?হয়ত।

– আপনি নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন আসমানের শেষ টার্গেট আপনি সাইফ?
– হুম।
অবোধ্য আওয়াজ তুলে ঠোঁটে ভেপ ছোঁয়ালো সাইফ।বিড়বিড় করলো,
– ভয় পাওয়া উচিত আমার?
– নাবিল স্যার,আলাউদ্দিন,সান্দ্রো….
আকাশের কন্ঠ মিইয়ে এলো।নিজেকে স্বাভাবিক করতে জোরপূর্বক মাথা ঝাড়া দিয়ে দ্বিতীয় দফায় বললো,
– স্যারের একটা প্ল্যান আছে।টু সেইভ বোথ অব আস।
কুঞ্চিত হলো সাইফের অধর, খোঁচা খোঁচা দাড়িযুক্ত চিবুকে আনমনে বুলিয়ে আনলো নিজের আঙুল।শকুনের দৃষ্টিপাত ঘটালো আকাশের অবয়বে।

– আমি খেলার গুটি হইনা,গুটি সাজাই।
এক সেকেন্ডের জন্য থমকালো আকাশ। ভ্রু কুঁচকে কিঞ্চিৎ দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আর ইউ প্ল্যানিং সামথিং?
জবাব না দিয়ে আরামকেদারায় হেলে পুনরায় ভেপে মনোযোগী হলো সাইফ।

শীত আসন্ন।ইতিমধ্যে ঋতুসেনাপতির হিমেল আগ্রাসন ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছে শহরজুড়ে।যদিও দেশের উত্তরাঞ্চলের তুলনায় নেহায়েত কিছু অনুভূত হয়ই না বললেই চলে,তবুও রুক্ষতা এবং শুষ্কতার বছরের সর্বশেষ এই অংশ মানুষের অন্তরজুড়ে এক নস্টালজিক প্রভাব বিস্তারে পারদর্শী।

সিটি ইউফোরিয়ার কাছাকাছি এক শপিং মলে এসেছে রোযা চারুলতার সঙ্গে।শীত উপলক্ষ্যে বাসার সকলের জন্য নিজে দেখে কিছু কেনাকাটা করতে ইচ্ছুক সে।তাছাড়া সবসময় মারবেল ভবনে আবদ্ধ হয়ে থাকতে থাকতে একটু বাইরের হাওয়া বাতাসের জন্য তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছিল বুক।খুব একটা আপত্তি করা হয়নি।রোযা এবং চারুলতার সঙ্গী রয়েছে নিহাদ, তার সঙ্গে অচেনা তিনজন বিলাল রেমান নিযুক্ত বডিগার্ড যাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে শুধুমাত্র তাদেরই ধারণা রয়েছে।আশেপাশের মানুষ দেখলে সাধারণ লোক হিসাবেই ধরে নেবে।সাদা পোশাকে ডিউটিতে থাকা আইনশৃঙ্খলা গুপ্ত বাহিনীর মতন কিছুটা।তাই অনেকটা নিশ্চিন্তেই থাকতে পারছে রোযা।

চারুলতা কেনাকাটা করতে করতে নিহাদ শাকচুন্নি পেত্নী বলে ক্ষেপাতে ক্ষেপাতেও ঠিকই শপিং ব্যাগগুলো বহন করে চলেছে একজন আদর্শ পুরুষের মতন।দৃশ্যটি অবলোকন করে হৃদয়ে তৃপ্তি অনুভব করলো রোযা।তার সঙ্গে এক আশঙ্কাও।এই চুক্তির সমাপ্তির পর সে এমন মুহূর্ত আর কোনোদিন উপভোগে সক্ষম হবে কি?
আনমনে চিন্তায় ডুবে থাকতে থাকতে হঠাৎ পার্শ্ববর্তী একটি স্টলের দিকে নজর পড়লো। উপরে বোর্ডে গোটা গোটা ইংরেজি অক্ষরে লিখিত “ মেইক ইওর চার্ম ”।কৌতূহলী হয়ে এগোতেই রোযা দেখলো স্টলে কয়েকজন কর্মী রয়েছে।একজন মেয়ে।লিকুইড রেজিন নিয়ে কাজ করছে।কাস্টমার যেমন মনে চায় তেমন ডিজাইনে বিভিন্ন ধরণের অলংকার তৈরি করে নিতে পারে।ভিডিওতে এমন জিনিস বহু দেখেছে, এই প্রথম সামনাসামনি।নিজের অজান্তেই তার পদক্ষেপ তাকে টেনে নিলো স্টলে। অ্যাপ্রোন পরিহিত মেয়েটি তাকে স্বাগতম জানিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,

