তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৪
ভূমিকা তালুকদার
রাতের প্রথম প্রহরে ঘরে দরজা খোলার শব্দ ভেসে আসে। দরজা খোলেই একজন মধ্যবয়স্ক লোক ভিতরে প্রবেশ করেন।পুরো ঘর অন্ধকারে,তার উপরে বাহিরে তুমুল বৃষ্টিপাত।লোকটার পড়নে সাদা পাঞ্জাবি বৃষ্টির জলে ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে, চোখের সোনালী ফ্রেমের চশমাটা পানিতে ঘোলাটে হওয়ার ফলে কোনো কিছুই স্পষ্ট দেখতে পেলেন না।চশমা টা খুলে পাঞ্জাবি দিয়ে মুছে আবার চোখে পড়ে নিতেই বাহিরে তিব্র বেগে বিদ্যুৎ চমকানোর আলো গৃহে প্রবেশ করে, আর লোকটা সামনে যা দেখতে পান তার জন্য মুটেও প্রস্তুতি ছিলেন না।কি সর্বনাশা কান্ড চড়ণগড় গ্রামের বড় মসজিদের মোল্লার ঘরে অল্পবয়সি নর-নারী।তাও কিনা তার বিছানা! তিনি আঁতকে উঠে এক পা পিছিয়ে গেলেন।মাথার সাদা টুপিটা খুলেই গলা চড়ালেন,
“হায় খোদা, আমাগো গেরামে এ কোন অমঙ্গল ঢাইলা দিলি তুই।কি সর্বনাশা কান্ডি।শেষকালে আইয়া অমন সিনারি কেন দেখাইলি।গেরামের মান ইজ্জত সব গোলো লা।তওবা তওবা।”
কথা শেষ করতেই মোল্লা হাফিজুর হক ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন।তিনি নিতান্তই ধর্মের ব্যাপারে কঠোর।জায়ানের উদম পিঠ ভাসমান আর সাথে ছৌকির অপরপ্রান্তে লিয়ানা, তাদের মাঝে কিছুটা দূরত্ব বজায় থাকলেও।মোল্লার চোখে উদম জায়ানকে দেখে আর তার পড়নের শার্ট লিয়ানার গায়ে দেখে তিনি ধরেই নিলেন তার ঘর এরা দুজন অপবিত্র করে ফেলেছে।তিনি ধরেই নিলেন এরা দু’জন নির্ঘাত বাড়ি থেকে পালিয়েই তার ঘরে এসে রাত কাটিয়েছে।যেহেতু চড়ণগড় এ গ্রামের ছোঁয়া বেশি,সাথে কুসংস্কার আচ্ছন্ন।বাল্যবিবাহের প্রথাও পুরোপুরি মুছে যায়নি।তাই তার চোখে লিয়ানার বয়সটা নিতান্তই সংখ্যা মনে হলো।তাদের দু’জনে মাঝের দশ ঘরের সংখ্যার পার্থক্যটা কোনো কাজে লাগলো না।নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়েটার গায়ে লেগে গেলো কলঙ্কের দাগ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মোল্লার চোখে মুখে ভয়, বিস্ময় আর ক্রোধের মিশ্রণ ফুটে উঠলো।জায়ানের উপর ক্রোধ জমলেও কেন যেনো তার লিয়ানার উপর মায়া কাজ করলো।তিনি ভাবলেন জায়ান কোনো ধনী ঘরের বেয়াদব, নষ্ট, অবাধ্য ছেলে হবে যারা কিনা কলম খাতার শিক্ষিত হলেও টাকার অহংকারে নারী লালসা পড়ে মেয়েদের ফাঁসায়।কোনো কিছু না করেও আজ দুশ্চরিত্র উপাধি পেতে হলো জায়ানকে। লিয়ানার বয়সি মোল্লারও একটা মেয়ে ছিলো।বছর খানিক আগে ক্যান্সারে মারা যায়।তিনি লিয়ানার ইজ্জত বাঁচাতে চাইলেন।এখন যদি পুরো গ্রামবাসী ডেকে একএিত করেন।গ্রামের মান ইজ্জত সব ধুলোয় মিশে যাবে।আশে পাশের গ্রামের মানুষ চড়ণগড়ের গায়ে আঙুল তুলবে যা গত একশো বছরেও এ ভূমিতে দেখা যায়নি।আবার তিনি গ্রামের মসজিদের মোল্লা।কিছুক্ষণ ঠান্ডা মাথায় ভেবে ঘর থেকে ছাতা মাথায় বের হয়ে গেলেন।বাহিরে থেকে দরজা তালা মেরে।
বৃষ্টি টিপটিপ করছিলো জানালার লোহার গ্রিলে, বাতাসে ঝাপটা আর বজ্রপাতের গর্জন। জায়ানের লম্বা এক হাত-পা হেলে পড়ে আছে চৌকির নিচে। কপালে আঘাত লাগার ফলে সেখান থেকে গড়িয়ে র*ক্ত বালিশে লেগে আছে।কপালে জমাট বাঁধা শ্বাস কিছুটা অগভীর, দেহে অদ্ভুত দুর্বলতা।লিয়ানার গায়ে তিব্র জর। একটু আকটু চোখ খোলার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়।শরীরটা এতটাই অবশ হয়ে আছে, নড়তেও পারছে না।
তখন প্রায় রাতের শেষ প্রহর দরজার লোহার তালা খুলে মোল্লা গৃহে প্রবেশ করেন।তার পেছনে দুজন লোকও ভিতরে ঢুকেন।সাদা পাঞ্জাবি পড়িহিতা।লোকগুলো ঘরে ঢুকেই লাঠি নিয়ে তেড়ে যেতে নেয় জায়ানের দিকে।তবে মোল্লা তাদের হাত তুলে ইশারা করে থামিয়ে দেয়।
“অহন কিছু করিস না তোরা।আগে দেইকখা লই পোয়ার মতি গতি।এই ছেমড়া অমন নিষ্পাপ মাইয়াডারে অপবিত্র কইরা ছাড় পাইবো না আমি হইতে দিমু না।”
গায়ের রঙ কিছুটা তামাটে বর্ণের বেটে লোকটা, রাগে গজগজ করতে করতে, পাঞ্জাবির হাতা বটে নেয়,
“মোল্লা সাহাব দেইখা তো এই পোয়ারে কোনো বড়লোক ঘরের উচ্চবংশীয় মনে হইতাছে।”
মোল্লা সাহাব মুখ থেকে পানের পিক ফেলে, হাত দিয়ে মুখে চুন ঘষে ব’লে,
“হহ!কোনো বড়লোক বাপের ন*ষ্ট পোয়া।এরা নিজেগো ক্ষমতা দিয়া যা খুশি তা কইরা পার পাইয়া যায়।মুইও এই গেরামের মোল্লা,মুই থাকতে তা হইবার পারবেইক লা ”
“একবার কইয়া দেখেন মোরা এই পোলার কি হাল করি।”
“উহু!”তোগরে আনলামই এই পোয়া পুরির নিকাহ দিবাক লাই।নিকাহই এই পোয়ার লাগি ডের,পাপের শাস্তি, পবিত্রতা দিয়া সুদ্ধি করিমু”
মোল্লা হাফিজুর হক জায়ানের কাছে যেতেই নাক ছিটিকিয়ে দূরে সরে যান।জায়ানের থেকে ম*দের তীব্র গন্ধ পেতেই মোল্লা মেঝেতে থুথু ছুড়ে মারলেন।তিনি ভাবলেন জায়ান নেশা করেই হয়তো বা এমন সর্বনাশা কান্ড ঘটিয়েছে।
“নাউজুবিল্লাহ! এই পোয়া দেহি নেশা*খোর,মাতাল হইয়া আছে।ছেহঃ!আমার ঘর দুয়ার হগল কিছু অপবিত্র বানাই লো।”আল্লাহর নামে এহনি এই দুই ডারে নিকাহ দিমু।
পিছন থেকে বেটে লোকটা সামনে এগিয়ে এসেই হাতের লাঠি দিয়ে একটা তিব্র আঘাত করে জায়ানের পিঠে।আঘাতটা এতটাই জোরে লাগে যে জায়ানের পুরো শরীর কম্পিত হয়ে উঠে। এদিকে দূর্বল শরীরে নিজের গায়ে লাঠির স্পর্শ পেতেই শরীরটা আরও দূর্বল হয়ে পরে তার।কোনো মতে চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করার আগে আরেকটা আঘাত পিঠে পরার আগেই খপ করে হাত উল্টিয়ে লাঠিটা ধরে ফেলে।চোয়াল শক্ত করে এক ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে মেঝেতে ফেলে দেয়।
“অ্যাস’হোল,হু দ্যা হেল আর ইউ।”
সুঠাম দেহখান সামলে নিয়ে, ঘারে হাত রেখে উঠে বসে পড়ে দেখার চেষ্টা করে।তবে লাল ঔষধের প্রভাব একটু বেশি থাকার ফলে চোখে কেমন ঘোলাটে দেখছে।দূর্বল হয়েও শরীরেরও তেজ বিন্দু পরিমাণেও কমে নি।