– ওয়েলকাম ম্যাম।আপনি কি আপনার পছন্দের কাস্টমাইজড রেজিন জুয়েলারী ক্রয়ে ইচ্ছুক?
– জ… জ্বি।উম…দাম কেমন পড়বে?
– আপনি কি বানাতে ইচ্ছুক?
– ব্রেসলেট, মেনস ব্রেসলেট।
– পার্ল বিডস,নাকি রেজিন?
– রেজিন।
– তাহলে ম্যাম ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।

একটি ঢোক গিললো রোযা।কামিজের ফাঁক গলিয়ে আনমনে পায়জামার পকেটে হাত ভরলো।ভেতরে রয়েছে মোট আড়াই হাজার টাকা।ফাউন্টেন পেনের কার্যক্রম সে শুরু করেছে আধ মাস আগে,অর্ধেক বেতন অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মাসের শুরুতেই।সেটা আজই কিছুক্ষণ আগে ক্যাশ আউট করেছে।দাদু চলে যাওয়ার পর থেকে অর্থের খুব একটা প্রয়োজন তার নেই।নিজের লিখালিখির প্রতিভা থেকে আয় করা প্রথম, সৎ উপার্জনের এই অর্থ দিয়ে নিজের কিছু অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণের বাসনা ছিলো তার।একজোড়া সিলভার ঝুমকো।কিন্তু হঠাৎ কি হলো কে জানে।কেনো যেন খুব করে ইচ্ছা করছে, নিজের জন্য খরচ না করে কোনো প্রিয় মানুষকে কিছু উৎসর্গ করতে।স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে।
রোযা সায় জানালো।মেয়েটি নিজের পসরা সাজিয়ে বসলো তার সামনে।একটি বক্স এগিয়ে দিলো।
– এগুলো শুকনো ফুল ম্যাম।আপনি চাইলে এগুলো ব্রেসলেটে যুক্ত করতে পারেন।

রোযা ঝুঁকে দেখলো।অনেক ধরণের ফুল রয়েছে।কালো,গোলাপী,লাল, হলুদ…. কিন্তু তার দৃষ্টি কাড়লো আসমানী বর্ণের ছোট ছোট কিছু নাম না জানা ফুল।সন্তপর্নে তা হাতে তুলে নিয়ে দৃষ্টিপাত করতেই অধর তার উদ্ভাসিত হলো আলোড়নে।আসমানের সঙ্গে আসমানী বর্ণটা দারুণ মানাবে নিশ্চয়ই?ওই শুভ্রতার চাদরে সুবিস্তৃত আসমানের ছোঁয়া।কল্পনা করেই রোযার অন্তর পুলকিত হলো।

কাজে লেগে গেলো কর্মী মেয়েটি। ছাঁচে রোযার বাছাইকৃত শুকনো ফুলের সঙ্গে স্থাপন করলো শুভ্র বৃক্ষলতা।যার পাশ ঘিরে দিলো সবুজাভ উৎপলে।যেন এক টুকরো প্রকৃতির মাঝে অসীমতার পাখনা মেলেছে আকাশ।মনোমুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো রোযা। ছাঁচে স্বচ্ছ রেজিন ঢেলে স্থির হতে দিয়ে ইউ ভি লাইটের নিচে শুকিয়ে নিলো দীর্ঘ কয়েক মিনিট যাবৎ।প্রস্তুত হয়ে আসতেই তা খোদাই করে যুক্ত করলো একটি সরু চেইন,যার প্রান্তে ঝুলছে রোযার পছন্দ করা একটি ছোট্ট চাঁদের টুকরোর অংশ।সুন্দর করে জিনিসটা একটি বক্সে সাজিয়ে প্যাকেট করে এগিয়ে দিলো মেয়েটা।হাতে নিয়ে মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলো রোযা।