“হাউ ডেয়ার ইউ,ফা*কার অ্যা’সহোলস, কার গায়ে আঘাত করেছিস জানিস তো,কারা তোরা”
জায়ানের গায়ে আবার আঘাত করতে গেলেই মোল্লা থামিয়ে দেয়।তিনি এসে জায়ানের সামনে দাড়ায়।রাগান্বিত দৃষ্টি ফেলে বলে,
“তোয়া দুইজনা মিললা আমার ঘর অপবিত্র করছো।দেহো আমি তোমাগো মান সম্মান ন*ষ্ট করিবার চাই না।বাড়াবাড়ি করিও না।মোরে চিনক লাই।যা কইতাছি চুপচাপ তা মাইনা নাও।”
জায়ান মোল্লার কথা কিছুই বোঝলোনা।মাথা ব্যাথায় টনটন করছে।মাথায় হাত চেপে ধরে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে গেলো।পিছন থেকে লম্বা লোকটা জায়ানকে এমন কথা বলে বসলো যা শোনার জন্যে জায়ান মুটেও প্রস্তুত ছিলো না।
“মোল্লা সাহাব তাড়াতাড়ি নিকাহ পরাইয়া দেন।এই পোয়া যেই কোনো সময় পলাইয়া যাইতো পারে।বাচ্চা মাইয়াডার লগে ন*ষ্টামি কইরা ন*ষ্ট কইরা দিছে।অহন এই পোলা বিয়া না করলে মাইয়াডে কেউ বিয়া করবো বইলা মোর মনে হয় না।মাইয়াডারে একবারে অপবিত্র কইরা দিছে।”
কথাটা যেনো জায়ানের কান ভেদ করে পুরো বিদ্যুৎ এর গতিতে বুক এক নিমিষেই ছিড়ে ফেলেছে।শেষ পর্যন্ত কিনা এই মিথ্যা অপবাধ তাও আবার কার সাথে নিজেরি কাজিন।যাকে খারাপ নজরে দেখা তো দূর দু -চোখেও সহ্য করতে পারে না,ছুয়া?ছিহ!।মাথাটা আরও তিব্র বেগে ঘূর্ণিপাক খেতে শুরু করে।একে বিগত ক’দিন যাবদ মন মানসিকতা চরম পর্যায়ে বিপন্ন হওয়ার ফলে সাইক্রিয়াটিস্ট এর পরামর্শে থাকতে হচ্ছে। মাত্র ভার্সিটি লাইফ শুরু করতে না করতেই কি-সব ঘটে চলেছে তার সাথে।নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে উঠে রাগে গজগজিয়ে।লোকটার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরলো।
মাদার*ফাকার।সিক আর ইউ,এমন হাল করবো না নেক্সট টাইম আমার কিংবা আমার…
মোল্লা সাহাব বলে উঠলেন।
“থামলা কেন কও।কি হয় তোমার এই মাইয়া… ”
“ডেম’ইট,কোনো তামাশা চাইছিনা। আপনাদেরকে পড়ে দেখে নিবো।কার সাথে কি করেছেন শুধে আসলে ফেরত পাবেন।ফাইটিং এর এনার্জি নেই আপাতত। ঘর আপনার তাইতো।কত টাকা লাগবে বলুন। তার দীগুন দিয়ে দিচ্ছি।”
বেটে লোকটা গিয়েই ভিতর থেকে ঘরটা তালা মেরে দেয়।মোল্লা সাহাব পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে। জায়ানের সামনে ধরে, জায়ান কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটা হাতে নিয়েই ভ্রু কুচকিয়ে তাকালো, লিখাগুলোও স্পষ্ট দেখতে পারছে না।এদিকে শরীরে তালও সামলাতে পারছে না।তবে ঠিকি বুঝলো এটার কিসের।
“হুয়াট রাবি’শ,ফাজলামো পেয়েছেন নাকি।-বলেই জায়ান নিজের ফোন বের করে,
“ফা*ক,এই ফোনটাও এখনি ডেড হতে হলো।
“ভালায় ভালায় কইতাছি নিকাহ নামায় নিজের নাম লিখখা দাও।নাইলে এইখান থেইকা যাইতে পারবা না।মুই চাইলে পুরো গ্রামবাসীরে ডাইকা আনতে পারতাম।করি নাই।যা করার কইরা ফালাইছো।পবিত্র কইরা ফালাও সম্পর্কখান।নাইলে উপর ওয়ালার লালত পরবো”
জায়ান ঘৃনায় মাথা কান চেপে ধরলো।
“সা’ট আপ!কিছুই করিনি আমি।আপনারা কি সিক? মে’ড?ডিজগাস্টিং কথাবাত্রা।কোন দিক থেকে মনে হয় আমি এই মেয়ের সাথে!।নো ওয়ে।সি ইজ নট মাই টাইপ আন্ডারস্ট্যান্ড??সি ইজ যাস্ট অ্যা পোর গার্ল ফর মি।লেভেল দেখে কথা বলবেন।তা না হলে ঐই জিভ ছিঁড়ে হাতে ধরাতে বেশি সময় লাগবে না।”
“এতো ইংরেজি মারাইয়ো না বাপ্।নিকাহ্ নামায় লেহ।”
জায়ান কাগজটা হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
বিপদ আসলে যে কতো দিক থেকে আসে তা নিজের জীবনটার দিকে না তাকালে দেখতই না।নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে সে কখনোই চায় নি।না ভালোর মুখোশ পড়ার ইচ্ছা জেগেছে।নিজের নিস্তেজ দেহটা কেমন অবশ হয়ে আসছে।তার উপরে এসব জঘন্য নোং*রা নোং*রা কথা টু মা’চ্।কেমন পাগলের কারখানায় চলে এলো নাকি বুঝে উঠতে পারছে না।লিয়ানার জায়গায় যদি ফারিয়া থাকতো মন বুঝ দেয়া যেতো।যে কাছাকাছি বয়স।ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠলো।জায়ান কাগজটাতে লাথি মেরে সরিয়ে দেয়।যত্তসব আলতু ফালতু কারবার।
“লুক এট হার এইজ,ফাকার’স এর দল।”
“তুমি কার সামনা দাড়াইয়া কইতাছো জানো?মোল্লা সাহাব রে সম্মান দেহাইয়া কথা কও ওনার লেইগ্গা তোমাগো ইজ্জত এহনো ভালা আছে।”
“হু কেয়ার’স,আপনারা জানেন আমি কে? ”
“হুহ।হইবা আর কি কোনো বড়লোক বাপের বিগরাইয়া যাওয়া পোয়া।যে মাইয়া ভাগাইয়া আইনা ফূর…….”
জায়ান কথা শেষ করার আগেই লোকটাকে ধরে থাপ্পড় মারতে উদ্যোত হলো।তার আগেই মোল্লা সাহাব জায়ানের হাত ধরে তাকে সামনে এনে দাড় করায়।
“দেহ। তুমি কইলাম বেশি বাড়াবাড়ি করতাছো।”
“মোল্লা সাহাব এই পোলা, ভালোয় ভালোয় রাজি হইতো না, আগেই কইছিলাম মুই।”
“তুমি চাও লোকজন জরো করি মুই? ”
এত তামাশা জায়ানের যাস্ট অসহ্য লাগছে। এই লোকগুলোর থেকে বেশি লিয়ানার উপর রাগে মাথায় রক্ত জমে উঠেছে ।এই মেয়ের জন্যেই সব, না সে ঢাকা পৌঁছাতে পারলো তার উপরে চরিত্রে দাগ।ফুসফুসতে লিয়ানার দিকে তাকালো।চোখজোড়া এবার রক্তিম হয়ে ফুলে উঠেছে।তার মস্তিষ্কে এবার লাড়া দিলো।যা হচ্ছে হউক, এই মেয়েকে শুধু বাড়ি নিয়ে গিয়ে ইচ্ছেমতো মারতে পারলে মন শান্তি হবে।আপাতত এখান থেকে বের হওয়ার একটাই রাস্তা।এমনিতেও এসব দু টাকার কাগজে তার কিছুই যায় আসে না।আর না এসব বিয়ের বন্ধনে বিলিভ করে।লিয়ানার উপর ক্ষোভ আর তাকে শাস্তি দেয়ার ক্ষুধা তার মনে জেগে উঠে। চোয়াল শক্ত করে মেঝে থেকে চারকোনা কাগজটা উঠিয়েই কিছু না ভেবে সাইন করে দিলো।দাঁতে দাঁত পিষে কাগজটা হাত দিয়ে মুচরে মুচরে লিয়ানার সামনে যায়।
মনের মধ্যে যত প্রকার ক্ষোভ জমা সব নিমিষেই পিষে ফেলে।ধ্বংসের খাতায় নাম লিখালো।জায়ানের কার্যকলাপ দেখে মোল্লাসহ তিনজনই ভীত হলো।জায়ানের এহন কান্ডে।