– কি সুন্দর!
– ধন্যবাদ ম্যাম।আপনার পছন্দ হয়েছে জেনে খুশি হলাম।
– আমি একজনকে উপহার দেবো।তার পছন্দ হলেই হবে।
– নিশ্চয়ই হবে ম্যাম।আপনি এতটা যত্ন নিয়ে ভেবে চিন্তে সবকিছু নির্বাচন করেছেন,অবশ্যই যে জিনিসটি লাভ করবে সে খুব খুশি হবে,কদর করবে উপহারের।
মৃদু হাসলো রোযা।সম্পূর্ণ ৬৭০ টাকার মূল্য পরিশোধ করলো।তারপর ফিরে এলো।উপহারটা নিজের বুকে আগলে নিলো অজান্তেই।আসমানের কাছে এর চেয়ে শতগুণ দামী জিনিসপত্র রয়েছে।সেখানে সামান্য রেজিন দিয়ে তৈরি এই ছোট্ট বস্তুটি তার পছন্দ হবে কি?থমকে গেলো রোযা,পরক্ষণেই আবার মাথা ঝেড়ে নিজেকে গালমন্দ করলো।তার যতটুকু সামর্থ্য সে করেছে তার ভেতরেই,এই বিষয় নিয়ে এতটা হীনমন্যতায় ভোগার কিছু হয়নি।জিনিসের মূল্য তার দামে নয় বরং আন্তরিকতায় মাপা হয়।

মলের একপাশে দাঁড়িয়ে আবারো ব্রেসলেটটা দেখলো রোযা।তার কল্পনার চাইতেও সুন্দর হয়েছে জিনিসটা।তার চাঁদের জন্য এক মাধুর্যপূর্ণ উপহার।যদিও কোনো উপলক্ষ্য নেই,তবুও মন আনচান করছে।আসমানের কব্জিতে কেমন লাগবে তার অতি যত্ন নিয়ে ভেবে ক্রয়কৃত জিনিসটি?
একটি দুর্বার চিন্তায় সহসাই জমে গেলো রোযার সর্বাঙ্গ।

এক ভীতিকর দানব থেকে হয়ে ওঠা রক্ষককে উপহার দেয়ার মতন পর্যায়ে সে কখন পৌঁছলো?কিভাবে পৌঁছলো?আর কেনই বা পৌঁছলো?কি অধিকার রয়েছে তার? মিথ্যা সম্পর্কের বাঁধন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যত ব্যাতিত?
তবুও অবাধ্য এই হৃদয় চায়।নিজের সবকিছু উজাড় করে দিতে চায় পিশাচটির জন্য।অনুভূতিহীন নিটল হিমশীতল হিমালয় সে,তবুও তার শীতলতাকে আঁকড়ে ধরতে চায় রোযা।তার পরাবাস্তব বিভীষিকাময় কলঙ্ক দেখলে মানবহৃদয় শিউরে ওঠে, অথচ তা অবলোকন করতে চায় রোযা বারংবার। ওই অধরে প্রস্ফুটিত হাসি জীবনে একবার হলেও লক্ষ্য করতে চায় সে,চায় নিজেকে বিলিয়ে অতীতের অমানিশায় আবদ্ধ আত্মাকে নতুন করে আরো একবার রঙিন সুখের স্বপ্নের পথ দেখাতে।হাতটি ধরে একসঙ্গে পথ চলতে,হোক তা দীপ্তিময় ফুলেল পথ কিংবা অন্ধকারাচ্ছন্ন কণ্টকাকীর্ণ পথ।

ডার্কসাইড পর্ব ২৯

উপলব্ধি অতর্কিতে তার হৃদমাঝারে আবেগের জলোচ্ছ্বাস ঘটালো।
“ তুই প্রেমে পড়েছিস রোযা,এক মেশিনের প্রেমে পড়েছিস…….”
অন্তর চিৎকার করে জাহির করলো সেই মহান ঘোষণা।

ডার্কসাইড পর্ব ৩১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here