জায়ান নিজের কেটে যাওয়া কপাল থেকে রক্ত বের করে তা লিয়ানার অঙ্গুষ্ঠে লাগিয়ে নিকাহ নামায় আঙুলের ছাপ দিয়ে দেয়।
“এই নোং*রা বিয়ের কাবিন হবে এক টাকা।তোর যোগ্যতা ঠিক ততটুকুই।
জায়ান নিজের পকেট থেকে একটা সেন্টারফ্রুট বের করে লিয়ানার উপর ছুড়ে ফেলে।
এক টাকা বেশি আছে।না আমি এ নোং*রা বিয়ে মানি আর না তোর মতো বেয়াদব মেয়েকে বউ হিসেবে।এর একটাই বিধান “শাস্তি”।
হঠাৎ উচ্চ শব্দে ফোন বেজে উঠতেই জায়ানের হুস ফিরে।বিষাক্ত কালরাত্রির মস্তিস্কে বিচলন করতে করতে কখন চোখ লেগে গেছে কে জানে।শার্টের হাতা গুটিয়ে ফোন রিসিভ করতেই,মার্কো শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
“জায়ান!আর ইউ ফ্রি?? ”
“হুআই”
“মিস্টার মাল্টা আর মিসিং। রাত থেকে।ল’ফার্মে আসতে হবে তোকে।”
“ওকে।বাট, মিডিয়াতে যেনো এই খবর না পৌঁছায় আপাতত। “সামলিয়ে নে ঐই দিক টা।
মার্কোর ফোন কেটে যেতেই। জায়ান ভাবনায় পড়ে যায়।লিওনেল মাল্টা একজন দক্ষ ইনভেস্টিগেটর। জায়ানের অনেক কাছে।এভাবে মি’সিং কি করে হতে পারে।নো ওয়ে মাল্টার কিছু হয়ে গেলে তাদের প্লেন সব জলে যাবে।ইট’স নট গুড ফর দেম।জায়ানের ততক্ষণে মনে পড়ে লিয়ানার কথা সোফায় তাকাতে দেখে সেখানে নেই।রাতে তো পাশেই ছিলো।কই গেলো।তড়িগড়ি করে সোফা থেকে উঠেই পুরো ডাইনিং স্পেস খুঁজে ফেলে কোথাও নেই।লিয়ানাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে মাথা আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছে জায়ানের। চোখের কোণে খুঁজে বেড়ানোর হাহাকার।শ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে ক্রমশো, মুখে রাগ আর দমিয়ে রাখা অস্থিরতা।
চারওাশ খুঁজতে খুৃঁজতে হঠাৎ দুই পা এগিয়ে গিয়ে সে দেয়ালে হাত ঠেকে, মাথাটা পেছনে হেলিয়ে দম নিয়ে ডেকে উঠে
“ডার্লিং, হুঅ্যার আর ইউ?? ”
জায়ানের কপালের ঘাম জমে উঠে,এত অস্থিরতা সে কোনো কিছু নিয়ে হয় না।জায়ান এক পা পিছিয়ে আসে, তারপর কাঁপা ঠোঁটে আবার ডেকে উঠে,
“ডার্লিং হুঅ্যার আর ইউ? ”
ঠোঁট বাঁকালো।
“ইফ আই কে’চ্ ইউ,দ্যান আই উইল টেস্ট ইউ।কাম অন ডুন্ট প্লে উই’থ মি।”
কিচেন থেকে কিসের যেনো আওয়াজ আসছে। জায়ান ভ্রু কুচকিয়ে সেদিকে তাকালো।ওহহ গড তার মানে তার বউ কিচেনে আর সে পুরো বাড়ি খুঁজ চলেছে।
“আই অ্যাম কামিং বেবিগার্ল। ”
জায়ান কিচেনের দরজার কাছে যেতেই তার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেলো নিজে থেকে,ঠোঁট কামড়িয়ে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলো।দেয়ালে কাধ হেলিয়ে,হাত বুকের উপর।লিয়ানা কিচেনে ব্লেক কফি বানাচ্ছে জায়ানের জন্যে।কিন্তু জায়ানের মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার কারণ, লিয়ানা কানে হেড ফোন লাগিয়ে গুনগুন করে কোমড়ে দুলিয়ে দুলিয়ে, নাচ করতে করতে কফি মে’ইক করছে।আর জায়ান লিয়ানার পুরো মুভমেন্ট চোখ দিয়ে স্কেন করে ফিসফিস করে বলে,
“ডেম’ইট,ক্রেজি গার্ল।পাগল করার নতুন ট্রি’কস বের করেছে দেখছি।”
লিয়ানা কোমড় দুলিয়ে আন মনে গুনগুন করে,স্পেনিশ গান এ তাল মিলাচ্ছে,
Despacito
Quiero respirar tu cuello despacito
Deja que te diga cosas al oído
Para que te acuerdes si no estás conmigo
Despacito
Quiero desnudarte a besos despacito
Firmar las paredes de tu laberinto
Y hacer de tu cuerpo todo un manuscrito (sube,sube,sube)
(Sube, sube)
Quiero ver bailar tu pelo, quiero ser tu ritmo
Que le enseñes a mi boca tus lugares (favoritos,favouritos baby)
জায়ান জিভের অগ্রভাগ দিয়ে গাল স্পর্শ করে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে, লিয়ানার কাছে গিয়েই নিজের শীতল স্পর্শ দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।হুট করে জায়ানের স্পর্শ পেতেই লিয়ানা কেঁপে উঠে। ভীত হয়ে যায়।জায়ান লিয়ানার কান থেকে হেড ফোনটা সরিয়ে, ঘাড়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়।লিয়ানা শুকনো ঢুক গিলে বলে,
“ক,কখন উঠলেন।”
“তুই আগে এটা বল,গান গেয়ে ডাকার কি দরকার, এমনি বললেই তো হয়।অ্যাম আল টাইম রেডি।”
জায়ানের এহন কথায় লিয়ানা ভীষম খায়।কি বুঝাতে চাইলো জায়ান তাকে।
“মানে,কি বলতে চাইছেন?”
জায়ান একটু দুষ্টু হাসলো।লিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে,
“গান কি বুঝে শুনে গাইছিস।মি’নিং জানিস তো নাকি।”
এটা তো স্প্যানিশ সং, সে কি করে এটার অর্থ বুঝবে,ভালো লাগে তাই শুনে।বুঝার কি দরকার।
“তুই চাইলে এইবার আমি এটার অর্থ গেয়ে শুনাতে পারি তোকে।”
যাক এতো দিনে একটা ভালো গান শুনবে জায়ানের মুখ থেকে লিয়ানা,শুনতেও মন চাইলো।
“হে হে শুরু করুন”
জায়ান গলা খাঁকড়িয়ে,সুর তুললো,
(ধীরে, ধীরে)
আমি ধীরে ধীরে তোমার ঘাড়ে শ্বাস নিতে চাই,
আমাকে তোমার কানে কানে বলতে দাও,
যেনো আমাকে মনে রাখো যখন সাথে থাকবো না,
আমি আস্তে আস্তে তোমাকে চুমু খেতে চাই,
আর তোমার সংকেত ছড়িয়ে দাও দেয়ালে দেয়ালে,
আর তোমার শরীরকে করো পুণ্ডলীপির মত,
(ওঠো ওঠো ওঠো)
আমি তোমার চুলে নৃত্য দেখতে চাই
আমি যেতে চাই তোমার ছন্দে,
তোমার প্রিয় স্থানে আমার মুখের স্পর্শ পেতে চাই,
(প্রিয় তুমি প্রিয় তুমি, সোনা)
তোকে ছুয়েছি আঁধারে পর্ব ৩৩
লিয়ানা গান কি শুনবে, তার কান লাল হয়ে গরম হয়ে উঠেছে।মানে এ গান তার প্রিয়,এই ন’ষ্ট গান, হায়রে,নিজের অসভ্য স্বামীর মুখে তাও কিনা শুনতে হলো।জায়ান গান শেষ করার আগেই লিয়ানার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো, গান শেষ হওয়ার আগেই লিয়ানা একবারে বেহুঁশ হয়ে গেলো…
